আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। মার্কিন নির্বাচনের আর বাকী মাত্র চার দিন। এমন সময় এ কথা বললেন তিনি।

শুক্রবার তুরস্কের গণমাধ্যম হুররিয়াত ডেইলিকে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ‘সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার’ খুব কাছাকাছি রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্টের (জো বাইডেন) অধীনে আমাদের দেশগুলো সরাসরি সামরিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ল্যাভরভ বলেন, এই ফলাফল রাশিয়ার জন্য খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেন, আমাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় থাকাকালে পূর্বসূরিদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, আমরা মনে করি না যুক্তরাষ্ট্রের রুশবিরোধী মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে।

যদিও ট্রাম্প এর আগে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার অনুরাগের কথা স্পষ্ট করেছেন, তবে এই দুই ব্যক্তি ঘনিষ্ঠ নন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদের ছবি (স্ক্রিনশট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দাবি করা হয় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও সেনা কর্মকর্তাদের অপসারণের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বলে নিশ্চিত হয়েছে তথ্য যাচাইকারী (ফ্যাক্ট চেকার) প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।  বৃহস্পতিবার রিউমার স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ০৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ০৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীনকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর পর থেকেই বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময় নানা দাবি প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

কথিত ওই প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকলিন আলেমানি এটি লিখেছেন। প্রতিবেদনে মূলত দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীতে বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করে। এতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এই পদক্ষেপকে সামরিক বাহিনীতে বড় পরিবর্তন এবং বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই পুনর্গঠন সামরিক বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।

রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারসহ ৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং পত্রিকাটির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরোপ্রধান গেরি শিহ রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

ছড়িয়ে পড়া সংবাদের ছবিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে লেখক হিসেবে আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকলিন আলেমানির নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২১ অক্টোবর। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জ্যাকলিন আলেমানির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইটে তাঁর লেখক প্রোফাইল খতিয়ে দেখা হয়। তবে সেখানে এমন কোনো প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলগুলোতেও এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে রিউমার স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ২১ অক্টোবরের দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মূল সংস্করণ (প্রিন্ট) সংগ্রহ করা হয়, সেখানেও এমন কোনো প্রতিবেদনের অস্তিত্ব মেলেনি।

এই বিষয়ে জানতে রিউমার স্ক্যানারের পক্ষ থেকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরোপ্রধান গেরি শিহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এটি ভুয়া।’ পাশাপাশি তিনি রিউমার স্ক্যানারকে পত্রিকাটির মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

পরে রিউমার স্ক্যানার যোগাযোগ করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মুখপাত্রের সঙ্গে। ই–মেইলের মাধ্যমে এই বিষয়ে মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার।

শেষে রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দাবি করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো–সংবলিত প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

সূত্র : প্রথমআলো, আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক

“বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রধান হার্জি হালেভি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরের একটি এলাকায় হত্যা প্রচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড এদিন গাজার উত্তরে একটি বাড়িতে হামলা চালায়। যেখানে হালেভির উপস্থিত থাকার কথা জানা গিয়েছিল।

ইসরাইলি মিডিয়া জানিয়েছে, তবে হামলার সময় ওই বাড়ি থেকে নিরাপদে চলে যাওয়ায় অল্পের জন্য রক্ষা পান ইসরাইলি সেনাপ্রধান।

একটি ইসরাইলি সূত্র জানায়, হালেভি উত্তর গাজায় চলমান ইসরাইলি সেনা অভিযান পরিদর্শন করছিলেন এবং খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। সেই সময়ে একটি বাড়ির ওপর অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।

তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সূত্র: ইরনা

আন্তর্জাতিক

হিজবুল্লাহ তাদের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে। তার নাম নাইম কাসেম।

মঙ্গলবার নামটি ঘোষণা করে হিজবুল্লাহ। খবর আল জাজিরার।
কাসেম ছিলেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির উপনেতা। তিনি গোষ্ঠীটির সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে হাসান নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হলেন। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হন।

গত মাসে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ওপর তাদের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করে। সেই থেকে গোষ্ঠীটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানায়, কাসেমকে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। কারণ তিনি দলের নীতি ও লক্ষ্যগুলোর প্রতি অবিচলভাবে অনুগত।

এ ছাড়া গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, যেন কাসেম হিজবুল্লাহ ও তাদের ইসলামি প্রতিরোধের নেতৃত্বে এ মহান দায়িত্ব পালনে সঠিক পথে পরিচালিত হন।

নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ফলে হিজবুল্লাহর সাংগঠনিক পর্যায়ে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়।

নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর তার খালাত ভাই হাশেম সাফিদ্দিন ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে বৈরুতে ইসরায়েলের আরেক হামলায় তিনিও নিহত হন।

৭১ বছর বয়সী কাসেমকে প্রায়শই হিজবুল্লাহর “নাম্বার টু” বলা হতো। শিয়া রাজনীতিতে তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গত শতকের আশির দশকের শুরুতে গোষ্ঠীটি গঠন করা ধর্মীয় পণ্ডিতদের একজন তিনি।

২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর যখন নাসরুল্লাহ মূলত আত্মগোপনে চলে যান, তখন তিনি ছিলেন হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা যিনি জনসমক্ষে উপস্থিতি বজায় রেখেছিলেন।

নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর তিনটি টিভি ভাষণ দেন কাসেম। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি প্রতিবাদী এক বার্তায় বলেন, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এবং জিততে প্রস্তুত।

আন্তর্জাতিক

প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ভোটার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি সুইং স্টেটই নির্ধারণ করে দিতে পারে যে, আগামী প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প- উভয়েই এখন এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত, যেখানে ফলাফল এখনো অনিশ্চিত।

সুইং স্টেট কি?

সুইং স্টেট বা ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হলো এমন সব অঙ্গরাজ্য যেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান, সমান সমর্থন পেয়ে থাকে। তাই এই অঙ্গরাজ্যগুলো যে কোনো প্রার্থীর জয়লাভের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবারে এ ধরনের ৭টি সুইং স্টেট বা ভাগ্য নির্ধারক অঙ্গরাজ্য হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন।

১. অ্যারিজোনা

২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০,০০০ ভোটে অ্যারিজোনাতে জয়ী হন। এই অঙ্গরাজ্যে অভিবাসন নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।

কমলা হ্যারিসের নীতির সমালোচনা করে ট্রাম্প অভিবাসন নীতি প্রসঙ্গে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও এখানে গর্ভপাত অধিকার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ রিপাবলিকানরা এখানে গর্ভপাতের বিষয়ে প্রায় পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছেন।

২. জর্জিয়া

২০২০ সালে বাইডেনের সামান্য ব্যবধানে জয়ের পর জর্জিয়া ট্রাম্পের জন্য একটি অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে তিনি নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগের মুখোমুখি। এই অঙ্গরাজ্যের আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী ডেমোক্রেট কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাইডেন প্রশাসন সম্পর্কে এখানে অসন্তোষ বাড়ছে, যা কমলা হ্যারিসের প্রচারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩. মিশিগান

মিশিগানে বাইডেন ২০২০ সালে ১,৫০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তবে এ বছর এখানে ডেমোক্রেটদের প্রতি আরব-আমেরিকানদের সমর্থন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাইডেনের ইসরাইল নীতি এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। কমলা হ্যারিস তার প্রচারাভিযানে ইসরাইলের প্রতি অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছেন, যাতে এই জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করা যায়। অন্যদিকে ট্রাম্প দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধের শেষ দেখতে আগ্রহী।

৪. নেভাদা

যদিও নেভাদা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি ছিল। তবে সাম্প্রতিক জরিপগুলো রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থনের বৃদ্ধি দেখাচ্ছে। এখানকার ভোটারদের মধ্যে লাতিন জনগোষ্ঠীর ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেভাদাতে মহামারীর পর আর্থিক পুনরুদ্ধার বেশ ধীরগতিতে হয়েছে, যা এখানকার উচ্চ বেকারত্ব এবং জীবনযাত্রার ব্যয়কে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় করে তুলেছে।

৫. নর্থ ক্যারোলিনা

২০২০ সালে ট্রাম্প এই অঙ্গরাজ্যে ৭৪,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন এবং এবারে এই অঙ্গরাজ্যটি আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প এখানে একটি র‍্যালিতে বলেছেন, তিনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন, অপরাধীদের প্রবেশ বন্ধ করবেন এবং আমেরিকান ড্রিম পুনরুদ্ধার করবেন।

৬. পেনসিলভেনিয়া

১৯টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে পেনসিলভেনিয়া উভয় প্রার্থীর জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। স্ক্র্যানটন বাইডেনের জন্মস্থান হওয়ায় এই অঙ্গরাজ্যের কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তার একটি ব্যক্তিগত সংযোগ আছে। তবে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো এখানে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ইরি কাউন্টির মতো এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা বাড়ছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. উইসকনসিন

ঐতিহাসিকভাবে উইসকনসিন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অণুঘটক অঙ্গরাজ্য, যেটি গত দুই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। বাইডেন ২০২০ সালে মাত্র ২১,০০০ ভোটে এই রাজ্যে জয় পান। অবশ্য তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীরা এখানে ডেমোক্রেটদের ভোট ভাগ করতে পারে। কারণ রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন এবং গ্রীন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের অন্তর্ভুক্তি ডেমোক্রেটদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কৌশলের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। যেখানে এই সাতটি অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্র: এনডিটিভি

আন্তর্জাতিক

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি গুগলকে ২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে রাশিয়া।যা নিতান্তই একটি অভাবনীয় পরিমাণ অর্থ।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগলের কাছে ২ অ্যান্ডেকিলিয়ন রুবল অর্থাৎ ৩৬টি শূন্যসহ একটি সংখ্যা, যা প্রায় ২০ ডেসিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের সমান অর্থ দাবি করেছে রুশ সরকার।

এই অঙ্কটি এত বড় যে, এটি পুরো বিশ্ব অর্থনীতির আকারকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জিডিপি প্রায় ১১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি আলফাবেটের বাজারমূল্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি আদালত গুগলকে নির্দেশ দিয়েছিল ইউটিউবে প্রো-রুশ চ্যানেলগুলোকে পুনঃস্থাপন করতে, যা ২০২২ সাল থেকে ব্লক করা ছিল। তবে তা না করার জন্য গুগলকে জরিমানা করা হয়, যা প্রতি সপ্তাহেই দ্বিগুণ হারে বেড়েই চলেছে।

এ বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, জরিমানার এই বিশাল অঙ্কটা আসলে ‘প্রতীকী অর্থপূর্ণ’। সেই সঙ্গে গুগলকে তাদের সম্প্রচারকদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

যদিও গুগল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে কোম্পানিটির সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক আয়ের প্রতিবেদনে ‘রাশিয়ার সঙ্গে চলমান আইনি’ বিষয়ে উল্লেখ করেছে। গুগল জানিয়েছে, এই মামলা আমাদের আয়ের ওপর গুরুতর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি না।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর গুগল রাশিয়াতে তাদের কার্যক্রম সীমিত করলেও পুরোপুরি বন্ধ করেনি। এ নিয়েই মূলত ঝামেলাটা। সূত্র: সিএনএন

আন্তর্জাতিক

“আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের মানুষের মতপ্রকাশ ও সমাবেশসহ মৌলিক স্বাধীনতার চর্চা করতে পারা উচিত,” নিয়মিত বিফ্রিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধের প্রশ্নে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষার উপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে সোমবার রাতে মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এ বিষয়ক এক প্রশ্নে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের মানুষের মতপ্রকাশ ও সমাবেশসহ মৌলিক স্বাধীনতার চর্চা করতে পারা উচিত।

“এক্ষেত্রে আমরা সেটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন এবং এটা আমরা এই মঞ্চের পাশাপাশি আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আগে অনেকবার স্পষ্ট করেছি।”

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রভাব পড়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ম্যাথু মিলারের কাছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে গত ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসী সত্তা হিসেবে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংগঠনটির বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা ‘হত্যা’ ও অসংখ্য মানুষের ‘জীবন বিপন্ন’ করা এবং বিভিন্ন সময় ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে এসআই পদে প্রশিক্ষণে থাকা ২৫২ জনকে অব্যাহতির বিষয়েও এদিন জানতে চাওয়া পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের কাছে। এক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বরখাস্তের বিষয় তুলে ধরে প্রশ্ন করা হয়।

উত্তরে ম্যাথু মিলার বলেন, “এই প্রতিবেদন আমি দেখিনি। তবে বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বৈষম্যের বিরোধিতা করব।”

রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত এসব ক্যাডেট এসআইকে গত ২২ অক্টোবর শৃঙ্খলা ভঙ্গের ‘অভিযোগে’ অব্যাহতি দেওয়া হয়, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

আন্তর্জাতিক

সত্যিকারের গণতন্ত্র নবায়ন ও পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এখন এক ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে। এমনটি মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন গভীরভাবে সংস্কার, সত্য ও ন্যায়ের একটি প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন, যেন উন্নয়নের সুফল সব মানুষ ভোগ করতে পারে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে ভলকার তুর্ক বলেন, অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থী, সারা দেশের মানুষের সঙ্গে আপনারা ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত সাহস দেখিয়েছেন। আজ এখানে কথা বলতে পেরে সত্যিই নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাহসিকতা, সংহতি এবং মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের গল্পে অনুপ্রাণিত, যেখানে ছাত্ররা আহত বিক্ষোভকারীদের সাহায্য করেন, রিকশাচালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করেন। নারী শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্রাবাসের তালা ভেঙে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামেন এবং লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এ হাইকমিশনার বলেন, আজ এখানে আমাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সূচনা, শিক্ষার্থীদের সাহসের প্রমাণ এবং তাদের আত্মত্যাগের একটি স্মারক। আসুন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করি।

ভলকার তুর্ক বলেন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন আপনাদের রোডম্যাপ ও দিকনির্দেশক হতে পারে। কারণ, আপনারা অতীতের সহিংসতা পেছনে ফেলে এক নতুন সমাজ ও ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন।

এ সময় অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মঙ্গলবার বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে আসেন।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কান্ট্রি অফিস খোলার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে জেনেভা। সঙ্গে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তার বিশাল প্যাকেজ অফার করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, তামিল বিদ্রোহের ছুতোয় শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকারের কান্ট্রি অফিস খোলার প্রস্তাব ছিল জাতিসংঘের। এ নিয়ে ১০ বছর দেন-দরবার হয়েছে। কিন্তু কলম্বো কোনো চাপেই নতি স্বীকার করেনি। শ্রীলঙ্কায় ব্যর্থ চেষ্টার পর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে অফিস খোলার প্রস্তাব যায়। ট্র্যাক ওয়ান এবং ট্র্যাক টু- উভয় পন্থায় চলে দূতিয়ালি। কিন্তু না, কোনো দেশই অফিস খোলার স্থান দিতে রাজি হয়নি। তাই এবার টার্গেট বাংলাদেশ।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের ঢাকা সফর। হাই প্রোফাইল ওই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য হতে যাচ্ছে ওএইচসিএইচআর’র ঢাকা অফিস খোলার বিষয়টি। ঢাকা ও জেনেভার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এখন বাংলাদেশের পথে। ফ্লাইট বিলম্ব বা অন্য কোনো জটিলতা না হলে ভোর হওয়ার আগেই তিনি ঢাকা পৌঁছাচ্ছেন। বাংলাদেশের মাটিতে প্রায় ৫০ ঘণ্টা কাটাবেন তিনি। ওই সময়ে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সব উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন স্তরে সিরিজ বৈঠক হবে তার। ভলকার তুর্ক গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য গঠিত ১০ কমিশন প্রধান এবং গুম কমিশনের সব সদস্যের সঙ্গে বসবেন একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে তার। জেনেভাস্থ অফিস অব দ্য ইউএন হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন।

যেখানে তিনি সামপ্রতিক ছাত্র-আন্দোলনে সম্পৃক্ত প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ঢাকায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। সফরের সমাপনীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিবেন। সংবাদ সম্মেলনটি উন্মুক্ত নয় বরং প্রবেশাধিকার রয়েছে এমন মিডিয়ার প্রতিনিধিরাই তাতে ঢুকতে পারবেন।

মানবাধিকার অফিসের কাজ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ: ১৯৯৩ সালে জেনেভায় অফিস অব দ্য ইউনাইটেড ন্যাশন্স হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ওএইচসিএইচআর কান্ট্রি অফিস খুলতে পেরেছে। ব্যাংককসহ কিছু জায়গায় লিমিটেড স্কেলে তাদের রিজিওনাল অফিস রয়েছে। কান্ট্রি অফিস রয়েছে এমন দেশ হলো- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, গুয়েতেমালা, গায়েনা, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেঙিকো, নাইজার, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেন। সেগুনবাগিচার পর্যালোচনায় ধরা পড়েছে কোনো না কোনো সংকটে রয়েছে এমন দেশেই ওএইচসিএইচআর কান্ট্রি অফিস খুলতে পেরেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত মাসে ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খোলার প্রস্তাব আসে। অবিশ্বাস্য দ্রততায় এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া পাঠায় জেনেভা। প্রস্তাবে বলা হয়, সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবরে ভলকার তুর্কের সফরে খসড়া চুক্তিটি সই হতে পারে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস চালু হলে সেটি মানবাধিকার সমুন্নত ও বিকাশের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক যে সব সনদ অনুসমর্থন করেছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণে প্রস্তাবিত দপ্তর পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেবে। আন্তঃসীমান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুরাহার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অফিসটি বলপূর্বক গুম বিষয়ক কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে কারিগরিসহ নানা রকম সহায়তা দেবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে যুক্ত করার ওপর জোর দেবে। নীতি প্রণয়নে সহায়তার জন্য ওএইচসিএইচআর-এর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট গবেষণা পরিচালিত হতে পারে। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকায় প্রস্তাবিত ওএইচসিএইচআর অফিস পুলিশ এবং আইন সংস্কারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও কারিগরি সহায়তাসহ সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দেবে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অফিস খোলার চুক্তির খসড়ায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের অবাধে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো গ্রেপ্তার, আটক এবং জেরা করার প্রক্রিয়ায় ওএইচসিএইচআর প্রতিনিধিদের অবাধে প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

প্রস্তাবে সায় নয় যে কারণে: সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওএইচসিএইচআর-এর প্রস্তাবটি আত্মঘাতী। এটি গ্রহণ করলে এবং তাদের অফিস খোলার চুক্তি সই করলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের বড় ধরনের বিপদে পড়তে হবে। প্রথমত: এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ওএইচসিএইচআর-এর অফিস খোলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ৩৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর থেকে স্বার্থান্বেষী নানা গোষ্ঠী সক্রিয়। ওএইচসিএইচআর-এর প্রস্তাব এসেছে ৫ই আগস্টের এক মাসের মাথায় এবং তা পারসু হচ্ছে নানাদিক থেকে। বাংলাদেশে জাতিগত কোনো সংঘাত হয়নি যে, এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলতে হবে- এমন মন্তব্য করে এক কর্মকর্তা বলেন, সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে ওএইচসিএইচআর-এর অফিস রয়েছে। তাছাড়া ওই অফিসের বিরুদ্ধে দুনিয়ার দেশে দেশে সমকামিতার মতো সংবেদনশীল বিষয় প্রমোট করার অভিযোগ রয়েছে। সমকামিতা সব ধর্মে নিষিদ্ধ। অফিস খুলে এটি প্রমোশনের সুযোগ দিলে সরকার বাংলাদেশের সর্ব ধর্মের ধর্মভীরু মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়বে। ফলে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির এমন আশঙ্কাকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে দেখাটা সমীচীন বলে মনে করছে সেগুনবাগিচা। বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর সব সময় দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। দাতা সংস্থাগুলো ওএইচসিএইচআরকে যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়নে প্রভাব সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে একটি দেশের কোনো নীতি যখন দাতা দেশগুলোর বিপক্ষে যায়, তখন তারা মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ওএইচসিএইচআর এর মাধ্যমে। জাতিসংঘে কাজ করছেন এমন একাধিক কূটনীতিক জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কখনো কখনো এমন এজেন্ডার বিকাশে কাজ করে থাকে যেগুলো সর্বজনীন নয়।  যেমন তারা সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমন্বিত যৌন শিক্ষার বিকাশে কাজ করে যা অনেক দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার পরিপন্থি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, কিছু স্পর্শকাতর পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কাজ করে। অথচ চুক্তি করা বা অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কোনো দেশই ব্যবস্থা নিতে পারে না। এটি করলে উভয় সংকট তৈরি হয়।