আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশকে ব্রিকসে যোগদানে সমর্থন দেবে চীন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে পাশে থাকবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ আশ্বাস দেন।

১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এই আশ্বাস দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন শির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি ব্রিকসে যোগ দিতে চাইলে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) সবসময় সমর্থন করব।’

চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। আমরা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা চাই না।’

মোমেন জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন করতে চায়। কারণ, তারা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে অনেকেই অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।’

চীনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান।

শি বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন, যা এখন তহবিল সংকটের জন্য আটকে রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।

আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে চীন মাত্র ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করেছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেছেন চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি হ্রাস করার উদ্যোগ নেবেন।

তিনি জানান, চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কিছু চীনা বিনিয়োগ এলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে।
তিনি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ চীনে তাজা ফল যেমন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তাজা শাকসবজি এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মোমেন বলেন, শি জিনপিং এসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী অক্টোবরে পদ্মা রেল সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি অবশ্যই আপনার দেশে আসব। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সফরের সময় নির্ধারণ করা হবে।’

মোমেন জানান, শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চীন সফর করবেন, তবে সময় লাগতে পারে। কারণ, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। তিনি নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন।

আন্তর্জাতিক

ব্রাজিল, ভারত, চীন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত বৈশ্বিক জোট ব্রিকসে নতুন ছয়টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জোটের শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য দেশগুলোর নাম ঘোষণা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।

নতুন পূর্ণ সদস্য দেশগুলো হলো- মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। আমন্ত্রণের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি দেশগুলো ব্রিকসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করবে।

সম্প্রসারণ চুক্তি অনুযায়ী গ্রুপের বর্তমান সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অনুমোদনে কয়েক ডজন দেশ ব্রিকসের সদস্য হবে। মূলত এর মাধ্যমে পশ্চিমকে টেক্কা দিতে একটি কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করতে চাইছে বেইজিং এবং মস্কো।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনে গ্রুপটিকে সম্প্রসারণের বিষয়টি আলোচ্যসূচির শীর্ষে আছে। ব্রিকসের সব সদস্য প্রকাশ্যেই সম্প্রসারণের বিষয়ে মত দিয়েছেন। তবে কয়টি দেশকে সদস্য করা হবে এবং বিষয়টি কত দ্রুত হবে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে রয়ে গেছে বিভক্তি।

শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর বুধবার বলেছেন, নতুন সদস্যদের বিবেচনা করার প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হয়েছেন ব্রিকস নেতারা।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রসারণের বিষয়ে আমরা একমত। ব্রিকসে আসতে আগ্রহী দেশগুলোর সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমরা একটি কাঠামো তৈরি করেছি। এটি খুব ইতিবাচক।’

প্যান্ডর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে ব্লকের নেতারা সম্প্রসারণের বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা দেবেন।’

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন। বিধ্বস্তের ৩০ সেকেন্ড আগেও সব কিছু স্বাভাবিক ছিল বিমানটির। আকস্মিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব যাত্রী নিহত হয়েছেন। বিমানে ছিলেন ১০ জন, সবাই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিদ্রোহ করা ওয়াগনারপ্রধানের এমন করুণ পরিণতি এখন সর্বত্র আলোচনায়।

শুধু প্রিগোজিন নয়, এর আগে যারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিদ্রোহ করেছিলেন তাদেরও চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আর বেঁচে নেই।

ইয়েভজেনি প্রিগোজিন

৬২ বছর বয়সি প্রিগোজিন একসময় পুতিন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধে তার সেনাদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। তার পর হঠাৎই গত জুনের শেষ দিকে রাশিয়ার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। বাহিনী নিয়ে মস্কোর কাছাকাছিও পৌঁছে যান। ওই সময় ধারণা করা হয়েছিল প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন পুতিন। সমঝোতার মাধ্যমে তাকে নির্বাসিত করার ঘোষণা এলেও তাকে ‘ডেড ম্যান ইজ ওয়াকিং’ হিসেবে অভিহিত করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

পুতিনবিরোধীদের মধ্যে শুধু প্রগোজিন নয়, আরও কিছু রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। কেউ কেউ বিষক্রিয়া থেকে ফিরেও এসেছেন। তার থেকে কয়েকটির খবর নিচে দেওয়া হলো—

আলেক্সি নাভালনি

রাশিয়ার অন্যতম বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ায় বিষ প্রয়োগ করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পর্যন্ত যেতে হয় তাকে। নাভালনির অসুস্থতার জন্য পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা সামরিক নার্ভ এজেন্ট নোভিচককে দায়ী করে আসছিলেন। তবে রাশিয়া নিজেদের সম্পৃক্ততা পুরোপুরি অস্বীকার করে।

নাভালনি ২০২১ সালে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পান। তবে মস্কো ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হন। এখন জালিয়াতি ও অন্যান্য অভিযোগে ১১-১২ বছরের সাজা ভোগ করছেন। তিনি বরাবরই অভিযোগগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে আসছিলেন। নাভালনির রাজনৈতিক আন্দোলনকে বেআইনি ঘোষণা করে তাকে ‘চরমপন্থি’ ঘোষণা করেছে রাশিয়া।

সের্গেই স্ক্রিপাল

ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে রাশিয়ার গোপন তথ্য প্রকাশ করেছিলেন এ ডাবল এজেন্ট। ২০১৮ সালের মার্চে সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে স্যালিসবারির একটি শপিং সেন্টারের বাইরের বেঞ্চে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।

ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭০-৮০-এর দশকে সোভিয়েত সামরিক বাহিনী দ্বারা উদ্ভাবিত নার্ভ এজেন্টের একটি গ্রুপের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাবা ও মেয়ে। তবে দুজনই বেঁচে যান। রাশিয়া বিষ প্রয়োগে তাদের দায়ভারের কথা অস্বীকার করেছে।

ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা

রুশবিরোধী দলের কর্মী কারা-মুর্জা দাবি করেছিলেন, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তার ওপর বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছিল। জার্মান পরীক্ষাগার মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে, তার শরীরে পারদ, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্কের উচ্চমাত্রার প্রয়োগ শনাক্ত হয়।

আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো

সাবেক কেজিবি এজেন্ট ও পুতিনের সমালোচক আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালে লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে বিরল ও শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় আইসোটোপযুক্ত গ্রিন টি পান করার পর মারা যান লিটভিনেনকো।

তবে ক্রেমলিন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সিনিয়র ব্রিটিশ বিচারকের নেতৃত্বে পরিচালিত এক তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেজিবির সাবেক এক কর্মী ও আরেক রুশ নাগরিক হত্যায় অংশ নেয়। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) অভিযান পরিচালনা করে।

আলেকজান্ডার পেরেপিলিচনি

২০১২ সালের নভেম্বরে ৪৪ বছর বয়সি এই রাশিয়ানকে লন্ডনের বাইরে তার বিলাসবহুল বাড়ির কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আলেকজান্ডার পেরেপিলিচনি ২০০৯ সালে রাশিয়ান অর্থপাচার প্রকল্পের সুইস তদন্তে সাহায্য করার পরে ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তার পেটে জেলসেমিয়াম উদ্ভিদ থেকে তৈরি বিরল ও মারাত্মক বিষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

ভিক্টর ইউশচেঙ্কো

২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতা ভিক্টর ইউশচেঙ্কোকে বিষ প্রয়োগ করা হয়। পরে তিনি বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিয়েভের বাইরে ডিনার করার সময় বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন। ওই সময় সন্দেহ যায় রাশিয়ার দিকে। ভিক্টরের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি ডাইঅক্সিন পাওয়া গেছে। বিষক্রিয়ায় তার মুখমন্ডল ও শরীর বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। পরে একাধিকবার ভিক্টরকে অপারেশন টেবিলে যেতে হয়।

আনা পলিটকভস্কায়া

সাংবাদিক আনা পলিটকভস্কায়া রাশিয়ারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন করেছিলেন। ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবরে মস্কোর ফ্ল্যাটের বাইরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক

মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবাগগামী যে ব্যক্তিগত বিমানটি রাশিয়ার তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ছিলেন বলে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুশিওনকেনা গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ১০ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন ও তার প্রধান সহচর দিমিত্রি ইউতকিন ছিলেন।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উত্তরে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে প্রিগোজিনের নাম থাকার কথা আগেই নিশ্চিত হয়েছিল।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্রদের একজন ছিলেন প্রিগোজিন। ২০২২ সালে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রিগোজিনের বেসরকারি সামরিক কোম্পানি যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

কিন্তু চলতি বছরের জুনে রাশিয়ার সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রিগোজিন তার সেনাদের মস্কো যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এতে পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়। প্রিগোজিনের ওই বিদ্রোহ ২৪ ঘণ্টারও কম সময় ধরে চলেছিল।

প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত হওয়া সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তা বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এমব্রায়ার লিগ্যাসি বিমানটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তরে তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে।

কিন্তু ওয়াগান গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ওই বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে; যদিও তারা তাদের দাবির বিষয়ে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।

আরও পড়ৃুন প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিল রুশ টিভি

ওই বিমানটিতে সাত যাত্রী ও তিন ক্রু ছিলেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, তারা সবাই নিহত হয়েছেন। সব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রিগোজিনের একটি কোম্পানির নামে নিবন্ধিত লিগ্যাসি বিমানটি উড্ডয়নের পর আকাশে আধ ঘণ্টারও কম সময় ছিল বলে জানা গেছে। বিমানটি ভূমিতে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার সময় এটিতে আগুন ধরে যায়।

বিবিসির যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে একটি বিমানকে রাশিয়ার কুশিওনকেনার আকাশ থেকে পড়তে দেখা গেছে।

প্রিগোজিনের মালিকানাধীন দ্বিতীয় আরেকটি বাণিজ্যিক জেট বিমান নিরাপদে মস্কোতে অবতরণ করেছে বলে গ্রে জোন জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আবারও বলেছেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে চীনের হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণ নেই।

বুধবার সচিবালয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে একথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। এর আগে গত সপ্তাহেও একই কথা বলেছিলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন কখনোই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চীন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বটা তারা আরও বেশি এগিয়ে নিতে চায়, আমরাও চাই। আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা খুবই পরিষ্কার। আমরা চাই, বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে যে দেশ কারা পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাই চান।’

বৈঠকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আমরা অনেক সম্ভাবনা দেখছি। বৈদ্যুতিক যান উৎপাদনে বিশ্বে আমরাই সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। কাজেই আমরা কেন মোংলা বন্দরে বৈদ্যুতিক ও ব্যাটারি প্ল্যান্ট স্থাপন করব না? আইসিটি, সৌর বিদ্যুৎ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণেও বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারবে চীন।’

আম, কাঁঠালসহ বাংলাদেশে বিপুল ফল উৎপাদিত হয়। এজন্য এখানে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে সহায়তার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন।

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াও শিল্প ও তৈরি পোশাকখাতে চীন বিনিয়োগ করতে চায় বলে জানান নৌপ্রতিমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা (চীন) যে ভূমিকা রাখছে, যেভাবে সহযোগিতা করছে, তা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে তারা একটি প্রকল্প দিয়েছেন। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের শিল্পের ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ করতে চায়। কৃষি শিল্প, তৈরি পোশাক খাতে তারা ভূমিকা রাখতে চায়।’

আন্তর্জাতিক

চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করে ইতিহাস গড়ল।

এর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিশ্বের আর কোনো দেশ পৌঁছতে পারেনি। সেখানেই পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করল ভারত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। ভারতের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা চার মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করে ল্যান্ডার বিক্রম।

চাঁদের মাটিতে বিক্রম নামার পর ইসরো টুইট করেছে। টুইটে লেখা হয়েছে, ‘ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি।’

চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসেবে নাম লেখাল ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই মহান কৃতিত্বের অধিকারী ছিল।

এদিন ইসরোর ওয়েবসাইটসহ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবের পেজে ৫টা ২০ মিনিট থেকে চাঁদে নামার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কোটি কোটি ভারতীয়সহ বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ উপভোগ করে এ মুহূর্তটি। এ সময় ভারতের স্কুলগুলোও খোলা রাখা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন থেকেই চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে নামার দৃশ্যটি উপভোগ করেন।

অবতরণের পর টিম চন্দ্রযানকে শুভেচ্ছা জানান মোদি। তিনি বলেন, তারা এ মুহূর্তটির জন্য বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন। ১৪০ কোটি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। ভারতের উদীয়মান ভাগ্যের আহ্বান এ মুহূর্তে। অমৃতকালের আহ্বান। মহাকাশে নতুন ভারতের উদয়। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশবাসীর সঙ্গে আমার মনও সেখানেই ছিল।

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসে লাখো রোহিঙ্গা। এ দেশের অভ্যন্তরে সরকার তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়।

সুযোগ পেয়ে নানা অপরাধ-অপচেষ্টা করে সীমান্তের ওপারের জনগণ। এবার বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসেও তারা অপরাধ শুরু করেছে।

জানা গেছে, প্রবাসে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে অপচেষ্টা করছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। অবশ্য তাদের এ অব্যাহত অপরাধ রুখে দিতে তৎপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সরবরাহের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে দেশটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও এনআইডি নেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে পাঁচ শতাধিক আবেদন বাতিলও করেছে নির্বাচন কমিশন।

কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেই জন্ম সনদ সংগ্রহ করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাগিয়ে নিয়ে আমিরাতে বসবাস করছে। মূলত তারাই এনআইডি পেতে আবেদন করছে।

জানা গেছে, আবুধাবিতে এ পর্যন্ত এনআইডি পেতে মোট পাঁচ হাজার ৯০ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে চট্টগ্রামের, দুই হাজার ৩২১টি। এরপরে কুমিল্লা থেকে আবেদন পড়েছে এক হাজার ২৩৫টি। ঢাকায় আবেদন পড়েছে ৪৭৭টি। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে রংপুর থেকে ৩৪টি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আবেদন অনুমোদন হয়েছে এক হাজার ২০৪টি। তদন্ত শেষ হয়ে আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৯৪টি। এছাড়া ৫৭৯টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আবেদনকারীদের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে দুই হাজার ৯১৩টি আবেদন।

সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে কুমিল্লায় ২৪৯টি, এরপরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন বাতিল হয়েছে চট্টগ্রামে ১১৮টি। ঢাকায় বাতিল হয়েছে ৭০টি আবেদন।

প্রবাস থেকে যেন রোহিঙ্গারা এনআইডি না পায়, সে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২ উপজেলার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, এনআইডি পেয়ে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছেন তিন হাজার ৭৯১জন। এদের মধ্যে এনআইডি পেয়েছেন ৩৩৬জন। পুনরায় আবেদন করেছেন ৯ জন। ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারের কেবল দেশের নাগরিকদের তথ্য রয়েছে এমন নয়। এই সার্ভারে মিয়ানমার থেকে আগত ১০ লাখ নাগরিকের আঙ্গুলের ছাপও রয়েছে। কাজেই এদের মধ্যে কেউ ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যাবে।

এছাড়া দূতাবাসে প্রশিক্ষিত লোকবলের মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সন্দেহ হলেই অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। তাই তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।

গত ১১ জুলাই আমিরাতে টিম পাঠিয়ে এনআইডি কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরবর্তীতে প্রবাসী বাংলাদেশি আধিক্যের বিবেচনায় আরও ৪০টি দেশে এনআইডি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এ উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।

সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করে। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

আন্তর্জাতিক

ঢাকায় আসছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রাবিয়া।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, সৌদি মন্ত্রী পাকিস্তান থেকে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। ঢাকা সফরকালে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের আরও বেশি সুবিধা কীভাবে দেওয়া যায়, তাদের যাত্রা কীভাবে সহজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। তাছাড়া সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেও তিনি এ সফর করছেন।

সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ঢাকার সৌদি দূতাবাসের আয়োজনে ঢাকায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে হজ ও ওমরাহ সংক্রান্ত অ্যাপস নুসুক নিয়ে হজ এজেন্সিগুলোকে নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এই মেলার উদ্বোধন করবেন সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে  যোগদানের পাশাপাশি একাধিক সদস্য দেশের সরকার প্রধান অথবা রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন একথা জানান।
তিনি আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘এই (দ্বিপাক্ষিক বৈঠক) বিষয়টি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে,

অবশ্য এ ধরণের বৈঠকের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে শেষ মূহূর্তে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রনে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আগামী ২২ আগস্ট যোহানেসবার্গের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২২টি দেশ ব্রিকস-এর সদস্য হতে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং ৫টি আদি সদস্য দেশ নতুন সদস্য নেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে মতৈক্য পৌঁছানোর প্রচেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না কখন নতুন সদস্যরা যোগ দেবে।’

সাম্প্রতিক ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঐ বিষয়ে তাদের কোন ‘মন্তব্য নেই’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতে পরিপক্ক গণতন্ত্র রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে একটি পরিপক্ক সরকার ব্যবস্থা। তারা আঞ্চলিক স্বার্থে কিছু বলতেই পারে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং এ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট  ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিআইডিএ) এর যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।

অতপর প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকার দেশসমূহে থাকা বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতদের আয়োজনে ‘রিজিওনাল এনভয়েস কনফারেন্স’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাসহ কয়েকটি ব্রিকস সদস্য দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় ব্রিকস’র বর্তমান সভাপতি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রনে ‘রাষ্ট্রীয় ভোজসভায়’ অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৪ আগস্ট ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’ এবং ‘ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এন্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ’ এর নতুন সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। ৭০টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ এখানে উপস্থিত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী একই দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মিলিত হবেন।

এই সফরকালে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ এর প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে ‘ব্রিকস- আফ্রিকা আউটরিচ এন্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান  এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৬ আগস্ট স্বদেশের উদ্দেশ্যে জোনেসবার্গ ত্যাগ করবেন।

আন্তর্জাতিক

শেখ হাসিনা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে হারলে বাংলাদেশ দীর্ঘ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সাংবাদিক প্রণয় শর্মার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা থেকে বিদায় কেবল ভারতের জন্য উদ্বেগের নয়, এতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

প্রণয় শর্মা লিখেছেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব আছে, সেখানে শেখ হাসিনার সরকার খুব সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে নির্ভরশীল ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। যদিও ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বিগ পাওয়ার’ হিসাবে ধরা হয় কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই অবস্থানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। আর দক্ষিণ এশিয়ায় চীন দিনের পর দিন তার অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে এবং জানুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাইছেন। এর অংশ হিসাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টাকারীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বর্তমান ও সাবেক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সবসময় সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মী, সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে ধরতে তার ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঢাকার উপনির্বাচনে। যেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছিল আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। ওই হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত গণতান্ত্রিক সম্মেলন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছেন। যেখানে ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়া মে মাসে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটন গেলে বাইডেন প্রশাসন তাকে উপেক্ষা করেছে।

শেখ হাসিনাও মনে করেন, বাইডেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সংসদে তিনি একবার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যে কোনো দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে, বিশেষ করে সেটা যদি মুসলিম দেশ হয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন অবাধে সমাবেশ করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে।

বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। আমির খসরু বলেছেন, ‘যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ প্রকৃতপক্ষে জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো নিয়ে বিএনপি বাংলাদেশে শাসন পরিচালনা করবে-এমন সম্ভাবনা ঢাকা ও দিল্লিতে উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি করেছে।

হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি শক্তিশালী, বিশ্বস্ত এবং নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যা দুই দেশ এবং এ অঞ্চলের জন্যই মঙ্গলজনক। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের মুসলিম-বিদ্বেষী এবং বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যকে শেখ হাসিনা যে পাত্তা দেননি-এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

প্রতিবেদনে সংসদ-সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর একটি বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে একটি সহযোগিতা এবং নিরাপত্তামূলক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। যেই সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ একটি প্রভাবক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দুই পক্ষের মধ্যে একটি উইন-উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং উভয় দেশের সরকারই অগ্রগতি, উন্নতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এই সম্পর্কের মাধ্যমে দিল্লি এমন একটি উদাহরণ তৈরি করতে সম্মত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে প্রতিবেশীরা কীভাবে সুফল পেতে পারে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চিড় ধরে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শাসক গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতবিরোধী তৎপরতায় উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করেছেন এবং দেশ থেকে ভারতবিরোধী সত্তা উপড়ে ফেলেছেন। তবে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা আশঙ্কা করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেওয়া বাইডেন প্রশাসনের সম্প্রতিক পদক্ষেপ সেই সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

প্রতিবেদনের শেষ দিকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা যদি নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমনকি আবারও বাংলাদেশ উগ্রবাদীদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হতে পারে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রস্থানের বিষয়টি শুধু ভারত নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।