আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে ২০২২ সালের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। অতীতের মতোই এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ও সমর্থনের ঘেরাটোপে বন্দি।

প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র কোথাও ত্রুটিমুক্ত নয়। যারা অভিযোগ তুলেছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। দেশটির উদ্দেশে তারা বলেন, অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজের ঘরের চিত্রটাও বলুন। নিজ দেশের গণতন্ত্রকে আগে পারফেক্ট করুন।

তবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নেতারা এ প্রতিবেদনকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বিগত সময়ে তারা যেসব তথ্য-উপাত্ত ও অভিযোগ করে এসেছেন এ প্রতিবেদনে সেটাই উঠে এসেছে। তবে বাস্তবে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মতে, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এ দেশে সব সময়ই ছিল। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা এ দেশে কখনোই হয়নি। ২০১৮ সাল নয়, এর আগের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, মূলত যারা ক্ষমতায় থাকে, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সোমবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২২ সালের বিশ্বের মানবাধিকারের বিষয়গুলো তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে। সেখানে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ওই নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ভর্তি, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে উঠে আসে ২০২২ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেফতার, নির্যাতন অব্যাহত ছিল। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নাটকীয়ভাবে কমে যায়। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। কিন্তু এর তদন্ত ও বিচারে সরকার খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও সাংবাদিক নির্যাতনসহ নানা বিষয় স্থান পায় ওই প্রতিবেদনে

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না: ড. এ বি মির্জ্জা আজিজ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপদেষ্টা এবং দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনটি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এ ধরনের প্রতিবেদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতি বছরই প্রকাশ করা হয়। তবে আমেরিকা অনেক বড় ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। একটি বড় শক্তির পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা সংশ্লিষ্ট দেশের ইমেজ ধরে রাখার জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। মঙ্গলবার রাতে সঙ্গে টেলিফোন আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে প্রকাশিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে, তবে নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে ও সাংবাদিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়েনি। বিশেষ করে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমেনি। মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনের কারণে অর্থনীতিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির সঙ্গে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা জড়িত। আমেরিকাতেও পণ্য কিনছে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। ফলে এ ধরনের প্রতিবেদন বেসরকারি খাতের উপর এখনই কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব আসবে না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের প্রতিবেদন প্রতি বছরই প্রকাশ করে। এতে সরকারের সার্বিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এক ধরনের চাপ তৈরি হবে।

যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেছেন, অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজেদের চেহারা দেখুন। পৃথিবীর কোন দেশে ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র আছে? যারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন, তাদের দেশেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার আগে ঘরের খবর নিন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বংশালে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বংশাল ও কোতোয়ালি থানার ৫টি ওয়ার্ড ইউনিটের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজও তার পরাজয় মেনে নেননি। বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা বলেন? আপনাদের দেশেও (যুক্তরাষ্ট্র) গান অ্যাটাক হয়। অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজেদের চেহারা দেখুন। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ত্রুটিমুক্ত করতে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনিব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে এবং লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি যতই নালিশ করুক, বিদেশিদের কথায় বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মানবাধিকার রিপোর্ট তৈরির আগে আÍপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সেটি করেনি। এটি ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওপেন সোর্স থেকে এসব ইনফরমেশন (তথ্য) নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একটি বেসরকারি সংস্থা অধিকার। যেই সংস্থাটির অতীতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। যেসব সংগঠন অনিবন্ধিত, সেসব সংস্থার তথ্য ব্যবহার না করতে বলা হবে। তাছাড়া যেসব সংগঠন নিবন্ধিত না, সেসব সংগঠনকে আমলে নিয়ে কাজ করা বেআইনি, এটি নর্মসের (স্বাভাবিক বা ভদ্র আচরণ) মধ্যে পড়ে না। এসব থেকে দূরে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোকে অনুরোধ করব।

শাহরিয়ার আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ তথ্য তুলে ধরা হয়নি। সামনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এ প্রতিবেদনটির ত্রুটি তুলে ধরা হবে। যেন ২০২৪ প্রতিবেদনে বিষয়গুলো আর না থাকে।

প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। এ প্রতিবেদনে দেশে গুমের সংখ্যায় ভুল রয়েছে। তবে আমাদের কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আরাভ খান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয়ে না থাকলে বাংলাদেশের কোনো আসামি সুরক্ষিত থাকতে পারে না। দুবাইয়ের প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

সত্য উঠে এসেছে বাস্তবতা আরও ভয়াবহ: ড. মোশাররফ

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে সত্য উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এতদিন যেসব অভিযোগ করে আসছে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে যা এসেছে তা বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য ঘটনা। তবে যা এসেছে বাস্তবতা তার চেয়ে আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, গত নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কারও সন্দেহ নেই। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সত্য কথাই উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচন ভালো হওয়ার পরিবেশ এখনো দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। সেজন্য গত নির্বাচন নিয়ে এসব কথা এখন জোরালোভাবে সামনে আসছে। এর আগে ২০১৪ সালেও কোনো নির্বাচনই হয়নি। এই সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। গুম-খুন চলছে, ভোটের অধিকার নেই, দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে। অর্থনীতিসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু এগুলো দেশের সাধারণ মানুষ সবাই-ই জানেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার এই প্রতিবেদনকে তোয়াক্কা করে না, করবেও না। তারা বলে দেবে, এর কোনোটাই সঠিক নয়। কিন্তু জনগণ বুঝে গেছে, সরকার মিথ্যাচার করছে। তারা সবই গায়ের জোরে করে যাচ্ছে। তাদের গুন্ডাবাহিনী আছে, পুলিশ বাহিনী আছে। সবকিছুই তাদের হাতে কিন্তু সামনে এর পরিণতি আরও ভয়ংকর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই ছিল: মুজিবুল হক চুন্নু

জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এদেশে সব সময়ই ছিল। দলীয় সরকারের অধীনেও যেসব নির্বাচন হয়েছে, তখনও এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ছিল। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা এদেশে কখনোই হয়নি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই নির্বাচন নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনই এর আগের নির্বাচনগুলো নিয়েও প্রশ্ন আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য-মূলত যারা ক্ষমতায় থাকে, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

২০২২ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেওয়া প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মো. মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে খুব খারাপ, এটা শতভাগ ঠিক না। কোথাও কোথাও হয়তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। আমরা বরাবরই খুন-গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলম, এখনো সোচ্চার। আশার কথা হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এখন নেই বললেই চলে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, বিরোধী মত দমনের সংস্কৃতি এখনো বহাল আছে, এটি সত্যিই দুঃখজন। তবে এটাও সত্যি যে বিরোধীদলকে দমন-পীড়ন-নির্যাতন, এটা বিএনপিই ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথম শুরু করেছে। যার প্রথম শিকার জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাসহ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ওপর সবচেয়ে বেশি দমনপীড়ন ও নির্যাতন হয়েছে। এই সত্যটা অস্বীকার করলে চলবে না।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং সাংবাদিক নির্যাতন সম্পর্কে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেওয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা ঠিক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। আমরা এই আইনটি সংশোধনের জন্য এর আগেও বলেছি। এখনো মনে করি, আইনটি হয় প্রত্যাহার, না হয় সংশোধন করা উচিত। যাতে মিডিয়া ভয় না পেয়ে নির্বিঘ্নে সত্য প্রকাশ করতে পারে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নানা সময় নির্যাতন হচ্ছে। এই সেদিন আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে, যা সত্যিই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। এসব ঘটনা সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক।

আন্তর্জাতিক

মস্কো ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক বহুমুখী বিশ^কে শক্তিশালী করতে অবদান রাখছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোমবার এ কথা বলেন।
খবর তাস’র।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে বিশ^ব্যবস্থার মৌলিক নীতি ও বহুমুখী ব্যবস্থাকে জোরদার করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

পুতিন বলেন, এছাড়া উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আলোচনার অনেক বিষয় রয়েছে।

রুশ নেতা বলেন, কাল আমরা আমাদের অংশীদারদের অংশগ্রহণে এসব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পাবো। আজ আমি আনন্দিত আপনি অনানুষ্ঠানিক ও বন্ধুত্বপূণর্ পরিবেশে আমাদের আগ্রহের সকল বিষয়ে শান্তভাবে কথা বলতে ও আসতে সময় বের করা সম্ভব বলে মনে করেছেন।

চীনা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়ে পুতিন এসব কথা বলেন।

পুতিন ও শি তাদের মৌলিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে উভয় দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠক করবেন।

উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্ট বর্তমানে মস্কোয় তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক

দুবাইয়ে সোনার দোকান চালু করে আলোচনায় আসা আরাভ খানের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম রবিউল ইসলাম। তার বাংলাদেশি পরিচয়পত্র থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আরাভ খানের এনআইডিতে নাম আছে রবিউল ইসলাম। এনআইডিতে তার পিতার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাখি এবং রুমা নামে স্ত্রীর নাম উল্লেখ আছে।

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী, তিনি মাধ্যমিক পাস এবং জন্মস্থান বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে।

ঢাকায় পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও গত বছরের মার্চ এবং সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ফেসবুক লাইভে তিনি তার উপস্থিতির জানান দিয়েছিলেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে ভিসা নিয়েছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

আরাভ খান নামে দুবাইয়ের এ স্বর্ণ ব্যবসায়ী মূলত বাংলাদেশে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

২০১৮ সালে ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। দেশ থেকে পালিয়ে রবিউল ইসলাম প্রথমে ভারত যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী মারিউপোলে নিজে রাতে গাড়ি চালিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর এই প্রথম মারিউপোল সফর করলেন পুতিন।

বিবিসির দাবি, পুতিন মারিউপোলের বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিজে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে দেখেছেন। এ সময় তাকে পাশে বসা সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনাও করতে দেখা গেছে।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, শনিবার দিবাগত রাতে পুতিন মারিউপোল পরিদর্শন করেন এবং তিনি স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্তেই এই ভ্রমণে যান।

ইউক্রেনের দাবি, পুতিনের এই সফর প্রতীকী। কারণ মারিউপোলই রুশ হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সেই শহরে ভ্রমণ করে পুতিন ভিন্ন কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন।

মারিউপোলের বিভিন্ন এলাকায় হেঁটেও দেখেছেন পুতিন। কিছু জায়গায় তাকে থামতেও দেখা গেছে। তবে এই সফর সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি ক্রেমলিন।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের একজন কমান্ডার সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন।

রোববার ইসরাইলি গুপ্তঘাতরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেড ইসরাইলকে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘৩১ বছর বয়সি আলী রামজি আল-আসওয়াদ রোববার সকালে দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে জায়নবাদী শত্রুর কাপুরুষোচিত বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছেন।’

রোববারের কথিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ইসরাইলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

ইসলামিক জিহাদ এক বিবৃতিতে বলেছে, আসওয়াদের পরিবার ১৯৪৮ সালে হাইফা শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল এবং সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। যেখানেই তিনি যুবক হিসেবে সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৯ সালে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো নির্বাসিত জীবনযাপনকারী ইসলামিক জিহাদের নেতৃত্বের সদস্য আকরাম আল-আজুরির বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। আজুরির কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে তার ছেলে ওই হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত মাসে দামেস্কের আবাসিক এলাকায় বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন বলে সিরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইসলামিক জিহাদের একজন কর্মকর্তা একটি বিবৃতিতে ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিরোধের নেতাদের হত্যার প্রচেষ্টার (অবিলম্বে) দেরি না করে একটি নিষ্পত্তিমূলক জবাব দেওয়া হবে।’

ইসরাইল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত অংশের অভ্যন্তরের লক্ষ্যবস্তুতে শত শত হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে দামেস্ক ও আলেপ্পো বিমানবন্দরেও হামলা চালানো হয়েছে। তবে অভিযানগুলোকে খুব কমই স্বীকার করে বা আলোচনা করে।

আন্তর্জাতিক

বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

রোববার সকালে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির গুলশানস্থ বাসভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে যে শঙ্কা, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে আমীর খসরু বলেন, আগামী নির্বাচনকে কীভাবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, নরওয়ের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ।

সকাল ১০টায় বিএনপি মহাসচিবের গাড়ি গুলশান ২-এর ৫৫ নম্বর সড়কের ১৮ নং হাউসে প্রবেশ করে। আগে থেকে এই ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সাত দেশের রাষ্ট্রদূতরা অবস্থান করছিলেন।

আন্তর্জাতিক

আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া দুটি বৈরি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ যখন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের সম্ভাবনা দেখা যায়, তখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সেটিকে স্বাগত জানানোটাই রেওয়াজ।

শুক্রবার ইরান ও সৌদি আরব যখন সাত বছর পর তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুন-স্থাপনে রাজি হলো, তখন বাকি বিশ্ব তাই করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারা বিবৃতি দিয়ে এই সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে ব্যতিক্রম ছিল দুটি দেশের প্রতিক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দুটি দেশই ইরানকে চরম বৈরি হিসেবে দেখে, ইরানও এই দুটি দেশকে তাদের দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য এক নম্বর হুমকি বলে বিবেচনা করে।

হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্তকে ‘সতর্ক ভাষায়’ স্বাগত জানালেও এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন এটি টিকবে কি না।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ইরান তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবে কি না, তা দেখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া যাই হোক, বেশিরভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে এই সমঝোতা ওয়াশিংটনে মারাত্মক অস্বস্তি তৈরি করেছে।

ইসরায়েল অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো জানায়নি। কিন্তু ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে এই সমঝোতা তাদের মোটেই খুশি করেনি।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে পেরেছে, সেক্ষেত্রে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব মারাত্মকভাবে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলও এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ‘শত্রুর শত্রু আমাদের মিত্র‘ নীতি অনুসরণ করে ইরানের বৈরি কিছু উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

স্বাভাবিকভাবেই ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে যদি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেটি উপসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কে নতুন বিন্যাস তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল- দুটি দেশই মনে করে এই নতুন পরিস্থিতি কোনোভাবেই তাদের স্বার্থের অনুকূলে যাবে না।

ওয়াশিংটন কেন অস্বস্তিতে

বেইজিং থেকে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতার খবর যখন প্রথম এলো, সেটি ওয়াশিংটনে একই সঙ্গে বিস্ময় ও শঙ্কা তৈরি করে।

এর মূল কারণ অবশ্য ইরান-সৌদি আরব সমঝোতা নয়, তাদের অস্বস্তি এবং শঙ্কার মূল কারণ এই সমঝোতায় চীন যে ভূমিকা পালন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে সব ধরনের সংঘাতে রেফারির ভূমিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন তাদের সেই প্রভাব বলয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যেভাবে চীন ঢুকে পড়ছে- সেটি মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের জন্য সাংঘাতিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেলুনকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে গত কিছুদিন ধরে মারাত্মক টানাপোড়ন দেখা যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে চীনের এই ভূমিকাকে বিশ্বজুড়ে মার্কিন একাধিপত্যের প্রতি আরেকটি চ্যালেঞ্জ বলে বর্ণনা করছেন কেউ কেউ।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের ফেলো জেফরি ফেল্টম্যানের ভাষায়, বেইজিংয়ের এই ভূমিকাকে ‘বাইডেন প্রশাসনের মুখে চপেটাঘাত‘ এবং চীন যে এক উদীয়মান শক্তি-  সেভাবেই দেখা হবে।

চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা

বহু বছর ধরেই চীনের পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম ঘোষিত স্তম্ভ ছিল ‘অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো’। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে যে নতুন ঝোঁক, তাতে এই নীতির ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতে তাদের সক্রিয়ভাবে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করতে দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বারাক ওবামা প্রশাসনের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ড্যানিয়েল রাসেল রয়টার্সকে বলেন, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে এই সমঝোতায় চীন যে ভূমিকা পালন করেছে, ওয়াশিংটনের জন্য সেটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে।

তিনি বলেন, যে সংঘাতে চীন কোনো পক্ষ নয়, সেখানে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে এভাবে কূটনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা খুবই ব্যতিক্রমী এক ঘটনা।

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতে কি এরকমই আমরা দেখব? চীনের প্রেসিডেন্ট শি যখন মস্কো সফর করবেন, তখন সেখানে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতার যে চেষ্টা চীন করবে, এটি কি তার পূর্বাভাস?

চীনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে অনেকে সন্দিহান হয়ে উঠেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সদস্য মাইকেল ম্যাককল তো চীনকে ‘শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে মানতেই নারাজ। তার ভাষায়, চীন কোন দায়িত্বশীল শক্তি নয় এবং একজন নিরপেক্ষ এবং ন্যায্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাদের ওপর আস্থা রাখা যায় না।

এ ধরনের মধ্যস্থতায় চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে কোনো কোনো বিশ্লেষক বিশ্ব বলয়ে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়িষ্ণু শক্তির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জন অল্টারম্যান বলেন, কোন লুকোচুরি না করে বেইজিং যে বার্তা এখানে পাঠাতে চাইছে, তা হলো, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক শক্তির বিপরীতে চীন এক উদীয়মান এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত হতে চাইছে।

আন্তর্জাতিক

জি২০ তে ভারতের প্রেসিডেন্সিকে সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা অপার সম্ভাবনাসহ একটি ব্যতিক্রমী এবং অভূতপূর্ব সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর নীতিবাক্য নিয়ে ভারত জি২০ প্রেসিডেন্সির বছরব্যাপী যাত্রা শুরু করেছে।

প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির দিকে আন্তর্জাতিক সমন্বয় পরিচালনার জন্য একটি অপরিসীম সুযোগ রয়েছে।

যাইহোক, ভারতের প্রেসিডেন্সিতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে যা বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাদের এটির সঙ্গে অনেক প্রত্যাশা যুক্ত করেছে।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যা এবং আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলাকারী সংস্থা হিসাবে শুরু করা জি২০ অর্থ ও শেরপা স্ট্রিমগুলিতে নিজেকে বিভক্ত করে বহুত্ববাদের চেতনা দেখিয়েছে।

এছাড়া শেরপা ট্র্যাক, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সমস্যা নিয়ে কাজ করাসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত উন্নয়নমূলক বিষয়ে কর্মরত দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্সির জন্য ভারতের নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, লিঙ্গ সমতা, শান্তি এবং নিরাপত্তা এবং সর্বজনীন সুবিধার জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে নানারকম সংযোগকে কাজে লাগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির এজেন্ডা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা নির্ধারিত অগ্রাধিকারগুলোতে যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে সবুজ উন্নয়ন, জলবায়ু অর্থ ও জীবন, ত্বরান্বিত অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো, ২১ শতকের বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান এবং নারী-নেতৃত্বের উন্নয়ন।

এই অগ্রাধিকারগুলো অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে লক্ষ্য করে ডব্লিউটিও-এর প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ব্যক্তিদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তোলে।

স্বাধীনতার পর থেকে ভারত স্বৈরাচারী পরাশক্তি ছাড়া বহুত্ববাদী এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের কল্পনা করেছে। এটি এমন একটি বিশ্বের কল্পনা করেছে যেখানে দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্ব শান্তি এবং সমগ্র বিশ্বের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকবে।

এইভাবে বাসুধৈব কুটুম্বকমের নীতিবাক্যের সাথে ভারতীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব শান্তি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়নের একটি বিশ্বব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এই ধরনের একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা তার বৈচিত্র্য এবং সমষ্টিবাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে উদ্ভূত।

ভারতের প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলির মধ্যে অনন্য মৌলিক কিছু আছে। জি২০-এর সাথে ভারত যে ভালো অর্থনীতি এবং দর্শন সংযুক্ত করে তার মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলি রয়েছে৷ সামাজিক কল্যাণ এবং ন্যায়সঙ্গত বন্টনের নীতিগুলি জনসাধারণের জীবনযাত্রার সর্বব্যাপী উন্নতির শেষ লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতিতে প্রতিফলিত হয় এবং বিশ্বকে আরও ন্যায়সঙ্গত জায়গায় পরিণত করে।

ভারত তার উপনিবেশের ইতিহাস এবং উন্নয়নের জন্য বছরের পর বছর সংগ্রামের কারণে এই লক্ষ্যের গুরুত্ব বুঝতে পারে।

একই চেতনায় গ্লোবাল সাউথের উত্থানের জন্য ভারতের ওকালতি আধিপত্য অর্জনের এজেন্ডা নয়, বরং এটি বৈষম্যমূলক অনুশীলনের বিরুদ্ধে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন, একটি গণতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা এবং উন্নত জীবনযাত্রার জন্য তার আওয়াজ তোলার একটি কাজ। এটি সবার জন্য।

সাউথ-সাউথ সহযোগিতার আহ্বান হলো সাধারণ সমস্যা এবং আকাঙ্খাসহ দেশগুলিকে একত্রে আনার জন্য একটি উন্নতমানের জীবনযাত্রার লক্ষ্য অর্জনে মাপকাঠির অর্থনীতি নিশ্চিত করা। শান্তির বিষয়ে ভারতের অবস্থান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায় স্পষ্ট যে ’আজকের যুগ যুদ্ধের নয়’, তার এই উকিত সমালোচকদের শান্ত করে।

এ কারণে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আনয়নের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে সমগ্র বিশ্ব ভারতের দিকেও তাকাতে শুরু করেছে। এইভাবে ভারতও বিশ্ব শান্তিরক্ষকের অবস্থান অর্জন করেছে।

আন্তর্জাতিক

ভাঙনের মুখে পড়েছে পাকিস্তান সরকার। প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না করা নিয়ে জোটের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে শাহবাজ শরীফের সরকারে।

সোমবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। খবরে বলা হয়েছে, সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে বচসায় সরকার থেকে বরে হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। শরীফের জোট সরকারের অন্যতম প্রধান তার দল পিপিপি।

বিলাওয়াল বলেছেন, সিন্ধু প্রদেশের বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রীয় সরকার যদি পূরণ না করে পিপিপির পক্ষে ফেডারেল সরকারে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

জোট সরকার নিয়ে বেনজীর ভুট্টোর ছেলে খানিকটা বিরক্তও। সিন্ধুর বর্তমান পরিস্থিতিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

রোববার করাচিতে বিআইএসপির অধীনে বন্যাকবলিত কৃষকদের ভর্তুকির অংশ হিসেবে বীজ প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করে জোট ছাড়ার হুমকি দেন বিলাওয়াল।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সিন্ধু প্রদেশের খয়েরপুর জেলার বন্যাকবলিত পীর গুড্ডু ও কোট ডিজি এলাকায় যান। সেখানে তিনি পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় বন্যা দুর্গতদের জন্য ঘর নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি।

সরকারের দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে তার মনে। অনুষ্ঠানে দুঃখ প্রকাশ করে বিলাওয়াল বলেন, ফেডারেল সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বন্যা দুর্গতদের অগ্রাধিকার দেওয়া। ফেডারেল সরকার বা প্রধানমন্ত্রী উচিত তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

এ সময় পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বন্যাকবলিত জনগোষ্ঠী কঠিন সময় পার করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সিন্ধু প্রদেশের ক্ষমতায় থাকা পিপিপি চেয়ারম্যান জানান, ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরবে। তিনি আশা করেন ফেডারেল সরকার ভুক্তভোগীদের উদ্বেগ দূর করবে।

দেশটিতে চলমান প্রথম ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়েও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে জোট সরকারে। এ শুমারিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিলাওয়াল। তার দাবি, অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় সিন্ধুতে আবাসন আদমশুমারির ফলাফলে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। পিটিআই সরকারের নাম না নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে একবার আদমশুমারি হয়। তখন একটি ‘বাছাইকৃত’ দলকে ক্ষমতায় আনাই ছিল লক্ষ্য। ফেডারেল সরকারের কাছে ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়ে আপত্তি পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ সংক্রান্ত আরও অভিযোগের কোনো প্রতিকার না হলে সিন্ধু সরকার ডিজিটাল আদমশুমারিকে সমর্থন করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।

আন্তর্জাতিক

এ বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা নিবন্ধনের জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন। নিবন্ধনের সময় আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

এবারই রেকর্ড খরচে হজ পালন করতে হচ্ছে। বিমান ভাড়াও গত বছরের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বেশি।

সর্বশেষ হিসাব মতে (১ মার্চ পর্যন্ত) হজে যেতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩৫ হাজার ৫৩৫ জন (সরকারিভাবে ৭ হাজার ৫৫৫ ও বেসরকারিভাবে ২৭ হাজার ৯৮০)। অর্থাৎ এক লাখ ২৭ হাজারের কোটা পূরণ করতে প্রয়োজন আরও ৯১ হাজার হজযাত্রী।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের হজযাত্রার খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে। তাতে দেখা গেছে, এসব দেশগুলোর চেয়ে হজযাত্রায় বাংলাদেশিদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।

ভারত
২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯ সালে হজে যেতে জনপ্রতি খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু পরের বছর এই খরচ বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা নির্ধারণ করেছিল রাজ্যের হজ কমিটি। তবে এই বছর হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত খরচের তথ্য জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভারতে হজে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পাকিস্তান
চলতি বছর হজের খরচ এখনো চূড়ান্ত করেনি দেশটির সরকার। তবে পাকিস্তান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ উমর বাট গত শনিবার জানিয়েছেন, এবার হজে যেতে জনপ্রতি ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।

মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া থেকে হজে যেতে সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। গত বছরের ২২ এপ্রিল দেশটির সরকার হজে যাওয়ার এই খরচ ঘোষণা করে।

এতে বলা হয়েছে, বি-৪০ গ্রুপের (যে পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম) মুসল্লিদের জন্য ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। আর যেসব পরিবারের মাসিক আয় এর চেয়ে বেশি, তাদের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিভাগের মন্ত্রী ইদ্রিস আহমাদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রতিবছর হজে ভর্তুকি হিসেবে সরকার ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়।

ইন্দোনেশিয়া
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। অন্যান্য দেশের তুলনায় হজযাত্রায় দেশটির মুসলমানদের অনেক কম টাকা খরচ করতে হয়। সেখানে হজে যেতে হলে জনপ্রতি ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ টাকা খরচ হয়। হজযাত্রায় আরও টাকা লাগলে সেটি সরকারের ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।

২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী লুকমান হাকিম দাবি করেছিলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে হজে যেতে একজন মুসল্লিকে সবচেয়ে কম টাকা খরচ করতে হয়।