আন্তর্জাতিক

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ওই চুক্তির আওতায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত সরকারের থেকে কর সুবিধা পেলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই সুবিধা দেয়নি আদানি।

বরং গোপন করে গেছে সেই সুবিধা পাওয়ার তথ্যও।
পূর্ব ভারতের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিটি বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের নথি এবং দুই পক্ষের মধ্যে চালাচালি হওয়া চিঠিপত্র অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই এ চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন।

চুক্তিটিও বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তাই এ বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে ফের দরকষাকষি করতে চায় ঢাকা।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও আদানি পাওয়ারের বিল পুরোটা পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে সরবরাহ করা বিদ্যুতের বিল বাবদ বাংলাদেশের কাছে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে আদানির। তবে পাওনার সঠিক অঙ্ক নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ রয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, আদানি ছাড়াই স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না থাকলেও স্থানীয় উৎপাদনই পর্যাপ্ত।

রয়টার্স জানায়, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল বিদ্যুৎ চুক্তির সঙ্গে ছিল আরেকটি বাড়তি বাস্তবায়ন চুক্তি। সেই চুক্তিতে কর সুবিধা হস্তান্তর বা ভাগাভাগির শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বাংলাদেশ এখন ২৫ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রসিকিউটররা আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে যে মামলা করেছেন, তা কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটিকে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে চাপ দিতে পারবে বলে আশা করছে ঢাকা।

যদিও বাংলাদেশে আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে আদানির এক মুখপাত্র বলেন, কোম্পানিটি সব চুক্তিগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। ঢাকা চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি। কর সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোম্পানিটি সেসবের উত্তর দেয়নি।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে আদানি বলছে, প্রকল্পটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ সালে দিল্লি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা দেয়। এর ফলে কেন্দ্রটি আয়কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য কর সুবিধা পায়।

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ার ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তি এবং বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর-সংক্রান্ত সুবিধার পরিবর্তন দ্রুত বাংলাদেশকে জানানোর এবং সেই সুবিধা বাংলাদেশকেও দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল আদানি পাওয়ারের।

কিন্তু এ সুবিধার কথা জানানো কিংবা সুবিধা ভাগাভাগি— কোনোটিই করেনি আদানি পাওয়ার। ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পাঠানো চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। চিঠিগুলোর কপি রয়টার্সের হাতে রয়েছে। ওই চিঠিগুলোতে বাংলাদেশকে এসব সুবিধা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে কোম্পানিটিকে।

মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে বিপিডিবির দুজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, তারা আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। ওই কর্মকর্তারা জানান, বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, কর সুবিধা হস্তান্তর করা হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ০.৩৫ সেন্ট ব্যয় সাশ্রয় হতো।

রয়টার্সের দেখা বাংলাদেশ সরকারের একটি নথির তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এই হিসাবে বাংলাদেশের মোট সাশ্রয় হতে পারত প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, ভবিষ্যতে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় ব্যয় সাশ্রয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে।

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আদানির কোম্পানির সঙ্গে নাইরোবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড সংস্কারের আকর্ষণীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

এর কয়েকদিন পর ইউরোপের বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি টোটালএনার্জিস ঘোষণা দেয়, তারা আর আদানির প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে না। এখন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা—যেখানে ভারত ও চীন প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা লিপ্ত—আদানির সঙ্গে তাদের বিভিন্ন চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে। কিছুদিন আগে নিউইউর্ক টাইমসও এমন খবর জানায়।

আন্তর্জাতিক

ইয়েমেনে উত্তেজনা বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আরব দেশটির আনসারুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

সোমবার আনসারুল্লাহ সদস্য এবং ইয়েমেনের জেনারেল করপোরেশন ফর রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুর রহমান আল-আহনুমি তার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে বলেন,

‘অধিকৃত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইয়েমেনি জনগণের সমর্থন বন্ধ করতে ইয়েমেনের মার্কিন দূতাবাস তাদের ভাড়াটে সেনাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে। তবে এদেশে উত্তেজনা বাড়ালে তা মার্কিন সেনা, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন তেল স্থাপনাগুলো এবং ওয়াশিংটন ও তাদের মিত্রদের জন্য নরকের দরজা খুলে দেবে’।

মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার হুঁশিয়ারি

আহনুমি আরও বলেন, ‘আমরা যেখানেই মার্কিন স্বার্থ বা ঘাঁটি খুঁজে পাব—হোক সেটা আফ্রিকা বা পারস্য উপসাগর—আমরা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত। ইয়েমেন বহু আগেই এর জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে’।

একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, মার্কিন আগ্রাসনের জবাবে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এর আগেও আমেরিকান জাহাজ ও নৌযানগুলোকে বৈধ লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল।

তাই নতুন করে উত্তেজনা বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বড় মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই আনসারুল্লাহ সদস্য।

মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান হামলা

এদিকে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন ও ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান যৌথভাবে ইয়েমেনের উত্তরের হাজ্জা প্রদেশে একটি আক্রমণ চালিয়েছে। লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে আরব দেশটি চলমান সামুদ্রিক অভিযানের মধ্যেই ওই হামলা চালায় পশ্চিমা বাহিনী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইয়েমেনের আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আল-মাসিরা জানিয়েছে, সোমবার সকালের এই বিমান হামলাগুলো মিডি জেলার বুহাইস এলাকায় আঘাত হেনেছে।

এছাড়া কৌশলগত পশ্চিমাঞ্চলীয় হুদেইদা প্রদেশের আত-তুহাইতা জেলাতেও হামলা চালানো হয়। তবে এ হামলায় সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

ফিলিস্তিনের প্রতি ইয়েমেনের সমর্থন

ইসরাইল গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে ইয়েমেনি বাহিনী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন ঘোষণা করে। এরই জেরে লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে আসছে আরব দেশটি।

আনসারুল্লাহ ও ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ‘গাজায় ইসরাইলের স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের হামলা বন্ধ করব না’।

এদিকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলন একাত্মভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা ফিলিস্তিনি সংগ্রামের পাশে থাকবে। মার্কিন ও পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। সূত্র: প্রেস টিভি ও মেহের নিউজ

আন্তর্জাতিক

ভারতের লোকসভায় সরব হলেন কংগ্রেসের প্রথমবারের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভারত সরকারের তরফ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন চলছে। লাগাতার আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দু, খ্রিস্টান-সহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ।

এরপরই প্রিয়াঙ্কা দাবি তোলেন, এবার সময়ে এসেছে- ভারত সরকারের ফের একবার বাংলাদেশ ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন থামাতে মূলত দুটি দাবি উত্থাপন করেন প্রিয়াঙ্কা। তার বক্তব্য, প্রথমত- ভারত সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দ্বিতীয়ত- ভারত সরকারকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অনাচার ও অত্যাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত মোদি সরকারকে খুব বড় কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। যদিও ইতোমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সংখ্যালঘু নিপীড়নের সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের তরফ থেকেও তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং ভারতের মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারপরও চিত্রটা বিশেষ বদলায়নি।

এদিকে এদিন (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজয় দিবসকে ‘ভারতের জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে ‘মহান বিজয় দিবস’ পালন অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যোগ দিলেও সেখানে ভারতের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হওয়ার পর এই দিনটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। যার ফল- স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণ করেন ওয়েনাডের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যে বীর সেনাদের অনমনীয় সংগ্রাম সেইদিন বিজয় এনে দিয়েছিল, তাদের তিনি শ্রদ্ধা জানান।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তারই নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি মনে করিয়ে দেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা নিদারুণ অত্যাচার চালাচ্ছে, তখন বাকি বিশ্ব শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও (প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন) তৎকালীন ভারত সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশকে রক্ষা করতে।

এ প্রেক্ষাপটে লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনার কাছে পাক বাহিনীর নতি স্বীকারের সাক্ষ্য- সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের বিখ্যাত ছবিটি পর্যন্ত তার স্থান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে! যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

আন্তর্জাতিক

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কার্যক্রমে সমর্থন জানিয়ে দুটি প্রস্তাবনা পাস হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর কার্যক্রমে সমর্থন জানিয়ে দুটি প্রস্তাবনা পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

আল-জাজিরা জানায়, বুধবার গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করা প্রস্তাবের পক্ষে সাধারণ পরিষদের ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১৫৮টি দেশ ভোট দিয়েছে। ৯ সদস্য দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত এবং ১৩টি সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

আর জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-একে সমর্থন জানিয়ে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৯ দেশ। ৯ দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় আর ১১ দেশ ভোটদানে বিরত ছিল বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, “গাজার আর অস্তিত্ব নেই। গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষুধা, হতাশা ও মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই যুদ্ধ আর চলতে পারে না। আমাদের এখনই যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখনই বন্দীদের বাড়ি ফেরানো দরকার।”

অন্যদিকে, জাতিসংঘে আলজেরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত বলেন, ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডির মুখে নীরবতা ও ব্যর্থতার মূল্য খুবই চড়া। কাল আরও চড়া হবে।”

গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় এই গোষ্ঠী বিরুদ্ধে অভিযানে নির্বিচারে বোমা ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

ভারতে বসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, ভারত তা সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের সভাপতিত্বে ভারতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে তিনি এ কথা জানান।

বৈঠকে মিশ্রি তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেন।

মিশ্রী বলেন, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের সাথে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এই সম্পর্কের ভিত্তি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেই নিহিত।

তিনি জানান, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে কোনো আলাদা প্ল্যাটফর্ম দেয়নি, বরং হাসিনা তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সমালোচনা ও বক্তব্য দিচ্ছেন।

মিশ্রী আরও বলেন, ঢাকায় তার সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছেন, ভারত জনগণের সাথে সম্পর্ক অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমান সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।

তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এক ধরনের অস্বীকৃতি রয়েছে যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এই হামলাগুলোকে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা বলে যুক্তি দেখালেও মিশ্রী ব্যাখ্যা করেন, এমন যুক্তি এই ধরনের আক্রমণের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে পারে না।

তিনি মন্দির ও ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর সত্যতা মেনে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের এই ধরনের ঘটনায় যে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তারের করেছে তা ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। এই সময় মিশ্রী সাবেক ইসকন নেতার গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সন্ত্রাসী’র ভারত-বিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভুল তথ্য প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়।

তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য ও সংযোগ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে রেল লিঙ্ক, বাস লিঙ্ক এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ তৈরি হয়েছে। তবে, তিনি কমিটিকে জানিয়েছেন যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা ‘স্থগিত’ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারত ষোল লাখ ভিসা ইস্যু করেছে।

ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি তার আলোচনায় আসেনি বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)-এ যোগ দিতে গত সোমবার ঢাকা সফর করেন বিক্রম মিশ্রি। ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা ত্যাগ করেন।

আন্তর্জাতিক

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই জানা হয়ে গিয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। ধারণা করা হচ্ছিল এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত রাশিয়ায় জয়ী হবে। এবার সেই আভাসই মিলতে শুরু করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে আপসে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভালোদেমির জেলেনস্কি।

চলতি সপ্তাহে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি তাড়াতাড়ি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি চান। তবে এক্ষেত্রে তার শর্ত হচ্ছে— ন্যাটো সদস্যপদ নিশ্চিত হতে হবে ইউক্রেনের। সেই সঙ্গে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ডের সুরক্ষা নিশ্চিতের গ্যারান্টি দিতে হবে ন্যাটোকে। আর সেটি হলেই কেবল রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যাবে তারা। এক্ষেত্রে রাশিয়ার দখলে নেওয়া ভূখণ্ডের দাবি করতে না তারা।

চলমান যুদ্ধ প্রসঙ্গে স্কাই নিউজের প্রধান প্রতিবেদক স্টুয়ার্ট রামসকে জেলেনস্কি বলেন, ‘ন্যাটো যদি বর্তমানে ইউক্রেনের দখলে থাকা কিয়েভের নিয়ন্ত্রিত অংশের সুরক্ষা গ্যারান্টি দেয় তবে যুদ্ধের গরম পর্ব শেষ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে রাশিয়ার দখলে থাকা জমি ফেরত নিয়ে পরে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা হতে পারে।’ তার এমন কথা সোমবার জাপানি বার্তা সংস্থা কিয়োডো নিউজে ফের পুণর্ব্যক্ত করেছেন জেলেনস্কি। যাতে পরিষ্কার রাশিয়ার সঙ্গে আপসে যাচ্ছেন তিনি।

তিনি স্কাই নিউজকে তখন আরও জানান, ‘যদি আমরা যুদ্ধের উত্তপ্ত পর্ব বন্ধ করতে চাই, তাহলে আমাদের ইউক্রেনের যে ভূখণ্ড আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে তা ন্যাটোর ছত্রছায়ায় নিতে হবে। এটি দ্রুত করতে হবে। এবং তারপর ইউক্রেনের অধিকৃত ভূখণ্ড পরবর্তীতে কূটনৈতিক উপায়ে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।’

তবে এক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতির পূর্বে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকেও একটি গ্যারান্টি চান যে- নতুন করে আর কোনো অঞ্চল দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে না রাশিয়া।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করেছে। এর মধ্যে ক্রিমিয়াও রয়েছে, যা রাশিয়া ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর নতুন করে দোনেস্ক, খেরসন, লুহানস্ক এবং জাপোরিঝিয়ার বিশাল অংশ দখল করেছে রাশিয়া।

আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ভাষণে ইউন সুক-ইওল বলেন, ‘উদারপন্থী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন শক্তি উৎখাত করতে, আমি জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করছি।’

‘বিধ্বংসী ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির আগ্রাসনের মুখে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং মানুষের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না’-যোগ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট।

ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির শীর্ষ নেতা হান ডং-হুন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন। তিনি সামরিক আইন জারির ঘোষণাকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির পর জরুরী বৈঠক ডেকেছে অন্যতম বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত সংসদে নিজেদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে বাঁধার সম্মুখীন হন ইউন সুক-ইওল।

আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে অভিবাসন বিভাগ। হারিয়ান মেট্রোর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে ৭ হাজার ৮২২ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৪১ হাজার ২৩৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার ১২ হাজার ৫৮৮ জন। মিয়ানমারের ৭ হাজার ১১২ জন নাগরিক গ্রেফতার। চলমান অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ১ হাজার ৬০৭ জন নিয়োগকর্তাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা।

সোমবার ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. শামসুল আনোয়ার নাসারাহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/১৯৬৩, পাসপোর্ট অ্যাক্ট ১৯৬৬ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত, অভিবাসন বিভাগ ১৭ হাজার ৮২৫টি এনফোর্সমেন্ট অপারেশন চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে জনসাধারণের অভিযোগসহ চিহ্নিত হটস্পট অবস্থানগুলোতে প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, কেডিএন অন্যান্য সংস্থা যেমন রয়্যাল মালয়েশিয়ান পুলিশ (পিডিআরএম), রয়্যাল মালয়েশিয়ান কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট (জেকেডিএম), স্থানীয় কর্তৃপক্ষের (পিবিটি) সমন্বয়ে অবৈধ অভিবাসী রোধে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এবং অবৈধ অভিবাসীকে রক্ষাকারী দল যারা অভিবাসন আইনের অধীনে আইন লঙ্ঘন করে তাদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সময়ে সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে মন্ত্রী বলেন, আমরা আরও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি, কিন্তু আমরা আইন ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের সঙ্গে আপনয়, বরং এটা রক্ষা করা আমাদের অধিকার।

আন্তর্জাতিক

ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাংলাদেশের পতাকায়ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে ওই কনভেনশন লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।

এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বাংলাদেশ সরকার আরও জানাতে চায় যে, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নে এসেছে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, যেহেতু কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সেই দেশের সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানায়। ভারতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও অকূটনীতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনৈতিক মিশনে যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানায়।

প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় কূটনীতিকদের আচরণ বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে সই করা হয় ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপলোম্যাটিক রিলেশন। এতে মোট ৫৩টি আর্টিকেল বা ধারা রয়েছে।

এ চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল কিছু নিয়ম-নীতি এবং সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন। সেসময় স্বাধীন দেশগুলো ওই চুক্তিতে সই করেছিল। পরে ধাপে ধাপে যেসব দেশ স্বাধীন হতে থাকে তারাও এই চুক্তিতে নিজেদের অন্তর্ভূক্ত করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই চুক্তিতে সই করে ১৯৭৮ সালে। এই চুক্তির ১২নং ধারায় বলা হয়েছে, কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে গ্রাহক দেশকে। আর মিশনের অফিস এলাকায় বিদেশি কূটনীতিক মিশন প্রধানের অনুমতি ছাড়া গ্রাহক দেশের সরকারও প্রবেশ করতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, সিরিয়ার সংকটের বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোকেই ব্যবস্থা নিতে।

দেশটিতে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের পুনরুত্থানের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল যেন এই পরিস্থিতিতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে এবং তাদের শোষণের প্রচেষ্টা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

রোববার ইরানের পার্লামেন্টের একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় মাসুদ পেজেশকিয়ান সিরিয়ার সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং আলেপ্পো ও ইদলিবসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী ও বিদেশি সমর্থিত তাকফিরি সন্ত্রাসীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, মুসলিম দেশগুলো এতে হস্তক্ষেপ করবে এবং এই দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আমেরিকা ও ইসরাইলকে সুযোগ নিতে দেব না’।

পেজেশকিয়ান বলেন, তাকফিরি সন্ত্রাসীদের আক্রমণ আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে। এই কর্মকাণ্ডগুলো আমেরিকা ও ইউরোপীয় অস্ত্র ব্যবহার করেই পরিচালিত হচ্ছে।

বুধবার থেকে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের মিত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আলেপ্পো অঞ্চলে প্রবেশ করে কিছু এলাকা দখল করেছে। সিরিয়ার সরকার ও জনপ্রিয় বাহিনীর সঙ্গে তাদের তীব্র সংঘর্ষ চলছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী রুশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযান পরিচালনা করছে।

সিরিয়ার সংকট

২০১১ সালের মার্চ থেকে সিরিয়া বিদেশি সমর্থিত সহিংসতায় জর্জরিত। দামেস্ক দাবি করে আসছে, পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে, যা আরব দেশটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।

গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন

পেজেশকিয়ান পশ্চিমা-সমর্থিত ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। বিশেষত গাজা উপত্যকা এবং দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে।

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ এবং রক্তপাত চাই না। যারা যুদ্ধ ও রক্তপাত ঘটায়, তারাই নিজেদের শান্তি ও মানবাধিকারের সমর্থক বলে দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধ চলাকালীন ইসরাইলি বাহিনী ১০ হাজার শিশু হত্যা করেছে এবং তথাকথিত মানবাধিকারের সমর্থকরা কেবল নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। এটি একটি লজ্জাজনক আচরণ।

পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতা

পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেছেন, গাজা এবং লেবাননে যে ‘ন্যক্কারজনক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহের ফল।

তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একত্রিত হওয়া এবং সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মতো ইসলামি দেশগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো অত্যন্ত জরুরি। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি