আন্তর্জাতিক

অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বগ্রহণের আগ পর্যন্ত সাংবিধানিকভাবে ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকবেন।

এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

টুইটবার্তায় আরিফ আলভি বলেন, সংবিধানের ২২৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘এ’ ধারার ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকবেন।

রোববার (৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়। পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ওই প্রস্তাবের বিষয়ে ভোটাভুটি করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বিরোধীদের আনা প্রস্তাবটিকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেন।

আন্তর্জাতিক

ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই একটি নৌযান ডুবে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নৌযানটি লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরুর পর আন্তর্জাতিক জলসীমায় ডুবে যায়।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত শনিবার (২ এপ্রিল) ভোরে আলেগ্রিয়া-১ নামের একটি বাণিজ্যিক ট্যাংকার চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আলেগ্রিয়া-১-এর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। জীবিত উদ্ধার ওই ৪ ব্যক্তি জানিয়েছেন প্রায় ১০০ জনকে নিয়ে নৌযানটি অন্তত ৪ দিন সাগরে ছিল। ’

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তারা ট্যাংকারের সঙ্গে যোগাযোগের নথিটি দেখেছে। এতে ট্যাংকার কর্তৃপক্ষ বলেছে, সাগরে ডুবে ৯৬ জনের মতো অভিবাসী প্রত্যাশী মারা গেছেন।

এক টুইট বার্তাায় জাতিসংঘের শরণার্থী প্রধান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘ভূমধ্যসাগরে আরও একটি ট্র্যাজেডিতে ৯০ জনের বেশি মারা গেছেন। ’

টুইটে তিনি আরও বলেছেন, ‘ইউরোপ উদার ও কার্যকরভাবে ইউক্রেন থেকে ৪০ লাখ শরণার্থীকে সাদরে গ্রহণ করে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। কীভাবে অন্যান্য উদ্বাস্তু ও দরজায় কড়া নাড়া অভিবাসীর ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা যায়, তাদের (ইউরোপ) এখন জরুরি ভাবে তা বিবেচনা করা উচিত। ’

অপরদিকে এমএসএফ বলেছে, শনিবার যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের জরুরি সুরক্ষা এবং যত্নের প্রয়োজন। বেঁচে থাকা কাউকে এমন জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যেখানে তারা আটক, অপব্যবহার এবং দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়। লিবিয়া নিরাপত্তার জায়গা নয়।

এদিকে ইউরোপীয় উপকূলে অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। কারণ ফিরে আসার পর এসব অভিবাসী প্রত্যাশীদের অনেককে আটক কেন্দ্রে আরও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের সম্মুখীন হয়।

আন্তর্জাতিক

কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিনকেনের আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

রোববার (০৩ এপ্রিল) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইএডি বিমানবন্দরে পৌঁছালে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান।

সোমবার (০৪ এপ্রিল) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ড. মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউএসএআইডি’র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কয়েকটি সেমিনারেও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া ৭ এপ্রিল ফ্লোরিডার মায়ামিতে স্থাপিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক

একসময় ক্রিকেটের ২২ গজের পিচে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সাবেক এই অলরাউন্ড ইমরান খান। ক্রিকেট মাঠ থেকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রবেশ, এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সেখানেও নিজেকে অলরাউন্ডার প্রমাণ করেছেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।

তবে ক্রিকেটের মতোই রাজনৈতিক জীবনেও উত্থানপতন আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো দেশে, সেখানে কোনো প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি, সেখানে এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি তেমনই টালমাতাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি ইমরান খান। দেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনার অভিযোগে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েছিলেন ইমরান খান। অবশ্য আপাতত নিজের বাঁচিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।

জাতীয় পরিষদের স্পিকার তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় ইমরান খানের অনুরোধে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভি। এরপরই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ইমরান খান।

অবশ্য রোববারের অনাস্থা ভোটের আগেই বিষয়টি সামাল দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। শনিবার লাইভ সম্প্রচারেই এক নাগরিকের প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় পরিষদের অনাস্থা ভোট নিয়ে তার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, আমার একাধিক পরিকল্পনা আছে। কাল আমিই জিতব।

তবে অনাস্থা ভোট ঠেকালেও আগাম নির্বাচন ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আসলে কী বয়ে আনবে সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ইমরান খানের পর পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি নওয়াজ শরিফের ভাই বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ।

শাহবাজ শরিফও ধোয়া তুলসি পাতা নন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। যদিও বিরোধীরা ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে শাহবাজ শরিফকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একতরফা ঘোষণা দিয়েছে। ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আইনসভায় এরই মধ্যে ভাষণও দিয়েছেন শাহবাজ খান।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ইমরান খানতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ‘অপ্রতিরোধ্য সাফল্য’ দেখিয়েছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক ডামাডোলে ইমরান খানের অবস্থা যে পর্যায়েই দাঁড়াক না কেন দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সম্প্রতি নির্বাচন সেই বিষয়টিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের টালমাটাল রাজনীতিতে ‘অলরাউন্ডার’ ইমরান খান নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে পারবেন কী না তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক

পবিত্র ওমরাহ পালন করতে নারীদের আর পুরুষ অভিভাবকের প্রয়োজন হবে বলে না যে ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরব, তা থেকে সরে এসেছে দেশটি।

মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম মনীষীদের কঠোর সমালোচনার পর সৌদি আরব এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পারিরর্তন করেছে। খবর আরব নিউজের।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কমিটির সদস্য সাঈদ বাগাশওয়ান মিসরের একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুরুষ অভিভাবক বা ‘মাহরাম’ ছাড়া নারীদের হজ বা ওমরাহ পালনের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে।

এখন থেকে ৪৫ বছর বা ততোর্ধ্ব বয়সি নারীরাই কেবল পুরুষ অভিভাবক ছাড়া হজ করতে পারবেন। এর চেয়ে কম বয়সি নারী ও তরুণীদের অবশ্যই মাহরাম নিয়ে হজে আসতে হবে।

এর আগে সৌদি ঘোষণা করেছিল, কোনো পুরুষ অভিভাবক বা মাহরাম ছাড়াই ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি নারীদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেবে সৌদি আরব। তবে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে— একটি দলের অংশ হিসাবে ওমরাহ পালনে যেতে হবে নারীদের।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় তখন জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওমরাহ বা হজ যাত্রার জন্য আবেদন করা নারীদের কমপক্ষে ১ ডোজ টিকা নিতে হবে। এছাড়া কোনো ধরনের অসুস্থতা থাকা যাবে না।

এদিকে দেশটির এই মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরবে বসবাসরত এবং সৌদি নাগরিক, যারা গত ৫ বছরে হজ করেননি তারা চলতি বছরে হজের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথার বাড়াবাড়ি যুদ্ধবিরতির পথ বাধাগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইউক্রেনে হামলা করায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ক্ষমতায় থাকতে পারেন না’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা মন্তব্যকে ইঙ্গিত করেই এ কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।

ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ল ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি এবং তারপরে রুশ সেনা প্রত্যাহার লক্ষ্য ছিল। তবে কথা কিংবা কাজের বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এটা সম্ভব হবে না।

এর আগে, শনিবার পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ইউক্রেনের শরণার্থীদের কাছে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনে পুতিনকে ‘কসাই’ আখ্যায়িত করেন বাইডেন।

ওয়ারশর রয়্যাল কাসলে দেওয়া ভাষণে বাইডেন সোভিয়েত লৌহ যবনিকার অধীনে পোল্যান্ডের চার দশকের ইতিহাস মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে রাশিয়ার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জরুরি ভিত্তিতে একাট্টা হওয়া দরকার।

বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলন, ঈশ্বরের দোহাই— এ লোকটা ক্ষমতায় থাকতে পারে না।

এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিন বলছে, পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন কিনা, তা বাইডেন বলার কে?

হোয়াইট হাউস অবশ্য পরে বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের ডাক দেননি। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক

প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর ইউরোপের যে নির্ভরতা, তার বিকল্প উৎস ‘বাস্তবে পাওয়া সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী সাদ শেহরিদা আল-কাবি।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সরবরাহকৃত গ্যাসের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে।

ইউক্রেইন সঙ্কটের পর বিশ্বে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) অন্যতম জোগানদাতা কাতারকে বিকল্প উৎস হিসেবে চাইছে ইউরোপ। আল-কাবি জানিয়েছেন, ইউরোপের সবাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু ইইউ যে রাশিয়ার বিকল্প উৎস খুঁজছে, তা মোটেও সহজ হবে না।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই জোট চলতি বছরেই রাশিয়া থেকে গ্যাস নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায়, যদিও ইইউ’র আমদানিকৃত গ্যাসের ৪০ শতাংশেরও বেশি আসে রাশিয়া থেকে।

চলতি সপ্তাহে গ্যাস নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছার পর কাতারের রাজধানী দোহা ছাড়েন জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেবেক। যদিও এই মুহুর্তে কাতার থেকে সরাসরি এলএনজি আনার কোনো টার্মিনাল নেই জার্মানির। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য শুক্রবার একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ‘কাতারএনার্জি’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও আল-কাবি বলছেন, “ইউরোপ আমাদের গন্তব্য হতে পারে এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজারও বটে। আমরা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করব।”

কাতার দেশটির সর্ববৃহৎ গ্যাস ফিল্ড ‘নর্থ ফিল্ড’র সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তাতে করে গত চার বছরের মধ্যে গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে আশা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। আল-কাবি জানাচ্ছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির পর এর অর্ধেক ইউরোপে সরবরাহ করতে চান তারা।

“আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ৫০ শতাংশ পাঠাব সুয়েজ খালের পূর্বে, বাকি ৫০ শতাংশ পাঠাব পশ্চিমে।’

বর্তমানে কাতার থেকে রপ্তানির ৮০ শতাংশ গ্যাসই যায় এশিয়ার দেশগুলোতে। এর মধ্যে এমন অনেক চুক্তি আছে, যার কারণে অনেক দেশ গ্যাস নিয়ে অন্যের কাছে বেচতে পারবে না।

এই মুহূর্তে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প কোনো উৎস ইউরোপের কাছে খোলা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

দুবাইভিত্তিক জ্বালানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কামার এনার্জি’র সিইও রবিন মিলস জানান, রাশিয়ার বিকল্প উৎস হয়ে ওঠার সামর্থ্য বৈশ্বিক এলএনজি মার্কেটের এই মুহূর্তে নেই। একমাত্র কাতার যদি বর্তমান ক্রেতাদের বাদ দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে তবেই বিকল্প উৎস হতে পারে।

কিন্তু বর্তমান ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থাকায় তা করতে গেলে কাতারকে বড় অংকের ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে।

রাশিয়ার গ্যাস ও তেল খাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না তা সাফ জানিয়ে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী আল-কাবি বলেন, “জ্বালানিকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিৎ।”

রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ‘কাতারএনার্জি’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও কাবি এটাও বলেন, ইউক্রেইন সঙ্কটে কাতার কোনো পক্ষই নেবে না।

আন্তর্জাতিক

॥ আনিসুর রহমান ॥
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কমান্ডো স্কোয়াড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছিল। তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ক্র্যাকডাউন শুরু করার সময় বঙ্গবন্ধুর অবস্থান সম্পর্কে জাতিকে অন্ধকার অবস্থায় রেখেছিল।

স্কোয়াডের কমান্ডার পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) কর্মকর্তা, অনেক বছর পরে তার ‘মিশনের’ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।

বিশ্ববিখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস (এনওয়াইটি) আর্কাইভ থেকে এখন জানা গেছে যে, বঙ্গবন্ধু নিজেই সংবাদপত্রের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিবেদক পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সিডনি হিলেল শ্যানবার্গসহ আরও কয়েকজন আমেরিকান সাংবাদিককে এই পর্বটি সম্পর্কে একটি প্রাণবন্ত বর্ণনা দিয়েছেন।

এনওয়াইটি ‘তিনি গ্রেফতার ও আটকাবস্থার সম্পূর্ণ কাহিনী বলেছেন’ শিরোনামসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

বাংলাদেশের জাতির পিতা পাকিস্তানে নয় মাস বন্দী থাকার পর দেশে ফেরার মাত্র এক সপ্তাহ পরে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন।

এনওয়াইটি লিখেছে, বঙ্গবন্ধু তার কান্নারত স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে বলছিলেন যে, ‘তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। আমি হয়তো আর কখনো তোমাকে দেখতে পাব না। কিন্তু আমার জনগণ একদিন মুক্ত হবে এবং আমার আত্মা তা দেখতে পাবে এবং খুশি হবে।’

তার দুই ছেলে নাবালক শেখ রাসেল এবং শেখ জামাল সেখানে ছিলেন যখন তিনি বিদায় নেন এবং ‘পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে চুম্বন করেন।

এনওয়াইটি প্রতিবেদন অনুসারে, পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্য এবং অধিক জনবহুল পূর্ব অঞ্চলের শোষণের অবসান ঘটাতে চলমান গণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি সেনা ক্রাকডাউন আসন্ন বলে গুজব বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে সেই মুহুর্তের কয়েক ঘন্টা আগে বঙ্গবন্ধু কিছু গোপন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

এনওয়াইটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রাত ১০:৩০ টায় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর শহর চট্টগ্রামে একটি গোপন দফতরে ফোন করেছিলেন এবং তার জনগণের কাছে একটি শেষ বার্তা দিয়েছিলেন, যা রেকর্ড করা হয়েছিল এবং পরে গোপন ট্রান্সমিটারে সম্প্রচার করা হয়েছিল।

এনওয়াইটি-এর মতে, সম্প্রচারের সারমর্ম ছিল যে, ‘তাদের নেতার ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন’ তাদের যে কোনো সেনা আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে এবং এবং ‘তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য স্বাধীনতার কথাও বলেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু মার্কিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তার বার্তা পাঠানোর পর তিনি আধাসামরিক বাহিনী ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) এবং আওয়ামী লীগের সদস্য যারা তাকে পাহারা দিচ্ছিল তাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পুরো শহর জুড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আক্রমণ শুরু হয় রাত ১১টার দিকে দ্রুত তা তীব্র আকার ধারণ করে। সৈন্যরা মধ্যরাত ১ টার দিকে শেখ মুজিবের বাড়িতে গুলি ছুড়তে শুরু করে, ‘১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি সংস্করণের প্রথম পৃষ্ঠায় এনওয়াইটি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছিল।

এতে বলা হয় যে, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যখন গুলি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে উপরের তলায় তার ড্রেসিং রুমে নিয়ে যান এবং তারা সবাই মেঝেতে শুয়ে পড়েন।

শানবার্গ লিখেছেন ‘সেটি (সাক্ষাৎকার) ছিল আজকের তাঁর বর্ণনার একটি অংশ। শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো তাঁর গ্রেফতার, কারাবাস, মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়া এবং মাত্র এক সপ্তাহ আগে মুক্তি লাভের গল্প বলেছিলেন।

বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক আরো লিখেছেন ‘শান্ত ও কিছুটা তিক্ততা মিশিয়ে এবং কখনও কখনও তার সৌভাগ্যের জন্য হাসতে হাসতে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন আমেরিকান সংবাদপত্রের সংবাদদাতার সঙ্গে সাবলীল ইংরেজিতে কথা বলেছেন।

এনওয়াইটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু একটি কোচে হেলান দিয়ে মার্কিন সাংবাদিকদের সঙ্গে ২৫ মার্চের রাতে ঘটনার সূচনা থেকে নানা বিষয়ে কথা বলেছিলেন। স্থানটি ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সরকারি বাসভবনের বসার ঘর। ইয়াহিয়া তখন পশ্চিম পাকিস্তানে গৃহবন্দী ছিলেন।

এনওয়াইটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে বিদায় জানানোর পর, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নেয়। তিনি জীপের কাছে পৌঁছে অভ্যাস বশে ও দৃঢ় কন্ঠে (বঙ্গবন্ধু) বলে উঠলেন ‘আমি আমার পাইপ ও তামাক নিতে ভুলে গেছি। আমার পাইপ ও তামাক অবশ্যই লাগবে!

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সৈন্যরা হতবাক হয়ে গিয়ে গেলো কিন্তু তারা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে তার স্ত্রী তাকে পাইপ এবং তামাক দিয়েছিলেন।

এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকে তারপর ‘পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের কারাগারে সাড়ে নয় মাস কাটাতে হয়েঠিল।

বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানি সামরিক শাসক তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছিল।

তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে বের হলেই তারা আমার গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতো এবং তারপর বলতো যে, বাঙ্গালী চরমপন্থীরা এটা করেছে এবং এ কারণেই সেনাবাহিনীকে আমার জনগণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

এনওয়াইটি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমাকে অবশ্যই আমার নিজের বাড়িতে থাকতে হবে এবং তাদেরকে আমার নিজের বাড়িতে আমাকে হত্যা করতে হবে, যাতে সবাই জানতে পারে যে তারা আমাকে হত্যা করেছে এবং আমার রক্ত আমার জনগণকে শুদ্ধ করবে।

বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন, তিনি তার বড় ছেলে কামাল এবং তার দুই মেয়েকে আত্মগোপনে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মেঝ ছেলে জামাল তখনও ঢাকার ধানমন্ডিতে দোতলা বাড়িতে ঘরেই ঘুমাচ্ছিলেন।‘

রাত ১০ টার মধ্যে শেখ মুজিব খবর পেয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ করার জন্য অবস্থান নিয়েছে। কয়েক মিনিট পরে সৈন্যরা তার বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং কাছাকাছি একটি মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়।

এনওয়াইটি লিখেছে, সৈন্যরা শিগগিরই ঘরে ঢুকে পড়ে, একজন প্রহরীকে হত্যা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিল। ‘শেখ মুজিব বলেছিলেন, তিনি ড্রেসিংরুমের দরজা খুলে তাদের মুখোমুখি হন’।

বঙ্গবন্ধু মার্কিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘গুলি বন্ধ করুন! গুলি বন্ধ করুন! আপনি কেন গুলি করছেন? যদি আপনি আমাকে গুলি করতে চান তবে আমাকে গুলি করুন, আমি এখানে আছি, কিন্তু আপনি কেন আমার লোকজন এবং আমার সন্তানদের গুলি করছেন ?’

তিনি স্মরণ করেন, অন্য একজন মেজর লোকদের থামিয়ে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন তখন আর গুলি চালানো হবে না এবং ‘শেখ মুজিবকে বলেছিলেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং তার অনুরোধে তাকে বিদায় জানানোর জন্য কয়েক মুহূর্ত অনুমতি দেয়া হয়েছে’।

পাকিস্তানি নথিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় সামরিক সদর দফতর থেকে একটি রেডিও বার্তা পাঠানো হয় যে, ‘পাখি (এখন) খাঁচাবন্দী।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, সামরিক জীপে ওঠানোর পর তাকে প্রথমে জাতীয় পরিষদ ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়, ‘যেখানে আমাকে একটি চেয়ার দেওয়া হয়।’

‘তারপর ওরা আমাকে চা খেতে দিল,’ তিনি বিদ্রƒপ কণ্ঠে বলেন। ‘আমি বললাম, ‘ চমৎকার। চমৎকার পরিস্থিতি। চা খাওয়ার এটাই এটাই আমার জীবনের সেরা সময়’।

কিছুক্ষণ পর তাকে সামরিক ক্যান্টনমেন্টের একটি স্কুলের ‘একটি অন্ধকার ও নোংরা ঘরে’ নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তী ছয় দিন তিনি সেই কক্ষে দিন কাটান। তাঁর রাত-মধ্যরাত থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত কাটতো সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান বাসভবনের একটি কক্ষে।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে যে এই লোকটিকে বাঙালিরা সামরিক দমন-পীড়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে বিবেচনা করতো। যে নিপীড়নে কয়েক লাখ বাঙালি নির্যাতিত ও নিহত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১লা এপ্রিল, শেখ মুজিব বলেন, তাকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরে ভারতীয় ভূখ- দ্বারা বিচ্ছিন্ন পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপরে মিয়ানওয়ালি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কনডেম সেলে রাখা হয়।’

নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে আরো বলা হয়, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী নয় মাস সেই কারাগার এবং উত্তরাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের লায়ালপুর ও সাহিওয়ালের এবং দুটি কারাগারে পর্যায়ক্রমে পার করেন।

এতে বলা হয়, ‘সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগে বিচার শুরু করে, যার মধ্যে ছয়টিতে ছিল মৃত্যুদ-। এর একটি ছিল ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা’।

৩২ ধানমন্ডিতে স্কোয়াডের নেতৃত্ব থাকা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর এসএসজি কর্নেল জেড এ খান পরে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে তিনি কুমিল্লায় পোস্টেড ছিলেন এবং ২৩শে মার্চ ঢাকায় এলে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সেই সময় সামরিক মহলে ঔদ্ধত্য ও আত্মম্ভরিতার জন্য পরিচিত খানের মতে, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী তাকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার আনুষ্ঠানিক আদেশ দেন।

খান বলেন, বেসামরিক বিষয়াদির তত্ত্বাবধানের দায়িতে নিয়োজিত আলী তাকে প্রথমে সামরিক বাহিনী ব্যবহার না করে এবং একটি বেসামরিক গাড়ি শুধু একজন অফিসারকে সাথে নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে বলেন।

খানের মতে ৩২ ধানমন্ডিতে বিক্ষুদ্ধ উপস্থতির জনতার কারণে তিনি আদেশটিকে একটি অসম্ভব হিসাবে বিবেচনা করে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন, যা আলীকে ক্ষুব্ধ করে।

অবশেষে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ, সেই সময় ঢাকায় ছিলেন। তিনি এতে হস্তক্ষেপ করেন এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধের সাজে কমান্ডো ব্যবহারের অনুমতি দেন।

খান বলেন, ‘সিওএএস (হামিদ) তখন মেজর জেনারেল রাও ফরমানকে টেলিফোন করেন এবং তাকে আমার সকল প্রয়োজন পূরণ করতে বলেন এবং আমাকে বলেন যে মুজিবকে জীবিত রাখতে হবে এবং তাকে হত্যা করা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকব।’

এই অফিসার বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে সামরিক যান চলাচলে বাধা দেওয়ার জন্য যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন এবং কীভাবে তার লোকেরা শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন তার বিশদ ব্যাখ্যা করেন।

খান বলেন, বাড়ির কাছে পৌঁছে গুলি বর্ষণ শুরু হয়, কম্পাউন্ডের ভেতর থেকে কিছু লোক দৌঁড়ে গেট থেকে বেরিযয়ে আসে এবং বাড়ির চারপাশে বেষ্টনী তৈরি করে।

তিনি বলেন, বাড়ির বাইরে থাকা পুলিশ প্রহরী তাদের তাঁবুতে ওঠে, খুঁটি ধরে তাঁবুটি তুলে বাড়ির সামনের লেকের দিকে দৌড় দেয়।

খান বলেন, ‘তখন ঘোর অন্ধকার, হাউস সার্চ পার্টি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাড়ির একজন বেসামরিক প্রহরী তার একজন সৈন্যকে দা দিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, লোকটিকে একজন সৈন্য পেছন থেকে গুলি করে ‘কিন্তু তাকে হত্যা করেনি’।

খানের লোকেরা নিচতলায় এবং প্রথম তলায় কাউকে খুঁজে পায়নি। ‘একটি ঘর তালাবদ্ধ ছিল এবং শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছিল যে ঘরটিতে লোক রয়েছে।’

তিনি স্মরণ করেন, ‘আমি মেজর বিলালকে দরজা ভেঙে ফেলতে বললাম এবং ক্যাপ্টেন সাঈদ এসেছে কিনা এবং কোন ভিড় তৈরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য নিচে গেলাম।

খান বলেন, যখন তিনি ক্যাপ্টেন সাঈদকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখন একটি গুলির শব্দ হয়, তারপর গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় এবং তার পরে সাব-মেশিনগানের শব্দ শুনা যায়।

খান আরো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত হলাম যে মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তিনি দৌড়ে উপরের তলায় গিয়ে তাকে জীবিত ও অক্ষত দেখে স্বস্তি পান।

খান দাবি করেন, ‘আমি তাকে আমার সাথে যেতে বললাম এবং তিনি তার পরিবাররের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার অনুমতি চাইলে আমি অনুমতি দেই।’

খান বলেন, তিনি পরে জানতে পারেন যে একটি কক্ষের বারান্দা থেকে সৈন্যদের দিকে একটি গুলি চালানো হয় এবং এর জবাবে তারা একটি গ্রেনেড ছোঁড়েন এবং একটি এসএমজি থেকে গুলি ছোঁড়া হয়।

খান বলেন, গুলি চালানোর পর শেখ মুজিব বেরিয়ে আসেন এবং গ্রেফতার হন।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বলেছেন, বাংলাদেশ “মানবিক কারণে” “ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ” বন্ধ করার দাবিতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “(ভোট দেওয়ার) প্রধান কারণ হচ্ছে মানবিক। বাংলাদেশ মানবিক দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে সুপরিচিত।”

ইউক্রেন ও তার মিত্রদের দ্বারা উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে গৃহীত হয়। ১৪০টি দেশ সেখানে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, ৩৮টি বিরত ছিল এবং পাঁচটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।

২ মার্চ প্রস্তাব উত্থাপনের প্রেক্ষিতে এ ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রস্তাবে অবিলম্বে রাশিয়ার শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার সাথে ভোট দান থেকে বিরত ছিল।

বাংলাদেশ বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও তার তিন প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ভোট দান থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।

চীন উভয় প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। তবে ৫টি দেশ – রাশিয়া, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ ও ইরিত্রিয়া বৃহস্পতিবার ও ২ মার্চ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়।

বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে কি না জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান একই রয়েছে কারণ ঢাকা সব সময় শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের বিপক্ষে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২ মার্চের প্রস্তাবকে পক্ষপাতমূলক বলে মনে করে এবং এটি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে না। “তাই আমরা সেই সময় ভোট দেইনি।”

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবটি বেসামরিক মানুষের কল্যাণে। তিনি বলেন, “আমরা নির্যাতিত মানুষের নিরাপত্তা চাই এবং সেজন্য আমরা হ্যাঁ বলেছি।”

ড. মোমেন বলেন, যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের মতো নিরীহ দেশে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে পড়বে কারণ সবাই পরস্পর নির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যে কোনো যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ।

আন্তর্জাতিক

ভারতের কলকাতা বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার নিয়ে কাত হয়ে ডুবে গেছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি মেরিন ট্রাস্ট-১।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী বন্দরের একটি জেটিতে (সাবেক কলকাতা বন্দর) কন্টেইনার বোঝাই করার সময় জাহাজটি কাত হয়ে যায় বলে জানান এর বাংলাদেশি এজেন্ট ম্যাঙ্গোলাইন শিপিং লিমিটেডের ম্যানেজার হাবীবুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কন্টেইনার নিয়ে শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা ছিল এমভি মেরিন ট্রাস্ট-১ এর।

“কন্টেইনার লোড করার সময় জাহাজ কাত হয়ে ডুবে যাওয়ার কথা আমরা জেনেছি। জাহাজটি উদ্ধারে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।জাহাজে থাকা নাবিকরা সবাই নিরাপদে আছেন।”

কোস্টাল এগ্রিমেন্টের আওতায় ভারত-বালাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের মালিকানাধীন এমভি মেরিন ট্রাস্ট-১। বুধবার বিকালে সেটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতা বন্দরে যায়।

চার বছর আগে সাগরে নামা ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজটি বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের ২৪৪টি কন্টেইনার বহন করতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়,বন্দরের নেতাজি সুভাষ ডকে ১৬৫টি কন্টেইনার তোলার পর জাহাজটি কাত হয়ে একপাশে ডুবে যায়। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি কন্টেইনার নদীতে পড়ে ভাসতে থাকে এবং বেশ কয়েকটি ডুবে যায়।