আন্তর্জাতিক

দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শনিবার রাতে সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

তিনি বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হবে। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্ট বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ছিলেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উপদেষ্টা মরহুম ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে।

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সরে যাওয়ার পর মো. আশফাকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করার যে খবর চাউর হলে তা আন্দোলনকারীদের ‘প্রত্যাখ্যান’ করে। পরে জানা যায় ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের তথ্যটি ‘বিভ্রান্তিকর’।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে শিক্ষা চত্বরে কর্মসূচি থেকে এ আলটিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা আগামীকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রিফাত আহমেদকে নিয়োগ না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব নুর এলাহি মিনা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

উপপ্রেস সচিব জানান, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষ হত্যায় অভ্যস্ত বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন যে তিনি চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

‘আমরা সকলকে সমানভাবে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সবকিছুই ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। যেহেতু পুরো দেশ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এসেছে, এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রো রেলের ভাঙচুর করা টোল প্লাজার পরিষেবাগুলো পুনরায় চালু করতে কিছুটা সময় লাগছে।

ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সহিংসতাকারীরা বাংলাদেশের আধুনিকায়নের প্রতীকগুলোকে তারা টার্গেট করে হামলা করেছে। জনগণের সম্পদ ধ্বংস এবং জীবনহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত সম্পদ ধ্বংস বা গোটা বিষয়ের যেন বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

রাষ্ট্রদূত হলি আর্টিজানে হামলার পর সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, সাম্প্রতিক এই ঘটনার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সামাল দিয়েছেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত তারও প্রশংসা করেছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় দুই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী এই সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে এবং তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তিনি দুদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে কাজ করবেন। তার কর্মক্ষেত্রের কেন্দ্রে থাকবে জ্বালানি, এসএমই, মহাকাশ প্রযুক্তি ও জাহাজ নির্মাণ খাত উল্লেখ করে তিনি আইনি অভিবাসন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ইতালির রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে তার দেশের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, বিক্ষোভ বা কোনো ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ইতালিয়ান পুলিশের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইতালির পুলিশ ধাপে ধাপে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এই বিষয়ে তারা বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-এ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলে হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দলীয় এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এ ঘোষণা দেন। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে কথা বলার সময় ইসরাইলে হস্তক্ষেপ করার সুস্পষ্ট হুমকি দেন তিনি।

এরদোগান বলেন, আমরা যেভাবে কারাবাখে প্রবেশ করেছি, ঠিক যেভাবে আমরা লিবিয়ায় প্রবেশ করেছি, ইসরাইলের সঙ্গেও তাই করতে পারি। এমন কিছু নেই যা আমরা করতে পারি না। আমাদের কেবল শক্তিশালী হতে হবে।

এ সময় আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফক্স নিউজসহ কয়েকটি ইসরাইলি গণমাধ্যম এরদোগানের সাম্প্রতিক এ মন্তব্যকে ইসরাইলে আগ্রাসনের হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

তবে আসলেই কী এরদোগান এমন কোনো হুমকি দিয়েছেন? এরদোগানের এই মন্তব্যকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

প্রথমত, ইসারাইলকে থামাতে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সবাইকে একতার সবক দিয়েছেন। এরদোগান চান কূটনৈতিক উপায়ে ইসরাইলকে থামাতে। যাদের হাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। কয়েক দশক ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলা সংঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চেয়ে আসছেন এরদোগান। মূলত, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং স্থায়ীভাবে পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

দ্বিতীয়ত, এরদোগানের এ ঘোষণাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, হস্তক্ষেপ বোঝানো একটি নিছক বাক্য ইসরাইলকে ক্ষুব্ধ করার জন্য ব্যবহার করেছেন তিনি। এরদোগান দৃশ্যত ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের প্রতি পশ্চিমাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের মুখে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তুরস্কের দৃঢ় সংকল্প তুলে ধরতে চান এবং নেতানিয়াহুর গণহত্যাকারী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তুরস্কের চারপাশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চান। প্রকৃতপক্ষে, এরদোগান একই ভাষণে বলেছিলেন যে তুরস্ককে শক্তিশালী হতে হবে যাতে ইসরাইল ফিলিস্তিনে ইতিমধ্যে যা করেছে তা আবার করার সাহস না করে। মনে রাখতে হবে, এরদোগানই এ অঞ্চলের একমাত্র নেতা যিনি ২০০৯ সালে দাভোসে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজের সঙ্গে তার বিখ্যাত ‘এক মিনিট’ সংঘর্ষের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন।

ফক্স নিউজ তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুরস্ককে দখলদার রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। তবে তুরস্ক কখনোই ‘দখলদার’ ছিল না। এরদোগানের নেতৃত্বে এটি কূটনীতির অক্লান্ত প্রবক্তা ছিল। এটি গ্রীসের মতো একসময় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল এমন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করেছিল এবং এমনকি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে, এটি কেবল আত্মরক্ষার জন্য করে, যেমন সিরিয়া ও ইরাকে পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান, যা তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য তাত্ক্ষণিক হুমকি।

আন্তর্জাতিক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার নিয়ে  কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায়  রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাদের ব্রিফিং করা হয়।

কূটনীতিকদের সামনে চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।

কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের আমরা লেটেস্ট তথ্য ও ভিডিও দেখিয়েছি। আমরা জানিয়েছি, হেলিকপ্টার থেকে র‍্যাব গুলি করেনি। এছাড়া আন্দোলনের সময় বিজিবি ও পুলিশের ভূমিকা কী ছিল,  সেটাও তুলে ধরেছি। আমরা তাদের কাছে ভিডিও সরবরাহ করেছি।

তিনি বলেন, আন্দোলন নিয়ে দেশে বিদেশে গুজব ক্যাম্পেইন চলছে। তাই তাদের (কূটনীতিকদের) সঠিক তথ্য দিয়েছি।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, কূটনীতিকদের সামনে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা জানিয়েছি, আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত  কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। কমিশন সুষ্ঠুভাবে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব জানান, বিদেশিদের এখানে বিনিয়োগ আছে। ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এসব নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বিদেশিদের জানিয়েছি, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনে এখনো পর্যন্ত  প্রায় ১৫০ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ছাত্র ছিল ২৫ জন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের  বলেন, আমরা প্রতিটি জিনিস নিয়েই কথা বলতে প্রস্তুত।  কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা তথ্য শেয়ার করেছি। আমরা ধারাবাহিকভাবে এটা শেয়ার করব। কোটা আন্দোলন নিয়ে কোনো দেশের সঙ্গেই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আয়োজিত এ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র,  চীন, জাপান,  সুইডেন, কাতার, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া,  ফ্রান্স, মরক্কো, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ ২২টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২১ জুলাই কোটা সংস্কার ঘিরে পরিস্থিতি তুলে ধরতে কূটনৈতিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আন্তর্জাতিক

শোকাবহ আগস্ট শুরু বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট)। এ মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংস ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বাংলাদের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালির স্বাধীনতার মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
স্বাধীনতাবিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের শৃঙ্খল মুক্তির দিশারি, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়।

সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডে শিকার হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়।

আবার এই শোকের মাসেই আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্ম হয়। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোকের এই মাস আগস্টকে যথাযথ মর্যাদায় ও শোকাবহ পরিবেশে পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।

বুধবার সকালে তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার বাসভবন লক্ষ্য করে ইসরাইলের বিমান হামলায় একজন দেহরক্ষীসহ তিনি নিহত হন।

হামাস নেতার হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করছে গাজার যুদ্ধ-ক্লান্ত নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।

সালেহ আল-শানার নামে উত্তর গাজার এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, ‘এই মানুষটা বেঁচে থাকলে দখলদার ইসরাইলিদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারত। ওরা কেন মারল তাকে? ইসমাইল হানিয়াকে নয়, ওরা আসলে শান্তিকে হত্যা করেছে’।

নূর আবু সালাম নামে এক বাস্তুচ্যুত নারী বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইসরাইল এটাই প্রমাণ করল যে, তারা এ অঞ্চলে যুদ্ধের অবসান বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।

‘হানিয়াকে হত্যা করে তারা সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন এই ফিলিস্তিনি নারী।

এদিকে হানিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শত শত ফিলিস্তিনি। এ সময় তারা হামাসের সবুজ পতাকা বহন করছিলেন এবং ‘জনগণ কাসসাম ব্রিগেডকে চায়’ বলে স্লোগান দেন। কাসসাম ব্রিগেড মূলত হামাসের সামরিক শাখা হিসাবে কাজ করে থাকে।

রামাল্লায় হামাসের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থনে মিছিল বা বিক্ষোভ অনেকটা বিরল ঘটনা। রামাল্লা হলো অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রশাসনিক রাজধানী। যা ফিলিস্তিনের আরেক সংগঠন ফাতাহ-অধ্যুষিত এবং এর নেতাদের দ্বারা শাসিত অঞ্চল।

উল্লেখ্য যে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের শাসন নিয়ে হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলে আসছে। সূত্র: ‍আল-জাজিরা

শরণার্থী শিবির থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং ইসরাইলের ত্রাস

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরাইলের কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। বুধবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলি হামলায় নিজের বাসভবনে দেহরক্ষীসহ নিহত হন।

গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু পর এ নিয়ে হামাসের দুজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ইসরাইলি গুপ্ত হত্যার স্বীকার হলেন।

নিহত দুই হামাস নেতা হলেন- ইসমাইল হানিয়া এবং সালেহ আল-আরুরি, যিনি লেবাননে অবস্থান করছিলেন।

ইসমাইল হানিয়া ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ইসরাইল অধিকৃত আশকেলন শহর থেকে তার মা-বাবা আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। তিনি ১৯৮৭ সালে গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় হানিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য তাকে কয়েকবার ইসরাইলের কারাগারে যেতে হয়।

১৯৯৭ সালে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ইসমাইল হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের কার্যালয়ের প্রধান নিযুক্ত হন। শেখ ইয়াসিনের সঙ্গে ইসমাইল হানিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের রাজনৈতিক তৎপরতার পর, হানিয়া ওই বছরই হামাসের অন্যতম শীর্ষনেতা হিসেবে নিযুক্ত হন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি এক পর্যায়ে হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন।

হানিয়া দখলদার বাহিনীর বহু গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। ২০০৩ সালে তাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করে দখলদার ইসরাইল।

২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে হামাস রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। বিজয়ের মধ্য দিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ফিলিস্তিনি স্বশাসন (ফাতাহ) কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৭ সালে হামাসের সরকার ভেঙে দেন।

২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালের ৬ মে তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং হামাস নেতা খালেদ মেশালের জায়গায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধারা অভিযান চালানোর পর, হানিয়া তার রাজনৈতিক দপ্তরকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপগুলোকে রক্ষার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহার করেন।

ফিলিস্তিনিদের ওই অভিযানের পর ইসমাইল হানিয়া বলেছিলেন, ‘আমরা বহুবার তোমাদের সতর্ক করেছি যে, ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছর ধরে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। অথচ তোমরা আমাদের জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করে চলেছ।’

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে তার তিন ছেলে ও ৮০ বছর বয়সি বোনও রয়েছেন। গত নভেম্বরে তার দুই নাতি ও নাতনি ইসরাইলি হামলায় নিহত হন।

শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই ইসমাইল হানিয়া নিজেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর গুপ্ত হত্যার শিকার হলেন এবং এর মধ্যদিয়ে শেষ হলো তার বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে তাজা আম আমদানির ক্ষেত্রে রোগবালাই ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে তাজা আম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে চীনের কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে চীনা দূতাবাস বলেছে, শনিবার চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এ ঘোষণা দিয়েছে।

ওই ঘোষণায় বাংলাদেশ থেকে তাজা আম আমদানির ক্ষেত্রে রোগবালাই ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

চলতি মওসুমে ৩৮টি দেশে ৩ হাজার ১০০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার; এখন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চীনের বাজার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ৩ অগাস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১ হাজার টন বেশি।

চীনা দূতাবাস বলছে, বাংলাদেশ থেকে চীনের আম আমদানির বিষয়ে ‘ফাইটোস্যানিটারি’ শর্তাবলি নিয়ে ১০ জুলাই বেইজিংয়ে দুই দেশ একটি প্রটোকল সই করেছে।

এই ঘোষণাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ফলাফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এর মাধ্যমে চীনের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের উচ্চ মানসম্পন্ন আমের প্রবেশাধিকার দেবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণে সহায়ক হবে।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা যে পরস্পরের জন্য উপকারী ফল বয়ে আনছে, তা ওই ঘোষণার মাধ্যমে ‘স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে’।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং মার্কিন কংগ্রেসে চতুর্থবারের মতো ভাষণ দিতে সক্ষম হন; যা অন্য যে কোনো বিদেশি নেতার চেয়ে তাকে এগিয়ে রেখেছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে তার সর্বশেষ সফরে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই অভ্যস্ত ছিলেন। মার্কিন সিনেটরদের সমর্থন আদায়ে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন তিনি।

তবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর আচরণের প্রতিবাদে কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা তার অনুষ্ঠান বয়কটও করেন। আর এ ইস্যুতে তার দেশের সমালোচনা করা বেশ কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিবিদকে তিনি উপেক্ষা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সফরটি এমন সময়ে হয়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনি দৌড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ দেশটির নেতারা। পরম মিত্র জো বাইডেন তো নেতানিয়াহুর আগমনের আগের দিনই নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

সব মিলিয়ে নেতানিয়াহু এবারের সফরে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহী রাজনীতিবিদদের খুঁজে পাওয়ার পরিবর্তে, গাজা ইস্যুতেই বেশি কোণঠাসা হয়েছেন।

তার মধ্যেই শনিবার অধিকৃত গোলান মালভূমির দ্রুজ সম্প্রদায় অধ্যুষিত শহরে রকেট হামলায় ১২ জন কিশোর-কিশোরী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে যায়। যে কারণে তিনি তার মার্কিন সফর সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন।

ইসরাইল ওই হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করলেও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীটি তা জোর গলায় অস্বীকার করেছে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশ উভয় পক্ষকে দোষারোপ করা এড়িয়ে গেছে।

তবে ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও হিজবুল্লাহকে হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছে। আর ইসরাইল বাইডেন প্রশাসনের এ সমর্থন এমন সময়ে পেল, যখন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু তার দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমবর্ধমানভাবে সমর্থন হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। সেইসঙ্গে ওয়াশিংটনের ওপর নেতানিয়াহুর নির্ভরতা আরও গভীর হলো।

এক গাজা ইস্যুতেই ইসরাইলি নেতার অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বর্তমানে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার সময় নেওয়া বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর অক্ষমতায় বহু সংখ্যক ইসরাইলি রীতিমতো হতাশ এবং তারা এখন তার পদত্যাগ চাইছেন।

নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসি-তে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন। এছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটদের নতুন অনুমিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে কমলা হ্যারিস গাজার জনগণের দুর্দশার কথা তুলে ধরে দ্রুত যুদ্ধবিরতির তাগিদ দেন। এমনকি ট্রাম্পও তখন বলেন যে, বিষয়টি খারাপভাবে দেখা হচ্ছে এবং বিশ্ব তার যুদ্ধকে ‘হালকাভাবে নিচ্ছে না’। এ কারণে ইসরাইলকে দ্রুত গাজা যুদ্ধ শেষ করতে হবে।

তবুও যুদ্ধ বন্ধ না করে উলটো হামাসকে নির্মুল করার মন্ত্রে অবরুদ্ধ গাজায় ক্রমাগত আগ্রাসন আব্যাহত রেখেছেন নেতানিয়াহু। এমনকি এখন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গেও উত্তেজনা ছড়িয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ইসরাইলি বাহিনী বর্বর আগ্রাসন চালিয়ে গত ৯ মাসে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯১ হাজার ফিলিস্তিনি।

গাজায় ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে উপত্যকাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের অবরোধের মধ্যে পড়ে রীতিমতো মৃত্যুপুরী ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। সূত্র: আল-জাজিরা

আন্তর্জাতিক

আবারও উত্তাল পাকিস্তান। বিভিন্ন ইসলামি দল এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচির জেরে ফের অস্থিরতা বেড়েছে দেশটিতে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঞ্জাব ও ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ১৪৪ ধারা শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত কার্যকর হবে।

পাকিস্তানি প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, ১৪৪ ধারা কোনো অবস্থায়ই লঙ্ঘন করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামি (জেআই) বিদ্যুতের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কারণ দেশজুড়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে পাকিস্তান সরকার। জামায়াতে ইসলামির (জেআই) পাশাপাশি জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) এবং অন্যান্য ধর্মীয় দল শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট কোরআন অবমাননার দায়ে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিক মোবারক সানি মামলার রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এ দুই ইস্যুকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই পাকিস্তানে বিক্ষোভ করছিল দলগুলো। অন্যদিকে পিটিআই ঘোষণা করেছে, তারা শুক্রবার দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তির জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশ।

এরপর এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘শুক্রবার থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ জারি করা হলো। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। জনসাধারণকে কোনো অবস্থায়ই ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাজধানীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং নাগরিকদের কোনো অবৈধ কার্যকলাপে অংশগ্রহণ এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি সংযোগ সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামি (জেইউআই-এফ) এবং পিটিআই-এর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দুইদিন ধরে এসব দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করতে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

এদিকে পাঞ্জাবে ২৬ থেকে ২৮ জুলাই ১৪৪ ধারা বলবৎ করার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র বিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে এ সময় জনসমাগম, সমাবেশ, অবস্থান এবং বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘প্রশাসন পাঞ্জাবজুড়ে এই আদেশের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।’

আদেশে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের সমাবেশগুলো গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। জনসাধারণের শান্তি ও শৃঙ্খলা ব্যাহত করার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জনসাধারণের জন্য উল্লেখযোগ্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। তাই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, শান্তি বজায় রাখতে এবং স্থাপনা ও ভবন রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা বা অপ্রীতিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসাবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের জোর সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, মৌখিকভাবেও তেল আবিবকে সাহায্য করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরাইল সমর্থনে বেশ শক্ত অবস্থানেই দেখা গেছে। কিন্তু গাজা ইস্যুতে ‘স্রোতের বিপরীতে’ দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে। গাজা যুদ্ধের এবার সমাপ্তি চাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। আলজাজিরা, এএফপি।

কমলা হ্যারিস বলেন, ‘গাজায় ৯ মাসে যা কিছু ঘটেছে, তা ভয়াবহ। মৃত শিশুদের ছবি এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া হয়ে পালাতে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষ, যাদের কাউকে কাউকে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারের মতো বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে, তাদের ছবি দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা থেকে আমরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারি না। এমন দুর্ভোগ দেখার পর আমরা চুপ থাকতে পারি না এবং আমি নীরব থাকব না।’

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্যও নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কমলা। তবে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে ‘নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে উল্লেখ করেন সম্ভাব্য এ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। কমলা বলেন, এ যুদ্ধ অবসানের সময় এসেছে। আর তা এমনভাবে এর শেষ করতে হবে যেন ইসরাইল নিরাপদ থাকে, সব জিম্মি মুক্তি পায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চর্চা করতে পারে। অন্যদিকে গাজায় শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলি করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন মার্কিন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বাইডেন ও কমলাকে চিঠি দিয়েছেন তারা। সেখানে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে- এমন ৪৫ জন মার্কিন চিকিৎসক এবং নার্সদের একটি গ্রুপ বিষয়টি তুলে ধরেন।

ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, সম্ভবত এ সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৯২ হাজারের বেশি হয়েছে। এ সংখ্যা হতবাক করার মতোই। কারণ, এটা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিনের যেসব শিশুদের চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা লিখেছেন, আমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন এমন সব শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি, যাদের মাথা এবং বুকে গুলি করা হয়েছে। অল্পসংখ্যক মানুষ বাদে গাজার প্রায় প্রত্যেকেই অসুস্থ, আহত বা দুই ধরনের সমস্যার সঙ্গেই লড়াই করে যাচ্ছে। তারা আরও লিখেছে, ‘আমরা নারী ও শিশুদের প্রতি অসহনীয় নিষ্ঠুরতার দৃশ্যগুলো ভুলতে পারি না, যা আমরা নিজেরাই দেখেছি।’

এদিকে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরও রয়েছে। সে আলজাজিরাকে জানিয়েছে, হামাস এবং সেখানে জিম্মি করে রাখা লোকজনের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।