খেলাধুলা

ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা টাইগারদের জন্য শাপে ভর হয়েছে। অসাধারণ নৈপূন্য দেখিয়ে অলরাউন্ডারদের ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর সাকিব আল হাসান বিশ্বের নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডারের মুকুট ধরে রেখেছেন।

পুরুষদের র‌্যাংকিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদ বুধবার প্রকাশ করে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ শেষে ওয়ানডে অলরাউন্ডারদের র্যাং কিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে মিরাজ এখন আছে তিন নম্বরে উঠে এসেছেন।

এই সংস্করণে আগে থেকেই এক নম্বরে ছিলেন সাকিব। তার রেটিং পয়েন্ট ৩৮৯। এবার তার কাছাকাছি এলেন মিরাজ। বাংলাদেশের দুজনের মাঝে রয়েছেন আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নাবি। তার পয়েন্ট ৩১০।

ভারত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্রেফ ৮৩ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। সেই ম্যাচের পর ক্যারিয়ার সেরা ২৯৫ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেন তিনি। শেষ ম্যাচের পর সেটি কমে ২৮৪ পয়েন্ট হয়েছে।

খেলাধুলা

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলাই যাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।কিন্তু কাতারে যেন ইতিহাস গড়তেই এসেছে আরব-আফ্রিকান দেশটি। একে একে তারা পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। তবে সেখানেই থামেনি তারা। বরং এবার তারা যা করল, তা ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে। জন্ম দিয়েছে আফ্রিকান রূপকথার। সেই সঙ্গে আরব দেশগুলোর ফুটবল-বিপ্লবেও নেতৃত্ব দিচ্ছে মরক্কানরা।

২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আজ আল থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে মরক্কো। এই জয় তাদের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে দিয়েছে। কারণ প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো মরক্কানরা। এর আগে আফ্রিকান দলগুলো বড়জোর কোয়ার্টার পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০২২ বিশ্বকাপে সেনেগাল এবং ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু মরক্কো তাদের সবার কীর্তি ছাড়িয়ে গেল।

মরক্কোর কীর্তিগাঁথা যুগ যুগ ধরে আফ্রিকান ফুটবলে উচ্চারিত হবে। এর শুরুটা তারা করেছে গ্রুপ পর্বে। প্রথমেই তারা ২০১৮ বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দেয়। গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচটি। এরপর ফিফা র্যাং কিংয়ের এক নম্বর দল বেলজিয়ামকে হারায় ২-০ গোলে। শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে শেষ ষোলোয়। তাদের কারণে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বেলজিয়ানরা।

শেষ ষোলোয় মরক্কোর শিকার হয়ে বিদায় নেয় ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেন। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে স্প্যানিশরা একবারও তাদের জাল ভেদ করতে পারেনি। তাদের গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো দেয়াল হয়ে দাঁড়ান স্প্যানিশদের সামনে। আর শেষ আটে পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। তিন ভাগের বেশি সময় বল দখলে রেখেও মরক্কোর গোলমুখ খুলতে পারেনি পর্তুগিজরা। ফলে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা। অন্যদিকে রূপকথার জন্ম দিয়ে মাঠ ছাড়লেন হাকিম জিয়াচরা।

শুধু আফ্রিকান হিসেবেই নয়, আরব দেশগুলোর মধ্যেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠা প্রথম দল মরক্কো। এর আগে এই মরক্কো ১৯৮৬ বিশ্বকাপে, সৌদি আরব ১৯৯৪ বিশ্বকাপে এবং আলজেরিয়া ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছিল; যা এতদিন আরবদের সেরা সাফল্য ছিল। আর মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে সেরা সাফল্য ছিল তুরস্কের। ২০০২ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল তারা। সেমিতে ব্রাজিলের কাছে ০-১ গোলে হারের পর স্থান নির্ধারনী ম্যাচে কোরিয়ানদের হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল তুর্কিরা। এবার তাদের সেই কীর্তি স্পর্শ করল মরক্কো।

এবার আরবের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেই ইতিহাস গড়ে কাতার। কিন্তু মাঠে তারা কোনো সাফল্য পায়নি। আয়োজকরা না পেলেও এবার প্ররথম বিপ্লব ঘটায় সৌদি আরব। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় আসরের অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে। এছাড়া ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে আফ্রিকার আরেক আরব দেশ তিউনিসিয়া। এই দলগুলো অবশ্য আর কোনো সাফল্য পায়নি। কিন্তু মরক্কো টিকে আছে বীরদর্পে।

সিজদায় লুটিয়ে ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপন মরক্কোর

কাতার বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতোই কাটছে মরক্কোর। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা দলটি পর্তুগালের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে।

জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত। হারলে বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে মরক্কো।

এ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাই খেলা শেষেই একযোগে সবাই মাঠের ভেতরেই লুটিয়ে পড়েন সিজদায়।অবনত মস্তকে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আফ্রিকার মুসলিম দেশ মরক্কোর খেলোয়াড়রা।

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের কোনো ফুটবলার তাদের বিপক্ষে গোল করতে পারেননি। একমাত্র গোলটি তারা খেয়েছে আত্মঘাতী গোল হিসবে। এখন পর্যন্ত কোন দলই তাদেরকে হারাতে পারেনি।

তাই বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ শেষে সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান মরক্কোর খেলোয়াড়রা। এবার ইতিহাস গড়ার ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়েও একইভাবে কৃতজ্ঞতা জানালেন তারা।

শনিবার দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে খেলার ৪২তম মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে পর্তুগালের জালে বল জড়িয়ে দেন মরক্কোর ইউসুফ এন-নেসিরি।

খেলার শুরুর একাদশে মাঠে নামনো হয়নি পর্তুগালের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। খেলার ৫২ মিনিটে রুবেন নেভাসের জায়গায় মাঠে নামানো হয় রোনালদোকে।

৬৫ মিনিটে আবারো গোলের সুযোগ পায় পর্তুগাল। কিন্তু ব্রুনো ফার্নান্দেজের দুর্দান্ত শট গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। হতাশায় মুষড়ে পড়েন ব্রুনো।

৮৩ মিনিটে মরক্কোকে নিশ্চিত গোল খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন মরক্কোর গোলরক্ষক আগের ম্যাচের নাত্যক বুনু। ডি বক্সের সামান্য ভেতরে থেকে হোয়াও ফেলিক্স বা পায়ের দুর্দান্ত বাকানো শট নিলে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বুনু।

৯০ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর থেকে রোনালদোর ডান পায়ের জোড়ালো শট রুখে দেন বুনু। ৯২ মিনিটে মরক্কোর চেদিরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আফ্রিকান দলটি।

৯৫ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন মরক্কোর আবুখলিল। পর্তুগিজ গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল দিতে পারেননি তিনি। ৯৭ মিনিটে পেপের দুর্দান্ত হেড গোলবার ঘেষে চলে গেলে গোলবঞ্চিত হয় পর্তুগাল।

ম্যাচের একদম শেষ দিকে আরো দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও গোল দিতে পারেনি পর্তুগাল। ফলে বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই বিদায় নিল পর্তুগাল। আর ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো মরক্কো।

খেলাধুলা

ঢাকার দুই ম্যাচে ছড়িয়েছিল উৎসবের রঙ। রোমাঞ্চ, লড়াই, প্রত্যাবর্তন; ছিল সবকিছুই।

চট্টগ্রামে টিকিটের চাহিদা হয়ে গিয়েছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু গ্যালারি ভর্তি দর্শককে ফিরতে হয়েছে হতাশা সঙ্গী করে। সিরিজ জয়ের উৎসব কাটা পড়েছে লড়াইহীন এক হারে।

যদিও দর্শক সাক্ষী হয়েছেন ইতিহাসের। ঈষাণ কিষাণ নিজের প্রথম সেঞ্চুরিকে বানিয়েছেন ডাবল। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ভিরাট কোহলিও। তাদের জুটি রেকর্ড গড়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে চারশ ছাড়ানো সংগ্রহ পেয়েছে কোনো দল।

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ২২৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে রানের ব্যবধানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এটি। এর আগে ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৩ রানে হারে বাংলাদেশ।

শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ১৮২ রান করে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। এই হারের পরও সিরিজ থাকছে বাংলাদেশের। ঢাকায় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়েছিল লিটন দাসের দল।

আগের দুই ম্যাচ হেরেই সিরিজ খুঁইয়ে ফেলা ভারতের তৃতীয় ওয়ানডেতে হারানোর তেমন কিছু ছিল না। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কাও খেয়েছিল তারা। পঞ্চম ওভারেই শেখর ধাওয়ানকে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

প্রথম বলে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মিরাজের বলে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন শেখর ধাওয়ান। কিন্তু বল তার প্যাডে লাগে। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ারের কাছে মনে হয়েছিল ব্যাটে লেগেছে বল, তিনি দেন নট আউট। পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয়েছে বাংলাদেশ।

উইকেট নেওয়ার স্বস্তির কিছুক্ষণ পরই সঙ্গী হয় হতাশাও। শর্ট মিডউইকেট ভিরাট কোহলির সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন লিটন। পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকান কোহলি। এরপর রান তোলার গতি ঠিক রেখে দুর্দান্ত সব শট খেলতে থাকেন ঈষাণ কিষাণ। তাকে যোগ্যভাবেই সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি।

৬৮তম বলে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পান ঈষাণ। এরপরও খেলছিলেন ভালোভাবেই। ৮৪ রানে এসে তার একটি ক্যাচ ধরার দারুণ প্রচেষ্টা ছিল সাকিব আল হাসানের। ডিপ মিডউইকেট থেকে দৌড়ে লং অনের দিকে অনেকটা দৌড়ে আসেন তিনি। কিন্তু বল হাতে রাখতে পারেননি সাকিব। শেষ অবধি ৮৫তম বলে এসে সেঞ্চুরি পেয়ে যান কিষাণ। ১৩ চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।

নিজের প্রথম সেঞ্চুরিকে এরপর কিষাণ নিয়ে যেতে থাকেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। সম্ভাব্য প্রায় সবই করেছেন এই ব্যাটার, গড়েছেন অনেক রেকর্ডও। ১২৬ বলে পাওয়া তার ডাবল সেঞ্চুরি ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম। ক্রিস গেইলের ১৩৮ বলকে ছাড়িয়ে গেছেন। সবচেয়ে কম বয়সী ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও এখন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমানের বল পয়েন্টে ঠেলে দৌড়ে এক রান নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কিষাণ। এরপর তিনি দৌড়ে ছুটে যান ড্রেসিং রুমের দিকে। এর আগে সেঞ্চুরি করেও গিয়েছিলেন সেদিকে। সিরিজের আগের দু ম্যাচে বেঞ্চে বসে থাকা এই ক্রিকেটার সুযোগ পেয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারার আনন্দ তার উদযাপনে ছিল স্পষ্ট।

ঈষাণের অবিশ্বাস্য ইনিংসটির সমাপ্তি হয় তাসকিন আহমেদের বলে। লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ চার ও ১০ ছক্কায় ১৩১ বলে ২১০ রান করা কিষাণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ভিরাট কোহলি সঙ্গে তার ২৯০ রানের জুটি যেকোনো উইকেটে যেকোনো দলের হয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ।

কিষাণের আলোতে ঢাকা পড়ে যাওয়া ভিরাট কোহলিও হাঁকান সেঞ্চুরি। লিটনের কাছ থেকে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগান দারুণভাবে। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৯১ বলে ১১৩ রানের ইনিংসটি থামে সাকিব আল হাসানের বলে। এর বাইরে ২৭ বলে ওয়াশিংটন সুন্দর ৩৭ ও ১৭ বলে ২০ রান করেন অক্ষর প্যাটেল।

৮ উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রানে থামে ভারতের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ৯ ওভারে ৮৯ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। ১০ ওভারে ৭৬ রান দিয়ে সাকিব ও ৯ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ২ উইকেট করে নেন এবাদত হোসেন। এছাড়া ১০ ওভারে ৬৬ রান খরচ করে ১ উইকেট পান মোস্তাফিজও।

জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটারদের তেমন কিছুই করার ছিল না। তবে এমন রান পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ ব্যক্তিগত বড় ইনিংস খেলতেও ব্যর্থ হয়েছেন। দুয়েকজন শুরু পেয়েও নিজের রানকে লম্বা করতে পারেননি। শেষে সঙ্গী হয়েছে বড় হার।

পঞ্চম ওভারেই এনামুল হক বিজয় ফেরেন সাজঘরে। অক্ষর প্যাটেল বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন তার উইকেট। লং অফে দাঁড়ানো মোহাম্মদ সিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৭ বলে করেন ৮ রান। লিটন দাস খেলছিলেন মুগ্ধ করার মতো কিছু শট। কিন্তু তাকেও থামতে হয়েছে অল্পতেই। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের বলে শার্দুল ঠাকুরের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

সাকিব আল হাসান শুরুর দিকে কিছুটা ভুগছিলেন। কিন্তু পরে মনে হচ্ছিল ভালো একটা ইনিংস আসতে পারে তার ব্যাট থেকে। কিন্তু ৪ চারে ৫০ বলে ৪৩ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও। এই রান করেই দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হয়ে থেকেছেন তিনি। ভারতের পক্ষে ৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন শার্দুল ঠাকুর। দুই উইকেট করে পেয়েছেন অক্ষর প্যাটেল ও উমরান মালিক।

খেলাধুলা

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শুক্রবার ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ব্রাজিল। পাঁচবারের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের হারে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দলটির তারকা ফুটবলার নেইমার।

কান্নায় ভেঙে পড়া নেইমারকে সান্তানা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল বেডে শুয়ে থেকেই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনস্টাগ্রামে পেলে লেখেন, আমি তোমাকে বড় হতে দেখেছি নেইমার। প্রতিদিন তোমার জন্য গলা ফাটাই। তুমি ব্রাজিলের হয়ে গোল করায় আমাকে স্পর্শ করেছো। শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পেলাম। আমরা দুজনই জানি, এ কীর্তি পরিসংখ্যানের চেয়েও অনেক কিছু।

পেলে আরও লেখেন, আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হচ্ছে খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করা। সতীর্থদেরও সাহস জোগানো। পরবর্তী প্রজন্ম এবং সর্বোপরি যারা এই খেলাটাকে ভালোবাসে, তাদের পাশে থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা আমাদের খুশির দিন নয়।

পেলে লেখেন, ৫০ বছর আগে এ রেকর্ড করেছিলাম আমি। এতদিন কেউ এর ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেনি। তুমি পারলে। দেখিয়ে দেলে কত বড় এই কৃতিত্ব।

খেলাধুলা

এখনই শুরু হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচ। এ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। হেক্সা মিশন পূরণ করা থেকে আর মাত্র তিন ম্যাচ দূরে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানরা। কোয়ার্টার, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিততে পারলেই সেলেসাওদের হেক্সা মিশন পূরণ হবে।

আর সে লক্ষ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল।

তবে ম্যাচের আগে ব্রাজিলের শঙ্কা ২০ বছর ধরে নকআউটে কোনো ইউরোপীয় দলকে না হারাতে পারার রেকর্ড। ক্রোয়াটদের বিপক্ষে নামার আগে ব্রাজিলের দুশ্চিন্তা লেফটব্যাক পজিশন। তবুও আজ একাদশে আরও একবার সুযোগ পেয়েছেন দানিলো। যদিও আগের সুযোগে তেমন সুবিধা করতে পারেননি দানিলো।

রক্ষণভাগ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও ব্রাজিলের আক্রমণভাগ বেশ শক্তিশালী। আক্রমণভাগে রয়েছে নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রিচার্লিসনের মত ফুটবলাররা যারা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় বদলে দিতে পারে। বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাতারে পা রাখা ব্রাজিল দল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে সেমিতে পা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্রাজিল ভক্তদের।

ব্রাজিলের স্কোয়াডঃ

অ্যালিসন বেকার, এডার মিলিতাও, মারকুইনহোস, থিয়েগো সিলভা, দানিলো, ক্যাসিমিরো, লুকাস পাকেতা, নেইমার, রাফিনিয়া, ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রিচার্লিসন।

খেলাধুলা

ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ৫ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মিরাজের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। শেষ দিকে রোহিতের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই ছিল ভারত। শেষ বলে জয়ের জন্য ৬ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। তবে শেষ বলে এক রান দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মোস্তাফিজ।

২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার এবাদত হোসেন। দলীয় ৭ রানে ৬ বলে মাত্র ৫ রান করে আউট হন কোহলি। এরপর দলীয় ১৩ রানে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১৩ রানে ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে ফেরান তিনি। ১০ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ধাওয়ান।

শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় ভারত। ধাওয়ানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ওয়ান ডাউনে নামা শ্রেয়াস আইয়ার। তবে ভারতের ইনিংসে তৃতীয় ধাক্কা দেন আগের ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়া সাকিব আল হাসান। ইনিংসের দশম ওভারের শেষ বলে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফেরান সাকিব। দলীয় ৩৯ রানে ১৯ বলে ১১ রান করে সাকিবের বলে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সুন্দর।

সুন্দরের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লোকেশ রাহুল। রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন আইয়ার। তবে দলীয় ৬৫ রানের মাথায় আবারও উইকেট হারায় ভারত। এবার বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মেহেদী মিরাজ। ২৪ বলে ১৪ রান করা লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান তিনি।

রাহুলের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অক্ষর প্যাটেল। এক প্রান্তে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকে ওয়ান ডাউনে নামা শ্রেয়াস আইয়ার। নিজের সাবলীল ব্যাটিংয়ে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন তিনি। অক্ষর প্যাটেল ও আইয়ারের শক্ত জুটিতে ম্যাচে ফেরে ভারত। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০১ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়েন। দু’জন মিলে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন।

তবে ইনিংসের ৩৫তম ওভারে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মেহেদী মিরাজ। দলীয় ১৭২ রানে মেহেদীকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের হাতে ধরা পড়েন শ্রেয়াস আইয়ার। ১০২ বলে ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান আইয়ার।

আইয়ারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শার্দুল ঠাকুর। তাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান প্যাটেল। ৫০ বল খেলে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। তবে অর্ধশতক করার পরেই সাজঘরে ফিরে যান অক্ষর প্যাটেল। দলীয় ১৮৯ রানে ৫৬ বলে ৫৬ রান করে আউট হন তিনি। এবাদতের বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ।

অক্ষর প্যাটেলের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন দিপক চাহার। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে বোলিংয়ে এসে আবারও বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। বোলিংয়ে এসে শার্দুল ঠাকুরের উইকেট তুলে নেন সাকিব। সাকিবকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন শার্দুল ঠাকুর। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন চোট পাওয়া অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

এরপর ইনিংসের ৫৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন পেসার এবাদত। দলীয় ২১৩ রানে পুল করতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন দিপক চাহার। ১৮ বলে ১১ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে এবাদতকে ছক্কা হাঁকান রোহিত শর্মা। শেষ বলে চার মেরে ওভার শেষ করেন তিনি।

ইনিংসের ৪৭তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। তবে ইনজুরির কারণে এক বলে করে ওভার শেষ না করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। তার পরিবর্তে বল করতে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাঁচ বল করে মাত্র ১ রান দেন মাহমুদুল্লাহ। জয়ের জন্য শেষ তিন ৩ ওভারে ৪০ রান প্রয়োজন হয় ভারতের।

ইনিংসের ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই ওভার মেডেন করেন তিনি। ফলে শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ৪০ রান প্রয়োজন হয় ভারতের।

ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহ। ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান রোহিত। পরের বলে ওয়াইডের সঙ্গে বাই দুই রান নেয় ভারত। ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ উঠলেও তা ছেড়ে দেন এবাদত। ওভারের তৃতীয় বলে আবারও ছক্কা হাঁকান রোহিত। ওভারের চতুর্থ বলে দুই রান নেন তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ উঠলে আবারও তা ছেড়ে দেন বিজয়। তবে শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করেন মাহমুদুল্লাহ।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর। প্রথম বল ডট দিয়ে দ্বিতীয় বলে চার মারেন রোহিত। ওভারের তৃতীয় বলে ফের চার মারেন রোহিত। শেষ তিন বলে ১২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ওভারের চতুর্থ বল ডট করেন মোস্তাফিজ। এরপর ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। শেষ বলে ছয় রান প্রয়োজন হয় ভারতের। তবে শেষ বলে মাত্র এক রান দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ৫ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

রোহিত শর্মা ২৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর বাংলাদেশের পক্ষে এবাদত হোসেন নেন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট। আর সাকিব ও মিরাজ নেন ২টি করে উইকেট।

স্পিনে শক্তি বাড়াল বাংলাদেশ

প্রথম ওয়ানডের দলে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। পেসার হাসান মাহমুদের জায়গায় ফিরিয়েছে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। তার সঙ্গে স্পিনে আছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

পেস আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গী ইবাদত হোসেন চৌধুরি।

বাংলাদেশ: লিটন দাস (অধিনায়ক), এনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত।

ভারত দলে ২ পরিবর্তন

১ উইকেটে হেরে যাওয়া দলে দুটি পরিবর্তন এনেছে ভারত। শহবাজ আহমেদের জায়গায় ফিরেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার আকসার প্যাটেল। চোটের জন্য খেলছেন না সেই ম্যাচে অভিষেক হওয়া কুলদিপ সেন। তার জায়গায় দলে এসেছেন গতিময় পেসার উমরান মালিক।

ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, আকসার প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ, দিপক চাহার, উমরান মালিক।

খেলাধুলা

কানাডা গোলরক্ষকের উপহার কাজে লাগিয়ে শুরুতেই দলকে এগিয়ে নিলেন হাকিম জিয়াশ। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া সমালোচনার জবাবে জালের দেখা পেলেন ইউসেফ এন-নেসিরি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে নিজেরা আত্মঘাতী গোল করলেও পরে আর কোনো ভুল করেনি মরক্কো। গ্রুপ সেরা হয়ে তারা পা রাখল শেষ ষোলোয়।

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতল মরক্কো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোনো আসরে পেল একাধিক জয়।

সম্ভাবনায় হয়তো সবচেয়ে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল মরক্কোকেই। আফ্রিকার এই দেশটিই দেখাল সবচেয়ে বড় চমক। ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডার সঙ্গে এক গ্রুপে পড়েও অপরাজিত থেকে গেল পরের ধাপে।

দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা মরক্কো। দুই ড্র ও এক জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের শেষটা হলো হতাশায় ভরা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থেকে বিদায় নিলেন এদেন আজার-কেভিন ডে ব্রুইনেরা।

কানাডা ফিরল শূন্য হাতে। অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডে বসল এল সালভাদরের সঙ্গে। এই দুটি দলই কেবল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচে হেরেছে।

হার এড়ালেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত। তবে ড্রয়ের জন্য নয়, মরক্কো শুরু থেকেই খেলে আক্রমণাত্মক ফুটবল।

কানাডা গোলরক্ষকের অমার্জনীয় ভুল কাজে লাগিয়ে চতুর্থ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ডিফেন্ডারের দুর্বল ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে ডি-বক্সের বাইরে চলে আসেন গোলরক্ষক মিলান বোরিয়ান। জোরাল শট না নিয়ে কিংবা কোনো সতীর্থকে বল না বাড়িয়ে তিনি নেন লক্ষ্যহীন শট। ছুটে এসে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন জিয়াশ!

পঞ্চদশ মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তাহোন বিউকানান। কাইল ল্যারিনের ক্রসে দূরের পোস্টে ঠিকভাবে শট নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।

২৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এন-নেসিরি। এই গোলে যথেষ্ট দায় আছে কানাডার কামাল মিলার ও স্টিভেন ভিটোরিয়া। পেছনে থাকার পরও মাঝমাঠ থেকে আসা বলের কাছে তাদের আগে যান এন-নেসিরি। ওই দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন সেভিয়ার এই ফরোয়ার্ড।

অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে ৪০তম মিনিটে সৌভাগ্যের গোলে ব্যবধান কমায় কানাডা। স্যামুয়েল অ্যাডাহকুবির ক্রস নায়েফ আগের্দের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। ঝাঁপিয়ে হাত ছোঁয়াতে পারলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।

চলতি আসরে এটা প্রথম আত্মঘাতী গোল, বিশ্বকাপের ইতিহাসে শততম।

যোগ করা সময়ে এন-নেসিরি জালে বল পাঠান। কিন্তু সে সময়ে আগের্দ গোলরক্ষকের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকায় অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল।

দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণে মনোযোগ বাড়ায় মরক্কো। আক্রমণাত্মক ফুটবলে চাপ বাড়ায় কানাডা। ৭১তম মিনিটে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল তারা। অ্যাটিবা হাচিনসনের হেড ক্রসবারে লেগে, গোললাইনে পড়ে ফিরে আসে। এরপরও সুযোগ ছিল। কিন্তু অ্যালিস্টার জন্সটন হেড একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। বেঁচে যায় মরক্কো।

এরপর আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে দলটি। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ করে কানাডা। কিন্তু গোলের তেমন কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি তারা। আগেই বিদায় নিশ্চিত হওয়া দলটি বিদায় নিল টানা তিন ম্যাচ হেরে।

১৯৮৬ আসরের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব পার হওয়া মরক্কোর সামনে এখন নতুন উচ্চতা স্পর্শের হাতছানি।

খেলাধুলা

শুক্রবার রাত ১ টায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।

প্রথম দুই ম্যাচে জয়ী টুর্নামেন্ট ফেভারিট ব্রাজিল নকআউট পর্ব নিশ্চিত করায় কালকের ম্যাচটি তাদের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন শেষ ষোলো নিশ্চিতে শেষ চেষ্টা করবে।

গোড়ালির চোটের কারণে ব্রাজিল দলের রাইট-ব্যাক দানিলো ও সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাসল ইনজুরির শিকার হওয়া লেফট-ব্যাক অ্যালেক্স স্যান্ড্রো ক্যামেরুনের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না।

এবারের টুর্নামেন্টে সেলেসাওরা এখনো কোন গোল হজম করেনি। সার্বিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলের জয়ের প্রথম ম্যাচটিতে টটেনহ্যাম হটস্পারের স্ট্রাইকার রিচার্লিসন জোড়া গোল করেছেন। এরপর সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে পরের ম্যাচে ক্যাসেমিরোর একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত হয়।

ক্যামেরুনের সঙ্গে সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। ঘরের মাঠের ওই ম্যাচে নেইমারের জোড়া গোলে ব্রাজিল ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। দলের হয়ে বাকি গোল দুটি করেছিলেন ফ্রেড ও ফার্নান্দিনহো।

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের সঙ্গে-সঙ্গে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এ নিয়ে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকলো তারা। এই রেকর্ড গড়ার পথে জার্মানিকে পেছনে ফেলেছে ব্রাজিল। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা ১৬ ম্যাচে অপরাজিত ছিল জার্মানরা।

সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ শেষে আরও একটি রেকর্ড করেছে ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের গোলমুখে কোনো শট নিতে পারেনি সার্বিয়া। ব্রাজিলের গোলমুখে কোনো শট নিতে পারেনি সুইজারল্যান্ডও। বিশ্বকাপ মঞ্চে দ্বিতীয় দল হিসেবে কোনো আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গোলমুখে শট নিতে দেয়নি ব্রাজিল।

খেলাধুলা

ক্রিকেট বিশ্বের নানা বাস্তবতায় ভারতের সফর যে কোনো দেশের জন্যই বড় কিছু। দীর্ঘ সময় পর সেই দলকে নিজেদের আঙিনায় পেল বাংলাদেশ। দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে ভারতীয় দলের প্রথম ভাগ এখন ঢাকায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌনে ৭টায় ঢাকা বিমানবন্দরে পা রাখে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতের ওয়ানডে দলের প্রথম অংশ। সাপোর্ট স্টাফসহ ৩০ জনের এই বহর আসে মুম্বাই থেকে। বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাদের।

এছাড়াও নিউ জিল্যান্ড সফর শেষে ছোট দুই ভাগে আরও কয়েকজনের আসার কথা বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার।

সবশেষ ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি খেলে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় দল। এবারের মতো সেবারও ছিলেন রোহিত, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানরা। এই তিনজন ছাড়া সেই দলের আর কেউ নেই এবার।

৬ বছর পর বাংলাদেশে কোহলি-রোহিতরা
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারত সবশেষ এখানে খেলে গেছে ২০১৫ সালের জুনে। সেবার একমাত্র টেস্ট ড্র হয় ফতুল্লায়। পরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে হারিয়ে স্মরণীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশ।

ভারতের এবারের সফর শুরু ওয়ানডে দিয়ে। রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু ওয়ানডে সিরিজ। দ্বিতীয় ওয়ানডে বুধবার। এরপর তৃতীয় ওয়ানডে চট্টগ্রামে ১০ ডিসেম্বর। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয় এই সিরিজ।

ওয়ানডে শেষে চট্টগ্রামেই টেস্ট সিরিজ শুরু ১৪ ডিসেম্বর থেকে। ২২ ডিসেম্বর থেকে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট। এই সিরিজ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরের ফাইনালিস্ট ভারত এবার এখনও পর্যন্ত আছে পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে, বাংলাদেশ আছে নয়ে।

খেলাধুলা

২৪ ঘণ্টা আগে অসুস্থতার প্রকোপে ইংল্যান্ড শিবির যেন পরিণত হয়েছিল হাসপাতালে। মাঠে নেমে সেই তাদের অন্য চেহারা। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথমদিন ৫০০-র বেশি রান তুলেছে টসজয়ী ইংল্যান্ড। তা-ও খেলা কম হয়েছে ১৫ ওভার।

চার উইকেটে ৫০৬ রান তুলে প্রথম টেস্টে সফরকারীদের দুর্দান্ত সূচনা স্বাগতিক পাকিস্তানের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। এর আগে টেস্টের প্রথমদিন আর কোনো দল ৫০০ রান করতে পারেনি।

জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটের সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ড পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে যায়। উদ্বোধনী জুটিতে এ দুজন তোলেন ২৩৩ রান। এরমধ্যে ক্রলি ১১১ বলে ১২২ এবং ডাকেট ১১০ বলে ১০৭ রান করেন। সেঞ্চুরি হয়েছে আরও দুটি।

ওলি পোপ ১০৪ বলে ১০৮ এবং হ্যারি ব্রুক মাত্র ৮১ বলে ১০১ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। ৩৪ রানে অপরাজিত অধিনায়ক বেন স্টোকস। দুটি উইকেট নেন জাহিদ মাহমুদ। একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ আলী ও হারিস রউফ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৫০৬/৪ (জ্যাক ক্রলি ১২২, বেন ডাকেট ১০৭, ওলি পোপ ১০৮, জো রুট ২৩, হ্যারি ব্রুক ১০১*, বেন স্টোকস ৩৪*। জাহিদ মাহমুদ ২/১৬০)।