খেলাধুলা

বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬৩ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার ৭ উইকেট। পঞ্চম দিনে যে কোনো ফলই সম্ভব। বৃষ্টির শঙ্কা আর ডারবানের আলেকাস্বল্পতার বাস্তবতা ভাবনায় রাখলে, ড্রয়ের সম্ভাবনাও আছে। তবে খালেদ মাহমুদের ধারণা, এই ম‍্যাচে ফল হবেই। শুরুটা বাজে হলেও বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর আশাবাদী, লড়িয়ে ক্রিকেটে এখান থেকেও ব‍্যাটসম‍্যানরা জয় এনে দিতে পারেন দলকে।

২৭৪ রানের লক্ষ‍্য তাড়ায় চতুর্থ দিন শেষ বেলায় স্রেফ ৬ ওভার ব‍্যাট করেই বাংলাদেশ দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে হারিয়েছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের উইকেট।

দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১১। ক্রিজে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেটে বাড়ছে টার্ন। নিচু হওয়া বলের সং‍খ‍্যা আর অসমান বাউন্সও বাড়ছে।

খালেদ মাহমুদ তবু আঁকছেন জয়ের ছবিই। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে টিম ডিরেক্টর বললেন, বাকি ব্যাটসম্যানদের ওপর ভরসা আছে তাদের।

“কাল জিততে হলে ২৬৩ রান করতে হবে। কিন্তু ড্র করতে হলে পুরো ৯০ ওভার ব্যাট করতে হবে। আমি মনে করি, সারা দিন যদি আমরা ব্যাট করি, অবশ্যই ম্যাচ জেতার সুযোগ থাকবে। প্রথম কথা হচ্ছে কাল সকালে কেমন শুরু করি।”

“এখনো বাইরে ভালো দুজন খেলোয়াড় আছে। মুশফিক, শান্ত উইকেটে আছ। এরপর লিটন (দাস) ও ইয়াসির (আলি চৌধুরি) আছে। এখনও আমাদের সম্ভাবনা আছে। আমি জানি কন্ডিশন কঠিন, বল টার্ন করছে, নিচু হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করব। এখনও আমরা জেতার আশা ছাড়ছি না।”

প্রথম ইনিংসেও শেষ বেলায় দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মাহমুদুল হাসান জয়ের ম‍্যারাথন ইনিংস ও অন‍্যদের কার্যকর অবদানে তৃতীয় দিনের প্রায় পুরোটা সময় ব‍্যাট করে সফরকারীরা।

জয়ের সেই প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার ইনিংসকে দলের জন‍্য অনুপ্রেরণা মনে করছেন টিম ডিরেক্টর। প্রথম ইনিংসে নবীন একজন হাল ধরেছিলেন, সাবেক এই অধিনায়কের চাওয়া এবার অভিজ্ঞ মুশফিক পথ দেখান দলকে।

“একটা ছেলে নতুন এসে এরকম ব্যাট করেছে। মুশফিক আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র, সবচেয়ে অভিজ্ঞ তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অবশ্যই বেশি থাকবে। নিজের কাছেও তার প্রত‍্যাশা তেমনই। মুশফিক জানে, তার কাছে দলের চাওয়া কী।”

“শান্ত আছে উইকেটে। যেটা বলছিলাম লিটন, (ইয়াসির) রাব্বি আছে। (মেহেদী হাসান) মিরাজেরও একশ আছে টেস্টে। সুতরাং আমরা আশাবাদী, এখনও যদি ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করতে পারি, সময় নিয়ে ব্যাট করি, তাহলে এই ম্যাচে আমাদের জেতা সম্ভব। এখান থেকে ড্র করার সম্ভাবনা কম। হয় আমরা জিতব, না হয় হারব।”

খেলাধুলা

তাজা ঘাসে ভরা উইকেট। গতি, সুইং আর বাউন্সে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা। জিমে ঘাম ঘরানো। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররা কেপ টাউনের ক্যাম্পে প্রস্তুতি নিয়েছে এভাবেই। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের বিশ্বাস, দারুণ এই প্রস্তুতির সুফল মিলবে টেস্ট সিরিজে।

সূচিতে ওয়ানডে সিরিজ আগে হলেও এবার শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররাও ওয়ানডে দলের সঙ্গেই যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকসহ ওই ক্রিকেটাররা নিবিড়ভাবে অনুশীলন করেন সাবেক ক্রিকেটার ও এখন খ্যাতিমান কোচ গ্যারি কার্স্টেনের ক্রিকেট একাডেমিতে।

ব্যাটিং কোচ সিডন্সের তত্ত্বাবধানেই চলে এই ক্যাম্প। তবে শুরুর দিকে কোচিং করান স্বয়ং কার্স্টেনও। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, যিনি কার্স্টেন একাডেমিরও কোচ।

ওই ক্যাম্প এখন শেষ। তবে সিডন্সের মনে রয়ে গেছে রেশ। দল এখন প্রথম টেস্টের শহর ডারবানে। সেখানেই রোববার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিডন্স শোনালেন প্রস্তুতি ক্যাম্পের বিস্তারিত।

“কেপ টাউন দুর্দান্ত ছিল (ক্যাম্প)। আবহাওয়া ছিল নিখুঁত। ৯ জন ছিল ক্যাম্পে, পরে ২ জন দেশে ফিরে যায় (স্কোয়াডের বাইরে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন ও রেজাউর রহমান রাজা)। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া ও পিচ কন্ডিশন সম্পর্কে যেভাবে ধারণা হয়েছে, ভালো কয়েকজন নেট বোলার ছিল, আমাদের বোলাররা তো ছিলই, ব্যাটসম্যানরা দারুণ কাজ করেছে।”

“কোচিংও দারুণ হয়েছে, গ্যারি কার্স্টেন ছিল, রায়ান কুক ও আমি কাজ করেছি মুমিনুল ও সাদমানসহ সবার সঙ্গে আলাদা করে, সব মিলিয়ে কার্যকর ১০টি দিন ছিল। কঠোর অনুশীলন, জিম সেশন, অনুশীলনের দারুণ সুযোগ-সুবিধা। আশা করি, মুমিনুল ও সাদমানরা টেস্টের জন্য দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।”

যদিও খুব বেশি ক্রিকেটার ছিলেন না ক্যাম্পে, ম্যাচ পরিস্থিতির মতো করে অনুশীলনের সুযোগও হয়নি সেভাবে, প্রস্তুতিতে তবু যথেষ্ট ঝাঁঝ ছিল বলেই দাবি সিডন্সের। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে কার্যকর প্রস্তুতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“ব্যাট-বলের মুখোমুখি লড়াইটা তীব্রই ছিল। চকচকে নতুন বল, সবুজ ঘাসের উইকেট… ঠিক ম্যাচ পরিস্থিতি নয়, তবে ব্যাট-বলের লড়াইটা ম্যাচের মতোই হয়েছে। নতুন বলে আমাদের দুই পেসার দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বল করেছে, এরকম কিছুই দরকার ছিল ওদের।”

“দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়তি বাউন্সে কিভাবে বল ছাড়তে হয় বা ডিফেন্স করতে হয়, ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি বাউন্স এখানে, স্টাম্পের ওপর দিয়ে ছাড়া বা বাইরের বল ছাড়া, ভালোভাবে ঠেকানো, বাজে বলকে সীমানায় পাঠানো, এসবই অনুশীলন হয়েছে।”

বৃষ্টিভেজা মাঠের কারণে এ দিন অনুশীলন করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু বৃহস্পতিবার।

খেলাধুলা

পরিবারের সবাই অসুস্থ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ২-১ এ সিরিজ জিতে ঢাকায় ফিরলেন সাকিব আল হাসান।

বিমান থেকে নেমেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন এ অলরাউন্ডার। মলিন মুখে জানালেন পারিবারিক বিষয় নিয়ে বলতে চান না।

তাই সাংবাদিকরা টানলেন অন্য প্রসঙ্গ। আর তাতেই মেজাজ হারালেন বিশ্বসেরা অন্যতম অলরাউন্ডার।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান পেসার তাসকিন আহমেদের। গোটা সিরিজেই দাপট দেখিয়ে হয়েছেন সিরিজসেরা। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন তাসকিন। অপর দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামও ভালো পারফরম করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়ে পেসারদের এ অনন্য ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকরা সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন, বিদেশে ভালো করলেন কিন্তু ঘরের মাঠে সেভাবে সুবিধা করতে পারছেন না বাংলাদেশি পেসাররা?

এমন প্রশ্নে রীতিমতো মেজাজ হারালেন সাকিব। উল্টো প্রশ্নকর্তার ক্রিকেট জ্ঞান নিয়ে সমালোচনা করলেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে জবাব দিলেন সাকিব।

সাংবাদিককে সাকিব বলেন, ‘জানি না আপনি কোন জায়গা থেকে এটা বলেছেন। আমার ধারণা, আপনি পরিসংখ্যান দেখেন না কিংবা জানেনও না। খেলা সম্পর্কে আইডিয়াটাও একটু কম আছে আপনার। আপনি পেস বোলারদের পরিসংখ্যান দেখেন। তার পর এটা নিয়ে প্রশ্ন করেন। পরিসংখ্যান দেখুন— দেশের মাটিতে গত ১, ২ ও ৩ বছরে আমাদের পেস বোলাররা কত ভালো করেছে।’

সাকিব নিজেই পরিসংখ্যান দেন, ‘গত সিরিজেও (আফগানিস্তান দলের বাংলাদেশ সফর) তো স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা বেশি উইকেট পেয়েছে। ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট সম্ভবত মোস্তাফিজের। এ রকম একজন বোলার আছে। তাসকিন ভালো করছে, শরিফুল ভালো করছে, সাইফউদ্দিন যখন খেলেছে ভালো করেছে। যে যখন সুযোগ পেয়েছে সবাই ভালো বোলিং করছে। পেস বোলারদের প্রতি এখন টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের অনেক বেশি আস্থা আছে। পেস বোলাররা সেই প্রতিদানও দিচ্ছে।’

খেলাধুলা

বছরের প্রথম দিন থেকেই দারুণ খেলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নতুন বছরের প্রথম দিনে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে খেলতে নেমে ইতিহাস গড়ে মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দলটি। অতীতের খরা কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডে প্রথম জয়ের ইতিহাস গড়েন টাইগাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি সফরে ম্যাচ জয়ের ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ তিন ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে ঐতিহাসিক জয় পায়। ২০ বছর পর আফ্রিকার মাঠে স্বাগতিকদের প্রথমবার ম্যাচ এবং সিরিজে হারাল বাংলাদেশ।

ওয়ানডে সিরিজ শেষে আফ্রিকায় এ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অংশ নেবে টাইগাররা। ওয়ানডের মতো টেস্ট সিরিজেও জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ দল।

৩১ মার্চ প্রথম টেস্ট শুরুর আগে জাতীয় দলের তারকা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা নিউজিল্যান্ডে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আফ্রিকায় ভালো করতে পারব না- এমন কিছু না। আমাদের পেস বোলার, ব্যাটসম্যান সবাই খুব ভালো ফর্মে আছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা টেস্ট সিরিজও জিতব। আমরা যে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি, এই বিশ্বাস আমাদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

খেলাধুলা

র‍্যাংকিংয়ে দুই দলের বিস্তর পার্থক্য। বাংলাদেশ যেখানে ১৮৬তম স্থানে, মালদ্বীপের অবস্থান সেখানে ১৫৭তম।

মাঠের খেলায়ও সেই পার্থক্য স্পষ্ট ধরা পড়লো। স্বাগতিকদের কাছে পাত্তাই পেলেন না জামাল ভূঁইয়ারা। সেই সঙ্গে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের কোচ হিসেবে হাভিয়ের কাবরেরার অভিষেকটাও সুখকর হলো না।
মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। অথচ এই মালদ্বীপকেই গত নভেম্বরে সবশেষ দেখায় শ্রীলঙ্কার প্রাইম মিনিস্টার মহিন্দা রাজাপাকসে টুর্নামেন্টে ২-১ গোলে হারিয়েছিলেন জামাল-তপুরা।

গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া স্প্যানিশ কোচ কাবরেরার অধীনে মাত্র চার দিন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। অল্প কয়দিনের প্রস্তুতি নিয়েই মালদ্বীপকে তাদের মাটিতে হারাতে না পারার বৃত্ত ভাঙতে চেয়েছিল জামালবাহিনী। কিন্তু এবারও হলো না।

ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে মালদ্বীপ। ৩৮তম মিনিটে হাসান রাইফের গোলে এগিয়েও যায় তারা। মালদ্বীপের এই ফরোয়ার্ডকে আটকাতে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেও পারেননি।

দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৫৭তম মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের ক্রসে ইয়াসির আরাফাতের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এর পরই ইব্রাহিম হাসানের নিখুঁত শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা।

দুই গল হজম করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৮০তম মিনিটে আহমেদ রিজওয়ানের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ইয়াসিন হেড করতে ব্যর্থ হলে ব্যবধান কমাতে পারেনি বাংলাদেশ।

আগামী মঙ্গলবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মঙ্গোলিয়ার মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।

খেলাধুলা

আফ্রিকার মাঠে গত ২০ বছরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে কোনো ফরম্যাটেই জয় পায়নি বাংলাশে। এবারের সফরে আফ্রিকায় প্রথম জয়ের পাশাপাশি সিরিজ জয়েরও ইতিহাস গড়ল টাইগাররা।

বুধবার সেঞ্চুরিয়ানের সুপারস্পোর্টস পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তাসকিন আহমেদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের তোপের মুখে পড়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানেই গুঁড়িয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ১২৭ রানের জুটিতে জয়ের দুয়ারে চলে যায় বাংলাদেশ। ৪৮ রানে লিটন আউট হলে সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ১৪১ বল আগেই ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। দলের জয়ে ৮২ বলে অপরাজিত ৮৭ রান করেন তামিম।

খেলা শেষে অধিনায়ক তামিম বলেন, আমি খুবই গর্বিত একজন মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে প্রথমবার ম্যাচ জয়ের পর সিরিজ জয় করা। এবং বিদেশের মাঠে বাংলাদেশি একজন ফাস্ট বোলারের পাঁচ উইকেট শিকারে ম্যাচ সেরার পর সিরিজ সেরা হতে দেখে খুবই গর্বের ব্যাপার।

তামিম আরও বলেন, এই জয় আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। আমরা ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের খেলা নিয়ে গর্ব করি। এটি এমন একটি ফর্ম্যাট যেখানে আমরা খুব ইনজয় করি। সাকিবকে ধন্যবাদ জানাতেই। তার ছেলে-মেয়ে মা এবং শাশুড়ি ঢাকায় হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও সে যে আমাদের সঙ্গে ছিল তার এই ত্যাগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

খেলাধুলা

দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন পেস বোলার তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার অপরিচিত কন্ডিশনে বাউন্সি উইকেটে একজন বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার হিসেবে অনন্য অবদান রাখেন তাসকিন। এক এক করে পাঁচটি উইকেট তুলে নেন তিনি। পঞ্চম উইকেট রাবাদাকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাস করে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন তাসকিন। অনেক্ষণ সিজদারত অবস্থায় ছিলেন তিনি।

বুধবার ‘অঘোষিত ফাইনালে’ ৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান খরচ করে ৫ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ের কারণেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারেনি স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

তাসকিনের গতির মুখে পড়ে সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

এর মাধ্যমে দীর্ঘ আট বছর পর নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাসকিন দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচে ৫টি উইকেট পেয়েছেন।

পরে নিজের বোলিং পরিকল্পনা নিয়ে ডানহাতি পেসার বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র নিজের প্রক্রিয়ায় স্থির থেকেছি এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। উইকেট থেকে বাউন্স পেয়েছি। এজন্য নিজের লাইন ও লেন্থ ঠিক রেখেছি। নিজের প্রক্রিয়ায় এখন আমার অনেক বিশ্বাস। শেষ এক, দেড় কিংবা দুই বছর এভাবেই পরিশ্রম করে আসছি। এটাই আমার সাফল্যের রহস্য।’

উল্লেখ্য, তাসকিন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৪ সালের জুন মাসে। সে বছর ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। আর অভিষেক ম্যাচেই ৫টি উইকেট তুলে নিয়ে চমক দেখান তিনি।

কিন্তু এর মাঝে আরও ৪৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও একটিতে ৫ উইকেটের দেখা পাননি।

খেলাধুলা

বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টিম্বা বাভুমা বলেন, বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে কিভাবে খেলতে হয়।

প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেন, আপনারা দেখেছেন টাইগাররা এই সিরিজে ব্যাটে বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। সিরিজে আমরা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছি। অথচ আমরাই ভারতকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেলাম।

তিনি আরও বলেন, টাইগারদের বিপক্ষে এই তিন ম্যাচের সিরিজে আমরা অবশ্যই যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। আমাদের যারা আইপিএল খেলে তারা ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়ই অনুধাবন করবেন আইপিএল তাদের বিভ্রান্ত করল। তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করতে হবে, কিন্তু এটি একটি অজুহাত নয়।

প্রোটিয়া অধিনায়ক আরও বলেন, এখন প্রতিটি সিরিজই ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগের অন্তর্ভূক্ত। বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনের জন্য এখানে পয়েন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা এই সিরিজে হেরে কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেছি।

খেলাধুলা

দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ২০ বছরের চেষ্টার পর চলতি সফরেই প্রথম জয়ের স্বাদ পাওয়া বাংলাদেশ সিরিজ জয়েরও ইতিহাস গড়ল।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় ৩১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ৩৮ রানে জয় পায় তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি।

বুধবার শেষ ম্যাচে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ স্বাগতিকদের ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৪১ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে টাইগাররা।

১৫৫ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে অনবদ্য ব্যাটিং করে ১২৫ বলে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান লিটন দাস ও তামিম ইকবাল।

আর মাত্র ২ রান হলেই ফিফটি পূর্ণ হতো লিটনের। দলের জয়ে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৮ রান। হাতে ছিল ২৯.১ ওভার। খেলার এমন অবস্থায় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লিটন। ২০.৫ ওভারে দলীয় ১২৭ রানে ৫৭ বলে ৮টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৮ রান করেন লিটন।

এরপর সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। দলের জয়ে ৮২ বলে ১৪টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ৮৭ রান করেন তামিম।

বুধবার তিন ম্যাচ সিরিজের ‘অঘোষিত ফাইনালে’ আগে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

এদিন সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্টস পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো সূচনা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার কাইল ভেরাইনা ও কুইন্টন ডি কক। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৬.৫ ওভারে ৪৬ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন।

ভেরাইনা এবং ডি ককের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক। আগের ম্যাচে ৬২ রান করা সাবেক এই অধিনায়ককে এদিন ১২ রানে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। তার বিদায়ে ৬.৫ ওভারে ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফ্রিকা।

এরপর জোড়া আঘাত হানেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তার শিকার হয়ে মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন কাইল ভেরাইনা ও ওপেনার জানেমান মালান।

তিন ম্যাচ সিরিজেরে প্রথম খেলায় ওপেনিংয়ে ব্যাট করা ভেরেইনাকে ২১ রানে এলবিডব্লিউ করেছিলেন তাসকিন। বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ বলে ৯ রান করার সুযোগ পান দক্ষিণ আফ্রিকার এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান।

তাসকিনের পর দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টিম্বা বাভুমা। ১১ বল খেলে মাত্র ২ রানে ফেরেন প্রোটিয়া এই অধিনায়ক। তার বিদায়ে ১৫.৫ ওভারে ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় আফ্রিকা।

সাকিবের পর আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। তার বলে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ভেন দার ডুসেন। ১৮.১ ওভারে দলীয় ৮৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ডুসেন।

এরপর আবার দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তার শিকার হয়ে ফেরেন সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা ডুয়াইন পিটোরিয়াস। তাকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন তাসকিন।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পেসার কাগিসো রাবাদাকে আউট করে ৫ উইকেট শিকারের সন্তুষ্টিতে মাঠেই সিজদা দেন তাসকিন।

২৮.৬ ওভারে ১২৬ রানে ৮ উইকেট পতনের পর মনে হয়েছিল দেড়শর আগেই অলআউট হয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ স্কোর মোটাতাজা করতে ব্যাটিংয়ে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন।

নবম উইকেটে লুঙ্গি  এনগিডিকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩ বলে ১৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মহারাজ। সাকিব আল হাসানের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লুঙ্গি।

শেষ দিকে স্কোর মোটাতাজা করতে যাওয়া কেশভ মহারাজকে রান করে সাজঘরে ফেরান তামিম-মুশফিক। ৩৯ বলে চার বাউন্ডারিতে ২৮ রান করে কেশভ মহারাজের বিদায়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪/১০ রান (জানেমান মালান ৩৯, কেশভ মহারাজ ২৮, ডুয়াইন পিটোরিয়াস ২০, ডেভিড মিলার ১৬; তাসকিন আহমেদ ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪)।

বাংলাদেশ: ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১ রান (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*)।

ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।

তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

খেলাধুলা

বুধবার বিকেল ৫টায় সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের অঘোষিত ফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল।

ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, সবাই দায়িত্ব নিয়ে খেললে সিরিজ জয় সম্ভব।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় সেঞ্চুরিয়নে ৩১৪ রানের পাহাড় গড়ে ৩৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতায় ফেরে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার শেষ ম্যাচে যারাই জিতবে সিরিজ তাদেরই হবে।

অঘোষিত ফাইনালের আগে মিরাজ বলেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে রান খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০ রান করে জেতা সম্ভব নয়, বিশেষ করে ওদের মাটিতে। আমরা যদি ভালো একটা স্কোর গড়ি, তাহলে জেতাটা সহজ হয়ে যায়। সবসময় আমরা খেলায় থাকব। সবশেষ উইকেট কিন্তু ওরকম ছিল না, রান করার মতো। অসমান বাউন্স ছিল, বল উঁচু-নিচু হচ্ছিল। এটা ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক কঠিন। উইকেট ভালো থাকলে অন্যরকম চিত্র হতে পারত।

মিরাজ আরও বলেন, সেঞ্চুরিয়নের উইকেট খুবই ভালো। আমরা যেহেতু প্রথম ম্যাচ খেলেছি, উইকেট ভালো থাকে এখানে, আমাদের আত্মবিশ্বাসও আছে যে তিনশর বেশি রান করেছি এখানে। সবাই দায়িত্ব নিয়ে খেললে অবশ্যই সিরিজ জয় সম্ভব। বোলারদের জন্য যদি ভালো একটা সংগ্রহ দিতে পারি দায়িত্ব নিয়ে খেলে, তাহলে বোলাররাও তা ডিফেন্ড করতে পারবে বলে আশা করি।