খেলাধুলা

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আইপিএলের ১৪ তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে। সেই আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার নিলামে তিন কোটি ২০ রুপি দিয়ে সাকিবকে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

আইপিএল চলার সময়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু সেই সিরিজে না খেলে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাকিব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন চেয়ারম্যান আকরাম খান।

তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি চেয়ে সাকিব বিসিবি বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। কারণ তিনি আইপিএল খেলতে চান। আমরা তাকে অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। কারণ যার জাতীয় দলের হয়ে খেলার ইচ্ছা নেই তাকে আটকে রাখার কোনো অর্থ নেই।

এবারের আইপিএলের নিলাম ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্য নিয়ে নিলামে ওঠেন সাকিব। তাকে প্রথমেই ডাকে কলকাতা নাইট রাইডার্স, দাম হাঁকায় ২ কোটি ২০ লাখ রুপি। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও পাঞ্জাব কিংসের মধ্যে সাকিবকে নিয়ে কিছুক্ষণ কাড়াকাড়ি চলে। শেষ পর্যন্ত ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে সাকিবকে দলে নেয় তারই প্রাক্তন দল কলকাতা নাইট রাইডার্স।

খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টির ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জনপ্রিয় আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৪তম আসরের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৃহস্পতিবার। চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত নিলামে যেসব তারকা ক্রিকেটার বিক্রি হলেন-

ক্রিস মরিস ১৬ কোটি ২৫ লাখ (রাজস্থান)।
কাইল জেমিসন ১৫ কোটি (বেঙ্গালুরু)।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১৪ কোটি ২৫ লাখ (বেঙ্গালুরু)।
জো রিচার্ডসন ১৪ কোটি (পাঞ্জাব)।
কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ৯ কোটি ২৫ লাখ (চেন্নাই)।
মেরেডিথ ৮ কোটি (পাঞ্জাব)।
মঈন আলী ৭ কোটি (চেন্নাই)।
শাহরুখ খান ৫ কোটি ২৫ লাখ (পাঞ্জাব)।
নিল কুল্টারনাইল ৫ কোটি (মুম্বাই)।
টম কুরান ৫ কোটি ২৫ লাখ (পাঞ্জাব)।
মোজেস আনরিখ ৪ কোটি ২০ লাখ (পাঞ্জাব)।
ড্যান ক্রিশ্চিয়ান ৪ কোটি ৮০ লাখ (বেঙ্গালুরু)।
শুভম দুবে ৪ কোটি ৪০ লাখ (রাজস্থান)।
সাকিব আল হাসান ৩ কোটি ২০ লাখ (কলকাতা)।
অ্যাডাম মিলনে ৩ কোটি ২০ লাখ (মুম্বাই)।
পীযূষ চাওলা ২ কোটি ৪০ লাখ (মুম্বাই)।
হরভজন সিং ২ কোটি (কলকাতা)।
ডেভিড মালান ১ কোটি ৫০ লাখ (পাঞ্জাব)।
মুজিব-উর রহমান ১ কোটি ৫০ লাখ (হায়দরাবাদ)।
উমেশ যাদব ১ কোটি (দিল্লি)।
চেতন শাকারিয়া ১ কোটি (রাজস্থান)।
মোস্তাফিজুর রহমান ১ কোটি (রাজস্থান)।
ফ্যাবিয়ান অ্যালান ৭৫ লাখ (পাঞ্জাব)।
লিয়াম লিভিংস্টোন ৭৫ লাখ (রাজস্থান)।
বেন কাটিং ৭৫ লাখ (কলকাতা)।
চেতেশ্বর পুজারা ৫০ লাখ (চেন্নাই)।
জিমি নিশাম ৫০ লাখ (মুম্বাই)।
করুন নায়ার ৫০ লাখ (কলকাতা)।
পবন নেগি ৫০ লাখ (কলকাতা)।
জগদিশ সুচিথ ৩০ লাখ (হায়দরাবাদ)।
জালাজ সাক্সেনা ৩০ লাখ (পাঞ্জাব)।
কে সি কারিয়াপ্পাকে ২০ লাখ (রাজস্থান)।
এম সিদ্ধার্থ ২০ লাখ (দিল্লি)।
লোকমান হুসেন মারিওয়ালা ২০ লাখ (দিল্লি)।
শেল্ডন জ্যাকসন ২০ লাখ (কলকাতা)।
বিষ্ণু বিনোদ ২০ লাখ (দিল্লি)।
রিপল প্যাটেল ২০ লাখ (দিল্লি)।
শচীন বেবি ২০ লাখ (বেঙ্গালুরু)
রজত পতিদার ২০ লাখ (বেঙ্গালুরু)
আকাশ সিং ২০ লাখ (রাজস্থান)।
বেঙ্কটেশ আইয়ার ২০ লাখ (কলকাতা)।
যুধবীর চড়ক ২০ লাখ (মুম্বাই)।
কুলদীপ যাদব ২০ লাখ (রাজস্থান)।
কেশর ভরত ২০ লাখ (বেঙ্গালুরু)।
উৎকর্ষ সিং ২০ লাখ (পাঞ্জাব)।

খেলাধুলা

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) একেবারে শুরুর আট ফ্র্যাঞ্জাইজির একটি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। তবে আগামী মৌসুমে এই নামে অংশগ্রহণ করবে না প্রীতি জিনতার মালিকানাধীন দলটি।

নাম পরিবর্তন হয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের। লিগের ১৪তম সংস্করণ থেকে ‘পাঞ্জাব কিংস’ নামে নামে দেখা যাবে ফ্র্যাঞ্জাইজিটিকে। নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) অনুমোদন দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন নাম পরিবর্তন করা হয়েছে তার কারণ সম্পর্কে ফ্র্যাঞ্জাইজিটির মালিক বা কর্মকর্তার কেউ কিছু জানাননি। তবে ১৮ ফেব্রুয়ারি আইপিএল নিলামকে সামনে রেখে সপ্তাহখানেকের মধ্যে মুম্বাইয়ে পুনরায় এক বিশাল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে সবকিছু শুরুর পরিকল্পনা করছে। এমনটি জানিয়েছে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ।

ফ্র্যাঞ্জাইটির মালিক হিসেবে আছেন মোহিত বর্মণ, নেস ওয়াদিয়া, প্রীতি জিনতা ও করণ পাল। আইপিএলে এখন পর্যন্ত বাজে পারফরম্যান্স দেখানো দলের একটি পাঞ্জাব। লিগের ১৩ বছরের ইতিহাসে কেবল একবার তৃতীয়স্থান ও একবার রানার্স-আপ হয়েছিল তারা।

খেলাধুলা

বঙ্গবন্ধু টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের খেলায় ক্ষুব্ধ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হওয়াটা একেবারেই মানতে পারছেন না তিনি। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, এভাবে চলতে দেওয়া হবে না।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেটে স্টেডিয়ামে রোববার ঢাকা টেস্টে ১৭ রানে হারে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে সিরিজের সব ম্যাচে হারল তারা।

এর আগের সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেশের মাটিতে অনায়াসে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও ওয়ানডে সিরিজে করে হোয়াইটওয়াশ। কিন্তু টেস্টে উল্টো ফলের জন্য দলের সবার থেকে জবাব চাওয়ার কথা বললেন বিসিবি প্রধান।

“খেলোয়াড়দের মনোভাব বলেন, কৌশল বলেন আমার কাছে মনে হয়…যে জিনিসটা সবাই মনে করে হওয়া উচিত, সেটা হচ্ছে না। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, আমাদের বাংলাদেশের টপ যারা, নামকরা, বিশ্বমানের তাদেরকে এখন বলে দিতে হবে টেস্টে কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে? এগুলো তো বলে দেওয়ার কথা না।”

শেষ ইনিংসে ২৩১ রান তাড়ায় বাংলাদেশের ৯ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেননি কেউ। ফিফটি জুটিও মোটে একটি। দল তাই গুটিয়ে যায় ২১৩ রানে।

এই পরাজয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের মুখ আর দেখা হলো না বাংলাদেশের। অথচ পুরো ১২০ পয়েন্টের আশায় সিরিজ শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। শূন্য হাতে সিরিজ শেষ করার পর নাজমুল হাসান বললেন, পরিবর্তন আসবে, সমাধানও হবে।

“সমাধান খুবই সহজ, সমাধান হবে। এইভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমি আফগানিস্তানের পরে বেশি কিছু বলতে চাইনি। কিন্তু আজকে আপনাদেরকে আমি বলছি, এর পরিবর্তন করতে হবে, অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। যেভাবেই হোক…।”

“সমস্যা সব জায়গায় আছে, এটাতো স্বীকারই করে নিচ্ছি। দুইটা টেস্ট সিরিজ দেখে বুঝেছি, সমস্যা তো আছেই। একটা দেখে কিছু বলতে পারিনি তেমন। এবার তো আপনাদেরকে বললাম।”

দুই টেস্টে একজন করে বিশেষজ্ঞ পেসার খেলিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ স্কোয়াডে আছে পাঁচ জন পেসার। তাদের না খেলানোর কোনো যুক্তি দেখছেন না বিসিবি প্রধান।

“আমাদের সামগ্রিক যে পরিকল্পনা…একটা ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নাই যে, আমাদের বোলারদের মধ্যে স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা ভালো। সাকিবকে বাদ দেন। এ ছাড়া স্পিনার কয়টা আমাদের? দুই তিন জন, কিন্তু আমাদের অনেক ভালো পেসার আছে।”

“এমনেও তো পাঁচটা পেসার আছে। কেন খেলছে না? চট্টগ্রামে খেলার কথা ছিল খেলে নাই। এখানেও অন্তত দুইজন খেলবে আমাকে নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু খেলে নাই, কেন? আমাকে তো বলা হচ্ছে খেলবে। পরে তো দেখি নামছে না। শুধু কোচ, অধিনায়ক না সবার কাছেই জবাব চাইব।”

খেলাধুলা

বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে জয় তুলে নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারিদের দেওয়া সিরিজে সমতা আনতে ২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন তামিম ইকবাল। ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ রাহকিম কর্ণওয়াল। ম্যান অব দ্য সিরিজ এনক্রুমা বনার।

এই টেস্ট জিততে হলে বাংলাদেশকে নিজেদের আগের রেকর্ড ভাঙতে হতো। এর আগে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটিও ছিল উইন্ডিজদের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে তাদের মাটিতে ২১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে এবার স্বাগতিক হয়েও সেই রেকর্ডটি ভাঙতে পারলো না।

ঢাকা টেস্টে জোমেল ওয়ারিক্যান এবং রাহকিম কর্ণওয়ালের স্পিন বিষে নীল হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে ২-০ তে সিরিজ জিতে নিলো ক্যারিবীয়রা। বল হাতে একাই বাংলাদেশের ব্যাটিংলাইন আপে ধ্বস নামান কর্ণওয়াল।

মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা বেশ ভালোভাবেই ভোগাবে সেটা জানাই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। যে কারণে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তামিম ইকবাল। তবে শেষ বিকালে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আফসোস করতেই পারে। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে শেষ ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন রাহকিম কর্ণওয়াল।

তখনও জয়ের জন্য ১৫৩ রানের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। এই উইকেটে ২৩১ রান তাড়া করা যে সহজ ছিল না সেটি ভালো করেই জানা। তবুও আশা জেগেছিল মুশফিক-মুমিনুল আছেন বিধায়। তবে সেই আশায় পানি ঢালতে বেশি দেরি করেনি ক্যারিবীয়রা।

দলীয় ১০১ রানে ওয়ারিক্যানের বলে পা সামনে এগিয়ে আনতেই উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরতে হয় মুশফিককে। মুশফিকের বিদায়ের পর রান তাড়া যেন আরও কঠিন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের জন্য কাজটা আরও কঠিন করেন কর্ণওয়ালই। দলীয় ১১৫ রানে মিঠুনকে সাজঘরে ফেরান তিনি।

১১৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে কাজটা যখন কঠিন হয়ে পড়ে তখনই কিছুটা আশা দেখাচ্ছিলেন দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। দুই ব্যাটসম্যানই কর্ণওয়াল, ওয়ারিক্যানকে বেশ দেখে শুনেই খেলছিলেন। সেই সাথে এই দুই ব্যাটসম্যানকে দিতে হচ্ছে ধৈর্য পরীক্ষাও। কিন্ত মুমিনুলও আশা দেখিয়ে টিকতে পারলেন না ক্রিজে। দলীয় ১৪৭ রানে ওয়ারিক্যানের বলে থামতে হয় তাকে।

আউট হওয়ার আগে ২৬ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। বাংলাদেশের জন্য জয়ের কাজটা আরও কঠিন হয় দলীয় ৬ রান যোগ করতেই। কর্ণওয়ালের করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটকিপার জশুয়া ডা সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন।

লিটনের বিদায়ের পর একপাশ থেকে আগলে রেখে বাংলাদেশের জয়ের আশা টিকিয়ে রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজের সঙ্গে তাইজুল কিছুটা সঙ্গ দিলেও দলীয় ১৬৩ রানে আউট হন তিনি। নবম উইকেট জুটিতে দলীয় স্কোরবোর্ডে মিরাজের সঙ্গে ২৫ রান যোগ করেন নাঈম। তবে সেই নাঈমও বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হতে পারলেন না। ক্রেগ ব্র্যাফেটের বলেই এলবিডব্লুর শিকার হতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় নাঈমকে (১৪)।

তবে তখনও আশা টিকিয়ে রাখেন মিরাজ। ৫৯তম ওভারে কর্ণওয়েলকে ছয় এবং চার মেরে লড়াই চালিয়ে যান মেহেদী হাসান। তবে নাটকের শেষটা হয় কর্ণওয়ালের হাতেই। দলের যখন ১৮ রান প্রয়োজন তখনই ওয়ারিক্যানের বলে স্লিপে থাকা কর্ণওয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ। সেই সাথে শেষ হয় মিরাজের লড়াকু ৩১ রানের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১ম ইনিংস) ৪০৯ (বনার ৯০, জশুয়া ডা সিলভা ৯২, আবু জায়েদ ৪-৯৮)

বাংলাদেশ (১ম ইনিংস) ২৯৬ (লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭, মুশফিক ৫৪, কর্ণওয়েল ৫-৭৪)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২য় ইনিংস) ১১৭ (বনার ৩৮, জশুয়া ডা সিলভা ২০, তাইজুল ৪-৩৬)

বাংলাদেশ (২য় ইনিংস) ২১৩ (তামিম ৫০, মুমিনুল ২৬, মিরাজ ৩১ : কর্ণওয়াল ৪-১০৫)

বাংলাদেশের ১৭ রানের হার

খেলাধুলা

লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ফলো-অন এড়ানোর পর ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ১১৩ রানের লিড পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই লিডকে সাথে নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশ স্পিনাদের তোপের মুখে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫৪ রানে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। ব্যাট হাতে লিটন ৭১ ও মিরাজ ৫৭ রান করেন।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে গতকাল ৪ উইকেটে ১০৫ রান তোলে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ২৭ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৬ রানে দিন শেষ করেছিলেন।

তৃতীয় দিনের শুরু থেকে দেখেশুনেই খেলছিলেন মুশফিক-মিঠুন। ফলো-অন এড়ানোই মূল লক্ষ্য ছিলো তাদের। ৪৪তম ওভারে ৮৯তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক।

মুশির হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামেন ধৈর্য্যর পরীক্ষা দেয়া মিঠুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের করা দিনের দশম ওভারের প্রথম বলেই টাইমিংএ গড়বড় করে শর্ট মিড-উইকেটে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ক্যাচ দেন মিঠুন। ফলে ১৪০ মিনিটে ৮৭ বলে মিঠুনের ১৫ রানের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।

মিঠুনকে হারিয়ে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে মুশফিকের। কর্নওয়ালের করা ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে বড় ভুল করে ফেলেন তিনি। বল-ব্যাটের টাইমিং মিলে না যাওয়ায় শর্ট কাভারে কাইল মায়ার্সকে ক্যাচ দেন মুশফিক। ১৭০ মিনিটে ১০৫ বল খেলে ৭টি চারে ৫৪ রানে থামেন তিনি। ফলে ১৫৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শংকায় পড়ে বাংলাদেশ।

সেই শংকাটা দূর করতে উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে শুরু করেন লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। এতে প্রথম সেশনে ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে ৭০তম ওভারের শেষ বলে ফলো-অনের লজ্জা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন লিটন-মিরাজ। এরপর সাবলীলভাবে খেলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডকে শক্তপোক্ত করতে থাকেন তারা।

৭৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। ্ওরেপর হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা মিরাজ । ১১২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেন। লিটন অর্ধশত পুরন করেন ৯২তম বলে।
লিটন-মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় সেশনটি দুর্দান্তভাবে কাটায় বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ২৭২ রানে চা-বিরতিতে যায় টাইগাররা। এসময় লিটন ৬৬ ও মিরাজ ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বিরতির থেকে ফেরার পর চতুর্থ ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৯২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনকে লেগ বিফোর আউট করে দলকে দারুন ব্রেক-থ্রু দেন কর্নওয়াল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লিটন। ২১৪ মিনিটে ১৩৩ বল খেলে ৭টি চারে ৭১ রান করে ফিরেন লিটন। সপ্তম উইকেটে ২৫৫ বলে গুরুত্বপূর্ণ ১২৬ রান যোগ করেন লিটন-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের।

একই ওভারের পঞ্চম বলে নাইম হাসানকে খালি হাতে বিদায় দেন কর্নওয়াল। এতে ইনিংস পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় দীর্ঘদেহি এই স্পিনারের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন কর্নওয়াল।
কর্নওয়ালের সাফল্যের পর মিরাজের বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার শ্যানন গাব্রিয়েল। ৬টি চারে ১৪০ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ।

২৮১ থেকে ২৮৩ রানের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ৩শর নিচে গুটিয়ে যাবার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সেটি রুখতে শেষ উইকেটে চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ। কিন্তু জায়েদকে শিকার করে বাংলাদেশকে ২৯৬ রানে থামান পেসার জোসেফ। ১৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তাইজুল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কর্নওয়াল ৩২ ওভারে ৭৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া গাব্রিয়েল ৩টি ও জোসেফ ২টি উইকেট নেন।

বাংলাদেশের ইনিংস শেষে দ্বিতীয়বারের মত ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ রানে প্রতিপক্ষের ২ উইকেট তুলে নেন নাইম-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ৬ রানে নাইম ও শায়নে মোসলেকে ৭ রানে থামান মিরাজ। আরেক স্পিনার তাইজুলও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন। জন ক্যাম্পবেলকে ১৮ রানে বোল্ড করেন তিনি।

এরপর দিনের বাকী সময়ে বিপদ ছাড়া কাটিয়ে দেন এনক্রুমার বোনার ও নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিকান। বোনার ৮ ও ওয়ারিকান ২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাইজুল-নাইম-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।

স্কোর কার্ড :

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস : ৪০৯/১০, ১৪২.২ ওভার (সিলভা ৯২, বোনার ৯০, জায়েদ ৪/৯৮)
বাংলাদেশ ইনিংস :(আগের দিন ১০৫/৪, ৩৬ ওভার, মুশফিকুর ২৭*, মিঠুন ৬*)
তামিম ইকবাল ক মোসলে ব জোসেফ ৪৪
সৌম্য সরকার ক মায়ার্স ব গাব্রিয়েল ০
নাজমুল হোসেন শান্ত ক বোনার ব গাব্রিয়েল ৪
মোমিনুল হক ক সিলভা ব কর্নওয়াল ২১
মুশফিকুর রহিম ক মায়ার্স ব কর্নওয়াল ৫৪
মোহাম্মদ মিঠুন ক ব্র্যাথওয়েট ব কর্নওয়াল ১৫
লিটন দাস ক ব্লাকউড ব কর্নওয়াল ৭১
মেহেদি হাসান মিরাজ ক ব্র্যাথওয়েট ব গাব্রিয়েল ৫৭
নাইম হাসান ক ব্লাকউড ব কর্নওয়াল ০
তাইজুল ইসলাম অপরাজিত ১৩
আবু জায়েদ ক বোনার ব জোসেফ ১
অতিরিক্ত (বা-৫, নো-১০, ও-১) ১৬
মোট (অলআউট, ৯৬.৫ ওভার) ২৯৬
উইকেট পতন : ১/১ (সৌম্য), ২/১১ (শান্ত), ৩/৬৯ (মোমিনুল), ৪/৭১ (তামিম), ৫/১৪২ (মিঠুন), ৬/১৫৫ (মুশফিক), ৭/২৮১ (লিটন), ৮/২৮১ (নাইম), ৯/২৮৩ (মিরাজ), ১০/২৯৬ (জায়েদ)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
শ্যানন গাব্রিয়েল : ২১-৩-৭০-৩ (নো-৭),
রাকিম কর্নওয়াল : ৩২-৮-৭৪-৫,
আলজারি জোসেফ : ১৭.৫-৩-৬০-২,
কাইল মায়ার্স : ৮-২-১৫-০,
জোমেল ওয়ারিকান : ১৩-২-৪৮-০ (নো-৩),
এনক্রুমার বোনার : ৩-০-১৭-০,
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট : ২-০-৭-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ক লিটন ব নাইম ৬
জন ক্যাম্পবেল বোল্ড ব তাইজুল ১৮
শায়নে মোসলে ক মিঠুন ব মিরাজ ৭
এনক্রুমার বোনার অপরাজিত ৮
জোমেল ওয়ারিকান অপরাজিত ২
মোট (৩ উইকেট, ২১ ওভার) ৪১
উইকেট পতন : ১/১১ (ব্র্যাথওয়েট), ২/২০ (ক্যাম্পবেল), ৩/৩৯ (মোসলে)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাইজুল : ৭-২-১৩-১,
নাইম : ১০-৩-১৪-১,
মিরাজ : ৪-০-১৪-১।

খেলাধুলা

আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন আব্দুর রাজ্জাক এবং শাহরিয়ার নাফিস। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্টের তৃতীয় দিনের মধ্যাহ্নভোজন বিরতির সময় আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন আবদুর রাজ্জাক ও শাহরিয়ার নাফিস।

এ সময় তাদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছিলেন রাজ্জাক ও নাফিস। হয়তো খেলতে পারতেন আরও কিছুদিন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে অফিসিয়ালি যুক্ত হওয়ার কারণে এখানেই বিদায় জানাতে হলো তাদের।

আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্ব পেয়েছেন নির্বাচকের। আর শাহরিয়ার নাফিস কাজ করবেন ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগে। তাই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে হলো তাদের।

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে সব ধরনের ক্রিকেটে এক হাজার ১৪৫টি উইকেট শিকার করেছেন রাজ্জাক। এর মধ্যে তার আন্তর্জাতিক উইকেটের সংখ্যা ২৭৯টি। অন্যদিকে, ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শাহরিয়ার নাফিস করেছেন সাড়ে ১৪ হাজার রান।

খেলাধুলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান আলজারি জোসেফের রান ৮২। সেই জোসেফ যখন নিজের আসল কাজেও সফল হলেন, বল হাতে ফেরালেন তামিম ইকবালকে, বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান তখন ৬৯! টপ অর্ডারের করুণ চিত্র ফুটে উঠছে এতেই।

এরপর অবশ্য এ দিন আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তবে স্বস্তির সুযোগ তাতে খুব একটা নেই। ফলো অন এড়ানো যে এখনও বেশ দূরের পথ!

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১০৫। ফলো অন এড়াতে প্রয়োজন আরও ১০৫। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪০৯।

প্রথম চার ব্যাটসম্যানের আত্মহত্যার পর বাংলাদেশের লড়াইয়ের আশা বেঁচে আছে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটিংয়ে।

ব্যাটিংয়ের আগে বোলিংয়েও ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। ৫ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় চারশ। সপ্তম উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন জশুয়া দা সিলভা ও আলজারি জোসেফ। জশুয়া করেন ৯২, জোসেফ ৮২। এর আগে এনক্রুমা বনার ফেরেন ৯০ রানে।

প্রায় দেড়শ ওভার ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রায় চোখের পলকেই। দুটিই নেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।

অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যাকে এই টেস্টে নেওয়া, সেই সৌম্য সরকার প্রথম ওভারেই আউট হন প্রশ্নগুলি আরও উচ্চকিত করে। সোজা বল ওয়ানডের মতো শট খেলতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোনো রান না করেই।

গ্যাব্রিয়েলের পরের ওভারেই বিদায় শান্তর। প্রথম বলে দারুণ এক অফ ড্রাইভে চার মারেন শান্ত। পরের বলটি গ্যাব্রিয়েল করেন আরেকটু ওয়াইড অব দা ক্রিজ, বলও রাখেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। আবার ব্যাট চালিয়ে দেন শান্ত। এবার ক্যাচ গালিতে।

জোড়া ধাক্কার জবাব তামিম ইকবাল দিতে শুরু করেন পাল্টা আক্রমণে। রাকিম কর্নওয়ালকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ান তিনি। জোসেফের পরপর দুই ওভারে মারেন চারটি বাউন্ডারি। পরে টানা দুই বলে বাউন্ডারিতে পাঠান গ্যাব্রিয়েলকেও।

মুমিনুলও একই পথের পথিক হয়ে খেলতে থাকেন শট। কাট, আপার কাট, গ্লাইড, যেন সীমিত ওভারের ম্যাচ!

তবে রোমাঞ্চের পথে হেঁটে দুই ব্যাটসম্যান দলকে নিতে পারেননি নিরাপদ ঠিকানায়। ৫৮ রানের জুটি ভাঙে মুমিনুলের বিদায়ে। কর্নওয়ালের জোরের ওপর করা ও একটু লাফানো বলটি ছেড়েও দিতে পারতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু ব্যাট চালিয়ে আউট হয়ে যান তিনি ২১ রানে। উইকেটে পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন জশুয়া।তামিমের ওয়ানডে ঘরানার ইনিংস শেষ হয় ওয়ানডের মতো শটেই। জোসেফের লেংথ বল ফ্লিক করেন তিনি মিড উইকেটে, এই শটের জন্যই সেখানে রাখা ছিল ফিল্ডার। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৪৪ রানের ইনিংস চটকদার বটে, তবে দলের জন্য খুব কাজে দেয়নি।

ব্যাটিং বিপর্যয়ে তখন বাংলাদেশ ধুঁকছে, উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ানরা উড়ছে।

দিনের বাকি ২০ ওভারের বেশি মুশফিক ও মিঠুন আর কোনো বিপদ হতে দেননি দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে। উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকেন দুজন।

বিশেষ করে, মিঠুন উইকেট আগলে রাখেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়। একাদশে ফেরা ব্যাটসম্যানের নামের পাশে দিন শেষে রান ৬। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বল খেলেছেন ৬১টি! সমান বল খেলে মুশফিক অপরাজিত ২৭ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২২৩/৫) ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (বনার ৯০, জশুয়া ৯২, জোসেফ ৮২, কর্নওয়াল ৪*, ওয়ারিক্যান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮; আবু জায়েদ ২৮-৬-৯৮-৪, মিরাজ ৩৩-৯-৭৫-১, নাঈম ২৪-৩-৭৪-০, তাইজুল ৪৬.২-৮-১০৮-৪, সৌম্য ১১-১-৪৮-১)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম ৪৪, সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, মুশফিক ২৭*, মিঠুন ৬*; গ্যাব্রিয়েল ৮-২-৩১-২, কর্নওয়াল ১১-৪-১৮-১, জোসেফ ৮-১-৩৪-১, মেয়ার্স ৫-১-১২-০, ওয়ারিক্যান ৪-১-১০-০)।

খেলাধুলা

এমন নিস্তরঙ্গ প্রথম দিন শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম দেখেনি। ২২৩ রান টেস্ট শুরুর দিনের এ মাঠের সর্বনিম্ন স্কোর। তাই টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার আক্ষেপেও পুড়ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫ উইকেট তো এখনো অক্ষত আছে। তাই বহুদিন পর দুই দলের ‘সৌহার্দে’র দিন হয়ে রইল গতকাল। হুড়মুড়িয়ে উইকেট পড়া কিংবা ব্যাটসম্যানশিপের দাপট—কোনোটাই অনুপস্থিতি এ মাঠের জন্য বিরল ঘটনাই।

যেমন বিরল সকালের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের নির্ভয়ে ড্রাইভ আর কাট খেলতে দেখা। আভিধানিক বাংলায় আঠালো বলে। তবে ক্রিকেটের পরিভাষায় ইংরেজি ‘স্টিকি’ উপমাটা যথার্থ শোনায় বেশি। উইকেটের যে আচরণ সংশয়ের চাপে নাভিশ্বাস তুলে দেয় ব্যাটসম্যানের। কিন্তু এ যে অচেনা উইকেট! শুরু থেকেই ব্যাটফুটে গিয়ে কাটও খেলেছেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও শন ক্যাম্পবেল। যেন চট্টগ্রাম টেস্টেও অসমাপ্ত দ্বিতীয় ইনিংসের আত্মবিশ্বাস এখানে নিয়ে এসেছেন তাঁরা। তরতরিয়ে রান উঠছে স্কোরবোর্ডে। বোলিং পরিবর্তনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মমিনুল হকের অস্থিরতা দৃশ্যমান। বোলাররাও প্রতি ওভারে রানের বল দিচ্ছেন নিয়ম করে।

সাড়ে তিনের ওপর রান উঠছে তখন, ক্যারিবীয় ডাগ আউটে স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠেন কোচ ফিল সিমন্স। রিজার্ভ আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুলের আশ্বস্ত করার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল অসন্তুষ্ট তিনি। সিমন্সের অসন্তোষের কারণ শন ক্যাম্পবেলের নেওয়া ‘রিভিউ’ বাতিল হওয়ার জন্য। তাইজুল ইসলামের অফস্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল সামান্য টার্ন করে আঘাত হানছে স্টাম্পে—বল ট্র্যাকিং সেটিই দেখিয়েছে। তবে প্যাডের আগে বল ব্যাটে ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি, সেটি পরিষ্কার নয়। এর পরও টিভি আম্পায়ার গাজী সোহেল ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেননি বলেই ক্ষুব্ধ সিমন্স। সংশয়ের রায় ব্যাটসম্যানের পক্ষে যাওয়ার রীতি আছে। তবে রিভিউর ক্ষেত্রে সংশয় ‘আম্পায়ার্স কলে’র পক্ষালম্বন করাই এখনকার আইন। গাজী সোহেল সে আইন মেনে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের সিদ্ধান্ত আর বদলাননি। তাতে রিভিউ জড়িত আলোচনায় আরেকবার যুক্ত হলো টেস্ট অভিষিক্ত বাংলাদেশি আম্পায়ারের নাম। আর ১ উইকেটে ৮৪ রানের প্রথম সেশনের বাকিটা ক্যারিবীয়দের।

তবে মুঠো গলে দিনটা বেরিয়ে পড়ার আগে এমন কিছু দরকারও ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। ৬৬ রানে উদ্বোধনী জুটি এভাবে ভাঙার আগে ক্রমেই যে অক্সিজেনের লেভেল কমছিল বাংলাদেশ দলের! লাঞ্চের পর অবশ্য সৌহার্দের বার্তা হয়ে আসে শেন মোজলের উইকেটটি। মুস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে এ টেস্টে একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে খেলতে নামা আবু জায়েদ রাহীকে ‘স্বপ্নের উইকেট’ উপহার দেন তিনি। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল টেনে এনে ব্যাটসম্যানের বোল্ড হওয়া উইকেট তো স্বপ্নের মতো ব্যাপারই!

প্রথম দিনে বাংলাদেশের নিজের হিস্যা বুঝে নেওয়ার শুরু এর পর থেকে। মোজলে দলীয় ৮৭ রানে বিদায় নেওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই ক্যারিবীয় ইনিংসে ব্রেক পড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। নিজের তৃতীয় ওভারে ব্রাথয়েটকে ড্রাইভ খেলা ফাঁদে ফেলেন সৌম্য সরকার। প্রথম স্পেলে আরো বারদুয়েক প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সংশয়ে ফেলেছিলেন খণ্ডকালীন এ মিডিয়াম পেসার। তবে চট্টগ্রাম টেস্ট-পরবর্তী মূল সূচকে কাইল মেয়ার্সের চেয়ে দামি কোনো উইকেট এ সিরিজে নেই। তাঁকেও ড্রাইভ খেলিয়ে তুলে নেন আবু জায়েদ। ৪ উইকেটে ১১৬ স্কোর তখন ক্যারিবীয়দের। খোলামকুচির মতো রান তোলার ঝুঁকি দুই উইকেট হারানোর পরই কমিয়ে দিয়েছিল সফরকারীরা। চট্টগ্রামের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মেয়ার্সের বিদায়ের পর ব্যাট গুটিয়ে নেয় ক্যারিবীয়রা। তবে কৃতিত্ব বাংলাদেশি বোলারদেরও আছে। সকালের সেশনে ‘বিক্ষিপ্ত’ বোলিং করা বোলারদের সম্ভবত দলীয় পরিকল্পনার কথা মনে পড়েছিল মধ্যাহ্ন বিরতির পর।

এর প্রভাবে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান তুলেছে মাত্র ২৪। আর শেষ তিন ঘণ্টায় যোগ করেছে ১১৫ রান। ২৯ ওভারের প্রথম সেশনে ৮৪ রানের অস্বস্তি তাই ভুলে গিয়েই মাঠে রেখেই হোটেলে ফিরতে পেয়েছে বাংলাদেশ।

তার মানে এই না যে প্রথম দিনের ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে নির্ঘুম রাত কেটেছে ক্যারিবীয়দের। মিরপুরের চিরায়ত ‘ধুন্ধুমার’ ক্রিকেটের ইতিহাস না ঘেঁটে এনক্রুমা বোনার অবিচল থেকেছেন নিজের প্রিয় টেস্ট মেজাজে। ভারতের চেতেশ্বর পূজারার অনুরক্ত তিনি বাংলাদেশি বোলারদের পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু নিজের মহামূল্য উইকেট দেওয়ার ঝুঁকি নেননি। চট্টগ্রামে বেধড়ক মেরে ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন মেয়ার্স। এখন না আবার বোনারের ধৈর্যশীল ব্যাটিং ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’য়ের মতো নীরবে ক্ষয়ক্ষতি করে দিয়ে যায় বাংলাদেশ দলের!

৪২.৭৭ স্ট্রাইকরেটে ৭৪ রান নিয়ে আজ আবার ব্যাটিংয়ে নামছেন বোনার। সঙ্গী সমান সতর্ক জসুয়া সিলভা। ক্যারিবীয় লাইন আপের শেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি। তবু মনে চোরা কাটার খচখচানি উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। দুজনের মেজাজ-মর্জি দেখে মনে হচ্ছে এঁদের স্রেফ ড্রাইভ খেলানো ফাঁদে আটকানো যাবে না। আশার কথা, প্রথম সেশনের পর থেকে যত সময় গড়িয়েছে ততই বাংলাদেশি বোলাররা লাইন আর লেংথে ভুলের মাত্রা কমিয়েছেন। দুটি উইকেট পাওয়ার কারণেই নয়, দিনের শেষ ভাগেও আর্ম বলে শিকার বাড়ানোর সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। এমনি এমনি তো আর তাঁকে সবচেয়ে বেশি ৩০ ওভার বোলিং করাননি মমিনুল।

আজ পুরো বোলিং ইউনিটের কাছেই আরো বেশি প্রত্যাশা মমিনুলের। কারণ প্রথম দিনে মিরপুরের উইকেট যতই শান্ত থাকুক না কেন, এর কোনো ভরসা নেই। কখন যে রহস্যের ঝাঁপি খুলে দেয়। তখন আবার ৩০০-ঊর্ধ্ব রানকেও মনে হতে পারে দূরের পথ। সেই গন্তব্য থেকে কিন্তু খুব দূরেও নেই ক্যারিবীয়রা। স্বভাবতই সেটি হতে দিতে চাইবেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। বোলাদের নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পাওয়া আর স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকারের ভালো দুটি ক্যাচ মমিনুলকে আশাবাদের শক্তিও নিশ্চয় জুগিয়েছে।

খেলাধুলা

চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া সাকিব আল হাসানের বদলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের বাংলাদেশ দলে নেওয়া হয়েছে সৌম্য সরকারকে। স্পিনিং অলরাউন্ডারের জায়গায় ব্যাটসম্যান দলে নেওয়ার কারণ, শঙ্কা আছে সাদমান ইসলামকে পাওয়া নিয়েও।

চট্টগ্রাম টেস্টে ঊরুতে চোট পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন সাকিব। ওই টেস্টের শেষ দিনেই ফিল্ডিংয়ের সময় কুঁচকিতে টান লাগে সাদমানের।

বিসিবির চিকিৎসক মঞ্জুর হোসাইন চৌধুরি জানালেন, বুধবার সিদ্ধান্ত হবে সাদমানকে নিয়ে।

“সাদমানের কুঁচকিতে চোট আছে। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। কালকে অবস্থা পরীক্ষা করে তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বললেন, সাকিবের না থাকা আর সাদমানের চোট মিলিয়েই সৌম্যকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত।

“সাকিব তো নেই, সাদমানেরও একটু ইনজুরি আছে। এটা মাথায় রাখতে হয়েছে আমাদের। জরুরি প্রয়োজন হলে সৌম্য ওপেন করতে পারবে। এছাড়া টিম ম্যানেজমেন্ট যদি এক স্পেশালিস্ট পেসারের সঙ্গে সৌম্যকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে কাজে লাগাতে চায়, সেটিরও সুযোগ থাকছে।”

“চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনই আমরা সৌম্যর কোভিড পরীক্ষা করিয়ে রেখেছিলাম। এরপর থেকে আইসোলেশনে ছিল। তাই বায়ো-বাবলে ঢুকতে সমস্যা হবে না।”

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ফিফটি করেছিলেন সাদমান। তাকে না পেলে বাংলাদেশের জন্য সেটি হবে আরেকটি বড় ধাক্কা।

মিরপুর টেস্ট শুরু বৃহস্পতিবার থেকে। প্রথম টেস্ট হেরে সিরিজে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।