জাতীয়

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রদান করবে।

এলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ সরকার এবং কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে একটি ঋণচুক্ষি স্বাক্ষর হয়েছে। আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঋণচুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হং কিয়েন স্বাক্ষর করেন।

সোমবার ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ‘সেকেন্ড স্ট্রেনেথিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম, সাবপ্রোগ্রাম-১’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো-বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার এবং সুরক্ষার অন্তর্ভূক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, কোরিয়া সরকার ১৯৯৩ সাল থেকে কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে নমনীয় সুদে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে।

জাতীয়

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বোর্ড ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ (১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন) ডলার অনুমোদন করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে।

তৃতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ পাওয়ার মাধ্যমে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তিন কিস্তিতে মোট ২২৭ কোটি ৩৩ লাখ (২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ।

সোমবার (২৪ জুন) ওয়াশিংটনের আইএমএফ বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন করে। এদিন সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে এ অর্থ পাওয়া যাবে।

ঋণের প্রথম কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পায় বাংলাদেশ। এরপর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর। আর আজ সোমবার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুমোদন করলো আইএমএফ এর বোর্ড সভা। দুই দিনের মধ্যেই এ অর্থ ছাড় হবে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ ৬ বছর ধরে ঝুলে আছে। দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে দুবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি, দুবার আইন মন্ত্রণালয় এবং একবার সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মত নেওয়া হয়। এছাড়া বিধিমালাটির ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হয়। এভাবে দিনের পর দিন শুধু ঘষামাজার মধ্য দিয়ে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত । শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ। তবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খসড়া বিধিমালা আরেকবার দেখতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন কী জারি করা হচ্ছে। সেই কারণে একটু সময় লাগছে। শিগগিরই জারি হবে।

সরকারি চাকরি আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এর আগে অধ্যাদেশ ও রাষ্ট্রপতির আদেশ সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিধিমালা জারি করে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়েছে। সেহেতু এই আইন কার্যকর করার পর প্রশাসন পরিচালনায় আগের প্রায় সব বিধিমালা, নীতিমালা হালনাগাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই আইনের অধীনে বেশ কয়েকটি বিধিমালা ইতোমধ্যে জারিও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে।

সময়ক্ষেপণের বিষয়টিকে অবহেলা ও গাফিলতি হিসাবে দেখছেন সাবেক সচিবরা। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এবং কর্মকর্তারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন। তারা বলেন, একটি বিধিমালা তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর লাগার পরও সংশ্লিষ্ট কারও কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। আদৌ এই বিধিমালা প্রণয়ন হবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

আবার সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির জন্য গত বছর ১৭ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতিতে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্পদের আয়-ব্যয় নেওয়ার বিধান করার কথা। সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং বর্তমান মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যে তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব মো. শামীম সোহেল বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আমি দেখতাম না। বিধিমালা তৈরির বিষয়টি দেখতেন যুগ্মসচিব সফিউল আরিফ। তবে সম্প্রতি তাকে বদলি করে দেওয়ায় এখন আমাকে দেখতে হচ্ছে। কিন্তু আচরণ বিধিমালা কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করতে গিয়ে ৬ বছর সময় ব্যয় একটি অবহেলা। এটা দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। তাছাড়া ১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালার বিধান বলে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বা তা জমা দেওয়ার বিধান তো আছেই। তিনি আরও বলেন, সম্পদ হ্রাস বৃদ্ধির বিধান বিধিমালায় থাকা জরুরি। বরং প্রতিবছর সরকারকে জানানো উচিত কার কী পরিমাণ সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে।

জাতীয়

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পাপিয়াকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জামিনের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কারামুক্ত করা হয় তাকে।

এর আগে, কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন পাপিয়া। সেখানে এক নারী বন্দির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ৩ জুলাই তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন এবং অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার এবং ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়।

এই ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মাদক ও অস্ত্র মামলা, গুলশান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা, বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে (জাল টাকার) মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন।

জাতীয়

সেনাবাহিনীর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নিকট হতে আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

পরবর্তীতে, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘জেনারেল র‌্যাঙ্ক ব্যাজ’ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

পরে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য অভিনন্দন জানান এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুন অপরাহ্ন থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ‘জেনারেল’ পদে পদোন্নতি প্রদানপূবক পরবর্তী তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়।

নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে ১৩তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

জাতীয়
পুলিশে বড় ধরনের রদবদল করেছে সরকার। তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারের ৪০ জন কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে ১৫ জন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও একজন পুলিশ পরিদর্শককে (সশস্ত্র) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি সুপার নিউমারারি) কৃষ্ণ পদ রায়কে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। বদলি হওয়া অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ৯ জন উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ১৫ জন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১৫ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ডিআইজি ইলিয়াছ শরিফকে বরিশাল রেঞ্জে, মেট্রো রেলের ডিআইজি সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুলিশ কমিশনার, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার খুলনার কমান্ড্যান্ট নিশারুল আরিফকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুহা. আশরাফুজ্জামানকে পুলিশ সদর দপ্তরে, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহীল বাকীকে পুলিশ সদর দপ্তরে, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মাহবুবুর রহমানকে মেট্রো রেলের ডিআইজি, পুলিশ সদর দপ্তরের এস এম মোস্তাক আহমেদ খানকে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হাসানকে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি ও এপিবিএনের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

১৫ অতিরিক্ত ডিআইজির দপ্তর বদল : আরেকটি প্রজ্ঞাপনে সিএমপির উপকমিশনার আব্দুল ওয়ারিশকে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার, টাঙ্গাইল জেলা এসপি সরকার মোহাম্মদ কায়সারকে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, কুষ্টিয়া জেলার এসপি এ এইচ এম আব্দুর রকিবকে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, ডিএমপির উপকমিশনার এ বি এম মাসুদ হোসেনকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, ডিএমপির উপকমিশনার শহীদুল্লাহকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, নৌ পুলিশ খুলনা অঞ্চলের এসপি মোহাম্মদ শরিফুর রহমানকে অতিরিক্ত ডিআইজি ময়মনসিংহ রেঞ্জ, সিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে, বগুড়ার এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্তীকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, যশোরের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপকমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, পাবনা জেলা এসপি আকবর আলী মুন্সীকে গাজীপুর মহানগরীর উপপুলিশ কমিশনার, রংপুর জেলা এসপি ফেরদৌস আলী চৌধুরীকে সিএমপির উপকমিশনার ও সুনামগঞ্জ জেলা এসপি মোহাম্মদ এহসান শাহকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পদে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। তাঁরা সবাই অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত।

১৫ এসপিকে বদলি : ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাহজাহানকে রংপুর জেলার এসপি, ডিএমপির ডিসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে কুষ্টিয়া জেলার এসপি, কুমিল্লার এসপি আব্দুল মান্নানকে সিলেট জেলার এসপি পদে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটের এসপি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ডিএমপির উপকমিশনার, পটুয়াখালী জেলার এসপি সাইদুল ইসলামকে কুমিল্লা জেলার এসপি, বরগুনার এসপি আব্দুস সালামকে পটুয়াখালী জেলার এসপি, পিবিআইয়ের এসপি রাফিউল আলমকে বরগুনা জেলার এসপি, ফেনীর এসপি জাকির হাসানকে বগুড়া জেলার এসপি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামকে ফেনী জেলার এসপি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আ. আহাদকে পাবনা জেলার এসপি এবং নীলফামারীর এসপি গোলাম সবুরকে টাঙ্গাইল জেলার এসপি করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের এসপি মকবুল হোসেনকে নীলফামারী জেলার এসপি, মাদারীপুরের এসপি মাসুদ আলমকে যশোর জেলার এসপি, পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি মোহাম্মদ শফিউর রহমানকে মাদারীপুর জেলার এসপি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের (প্রেষণে এনটিএমসি ঢাকায় কর্মরত) এসপি এম এন মোর্শেদকে সুনামগঞ্জ জেলার এসপি পদে পদায়ন করা হয়েছে।

১৬ এএসপি : ১৬ পুলিশ পরিদর্শককে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর পুলিশ অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানপত্র পাঠাবেন।

জাতীয়

বরগুনার আমতলীতে ব্রিজ ভেঙে কনেযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস খালে পড়ে ৯ জন নিহতের ঘটনায় ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

দুর্ঘটনার পরপর ব্রিজ নির্মাণকারী ঠিকাদারের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৮-০৯ অর্ধ বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর হলদিয়া হাট এলাকায় আয়রণ ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র আহবান করে। ওই ব্রিজের নির্মাণ কাজ পায় তৎকালিন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।

অভিযোগ রয়েছে, ব্রিজ নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা ব্রিজ নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ব্রিজের মাঝের ভিম ভেঙে যায়। গত ১০ বছর ধরে ওই ভাঙা ব্রিজ দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অর্ধ লাখ মানুষ চলাচল করে আসছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ব্রিজ নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা কাজ করেছে। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই ব্রিজের মাখঝানের ভিম ভেঙে গেছে। ওই ভাঙা ব্রিজ দিয়ে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ চলাচল করতো।

তিনি আরও বলেন, এই ভাঙা ব্রিজ মেরামতের জন্য আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি। তিনি আমলে নেননি। যার ফলে শনিবার ৯ জনের প্রাণ গেল। ঠিকাদার দায়সারা ব্রিজ নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী ব্রিজ সংস্কার না করায় তাদের শাস্তি দাবি করছি।

অভিযুক্ত ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, আমি যথাযথভাবেই ব্রিজ নির্মাণ করেছি। কাজে কোনো অনিয়ম করিনি।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমতলীতে আমার যোগদানের আগে এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। উদ্ধার কাজের তদারকি করছি।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা-১ আসনের সংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।

জাতীয়

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে স্রোতের বেগে ঢাকায় ফিরছে কর্মমুখী ও ঢাকায় বসবাসরত মানুষ।

শনিবার গাবতলী, সায়েদবাদ বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী মোর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরের একেকটা বাস এসে থামছে আর শতশত মানুষ বাস থেকে নামছেন। যাত্রীদের কারও কোলে শিশু, কারও হাতে ব্যাগ, কারও মাথায় বস্তা। এসব ব্যাগ বা বস্তা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

সিলেট, কুমিল্লা, বরিশালের ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া সড়কের একাধিক যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার থেকে তারা কর্মস্থলে যোগদান করবেন। সেজন্য বাধ্য হয়েই শনিবার তাদের ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। কিন্তু পথে পথে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে যেতেই ৫০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা। ২০০ টাকার সিএনজি ভাড়া ৫০০ টাকা দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যেতে হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাসের সিট পাওয়া যায়নি। সিট পেলেও ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা। ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে।

বাস থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, শনিরআখড়া নামার পর বাসায় যেতে রিকশা, সিএনজিতেও নির্ধারিত ভাড়ার ২ থেকে ৩ গুন বৃদ্ধিতে ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। সবমিলে বাড়তি ভাড়া দিয়ে এবং ভোগান্তির মধ্যেই গ্রাম থেকে ফিরতে হয়েছে রাজধানীতে।

তারা আরও বলেন, বাড়তি ভাড়ায় সড়কে নৈরাজ্য চললেও দেখার যেন কেউ নেই। পরিবহণে যে যার মতো করে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এবার লঞ্চে বেশ স্বস্তিতেই রাজধানীতে ফিরছেন। শনিবার সদরঘাটে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীর কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা ফিরেছেন। স্বাভাবিক সময়ের মতোই লঞ্চগুলো যাত্রী নিয়ে এসেছে এবং ছেড়ে গেছে।

তবে ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। লঞ্চের ক্যান্টিনে নিম্নমানের খাবার ও অতিরিক্ত দাম নেয়াসহ ঘাটে নেমে গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক ট্রাফিক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতোই নির্ধারিত গন্তব্যের লঞ্চ গুলো আসা-যাওয়া করেছে। যাত্রীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করেছে। তবে ক্যান্টিনের খাবারের দামের বিষয়ে জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে রাজধানীর গাবতলীতে ৩ দিন ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ চোখে না পড়লেও শনিবার সকাল থেকেই যাত্রী চাপ ছিল লক্ষণীয়।

সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে যাত্রী বোঝাই বিভিন্ন গণপরিবহণ গাবতলীতে ঢুকছে। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় আমিন বাজার ব্রিজ থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়েছে অনেক পরিবহণ।

রাজশাহীর সদর থেকে গাবতলীতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জীবন বলেন, ‘আগামীকাল অফিস খোলা। এ জন্য ভোরে রওয়ানা দিয়েছি। রাস্তায় যানজট তেমন একটা নেই। ঠিক সময়ে গাবতলীতে পৌঁছেছি। তবে এখানে এসে যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে।’

গাবতলীর ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আনছার বলেন, ২-৩ দিন লোকজন না এলেও আজ সকাল থেকেই ঢাকামুখী যাত্রীচাপ বেড়েছে গাবতলীতে। আগামী ২-৩ দিন আরও লোক ঢাকায় ঢুকবে।
ফেরি ও লঞ্চঘাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড়: রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তের ফেরি ও লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছেন, শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে যাত্রীসহ দূরপাল্লার পরিবহণ এবং প্রাইভেটকারের চাপ বেড়েছে। তবে এই নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের বহরে থাকা ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার চলছে। তবে ঘাট এলাকায় অল্প সংখ্যক যানবাহনের সিরিয়াল থাকলেও যাত্রীরা স্বস্তিতে নদী পারাপার হচ্ছে।

জাতীয়

ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন খোদ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, এতে করে বৈধ করদাতাদের মনে অনীহা তৈরি হবে।

শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের একাধিক সংসদ সদস্য এ কথা বলেন। অবশ্য কেউ কেউ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পক্ষেও বক্তব্য দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. গোপাল দত্ত বলেন, বাজেটে সাদা ও কালোটাকা নিয়ে কথা হয়েছে। একজন করদাতা হিসাবে আমার ৩০ লাখ টাকা থাকলে ৩০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু যিনি গত বছর টাকা দেখাননি, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করে নিচ্ছেন। এতে করে সঠিক করদাতারা কর দিতে অনেচ্ছা পোষণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় কালো ও সাদা টাকা নিয়ে কথা বলি। কিন্তু ইনফরমাল গ্রে-মানি (কর ফাঁকি সম্পর্কিত) অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি, যার ট্যাক্স দেওয়া হয় না, যাকে কোনো অবস্থানে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না- সেটা নিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কিছু বলেননি। একে সংকুচিত না করলে অর্থপাচার বন্ধ করা যাবে না।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ঢালাওভাবে দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার বন্ধ করতে পারলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগের আর প্রয়োজন পড়বে না।

সমালোচনার জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, কালোটাকা আমাদের মার্কেটে আছে। এ টাকা কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেই উপায় কেউ বাতলায় না, সমালোচনা করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমালোচনা করে বলছেন- এতে নাকি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু উনি বলেন না, ২০০৭ (২০০৬ হবে) সালে ওনার নেত্রী খালেদা জিয়া ৫ শতাংশ কর দিয়ে ১ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৭১০ টাকা সাদা করেছেন।
জাতীয় পার্টির নুরুন নাহার বেগম বলেন, বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকল। এ সুযোগ নিয়ে অনেক অপরাধী দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি দেশে কালোটাকা সাদা করতে পারবে।

জাতীয়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের চাকরি ও পারিবারিক জীবন অনেকটা সিনেমার কাহিনির মতো। নির্দিষ্ট বেতনের চাকরি করলেও আয় করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। নিজের নামে তেমন সম্পদ না করলেও দুই স্ত্রী, ৫ সন্তান, দুই ভাই, শ্যালক-শ্যালিকাদের দিয়েছেন দুহাত ভরে। বড় স্ত্রী লায়লা কানিজের জন্য নরসিংদীতে করেছেন নজরকাড়া বাড়ি। ছোট স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে দিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স। দুই পরিবারের ব্যবহারের জন্য মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, প্রাডো, মিতসুবিশিসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের নয়টি গাড়ি কিনেছেন।

এরপরও করোনাক্রান্ত হয়ে মতিউর যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন অভাবী চেহারায় স্বামীর শয্যা পাশে হাজির হন ছোট স্ত্রী। স্বামীর অবর্তমানে তিন সন্তান নিয়ে শিভলীর কি হবে এই আকুতিতে একাধিক ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) চেকে সই করে দেন মতিউর। এসব চেক ব্যবহার করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা নগদায়ন করে নেন শাম্মী।

৫০ কোটি টাকার একটি চেক নগদায়ন করে দেওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী শাম্মীর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর জানার পর প্রথম পক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ চরম ক্ষুব্ধ হন। পারিবারিক একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা গেছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মতিউর ও তার দুই স্ত্রীর মোবাইলে কল করলে তারা কেউই রিসিভ করেননি। মতিউর ও তার প্রথম স্ত্রীর মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা জবাব দেননি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরি জীবনে বিপুল টাকা আয় করতে ঘুসের পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা তৈরি করতে থাকেন।

এরপর শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে বিপুল সম্পদের মালিক হন। এছাড়া শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িয়েও তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এই টাকায় তিনি স্থাবর-অস্থাবর বিপুল সম্পদ গড়েছেন।

টাকার জোরে মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক থেকে বানিয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তিনি জায়গা-জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। সেখানে লায়লা কানিজের জন্য বিশাল বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। লায়লা কানিজ একেক সময় একেক ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। কম যান না দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারও।

জানা গেছে, লায়লা কানিজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বামীর কাছ থেকে সম্পদ বাগিয়ে নিয়েছেন শাম্মী। নিজের বাবার বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে নিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের শ্বশুরবাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুরে।

এলাকাবাসী মতিউরের শ্বশুরবাড়িকে মিয়া বাড়ি হিসাবেই চেনেন। বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। জসিম জানান, দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন।

সবশেষ দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী শাম্মী আখতার, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়ি বাড়িতে এসেছিলেন। দু-একদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার ওপর থাকেন। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘গত বছর কুরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কুরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।’

স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক নকিবের নামে ফেনী ও সোনাগাজীতেও অনেক জমিজমা রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের চাচাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদের কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। এছাড়া চাঁদপুরে ১০০ বিঘার একটি খামারও রয়েছে।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান আমার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তার সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই আছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা বুবলী ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। বুবলী এখন চট্টগ্রামে থাকেন। তার স্বামী থাকেন আমেরিকা। শ্যালক নকিব সম্প্রতি চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেছেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।

তিনি বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।

শাম্মী আখতারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, নকিব ঢাকা, চীন ও দুবাইতে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। আত্মীয় সোহাগের কাছেও বিপুল অঙ্কের টাকা ছিল মতিউরের। প্রায় এক বছর আগে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুবাইতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে বিশাল একটি মার্কেট কেনা হয়েছে। করোনার শেষের দিকে ওই মার্কেট চালু করা হয়।