জাতীয়

দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে সংসদ সদস্য পদ ছাড়তে হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী তার আর সংসদ সদস্য পদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিশেষ জজ আদালতের দেওয়া ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (৯ মার্চ) এ আদেশ দেয়। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

তবে দুদক আইনের ২৬ ধারায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দেওয়া সাজা বাতিল করে দিয়েছে আদালত। দুদক আইনের ২৬ ধারায় তাকে ৩ বছর এবং ২৭ ধারায় তাকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে আজকে রায় ঘোষণা করা হয়।

দুর্নীতির এই মামলায় হাজী সেলিম এখন জামিনে আছেন।

জাতীয়

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। গত এক দিনে ৯১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ৫৮ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ৪৮৯ জনে।

এর আগে সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল, সেদিন ১ হাজার ৭১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নয়শর নিচেই ছিল।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হারও আবার ৫ শতাংশের উপরে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত একদিনে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।

দৈনিক শনাক্তের হার সর্বশেষ ৫ এর বেশি ছিল গত ১৮ জানুয়ারি। এরপর কমতে কমতে তা ৩ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। তবে মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বাড়তে থাকে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ৪৮৯ জনে।

আর গত এক দিনে আরও ৯১২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৭ জন হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ২২৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৫ হাজার ৩৪৯ জন হয়েছে।

বাংলাদেশে গতবছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর এ বছর ৭ মার্চ শনাক্ত রোগীর সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ২৩ জানুয়ারি তা আট হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১১ কোটি ৭১ লাখ পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬ লাখ।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৯তম অবস্থানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৮টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৯টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৭২টি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে অর্থাৎ সর্বমোট ২১৯টি ল্যাবে ১৭ হাজার ৭৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ লাখ ৭ হাজার ২৫৩টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৫টি।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের সবাই পুরুষ এবং সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন।

তাদের ৫ জন করে মোট ১০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি ও ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

মৃতদের মধ্যে ১০ জন ঢাকা বিভাগের এবং ১ জন করে মোট ৩ জন চট্টগ্রাম, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৪৮৯ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৪২০ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৬৯ জন নারী।

তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৭২৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ২ হাজার ১০৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯৬২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪২৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৪ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৭ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।

এর মধ্যে ৪ হাজার ৭৫১ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৫৬৮ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৮১ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৬৩ জন খুলনা বিভাগের, ২৫৫ জন বরিশাল বিভাগের, ৩১১ জন সিলেট বিভাগের, ৩৬৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৯৬ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

জাতীয়

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট বাজারে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আলাউদ্দিন (৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ওসিসহ আহত হয়েছেন ৬ পুলিশ সদস্য।

মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৫মিনিটের সময় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলাউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে নিজের কর্মী বলে দাবি করেছেন মিজানুর রহমান বাদল।

নিহত আলা উদ্দিন উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল আজিম।

গুলিবিদ্ধ আহতরা হচ্ছেন – মো. রাজিব, মাঈন উদ্দিন, শাহ আলম, আলা উদ্দিন, জাকির হোসেন হৃদয়, দেলোয়ার হোসেন, সোহেল, শাহাদাত হোসেন, আরাফাত হোসেন, বেলাল হোসেন সেলিম।

অপর আহতরা হচ্ছেন – সাহাব উদ্দিন, জনি, সেলিম, ওয়াহিদ কামাল, রিপন, রফিক চৌধুরী, পিনন চৌধুরী , দিপু, সুমন, আরিয়ান শিপন, শরীফ উল্যাহ টিপু, মানিক, শরীফ, আল মাহাদি, রাজিব হোসেন রাজু, নবায়ণ হোসেন, আদনান শাহ, সালা উদ্দিনসহ শতাধিক।

আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন – ওসি মীর জাহিদুল হক রনি, এসআই জাকির হোসেন, নিজাম উদ্দিন, কনেস্টবল খোরশেদ আলম, আলা উদ্দিন ও আবুল কালাম।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজনের হামলা ও মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রূপালী চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আ.লীগের একাংশ (মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ)।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে থানার পশ্চিম পাশের সড়ক (মাকসুদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) দিয়ে সভায় হামলার চেষ্টা চালায় কাদের মির্জার সমর্থকরা। এ সময় উভয়পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হলে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে এ সংঘর্ষ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৮টার দিকে মেয়র মির্জার সমর্থকরা বসুরহাট বাজারে একটি মিছিল বের করলে বাদলের সমর্থকদের সাথে পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

সংঘর্ষকারীরা বসুরহাট পৌরসভা প্রাঙ্গণে অবস্থান নিলে সেখানে কাদের মির্জা ও বাদল গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়।

এসময় সংঘর্ষকারীরা মুহুর্মুহু ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটায়। ভাঙচুর করা হয়েছে দোকানপাট ও অটোরিকশা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের লোহারপুল এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে কাদের মির্জা সমর্থিত আ’লীগ কর্মীরা।

ওসি মীর জাহেদুল হক রনি জানান, প্রথমবার হামলার পর পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশসহ অনেকে আহত হয়। পরে রাতের দিকে পৌর ভবন এলাকায় আবারো সংঘর্ষে উভয় পক্ষ গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। পুলিশ র‌্যাব তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর ছোট ভাই বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষের মুখে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক মুজাক্কিরসহ ৭-৮জন।

পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত ১০টা ৪৫মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মুজাক্কির।

জাতীয়

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ থেকে ছয় লাখ নারী অসম্মানিত, লাঞ্ছিত, ধর্ষিত, বিধবা বা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের লাঞ্ছনাকারী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের ১৯৭৫ সালের পর এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়েছে, তাদের গাড়িতে পতাকা ওড়ানো হয়েছে। তারা ক্ষমতায় বসে দেশকে জঙ্গিবাদে পরিণত করেছে। নারীর অবমাননাকারীরা আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে এলে দেশে আবারও জঙ্গিবাদ ফিরে আসবে।

সোমবার ( ৮ মার্চ ) জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, প্রেস ক্লাবের প্রবীণ নারী সদস্য মাহমুদা চৌধুরী এবং নারী নেত্রী কাজী সুফিয়া আখতার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রীতা ভৌমিক।

দীপু মনি বলেন, ধর্ষক বিচারের রায়ে শাস্তি পায়। আর যে নারী ধর্ষণের শিকার হয় তার জন্য প্রতিদিনই মৃত্যুদণ্ড। সারাটা জীবন তাকে অস্পৃশ্য ভাবা হয়। এটা পুরোপুরি মানসিকতার ব্যাপার। আমরা ভাষা দিয়ে কীভাবে একজন নারীকে দাবিয়ে রাখি। যখন কেউ ধর্ষণের শিকার হয় আমরা বলি সম্ভ্রমহানি হয়েছে। আমাকে কুকুর কামড় দিলে তো সম্ভ্রমহানি হয় না। একটা পুরুষ ধর্ষণ করলে একটা নারীর কীভাবে সম্ভ্রমহানি হয়? সম্ভ্রমহানি তো সেই পুরুষের হওয়ার কথা। আমরা কেন ধর্ষককে সম্ভ্রমহারা পুরুষ বলি না?’

সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বীরাঙ্গনাদের অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে। এজন্য সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তিনি পাঠ্যসূচিতে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি নির্মাণের প্রতি নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয়

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। দেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিলে আপত্তি করবে না সরকার। তবে দণ্ডাদেশ মওকুফের আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই।

এর আগে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। সোমবার (৮ মার্চ) আইন মন্ত্রণালয়ের আনুমোদনের পর এ-সংক্রান্ত ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়। এদিন দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগের শর্তে আরও ৬ মাস বাড়ানোর সুপারিশ করে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আগামী ২৪ মার্চ বেগম জিয়ার দ্বিতীয় দফায় ৬ মাসের মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গত ২ মার্চ দুপুরে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন তার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার। আবেদনের পর স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে সেটি পাঠিয়ে দেন সচিবের দপ্তরে। আবেদনপত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়েছে তার পরিবার।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।

গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

মূলত খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদন আমলে নিয়ে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়। প্রথমে ছয় মাসের জামিন দিলেও পরে তা আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়। সেই থেকে ১১ মাসের বেশি সময় ধরে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ৮৪৫ জন শনাক্তসহ দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫ জন।

সোমবার দুপুরে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪ হাজার ১২৭ জন হয়েছে।

এর আগের দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৬০৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। সেই তুলনায় আজ করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েছে।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশ কয়েক ধাপ বাড়ানোর পর আগামী ৩০ মার্চ খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ।

জাতীয়

সরকারের ১৫টি চিনিকলে পদে পদে অনিয়ম। যেন ‘যেদিকে দৃষ্টি, সেদিকেই দুর্নীতি।’ লুটপাট করা হয়েছে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ও ওভারহেডের (উপরি ব্যয়) অর্থ। ভুয়া শ্রমিকের নামে তুলে নেওয়া হয়েছে চারগুণের বেশি মজুরি। ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) থেকে। বিপরীতে পরিশোধ করা হয়নি কোনো সুদের টাকা।

পাশাপাশি প্রকৃত লোকসানের চেয়ে অতিরিক্ত দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করা হচ্ছে না বছরের পর বছর। শুধু তাই নয়, ডিলারদের জামানতে গড়ে তোলা তহবিলে নেই একটি টাকাও। এই তহবিলের অর্থ ফেরত দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে মিলগুলো। সরকারি চিনিকলগুলোর ওপর পরিচালিত অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অনিয়ম-দুর্নীতির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কোনো কোনো মিলের সম্পদের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ দেখানো হয়েছে বেশি। যা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর বিক্রি করা চিনির মূল্যের মধ্যে কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় কাঁচামালের মূল্য।

এদিকে চিনির শিল্পের করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হওয়ার পর পরবর্তী মৌসুম থেকে কোন কোন মিল চালানো হবে বা স্থগিত রাখা হবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে সেখানে ৯টি মিল সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তির বেতন-ভাতা থেকে টাকা কেটে সমন্বয় করা হয়। যেভাবে হোক সে টাকা আদায় করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ৬টি মিলের আখ মাড়াই স্থগিত আছে। এই মুহূর্তে সরকার কয়টি চিনির মিল বন্ধ করবে বা করবে না এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সেটি নিয়ে সময় পার হচ্ছে আমাদের। সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, চিনিশিল্পের দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়। সিএজি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, একাধিক মিলের শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ধরা পড়েছে এরই মধ্যে। ডিলারদের কাছ থেকে যে জামানত বাবদ অর্থ নেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা নিয়মবিহর্ভূতভাবে ব্যয় করা হয়েছে মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে।

ফলে অনেক ডিলারের টাকা ফেরত পেতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি মিল পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, চার শিপট কাজ চলছে সেখানে। প্রতি শিফটে শ্রমিক সংখ্যা ৬ জন করে মোট ২৪ জন কাজ করছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে কাজ করছেন একজন।

বাকিদের অবস্থান জানতে চাইলে উপস্থিত শ্রমিক জানান, অন্যরা দুপুরের খাবারের জন্য বাইরে গেছেন। অডিট টিম সন্ধ্যায় গিয়ে ওই একজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেন। এরপর প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন, সেখানে ২৪ জন শ্রমিকদের স্থলে কাজ করছে চারজন। বাকি ২০ জনকে মিথ্যা হাজিরা দেখিয়ে তাদের পারিশ্রমিক হাতিয়ে নিচ্ছে মিলের একটি চক্র।

অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনাজপুর কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি) লি. সুগার মিলের কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ডের প্রায় ১৪ কোটি টাকা এবং শ্রমিকদের ‘ওভার হেড’র প্রায় ৬৪ লাখ টাকা খর্বিত (তছরুপ) হয়েছে।

এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শ্রমিকদের উপরি ব্যয় খাতে ৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। যার হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ ভুল-এমন মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া মিলের ব্যালেন্সশিটে ‘হাতে নগদ’ বাবদ পৌনে এক কোটি টাকা উল্লেখ থাকলেও সেটি এখনো পর্যন্ত সমন্বয় করা হয়নি।

জয়পুরহাট সুগার মিলেও আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এই মিলে তিন শিপটে উৎপাদন চলছে। প্রতি শিপটে ৮ ঘণ্টা করে কাজ হচ্ছে। সেখানে মোট ৪৯ জন শ্রমিক কাজ করছে। সময় ও জনবল দিয়ে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৫২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হওয়ার কথা।

কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন। প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন কম হচ্ছে। মূলত ৪৯ জন শ্রমিক কাজ দেখানো হলেও বাস্তবে কাজ করছে আরও কম। ভুয়া হাজিরা তুলে ভাগবোটায়ারা করে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কুষ্টিয়া সুগার মিলে দেখা গেছে, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ফান্ডে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সুদের এক টাকাও সেখানে জমা হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ ৪২৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ব্যালেন্সশিটে নিট লোকসান দেখানো হয় ৯২ কোটি টাকা। অথচ প্রকৃত লোকসান হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। এই মিলে বর্তমান চলতি দায়-দেনা ৫০৭ কোটি টাকা এবং আগের দায়-দেনা ৪০ কোটি টাকা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে মেশিনারিজ প্লান্টের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয় এবং নতুন প্ল্যানের জন্য যুক্ত করা হয় ২ লাখ টাকা। কিন্তু এই ব্যয় করার মতো কোনো তথ্য কর্তৃপক্ষ অডিট বিভাগকে দিতে পারেনি। এছাড়া এই ঋণের ৫০ লাখ টাকা দীর্ঘদিন ধরে সমন্বয় করা হয়নি।

একইভাবে নাটোর সুগার মিলে নিট সম্পত্তির তুলনায় লোকসানের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়। মিলের চলতি সম্পদের পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা হলেও মোট দায়-দেনা হচ্ছে ৫৫০ কোটি টাকা। যা সন্দেহজনক হিসাবে শনাক্ত হয়। এছাড়া মিলের অভ্যন্তরীণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায়নি। এডিপির ৩৮ লাখ টাকার একটি ঋণ ১৯৮৪ সাল থেকে বহন করা হলেও তা সমন্বয় করা হয়নি। এছাড়া কৃষকের ঋণ বাবদ ২১ লাখ টাকাসহ ৫২ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে সেখানে।

সেতাবগঞ্জ সুগার মিলে চিনি বিক্রি বাবদ ৭ কোটি টাকা আয় হলেও সেখানে কাঁচামালের দাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা সন্দেহজনক হিসেবে অবহিত করা হয় প্রতিবেদনে। কারণ কাঁচামাল ও বিক্রয়- এ দুটি হিসাব পৃথক। এছাড়া চলতি মূলধন, নগদ অর্থ প্রবাহ সবই নেতিবাচক বলে মিলটি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

এদিকে ঠাকুরগাঁও মিলের সম্পদ ৫৫৯ কোটি টাকা হলেও লোকসানের পরিমাণ ৫৯১ কোটি টাকা। এই লোকসানের পরিমাণ ঠিক নয় মন্তব্য করেছে অডিট বিভাগ।

এছাড়া রংপুর সুগার মিলের ব্যালেন্সশিটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান ৩৫ কোটি টাকা, সম্পত্তির পরিমাণ ২৫৯ কোটি টাকা দেখানো হয়। আর ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যথাক্রমে লোকসান ৫২ কোটি টাকা এবং ৬১ টাকা। এই দুবছরে সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয় ৩১৮ কোটি টাকা ও ৩৭৪ কোটি টাকা। এ হিসাব প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে ‘সন্দেহজনক’ বলে মন্তব্য করা হয়। এছাড়া ২৩১ কোটি টাকার একটি ঋণের পাশাপাশি আরও ১৪ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হলেও হিসাবে দেখানো হয়নি।

আর ফরিদপুর সুগার মিলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেসব ব্যয়ের প্রস্তাব দেখানো হয়েছে তা সঠিক নয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। এছাড়া এই মিলে লোকসানের পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান নিরীক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, লোকবলের সংকটের কারণে চিনির মিলগুলোতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনেক দিন ধরেই বন্ধ আছে। বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর নিরীক্ষায় আপত্তিগুলোর জবাব দেওয়া হচ্ছে। অডিট রিপোর্টের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢালাও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি মিলের কর্তৃপক্ষ রয়েছে। ব্যবস্থা তারা আগে গ্রহণ করবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ : চিনিকলগুলোর ওপর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সেখানে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর শুরুতে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে হচ্ছে ৬৭ হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন।

কিছুসংখ্যক চিনির কল চালু রেখে ডিস্টি লারি ও অন্যান্য বাই প্রডাক্ট উৎপাদনের মাধ্যমে লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে অদক্ষ ও সম্ভাবনাহীন মিলগুলোর উৎপাদন আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে।

জাতীয়

১৯৭১-এর ৭ই মার্চের দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ বাঙালি জাতির মহান মুক্তিসনদ! ঐতিহাসিক এই ভাষণ জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক দিগন্তে বাঙালির গৌরবময় পতাকা মর্যাদার সঙ্গে উড্ডীন রেখেছে। ২০১৭-এর ৩০ অক্টোবর জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ’৭১-এর ৭ই মার্চে প্রদত্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণকে (ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, যা সমগ্র জাতির জন্য গৌরবের ও আনন্দের।

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চেরও সুবর্ণজয়ন্তী। ৫০ বছর আগের এই দিনটির জন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনভর সংগ্রাম করেছেন। দীর্ঘ ১৩টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট করে রাজনীতি করেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই তিনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেন ‘একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে।’ সেই পথেই তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছেন। মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন। ছয় দফার মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলার আসামি হিসেবে ফাঁসিকাষ্ঠে গিয়েছেন। কিন্তু বাঙালির জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে আপস করেননি; বরং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। ’৬৯-এর প্রবল গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা তাকে কারামুক্ত করি। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখব, একেকটা ঘটনার সঙ্গে একেকটা ঘটনা সম্পর্কিত।

আমরা ধানমন্ডি থেকে রওয়ানা করি পৌনে ৩টায়। রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাই সোয়া ৩টায়। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা আরম্ভ করেন সাড়ে ৩টায়। ১০ লক্ষাধিক জনতার গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত রেসকোর্স ময়দান। সেদিনের সভামঞ্চে জাতীয় চার নেতা—সর্বজনান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ—আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন, চার দিকে তাকালেন। মাউথপিসের সামনে পোডিয়ামের ওপর চশমাটি রাখলেন। হূদয়ের গভীরতা থেকে—যা তিনি বিশ্বাস করতেন, যার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, সেই বিশ্বাসী আত্মা দিয়ে, বাংলার মানুষকে ডাক দিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’। তারপর একটানা ১৯ মিনিট ধরে বলে গেলেন দুনিয়া কাঁপানো মহাকাব্য। বক্তৃতায় তিনি মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে ছিল দুটি পথ। এক. স্বাধীনতা ঘোষণা করা। দুই. পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব না নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত না হয়ে সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদান করা। তিনি দুটোই করলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন সেদিনের পরিস্থিতি; যেটা তিনি আমাদের বলেছিলেন। সেনাবাহিনী তখন প্রস্তুত। মাথার উপর বোমারু বিমান এবং হেলিকপ্টার গানশিপ টহল দিচ্ছে। যখনই বঙ্গবন্ধু এই ভাষায় বলবেন যে, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’, তখনই তারা গোলাবর্ষণ শুরু করবে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু সবকিছু জেনেই বক্তৃতা করেছেন। এত বিচক্ষণ নেতা ছিলেন যে, সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামরিক শাসকের উদ্দেশে চারটি শর্ত আরোপ করলেন—মার্শাল ল প্রত্যাহার কর, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নাও, এ কয়দিনে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কর। এই চারটি শর্ত আরোপ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত হলেন না। পাকিস্তানিরা তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন সদাসতর্ক এবং সচেতন।

দুনিয়া কাঁপানো মহাকাব্য

পুরো বক্তৃতাটি জুড়ে ছিল আসন্ন জনযুদ্ধের রণকৌশল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এই দেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো।’ ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা’র আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্মেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা—কোনো কিছু চলবে না।’ নির্দেশ দিলেন ২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন।’ সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বললেন, ‘আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা, ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়া হলো, কেউ দেবে না।’ গরিবের কথা খেয়াল রেখে বলেছেন, ‘গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে’ সেজন্য শিল্প কল-কারখানার মালিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘এই সাত দিন হরতালে যেসব শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছায়া দিবেন।’ জীবনভর লালিত প্রগাঢ় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিরোধী রাজনীতিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’ আর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, প্রত্যেক ইউনিয়নে, প্রত্যেক সাবডিভিশনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ বক্তৃতার শেষে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রাম।’ অর্থাত্ সামগ্রিকতায় জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার ভারসাম্যপূর্ণ বক্তৃতা। সেদিনের সেই স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠে। অভূতপূর্ব দৃশ্য, কল্পনা করা যায় না। এটিই মানুষ প্রত্যাশা করেছিল। একটা কথা আমার বারবার মনে হয়। একজন নেতা কতো দূরদর্শী যে, তিনি সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে জানতেন। কোন সময় কোন কথা বলতে হবে—এটা তার মতো ভালো জানতেন এমন মানুষ আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে দেখিনি। আমি লক্ষ্য করেছি, বঙ্গবন্ধু জীবনে কখনো স্ববিরোধী বক্তব্য দেননি। একটি বক্তব্য দিয়ে পরে সেই বক্তব্য অস্বীকার করা বা বক্তব্যের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা—এটি তার কোনো দিন হয়নি। কারণ, যা তিনি বিশ্বাস করেছেন, ভেবেছেন, মনে করেছেন যে এটিই বাস্তবসম্মত, সেটিই তিনি বলেছেন সুচিন্তিতভাবে। আর যা একবার বলেছেন, মৃত্যুর কাছে গিয়েও আপসহীনভাবে সেই কথা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।

আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের বক্তৃতা বিশ্লেষণ করি তবে দেখব, অলিখিত একটি বক্তৃতা। ভাষণের সময় ১৯ মিনিট। শব্দসংখ্যা ১ হাজার ৩০৮টি। আব্রাহাম লিংকনের Gettysburg Address-এর শব্দসংখ্যা ২৭২, সময় ৩ মিনিটের কম এবং লিখিত। অপরদিকে, মার্টিন লুথার কিং-এর ‘I have a dream’ ভাষণটির সময় ১৭ মিনিট, শব্দসংখ্যা ১ হাজার ৬৬৭। কিন্তু বিশ্বের কোনো নেতার ভাষণ এমন সংগ্রামমুখর ১০ লক্ষাধিক মুক্তিকামী নিরস্ত্র মানুষের সামনে হয়নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণটি প্রদান করে মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে, নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিলেন। কী বিচক্ষণ একজন নেতা! আইএসআই ৭ই মার্চ ঢাকা ক্লাবের সামনে ছিল। তারা অপেক্ষা করেছিল—যে ঘোষণাটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’—তারা মনে করেছিল সেই কথাটি তিনি ৭ই মার্চ বলবেন। আমি আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধু ছিলেন সতর্ক। তিনি সবই বলেছেন, কিন্তু শত্রুর ফাঁদে পা দেননি। উলটো শত্রুকেই ফাঁদে ফেলেছেন। যার জন্য পরদিন আইএসআই রিপোর্ট করল ‘চতুর শেখ মুজিব চতুরতার সঙ্গে বক্তৃতা করে গেল। একদিকে স্বাধীনতা ঘোষণা করল, আরেক দিকে চারটি শর্ত আরোপ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত হলো না এবং পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নিল না। আমাদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমরা যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম সেটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।’ এই ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। একটি বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি একটি গণতান্ত্রিক-রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। একটি বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের কালপর্বে এই মার্চ মাস থেকেই শুরু হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই মার্চ মাসই তো রক্তঝরা মাস। আজ ৭ই মার্চেরও সুবর্ণজয়ন্তী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের দেরাদুনে আমাদের ট্রেনিং হতো। সেখানে আমরা মুজিব বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলতাম, ‘বঙ্গবন্ধু মুজিব তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ জানি না। কিন্তু তোমার নির্দেশিত পথে যুদ্ধ চালিয়ে যতক্ষণ আমরা বাংলা মাকে মুক্ত করতে না পারব, ততক্ষণ মায়ের কোলে ফিরে যাব না।’ প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন ও বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেই আমরা মায়ের কোলে ফিরে এসেছিলাম। ৭ই মার্চের দুনিয়া কাঁপানো বক্তৃতা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের চলার পথের দিকনির্দেশনা—যা আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। দুটি মহান লক্ষ্য সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন। এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা। দুই. অর্থনৈতিক মুক্তি। প্রথম লক্ষ্য পূরণ করে যখন তিনি দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। জাতির জনকের দুই কন্যা তখন বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান। ’৮১-এর ১৭ মে জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের রক্তে ভেজা পতাকা আমরা তুলে দিই। সেই সংগ্রামী পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আজ বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ হবে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা।

তোফায়েল আহমেদ

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

জাতীয়

ঢাকা, ৭ মার্চ, ২০২১ : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ৩৬৩তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৭ জন।

গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ জন এবং নারী ২ জন। গতকাল ১০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ হাজার ৪৬২ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।

আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬০৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৩ হাজার ৮২ জনের নমুুনা পরীক্ষায় ৫৪০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। গতকালের চেয়ে আজ ৬৬ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন।

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৪টি হয়েছে সরকারি এবং ৯ লাখ ৬১ হাজার ৫৭১টি হয়েছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৭ জন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৮২২ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২১৫ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার ৩ জন।

আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯১ দশমিক ৩১ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪ জনের। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৮৩৪ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২২০টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের সরকারি ১৪০টি ও বেসরকারি ৬৯টিসহ ২১৯টি পরীক্ষাগারে (এন্টিজেন টেস্টসহ) নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৯২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ১০টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

জাতীয়

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ মুক্তিযুদ্ধকালে সকলের জন্য উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তার এই ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্বাধীনতার গৌরবগাঁথা ও আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

১৮ মিনিট স্থায়ী এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু নির্যাতিত বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরই আহ্বানে নিরস্ত্র বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই এ ভাষণের যেমন ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে তেমনই রয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ঐতিহাসিক এই ভাষণটির মূল কয়েকটি দিক হলো- সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা, নিজ ভূমিকা ও অবস্থান ব্যাখ্যা, পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত, সামরিক আইন প্রত্যাহারের আহ্বান, অত্যাচার ও সামরিক আগ্রাসন মোকাবেলার হুমকি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক, দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান।

যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটি কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) আওতায় নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটিকে।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাণবন্ত বা জাগ্রত করে রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় ৩০ ফুট প্রশস্ত সৌন্দর্যবর্ধন জলধারার উপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যেভাবে মঞ্চ সাজানো হয়েছিল সেই একই মঞ্চের আকৃতিতে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য।

৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার স্থান সাজছে নতুন রূপে ( ৪০ ফিট প্রশস্ত পেডেস্ট্রেন রোড )
একইসঙ্গে মঞ্চটির চারদিকে বিভিন্ন লেজার লাইটের মাধ্যমে আলোকিত করা হবে পুরো জায়গাটিকে। পাশাপাশি থাকবে ফুলের বাগান, জলধারার মাঝখানে গ্লাস টাওয়ার ও শিখা চিরন্তন বরাবর ৪০ ফিট প্রশস্ত পেডেস্ট্রেন রোড। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের জলধারার নিচে ঠিক মঞ্চটির আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গার উপর গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সেখানে প্রায় ৫৬০টি গাড়ি একসঙ্গে রাখা যাবে। আন্ডার গ্রাউন্ডে যাতায়াত করার জন্য দুটি র্যা ম্প এবং তিনটি সিঁড়ি থাকবে। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদের জন্য থাকছে দুইটি লিফট।

এ প্রকৌশলী আরও বলেন, আগত দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে ৭টি ফুড কোর্ট। এছাড়া মঞ্চটির পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শিশু পার্কে আগত দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ ফিট লম্বা ও ৫০ ফিট চওড়া দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদসহ জনসভার জন্য স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। থাকছে গ্লাস টাওয়ারের চারদিকে গ্রিন হেজ বাউন্ডারি ও ৪৪টি আধুনিক ফুলের দোকান।

এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মসহ সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা। গণপূর্ত অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মর্মস্পর্শী, অনুভূতিগুলো প্রতিফলিত করাই হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালের ২২ জুন।