জাতীয়

দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ সংবিধানের একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলের এ প্রস্তাব সোমবারের মধ্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ বিভাগের সংস্কারে দলীয় প্রস্তাবও অনেকটা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এ ছাড়াও দলীয় সংস্কার কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতির বিষয় ছাড়াও সংবিধান সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অন্য সংস্কারগুলো নিয়েও সদস্যরা আলোচনা করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়ালি) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে গত বছর ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেয় বিএনপি। এর মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার, এই তিন বিষয়কে সংবিধানের মূলনীতি ঘোষণা করাসহ চূড়ান্ত করা সংস্কার প্রস্তাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন লিখিতভাবে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব পাঠাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করেছে। এই কমিশন ইতোমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকসহ অন্য অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠনের পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ রেখেছে কমিশন। এর পরই তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে।

এদিকে সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ তার প্রতিবেদন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনও চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। যথাক্রমে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড. আবদুল মঈন খান দুই কমিটির প্রধান। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার ও নারীবিষয়ক আরও দুটি সংস্কার কমিটি করার পরামর্শ আসে। এর একটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অন্যটিতে সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করার বিষয়ে আলোচনা হয়। জানা গেছে, বিএনপি সংস্কার কমিটিগুলোর তৈরি করা প্রতিবেদন বা প্রস্তাবগুলো সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকার ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন করে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ছয় কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

নানা সংস্কার আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। সাবেক সচিব এ এস এম মো. নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করা হয়েছে। রোববার সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শপথ নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই কমিশন গঠনকে নির্বাচনের পথে বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন।

জাতীয়

রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নে একই সময় দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করা নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘটনা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রথম স্বামী ইউটিউবার সাগর শেখের সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জান্নাতুল। পরে পরিবারের চাপে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রায় দুই বছর বিষয়টি গোপন রাখলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

জান্নাতুল দুই স্বামীর মন জয় করেই চলছিলেন। স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুজনের কাউকেই।

চার বছর প্রেম করে ২০২২ সালে ওই ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখকে গোপনে বিয়ে করেন জান্নাতুল। পরিবারের সবাই বিদেশে থাকায় বাড়িতে একাই বসবাস করতেন তিনি। জান্নাতুলের বাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করতেন সাগর। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল। স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেওয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে প্রথম স্বামী সাগরের সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল। স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেওয়ায় সাগর তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেন তারা। তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর দ্বিতীয় স্বামী ও ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। এ বিষয়ে সাগর জানতে চাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ জানান, তার ও জান্নাতুলের বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানত। বিয়ের পর তাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে সাগরের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় সাগর ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যান। কাজ থেকে এসে সাগর জানতে পারেন তার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছেন। সাগর তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকব। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসব।’

তিনি জানান, এখন বাধ্য হয়ে তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেছেন।

এদিকে জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের মা হাছিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট, বুঝে নাই। যে কারণে সে সময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

এ বিষয়ে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরিপ্রেক্ষিতে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটি বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়ার পরে প্রদত্ত বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক যৌথভাবে উপস্থাপিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। জাতিসংঘের ১০৬ টি সদস্যরাষ্ট্র এটি কো-স্পন্সর করে যা এই রেজ্যুলেশনের প্রতি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রতিফলন।

রেজ্যুলেশনটিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ এই সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে, সামগ্রিক পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য, সকল অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক একটি উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ।

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভা চলাকালে রোহিঙ্গা বিষয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এই বছর রোহিঙ্গা বিষয়ক রেজ্যুলেশনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানসহ সকল শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি হত্যা, ধ্বংস, বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা, এবং বিশেষ করে শিশুসহ রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক নিয়োগের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং অপরাধসমূহ তুলে ধরে। রেজ্যুলেশনটিতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জবাবদিহিতার সমস্ত প্রক্রিয়াকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এছাড়াও রেজ্যুলেশনটি একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেয় এবং সংস্থাটির পাঁচ-দফা ঐক্যমত্য সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে গৃহীত উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে।

রাষ্ট্রদূত মুহিত সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি একটি জটিল ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। গত সাত বছরেও সংকটের মূল কারণসমুহ নিরসনে কোনও বাস্তব অগ্রগতি সাধিত হয়নি বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন এবং সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে আজ গৃহীত রেজ্যুলেশনের উল্লেখপূর্বক তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাদের মানবিক সহযোগিতা চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।

সর্বসম্মতিক্রমে এই রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও সংহতির প্রকাশ।

জাতীয়

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট এ নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

সিইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট সদয় হয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদান করেছেন। কমিশনার হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সিইসি পদে বিএনপির দেওয়া তালিকায় আরেক নামটি ছিল শফিকুল ইসলাম। বিএনপি চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এ তালিকা দিয়েছিল। বিএনপির মিত্রদলগুলোর বেশির ভাগের তালিকাতেও এ দুই নাম ছিল।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর নতুন ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি। গত ৩১ অক্টোবর ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ দিতে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করে সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহŸায়ক আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। নাম প্রস্তাব করার জন্য কমিটিকে ১৫ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে প্রেসিডেন্টের কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করে।

এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস নির্বাচন কমিশন শূন্য ছিল।

চার্জ কমিটি গঠনের পর তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে সিইসি ও ইসি চার জনের নাম পাঠানোর আহবান জানায়। এ প্রেক্ষিতে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো নামের তালিকা পাঠায় চার্জ কমিটির কাছে। সে তালিকা থেকে চার্জ কমিটি বাছাই করে ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট সে দশ জন থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। এ কমিশন একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অত্যন্ত যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি। এ ছাড়া অন্য চার জন কমিশারও অত্যন্ত যোগ্য। দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এ এম এম নাসির উদ্দিন বিসিএস (প্রশাসন) ১৯৭৯ ব্যাচের নিয়মিত একজন কর্মকর্তা। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সালে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। পরে বিসিএস ৭৯ ব্যাচে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। নাসির উদ্দীন ২০০৪ সালে তথ্য সচিব, এরপর জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান।

নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব ইনশাআল্লাহ। এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব। সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। এই আন্দোলনের মূল বিষয়ই ছিল ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। এত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয়। সে জন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাব। তিনি মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য বহুরকম চ্যালেঞ্জ থাকবে; সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সেটা বিবেচনায় রেখেই নতুন নির্বাচন কমিশন কাজ করবে।

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের যারা হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। তাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব আমরা।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ঢাকার রাস্তার প্রতিটা দেওয়ালে প্রকাশ পেয়েছে আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের উদযাপন। মাইলের পর মাইল দেওয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে বিদায়ী এই শাসকের কার্টুন।

দেয়ালচিত্র নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, শব্দগুলো খুবই বিস্ফোরক, এই তরুণ মস্তিষ্কগুলো অনেক ভাবনা, উচ্চাকাঙ্খা ও আশা-আকাঙ্খায় ভরপুর। তারা তাদের ভবিষ্যতকে এ চিত্রগুলোতে ফুটিয়ে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন।

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘কাউকে খুঁজে নাও।’ কিন্তু পরে বললাম, ‘ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরাও তাদের জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

জুলাই ও আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আগের সরকার সম্পূর্ণ নিপীড়নের পরিবেশ তৈরি করেছিল। হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধন- এটি একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল। ড. ইউনূস দাবি করেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সাড়ে ৩ হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করেছিলেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। ধারণা করা হয়, ট্রাম্পকে আওয়ামী লীগ ও প্রভাবশালী ভারতীয় আমেরিকানরা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য লবিং করছে।

তবে ড. ইউনূস এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না; আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের ধীরগতি সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। তিনি দেশটিকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনি ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দেশের বাইরে পাচার করা হাজার কোটি ডলার পুনরুদ্ধার করবেন।

বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই। এটি একটি খারাপ এবং স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ।

জাতীয়

দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্টের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

তারা হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ মতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিয়াছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়াছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই তিন বিচারপতিকে প্রায় ৫ বছর ধরে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

জাতীয়

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জাতীয় পার্টির সাবেক এক সংসদ সদস্যকে জনতা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে।

রোববার বিকালে চুনারুঘাট পৌরসভার পশ্চিম পাকুড়িয়া খোয়াই বেইলি ব্রিজে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল পিটুনির শিকার হন বলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান জানান।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা রানা (৫৮) ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বিকালে রানা মোহাম্মদ সোহেলকে বহনকারী গাড়িটি শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি যাওয়ার পথে চুনারুঘাট খোয়াই বেইলি ব্রিজে যানজটের মুখে পড়ে।

এ সময় গাড়িটি পেছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রানা মোহাম্মদ সোহেল তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়েন।

তখন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আশপাশের মানুষ সেখানে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে জনতা রানা মোহাম্মদ সোহেলের ওপর চড়াও হয়। পরে তারা পুলিশকে খবর দেয়।

চুনারুঘাট থানার ওসি মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “পিস্তলসহ রানা মোহাম্মদ সোহেলকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার বাড়ি রংপুর জেলার কেরানীপাড়া এলাকায়। তিনি রাস উৎসব দেখতে শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন। পরে শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান বলেন, “সেনাবাহিনী তাদের লোক হিসেবে তাকে হেফাজতে নিয়ে গেছে। আমরা তার অস্ত্রটি জব্দ করেছি। অস্ত্রটি লাইসেন্স করা কিনা যাচাই-বাচাই চলছে।”

তিনি বলেন, “সাবেক মেজর কেন কী কারণে গুলি করলেন বিষয়টি তদন্ত করলে জানা যাবে।”

জাতীয়

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ না হলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গকে বিচ্ছিন্নের হুঁশিয়ারি দিয়েছে রংপুরের ছাত্র-জনতা।

রোববার সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা পরিষদে রংপুর বা উত্তরাঞ্চলের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলবাসী তাদের দাবি আদায়ে আরও কঠোর আন্দোলনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ সময় বক্তারা জানান, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পর দেশে যে বিপ্লব ঘটে, তাতে সরকার পতনের পর ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নিলেও উত্তরবঙ্গ থেকে একজনও উপদেষ্টা নিয়োগ হয়নি। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েক দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের কেউ স্থান পাননি। এ নিয়ে উত্তরের ছাত্র-জনতার মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সম্প্রতি রংপুরে দুজন উপদেষ্টা এলে তারা এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান। এ কথা জানার পর রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ না হলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় ধরনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

উপদেষ্টা নিয়োগের দাবির কারণ হিসাবে বলা হয়, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রংপুর অঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত, রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদনে অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তিস্তা নদীসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গের উপদেষ্টার প্রয়োজন। রংপুরের উন্নয়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে উপদেষ্টা নিয়োগ অপরিহার্য বলে তারা মনে করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুর জেলা সমন্বয়ক ইয়াসীর আরাফাত, আলমগীর নয়নসহ অন্য নেতারা। তারা বিশ্বাস করেন, দ্রুত উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হবে।

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সংবাদ প্রকাশের জেরে ও দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ছাত্রদল ক্যাডারের নেতৃত্বে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর মাহমুদের মাথা ও শরীর ইট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি দৈনিক কালবেলা প্রত্রিকার রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।

ঘটনা শেষে ছাত্রদল ক্যাডার ইয়াসিন বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রূপগঞ্জজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রতিবাদে রূপগঞ্জে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে সাংবাদিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ বড় ধরনের আলটিমেটামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্রদল ক্যাডার ইয়াসিন মিয়া ওরফে ফেন্সি ইয়াসিন উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের সোনাব এলাকার আবু বক্করের ছেলে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গোলাকান্দাইল দক্ষিণপাড়া ৫নং ক্যানাল এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যৌথ বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে।

রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, জমি দখলবাজসহ অপরাধীরা দলের কেউ না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ দলে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই। অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

জাতীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান মুহিবের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখার নামে ৩০টি দলিলে রয়েছে অন্তত ৩৭ একর জমি। সব জমিই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে। কম করে হলেও এসব জমির মূল্য দেড়শ কোটি টাকা হবে। রেখা একজন কলেজ শিক্ষক হয়ে কীভাবে এত জমির মালিক হলেন তা স্থানীয়দের কাছে এক রকম রহস্য।

তারা বলছেন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান মুহিব। নির্বাচনে সহজেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন। স্বামী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই টাকা আর জমির নেশায় পেয়ে বসে মুহিবপত্নীকে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়েই এত সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর তাপস সাহা গং নামে এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৮শ শতাংশ (৮ একর) জমি কেনেন রেখা। এই জমির অবস্থান ইটবাড়িয়া মৌজায়। দলিল নং-৪৫১২। ২০২৪ সালে ধুলাসার মৌজায় আলমগীর হোসেন হাওলাদারের কাছ থেকে নেন ৫ দশমিক ২৬ একর জমি। ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৬৬৭০নং দলিলে বৌলতলীতে রিয়াজুল ইসলাম মিলন তালুকদারের কাছ থেকে কেনেন ০.৬১ একর জমি। ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট কাউয়ারচর মৌজায় আব্দুস সত্তার গংয়ের কাছ থোকে নেন দেড় একর, দলিল নং ৪১২০। একই সালের ৩১ আগস্ট ১ দশমিক ৩৪ একর জমি কেনেন রেখা। যার দলিল নং ৪১১৯।

২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কাউয়ারচর মৌজায় ৩৯৬২নং দলিলে স্থানীয় দাদন মিয়ার ১ দশমিক ১২ একর জমি কেনেন মাত্র ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ধুলাসার মৌজায় মোশারেফ হাওলাদার গংয়ের কাছ থেকে নেন ১ দশমিক ২১ একর জমি। একই এলাকায় পরের বছরের ১৯ জুন ২৫৪৬নং দলিলে দশমিক ৩৮ একর জমি কেনেন।

২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর ৫২১২নং দলিলে বৌলতলী মৌজায় ১ দশমিক ৩৯ একর ধানী জমি নেন স্থানীয় আবুল কাশেম গংয়ের কাছ থেকে। ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি কাউয়ারচর মৌজায় আবদুল ছত্তার গংয়ের ০ দশমিক ৭৬ একর জমি লিখে নেন রেখা। যার দলিল নং -৪০১১। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ধুলাসার মৌজায় নাজিম সিকদার গংয়ের দেড় একর জমি দলিল করে নেন মহিবপত্নী ফাতেমা আক্তার। যার দলিল নং-৫০১৭। ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর কাউয়ারচরে জলিল গংয়ের ৩৯ শতাংশ জমি বাগিয়ে নেন রেখা।

২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ধুলাসার মৌজার সোনা মিয়া গং ও নুর সাঈদ গংয়ের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকায় কেনেন একটি জমি। একই জায়গায় ৪০৮২নং দলিলে রয়েছে রেখার আরও ৩০ শতাংশ জমি। বৌলতলীতে ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় আজিজুর রহমানের ১০২ শতাংশ জমি মাত্র ৬ লাখ টাকায় দলিল করেন রেখা। দলিল নং-৬৬৭২।

একই সালে তিনি ফিরোজা বেগমের কাছ থেকেও সমপরিমাণ জমি দলিল করেন একই স্থানে। যার দলিল নং-৬৬৭১। ধুলাসারের আব্দুল মালেক গংয়ের ১৯০ শতাংশ, গঙ্গামতিতে ৩০ শতাংশ, ২০২০ সালে রফিকুল ইসলাম গংয়ের কাছ থেকে কেনেন ১৫৪ শতাংশ জমি। এছাড়া ২০১৮ সালে ০.৪৫ একর, ২০১৯ সালে ০.২০ একর, ২০১৭ সালে দেড় একর ও ০.৪২ একর জমি কেনের রেখা।

ধুলাসার ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, স্কুল-কলেজের চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও টিআর কাবিখার কাজ না করে পুরো টাকা লুটপাট করে নিয়েছেন তিনি। সেই অর্থেই কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের মতো জায়গায় এত জমি কিনেছেন তিনি।

ফাতেমা আক্তার রেখা আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কলেজের অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ফাতেমা আক্তার কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রভাষক হয়েছেন। তার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩৮ হাজার টাকার মতো।

এসব বিষয়ে জানতে ফাতেমা আক্তার রেখার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার কলাপাড়ার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তালা দেওয়া। স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে রেখাকে কোথাও দেখা যায়নি।