জাতীয়

বিএনপি-জামায়াত ও সহযোগী জোটের তৃতীয় দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীতে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বুধবার রাজাধানীর কমলাপুর থেকে সবকটি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। এছাড়া শিডিউল অনুযায়ী পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন যথাসময়ে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছেছে। তবে রাজধানীর গাবতলী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম।

সরেজমিন রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব নেই। সকালে যানবাহন কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। তবে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম।

সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা আফসানা করিম জানান, তিনি মাত্র ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে তার কাক্সিক্ষত বাস পেয়েছেন। অবরোধের মধ্যেও সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মালবাহী পিকআপ, ট্রাকও চলাচল করেছে নির্বিঘ্নে।

কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার জানান, বুধবার সবকটি ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। কমলাপুরসহ দেশের প্রতিটি স্টেশনেই যাত্রীর ভিড় ছিল।

রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ বলেন, রেলে পর্র্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি স্টেশন ও লাইন এলাকায় রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আনসার সদস্যরাও নিয়োজিত রয়েছে। নাশকতা রোধে আমরা সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছি।

মিরপুর প্রতিনিধি জানান, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে আগের অবরোধের তুলনায় যান চলাচল ছিল বেশি। সকাল থেকে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলে লোকজন গন্তব্যে গেছেন। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে যানজট দেখা গেছে।

গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি : গাবতলী বাস টার্মিনাল অন্য দিনের তুলনায় ছিল একেবারেই ফাঁকা। যাত্রী না থাকায় ভোর থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে গাবতলী এলাকায় সতর্ক প্রহরায় ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। টহল দিতে দেখা গেছে, র‌্যাব ও পুলিশকে। তবে দেখা মিলেনি অবরোধকারীদের। স্ত্রী ও সন্তানসহ গাবতলীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আফজাল হোসেন। তিনি জানান, তার ভাতিজির বিয়ে বৃহস্পতিবার। ফরিদপুরে যাওয়ার উদ্দেশে এসেছেন। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। বাস ছাড়ার বিষয়ে সুবর্ণ পরিবহণের বাস কন্ডাকটার রাসেল জমাদ্দার বলেন, বাস ছাড়ার জন্য চাপ আছে। কিন্তু যাত্রী নাই। একই কথা জানান, শ্যামলী পরিবহণের স্টাফ রনি। তিনি বলেন, যাত্রী একেবারেই নাই। যদি ৮-১০ যাত্রীও পাওয়া যায় তাহলেও বাস ছাড়ব।

সদরঘাটে লঞ্চে যাত্রী কম : কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে যাত্রী ছিল কম। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনালে ৩২টি লঞ্চ ভিড়েছে। আর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ১৬টি। সরেজমিন দেখা গেছে, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কোনো কোনো রুটে লঞ্চে এতটাই কম যাত্রী উঠেছে যে, তেলের টাকা উঠবে কিনা সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। কুয়াকাটা-১ লঞ্চে পটুয়াখালী থেকে বুধবার ভোরে সদরঘাটে আসেন মো. জলিল। তিনি জানান, ভাড়া নিয়েছে ৪০০ টাকা। অন্য সময়ও এই ভাড়াই নেয়। তবে যাত্রী তেমন ছিল না। শরীয়তপুরের পথে বোগদাদীয়া ৬ ছেড়ে যাওয়ার আগে এই লঞ্চের মাস্টার মো. হƒদয় খান বলেন, প্রথম শ্রেণির ৭ জন, ডেকে ৩৩ জন আর চেয়ারে ৯ জন যাত্রী পেয়েছি। এত কম যাত্রী নিয়ে কীভাবে চলবে জানি না।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, আমরা সতর্ক আছি। এখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই।

জাতীয়

প্রতিকেজি আলু এখনো ৫০-৬০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। যদিও ৫৫ দিন আগে (১৪ সেপ্টেম্বর) সরকার কেজিপ্রতি আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ ও ৬৪-৬৫ টাকা। ডিমের দামের ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা। বেঁধে দেওয়া দামে ১২ টাকায় পিস ডিম মিলছে না কোথাও। সরকারের সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। বাড়তি দরে এসব নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে এখনো ক্রেতাকে। এরই মধ্যে আলু আমদানি শুরু হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছিল, হয়তো এরপর বাজার সহনীয় হবে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে আগ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি হলেও তারও কোনো প্রভাব নেই বাজারে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। বুধবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের জুন থেকেই আলুর বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। আগস্টের শেষে প্রতিকেজি আলু ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সেপ্টেম্বরে ৪৫ টাকায় ঠেকে। আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা বেঁধে দেওয়ার প্রভাব বাজারে পড়েনি আজও। অক্টোবর মাসের শেষদিকে আলুর কেজি ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। কোথাও আবার ৭০ টাকাও ক্রেতাকে কিনতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৪ দিন ধরে দেশের বাজারে আমদানি করা আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম যৎসামান্য কমলেও সরকার নির্ধারিত দামে আলু পাওয়া যাচ্ছে না।

বুধবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারে ক্রেতার ১৫-২৪ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে চলতি বছরের মার্চে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ টাকা। মে মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ টাকা।

পরিস্থিতি এমন যে, এই পেঁয়াজই ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি করে। মূল্য কারসাজি রোধে ১৪ সেপ্টেম্বর কিছুটা মূল্য কমিয়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পরও সে সময় বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতি টন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আমদানি মূল্য ঘোষণার পরপরই ফের দেশে কারসাজি করে বাড়ানো হয় দাম।

বুধবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০-১৫০ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। ফলে সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় ক্রেতাকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা বেশি গচ্চা দিতে হচ্ছে।

এদিকে আমদানি করা ডিম দেশে আসতে শুরু করলেও ভোক্তাকে প্রতিহালি কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিপিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু এক পিস আলাদা করে কিনতে হলে ১৩ টাকার কমে মিলছে না। এখানেও হঠকারিতা। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুসরণ করলে প্রতিপিস ডিম ১২ টাকাই বিক্রি হওয়ার কথা। দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি। এ হিসাবে ডিমের বাজার থেকে এখনো প্রতিদিন বাড়তি অন্তত ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডিম সিন্ডিকেট। ডিম নিয়ে গত মে মাস থেকে চরম কারসাজি শুরু করে ডিম ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারীসহ এই খাতের সিন্ডিকেট। ধীরে ধীরে বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। এভাবে প্রায় পাঁচ মাস চলার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমের পিস ১২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু আজ অবধি সেই দামে কেউ ডিম কিনতে পারেনি। উপরন্তু ১৩-১৪ টাকা পিস হিসাবে কিনতে হয়েছে। গড়ে ১৩ টাকা হিসাব করলেও দাম বেঁধে দেওয়ার পর গত ৫৫ দিনে ডিমের বাজার থেকেই বাড়তি প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে একটু নজর দেওয়া যেতে পারে। ওই মাসে প্রতিপিস ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ টাকা। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিপিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছিল।

বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশে আমদানি করা আলু আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তবে ভারত যেদিন প্রতিটন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে, সেদিনই দেশে কীভাবে হুহু করে দাম বেড়ে যায়? এ বিষয়ে তদারকি সংস্থার জোরালো ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল। সেটা না করায় ক্রেতারা পণ্য কিনে ঠকছেন।

রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইকরামুল হক আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বাজারে এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে। বিক্রেতারা পণ্যের সরবরাহ কমার অজুহাতে যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আবার সরবরাহ বেড়েছে বলে দাম কমাচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাজারে সরবরাহ সব সময় পর্যাপ্ত থাকে। বিক্রেতারা আমদানিকারক বা উৎপাদনে জড়িতদের কারসাজি করে দাম বাড়ায়। একটি নির্ধারিত সময় দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট থেকে হাজারো কোটি টাকা অবৈধভাবে নিয়ে নেয়।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। এতে ক্রেতাসাধারণের কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরলেও রাজধানীর একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর কাওরান বাজারের খুচরা পর্যায়ে প্রতিপিস ফুলকপি ও কাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীর নয়াবাজার ও রায়সাহেব কাঁচাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৬০-৭০ টাকা ছিল। তবে রামপুরা খুচরা বাজারে প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তবে রামপুরা বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি নয়াবাজারে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা ৭ দিন অগেও ১২০ টাকা ছিল। তবে মালিবাগ ও রামপুরা বাজারে এই শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। পাশাপাশি ধুন্দুল, ঝিঙে ও কচুমুখির কেজি একই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিকেজি মুলা ৫০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ২০০-২৫০ টাকা ছিল। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি টমেটো, গাজর ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা।

জাতীয়

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা রয়েছে, তবে সমালোচনার থেকেও স্বাস্থ্যখাতের অর্জন অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বুধবার (৮ নভেম্বর) রাতে হোটেল রেডিসন ব্লুতে কালাজ্বর ও ফাইলেরিয়া নির্মূল উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, একটি জাতিকে যদি এগিয়ে যেতে হয়, তাহলে সেই জাতিকে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিজের এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তেমন কিছুই ছিল না। পর্যায়ক্রমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক অর্জন হয়েছে। বড় অর্জন হলো, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে একেবারে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বীকৃতি জাতিসংঘের কাছ থেকে পেয়েছি। জাতিসংঘ ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নামে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে, এটা মানুষের জন্য অনেক উপকারী, তাই অন্যান্য দেশও এটাকে অনুসরণ করতে পারে। এটা কিন্তু অনেক বড় একটা অর্জন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা করে। আমি ১০ বছর ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করছি। সমালোচনা সহ্য করার অভ্যাস আমার হয়ে গেছে। কিন্তু সমালোচনা থেকে আমাদের অর্জন অনেক বেশি। আমরা খতিয়ে দেখি না- আমাদের অর্জন কতটুকু। আপনাদের সঙ্গে ১০ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন প্রথম প্রতিমন্ত্রী হয়ে দিল্লি গেলাম, পোলিওমুক্ত দেশের সার্টিফিকেট আমি গ্রহণ করেছি। পরে আরও যে তিনটি অর্জন, সেটাতেও আপনারাই কাজ করেছেন, ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, মন্ত্রণালয়সহ সব পর্যায়ের লোক কাজ করেছে, সুতরাং এ অর্জন তাদেরও। এরপর টিটেনাসমুক্ত বাংলাদেশের সার্টিফিকেটটি আমি গ্রহণ করেছি।

স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, এবার যখন আমরা দিল্লিতে গেলাম, আমরা জানতাম না যে এতগুলো অর্জন আমরা একসঙ্গে পাব। এতগুলো সুখের খবর আমরা নিয়ে আসতে পারব। সেখানে গিয়ে আমরা জানতে পারলাম, বাংলাদেশ কিছু পুরস্কার পাবে, অন্য দেশও পাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম অধিবেশনে একমাত্র বাংলাদেশ দুটি অর্জন একসঙ্গে পেয়েছে, কালাজ্বর এবং ফাইলেরিয়া নির্মূলের সার্টিফিকেট।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে একটি মাত্র দেশ কালাজ্বর নির্মূল করতে পেরেছে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ, যেটা নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি। গত ৫০ বছরে যেটা আমরা করতে পারিনি। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে সায়মা ওয়াজেদের মাধ্যমে নির্বাচনে জয় লাভ করেছি। এ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধান জং রানা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে।

জাতীয়

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করতে আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বঙ্গভবনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের জন্য দুপুর ১২টায় সাক্ষাতের সময় দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বুধবার (৮ নভেম্বর) ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত সব ধরনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করবেন কমিশন। এছাড়া প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ ও নির্দেশনা থাকলে তাও শুনবেন। তবে তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের।

তিনি বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মতো পরিবেশ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর ইসি।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ইতোমধ্যে ভোটের উপকরণ জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আর ব্যালট বাক্সও মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ও শনিবার (১১ নভেম্বর)। ছাপানো হচ্ছে মনোনয়নপত্রও। এক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে সংস্থাটি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন সিইসি।

সংবিধান অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। তার আগের নব্বই দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন, পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৮৫২ জন।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বহুল কাঙ্খিত মেট্রোরেল পরিষেবার দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে মেট্রোরেল এখন রাজধানীর উত্তরাকে মতিঝিলের সাথে সংযুক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে আগারগাঁও স্টেশনে সবুজ পতাকা নেড়ে মতিঝিল স্টেশন অভিমুখে মেট্রোট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন এবং সেখানে তিনি সবুজ পতাকাতেও স্বাক্ষর করেন।

পরে তিনি ফিতা কেটে ট্রেনে উঠে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

উদ্বোধনী যাত্রায় তার অনুভূতি ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার মেট্রোরেল চালুর এই উদ্যোগ নিয়েছে যাতে সবাই সহজে যাতায়াত করতে পারে, কাজের সময় বাঁচাতে পারে, যানজট থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।

আজ, আমরা উত্তরা এবং মতিঝিলের মধ্যে মেট্রোরেল চলাচলের সূচনা হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত, ‘তিনি বলেন, “আমরা এটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত করব।’

প্রধানমন্ত্রী জাপান, জাইকা, উন্নয়ন সহযোগী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মেট্রোরেল কাজের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তি ও শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ট্রেনটি মতিঝিল স্টেশনে পৌঁছায় বেলা ৩.০৬ মিনিটে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগারগাঁও স্টেশনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

ট্রেনে চড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন।

মতিঝিল স্টেশনে, তিনি এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন, যা হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইন হবে। ৪১,২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পের সময়সীমা হল ২০২৮।
পাশাপাশি তিনি আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল সার্ভিস এবং এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজের দুটি নামের ফলক উন্মোচন করেন।

এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) হল ছয়টি পরিকল্পিত মেট্রো লাইনের তৃতীয়, সরকার যানজট ও দূষণ কমাতে ঢাকা ও এর সংলগ্ন এলাকায় ১৪০ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে।

এরআগে গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল সেকশনের দৈর্ঘ্য ৮.৭২ কিলোমিটার। ফার্মগেট-সচিবালয়-মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে।

উত্তরা-মতিঝিল রুটে ৫ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করবে।

সকাল সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে এবং উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।

জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার পথ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত অংশ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।

প্রতিটি ট্রেন ২,৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে বাঁকযুক্ত এলাকায় গতি কমে যাবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নেয়। যানজট নিরসনে রাজধানীজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে প্রকল্পের বিবরণে জানা গেছে।

মেট্রো রেল প্রতি ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৫ লক্ষ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে এবং প্রতি চার মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন আসবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মেট্রোরেল নির্মাণ করছে এবং প্রকল্পে সহজ শতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। জাইকা প্রকল্পের জন্য ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে।

জাতীয়

সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির ডাকা প্রথম ধাপে ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ শেষ হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে দ্বিতীয় ধাপের টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে।

এদিন সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সড়ক ও নৌপথে এ অবরোধ চলবে।

গত বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বিএনপির চলমান গণআন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

অপরদিকে, সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে এবং বিগত ৩ দিনের অবরোধ চলাকালে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রোববার ভোর ৬টা থেকে আরম্ভ হয়ে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া, চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অবরোধের ডাক দিয়েছেন আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

জাতীয়

বিএনপির দ্বিতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অবরোধের সমর্থনে এদিন বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এ সময় একাধিক যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়।

নিউমার্কেট থানা পুলিশ জানায়, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টার ও নিউমার্কেটসংলগ্ন গাউসিয়া মার্কেটের সামনে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

নিউমার্কেট থানার ওসি শফিকুল গনি সাবু বলেন, দুর্বৃত্তরা আকস্মিক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের সনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তরা যাতে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ।

এদিকে যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারের দুর্বৃত্তরা বাসটিতে আগুন দেয়। খবর পেয়ে পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর যুগল বিশ্বাস যুগান্তরকে জানান, সন্ধ্যার দিকে মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।

তিনি জানান, বাসটি উত্তরা থেকে ছেড়ে পোস্তগোলার উদ্দেশে রওনা দেয়। যাত্রাবাড়ী মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসার পর দুর্বৃত্তরা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি।

দিকে সায়েদবাদ এলাকাতেও একটি বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক বিস্তারিত জানাতে পারেনি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

প্রসঙ্গত সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দফায় বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে রোববার। এতে সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশপথে যান চলাচল বন্ধের কথা বলা হয়েছে।

এর আগে তাদের প্রথম দফার চারদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয় বৃহস্পতিবার। এছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ঢাকার রাজপথে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটেছে।

জাতীয়

আজকের এই দিনে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা— সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে। এই চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় এই দিনটি। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সামরিক বাহিনীর খুনি অফিসারেরা দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য করতে তাঁদের হত্যা করে।  তারপরেই শুরু হয় ১৫ বছরের সামরিক স্বৈরশাসনের। এর আগে ১৫ আগস্টের পর জাতীয় চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও জাতীয় চার নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টি স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশে পালিত হবে শোকাবহ দিনটি।

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ কাজের জন্য তারা আগেভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিল রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। সে ছিল ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি  হত্যাযজ্ঞ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন।

প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেওয়া হয়েছিল, যাতে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সাথে সাথে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তাঁর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা না দেওয়ায় উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘ফ্যাক্টস এন্ড ডুকমেন্টস: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ. সি. এমপি’র নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যায় যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে বলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় (জেল হত্যা) পলাতক দুই আসামি এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া ২৩৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় ঘোষণা করেন।

বিচারিক আদালত রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়।

জাতীয়

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৩ দফা দাবির স্মারকলিপি তুলে দিয়েছি। তিনি আমাকে আশ্বস্থ করেছেন যে, এই তিন দাবি অচিরেই বাস্তবায়ন হবে।’

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত গণভবনের সামনে অবস্থান করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশন শেষে গণভবনে ফেরার পর ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে পাঠিয়ে তাকে গণভবনের ভেতরে ডেকে নেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন সোহেল তাজ।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বোন শারমিন আহমদসহ গাজীপুরের কাপাসিয়ার বিভিন্ন স্তরের কর্মী সমর্থকরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ সংলগ্ন গোল চত্বর থেকে গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে ৫টার দিকে গণভবনের সামনে যান তিনি।

গণভবনের সামনে কিছুক্ষণ লোকজন নিয়ে বসে থাকেন সোহেল তাজ।

এ সময় তিনি বলেন, ‘তিন দফা দাবি নিয়ে এসেছি। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাবিগুলো মেনে নেবেন।’

সোহেল তাজের দাবিগুলো হলো- ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হওয়ায় ওই দিনকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করা; ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা এবং জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক-সামরিক সংগঠক, পরিচালক, শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১০ এপ্রিলও পদযাত্রা করে একই দাবিতে গণভবনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন সোহেল তাজ।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

দিনটি জেল হত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

জাতীয়

খাজা টাওয়ারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ গ্রাহক পূর্ণগতির ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন। বাকিরা শতভাগ না পেলেও ধীরগতির সেবা পাচ্ছেন।

বর্তমানে দেশে মোট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। শনিবার আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুরো নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এজন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। তার মতে আগুনের ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মোবাইলের ভয়েস কল ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ৯০ শতাংশ শনিবার রাতের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে জানা গেছে।

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অ্যাপ-নির্ভর যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে এখনও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকাশ, নগদসহ ব্যাংকগুলোর এটিএম কার্ড ব্যবহারে এখন সমস্যা হচ্ছে না ।

মহাখালীর খাজা টাওয়ারে দুটি ডাটা সেন্টার, আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) এক্সচেঞ্জ, ১০টির বেশি আইআইজি প্রতিষ্ঠান, একাধিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) অফিস, কলসেন্টার রয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে প্রযুক্তিনির্ভর একাধিক প্রতিষ্ঠান।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি ভবনে সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থাকায় কোনো ধরনের ব্যাকআপ ছিল না। তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে আরও একাধিক সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান।

তাদের মতে, ইন্টারনেট এখন একান্ত অপরিহার্য একটি উপদান। ইন্টারনেট ছাড়া ১ দিনও চলা যায় না। বিলাসিতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ইন্টারনেট এখন অপরিহার্য উপাদান। তাদের মতে ঢাকা শহরে এ ধরনের আরও ডাটা সেন্টার থাকলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।

বিশেষজ্ঞরা ও ব্যবসায়ীরা সরকারি উদ্যোগে ঢাকায় আরও ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেন, আমরা সরকারের কাছে ঢাকা শহরে চার-পাঁচটি ডাটা সেন্টার চাই। ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগে অন্তত একটি করে ডাটা সেন্টার করে দিলে এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সরকার ডাটা সেন্টার করে দিলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারব। আমাদের মূল সমস্যা হলো, জায়গা নেই। সরকার যদি আমাদের জায়গা দিয়ে ডাটা সেন্টার তৈরি করে নিতে বলে, বেসরকারিভাবে সেটা সম্ভব। যেসব আইআইজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যদি সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি ডাটা সেন্টারে ব্যাকআপ থাকত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি যেমন কম হতো, তেমনি তারা দ্রুত সেবায় ফিরতে পারত।

ইন্টারনেট পরিস্থিতির হালনাগাদ খবর জানতে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক শনিবার সকালে কথা হয়।

তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সচল ও কর্মক্ষম ডিভাইসগুলো বের করে অন্য ডাটা সেন্টারে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে দ্রুত ইন্টারনেটের অচল অংশগুলো সচল করা সম্ভব হয়েছে। তার মতে পুরো গতি ফিরে পেতে কমপক্ষে আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে এখন দুটি বাধা। প্রথমত, এনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ কেবল সেবা) ট্রান্সমিশনে ধীরগতি। দ্বিতীয়ত, আমরা লাইভ করে দিয়েছি কিন্তু ক্যাশ সার্ভার আপডেট হতে সময় লাগছে। ক্যাশ সার্ভার আপডেট হতে সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। অনেক সময় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাও লেগে যায়। তবে আশা করছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আপডেট হয়ে যাবে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, এখনও ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। আরও সময় লাগবে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করেন তিনি।

জানা গেছে, খাজা টাওয়ারে একাধিক আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট, ভার্গো ও উইনস্ট্রিমসহ ৯ থেকে ১০টি আইআইজি পুরোপুরি শাটডাউন হয়ে গেছে। বড় দু-একটি আইআইজির ব্যাকআপ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে গ্রাহকসেবা দিতে শুরু করেছে।