জাতীয়

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।

মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে গেছেন। চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান।

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

গতবারের মতো এবারো করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলমানরা। পশু কুরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।

এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত ঈদের এই প্রধান জামাতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নামাজ আদায় করেন।

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এই ঈদ জামাত প্রতিবছরের মতো এবারো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।

দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ কারি মো. আতাউর রহমান।

তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।

চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।

সারা দেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করেন।

ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)’কে কুরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.)’এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। হযরত ইবরাহীম (আ.)’এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কুরবানি করে থাকে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কুরবানি ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানি করাই এদিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। নামাজের খুতবায় খতিব কুরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। তবে এবার করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কুরবানির ঈদ হওয়ায় অন্যান্যবারের চেয়ে পশু কুরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কুরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হননি। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কুরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।

জাতীয়

ঈদ খুশির দিন। পূণ্য লাভের দিন। পুরষ্কার লাভের দিন। সন্তুষ্টি অর্জনের দিন। অফুরন্ত দানের দ্বার উন্মুক্ত করার দিন। বড়ত্ব -মহত্ব প্রকাশের দিন। তাই ঈদের কল্পনা করতেই প্রতিটি ঈমানদার নারী- পুরুষের শরীরে সৃষ্টি হয় শিহরণ। পুলকিত হয় তাদের তনুমন। তাই মুমিনের কর্তব্য হল, পবিত্র ঈদের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পূণ্য ও কল্যাণ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের বাতলানো পথে ঈদ উদযাপন করা। ঈদ আনন্দ উৎসব উদযাপনের নামে বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার অনুসরণে পাপ এবং গর্হিত কাজে লিপ্ত না হওয়া।

যেভাবে আপনি ঈদ উদযাপন করবেন :

১.. সাধ্য অনুযায়ী ঈদের রাতে ইবাদত বান্দেগী করা। রাসুল সা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় দুই ঈদের রাতে ( ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) জাগ্রত থেকে ইবাদত- বান্দেগী করবে, তার কলব সেদিন (কঠিন কিয়ামতের দিন) মরবে না (নিস্তেজ হবে না) । যেদিন ( ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে) সমস্ত কলব মারা যাবে ( নিস্তেজ হয়ে যাবে)। সুনানে ইবনে মাজাহ ১/১২৭, হাদীস : ১৭৮২, বায়হাকী – শুআবুল ঈমান, হাদীস :৩৭১১

১..খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।

২. গোসল করা ।

৩.সামর্থ্য থাকলে নতুন পোশাক পরিধান করা।তা সম্ভব না হলে ব্যবহৃত পোশাকের মধ্যে উত্তম পোশাক পরিধান করা।

৪. খুশবু ব্যবহার করা।

৫. শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে যথাসম্ভব সজ্জিত হওয়া।

৬. ফজরের নামাজের পর খুব দ্রুত ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।

৭. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খুরমা অথবা খেজুর খাওয়া এবং বিজোড় সংখ্যক খাওয়া। খুরমা -খেজুর না থাকলে অন্য কোন মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া।

৮. ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া বরং কোরবানির পশু জবাই করে তার গোস্ত দিয়ে আহার করা

৯.ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া। ওজর থাকলে মসজিদে আদায় করা যাবে।

১০ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।

১১. ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা।

১২. উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক বলা

১৩. অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা। সম্ভব হলে পশুর এক-তৃতীয়াংশ গোশতকে আত্মীয়-স্বজন ও গরিব মিসকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া।

১৪.আত্মীয় স্বজনের খোঁজ -খবর নেওয়া।

১৫.তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা।

১৬. অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা।

১৭. সর্বোপরি শরীয়াতের সীমারেখার ভেতরে আনন্দ উৎসব করা। -ফাতাওয়া আলমগীরী ১/১৫০, ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৪৭-৫২ ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে এবং ঈদগাহে গিয়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। তবে ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে ঘরে নামাজ আদায় করতে পারবে। ফাতাওয়া শামি ৩/৫২

জাতীয়

বৃষ্টিতে ক্রেতা জমেনি হাটে; অনেক বিক্রেতা লোকসানে গরু বিক্রি করেছেন, কেউ ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

ঢাকায় কোরবানির হাট বসার পর গরুর দাম বেশি বলে অসন্তোষ ছিল ক্রেতাদের; দাম-দরে না বনায় অনেকে না কিনে ফিরে আসছিলেন।

গত রোববার কোরবানির হাট বসার পর থেকে সেই চিত্রই দেখা যাচ্ছিল। বিক্রেতারা অপেক্ষায় ছিলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, তত বিক্রি বাড়বে।

ঢাকায় অধিকাংশ বাড়িতে গরু কিংবা ছাগল রাখার স্থান না থাকায় শেষ দিকেই কোরবানির পশু বিক্রি হয় বেশি। বিক্রেতারাও আশা করছিলেন, ঈদের আগের দিন কেনা-বেচা হবে জমজমাট।

কিন্তু তাদের সেই আশার গুঁড়ে বালি দিয়েছে বৃষ্টি; তাতে বদলে গেছে ঢাকার পশুর হাটের চিত্র, ক্রেতা সমাগম কমে যাওয়ায় গরু ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে ভাঁজ ।

এক রাতের ব্যবধানে গরুর দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে নেমেছে এক লাখ ৩০ হাজারে। আর তিন লাখ টাকা দামের গরু নেমেছে আড়াই লাখ টাকায়।

<div class=”paragraphs”><p>দনিয়ার কর্দমাক্ত মাঠে বিরস বদনে বসে গরুর বেপারীরা</p></div>
দনিয়ার কর্দমাক্ত মাঠে বিরস বদনে বসে গরুর বেপারীরা
ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বড় দুই হাট দনিয়া ও গাবতলী দুই স্থানের চিত্রে কোনো ভিন্নতা ছিল না। দর না পেয়ে অনেক বেপারী হাট থেকে গরু ফিরিয়েও নিয়ে গেছেন।

যাত্রাবাড়ী পেরিয়ে মহাসড়কের পাশে কাজলা-দনিয়ার খালি জায়গায় অস্থায়ী হাটে বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত থেকে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে জমে থাকা জল-কাদা এড়িয়ে ক্রেতারা তুলনামূলক শুকনা ও সড়কে থাকা গরুর দর কষাকষি করছেন।

বেপারীরা বলছেন, এখন মুনাফা তো দূরের কথা, খরচ ওঠানোর চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই লোকসান দিয়ে বেচছেন গরু।

বেলা ১১টায় ১০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে হাতে থাকা সর্বশেষ গরু বিক্রি করেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী রতন সরকার।

তিনি বলেন, “হাটে ক্রেতা নাই, বৃষ্টির কী হবে, তা জানি না। এখনও অনেক গরু হাটে আছে। তাই লোকসান যাতে আর বেশি না হয় ৯৫ হাজারে বিক্রি দিলাম।”

রতন জানান, মঙ্গলবার রাতেও এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাম উঠেছিল তার এই গরুটির। লাভের আশায় তখন বিক্রি করেননি। বুধবার সকাল থেকে কেউ আর ৯০ হাজার টাকার বেশি দাম বলেনি।

‘পাবনাইয়া’ জাত হিসেবে পরিচিত বকনা গরু হাটে নিয়ে এসেছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার চন্দ্রাপুরের আকমত হোসেন।

তিনি বলেন, “মঙ্গলবার রাতেও এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দাম উঠেছিল গরুটির। আরও ১০ হাজার চাইছেলাম, বিক্রি হয়নি। আর আইজ সকালে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি কেউ কয় না।”

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন নুরু মিয়া। এর মধ্যে বিক্রি হয়নি ৫টি। আগেরগুলো লাভে বিক্রি করতে পারলেও এখন দুশ্চিন্তা বাকি গরুগুলো নিয়ে।

গত ৭-৮ বছরে ধরে দনিয়ার এ অস্থায়ী হাটে কোনো গরু অবিক্রিত থাকেনি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার পরিস্থিতি বদলে যেতে দেখছেন।

ভালো দাম পেতে নেত্রকোণা থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে বুধবার সকালে দনিয়ায় আসেন ব্যবসায়ী হারুন মিয়া। পৌঁছনোর পর দুশ্চিন্তা ভর করে বৃষ্টি দেখে। কালো রঙের ষাঁড়ের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দাম বললেও বিক্রি করেননি হারুন। অপেক্ষায় আছেন কখন বৃষ্টি ঝরা বন্ধ হবে।

সরকারি হিসাবে গত বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল এক কোটি ২১ লাখ। এর বিপরীতে কোরবানির সময়ে পশু জবাই হয়েছে ৯৯ লাখ।

তবে এবার চাহিদার চেয়ে বেশি পশু থাকায় তা যে উদ্বৃত থাকতে পারে তা আগেই জানিয়েছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ৪৮ লাখের বেশি হচ্ছে গরু এবং মহিষ।

অন্যদিকে চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সবমিলিয়ে কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ২১ লাখের বেশি বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এবার ঈদের দিনসহ সর্বমোট পাঁচ দিনের জন্য ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনে হাট বসেছে ২১টি।

গাবতলী পশুর হাটটি স্থায়ী হলেও কোরবানির ঈদের সময় সেটা জমজমাট হয়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর বেপরীরা ভিড় জমান সেখানে।

গাবতলীর হাটে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রচুর গরু দেখা গেলেও ক্রেতা তেমন দেখা যায়নি। সেখানে বিক্রেতাদের হতাশার খবরই শুধু শোনা যাচ্ছিল।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শামীম ২০টি গরু নিয়ে হাটে এলেও মাত্র ৬টি বিক্রি করতে পারার কথা জানিয়ে বলেন, “বাজারে দাম পড়ে গেছে।”

বগুড়ার শেরপুরের বাবু মোট ১৪টা গরু নিয়ে এসেছিলেন, তার মধ্যে মাত্র চারটি বিক্রি করতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, “বড় গরুর দাম নাই। ৮ লাখ টাকার গরুর দাম চাইছি, ক্রেতা বলছে ৪ লাখ টাকা। আমি সারা বছর একটা গরুর পেছনে যে খরচ করলাম সেই দামই উঠছে না। তাহলে কী করে বিক্রি করব? এখন ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না। পুরো লস।”

কুয়াকাটা থেকে ৭টা বড় সাইজের গরু এনে বিপাকে পড়েছেন আবু সাদেক। তিনি বলেন, “স্যার এত দূর থেকে গরু আনছি একটু লাভের আশায়। ৭টার মধ্যে একটা গরুও বিক্রি করতে পারিনি।”

পাবনা থেকে ১০টি গরু নিয়ে আসা সোলায়মান জানান, বিকালে একটি গরু বিক্রি করেছেন আগের দিনের চেয়ে কম দামে।

“আমার লস হয়েছে। কিছু করাও নেই,” বলেন তিনি।

দাম উঠছে না দেখে অনেক বিক্রেতা গাবতলী হাট থেকে গরু ফিরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড়ও করছিলেন।

বিকাল সাড়ে ৪টায় সিরাজগঞ্জের জহির বলেন, “স্যার কাস্টমার নাই, গরু বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। কী করমু? যে গরু ১ লাখ ৬০ হাজার, সেই গরুর দাম কয় ৯০ হাজার। আমাগো জীবন শেষ।”

মানিকগঞ্জের দেলোয়ার বলেন, “গরুর দাম উঠছিল ১ লাখ ৪০ হাজার । এখন বলে ৮০ হাজার। কেমনে কী করমু। এখন বাড়ি নিয়ে যামু।”

গাবতলী গরুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আবুল হাশেম বলেন, “বড় গরু বিক্রির ক্রেতা একেবারেই কম। গত দুইদিনে ৬০/৭০টা গরু বেপারীরা ফেরত নিয়েছে।

“মাঝারি ও ছোট গরুর মফস্বলের ক্রেতারাও এখন টোকেনের (ছাড়পত্র) জন্য ভিড় করছে। তারা চলে যেতে চায়। তবে আমরা বলেছি, রাত ১২টার পরে স্লিপ দিয়ে দেব।”

জাতীয়

পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন কর্মচারী সংগঠনগুলোর নেতারা। তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কতটা বৃদ্ধি করা যায় তা বিবেচনা করবেন। কিন্তু রোববার ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণায় আমরা হতাশ হয়েছি। ঈদুল আজহার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব। প্রয়োজনে দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাব।

বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট একজন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছি। সরকার ৮ বছর পর আমাদের ৫ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেন, আট হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন যে কর্মচারী চাকরি করেন, তার বেতন বেড়েছে ৫শ টাকা। অথচ গ্যাস ও ঘর ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। ৮ বছর পর বেতন বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর এক শতাংশ করে হলেও কম করে ৮ শতাংশ বাড়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, যাদের মূল বেতন বেশি, তাদের বেতন আরও বেড়েছে। কিন্তু যাদের মূল বেতন কম তাদের বেতন তো সেই হারে বাড়েনি। সরকারি হিসাবেই যেখানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ। সেখানে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কোনো মানে হয় না। আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ঈদুল আজহার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বক্তব্য সরকারের কাছে তুলে ধরব। দাবি আদায়ে সক্রিয় হব।

সরকারি কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এক ধরনের তামাশা। এতে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যদি মুজিববর্ষে কিংবা স্বাধীনতার রজতজয়ন্ত্রী উপলক্ষ্যে কোনো আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করত, সেটি হতো প্রণোদনা।

কিন্তু ৫ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচনি প্রচারের জন্য এটা একটা কৌশল মাত্র। এখন সরকার বলবে আমরা কর্মচারীর বেতন ৫ শতাংশ বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরা প্রণোদনা চাই না। আমরা বাঁচতে চাই। বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়াতে হবে। আমাদের হাত-পা বাঁধা, প্রতিবাদ করতে পারি না। তারপরও কর্মচারীদের দাবি আদায়ে যে সব সংগঠন কাজ করছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আলাপ-আলোচনার করে দাবি আদায়ে পদক্ষেপ নেব।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, জুন ক্লোজিং এবং ঈদুল আজহার ছুটির কারণে আমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনি। ঈদুল আজহার পর কালেক্টরিয়েট কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি এবং বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতি মিটিং করে সরকারের কাছে যৌথভাবে দাবি পেশ করব। এরপর দাবি আদায়ে সচেষ্ট হব।

এদিকে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব আবু আলম মো. শহিদ খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৮০ ভাগ কর্মচারী নিম্ন শ্রেণির। তারা মারাত্বক আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুবিধা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয়

নির্বাচিত হলে দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা-১৭ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ দৃশ্যমান এবং তার সুফল আমরা ভোগ করছি। নৌকা উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক। ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকার মাঝি হিসেবে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন।

আগামী উপ-নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে ঢাকা-১৭ আসনের সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি নির্বাচিত হলে দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করব, যোগ করেন আরাফাত।

সোমবার (২৬ জুন) রাজধানীর এরশাদ স্কুল মাঠে (কড়াইল) এক নির্বাচনী জনসভার তিনি এ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত ভাষানটেক ও কড়াইল মাঠে পৃথক দুটি নির্বাচনী সভা করেন এদিন। একই সঙ্গে পাশের এলাকায় জনসংযোগ করেন।

এর মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন।

তিনি বলেন, এ আসনে বিভিন্ন কারণে সুষম উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ থেকে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন, এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। আমি কথা দিচ্ছি, আমি আপনাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে আগামী দিনগুলোতে আমার সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব। আমি আপনাদেরই লোক।

তিনি আরও বলেন, আমি শেখ হাসিনার দেওয়া দায়িত্বগুলো পালনের চেষ্টা করব। দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। এর আগে ফারুক সাহেব ছিলেন, তবে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় এ আসনের নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। কথা দিচ্ছি, আপনারা যদি আমাকে সমর্থন দেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ যদি পাই, তবে আপনাদের অসুবিধাগুলো আমার সাধ্যমতো সমাধানের চেষ্টা করব। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, গোটা বিশ্বকে আমরা ঢাকা -১৭ আসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়। আমাকে ভোট দেন বা না দেন, দলমত নির্বিশেষে আমি সবার সেবা করে যাব।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুসহ অনেকে।

জাতীয়

অর্থ পাচার মামলার আসামি ও প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বুধবার (২১ জুন) মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ ।

এরপর তার নামে থাকা অর্থ পাচার মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে আসামিকে তুলে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর সময় আবুল কাশেমকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ আসামিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ২৫ জুন শুনানির তারিখ ধার্য্য করেন। একই সঙ্গে আসামি আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। আদালত তার রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সিআইডির হাতে আবুল কাশেমের নামে থাকা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন অর্থ পাচারের এক মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদারসহ চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ওই চারজনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেমও একজন।

আরও জানা যায়, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অপর দুই আসামি হলেন- আলেশা মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী এবং আলেশা মার্টকে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মো. আল মামুন।

গত ২১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পাশাপাশি তাদের সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর আলম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আবুল কাশেম গ্রেপ্তার হলেও অন্য আসামিরা এখনো পলাতক।

জাতীয়

রাজধানীর ডেমরায় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার ডেমরা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, জঙ্গি সংগঠন পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, এন্ড্রোয়েট মোবাইল ফোন ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডেমরা থানায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে আনা হয়।

ডেমরার ধার্মিকপাড়া এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমরা থানার অপারেশন অফিসার (ইন্সপেক্টর) সুব্রত কুমার পোদ্দার।

এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

শামিন মাহফুজ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফারুক মোল্লা বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে মোস্ট ওয়ান্টেড শামিন মাহফুজ ও স্ত্রীকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিটিটিসি পুলিশের মামলা দায়েরের পর বাকি সব তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই আওয়ামী লীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতা বাহাসে জড়িয়েছেন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ঘটনার সূত্রপাত করার পর পর্যায়ক্রমে যুক্ত হন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন।

বৃহস্পতিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই তিন নেতা একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তৃতা করেন। বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাহাস চলার সময় একটু পরপর শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা সত্ত্বেও প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আওয়ামী লীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতার এই বাহাস চলে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে ইঙ্গিত করে শাজাহান খান বলেন, ‘আমি এলাকায় যেতে পারি না। বক্তৃতা দিতেও পারি না কোনো সভা-সমাবেশে। কিন্তু আমার বাপ-দাদা, চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ করতেন। আমার বাবা মাদারীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। জবাব দেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

শাজাহান খানের কাছে তিনি জানতে চান, আপনার বাবা আওয়ামী লীগ ছিলেন ভালো কথা, আপনি কী ছিলেন? জাসদ করতেন। আপনি তো অনেক মানুষ হত্যা করেছেন। যারা মানুষ হত্যাকারী তাদের কবর জিয়ারত আপনি করতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে যান না! আর মাদারীপুরে না গেলে আপনাকে কী জোর করে ধরে সভা-সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হবে?

জবাবে শাজাহান খান বলেন, বাহাউদ্দিন নাছিম যা বলছেন তার ৯৮ ভাগই মিথ্যা। এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। তখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি

শেখ হাসিনা বলেন, শাজাহান খান জাসদ করলেও দুর্দিনে তার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি বিভিন্ন প্রতিকূল সময়ে ছুটে এসে সহযোগিতা করেছেন। দলের প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের বাকশাল যখন সুসংগঠিত তখন তিনি (শেখ হাসিনা) মাদারীপুরে ঢুকতে পারছিলেন না। ওই সময় শাজাহান খান আওয়ামী লীগকে পেছন থেকে সহযোগিতা করতেন বলেও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, আমি চেয়েছিলাম শাজাহান খান জাসদে থেকে আমাকে সহযোগিতা করুন। কিন্তু তোমরাই (নাছিম) তো তাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে এলে। তাকে (শাজাহান খান) দলে নেওয়ার জন্য চাপও দিয়েছিলে।

সিনিয়র দুই নেতারা বাহাসে যুক্ত হন কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মাদারীপুরে উনি বড় বড় কথা বলেন। বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ গিয়ে নেত্রী আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি (শাজাহান খান) কোনো কথা বলেন না। তাকে (শামাকে) বাধা দেন না।’

আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব বিষয় নিয়ে আর কথা না বলার নির্দেশ দিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন। তবে মাদারীপুরের স্থানীয় কেন্দ্রীয় এই তিন নেতার বাহাস ওই সময় বন্ধ হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আরও বেশ কিছু সময় দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় কথা বলেছেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

কয়েকজন এমপির অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নেতারা। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী।

তিনি জানান, তার জেলায় ত্যাগী ও পুরোনো নেতারা কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন। তখন শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেন, যাদের টাকা নেই তাদের কমিটিতে রাখবে না-এটা তো হতে পারে না। নতুনদের সঙ্গে পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদেরও কমিটিতে রাখতে হবে।

দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়াও তৃণমূলের কোন্দল নিয়ে কথা বলেন কোনো কোনো নেতা। তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এমপি প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা তার আপন ভাই শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলীয় সাবেক এমপি চয়ন ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, এলাকার যেসব নেতার সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে তাদের কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন চয়ন ইসলাম। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা তার নির্বাচনি এলাকার দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ওই সংসদ সদস্য একটি থানা কমিটি বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক তার সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপনের সময় জানান, দলের এক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে মন্দির ভাঙার অভিযোগ রয়েছে। তখন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, কে সে? জবাবে বিএম মোজাম্মেল হক জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দলের বৈঠক শুরু হয়। তার সূচনা বক্তৃতার পর বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বৈঠকের ফাঁকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

নেতাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে ভোটযুদ্ধ (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন)। নির্বাচনি এই যুদ্ধকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরাশক্তি আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। জনগণের সমর্থন নিয়েই জিতে আসতে হবে। যারা এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করবেন, দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এর আগে সূচনা বক্তৃতায় তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেন। এই নির্বাচনগুলো সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ হতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারে না।

যেসব দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচনগুলো দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোট প্রদান করেছেন। কিন্তু বিএনপি শাসনামলে উপনির্বাচনে ভোট দিতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। কারণ তারা তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ভোট লুট করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কানাডার একটি আদালতে যে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে, সেই বিএনপি এখন আওয়ামী লীগকে ভোটচোর বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দরকার নেই। কারণ তার দল আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে জনগণের ভোট পায় এবং এভাবে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে।

পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দলকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দেন। দলীয় কোন্দল যাতে আর বাড়তে না পারে সেজন্য নতুন করে সংগঠনের কোনো সম্মেলন বা কমিটি না করার জন্য বলেন তিনি। তবে যেসব জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা আছে, সেসবের সম্মেলন শেষ করতে হবে।

বৈঠকে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মেয়র নির্বাচিত করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, তার দল যখনই পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে, ষড়যন্ত্রের কারণেই হয়েছে। দেশের মানুষ যখনই ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও হয়েছিল।

বিপরীতে, জনগণ কখনোই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে ভোট দেয় না। কারণ তাদের জনগণের সেবা এবং উন্নতির জন্য কাজ করার কোনো আগ্রহই নেই। বরং বড় ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছানোর কাজেই ব্যস্ত ছিল। খুনি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল বিএনপির বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশবাসীকে খুনি ও সন্ত্রাসীদের দল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তারা জনগণের কল্যাণ চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন যা জনগণের পক্ষে কথা বলে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে।

কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রমুখ। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের দায়িত্বে থাকা বিভাগগুলোর সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।

জাতীয়

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে রাজনীতির টেবিলে চলছে তুমুল আলোচনা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমনিতেই রাজনীতির অন্দরমহল সরগরম।

পর্দার আড়ালে তৎপর কূটনীতিকরাও। এর মধ্যে নতুন উপাদান হিসাবে হাজির সেন্টমার্টিন। বিগত কয়েক দিনে জাতীয় সংসদে দ্বীপটি নিয়ে ‘মার্কিনিদের চক্রান্ত’ সম্পর্কে দফায় দফায় বক্তৃতা হয়েছে। এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে সেন্টমার্টিন নিয়ে বিদেশিদের আগ্রহের কথা বলার পর আলোচনার পালে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

সচেতন মহলসহ অনেকে এখন চোখ-কান খাড়া করে প্রকৃত সত্য জানার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পর্যবেক্ষক মহলের কারও কারও প্রশ্ন-তাহলে এই দ্বীপ কি এখন ক্ষমতায় থাকা না থাকার ‘ট্রাম্পকার্ড’? জনগণ জানতে চায়-এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে কার কথা সত্য-সরকারের, না যুক্তরাষ্ট্রের। বিষয়টির সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। ফলে পুরো বিষয় জনগণের সামনে সরকারের পরিষ্কার করা জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারণ করেননি, তবুও মার্কিন দূতাবাস এই ইস্যুতে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিনসহ বাংলাদেশের কোনো ভূখণ্ড দাবি করেনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশল।

সেন্টমার্টিন নিয়ে আলোচনা এবারই প্রথম নয়। আশির দশকেও এ বিষয়ে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছিল। তখন বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে একটি সামরিক ঘাঁটি করতে চায়। বিশ্বের আশিটির মতো দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আছে। ফলে সেন্টমার্টিনে তাদের প্রত্যাশিত ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কৌশলের অংশ।

বিশেষ করে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বলয়ের বিস্তার ঠেকাতে ভূ-রাজনীতির এমন কৌশল জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। ওই সময়ে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো মার্কিনবিরোধী স্লোগানে রাজপথ উত্তপ্ত করে। যদিও শেষ পর্যন্ত চাউর হয় যে, প্রবালসমৃদ্ধ সেন্টমার্টিনের মাটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি করার উপযুক্ত নয়। দ্বীপটির মাটি অত্যন্ত নরম। সামরিক ঘাঁটি করার জন্য মাটির নিচে যে পরিমাণ স্থাপনা করতে হয় তার জন্য ওই দ্বীপের নরম মার্টি অনুপযুক্ত।

আবার এমন কথাও আছে যে, আশির দশক থেকে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রযুক্তি সেন্টমার্টিনে ঘাঁটি করতে সক্ষম। তবে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নথি কিংবা প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেননি।

জাতিসংঘের সমুদ্র আইন ১৯৮২ অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হলেও সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নিজেদের অংশ দাবি করে মিয়ানমার তাদের মানচিত্রে দ্বীপটিকে অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেন্টমার্টিনে যুক্তরাষ্ট্র একটি মেরিন একাডেমি করতে চায় বলেও লোকমুখে কথা চলতে থাকে।

মেরিনরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে চৌকশ বাহিনী, যাদের ত্রিমাত্রিক দক্ষতা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা যায়নি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই এমন কথা বলেনি।

ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পেতে আগ্রহী-না এটা এখন একটা রাজনৈতিক চাল তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, সেন্টমার্টিন বিদেশিদের কাছে ইজারা দিলে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার জন্য দেশ বিক্রি করবেন না।

গত ১৪ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জাতীয় সংসদে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপটিকে পাওয়ার লক্ষ্যে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এজন্য তারা রেজিম চেঞ্জ (সরকার হটানো) চায়।

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়।

মেনন বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায়। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে। এরপর জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও একই সুরে কথা বলেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী নিজে বলার পর বিষয়টির গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে আসা বক্তব্যগুলো হুজুগে মন্তব্য। আমাদের আশপাশে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ রয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিনে তাদের ঘাঁটি করার প্রয়োজন নেই। এ ধরনের আবেগী মন্তব্য না করাই ভালো।

জানতে চাইলে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বৃহস্পতিবার বলেন, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে সেন্টমার্টিনের লোকেশন ভারত মহাসাগরের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। বলা হয়ে থাকে, ভারত মহাসাগর যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তারা গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত মহাসাগরের একেবারে কেন্দ্রে আছে ভারত, পাশে চীন এবং দূরবর্তী অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ভারত মহাসাগরের বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সেন্টমার্টিনে সামরিক ঘাঁটি করতে চাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তিনি অবশ্য এটা বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্টমার্টিন চেয়েছে কিনা কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে চাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দিয়েছে কিনা, সেটা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে সরকার ভালো বলতে পারবে।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ বলেন, কোনো সার্বভৌম দেশের ভূখণ্ড কোনো দেশ ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে চাইতে পারে না। সেন্টমার্টিন কারও সম্পত্তি নয় যে, এটা আমরা কাউকে দিয়ে দেব। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ধরনের মন্তব্য অবান্তর ও অতিরঞ্জিত। সরকারের তরফে এ ধরনের মন্তব্য মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা। উচ্চমহল থেকে এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

সিকিউরিটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক রব মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন চেয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তবে পৃথিবীর দেশে দেশে দেশটির সামরিক ঘাঁটি আছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ঘাঁটি এ অঞ্চলে স্থাপন করতে চাইতে পারে। তবে সেন্টমার্টিনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি করা হলে তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ভূখণ্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ হিসাবে পরিচিত। ২৫০ বছর আগে আরব নাবিকেরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন জাজিরা। ব্রিটিশ শাসনের সময় প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি।

কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে ওঠে। এর ১০০ বছরের মধ্যে উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে ওঠে।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে সময়ে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তার পরও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে বর্মী রাজার যে যুদ্ধ হয়, তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এ দ্বীপের মালিকানাও ছিল অন্যতম। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন আট বর্গকিলোমিটারের মতো। এর সঙ্গে সংলগ্ন ছেড়া দ্বীপটি মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল থেকে দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। ভাটির সময় দুটি দ্বীপ এক হলেও জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।

জাতীয়

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

বুধবার (২১ জুন) রাত ৯টায় ১৯০টি কেন্দ্রের ভোটের ফলে তাকে বেসরকারিভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সাল কাদের।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ঘোষিত ফলে ১৯০টি কেন্দ্রে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ৬৫ হাজার ৫১৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।

কার কত ভোট

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট।

প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহ জাহান মিয়া (বাস) ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ১২ হাজার ৭৯৪ ভোট।

স্বতন্ত্র আব্দুল হানিফ কুটু (ঘোড়া) ৪ হাজার ২৯৬ ভোট।

মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট) ২ হাজার ৬৪৮ ভোট।

স্বতন্ত্র জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল) ৩ হাজার ৪০৫ ভোট।

তবে আগেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে ১৯০টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৪টি কক্ষে ভোট দেন ৪২টি ওয়ার্ডের ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার।

এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন ১৯০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৩৬৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২ হাজার ৭৩৪ জন পোলিং অফিসার।

কেন্দ্রগুলোতে স্থাপিত ১ হাজার ৭৪২টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ২ হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।