জাতীয়

আজ থেকে পুরোপুরি বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা সংকটে ২৫ মে এর একটি ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট ইউনিটও বন্ধ হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান মেলেনি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ডলার সংকটে বিদেশ থেকে কয়লা আনা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বাকিতে কয়লা এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা হয়েছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটির দেনা প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। এই বকেয়া পরিশোধ না করলে নতুন করে কয়লা আনা সম্ভব হবে না।

সূত্র জানায়, পায়রা-১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন অন্তত ১৩ হাজার টন কয়লা পোড়াতে হয়। যা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা হতো। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। বিগত দিনে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ৬ মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরও ৩ মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। এই বকেয়া ডলার সংকটের কারণে পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডলার সংকট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, জটিলতা কাটাতে ২৭ এপ্রিল বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সচিবকে চিঠি দিয়েছিল। এর আগেও সংশ্লিষ্টদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে তাগিদ দিয়েছিল বিসিপিসিএল। এসব চিঠি চালাচালি পর ৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপরও পায়রা বিদ্যুতের কাছে ৩৬ কোটি ডলার পাবে সিএমসি। বড় অঙ্কের এই অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত পায়রা তাপবিদ্যুৎকে বাকিতে কয়লা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমসি।

এ প্রসঙ্গে বিসিপিসিএলের একজন প্রকৌশলী জানান, পায়রা থেকে দৈনিক গড়ে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পেত দেশের মানুষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ খোরশেদুল আলম ২৯ মে বলেছিলেন, কয়লা সংকটের কারণে ৩ জুন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, শুধু পায়রা নয়, জ্বালানি সংকটে দেশের একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। মূলত ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। এ সংকট কাটাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা সঠিক পরিকল্পনায় চললেও প্রাথমিক জ্বালানির ধারাবাহিক সরবরাহ চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশের বাহির থেকে বিদ্যুৎ আনা হবে। এছাড়াও বিকল্প বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, যে কারো টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) থাকলেই রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং রিটার্ন দাখিল করলেই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সংসদে বাজেট উত্থাপনকালে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে- এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’

এদিকে রীতি অনুযায়ী আজ (শুক্রবার) ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ন্যূনতম করের বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। অর্থমন্ত্রী তখন এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে উত্তর দিতে বলেন।

তখন এনবিআর চেয়ারম্যান ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি আগে রিকোয়েস্ট করব আপনাদের, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সিই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। আপনি যেটা বললেন, সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে কিনা, সাধারণ গরিব মানুষেরতো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।’

গত অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার প্রাপ্তিস্বীকার পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। সেবাগুলো হলো–

পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে;

ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার আবেদন করলে;

ব্যাংক জমার সুদ আয় থেকে উৎস কর কর্তনে টিআইএন সনদ থাকলে ১০ শতাংশ কাটা হয়ে থাকে। না থাকলে ১৫ শতাংশ কাটা হয়। এখন থেকে টিআইএনের পরিবর্ততে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে;

সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের পৌর এলাকা অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, বিক্রি, দলিল হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হলে;

যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে;

গাড়ি ক্রয়, মালিকানা পরিবর্তন: দুই বা তিন চাকা ছাড়া যেকোনো মোটরগাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে;

সিটি করপোরেশন বা জেলা সদর, পৌরসভায় সন্তান বা পোষ্যদের আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করাতে হলে;

দেশের যেকোনো স্থানে বাণিজ্যিক বা শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সংযোগ নিতে হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসা বাড়ির গ্যাসের সংযোগ নিতে বা আগের সংযোগ বজায় রাখতে হলে;

সিটি করপোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে;

জমি বা বাড়ি ভাড়া দিয়ে অনেকে আয় করে থাকেন। আয় যাই হোক না কেন, এই ধরনের আয়ের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা, করপোরেশন থেকে বেতন হিসাবে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা বেশি হলে;

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়ার সময়;

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অংশ বা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আয় মাসে ১৬ হাজার টাকার বেশি হলে;

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাইলে;

জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলায় কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে;

পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে হলে;

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হলে;

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ হস্তান্তরে কমিশন, ফি জাতীয় অর্থ পেতে;

সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় কোনো সমিতি বা ক্লাব গঠিত হলে বা এ ধরনের ক্লাবের সদস্য হলে;

ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি ইত্যাদি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হলে বা সদস্য হতে চাইলে;

পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতে;

বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী হিসেবে লাইসেন্স পেতে চাইলে;

আমদানি-রপ্তানির সনদ পেতে চাইলে;

আমদানির এলসি খুলতে চাইলে;

কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার পদ পেতে হলে;

ব্যবসা বা বাণিজ্য সংগঠনের বা সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ;

বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে তালিকাভুক্তি বা নবায়ন করতে হলে;

বীমা বা সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন নিতে হলে;

অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার আবেদন করলে;

ওষুধ ব্যবসার জন্য ড্রাগ লাইসেন্স থাকলে বা করাতে চাইলে অগ্নিনিরাপত্তা লাইসেন্স,

পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স পেতে চাইলে;

লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, কার্গো, বার্জ ইত্যাদি নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেটের জন্য;

ইটভাটার অনুমোদন নিতে হলে পরিবহণ সেবার ব্যবসা করলে;

কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টশিপ চাইলে;

পণ্য সরবরাহের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডার জমা দিতে হলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দিতে হবে;

এনজিও বা মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থার জন্য বিদেশি অনুদানের ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জাতীয়

দিনভর অবরুদ্ধ থাকার পর অবশেষে রাতে পদত্যাগ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) রুটিন দায়িত্বের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।

রোববার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে রুয়েটের অর্ধশতাধিক শিক্ষক তাদের পদোন্নতির দাবিতে রুটিন দায়িত্বের ভিসি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে অবরুদ্ধ করেন। ভিসির কার্যালয়ে শিক্ষকেরা মেঝেতে বসে ছিলেন দীর্ঘ সময়। দিনভরই চলছিল আলোচনা। কিন্তু রুটিন দায়িত্বের ভিসি হিসেবে পদোন্নতি দিতে না পারার কারণ বোঝাতে ব্যর্থ হলে রাতে তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরই দপ্তর ছেড়ে চলে যান ড. সাজ্জাদ হোসেন। রাত ৯টার পর রুয়েটের প্রশাসনিক ভবন ছিল সুনসান নীরবতা। এর কিছুক্ষণ আগেও এখানে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল।

রাতে পদত্যাগের বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন ড. সাজ্জাদ হোসেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি রুটিন দায়িত্বে ভিসি নিযুক্ত হয়েছিলাম। আমরা পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু যারা আন্দোলন করছিলেন, তারা এটা বুঝতে চাননি। তারা মনে করছিলেন যে, আমি থাকার কারণে নিয়মিত ভিসিও নিয়োগ হচ্ছে না। তাই আমি পদত্যাগ করি, এটা তাঁরা চাচ্ছিলেন। এ কারণে আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘পদত্যাগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিমকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবেন।’

গত বছরের ৩০ জুলাই আগের ভিসির মেয়াদ শেষ হলে রুয়েটের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক এই পদ শূন্য হয়ে যায়। এরপর ১০ মাস থেকে রুটিন দায়িত্বের অতিরিক্ত ভিসির দায়িত্ব পালন করছিলেন অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, ১১ মাস ধরে ক্যাম্পাসে ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ ছাড়া সব শর্ত পূরণ করেও গত ১৫ মাসে অন্তত ৮০ জন শিক্ষক তাদের ন্যায্য পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সকালে অর্ধশতাধিক শিক্ষক পদোন্নতির দাবিতে শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতার সঙ্গে শিক্ষকেরা ভিসির দপ্তরে প্রবেশ করেন। এ সময় রুটিন দায়িত্বের ভিসিকে পদোন্নতির বিষয়টি বললে তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই বলে জানান। এরপর থেকে থেকেই শিক্ষকেরা ড. সাজ্জাদের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি তাকে তার দপ্তর থেকে বের হতে দিচ্ছিলেন না।

জাতীয়

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ।

আজ এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, চাকরির বয়সের সীমা ৩৫ বছর করা এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, পৃথিবীর ১৬২টি দেশে চাকরির আবেদনের সময়সীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত। বয়সই বড় কথা নয়  যোগ্যতাই বড় কথা। এই সময়সীমা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। লেখাপড়া শেষ করতেই ২৮ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়, কত কষ্টে লেখাপড়া করে চাকরি না পেয়ে ৩০ বছর চলে যাওয়ার পর মনের দুঃখে হতাশ হয়ে সার্টিফিকেট জালিয়ে ফেলে দেয় যা অত্যান্ত দুঃখের এবং আমাদের অন্তরাত্মাকে স্পর্শ করে।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, এই সরকারের আমলে শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার হার বেড়েছে। ছেলে মেয়েদের চাকরি হয়েছে কিন্তু বেকারত্ব আরো হু হু করে বেড়ে চলেছে। এই বেকারত্ব দূর করতে হলে শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক ধারায় শিক্ষিত করলে চলবে না।

কারিগরী শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা কোর্স দিয়ে শিক্ষিত করলে হবে না।

কারিগরী শিক্ষার জন্য উচ্চতর শিক্ষারদ্বার উন্মোচন করতে হবে। প্রতিটি সরকারী বেসরকারী কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে অবিলম্বে কারিগরি শিক্ষার বিষয়গুলো চালু করা হোক।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বিবেচনা করা যায়না। কারণ একটি বিসিএস পরীক্ষায় মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার ছেলে-মেয়েদের চাকরি হয়। দেশে বেকার যুবকদের সংখ্যা আছে ২৬ লক্ষের উপরে।তাদের কথা বিবেচনা করে তাদেরকে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয়

আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পদবঞ্চিত নরসিংদী জেলা ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় হামলা করেন বলে মামলার বরাতে জানায় পুলিশ।

নরসিংদীতে ছাত্রদলের একাংশের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলিতে দুই নেতা-কর্মী হত্যার মামলায় বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাকে আসামি করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের দুদিনের মাথায় শুক্রবার রাতে নিহত ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন বলে জানান নরসিংদী সদর মডেল থানার এসআই অভিজিৎ চৌধুরী।

মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহসচিব ও নরসিংদী জেলার আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আরও ৩০-৪০ জনকে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার রাতেই পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের নাম-পরিচয় জানাননি এসআই।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চিনিশপুরস্থ জেলা বিএনপি কার্যালয় এলাকায় পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। এতে দুই ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পুলিশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে নরসিংদী শহরের অস্থায়ী কার্যালয়ের কাছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) ও আশরাফুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হন।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদেকুর রহমান সাদেক মারা যান। শুক্রবার সকালে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফুল ইসলাম।

গত ২৬ জানুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি, মাইনুদ্দিন ভুইয়াকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের (আংশিক) জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন পদ না পাওয়া সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে খায়রুল কবীর খোকনের চিনিশপুরের বাসভবনে একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটে।

জাতীয়

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন- আইনের এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত বলেন, জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করেছে। ইউএনওদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে কোনো জবাবদিহিতা না রেখেই এ সংশোধনী করা হয়েছে। তাই এ বিধান বাতিল যোগ্য।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ রায় প্রকাশ করেন। ২৪ পৃষ্ঠার এ রায়ের অনুলিপি শনিবার গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার বিধান বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণার কারণ উল্লে­খ করে চার দফা পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

১. উপজেলা পরিষদ হলো উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর ২৪ ধারার অধীনে গঠিত/প্রতিষ্ঠিত, সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদসহ ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত একটি স্থানীয় সরকার।

২. সংসদ উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৮ এর ৩৩ ধারা জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ না করে প্রশাসনকে (ইউএনওদের) দিয়েছে, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক। অতএব উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা (যা ২০১১ সালের আইন নং ২১ অনুযায়ী সংশোধিত) সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাতিলযোগ্য। উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ এর ৩৩ ধারায় (ক) বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন। (খ) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।]

৩. সরকারি তহবিল দিয়ে অর্থায়নকৃত উন্নয়ন উদ্যোগ ইউএনওদের নেতৃত্বে এবং তাদের সভাপতিত্বে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটি বাস্তবায়ন করবেন।

৪. উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ২৬ ধারা লঙ্ঘন করে উপজেলা পরিষদের জায়গায় ইউএনও কর্তৃক তাদের চিঠিপত্রে উপজেলা প্রশাসন পরিভাষাটির ব্যবহার করা হয়েছে। এতদ্বারা বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই তা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এর কোনো আইনি প্রভাব নেই।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন- আইনের এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের ফলে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর ইউএনওদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব থাকল না বলে জানান আইনজীবীরা।

এদিকে গত ৫ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনওর দায়িত্ব পালনের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত এ রায় স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারায় ২০১১ সালে সংশোধনী আনা হয়। উপজেলা পরিষদ আইনের সংশোধিত ৩৩ (১) উপধারা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন। ৩৩ (২) উপধারায় পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিকশৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন বলে উল্লেখ আছে।

সংশোধিত ৩৩ ধারা সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লে­খ করে ২০২০ সালে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি পৃথক রিট করেন।

জাতীয়

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ খারাপ কাজ করলে, চাঁদাবাজি করলে তাকে বেঁধে রাখবেন। আর কেউ ভালো কাজ করলে তাকে সহায়তা করবেন।

শুক্রবার উপজেলার মালঘর সৈয়দবাড়ি জামে মসজিদে জুমার নামাজে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে আমি আমার নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন মসজিদে প্রতি সপ্তাহে জুমার নামাজ আদায় করতাম। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন এই ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে দেশে থাকাবস্থায় আবারো আমার নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন মসজিদে উপস্থিত হওয়ায় চেষ্টা করি।

মন্ত্রী আরও বলেন, যেকোনো সময় মৃত্যু চলে আসতে পারে। তাই সবসময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সগীর আহমেদ আজাদ, হাইলধর ইউপি চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন, হাইলধর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম, সম্পাদক মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

জাতীয়

সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেও অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নানা কারণে ৪০ লাখ মানুষের এই নগরীর বাসিন্দা এবং দেশবাসী বহুদিন মনে রাখবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে-নির্বাচনে একটি ভিন্ন মডেল দেখেছে দেশবাসী। নৌকার ব্যাজ পরে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন টেবিল ঘড়ি মার্কায়।

গাজীপুরের নির্বাচনে নিশ্চিত সহিংসতার আশঙ্কা করেছিল নগরবাসী। কিন্তু ভোটের দিন পরিবেশ ছিল অনেকটাই শান্তিপূর্ণ। অন্যান্য নির্বাচনের মতো কেন্দ্র দখল, মারামারি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কারচুরি, আগের রাতে ভোটে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আশঙ্কা ছিল ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু তেমনটি চোখে পড়েনি। তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের প্রভাব বিস্তারের নিরন্তর চেষ্টা ছিল। ভোট শেষে রাতে ভোটের ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাঁকফোকর খোঁজার প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু নেৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, দৃঢ়তা, উপস্থিত বুদ্ধি ও জনগণের সজাগ দৃষ্টির কাছে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ভোটের পরদিন নগরজুড়ে আলোচনা একটাই। কোথাও টেবিল ঘড়ি মার্কার পোস্টার নেই, ব্যানার নেই, কর্মীরা প্রকাশ্যে নেই, কেন্দ্রে এজেন্ট পর্যন্তও নেই, কিন্তু ভোটের অভাব নেই। সঠিক ভোট গণনা হলে জায়েদা খাতুন আরও অনেক ভোটের ব্যবধানে জিততেন বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীর আলম সমর্থকরা।

নগরবাসী বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম উন্নয়নের সঙ্গে ভোটাররা বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু হয় না। জনগণের পালস বুঝে প্রার্থী মনোনয়ন না দিলে ফল এমনই হয়।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গাজীপুর সিটির ভোটাররা দলীয় রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আড়াই বছরে জাহাঙ্গীর আলম রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর যে উন্নয়ন করেছেন, পরিকল্পিত নগরী গড়ার যে স্বপ্ন ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছিলেন সেটি ছিল এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অভাবনীয়। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরকে বরখাস্ত করার পর সেই উন্নয়ন একেবারেই থেমে যায়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজের যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নগরবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন দিতে পারেননি। যে কারণে জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিষয়টি নগরবাসীর কাছে গেৌন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত মানুষগুলো ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটানোর জন্য ভোটের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে যায়। এটি নগরবাসীর ভালোভাবে নেয়নি। পরবর্তীতে মায়ের প্রচারে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন জাহাঙ্গীর। যেটি ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ে আরও নিয়ামক ভূমিকা রাখে।

জায়েদা খাতুন ভোটের ফল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার ছেলের প্রতি যে অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন হয়েছে ভোটাররা ব্যালটে তার জবাব দিয়েছেন। এই অঞ্চলের ভোটাররা বর্ষীয়ান ও আপাদমস্তক এই গৃহিনীকে ভোট দেয়নি, ভোট দিয়েছে তার ছায়াসঙ্গী ছেলে জাহাঙ্গীরকেই।
গাজীপুরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে যেটি বোঝা গেছে সেটি হচ্ছে—মোটাদাগে ৭টি কারণে জায়েদা খাতুনের কাছে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পরাজয় হয়েছে।

প্রথমত: জাহাঙ্গীরকে গাজীপুরের রাজনীতি থেকে নির্মূল করার চেষ্টা। প্রতীক পাওয়ার আগে ও পরে যেখানেই গেছেন সেখানেই বাধার মুখে পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ক্ষমতাসীন দলের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। যেটি ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরের পক্ষে গেছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বহু কর্মী-সমর্থকও অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকে নিজ দলের কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসনের লোকজন অনেকের বাড়িতে বাড়িতেও অভিযান চালিয়ে হয়রানি করেছে। জাহাঙ্গীর ও তার কর্মী সমর্থকদের রাজনীতি থেকে নির্মূল করার চেষ্টা ব্যালটে জবাব দিয়েছেন ভোটাররা।

দ্বিতীয়ত: রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নে আস্থা। নগরবাসী গত কয়েক বছর ধরে দেখেছে জাহাঙ্গীরের প্রতিপক্ষরা উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যে, সেবা ও উন্নয়ন সেটি তারা ভুলে গেছেন। জাহাঙ্গীর মেয়র হওয়ার পর রাত বিরাত ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্পে ছুটে গেছেন; যেগুলো ভোটাররা ভুলতে পারেননি। এ কারণে নগরবাসী উন্নয়নের ব্যক্তিকে আবারও বেছে নিয়েছেন। বাহ্যত জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হলেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন যে আগামী দিনে চলবে তার ছেলের পরিকল্পনায় সেটি নগরবাসী বুঝেছে।

তৃতীয়ত: ভুল প্রার্থী বাছাই। ভোটাররা মনে করে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করেছে। জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক পরিপক্কতার ঘাটতি থাকলেও উন্নয়নের জন্য তার বিকল্প নেই। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করে, আওয়ামী লীগের উচিত ছিল এবারও জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া।

অপরদিকে নেৌকার মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লাহ খান রাজনৈতিকভাবে পরীক্ষিত ও পোড় খাওয়া হলেও ভোটের রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই বেমানান। বিশেষ করে বর্তমানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া কম। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে আজমতের যে বিচরণ ও যোগাযোগ থাকার কথা সেটি ছিল না। এ কারণে ভোটারদের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে ছিল আগে থেকেই। আজমতের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার চেয়ে উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীরকেই ভোটাররা বেছে নিয়েছে।

চতুর্থত: আওয়ামী লীগে বিভক্তি। গাজীপুরে আওয়ামী লীগে বিভক্তি এখন চরমে। এখানে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। মহানগর ও জেলায় দলের চেয়ে মন্ত্রী ও এমপি কেন্দ্রিক ব্যক্তির রাজনীতিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে রাজনৈতিক দলাদলি বাড়ছে। নিজ দলেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বহু পোড় খাওয়া নেতা। প্রতিপক্ষের দাপটে আওয়ামী লীগ করেও দলীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন না বহু নেতা।

এখানকার মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত; উন্নয়ন তাদের কাছে গেৌন হয়ে পড়েছে। অনেক নেতা বহু বছর ধরে এমপি কিন্তু এলাকায় কাজ করেননি। এর বিপরীতে জাহাঙ্গীর আলম উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে চলছিলেন। জাহাঙ্গীরের উন্নয়ন ওই সব নেতাদের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছিল। যে কারণে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তাদের।
এবারের নির্বাচনে প্রায় সব সংসদীয় আসনের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধীতা করেও তাকে জনবিচ্ছিন্ন করতে পারেননি। তাকে ভোটের মাঠে আটকে রাখতে পারেননি।

পঞ্চমত: বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনূর ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও জনগণের আস্থা অতটা অর্জন করতে পারেননি। এ কারণে বিএনপি ও তাদের শরিকদের ভোটও জায়েদা খাতুনের পক্ষে গেছে। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম মেয়র থাকা অবস্থায় বিএনপিসহ সব দল-মতের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। বিরোধী দলের কেউ সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে অংশ নিতেন, কেউ মারা গেলে জানাজায় ছুটে যেতেন—তার এসব কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠে জায়েদা খাতুনকে এগিয়ে রেখেছে।

ষষ্ঠত: আজমত বনাম জাহাঙ্গীর। এটি সবার কাছে স্পষ্ট যে, গাজীপুরে দলীয় নেতা কিংবা ব্যক্তি হিসেবেও আজমত উল্লা খানের চেয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ভোট বেশি। নানা ঘটনায় এটি বোঝা যায় যে তার জনসম্পৃক্ততাও বেশি। বিশেষ করে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এবং জাহাঙ্গীর আলম নিজেও একজন গার্মেন্ট রিলেটেড ব্যবসায়ী বলে পোশাক শ্রমিকদের অধিকাংশই তাকে ভোট দেন। এটি গাজীপুরের একটি বিরাট ভোট ব্যাংক। ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও যখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন, সেখানেও জাহাঙ্গীর আলম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। ওই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন এবং ভোটগ্রহণের বেশ কয়েকদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পান। তার মানে ভোঠের মাঠে থাকলে হয়তো তিনি ওই নির্বাচনেও জয়ী হতেন। এরপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর।

সপ্তমত: জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই ভোটের মাঠে জায়েদাকে বিজয়ী করেছে। দুদফা বহিষ্কার থেকে মনোনয়ন বঞ্চনা সবগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করে ভোটাররা মনে করেছেন, জাহাঙ্গীরের প্রতি অবিচার হয়েছে। তিনি যতটা না ভুল করেছেন তার চেয়ে বেশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন। তাকে দমিয়ে রাখতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা একজোট ছিলেন। এসবই তার প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি এনে দেয়।

এছাড়া জাহাঙ্গীর নির্বাচনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন সবক্ষেত্রে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করে মা জায়েদা খাতুনকে প্রথমে ডামি প্রার্থী করেন। জাহাঙ্গীর ভোটারদের পালস ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। তার উন্নয়ন যে ভোটাররা মনে রাখবে সেটি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই মাকে ছায়াপ্রার্থী করেন। যে পরিকল্পনা তাকে সফলতা এনে দেয়।

জাতীয়

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। নির্বাচিত হলে নগরবাসীর আগামী ৫ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছেন জায়েদা।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাসভবনে ইশতেহার ঘোষণা করেন জায়েদা খাতুনের প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। শারীরিক অসুস্থ থাকায় এসময় তিনি পাশে বসে ছিলেন।

লিখিত ইশতেহারে জায়েদা খাতুন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাষ্টার প্লান অনুযায়ী তার সব অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নায়ন করব।

তার ইশতেহারের ৯ দফাগুলো হচ্ছে, প্রথম দফায় রাস্তাঘাট ড্রেনেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ বাড়ি ঘরের আগামী ৫ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। তৃতীয় দফায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চতুর্থ সড়ক বাতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন, শিক্ষা ও বিনোদন, শ্রমিক কল্যাণ মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন জায়েদা বলে উল্লেখ করেন।

জায়েদা খাতুন ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করছি। আমি নির্বাচিত হলে গাজীপুরকে একটি আধুনিক স্মার্ট ক্লিন এবং গ্রিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।

জাতীয়

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পদ না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে বেতন বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, পরিচালক (উন্নয়ন) ও পরিচালক (কারিগর)—এই দুটি পদ ওয়াসার অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির এমডি প্রভাব খাটিয়ে দুজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। আর চার বছরের বেশি সময় ধরে তাদের বেতন বাবদ এক কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮০ টাকা দেওয়া হয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ হওয়ায় এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়মের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কর্মকর্তা দাখিল করেছেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। সব ঠিক থাকলে মামলার সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, যে দুজনকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন— পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেম ও পরিচালক (কারিগর) একেএম সহিদ উদ্দিন। ঢাকা ওয়াসার ২৫২তম সভায় এ দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নিয়োগের পক্ষে যারা মত দিয়েছেন, তারা হলেন— অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. মাহমুদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী একেএম হামিদ, ডিএনসিসির কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ডিএসসিসির কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক এবং ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এমডিসহ সাতজন সদস্য এবং চাকরি গ্রহণকারী দুজন মিলিয়ে মোট ১০ জনকে মামলায় আসামি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক সূত্রমতে, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এর পর একাধিকবার সময় বাড়িয়ে ওই পদে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বারবার নিয়োগবিধি অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া ওয়াসার এমডিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সংস্থাটির পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই অনুসন্ধান করছেন।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমি এক টাকাও হারাম খাইনি।

আর পদে থাকার বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন— ঢাকা ওয়াসার এমডি পদের চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছি বহুবার। আমাকে অনুরোধ করে রাখা হয়েছে।