জাতীয়

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসাবে নিয়োগ ও দায়িত্ব প্রদান ছাড়া দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত সচিব পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন করপোরেশনের শূন্য পদে চলতি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালায় এ কথা বলা হয়েছে।

তবে সচিব বিদেশে অবস্থান বা অন্য কোনো কারণে সাময়িক সময়ের জন্য সচিবের দৈনন্দিন বা জরুরি সরকারি কার্যাদি সম্পাদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী তার নিজের পদবি ব্যবহার করবেন। নিজের পদবির সঙ্গে সচিবের রুটিন দায়িত্ব শব্দসমূহ যোগ করতে পারবেন।

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চলতি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের এ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হলে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে। নিয়োগবিধি তৈরিতে বিলম্ব হলে এবং পদটি দীর্ঘদিন খালি রাখা সমীচীন না হলে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে। পদোন্নতি দিতে গিয়ে দেখা গেছে পদোন্নতি যোগ্য কোনো কর্মচারী নেই এমন পরিস্থিতিতেও চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে। এ ছাড়া কোনো একটি পদে জনবল নিয়োগের ওপর আদালত যদি স্থগিতাদেশ বা নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন তাহলে ওই পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে।

নীতিমালায় চলতি দায়িত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়, সাময়িকভাবে কোনো কর্মচারীকে তার মূল পদের পরবর্তী উচ্চতর কোনো প্রকৃত শূন্যপদে দায়িত্ব প্রদানকে চলতি দায়িত্ব বোঝাবে। যে তারিখ থেকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হবে ওই তারিখ উল্লে­খ করে অফিস আদেশ জারি করতে হবে। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী তার পূর্বের পদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলতি দায়িত্বের পদে যোগদান করবেন। চলতি দায়িত্বের মেয়াদ হবে ৬ মাস। এর বেশি সময় কাউকে চলতি দায়িত্ব প্রদানের দরকার হলে ৬ মাস শেষ হওয়ার আগেই পদোন্নতি কমিটি বা বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে।

সন্তোষজনক সার্ভিস রেকর্ড না থাকলে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। নব নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী চাকরিতে স্থায়ী না হলে এবং শিক্ষানবিশকাল পূর্ণ না হলে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তবে বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালায় উলি­খিত ফিডার পদধারীদের মধ্যে থেকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে। কোনো কর্মচারীর নামে বিভাগীয় বা ফৌজদারি মামলা থাকলে তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। নবসৃষ্ট সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তবে পদোন্নতিযোগ্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বা প্রকল্পে কর্মরত কর্মচারীকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) আওতাধীন পদগুলোতে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সচিব অথবা সিনিয়র সচিবকে সভাপতি, জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের একজন করে যুগ্মসচিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ থাকতে হবে। এছাড়া আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের যে সব পদে সরকার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে সে সব পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

জারি করা নীতিমালায় অতিরিক্ত দায়িত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়, অতিরিক্ত দায়িত্ব বলতে সাময়িকভাবে কোনো কর্মচারীকে তার মূল পদের অথবা গ্রেডের অথবা সমপদ বা সমগ্রেডের কিংবা ক্ষেত্রমত নিচের পদে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত অন্য কোনো শূন্য পদের দায়িত্ব দেওয়া।

অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের বেশকিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাময়িকভাবে শূন্যপদে সমপদধারীদের মধ্য থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রকল্প থেকে আসা কোনো কর্মচারী রাজস্ব বাজেটে নিয়মিত না হলে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অথবা প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। কোনো কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত হলে তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

পদবি ব্যবহার বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়- মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংযুক্ত দপ্তর, অধস্তন অফিস, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রধানের চলতি দায়িত্ব পালনকালে কর্মচারী তার পদবির সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত শব্দ যোগ করে ব্যবহার করবেন।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংযুক্ত দপ্তর, অধস্তন অফিস, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান ব্যতীত অন্য কোনো পদে দায়িত্ব পালনকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী উচ্চতর পদবি ব্যবহার করবেন। উচ্চতর পদবির সঙ্গে চলতি দায়িত্ব শব্দগুলো যোগ করতে হবে।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংযুক্ত দপ্তর, অধস্তন অফিস, স্বায়ত্তশাসিত, অধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং বিভিন্ন করপোরেশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারী তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পদবি ব্যবহার করবেন এবং পদবির সঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্ব শব্দদ্বয় যোগ করতে হবে।

তবে নিচের পদের অতিরিক্ত দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী তার মূল পদের পদবি ব্যবহার করবেন।

প্রশাসনে রদবদল

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার দপ্তর বদল করা হয়েছে। অপরদিকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উলি­খিত নিয়োগ ও রদবদলের পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জারি করা আদেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য ড. এসএম নজরুল ইসলামকে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগদানের তারিখ থেকে তার এ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে। এ ছাড়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফারুকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

অপরদিকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের পরিচালক কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে সদস্য হিসেবে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে, ঢাকা সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার কাজী মোহাম্মদ হাসানকে মহাপরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মো. খুরশীদ আলম পাটোয়ারীকে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প-১ এ বদলি করা হয়েছে।

বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমানকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সুব্রত ভৌমিককে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহমদকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে, জাতীয় চিত্রশালা এবং জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের সম্প্রসারণ ও সমাপ্তকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক দেব দুলাল ভট্টাচার্যকে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

এ ছাড়া সিএমডিতে দায়িত্বপালনের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব মো. আরাফাত রহমানকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) একান্ত সচিব এবং জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত উপসচিব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয়

কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলার থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া দশজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। রোববার রাতে নিহতদের আত্মীয় স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন।

নিহতরা সবাই মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে ট্রলারের মালিক সামশুল আলমও রয়েছেন।

তিনি মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে। তবে এখনো লাশগুলো হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের আত্মীয়দের দেয়া তথ্যমতে নিহতরা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫),সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮)।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ (কোল্ডস্টোর) থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। একটি লাশের গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল। আরেকটি লাশের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে।

এদিকে রহস্য এ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

ইতিমধ্যে পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।

এর আগে বিকাল ৩টার দিকে শহরের নাজিরারটেক এলাকা থেকে মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ডস্টোর থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা।

জাতীয়

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য মারা গেছেন। রোববার রাতে রাজধানীর পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

৮৩ বছর বয়সী পঙ্কজ ভট্টাচার্য শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত সোমবার তাকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল শনিবার সকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। রোববার রাত ১২টা ২৮ মিনিটে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয় বলে তার ভায়রা ডা. মানস বসু জানিয়েছেন।

১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য গত শতকের ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি ছিলেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে সম্মিলিত ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের আশা আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল আনীত এক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা আজ এ কথা বলেন।

গণপরিষদের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার আক্ষেপ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে কোনও প্রতিবাদ হয়নি। আমরা অঝোরে কেঁদেছি। আমাদের হাতে কিছুই ছিল না, কিছুই করতে পারি নাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের হাতিয়ার ছিল না, কিছুই ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি।’

তিনি বলেন, ‘জেনারেল ওসমানীকে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতো। তার উপরে সব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বীর উত্তম, বীর বিক্রম সবকিছু। সে যাকে পাইছে, তাকে খেতাব দিছে। এর কোনও হিসাব ছিল না।’

জেনারেল ওসমানী তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিতে মোশাররফ হোসেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘উনি (ওসমানী) আমাকে টেলিফোন করে আমি জনতা পার্টি করেছি, আপনি আমার দলে থাকবেন। আমি বললাম, কী বললেন? আমি তো দল করি। আমাকে জিজ্ঞেস করে কোন দল করেন? আমি বললাম, আওয়ামী লীগ করি। সে আমাকে বলে, আওয়ামী লীগ কি এখনও আছে?’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা শুধু একটা মানুষকে হত্যা করেনি, তারা একটি স্বাধীন সংসদকেই নয়, একটা জাতিকে হত্যা করেছিল। বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পদদলিত করেছিল। এসব ঘটনা চোখ মেলে দেখা দরকার, তা না হলে বার বার আমাদের হোঁচট খেতে হবে।’
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি ল’ কমিশন নাকি এ ধরনের একটি আইনের প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ আইনটিকে যাতে জাতিকে সেফ গার্ডে রাখার জন্য এ সংসদে পাস করা যায়, সে আহ্বান জানাবো।’

মন্ত্রী বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা নেই বলেই বিএনপি সুযোগ পেলেই দেশের গণতন্ত্র, সংসদ ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করে। দেশকে সংবিধান অনুযায়ী চলতে হলে, সংসদকে সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রূপান্তর এবং দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করতে হলে একটি আইন প্রণয়ন জরুরি।’

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, একটি রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ থাকে-নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং বিচার বিভাগ। জাতীয় সংসদ সেই আইন সভা। এই সংসদ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত। বঙ্গবন্ধু আমাদের শুধু স্বাধীনতা দেননি। স্বাধীনতার ১০ মাস ১৩ দিনের মধ্যে আমাদেরকে একটি সংবিধান দিয়েছিলেন। এই সংবিধানে তিনি জাতীয় সংসদকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে রেখেছেন। তিনি এই সংসদের মাধ্যমে ৩ বছর ৭ মাস ৫ দিন শুধু আইন প্রণয়ন করেই এই দেশের আইনের ভীত স্থাপন করে দেননি। সংসদের অধিবেশনের মাধ্যমে তিনি সংসদের রীতিনীতি, সংসদীয় প্র্যাকটিস এবং সংসদের মর্যাদা স্থাপন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আমরা দেখেছি সেই সংসদের অবজ্ঞা,অশ্রদ্ধা এবং অকার্যকর করার জন্য স্বৈরাচার সরকার যত রকম পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তাই নিয়েছে। এই সংসদেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাস হয়েছে। আবার এই সংসদেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। স্বৈরাচারী সরকার সংসদীয় রীতিনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আবার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। তিনি এই সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। সংসদীয় কমিটি গুলোকে কার্যকর করেছেন। এতে সংসদের নিকট সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের সকল কার্যক্রম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করছে।

কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই সংসদ আমাদের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এই সংসদকে বলা হয় ‘হাউস অব দ্য ন্যাশন’ অর্থাৎ সমগ্র জাতির ঠিকানা এই সংসদ। এই সংসদকে কার্যকর করতে জাতির পিতা তাঁর জীবনের সর্বস্ব দিয়ে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জন্য ছিলেন বিপজ্জনক, আর আমাদের জন্য ছিলেন আশির্বাদ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত করতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের আশা আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।

সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজকে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গঠনে কাজ করছে। বাংলাদেশকে তিনি এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের অনেক দেশ অনুকরণ করে।

মেহের আফরোজ বলেন, যে সংসদ জাতির পিতা দিয়ে গিয়েছিলেন খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেই সংসদকে কুলষিত করেছে।

বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণ করে সরকারি দলের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিনত হতো যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন। কারণ, তাঁর ৪৪ মাস শাসনামলে ৭০টির বেশি অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে যারা সরাসরি জড়িত, তারাই শুধু নয়, এই হত্যাকান্ডের পেছনে আরও অনেকে ছিল। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে যারা ছিল তাদেরকে খুঁজে বের করতে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। জাতির অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখতে জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সরকারি দলের সদস্য সরকারি দলের সদস্য ইকবালুর রহিম, শামীম ওসমান, সেলিম আলতাফ জর্জ, কাজী কেরামত আলী, সাইমুম সারওয়ার কমল, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, জাকিয়া তাবাসসুম, খান আহমেদ শুভ, শাহদাব আকবর, কাজী কানিজ ফাতেমা, বি এম কবিরুল হক, বেগম জাকিয়া পারভিন খানম, বেগম ফেরদৌসী ইসলাম ও বেগম মনিরা সুলতানা আলোচনায় অংশ নেন।

জাতীয়

প্রমত্তা পদ্মাকে বলা হয় দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী। শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্ররূপ ধারণ করে। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নদীর গতিপথে আঁকাবাঁকা স্থানে ভাঙন হয় প্রবল।

বর্ষায় উজান থেকে তীব্র গতিতে নেমে আসা ঢল নদীর বাঁকে আছড়ে পড়ে। ফলে নদীর তলদেশ গভীরতা সৃষ্টি করে বাঁকসংলগ্ন তীরে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এভাবেই পদ্মার পাড় বিস্তৃত হয়।

এরসঙ্গে যোগ হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৪১টি স্প্যানসহ ৪০টি পিলার। এগুলো স্থাপিত হওয়ায় আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে পদ্মা। এতে তীর ও চর ভাঙনের শঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে।

এরই মধ্যে ১৭টি পিলার সংলগ্ন এলাকায় চর জেগে উঠায় ভাঙন বাম তীরে প্রসারিত হতে পারে। পাশাপাশি ঘটেছে নদীর মরফোলজিক্যাল (রূপগত) পরিবর্তন। এতে প্রকল্পের মধ্যবর্তী বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এসব স্থানে ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে প্রকল্প এলাকাও ভাঙন কবলিত হয়ে পড়তে পারে। এরইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী এবং শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার অসংখ্য গ্রাম। ঝুঁকিতে আছে এসব এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং লৌহজং-টঙ্গীবাড়ী ও জাজিরা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাড়ে চারশ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কোনো কার্যকর ফল আসছে না। ২০ কোটি টাকা খরচের পর প্রকল্পের মনিটরিং সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সভায় কাজের নকশা পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান আইনুল হক। কারণ লৌহজং উপজেলার সামনে চ্যানেল তৈরি করা একটি চর হঠাৎ অপসারণ হয়ে মূল পদ্মায় মিশে গেছে।

সেখানে এখন ১২ থেকে ১৫ ফিট পানির গভীরতা। যে কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ পদ্মার বাম তীরের প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এখন চর অপসারণ হওয়ায় ১৮ কিলোমিটার এলাকাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অন্যদিকে জাজিরা এলাকাকে ভাঙনমুক্ত রাখতে ১১শ৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এবার বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ চিত্র দেখা যেতে পারে পদ্মার বাম তীর অর্থাৎ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এর কারণ হিসাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সেতুর ১৭টি পিলারসংলগ্ন এলাকায় চর জেগে উঠায় ভাঙন বাম তীরে প্রসারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এই বর্ষায় বিলীন হয়ে যাবে-এমন আশঙ্কায় বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। ভাঙনের তীব্রতা সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্তদের মন্তব্য, ‘এটা ভাঙন নয়, পদ্মা গিলে খাচ্ছে এলাকা।’ ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

আইডব্লিউএম’র (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) সমীক্ষা প্রতিবেদনেও পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রভাবে নদীর ডান ও বাম তীর ভয়াবহ ভাঙনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা পলিবাহী শক্তিশালী নদী। এই নদীতে ৪১টি স্প্যানসহ ৪০টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এরফলে নদীর তীর ও চর ভাঙন বেড়ে যেতে পারে। নদী ভাঙন ঠেকাতে উজান ও ভাটিতে নদী ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম রোববার বলেন, পদ্মা হচ্ছে সুইংয়িং রিভার (দোলায়মান নদী)। আমার রিপোর্টেও আছে। এই নদী ভাঙন কয়েক বছর এ পাড়ে কয়েক বছর থাকে ওই পাড়ে। আমার কাছে ৩০ বছরের স্যাটেলাইট ম্যাপ আছে। সেখানে দেখা যাবে কিভাবে দুই পাড়ে সুইং করেছে। এখন লৌহজংয়ে ভাঙবে আবার ওই পাড়ে ভাঙবে। সরকারকে এখন ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভাঙন হতেই থাকবে।

তিনি বলেন, ৪০টি পিলারের কারণে পদ্মায় একটি প্রভাব পড়তেই পারে। সরকার পদ্মা সেতু করেছে জনগণের সুবিধার জন্য। সুবিধা করতে গিয়ে অসুবিধা যাতে না হয় সেজন্যই তো ১৫০ মিটার স্প্যান দেওয়া হয়েছে। যমুনায় ছিল ১শ মিটার স্প্যান। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে যাতে ক্ষতিটা কম হয়।

তিনি বলেন, নদী শাসন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ১শ বছরের আগে না ভাঙে। কারণ পদ্মা সেতু একটি স্বপ্নের নাম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু এলাকায় আমাদের আড়াইশ মিটার জায়গা আছে। যখন প্রয়োজন হয় পিলার এলাকায় ড্রেজিং হয়, সেখানে ৫ থেকে ১০ হাজার সিএফটি বালি হয়। আমার একটি ড্রেজার বালি কাটলে ৫শ বাল্কহেড নিতে পারে। সেটা এখন বসে আছে। পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চর হয় আবার চর এমনিতেই অপসারণ হয়। শিবচরে বিশাল একটি এলাকায় চর ছিল। সেটি আর এখন নেই। যেখানে বিমানবন্দর করার কথা শুনেছিলাম। এখন সেখানে চরের কোনো অস্তিত্বই নেই। পদ্মার চরিত্রই এটা। এখন নদীটা ওইদিকে (লৌহজংয়ের দিকে) যাচ্ছে। সেখানে ছোট নদী ছিল। সেটা মূল পদ্মায় মিশে গেছে।’

তিনি বলেন, ড. আইনুন নিশাদ স্যার বলেছেন পদ্মাকে শাসন করা খুবই কঠিন। এই নদীকে ছোট করা যাবে না। আমরা নদীকে ছোট করিনি। আমরাও চাই নদী পুরোটাই থাকুক।

জানতে চাইলে পাউবোর তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক বলেন, পদ্মা সেতুর উজানে মূল পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষায় জন্য প্রতি মিটারে ১৮৭ ঘনমিটার ডাম্পিং ম্যাটেরিয়ালস ধরে তীর প্রতিরক্ষা কাজের ডিজাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়।

পদ্মা সেতুর আড়াই কিলোমিটার ডাউনে পদ্মা নদীর একটি শাখা চ্যানেলে (পদ্মা নামে পরিচিত) অবস্থিত ছিল। সে অনুযায়ী প্রতি মিটারে অবস্থানভেদে সর্বোচ্চ ৪৫ ঘনমিটার ডাম্পিং ম্যাটেরিয়ালস ধরে ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে মূল পদ্মা নদী ও শাখা চ্যানেলটির মধ্যবর্তী অংশের চরটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শাখা চ্যানেলটি মূল পদ্মায় রূপ নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমান ডিজাইন অনুসারে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করলে কাজটি টেকসই না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীর মরফোলজিক্যাল পরিবর্তনজনিত কারণে পাউবো প্রকল্পের মধ্যবর্তী বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উক্ত স্থানগুলোতে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রকল্প এলাকাও ভাঙন কবলিত হয়ে পড়বে।

অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের একটি প্রভাব পড়েছে জনবসতি এলাকায়। বিষয়টি আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় উত্থাপনও করেছি। সেতু কর্তৃপক্ষ নিজেরা মনিটরিং করার কথা জানিয়েছেন।

ভাঙনের তীব্রতা : অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ভাঙনে জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ও পালেরচর ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি, খলিফা কান্দি ও দুর্গারহাট গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ কিছু মসজিদ, মাদ্রাসা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পালেরচর ইউনিয়নের কাথুরিয়া মোহন ফকির কান্দি, ফরাজি কান্দি, দেওয়ান কান্দি, হুকুম আলী সরদার কান্দি, রাঢ়ি কান্দি এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন ঠেকাতে ১১শ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া লৌহজংয়ের পার্শ্ববর্তী টঙ্গীবাড়ী উপজেলার প্রায় ২৪টি গ্রাম বিলীন হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার। এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেনি প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রাসেদুজ্জামান বলেন, পদ্মায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা করা হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, উপজেলার হাসাইল-বানারী, পাঁচগাঁও, কামারখাড়া ও দিঘিরপাড় ইউনিয়নে প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের কবলে পড়ে এই চার ইউনিয়নে বিলীন হয়েছে ২৪টি গ্রাম।

গ্রামগুলো হলো-পাঁচন খোলা, বিধুয়াইল, বানারী, নোয়াদ্দা, নগর জোয়ার, বাঘের পাড়, বিদগাও, মান্দ্রা, আকিগাও, ষোলপড়ান, সাতক, মধ্য হাসাইল, ইসলামপুর পূর্ব হাসাইল, গারুগাওগ্রাম, চিত্রকরা, দশোত্তোর, বাঘবাড়ি, কান্দার বাড়ী, সরিষা বন, হাইয়ারপাড়, দিঘিরপাড় ও চৌষার।

আর এসব গ্রামে অবস্থিত হাসাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পূর্ব হাসাইল জামে মসজিদ, ইসলামপুর জামে মসজিদ, চৌষার জামে মসজিদ, গারুগাও জামে মসজিদ, হাইয়ারপাড় জামে মসজিদ, সরিষা বন জামে মসজিদ, পাঁচনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্দির পদ্মায় ডুবে গেছে। আর ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে-হাসইল বাজার, বানারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দাতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘিরপাড় বাজার, কামারখাড়া বাজার নদীর পাড়ের ৮শ পরিবার। শনিবার (১ এগ্রিল) পদ্মা নদীর পাড়ের দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা শাহিন বেপারী জানান, প্রতিবছরই পদ্মায় গিলে খাচ্ছে শত শত পরিবারকে। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন দেখা দিলে লোক দেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু কেউ এ ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয় না।

আরও জানা গেছে, হুমকির মুখে আছে লৌহজং সরকারি কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, একটি চক্ষু হাসপাতাল, দুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লৌহজং উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, বেশ কয়েকটি মসজিদ, মাদ্রাসা, কয়েকটি বাজার, খেলার মাঠ ও ফসলি জমি। এ পর্যন্ত ভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। অর্ধশত স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে লৌহজংয়ের কলমা ইউনিয়ন, গাঁওদিয়া ইউনিয়ন, বেজগাঁও ইউনিয়ন, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন, খিদির পাড়া ইউনিয়ন, কনকসার ইউনিয়ন, কুমারভোগ ইউনিয়ন, হলদিয়া ইউনিয়ন ও মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। বাকি এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই আবার শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন।

নিঃস্ব নড়িয়া এখন শান্ত : ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ভাঙনে নড়িয়া উপজেলায় নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার। সেই নড়িয়া এখন শান্ত। তীব্র ভাঙন আর সেখানে নেই। ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এখন নড়িয়া ভাঙনমুক্ত। তবে ভাঙনের চিত্র এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

এছাড়া নড়িয়া পৌর এলাকাসহ বাঁশতলা, কেদারপুর, সুরেশ্বর চন্ডিপুর, পাঁজগাও, চরআত্রা, নোয়াপাড়া, সাধুর বাজার, ওয়াপদা, মুলফতগঞ্জ বাজার ও চর নড়িয়াসহ আরও অনেক এলাকার বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে চলে যায়। মুলফতগঞ্জ ছিল একটি প্রাচীন বাজার।

এই বাজারসহ তিনটি বাজার বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে তিনশরও বেশি দোকানপাট নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি সরকারি বিদ্যালয় ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন তলা ভবন, গাড়ির গ্যারেজ, মসজিদ, মন্দির, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা ও ফসলি জমিও নদীতে বিলীন। শুধু নড়িয়ার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ওই সময় ৮০টি পাকা ভবনসহ নদীর পেটে গেছে প্রায় সাতশ একার ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে প্রায় আড়াই বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীতে চলে গেছে।

গতি নেই বাম তীর প্রকল্পে : পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলমান। কিন্তু এখানে কাজের বাস্তবায়ন হতাশাজনক। এক বছরে এই কাজের অগ্রগতি মাত্র ৯ দশমিক ৭১ ভাগ। তবে প্রকল্পের অগ্রবর্তী প্রতিবেদনে অর্থ বরাদ্দের চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি (৪ দশমিক ৫৯ ভাগ) দেখানো হয়েছে। অথচ অসময়ে ভাঙনের তীব্রতায় পদ্মার তীরবর্তী লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদকাল ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে সুরক্ষিত করতে প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ, আধা কিলোমিটারেরও বেশি বিদ্যমান নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজের পুনর্বাসন এবং এক কিলোমিটারেরও বেশি চর অপসারণের জন্য নদী ড্রেজিংয়ের (৫.৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি) সংস্থান রাখা হয়েছে।

অপ্রতুল বরাদ্দ : ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ’ কাজের ধীরগতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেন কর্মকর্তারা। ২২ মার্চ এ বিষয়ে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর-৪ এর মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরেন প্রকল্পটির পরিচালক দেওয়ান আইনুল হক। ওই সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, প্রকল্পের অগ্রবর্তী প্রতিবেদনে চলমান কাজের বিলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রকল্পের অনুকূলে ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের বিপরীতে কাজই হয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার। ডিপিপি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩১৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সংস্থান ছিল। এরপর মূল এডিপিতে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করে অর্থবছরের শুরুতে প্রকল্পটি ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়।

ফলে প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মতিক্রমে ২০২২ সালের অক্টোবরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ পুনর্বিন্যাস করা হয়। পরে আলোচ্য প্রকল্পের অনুকূলে ছাড়যোগ্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থছাড় অনিশ্চিত হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি কম।

অগ্রবর্তী প্রতিবেদনে প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগ জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকাকে ভাঙন হতে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করা হলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।

সরেজমিন জানা গেছে, পদ্মার ভাঙন বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে আসায় লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের মো. কুতুব মোল্লা, মো. হোসেন মোল্লা, মো. মামুন মোল্লা, মো. মানিক মিয়া ও মো. পারভেজসহ অনেকেই ঘরে তালা লাগিয়ে পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সাগর খান বলেন, নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে লোকজন ঢাকা, টঙ্গী ও গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করছেন।

এবার বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে লৌহজং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেপারি বলেন, বিশেষ করে পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালি উত্তোলনের ২ মাসের একটি চুক্তি ছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ অতিক্রম হওয়ার পরও অপরিকল্পিতভাবে মাসের পর মাস বালি তোলা হচ্ছে।

এ কারণে বর্ষা শুরু হওয়ার আগে নদীর বাম তীরে এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন তিনি। জাকির হোসেন বেপারির অভিযোগ-চাঁদপুরের বালিখেকো ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের পুরো সিন্ডিকেট পদ্মার এই প্রান্তে অবৈধভাবে বালি তুলে ব্যবসা করছে। এরা এখন গোটা লৌহজং উপজেলাকে নদী ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড বোঝাই করে প্রশাসনের সামনে দিয়েই চলে যাচ্ছে। অথচ অবৈধ বালি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

বালি উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদীশাসন কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লি.র সঙ্গে অধিগ্রহণ করা সীমানায় বালি উত্তোলনের চুক্তি হয়। এতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বালি উত্তোলনের চুক্তির সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রমের পরও নির্বিঘ্নে চলছে বালি উত্তোলন।

তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, সিনোহাইড্রো করপোরেশনের পক্ষে বালি অপসারণ করছে সাব-ঠিকাদার খোকন কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি.।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুল ইসলাম খোকন বলেন, এখন কারা বালি তুলছে বা বাল্কহেড দিয়ে অপসারণ করছে তা আমি জানি না। আমি পদ্মায় এখন বালির বস্তা ডাম্পিং করছি।

তিনি বলেন, কিছু দিন আগে কোস্ট গার্ড অবৈধ বালি উত্তোলনের অভিযোগে অভিযান চালায়। এ সময় ড্রেজারসহ আটক করা হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কাগজ জাল করার বিষয়টি জানতে পারি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, নকশা পরিবর্তন করা হলে চলমান কাজের ব্যয় কোনো কাজে আসবে না এমন নয়। নকশায় নীল দাগ খচিত স্থানগুলো অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে প্রকল্পের সফলতা আসবে না।

তিনি বলেন, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভাঙন নিয়ে পত্র দিয়েছেন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘লৌহজং উপজেলার স্থায়ী বাঁধবহির্ভূত ভাঙন কবলিত অংশগুলো বিদ্যমান ডিপিপি সংশোধন করে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে এই উপজেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এরপর পাউবোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিদায়ি প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কারিগরি কমিটির সদস্যদের নিয়ে এলাকা পরিদর্শনে যান। ওই সময় লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বংশাল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তিন আসামিকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ তিন আসামির প্রত্যেককে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন— মো. রাজু, শাওন ও শাহাদাৎ হোসেন।

এদিন বিকালে বংশাল থানা পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মাসুদুল হাসান আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।

এর আগে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করে বংশাল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করে।

ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন জানান, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনির্বাপণের সময় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর ও সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের দিন পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে।

অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের সময় কাজে বাধা, সদস্যদের ওপর হামলা ও সদর দপ্তরে ভাঙচুরের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আলাদা মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয়

কুমিল্লায় জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক মুদ্রা এবং মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। বুধবার রাতে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ঘোড়ামারা এলাকার হাবিব মোটরস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্টিলের ট্রাংকের ভেতর থেকে ডলারসহ এক কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সাতটি পাসপোর্টসহ জাল টাকাও জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান। গ্রেফতার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৪) জেলার লালমাই উপজেলার জয়নগর গ্রামের মো. মুকছুদ আলীর ছেলে।

পুলিশ সুপার জানান, বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিব মোটরস থেকে মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ওই সময় তার দেহ তল্লাশি করে পকেট থেকে সাতটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং ২০ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে সে মানবপাচার এবং বাংলাদেশি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর তার বাড়িতে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে বলেও তথ্য দেয় সে।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে একটি স্টিলের ট্রাংকের ভেতর রক্ষিত এক কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১০০ টাকা এবং পাঁচ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মানব ও মুদ্রাপাচার করে এই টাকা জমিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন ওই ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, ওসি ডিবি রাজেশ বড়ুয়াসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাশকতার কোনো ঘটনা থাকলে তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি মামুন বলেন, ভোরে আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আমরা ছুটে আসি। পৌনে ৭টার মধ্যে সব সিনিয়র অফিসার ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। রাজারবাগ থেকে পাঁচটি ওয়াটার ক্যানন নিয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় দুই লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি। পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি আরও বলেন, ভোর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করেন। তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন। র‌্যাব-বিজিবিসহ তিন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ঠিক রেখেছি। এর কারণে এত বড় ঘটনার পরও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল ছিল।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা প্রসঙ্গে পুলিশপ্রধান বলেন, হামলার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গেছি। জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। ঈদের আগে এ ধরনের ঘটনাকে তারা খুবই দুঃখজনক বলে জানান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তারা।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাহায্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

জাতীয়

আরেক স্বপ্নজয়। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সফলভাবে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টা ১৯ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনটি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সফলভাবে পদ্মা সেতু অতিক্রম করায় দুইপাশে উৎসব বিরাজ করছে। পদ্মার এপারওপার রেলপথ যুক্ত হওয়ায় উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।

মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ সবার মাঝেই উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। স্বপ্নযাত্রায় ট্রেনটিকে পথে পথে অভ্যর্থনা জানান সাধারণ মানুষ। স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু সফলভাবে অতিক্রম করে ভাঙা থেকে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাওয়ায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২ ঘন্টা।

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় আতশবাজির ঝলকানিতে এক বিশেষ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাঙালির মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইনে লাল সবুজের ৭ বগির ট্রেনটি বীরের মত এগুচ্ছিল। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সেতু অতিক্রম আয়োজন ঘিরে এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। চারিদিকে উচ্ছ্বাস। ট্রেনটি দেখতে মাওয়া স্টেশনের আশপাশে মানুষ ভিড় জমায়। ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর সড়ক পথ চালুর পর বছর পেরুনোর আগেই প্রস্তুত এখন বহুমুখী এই সেতুর রেলপথও।

ট্রায়াল রান শেষে মাওয়া রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সেপ্টেম্বরে ঢাকা-ভাঙ্গা পথে রেল চলবে। তাই নতুন রেল পথের জন্য চীন থেকে ১শ’ কোচ আনা হচ্ছে। ৪৫ টি পৌঁছে গেছে, বাকি ৫৫টি শিঘ্রই আসবে। আজকে মূলত ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলে করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানি স¤পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ূন কবির প্রমুখ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, আজকে আমরা রেলে চড়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছি, এতে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন করেন তার পর থেকে আমরা কাজটা শুরু করার জন্য একটা প্রেশারে ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুলাই আমরা ব্রিজটা হাতে পাই।
তিনি বলেন, গত ২৯ মার্চ আমরা এই কাজটি সম্পন্ন করেছি। এতে আমাদের সেনাবাহিনী, রেলওয়ে এবং সিএসসি যারা ছিল সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। দেশের প্রথম পাথরবিহীন এই রেললাইন দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে। রেল এখন বিশেষ উচ্চতায়।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ট্রেন পরিচালনা করবো। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল পরিচালনা করবো। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি কমলাপুর থেকে মাওয়া অংশের কাজ আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের কাজ জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করাতে পারবো। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পুরো রেল সংযোগ প্রকল্পে যাত্রীবাহী রেল চলবে আগামী বছরের জুনে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক ।

জাতীয়

ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এ হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

সোমবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাব বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, এর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করেছে।

সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।

সিপিডি আরও বলেছে, ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতন–ভাতা বাড়ানো যেতে পারে।

এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

কয়েক মাস ধরেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেলের পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিমের দামও বেশ চড়া। সবশেষ বাজারদর অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এলাকাভেদে ১ ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাছ-মাংসের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাবারের পাত থেকে মাছ-মাংস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সিপিডি আরও যেসব সুপারিশ করেছে
পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ৭ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করবে না সরকার, আগামী বাজেটে এই সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

সিপিডি বলছে, এ ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার–সংকট, আর্থিক খাতের ভারসাম্যহীনতা, রিজার্ভ হ্রাস- এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেট করতে হবে।

মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।