জাতীয়

সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেও অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নানা কারণে ৪০ লাখ মানুষের এই নগরীর বাসিন্দা এবং দেশবাসী বহুদিন মনে রাখবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে-নির্বাচনে একটি ভিন্ন মডেল দেখেছে দেশবাসী। নৌকার ব্যাজ পরে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন টেবিল ঘড়ি মার্কায়।

গাজীপুরের নির্বাচনে নিশ্চিত সহিংসতার আশঙ্কা করেছিল নগরবাসী। কিন্তু ভোটের দিন পরিবেশ ছিল অনেকটাই শান্তিপূর্ণ। অন্যান্য নির্বাচনের মতো কেন্দ্র দখল, মারামারি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কারচুরি, আগের রাতে ভোটে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আশঙ্কা ছিল ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু তেমনটি চোখে পড়েনি। তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের প্রভাব বিস্তারের নিরন্তর চেষ্টা ছিল। ভোট শেষে রাতে ভোটের ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাঁকফোকর খোঁজার প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু নেৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, দৃঢ়তা, উপস্থিত বুদ্ধি ও জনগণের সজাগ দৃষ্টির কাছে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ভোটের পরদিন নগরজুড়ে আলোচনা একটাই। কোথাও টেবিল ঘড়ি মার্কার পোস্টার নেই, ব্যানার নেই, কর্মীরা প্রকাশ্যে নেই, কেন্দ্রে এজেন্ট পর্যন্তও নেই, কিন্তু ভোটের অভাব নেই। সঠিক ভোট গণনা হলে জায়েদা খাতুন আরও অনেক ভোটের ব্যবধানে জিততেন বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীর আলম সমর্থকরা।

নগরবাসী বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম উন্নয়নের সঙ্গে ভোটাররা বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু হয় না। জনগণের পালস বুঝে প্রার্থী মনোনয়ন না দিলে ফল এমনই হয়।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গাজীপুর সিটির ভোটাররা দলীয় রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আড়াই বছরে জাহাঙ্গীর আলম রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর যে উন্নয়ন করেছেন, পরিকল্পিত নগরী গড়ার যে স্বপ্ন ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছিলেন সেটি ছিল এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অভাবনীয়। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরকে বরখাস্ত করার পর সেই উন্নয়ন একেবারেই থেমে যায়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজের যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নগরবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন দিতে পারেননি। যে কারণে জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিষয়টি নগরবাসীর কাছে গেৌন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত মানুষগুলো ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটানোর জন্য ভোটের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে যায়। এটি নগরবাসীর ভালোভাবে নেয়নি। পরবর্তীতে মায়ের প্রচারে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন জাহাঙ্গীর। যেটি ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ে আরও নিয়ামক ভূমিকা রাখে।

জায়েদা খাতুন ভোটের ফল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার ছেলের প্রতি যে অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন হয়েছে ভোটাররা ব্যালটে তার জবাব দিয়েছেন। এই অঞ্চলের ভোটাররা বর্ষীয়ান ও আপাদমস্তক এই গৃহিনীকে ভোট দেয়নি, ভোট দিয়েছে তার ছায়াসঙ্গী ছেলে জাহাঙ্গীরকেই।
গাজীপুরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে যেটি বোঝা গেছে সেটি হচ্ছে—মোটাদাগে ৭টি কারণে জায়েদা খাতুনের কাছে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পরাজয় হয়েছে।

প্রথমত: জাহাঙ্গীরকে গাজীপুরের রাজনীতি থেকে নির্মূল করার চেষ্টা। প্রতীক পাওয়ার আগে ও পরে যেখানেই গেছেন সেখানেই বাধার মুখে পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ক্ষমতাসীন দলের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। যেটি ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরের পক্ষে গেছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বহু কর্মী-সমর্থকও অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকে নিজ দলের কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসনের লোকজন অনেকের বাড়িতে বাড়িতেও অভিযান চালিয়ে হয়রানি করেছে। জাহাঙ্গীর ও তার কর্মী সমর্থকদের রাজনীতি থেকে নির্মূল করার চেষ্টা ব্যালটে জবাব দিয়েছেন ভোটাররা।

দ্বিতীয়ত: রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নে আস্থা। নগরবাসী গত কয়েক বছর ধরে দেখেছে জাহাঙ্গীরের প্রতিপক্ষরা উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যে, সেবা ও উন্নয়ন সেটি তারা ভুলে গেছেন। জাহাঙ্গীর মেয়র হওয়ার পর রাত বিরাত ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্পে ছুটে গেছেন; যেগুলো ভোটাররা ভুলতে পারেননি। এ কারণে নগরবাসী উন্নয়নের ব্যক্তিকে আবারও বেছে নিয়েছেন। বাহ্যত জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হলেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন যে আগামী দিনে চলবে তার ছেলের পরিকল্পনায় সেটি নগরবাসী বুঝেছে।

তৃতীয়ত: ভুল প্রার্থী বাছাই। ভোটাররা মনে করে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করেছে। জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক পরিপক্কতার ঘাটতি থাকলেও উন্নয়নের জন্য তার বিকল্প নেই। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করে, আওয়ামী লীগের উচিত ছিল এবারও জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া।

অপরদিকে নেৌকার মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লাহ খান রাজনৈতিকভাবে পরীক্ষিত ও পোড় খাওয়া হলেও ভোটের রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই বেমানান। বিশেষ করে বর্তমানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া কম। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে আজমতের যে বিচরণ ও যোগাযোগ থাকার কথা সেটি ছিল না। এ কারণে ভোটারদের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে ছিল আগে থেকেই। আজমতের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার চেয়ে উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীরকেই ভোটাররা বেছে নিয়েছে।

চতুর্থত: আওয়ামী লীগে বিভক্তি। গাজীপুরে আওয়ামী লীগে বিভক্তি এখন চরমে। এখানে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। মহানগর ও জেলায় দলের চেয়ে মন্ত্রী ও এমপি কেন্দ্রিক ব্যক্তির রাজনীতিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে রাজনৈতিক দলাদলি বাড়ছে। নিজ দলেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বহু পোড় খাওয়া নেতা। প্রতিপক্ষের দাপটে আওয়ামী লীগ করেও দলীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন না বহু নেতা।

এখানকার মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত; উন্নয়ন তাদের কাছে গেৌন হয়ে পড়েছে। অনেক নেতা বহু বছর ধরে এমপি কিন্তু এলাকায় কাজ করেননি। এর বিপরীতে জাহাঙ্গীর আলম উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে চলছিলেন। জাহাঙ্গীরের উন্নয়ন ওই সব নেতাদের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছিল। যে কারণে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তাদের।
এবারের নির্বাচনে প্রায় সব সংসদীয় আসনের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধীতা করেও তাকে জনবিচ্ছিন্ন করতে পারেননি। তাকে ভোটের মাঠে আটকে রাখতে পারেননি।

পঞ্চমত: বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনূর ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও জনগণের আস্থা অতটা অর্জন করতে পারেননি। এ কারণে বিএনপি ও তাদের শরিকদের ভোটও জায়েদা খাতুনের পক্ষে গেছে। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম মেয়র থাকা অবস্থায় বিএনপিসহ সব দল-মতের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। বিরোধী দলের কেউ সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে অংশ নিতেন, কেউ মারা গেলে জানাজায় ছুটে যেতেন—তার এসব কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠে জায়েদা খাতুনকে এগিয়ে রেখেছে।

ষষ্ঠত: আজমত বনাম জাহাঙ্গীর। এটি সবার কাছে স্পষ্ট যে, গাজীপুরে দলীয় নেতা কিংবা ব্যক্তি হিসেবেও আজমত উল্লা খানের চেয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ভোট বেশি। নানা ঘটনায় এটি বোঝা যায় যে তার জনসম্পৃক্ততাও বেশি। বিশেষ করে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এবং জাহাঙ্গীর আলম নিজেও একজন গার্মেন্ট রিলেটেড ব্যবসায়ী বলে পোশাক শ্রমিকদের অধিকাংশই তাকে ভোট দেন। এটি গাজীপুরের একটি বিরাট ভোট ব্যাংক। ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও যখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন, সেখানেও জাহাঙ্গীর আলম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। ওই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন এবং ভোটগ্রহণের বেশ কয়েকদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পান। তার মানে ভোঠের মাঠে থাকলে হয়তো তিনি ওই নির্বাচনেও জয়ী হতেন। এরপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর।

সপ্তমত: জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই ভোটের মাঠে জায়েদাকে বিজয়ী করেছে। দুদফা বহিষ্কার থেকে মনোনয়ন বঞ্চনা সবগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করে ভোটাররা মনে করেছেন, জাহাঙ্গীরের প্রতি অবিচার হয়েছে। তিনি যতটা না ভুল করেছেন তার চেয়ে বেশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন। তাকে দমিয়ে রাখতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা একজোট ছিলেন। এসবই তার প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি এনে দেয়।

এছাড়া জাহাঙ্গীর নির্বাচনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন সবক্ষেত্রে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করে মা জায়েদা খাতুনকে প্রথমে ডামি প্রার্থী করেন। জাহাঙ্গীর ভোটারদের পালস ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। তার উন্নয়ন যে ভোটাররা মনে রাখবে সেটি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই মাকে ছায়াপ্রার্থী করেন। যে পরিকল্পনা তাকে সফলতা এনে দেয়।

জাতীয়

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। নির্বাচিত হলে নগরবাসীর আগামী ৫ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছেন জায়েদা।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাসভবনে ইশতেহার ঘোষণা করেন জায়েদা খাতুনের প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। শারীরিক অসুস্থ থাকায় এসময় তিনি পাশে বসে ছিলেন।

লিখিত ইশতেহারে জায়েদা খাতুন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাষ্টার প্লান অনুযায়ী তার সব অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নায়ন করব।

তার ইশতেহারের ৯ দফাগুলো হচ্ছে, প্রথম দফায় রাস্তাঘাট ড্রেনেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ বাড়ি ঘরের আগামী ৫ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। তৃতীয় দফায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চতুর্থ সড়ক বাতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন, শিক্ষা ও বিনোদন, শ্রমিক কল্যাণ মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন জায়েদা বলে উল্লেখ করেন।

জায়েদা খাতুন ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করছি। আমি নির্বাচিত হলে গাজীপুরকে একটি আধুনিক স্মার্ট ক্লিন এবং গ্রিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।

জাতীয়

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পদ না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে বেতন বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, পরিচালক (উন্নয়ন) ও পরিচালক (কারিগর)—এই দুটি পদ ওয়াসার অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির এমডি প্রভাব খাটিয়ে দুজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। আর চার বছরের বেশি সময় ধরে তাদের বেতন বাবদ এক কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮০ টাকা দেওয়া হয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ হওয়ায় এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়মের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কর্মকর্তা দাখিল করেছেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। সব ঠিক থাকলে মামলার সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, যে দুজনকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন— পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেম ও পরিচালক (কারিগর) একেএম সহিদ উদ্দিন। ঢাকা ওয়াসার ২৫২তম সভায় এ দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নিয়োগের পক্ষে যারা মত দিয়েছেন, তারা হলেন— অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. মাহমুদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী একেএম হামিদ, ডিএনসিসির কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ডিএসসিসির কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক এবং ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এমডিসহ সাতজন সদস্য এবং চাকরি গ্রহণকারী দুজন মিলিয়ে মোট ১০ জনকে মামলায় আসামি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক সূত্রমতে, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এর পর একাধিকবার সময় বাড়িয়ে ওই পদে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বারবার নিয়োগবিধি অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া ওয়াসার এমডিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সংস্থাটির পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই অনুসন্ধান করছেন।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমি এক টাকাও হারাম খাইনি।

আর পদে থাকার বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন— ঢাকা ওয়াসার এমডি পদের চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছি বহুবার। আমাকে অনুরোধ করে রাখা হয়েছে।

জাতীয়

বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী সদরের সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু।

তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই।

সোমবার বিকালে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি দীর্ঘসময় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছে। আমরা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। দেশের সব রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষ মনে করেন গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর গণমানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্যই আমরা রাজপথে রয়েছি।

মিনু বলেন, কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আবু সাইদ চাঁদের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিদ্বেষ ও ক্ষোভ নেই। দলের পক্ষ থেকে বিশেষ করে রাজশাহীতে বিএনপির সিনিয়র নেতা হিসেবে আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন- সে কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। সরি বলছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে শুক্রবার রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুরে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ওই সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কবরস্থানে’ পাঠানোর হুমকি দেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ।

ওই দিন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করব ইনশাআল্লাহ।

জাতীয়

কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের বাড়তি দামে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে আদা-রসুনের দামও। তবে বাজারে এসব পণ্যের কোনো ধরনের সংকট নেই। তবুও মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায়। এছাড়া দ্বিগুণ দাম বেড়ে বাজারে আদার কেজি ৪০০ টাকা। ফলে বাজারে এসব পণ্য কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।

এদিকে রোজার ঈদের পর থেকেই কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ এই অজুহাতে মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে এই পণ্যের কোনো ধরনের সংকট নেই।

রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৩৫-৪০ টাকা ছিল। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা আগে ৪৫ টাকা ছিল।

নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. সিদ্দিক বলেন, কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে কোনো সংকট নেই। আমরা খুচরা বিক্রেতা বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। তবে ক্রেতার সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে ২৪০ টাকা ও দুই সপ্তাহ আগে ২২০ টাকা ছিল।

নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, ঝড় ও বৃষ্টির কারণে মরিচের খেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। যা এক মাস আগেও ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। যা আগে ২৫০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা এক মাস আগে ১২০ টাকা ছিল। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়, যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বাজারে পণ্য কিনতে এসে ক্রেতারা জানান, মূলত কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যারা মূল্য বৃদ্ধি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে আমাদের ক্রেতাদেরই ভোগান্তি হচ্ছে।

জাতীয়

প্রতি বছর ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সমগ্র দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় সাড়ম্বরে পালিত হয়। বছর ঘুরে দিবসটি যখন আমাদের জীবনে ফিরে আসে, তখন স্মৃতির পাতায় অনেক কথাই ভেসে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের গৌরবময় সুনাম ও অর্জনের এই বীজ রোপিত হয়েছিল সেদিন, যেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা-১৯৮১-এর ১৭ মে ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে-স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এ বছর শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বার্ষিকী।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলেছিল স্বৈরশাসকরা। সংবিধান স্থগিত করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। রাজনীতিকদের বেচাকেনার সামগ্রীতে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় মদতে দলভাঙার নীতি অবলম্বন করা হয়েছিল। জেনারেল জিয়া সদম্ভে ঘোষণা করেছিল— ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’ এবং ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ানস।’ জেল, জুলুম, হুলিয়া, গুম-খুন ইত্যাদি ছিল নিত্যকার ঘটনা। প্রতিদিন সান্ধ্য আইন জারি ছিল। চারদিকে গড়ে তোলা হয়েছিল এক সর্বব্যাপী ভয়ের সংস্কৃতি। ’৭৬-এর ১ আগস্ট স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া সীমিত পরিসরে ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ করার অনুমতি দেয়।

আমরা যারা জেলে ছিলাম এবং যারা জেলের বাইরে ছিলেন তারা দলকে সংগঠিত করেন। শ্রদ্ধেয় নেতা মহিউদ্দীন আহমদকে সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্যে ’৭৭-এর ৩ ও ৪ এপ্রিল মতিঝিলের হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়। মতবিরোধ নিরসন এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

এক বছর পর ’৭৮-এর ৩ থেকে ৫ মার্চ ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধাভাজন নেতা আবদুল মালেক উকিল সভাপতি, শ্রদ্ধেয় নেতা আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক ও কারান্তরালে থাকাবস্থায়ই আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। সেই দুর্দিনে দলকে সংগঠিত করতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। দুঃসময়ের সেই দিনগুলোতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

’৮১-এর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা জীবনপণ চেষ্টা করে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর দলের নেতৃত্বভার অর্পণ করেছিলাম। কাউন্সিলে অনেক আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ও দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমরা সাব্যস্ত করি মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্বপ্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের পতাকা তারই হাতে তুলে দেবো।

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। দলের শীর্ষ পদে তাকে নির্বাচিত করে আমরা ভারতের রাজধানী দিল্লি গিয়েছিলাম এবং তার সঙ্গে পরামর্শ করে আগমন দিনটি নির্ধারণ করেছিলাম। যেদিন তিনি ফিরে এলেন সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেছিল শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেই তারা ফিরে পেয়েছে। সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যার নাম প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। সেদিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের দৃশ্য চোখের সামনে ছবির মতো ভেসে ওঠে। আজ যা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। সেদিন মনে হয়েছে, আমরা আবার বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে, যে রক্তের কাছে আমরা ঋণী, যে ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না, সেই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে ঋণের বোঝা কিছুটা হয়তো হালকা করতে পেরেছি। সভানেত্রী হিসেবে তার নাম শুনে নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং বিপুল করতালির মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে।

শেখ হাসিনা সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবদুর রাজ্জাক এবং আমি পুনর্নির্বাচিত হই। কাউন্সিল অধিবেশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে তিনি একটি বার্তা প্রেরণ করে বলেছিলেন— ‘আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যান।’ বার্তাটি সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক সম্মেলনে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। দলের শীর্ষ পদ গ্রহণে তার সম্মতিসূচক মনোভাব সম্পর্কে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে আমি বলেছিলাম— ‘আমরা সবাই একটি সুসংবাদের অপেক্ষায় আছি।’ শেখ হাসিনা তার বার্তায় সর্বপ্রকার দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে ‘আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির’ মাধ্যমে কাউন্সিলর ও নেতাদের বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচি সোনার বাংলা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গণবিরোধী স্বৈরশাসকের ভিত্ কেঁপে উঠেছিল। ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার আগে জেনারেল জিয়ার নির্দেশে ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা।
১৭ মে এক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বৃষ্টিমুখর দিনে শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। যেদিন তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না, ছিল সর্বব্যাপী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ। সামরিক স্বৈরশাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বদেশে তিনি হয়ে ওঠেন আলোকবর্তিকা, তথা অন্ধকারের অমানিশা দূর করে আলোর পথযাত্রী।

ওই দিন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে সেই সময়ের ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিকাল সাড়ে ৪টায় এসে পৌঁছেন। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ তাকে সংবর্ধনা জানাতে সেদিন বিমানবন্দরে সমবেত হন। ওই সময় লাখো জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল— ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’; ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা  নেব’; ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’; ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’; ‘আদর্শের মৃত্যু নাই, হত্যাকারীর রেহাই নাই’। বিমান বন্দরে অবতরণের পর লাখ লাখ লোক তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছিল। সেদিন শুধু মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আমরা যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যাই রাস্তার দু’পাশে লাখ লাখ লোক। এমন দৃশ্য যা বর্ণনাতীত। মঞ্চে উঠে তিনি শুধু ক্রন্দন করলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হৃদয়ের আবেগ ঢেলে সেদিন বলেছিলেন— ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি।

শুধু নেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাই, আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী-সংসার-ছেলে রেখে আপনাদের কাছে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি।

বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালী জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা-বিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি। আপনাদের ভালোবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের সংগ্রাম শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা না পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের ভার সরকারের  কাছে নয়, আমি আপনাদের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (তখন একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল) হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দলের জন্য ১৮ বছর  কাছে থেকে কাজ করেছি। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাকে কাছ থেকে দেখেছি। আমার বারবার মনে হয়েছে যখন তার কাছে বসেছি, ক্যাবিনেট মিটিং বা সভা-সফর করেছি, তখন স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধুর কথা বারবার ভেসে উঠেছে। প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দলকে সংগঠিত করেছেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ তিনি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন।

আমি সেই মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। কাছে থেকে দেখেছি দৃঢ়তা ও সক্ষমতা নিয়ে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ‘ইনডেমনিটি বিল’ বাতিল করে সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করে জাতির জনকের হত্যার বিচারকার্য শুরু করেছিলেন। ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৮-এর নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কাজই সম্পন্ন করেননি, মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ক্ষেত্র গড়ে দিয়েছেন এবং যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত হলে আদালতের রায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ১৪ বছরের বেশি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।

২০১৩তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়, আর ২০১৪তে সরকার গঠনের পর বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়ে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। জাতির জনককে আমরা ১৫ আগস্ট হারিয়েছি। নিষ্পাপ শিশু রাসেলকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। জাতির জনকের দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যদি সেদিন দেশে থাকতেন, খুনিচক্র তাদেরও হত্যা করত। সেদিন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে শহিদের রক্তে গড়া আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়ে আমরা সঠিক কাজটিই করেছিলাম। ইতিহাস সৃষ্টি করে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। রক্তেভেজা সেই পতাকা হাতে তুলে নিয়ে দল ও দেশকে তিনি প্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নতি, জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার হার ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, সফলভাবে করোনা অতিমারী মোকাবিলা এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের যাবতীয় কৃতিত্বের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এত উন্নয়নমূলক কাজসম্পন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে যা এই ক্ষুদ্র লেখায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
২০০৮-এর নির্বাচনে ‘রূপকল্প’ তথা ‘ভিশন-২০২১’ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। রূপকল্পে ঘোষিত হয়েছিল বাংলাদেশ হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘মধ্যম আয়ের দেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন নয় বাস্তব।

ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। লকডাউনের কারণে আমাদের খাদ্যোৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য তিনি বারবার নির্দেশনা দিয়ে বলছেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।’ সুখের বিষয় বিগত বছরগুলোতে সারা দেশে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। যার সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন রকম বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে দেশের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। তবে আমি মনে করি এটি সাময়িক। ধৈর্যসহকারে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব। বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে কী আছে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে সুধী সমাজে আলোচনা হচ্ছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।” “আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।” সেই সঙ্গে তিনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর রূপরেখা ঘোষণা করে এর চারটি স্তম্ভের কথা বলেছেন, যেমন, (১) স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট; (৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট সোসাইটি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সফল বাস্তবায়নের পথ ধরেই এবারের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেছেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’ এসব কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে ‘স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।’ এ জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি, এ চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে উপরোক্ত  চারটি ভিত্তির কথা পুনরুল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের জনশক্তিকে স্মার্ট হতে হবে, প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখতে হবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে।” তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সবকিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষিসহ সবকিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হব।”

আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্দীপনামূলক যে দৃঢপ্রতিজ্ঞ মনোভাব নিয়ে উদয়াস্ত কাজ করছেন, তার নির্দেশিত নির্দেশমালা যদি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি, তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর কর্মসূচীও আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পরবো। আসলে তিনি তার পিতার মতোই অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেন এবং বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন; কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে চলেছেন।  সেদিন  বেশি দূরে নয়, যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। আমরা সেই পথেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছি। ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নপূরণ হবে। এটাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে আমাদের প্রত্যাশা।

তোফায়েল আহমেদ : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
[email protected]

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে হামলা ও ভাঙচুরর ঘটনায় বিএনপিপন্থি ১৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ২৫ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বুধবার রাতে বারের সহকারী সুপারিন্টেডেন্ট মো. রফিকউল্লাহ বাদী হয়ে শাহাবাগ থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় আসামি হিসেবে যাদের ‍নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. মহসিন রশিদ, এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমুখ।

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে এ ঘটনা ঘটছে। দু’পক্ষই বলছে, তাদের কয়েকজন আইনজীবী সহকর্মী আহত হয়েছেন।

জাতীয়

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি ও এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনাসহ আট প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, টিসিবির জন্য ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট মেট্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর (স্থানীয় এজেন্ট: মার্ক লাইন এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা) চিনি সরবরাহ করবে।

পাশাপাশি ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এসব তেল সরবরাহ করবে এইচএইচ এন্টারপ্রাইজ।

১৪৮ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকার সয়াবিন তেল এবং ৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার চিনি কেনা হবে। প্রতি কেজি চিনি ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৪৬ টাকা ১০ পয়সা দামে কেনা হচ্ছে।

জাতীয়

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রতীক পেয়েই ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মা জায়েদা খাতুন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় তাজউদ্দীন অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে তার পছন্দের প্রতীক বরাদ্দের (টেবিল ঘড়ি) চিঠি বুঝে নেন। পরে তিনি বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীদের মুখোমুখি হন।

এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর কাছে মেয়র পদে (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে নিজের জন্য একটি ভোট চাচ্ছি এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় তার সমর্থনে অডিটোরিয়ামের বাহিরে শত শত কর্মী-সমর্থক ঘড়ি ঘড়ি বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তিনি ওখানে কিছুক্ষণ থেকে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ঠেলে তার নিজ বাড়ি পার্শ্ববর্তী কানাইয়া গ্রামের দিকে চলে যান।

এ সময় সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গেই ছিলেন এবং তিনি সবাইকে তার হয়ে মায়ের জন্য (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে গত তিন বছরে নগরবাসীর জন্য তার নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন এবং কতিপয় ব্যক্তির দ্বারা তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার বলে দাবি করেন।

মঙ্গলবার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সকাল ৯টায় প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝে তাদের পছন্দের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। মেয়র পদে দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিক প্রার্থীর একই প্রতীক দাবি থাকলে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের দলীয় প্রতীক নৌকা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন দলীয় প্রতীক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন (হাতপাখা), জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (রনি সরকার) বরাদ্দ পেয়েছেন (হাতি) প্রতীক।

মেয়র পদে আটজনসহ ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত আসনে মোট ৩২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এতে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৭৭ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ২৩৯ জন।

জাতীয়

বিতর্কিত দুই ব্যক্তিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজিয়ে পুলিশ প্রটোকল দেওয়ার ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে অবশেষে সুনামগঞ্জ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন মঙ্গলবার এক আদেশে তাকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করেন।

পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদদককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জনস্বার্থে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। উল্লেখিত কর্মকর্তা সংযুক্ত কর্মস্থলে যোগদানে নিমিত্ত ২ মে (মঙ্গলবার) বর্তমান কর্মস্থলের দয়িত্বভার অর্পন করবেন। অন্যথায় ৩ মে (বুধবার) থেকে তাৎক্ষনিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হিসেবে গণ্য হবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জে দায়িত্বরত পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যা তুলে ধরা হয়েছে তার চেয়েও বেশি তথ্যউপাত্ত ছিল তদন্ত প্রতিবেদনে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয় বেশ কয়েকদিন আগে।

এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল সিলেট সফরে আসেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। এ সময় সাংবাদিকরা রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চান।

এ সময় আইজিপি নিয়মানুযায়ী রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন।

এ সময় তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাকে শস্তির আওতায় আনা হবে।

আইজিপি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এমন অপকর্ম করে ছাড় পাওয়া যাবে না। শুধু রিপন কুমার মোদক নয় পুলিশে অপকর্ম করে কেউই ছাড় পাবে না। কেউ অন্যায় করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘পুলিশ প্রটোকল দিলেন অ্যাডিশনাল এসপি, ‘সোর্সকে সাজালেন বিশেষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপরই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে কমিটি করে সিলেটের তৎকালীন রেঞ্জ ডিআইজি।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার সময়ই র‌্যাবের অভিযানে তার দুই বন্ধু ভুয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে ডলার নাহিদ ও বিজন রায়কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ডলার নাহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে ঘটনা আদ্যপান্ত তুলে ধরেন। এ সময় রিপন কুমার মোদকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করা হয়।