ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের রেকর্ড বৃষ্টি চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায়; মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ৩৫ লাখ মানুষ।
সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল কাগজীর টিনশেড বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকালে পানি ঢুকতে শুরু করে। পানি বাড়তে বাড়তে রাতে কোমর পর্যন্ত উঠে গেলে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন এক প্রতিবেশীর দোতলায়।
ইকবাল বললেন, “বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলে কল যায় না। বিভীষিকার মধ্যে আছি। মানুষের আশ্রয় দরকার, খাবার দরকার।”
পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাতে পুরো সুনামগঞ্জ জেলাসহ ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎহীন। সেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখনও খোলা থাকলেও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রানওয়ের কাছে পানি চলে আসায় সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের জন্য।
বন্যার কারণে রোববার থেকে নির্ধারিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সারা দেশে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ।
তবে সুনামগঞ্জ শহরের মানুষ বলছে, খাবারের চেয়েও এখন জরুরি হল আশ্রয়, কারণ পুরো শহরে একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই।
বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন শুক্রবার বিকালে বলেন, “নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমত কাজ করছে না মোবাইল। উদ্ধার যানের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”
শুক্রবার বিকাল ৩টায় সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জের তিন পয়েন্টে বইছিল বিপৎসীমার ৭৭ থেকে ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সেই সঙ্গে চলছে বৃষ্টি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ওপার থেকে আসছে ঢল
বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে গত তিন দিনে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেবল চেরাপুঞ্জিতেই ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিপুল ওই পানি আন্তঃসীমান্ত নদী হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। তাতেই চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বৃহস্পতিবার বিকাল তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহর। সদরের পাশাপাশি দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা ভাসছে বন্যায়।
সুনামগঞ্জ শহরের হাজিপাড়ার বাসিন্দা সেলিম মিয়ার টিনশেড একতলা বাড়ি ডুবে যাওয়া পরিবার নিয়ে উঠেছেন এক আত্মীয়র দোতলা বাসায়।
তিনি বললেন, “আমার ৫০ বছরের জীবনে সুনামগঞ্জ শহরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিনি। শহরের সব এলাকা প্লাবিত। মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না। এখন ত্রাণের চেয়ে আশ্রয় জরুরি।”
সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানম বলেন, “হঠাৎ এই প্রলয়ঙ্করী বন্যা মানুষকে নানা সংকটে ফেলে দিয়েছে। পানিতে সয়লাব পুরো জেলা। শুকনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।“
তিনি বলেন, “মানুষের আশ্রয়ের জন্য সব স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষকে সহায়তায় সেনাদেরও নামানো হয়েছে।”
পানিতে হাবুডুব খাচ্ছে সিলেট নগরীর অনেক এলাকাও। ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে।
নগরীর শেখঘাট এলাকার রশিদ আহমদ বললেন, “এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বাবের মত বাসায় পানি ঢুকেছে। আমরা গরিব মানুষ। বারবার এভাবে ঘরে পানি ঢুকে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করতে হয়।”
তাদের এই দুর্ভোগ আরও কয়েক দিন দীর্ঘায়িত হওয়ার আভাস দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “সিলেট-সুনামগঞ্জে আরও দু’তিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। বর্ষা শুরু হয়েছে, এমন ধরনের মৌসুমী বৃষ্টিপাত হবেই। নদীর পানিও বাড়বে।
“এবার যেহেতু হাওরে আমাদের একটা বন্যা হয়েছে, নদীতে আগে থেকে কিছুটা পানি রয়েছে। এ জন্য পানি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।”
‘পানিবন্দিদের উদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ’
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি পানিবন্দিদের উদ্ধার করে এনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখতে। অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে লোকজন এসেছেন। কিন্তু অনেক লোক এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। তাদের নিরাপদে নিয়ে আসাটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।”
তবে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “শুকনো খাবারের পাশাপাশি যেখানে রান্না করে খাবার দেওয়ার সুযোগ থাকবে, সেখানে সেটাও দেওয়া হবে। আর যারা ত্রাণ নিয়ে এই এলাকায় আসতে চান, তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। জেলা প্রশাসন দেখিয়ে দেবে কোথায় ত্রাণ দিতে হবে।”
ইতোমধ্যে সেনা সদস্যরা মাঠে নেমেছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “তারা মূলত উদ্ধার করবেন ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করবেন।”
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের খাদ্য গোডাউন রক্ষা এবং সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনেও আছেন সেনা সদস্যরা।
পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া ছাড়াও সেনাবাহিনীর আরও চার ধরনের দায়িত্ব পালনের কথা জানানো হয়েছে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে।
এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্বাচন এবং উদ্ধারকৃত ব্যক্তিবর্গের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা; চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা; সীমিত পরিসরে খাদ্য ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা এবং খাদ্য গোডাউন, পাওয়ার স্টেশন এবং অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা।
পানিবন্দিদের উদ্ধারে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের উদ্ধার করা।
“এ জন্যে যত নৌকা ভাড়া করা প্রয়োজন, ততটা নিতে হবে, যাবতীয় ব্যয়ভার আমরা নেব- এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।”
পরিস্থিতির আরও অবনতির আভাস
ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, যমুনা, সুরমা, সারিগোয়াইন, পুরাতন সুরমা, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী ও ভুগাই নদ-নদীর ১৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর ১০৯টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১৫টি পয়েন্টে শুক্রবার রাতে পানি বইছিল বিপৎসীমার উপরে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।
আরও অন্তত ৫-৭ দিন বন্যার এ দুর্ভোগ থাকবে বলে মনে করছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ১০৯ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শনিবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সরকার কী করছে?
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রধান আতিকুল হক বলছেন, “২০২০ সালেও এ সময়ে বন্যা এসেছে। তবে এ সময়ে এত পানি সিলেটে নরমালি দেখা যায় না। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির সঙ্গে আপস্ট্রিমের বৃষ্টি বেশি হয়েছে।”
তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আরও লোকবল, ত্রাণ ও উদ্ধার সামগ্রীর প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জের জন্য নয়, বন্যা প্রবণ পুরো অঞ্চলের জন্যই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, এবার দ্রুত মোকাবেলা করতে পারব।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরনের জন্য ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ টাকা ও চাল।
প্রতিটি প্যাকেটে চাল-ডাল-তেল-লবণ চিনিসহ যেসব খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তাতে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক জানান, সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মনিটরিং করছেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে তিনি নিজে ত্রা উপদ্রুত এলাকায় যাচ্ছেন।
এ কর্মকর্তা জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে দুটি উদ্ধারকারী যান পাঠানো হয়েছে সিলেটে। দুই জেলায় ২০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
“কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকের মোবাইলে চার্জ নেই, চার্জার দিয়ে হেল্প করছি, জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে তথ্য পেতে পারি, এজন্য ৩৩৩, ৯৯৯ নম্বরকে অ্যাক্টিভেট করার জন্যও বলেছি।”
বিদ্যুৎ কবে ফিরবে
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মাত্র ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শুক্রবার এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চলও বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ামাত্র পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
‘লিভিং উইথ ফ্লাড’
বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, মেঘনা অববাহিকায় আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে থাকবে। এতে সিলেট-সুনামগঞ্জের স্বল্পমেয়াদী এ বন্যার দুর্ভোগ সপ্তাহের বেশি ভোগাবে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বৃষ্টি আরও হবে। আসাম হয়ে উজানের পানি আসছে।
“১৯-২০ জুনের এ অববাহিকার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে বাড়বে বেশ। গাণিতিক মডেলে এ ধরনের আভাস থাকে। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
“এখন বৃষ্টি আছে, তাই স্বল্প মেয়াদী বা মাঝারি ধরনের বন্যা হলো। ৫-৭ দিনের বেশি হবে না হয়তো। কিন্তু পরে আরও বাড়লে নদীর যে প্রবাহ তাতে মধ্যাঞ্চলে চলে আসবে।”
এবার বন্যার ‘স্বাভাবিক’ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “এ বছর বৃষ্টির প্রকোপটা বেশি। উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। প্রি-মনসুন থেকে একটু একটিভ।…সার্বিক বিরূপ পরিবেশে এক্সট্রিম ইভেন্টগুলো বাড়ছে। বন্যার প্রাদুর্ভাব একটু বাড়ছে। সে অনুসারে আমাদেরও প্রস্তুতি বাড়াতে হবে।
“বাধ শক্তিশালী করার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো, বন্যার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের প্রবণতাও বাড়ে। এর প্রটেকশনও দিতে হবে। খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণ সরবরাহ, পুনর্বাসনের বিষয় রয়েছে। বিশাল একটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে।”
প্রতি বছরের মত এবারও কয়েকটা বন্যা দেখতে হতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “জুন মাসে বন্যা হচ্ছে। এটা একটু আর্লি মনে হচ্ছে। সিলেটের একদফা বন্যা প্রি-মুনসুনে হয়ে গেছে।
“এবারও কিছুটা ফ্ল্যাশফ্লাড; ওদিকে মেঘলা-ত্রিপুরা-বরাকের ঢাল হওয়ায় তাদের ঢলটি এখানে এলে ঢালু এলাকায় নরমাল ফ্লাডে পরিণত হয়। আরও ৫-৭ দিন থাকবে, পানি নামতে অনেক সময় লাগবে।”
সিলেটের ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা এ বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “মে মাসে এক দফা হল, মধ্য জুনে আরেকটা সিলেটে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় আরেকটা আসবে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তো বন্যা হবে। সুতরাং বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে হবে।
“বন্যা ব্যবস্থাপনা হতে হবে লিভিং উইথ ফ্লাড। স্ট্রাকচারাল মেজার, ননস্ট্রাকচারাল মেজার, আর্লি ওয়ার্নিং জোর দিতে কাজ করতে হবে।