জাতীয়

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশে শতকরা ৮৫ ভাগ লোক গ্রামে বাস করেন। কৃষিই তাদের প্রধান উপজীবিকা। ফলে পরিবারের সবাই ক্ষুদ্রায়তন পৈতৃক জমি চাষ করে। আর বাকি ১৫ ভাগ লোক বাস করে শহরে। এ দেশের কৃষকরা সাধারণত সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে থাকে।

বেশিরভাগ কৃষক এখনো ফসল উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে লাঙ্গল, মই এবং গরু ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। সাধারণ অর্থে কৃষি বলতে ভূমি কর্ষণ করে ফসল ফলানো বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে কৃষি কথাটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে পশু পালন থেকে শুরু করে শস্য উৎপাদন, বনায়ন, মৎস্য সম্পদ আহরণসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রক্রিয়াকে কৃষির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কৃষি দেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রাম এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধান, পাট, তুলা, আখ, ফুল ও রেশমগুটির চাষসহ বাগান সম্প্রসারণ, মাছ চাষ, সবজি, পশুসম্পদ উন্নয়ন, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, বীজ উন্নয়ন ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।

কৃষকদের অনেকেই এখন বিভিন্ন আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় ফলন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ধান ও পাট বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলেও গম, চা, আখ, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদিত হয়। সরকারের উচিত গুরুত্বসহকারে সরিষা চাষের ওপর নজর দেওয়া। যাতে করে সাধারণ মানুষ সয়াবিন তেল ছেড়ে সরিষার তেল ব্যবহার করে। কৃষি পুনর্বাসন ও কৃষককে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এতে সুবিধা ভোগ করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কৃষি পণ্য কিনে মজুত করে রাখছে এবং দেশের অবস্থা বুঝে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন। দেশে কৃষি খাতের উন্নয়ন হলেও কৃষকের উন্নয়ন হয়নি। সরকারকে কৃষি খাতে নজর দিতে হবে। তাহলেই ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সরকারি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কৃষিখাত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- কৃষি, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়কে কৃষির ওপর আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত। কৃষকদের নামমাত্র লভ্যাংশে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা সরকারের উপর মহলের কর্তব্য।

বাংলাদেশের কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল কৃষি খাতে পরিণত করতে হলে কৃষিতে বেশি বেশি প্রণোদনা বাড়ানো দরকার। কৃষকদের বেশি করে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; যাতে কৃষকরা চাষাবাদের উপর বেশি মনোনিবেশ করতে পারে। এতে করে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। কৃষকরা কৃষি কাজে আরও মনযোগী হবেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনোভাবেই কৃষিখাতে উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুই দশক আগেও কৃষকরা সরিষার চাষ করতেন। বাংলাদেশে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হত।

গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো সরিষা ঘানি দিয়ে মাড়াই করে তার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন। কৃষকরা সরিষার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে এর উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা দেশে কিছু কৃষক নামমাত্র সরিষার চাষ করে থাকেন শুধু নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য।

মনস্তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় এনে বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, এ দেশের জলবায়ু ও মাটি কৃষির মাটি। বাংলার সবচেয়ে বড় সম্পদ কৃষি। কৃষি বাংলার প্রাণ, বাঙালির মুখের হাসি। বাঙালি মনোজগতের দার্শনিক বঙ্গবন্ধু। তিনি জানেন, কৃষি মিশে আছে বাঙালির রক্তে। দেশের ৮৫ শতাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভশীল। তাই উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে কৃষি। দৃশ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় এনে ভাবলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম খাদ্য। বিশ্বের বহু দেশে খাদ্য উৎপাদনের উপযোগী জলবায়ু ও মাটি নেই। খাদ্যের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় বহির্বিশ্বের ওপর।

যদি বিশ্বে খাদ্যমন্দা দেখা দেয়, তা হলে অনুন্নত দেশগুলোকে তীব্র খাদ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের মাটি কৃষির মাটি। এ দেশের মাটিতে সোনা ফলে। এ জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনে প্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে, তা হলো খাদ্য নিশ্চয়তা। তাই কৃষিকে বাঁচাতে হবে, কৃষককে বাঁচাতে হবে। অল্পদামে কিংবা বিনামূল্যে সার, কীটনাশক, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ।

‘কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ স্লোগান সামনে রেখে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর ডাক দেন। কৃষকদের বিদ্যমান সুবিধা বৃদ্ধি করে নানা সুযোগ প্রদান করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছিল এর মূল লক্ষ্য। এসবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী কৃষি ভাবনা ও উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে। তাই স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের পাশে খুবই যৌক্তিকভাবে সংযোজিত হয় আরেকটি নাম, আরেকটি বিশেষণ, আরেকটি শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘কৃষিবন্ধু মুজিব’।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় বহুমুখী শস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান। গম, আলু, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মশলা, ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন শস্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে থাকে। দেশে কৃষিখাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষা করাই এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ।

বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব মন্তব্য উঠে আসে বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে তা জানা যায়। ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে মনে করেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, কৃষি খাতে অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় এবং চাষযোগ্য জমি কমে আসায় ধান চাষের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। শাইখ সিরাজ আরও বলেন, সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে যেন ফসলের সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।

মহামারীর ধকল সামলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথে, সেই সময় ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে সংকটে ফেলে দিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় বেড়ে গেছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম, সেই সঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম স্থিতিশীল বা কমছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এর মধ্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, মসলা পণ্য, মাছ-মাংস, ডিম, শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি এমনকি লবণের দামও বেড়েছে।

পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য সব ধরনের পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে এই তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে পণ্য কিনতে ভোক্তার যেন নাভিশ্বাস বাড়ছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে আছেন নিম্নআয় ও খেটে খাওয়া মানুষ। দেশে যা হয়েছে সেটি কিছু ব্যবসায়ীর অপতৎপরতার কারণেই; যার দায় পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ওপর পড়ছে।

সরকার সেদিক থেকে সতর্ক রয়েছে। এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোজ্যতেল উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা, মানসম্মত বীজ সরবরাহ ও উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকির জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকবে; যাতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে খুচরাপর্যায়ে দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখা যায়। পাশাপাশি ভোক্তাদের এসব তেলের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহমূলক প্রচারণারও ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশের মাটিতে বীজ ফেলে রাখলেও ফসল জন্মে থাকে। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে কৃষি নির্ভরতা বাড়ারে, কৃষককে প্রণোদনা দিলে, কৃষি ঋণের জটিলতা কাটালে আমাদের কোন খাদ্যই বাইরের রাষ্ট্র থেকে আনতে হবে না। কিন্তু কৃষি খাতের ওপর অবহেলা আজ এ অবস্থায় এসেছে।

দুই দশক আগেও কৃষকরা সরিষার চাষ করতেন। বাংলাদেশে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হতো। গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো সরিষা ঘানি দিয়ে মাড়াই করে তার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন। কৃষকরা সরিষার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে এর উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা দেশে কিছু কৃষক নামমাত্র সরিষার চাষ করে থাকেন শুধু নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য।

সরিষা চাষের উপর সরকারকে দৃষি রাখতে হবে; যাতে করে গ্রাম-গঞ্জের মানুষ সয়াবিন তেলের পরিবর্তে সরিষার তেলের ওপর নির্ভর করে। কৃষি খাতকে পুনরায় গুরুত্ব দিলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাই কৃষি ও কৃষককে প্রেরণা ও প্রণোদনা দিলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে বসে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে সংকট নিরসন সহজ হবে। দ্রুত এ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আমাদের।

জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও দেড় বছর। এর আগেই হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে দুদিন ধরে দফায় দফায় হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

ছাত্র রাজনীতির এই উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। বিএনপি এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ। খুলনা, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় কয়েকশ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে আগামী দিনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। অপরদিকে যে কোনোভাবে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ ও কাল সারা দেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ রয়েছে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আরও ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। আপাতদৃষ্টিতে এসব ঘটনাকে দুই ছাত্র সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া বলা হচ্ছে। কিন্তু এর নেপথ্যে বিএনপির বড় আন্দোলনের আভাস ও ক্ষমতাসীনদের তা প্রতিহতের বার্তা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। তারা আতঙ্কে আছে কখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠে। তাই ভয় থেকে তারা এ হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে মামলা-হামলা দিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো যাবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, সবকিছুর মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার যে মানসিকতা প্রকারান্তরে এটি বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করে। জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই, জনসমর্থন নেই, সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। নানা কারণে তারা হতাশার সাগরে নিমজ্জিত।

সেজন্যই তারা নানাবিধ কথা বলে। এ কথাগুলো আমরা কখনো বিবেচনায় নেই না, গুরুত্বও দেই না। তিনি বলেন, এরসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন বা রাজনীতির কিছু নেই। এখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততারও কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে হঠাৎ করে রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠায় উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক মহল, সুশীল সমাজসহ বিশিষ্টজনরা। প্রধান দুদলের এমন মুখোমুখি অবস্থানকে অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক বলে মনে করছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। তাই এ মুহূর্তেই দলগুলোকে সহিংস রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে। না হলে টালমাটাল অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। প্রতিটি জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেদিকে হাঁটছে না। উলটো রাজনীতির মাঠ সংঘাতময় হয়ে উঠছে। দেশের অর্থনীতিতে এ ধরনের রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সুযোগ নিতে পারে ‘তৃতীয় পক্ষ’। ফলে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যা কারও কাম্য নয় বলে তারা মনে করেন।

শান্ত ক্যাম্পাস অশান্ত হওয়ার নেপথ্যে মোটা দাগে দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একটি হলো, ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব লাভে ‘ত্যাগী ও সাহসী’ প্রমাণ এবং অন্যটি জাতীয় রাজনীতির প্রভাব। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ফলে ছাত্রলীগের রাজনীতি এখন চাঙ্গা। বর্তমান কমিটির শুরুর সময়ের চেয়ে এখনকার কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। হামলায় সামনে থাকলে গণমাধ্যমে নাম ও ছবি আসবে, যা রাজনীতিতে সহায়ক হবে-এমন চিন্তা থেকে অ্যাকশনে নামার প্রবণতাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।

পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মসূচির পর ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রত্যাশীসহ বড় একটি অংশের দাবি ছিল তাদের ‘সমুচিত’ জবাব দেওয়া। এ বিষয়গুলো ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা শক্তভাবে ছাত্রদলকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।

এদিকে সম্মেলন প্রত্যাশীদের একটি অংশ এখন আবার বলছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্ব করতেই ছাত্রদলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। যদিও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, যে যাই বলুক আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে নিয়ে কোনো কটূক্তি তারা বরদাশত করবেন না। এছাড়া প্রশাসন ছাড়া মাঠে যাওয়ার যে চ্যালেঞ্জ ছাত্রদল একাধিকবার দিয়েছে, তারা সেটারও জবাব দিয়েছে।

ছাত্রদলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান নেতৃত্ব নির্বাচনের পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান তৈরি করা ছিল তাদের অন্যতম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’। এরই অংশ হিসাবে তারা শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউন করেছেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত ছাত্রদলের এই কমিটির কাছে বিএনপির প্রত্যাশাও বেশি। ফলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সামনে থেকে মিছিল ও বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছাত্রদলের আন্দোলন নিবিড়ভাবে ‘মনিটরিং’ করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিএনপিও কর্মসূচি দিচ্ছে। হামলার পর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বিএনপি। হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এছাড়া দেশব্যাপী ছাত্রদলের কর্মসূচিকে সফল করতে তৃণমূলে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠুর পরিবেশ নিশ্চিত ও সহাবস্থানের দাবি জানাচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। ফলে ছাত্রদলের প্রতিটি সংঘর্ষের ঘটনাকেই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা।

এদিকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল এবং তাদের মূল দলের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ক্রমশই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। আগামীতে এ পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আগামী জাতীয় রাজনীতিকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাকা ক্যাম্পাসগুলোতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চায় ছাত্রদল। তারা বার্তা দিতে চায়, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নড়বড়ে হয়ে আছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগও নড়বড়ে অবস্থায় পড়বে। তারা আরও বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে কোনো বড় আন্দোলনেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের চোখ থাকে সেখানে। এর বিশাল মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক যেভাবে অস্ত্র হাতে হামলা করতে এসেছে তা মানা যায় না। আগামীতেও ছাত্রদলকে প্রতিহত করা হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চোখে দেশরত্ন শেখ হাসিনা একজন সফল ও আদর্শ দেশনায়ক। তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য কোনোভাবেই সহ্য করব না। তাতে যে ভাষায় জবাব দেওয়া প্রয়োজন, সেই ভাষাতেই জবাব দেবে ছাত্রলীগ। হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদলকে প্রতিহত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। ছাত্রলীগও তাদের পাশে ছিল, সমর্থন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর আগে পরিচয় ছাত্র, পরে দল। তাই ছাত্রলীগই যে তাদের প্রতিহত করেছে এমন নয়, এটি ছিল শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিরোধ।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ যুগান্তরকে বলেন, আমরা ছাত্রদের অধিকার ও দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই। ক্যাম্পাসে চাই সহাবস্থান। আমাদের নিরস্ত্র কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা দফায় দফায় হামলা করেছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে স্বৈরাচারী স্টাইলে দেশ চালাচ্ছে, ছাত্রলীগও সেভাবে ক্যাম্পাসগুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। আমরা এর অবসান চাই। হামলা করে ছাত্রদলকে দমিয়ে রাখা যাবে না। যতই হামলা হোক আমরা আগামীতেও রাজপথে থাকব।

এদিকে এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো কৌঁসুলি ভূমিকায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার প্রায় ৩০ মিনিট পর পুলিশ সেখানে যায়। মঙ্গলবার শহিদ মিনারে হামলার ঘটনায়ও অনেকটা নীরব ভূমিকায় ছিল পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলেও তাদের গ্রেফতারে এখন তেমন কোনো তৎপরতা নেই পুলিশের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপর থেকে সিগন্যাল পেলেই শুরু হবে অভিযান।

দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় অনেকটা ঘরবন্দি ছিল রাজনীতি। করোনার ভয়াবহ প্রভাব কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে মাঠে গড়াতে থাকে রাজনীতি। কিন্তু শুরুতেই সংঘাতের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে দুদল। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলেও জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে।

দুদলের সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অভিযোগ, পালটা অভিযোগে ব্যস্ত তারা। বিএনপি বলছে, নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ থেকে বিরোধী দলকে সরানোর টার্গেট নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাবিতে লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে আক্রমণের চেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা ব্যর্থ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে যায়, তখন তা প্রতিহত করা তো শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের অধিকারের সঙ্গে থাকে। সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ছাত্রদের সমর্থন দিয়েছে। এতে অন্যায় বা দোষের কিছু হয়নি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে আবার তাদের নামেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরানোই তাদের মূল লক্ষ্য। উলটো সরকারের এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথে নামবে বলে আশা করি।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যার নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু দেশের এ সংকটকালে সহিংস রাজনীতি কারও কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য। প্রধান দুদলকেই অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ চলতে হবে। কিন্তু আমরা চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আবেগ এবং স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি। সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের সবচেয়ে বড় উপহার পদ্মা সেতু। এটি কেবল পদ্মা পারাপারের সেতু নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাস এমন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করেছে যে আমরা যেকোনও অসাধ্য সাধন করতে পারি। আর এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছেন আমাদের সৎ সাহসী প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা– জাতির পিতার কন্যা। আর বেশিদিন নয় যেদিন The word ‘impossible’ কেবল ডিকশনারিতে পাওয়া যাবে, জীবনে নয়।

কে আমাদের এমন আত্মবিশ্বাসী করে তুললেন? তিনি আর কেউ নন আমাদের বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। পিতা দিলেন দেশ কন্যা দিলেন সমৃদ্ধি, ঘর বারান্দা চলাচলের পথ সাজিয়ে দিলেন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ উঠবেন না এতে, এটি ভেঙ্গে পড়বে। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী মধ্য জুনে সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর সে কারণেই আমার প্রস্তাব পদ্মা সেতুর নামকরণ করা হোক ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’।

কেন এই নাম? এজন্য যে, বিশ্বমোড়ল আমেরিকার এক সময়ের ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন তার বন্ধু প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনুসের প্ররোচনায় যখন বিশ্ব ব্যাংক আইএমএফ-কে দিয়ে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেন তখন গোটা জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হলো। হবারই কথা, ৩০/৪০ হাজার কোটি টাকার কায়-কারবার। চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সমগ্র জাতিকে অবাক করে দিয়ে শেখ হাসিনা তর্জনী উঁচিয়ে উচ্চারণ করলেন– “so what? We will make it on our own money.”

এই আমাদের প্রধানমন্ত্রী, এই আমাদের বঙ্গবন্ধুকন্যা, এই আমাদের রাষ্ট্রনেতা, এই আমাদের দেশরত্ন, এই আমাদের star of the east, এই আমাদের mother of humanity, এই আমাদের champion of the earth, এই আমাদের বেগম রোকেয়া, এই আমাদের বেগম সুফিয়া কামাল, এই আমাদের প্রীতিলতা, এই আমাদের জাহানারা ইমাম, এই আমাদের মাদার তেরেসা। আজি হতে শতবর্ষ পরে বাংলার যে কবি কবিতা লিখিবে পদ্মা পারে বসিয়া, দেখিবে ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে উঠবেন বিশাল মানব প্রতিকৃতি বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, সাহসী সুপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাথে সাথে তার পাশাপাশি কাশবন চিরে ভেসে উঠবেন তারই আদরের কন্যা ১৭ কোটি বাঙালির হয়তো তার চেয়েও অনেক বেশি সংখ্যকের আপনজন, ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রিয় রাষ্ট্রনেতা, আগামী প্রজন্মের সাহসীকা প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আমি বলব বাঙালি জাতি প্রতিদিন তাকে নব নব রূপে আবিষ্কার করে চলেছে।

আমি জানি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণ করতে নিষেধ করবেন। একবার পার্লামেন্টে তিনি অনীহা প্রকাশ করেছেনও। আমরা এ-ও জানি উত্তর প্রজন্মের স্বার্থে তাকে তুলে ধরা জরুরী। নইলে আমাদের সন্তানরা কাকে দেখে বড় হবে, সাহসী হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কি বিরাট ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আজ পদ্মা সেতু বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষে অনেক কর্মসূচি সীমিত পরিসরে করতে হয়েছে, এর মধ্যেও কিছু প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে কেননা ওগুলো অধিক জনগুরুত্বসম্পন্ন কর্মসূচি।

লক্ষ্য করার বিষয় হলো একদিকে উত্তাল পদ্মায় পিলার বসিয়ে সেতু নির্মাণ, যার ওপর দিয়ে বিশাল বিশাল ট্রাক-বাস চলবে, কার চলবে। হাজার যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে। কত বড় কাজ। যত বড় কাজ তত বড় সাহস এবং দক্ষতা। কেউ কেউ তো ঠাট্টা-মশকরা করতেও ছাড়েননি। আমাদের দেশে আরেকজন নেত্রী আছেন যিনি ১১ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতাও। তার মুখ থেকেও আমরা যেসব হিউমার শুনেছি তা দীর্ঘদিন মনে থাকবে। আজ তিনি কি বলবেন জানি না। অবশ্য আগেই বলেছেন। তিনি আমাদের খালেদা জিয়া, তিনি বলেছেন– “আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু বানাতে পারবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে দুইটি পদ্মা সেতু বানাবো”। যখন দেখলেন সকল বাধা অতিক্রম করে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন তখন খালেদা জিয়া বললেন– সেই বিখ্যাত মনিব-ভৃত্যের গল্পের মতো। ভৃত্য তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য মনিবকে অনুরোধ করলেন– ভৃত্য: কর্তাবাবু আমার ছেলেটি ভালো ইংরেজি বলে ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিন। মনিব: তোর ছেলে ভর্তি হতে পারবে না, ভৃত্য: (কিছুদিন পর) আমার ছেলে ভর্তি হয়ে গেছে কর্তাবাবু, মনিব: ভর্তি হলে কি হবে, পাস করতে পারবে না, ভৃত্য: (কিছুদিন পর) ছেলেটি জলপানি নিয়ে পাস করেছে বাবু, মনিব: তাতে কি চাকরি পাবে না, ভৃত্য: (আরও কিছুদিন পর) ছেলে চাকরি পেয়েছে কর্তাবাবু, মনিব: চাকরি পেলে কি হবে, বেতন পাবে না, ভৃত্য: কর্তাবাবু বেতনও পেয়েছে, মনিব: বেতন পেলে কি হবে ও টাকা চলবে না, সেই ছেলে একদিন চাকরি পেল। বেতন পেয়ে কর্তাবাবুর জন্য মিষ্টি নিয়ে এলো। এবার কর্তাবাবু কী বলবেন?

আমাদের বেগম খালেদা জিয়ার দুই নেতা-নেত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সংরক্ষিত আসনের ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যখন দেখলেন আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না কথাটি মিথ্যে হয়ে গেল তখন বের করলেন পদ্মা সেতুতে খরচ বেশি হয়েছে। এর চেয়েও অনেক কম টাকায় নির্মাণ করা যেত। বলতে ইচ্ছে করে আপনাদের তো বেশি খরছে একটি বাঁশের সাঁকো বানানোর মুরোদ নেই, অনেকদিন তো ক্ষমতায় ছিলেন কিছুই তো দেখাতে পারেননি!

তবে আজ আর তাদের কথা বলব না। নিজেদের কথা দিয়েই প্রবন্ধের সমাপ্তি টানব। এদিক-সেদিক কিছু ঘটনা, কিছু কথাবার্তা শুনে মনে হয় কোনো কোনো নেতা পদ্মা সেতুর মালিক হয়ে গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার, পৌর মেয়র-কমিশনার, উপজেলা চেয়ারম্যান (নতুন জমিদার) কিংবা এমপি-মন্ত্রী হতে পারলে একেকজন যেন এলাকার জমিদার। একবার বিশ্ব ব্যাংক মিথ্যা তথ্যের ওপর তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে অপমান করল যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন একজন যোগ্য মন্ত্রী। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমার এক বছরের জুনিয়র। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে থাকতাম, ছাত্রলীগ করতাম। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর আমি দৈনিক ইত্তেফাকে আর তিনি সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন। কারো সাথে কারো দেখা নেই। অনেক পরে যখন দেখলাম ততদিনে তিনি এমপি ও পরে মন্ত্রী হয়েছেন এবং অর্থবিত্তে অনেক বড়লোক। নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজ বানিয়ে নিজ খরছে পরিচালনা করে চলেছেন বছরের পর বছর। তার কাছে আমার একটা ঋণ আছে। তিনি যখন যোগাযোগমন্ত্রী আমার এলাকা ফরিদগঞ্জ সদরের পাশেই চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ফরিদগঞ্জের পাশে ডাকাতিয়া নদীর ওপর একটি বেইলি ব্রিজ ছিল। অনেক পুরনো। একবার তার ওপর দিয়ে যাবার পথে আমার গাড়ি এমনভাবে ঝাঁকুনি খেলো যেন ভেঙ্গে পড়বে। আমি গাড়ি থেকে নেমে তার সাথে যোগাযোগ করলে বললেন তার অফিসে যেতে। এর দুই দিন পরেই ঢাকা ফিরে সচিবালয়ে ঢুকলাম। এলাকার বড় ব্যবসায়ী আব্দুল বশিরের সাথে দেখা, তিনিও আমার সাথে মন্ত্রীর কক্ষে ঢুকলেন। মন্ত্রীমহোদয় যথেষ্ট সম্মানের সাথে আমাকে স্বাগত জানালেন। আমি সাক্ষাতের উদ্দেশ্য জানালে মন্ত্রী বললেন একটা দরখাস্ত লিখতে। তিনি দরখাস্তটি তার অফিসে কম্পোজ করালেন এবং তার রোডস-এর চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও একজন অতিরিক্ত সচিবকে ডাকলেন। আপনারা নিশ্চয়ই শফিক ভাইকে চেনেন। তিনি একটি দরখাস্ত নিয়ে এসেছেন এটি একটি ব্রিজের কাজ, বেইলি ব্রিজের রিপ্লেসমেন্ট পাকা ব্রিজ বানাতে হবে। আমি লিখে দিচ্ছি, আপনারা কীভাবে করবেন আপনারাই জানেন বলে তিনি আমার দরখাস্তের ওপর ইংরেজিতে লিখলেন “I want this project be completed within this financial year” সত্যি সত্যি দুই অর্থ বছরের মধ্যে পাকা ব্রিজ হয়ে গেল। তখন আমাদের দলেরই এক অবৈধ বিত্তের মালিক (ঢাকা সিটি করপোরেশনের) স্থানীয় নেতার খুঁজলি শুরু হলো। তিনি উদ্বোধন করবেন। স্থানীয় দুই-একজন সেলফ প্রোকলেম সাংবাদিককে দিয়ে স্থানীয় কাগজে লেখাতে চেষ্টা করলেন তার প্রচেষ্টায় ব্রিজটি হয়েছে অতএব তিনি উদ্বোধন করবেন। অথচ তিনি জানতেনই না ভেতরে ভেতরে ব্রিজের কাজ হচ্ছে। তখন ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী, তিনিও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। আমি তার সাথে দেখা করে কথাটা বললে তিনি হেসে বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটালি উদ্বোধন করবেন। বিত্তবান লুটেরা ভদ্রলোক হতাশ হলেন। শুনেছি তিনি নাকি নিজের নাম খচিত উদ্বোধনী প্লেটও বানিয়েছিলেন। আর বলতেন “আঁই একখান ডি-ও দিছিলাম”।

ওবায়দুল কাদের দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর সাধারণ সম্পাদক, আন্দোলন জেল-জুলুম সহ্য করে নেত্রী এবং দলের র‍্যাংক অ্যান্ড ফাইলের আস্থা অর্জন করেই এই পর্যায়ে এসেছেন। শুনেছি বহু কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়া এক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জায়গা দখলের স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন স্বপ্নই। তাই আর বললাম না। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমারও স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়ে অনেক কথা আছে কিন্তু সেটা তো আমি বাইরে নিতে পারি না। আমার বাইরে নেওয়া মানে প্রতিপক্ষকে আইলে দাঁড়িয়ে আহা বেশ বেশ বলে হাত তালি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। ওবায়দুল কাদেরের অঞ্চলের তার খুব কাছের দুইজন জনপ্রতিনিধি যেভাবে বিষয়গুলো প্রকাশ্যে এনেছেন তা মোটেও কাম্য নয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে কেন পদ্মা সেতুর নামকরণ করতে হবে তা কিছুটা আগেই বলেছি। আজকের বাংলাদেশ তাই চায় বলে আমি মনে করি। ১৯৭৫-এর পরে আরও তো কত সরকার এলো-গেলো, দুঃখী মানুষের জন্য একসঙ্গে ৬৬ হাজার পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া কি চাট্টিখানি কথা। কয়েকদিন আগে ৩২০০০ পাকা ঘর গরীবদের মাঝে বিতরণ করলেন। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদেরও পাকা বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছেন। এই নিয়ে সম্ভবত ৭০০০০ ঘর বানিয়ে দিলেন। ঘোষণা দিলেন একজন মানুষও ঘরহারা থাকবে না। সবচে বড় কথা হলো দক্ষিণ বাংলায় কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। নদীর পর নদী, ফেরিতে পারাপার করতে হতো। সব নদীর ওপর ব্রিজ করে দিলেন, রাস্তা পাকা করে দিয়ে এখন ঢাকার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করলেন পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। এতে করে কেবল চলাচল নয়, আমাদের জিডিপি তথা অর্থনৈতিক সূচকও বৃদ্ধি পাবে। এক সময় স্কুলে শিক্ষকরা ছাত্রদের প্রশ্ন করতেন, বল তো কোন জেলায় রেলগাড়ি নেই? ছাত্র-ছাত্রীরা বলত বরিশাল। আগামীতে আর কোনো শিক্ষক এ প্রশ্ন করবেন না। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল গাড়িও চলবে।

তাই উত্তর প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাবার স্বার্থেই পদ্মা সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ রাখা দরকার।

মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। চাঁদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।

জাতীয়

ভারতের সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ‘শিবশঙ্কর হালদার’ পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন পি কে হালদার।

আজ শনিবার ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানায়।

কয়েক কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানায় ইডি।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন, আজ দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইডি জানিয়েছে, তারা ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে পি কে হালদারসহ ৩ জন বাংলাদেশি। পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জায়গাতেও এই অভিযান চালানো হয়।

ইডি জানিয়েছে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারত ও অন্যান্য দেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন পি কে হালদার। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এসব পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শিবশঙ্কর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় ইডি।

তার অন্যান্য সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

ইডি নিশ্চিত করেছে যে, এই বাংলাদেশি নাগরিকরা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাপ্ত পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতে প্রতিষ্ঠান খুলেছে এবং কলকাতার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও কিনেছে।

ইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু কাগজে-কলমেই আছে যে আসামিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ পুলিশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে জানায়, যারা পরবর্তীতে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।’

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল ভারত সরকারের কাছে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।

২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পি কে হালদার স্পটলাইটে আসেন।

তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

এই ৪টি প্রতিষ্ঠান তখন থেকে ভয়াবহ সংকটে আছে এবং এদের মধ্যে পিএলএফএস এখন লিকুইডেশনের প্রক্রিয়ায় আছে।

এই ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দেওয়া তহবিল পুনরুদ্ধার করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

দুদকের একজন তদন্তকারী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তারা হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারা শিগগির পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলার চার্জশিট দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হালদারের স্যালারি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। তিনি ঋণ জালিয়াতির সুবিধার্থে কমিশন হিসেবে এই অর্থ নিয়েছিলেন।’

পি কে হালদার চারটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এমন কৌশলে পরিচালনা করেছেন যে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আগে কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারেননি।

হালদার তার লোকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে বসান। যেন তিনি সহজেই তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারেন এবং তহবিলের অপব্যবহার করতে পারেন।

হালদারের প্রতারিত ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএস) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানা যায়।

পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৮৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, পি কে হালদারসহ ৬৪ জন অভিযুক্তকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জাতীয়

ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সীমিত করা হয়েছে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ সীমিত করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার সরকারি এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানানোর একদিন বাদেই অর্থ বিভাগ থেকে এই পরিপত্র হল।

এতে বলা হয়েছে, কোভিড পরবতী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।

এ আদেশ এখন থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

ব্যয় সংকোচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বুধবার বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এখন থেকে কোনো প্রয়োজন না থাকলে বিদেশ সফর আর নয়। যদি কোনো বিশেষ প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা যাবেন; অন্যথায় কেউ যাবেন না।

জাতীয়

দেশে ভোজ্য তেল সরবরাহ ও মূল্যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন লাখ লিটারের বেশি তেল উদ্ধার করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বৃহস্পতিবার এসব অভিযান পরিচালনা করে। পরে উদ্ধার করা সয়াবিন তেল ন্যায্য মূল্যে বিক্রিসহ কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

খুলনা

নগরীতে অবৈধভাবে মজুদ করা ৭৩ হাজার ৩২ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার নগরীর বড়বাজারে জেলা প্রশাসন ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনটি গুদামে এ অভিযান চালায়। এ সময় তিন প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জ‌রিমানা করা হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক জানান, ওই তিন প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে অবৈধভাবে মজুদ করা ৭৩ হাজার ৩২ লিটার সয়া‌বিন ও ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬০৮ লিটার পাম অয়েল জব্দ করা হয়।

এ সময় সোনালী এন্টারপ্রাইজের মালিক প্রদীপ সাহাকে ৩০ হাজার, সাহা ট্রেডিং এর মালিক দিলীপ সাহাকে ৯০ হাজার টাকা ও রনজিত বিশ্বাস অ্যান্ড সন্স এর মালিক অসিত বিশ্বাসকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

দেবাশীষ বলেন, সরকরি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে খুলনার ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।

সিরাজগঞ্জ

উল্লাপাড়ায় ৩৭ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। পরে দোকানিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সলঙ্গা বাজারের রাজলক্ষ্মী বাণিজ্য ভাণ্ডার ও দুলাল চন্দ কুণ্ডু স্টোরে এ অভিযান চালানো হয় বলে সিরাজগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান রনি জানান।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে একই মালিকের দুটি দোকান ও গুদামে ৩৭ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন, পাম ও সুপার তেল এবং ২০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মজুদ থাকা সত্ত্বেও ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। অবৈধভাবে মজুদ করার অভিযোগে দোকান মালিক পরিতোষ সাহাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জব্দ করা তেল বাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মাহমুদুল।

ঝিনাইদহ

কালীগঞ্জে ২০ হাজার ৬০০ লিটার পাম অয়েল জব্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর; এ সময় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা সদরের বিহারী মোড়ে আরএস অয়েল মিলসে অভিযান চালিয়ে তেল জব্দ করা হয়েছে বলে জেলা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান।

তিনি বলেন, আরএস অয়েল মিলসে ৪১ হাজার লিটার সয়াবিন ও পাম অয়েলের মজুদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২১ হাজার ৪২০ লিটার সয়াবিন তেলের কাগজপত্র দেখাতে পারলেও বাকি ২০ হাজার ৬০০ লিটার পাম অয়েলের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ওই মিলসের মালিক আব্দুল মতলেব।

তাছাড়া বিক্রয়মূল্য না টানানোয় তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে জব্দ করা পাম অয়েল আগের ১৩০ টাকা মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা

নগরীতে দুটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৮ হাজার ৩৬৪ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। মূল্যতালিকা না টানানোয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, চকবাজারের মেসার্স রাধাবল্লভ সাহা স্টোরের গুদামে ২ হাজার ৬৫২ লিটার ও প্রশান্ত এন্টারপ্রাইজের গুদামে ৫ হাজার ৭১২ লিটার সয়াবিন তেলের মজুদ পাওয়া যায়।

পরে কুমিল্লার দোকান মালিক সমিতির সহায়তায় এসব তেল খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলে জানান আছাদুল।

তিনি বলেন, “সয়াবিন তেলের মূল্য তালিকায় না লিখে বেশি দামে বিক্রি করায় দুই দোকানিকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।”

গাজীপুর

নগরীর কোনাবাড়ীতে ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থান্দার কামরুজ্জামান এর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযান চালিয়ে তেল উদ্ধার করা হয়।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রেখা রানী ট্রেডার্সের গুদাম থেকে ওই তেল উদ্ধার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক পূর্ন সাহাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

জব্দ করা তেল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে বলেও জানান কামরুজ্জামান

বাগেরহাট

মজুদ রাখা সাড়ে ৫ হাজার লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করেছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এ সময় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বাগেরহাট শহর ও কচুয়া উপজেলায় ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এ জরিমানা করা হয়। উদ্ধার করা তেল ১৬০ টাকা দরে ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। ঈদের আগে কেনা তেল দাম বাড়িয়ে বিক্রির প্রত্যাশায় তারা তেল মজুদ করে রাখে।

তাছাড়া ব্যবসায়ীরা বোতলজাত তেল ড্রামে রেখে বেশি দরে বিক্রি করছিল বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “গোপন সংবাদ পেয়ে তেল উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া তেল ১৬০ টাকা দরে সাতশ’র বেশি ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি করা হয়।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে চার হাজার লিটার ভোজ্য তেল উদ্ধার করা হয়েছে।

পৌর এলাকায় বটতলাহাটের একটি দোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ তেল উদ্ধার করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক ওসমান গণি বলেন, গোপন সংবাদ পেয়ে মেসার্স কাজল স্টোরে অভিযান চালালে সাড়ে ৪ হাজার লিটার তেলের মজুদ পাওয়া যায়। এগুলো অবৈধভাবে মজুদ করা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, দোকানের মালিক মোহাম্মদ কাজলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে উদ্ধার করা তেল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়।

নীলফামারী

কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ২৪ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জেলা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, অবৈধভাবে তেল মজুদ রাখার দায়ে মের্সাস হারুন স্টোর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বাবুল আহমেদকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দাম বৃদ্ধির আগে কেনা তেল বেশি মুনাফার আশায় মজুদ রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বাবুল আহমদকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জব্দ করা তেল আগের ১৫৯ টাকা লিটার দরে বিক্রয় হয়।

খাগড়াছড়ি

জেলা শহরে অবৈধভাবে মজুদ করা ৩ হাজার ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নিজাম স্টোরে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই তেল উদ্ধার করে দোকানীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ট্রেড লাইন্সেস ছাড়াই তিন হাজার ৭০০ লিটার তেল গুদামজাত করে নিজাম স্টোর। এসব তেল তিন মাস আগে থেকে গুদামজাত করা ছিল। অবৈধভাবে মজুদ করে তারা তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চেয়েছিল।

স্টোরের মালিক নিজাম উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি জব্দ করা তেল ন্যায্যমূল্যে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

মৌলভীবাজার

বড়লেখা উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার লিটার ভোজ্যতেল মজুদ রাখার দায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব-৯ এর একটি দল প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেয়।

অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, সকালে হাজীগঞ্জ বাজারের মেসার্স সামছু ভেরাইটিজ স্টোরে সাড়ে ৩ হাজার লিটার ভোজ্যতেল মজুদ পাওয়া যায়।

“অবৈধভাবে তেল মজুদ রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িকভাবে সিলগালা করা হয়। তাছাড়া নিয়মভঙ্গের দায়ে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

মাদারীপুর

বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগে এক দোকানিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের তাঁতিবাড়ি বাজারে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ জরিমানা করা হয়।

মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পৌরসভার শিফাত এন্টারপ্রাইজের ডিলার মফিজুল ইসলামের বিক্রয় ব্যবস্থাপক বিল্লাল সরদার মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের তাঁতিবাড়ি এলাকার খুচরা বাজারের দোকানদারদের কাছে সয়াবিন তেল পাইকারী বিক্রি করতে যান। এ সময় ৭৬০ টাকার পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল ৯৩০ টাকায় বিক্রি করেন।

“এতে দোকানির সঙ্গে ওই ব্যবস্থাপকের বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা তাকে আটক করে অধিদপ্তরকে খবর দেয়। এ সময় ৯৭২ লিটার তেল জব্দ করা হয়। বিল্লালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জব্দ করা তেল খুচরা বাজারে নায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।”

ফেনী

শহরে অবৈধভাবে মজুদ করা ৯২৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর; এ সময় কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জেলা সদরের বড়বাজার ও পৌর হকার্স মার্কেটে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব অভিযান পরিচালিত হয়।

অধিদপ্তরের জেলার সহকারী পরিচালক সোহেল চাকমা বলেন, বড়বাজারের ইসলামপুর রোডের ‘ভুইয়া ব্রাদার্স’ এর গুদামে মজুদ রাখা ৭৬৮ লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক ফখরুল ইসলামকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে জব্দ তেল ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয়।

এদিকে পৌর হকার্স মার্কেটের অভিযানে ’আলম ব্রাদার্স’ এর গুদাম অবৈধভাবে মজুদ রাখা আটটি কার্টন থেকে ১৬০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয়।

বেশি মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি ও মজুদ রাখার অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় গুদামে মজুদ করা ৭৫৩ লিটার তেল জব্দ করা হয়।

জেলা সদরের গোস্তহাটির মোড়ে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার এ জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

জেলার সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে গুদামে থাকা তেল জব্দ করা হয়েছে।

তাছাড়া আগে কেনা তেল মজুদ রেখে বেশি দামে বিক্রি করায় রঞ্জিত ট্রেডার্সের মালিক রঞ্জিত পাল এবং কিরণ ট্রেডার্সের মালিক সৈকত পালকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানান শামীম।

জব্দ করা তেল আগের ১৬০ টাকা দরে ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি করা হয় বলেও জানান ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা।

টেকনাফ

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল ও চিনি নেওয়ার সময় এক যুবককে আটক করেছে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

উপজেলার হৃীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশমুখে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মজুদের উদ্দেশে সয়াবিন তেল ও চিনি নেওয়ার পথে প্রবেশ মুখে তাকে আটক করা হয়।

কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ২৪০ লিটার সয়াবিন তেল ও ২০০ কেজি চিনি জব্দ করা হয় বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা সদরে অভিযান চালিয়ে সয়াবিন তেলের খালি বোতল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব বোতলের তেল খোলা হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ওই দোকানির বিরুদ্ধে।

চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদের নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার বিকালে এ অভিযান চালানো হয়।

সজল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, শহরের কুদ্দুস স্টোরের মালিক মাসুদ রানা বোতলজাত তেল খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পাঁচ লিটারের জব্দ করা খালি বোতলের গায়ে ৭৬০ টাকা মূল্য থাকলেও খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করা দায়ে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নরসিংদী

অবৈধভাবে মজুদ করা ১১৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বৃহস্পতিবার বিকালে নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা ও মাধবদী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন।

জব্দ করা তেল আগের দামে কেনা হলেও বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশে তা মজুদ করা হয়েছিল বলে আবু নইমের ভাষ্য।

তেল উদ্ধারের পর একতা স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান আবু নইম।

অভিযানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামল চন্দ্র বসাক, নরসিংদী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম ও জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ‘সরকারি বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২০’ এর লিখিত পরীক্ষার প্রথম ধাপের ২২ জেলার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) ৪০ হাজার ৮৬২ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন  এ থ্য জানিয়েছেন।

লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dpe.gov.bd) এ পাওয়া যাবে।

গত ২২ এপ্রিল চাপাইনবাবগঞ্জ, মাগুরা, শেরপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাটের সম্পূর্ণ এবং সিরাজগঞ্জ, যশোর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, টাংগাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী জেলার আংশিক অংশের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।

ফলাফল প্রকাশের নির্দেশনায় বলা হয়, এই ফলাফল সাময়িক ফলাফল হিসেবে গণ্য হবে। এ ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীরা কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ফলাফল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘রাজস্বখাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২০ এর’ কোনো শূন্য পদে নিয়োগের জন্য কোনো নিশ্চয়তা করবে না।

প্রকাশিত ফলাফলের যে কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, মুদ্রণজনিত ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধন করার বা প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট ফলাফল বাতিল করার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।

কোনো প্রার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল তথ্য দিলে কিংবা কোনো তথ্য গোপন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান বা প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ তার ফলাফল বা নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।

প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুসরণপূর্বক নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।

মৌখিক পরীক্ষার স্থান, তারিখ ও সময় পরবর্তীতে যথাসময়ে জানানো হবে।

মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষক পদে ৪৫ হাজার জন নিয়োগ করা হবে। এসব পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী। সেই হিসেবে প্রতি পদের জন্য লড়ছেন ২৯ প্রার্থী।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা আগামী ২০ মে এবং ৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং তাদের ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

এর মধ্যে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

আর হারুন-অর-রশীদকে ৪ বছর কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।

দশ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলায়।

তাতে অভিযুক্ত ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।

এক হাজার পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হল।

আর আসামিদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সকল শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে।

সেজন্য সরকারকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, একজন উপ- মহা পুলিশ পরিদর্শক, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রিার।

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলার রায়ের জন্য ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিগ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলার রায়ের জন্য ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিমামলার তথ্য অনুযায়ী, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
এই এমএলএম কোম্পানির এমডি রফিকুল আমীনকে এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুনের সাজা কেন কম হল, সেই ব্যাখ্যাও আদালত দিয়েছে।

বিচারক বলেন, “হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে সর্বনিম্ন দণ্ডে দণ্ডিত করা হল।”

হারুনের অবরুদ্ধ সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবে অবমুক্ত (রিলিজ) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। তবে জরিমানার তিন কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।

সাবেক এ সেনাপ্রধানের আইনজীবী এ রায়ের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একে একটি ‘মাইলফলক রায়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আসামিদের মধ্যে রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

হারুন-অর-রশিদ, দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার, জিয়াউল হক ও সাইফুল ইসলাম জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন।

রায়ে আদালত বলে, আসামিদের মধ্যে যারা এ মামলায় যতদিন হাজতবাস করেছেন, ততদিন সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।

জামিনে থাকা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ দিদারুল আলমের সাজার ৮ বছর মেয়াদ আগেই খাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য তাকে রায়ের পর আদালত থেকেই চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আর রায়ে তাকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও বিচারক তা মওকুফ করে দেন। ফলে ওই টাকা তাকে আর দিতে হবে না।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন অর রশিদসহ বাকি ছয় আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলায় বাকি ৩৯ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, তার পর থেকে তাদের সাজার মেয়াদ হিসাব করা হবে।

রায় ঘোষণার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি মীর আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি মাইলফলক রায়। মাল্টিপারপাস কোম্পানি গঠন করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ এবং তা পাচার করায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।”

অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তার আইনজীবী এম মাইনুল ইসলাম বলেন, “হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। তার অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও যায়নি। ডেসটিনির কোনো সম্পত্তি বা টাকা-পয়সা তিনি লেনদেন করেননি।

“তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা বেআইনি। আমরা এই রায়ে ক্ষুব্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করব।”

রায়ের পর হারুনকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়, তিনি কোনো কথা বলেননি। এজলাসে উপস্থিত রফিকুল আমীনসহ অন্য আসামিরাও নিশ্চুপ ছিলেন।

হারুন অর রশিদকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত কারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

রায়ের পর হারুন আদালতের বেঞ্চে বসে ছিলেন প্রায় দুই ঘণ্টা। কয়েকজন বন্ধু-স্বজনের মাঝে তাকে বার কয়েক চোখ মুছতে দেখা যায়।

পরে রাতে খবর আসে, হৃদরোগের কারণে তাকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গ্রাহকের আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার জজ আদালত ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকেও কারাদণ্ড দিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিগ্রাহকের আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার জজ আদালত ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকেও কারাদণ্ড দিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কার কী সাজা

ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন: ১২ বছর কারাদণ্ড, ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছর কারাদণ্ড

ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন: ১০ বছর কারাদণ্ড, দেড় কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড

ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট এম হারুন-অর-রশীদ: ৪ বছর কারাদণ্ড, সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদণ্ড

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন ও সাঈদ-উর-রহমান: ১০ বছর করে কারাদণ্ড, ১৮০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ২ বছর ৬ মাসের সাজা

সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন: ৯ বছরের কারাদণ্ড, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদণ্ড

ইরফান আহমেদ সানী: ৯ বছরের সাজা, ১৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ দুই বছর ৬ মাস কারাদণ্ড

ফারাহ দীবা, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস: ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড

জমশেদ আরা চৌধুরী: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৩৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছরের সাজা

জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন: ৯ বছর কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড

মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মো. সাইদুল ইসলাম খান রুবেল ও মজিবর রহমান: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড

সুমন আলী খান: ৯ বছরের কারাদন্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও আড়াই বছর কারাদণ্ড

শিরীন আকতার ও রফিকুল ইসলাম সরকার: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও আড়াই বছর করে সাজা

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম: ৮ বছর কারাদণ্ড, ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড

সুনীল বরণ কর্মকার: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড

ফরিদ আক্তার: ৮ বছর কারাদণ্ড, আড়াই কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদণ্ড

এস এম শহিদুজ্জামান চয়ন: ৮ বছরের কারাদণ্ড, পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদণ্ড

আব্দুর রহমান তপন: সাত বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড

মেজর সাকিবুজ্জামান খান: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা

এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব ও এএইচএম আতাউর রহমান: ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর সাজা

জিএম গোলাম কিবরিয়া মিল্টন: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের সাজা

আতিকুর রহমান: সাত বছর কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর সাজা

খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ ও দেলোয়ার হোসেন: ৭ বছর করে কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা

জেসমিন আক্তার মিলন: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর সাজা

সফিকুল হক: ৭ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সাজা

ড. এম হায়দারুজ্জামান: ৬ বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর ছয় মাস কারাদণ্ড

মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন: ৬ বছর কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড

কাজী ফজলুল করিম: ৫ বছর কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড

মোল্লা আল আমিন: ৪ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ জরিমানা, অনদোয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড

সফিকুল ইসলাম: সাত বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর ছয় মাস কারাদণ্ড

জিয়াউল হক মোল্লা ও ফিরোজ আলম: ৫ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড

ওমর ফারুক: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড

সিকদার কবিরুল ইসলাম: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা

আদালতের বাইরে বিক্ষোভ

একদল লোক এদিন নিজেদের ডেসটিনির গ্রাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখান। ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও এমডিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন তারা।

বিক্ষোভকারীরা রায়ের পর বলেন, এই রায় তারা ‘প্রত্যাখ্যান’ করছেন। রফিকুল আমীনসহ কর্মকর্তাদের ‘মুক্তি দিয়ে’ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক, এটাই তারা চান।

চাঁদপুর থেকে আসা মুনসুর আলম নামে একজন নিজেকে ডেসটিনির গ্রাহক পরিচয় দিয়ে বলেন, “রফিকুল আমীন মুক্তি পেলে ডেসটিনি আবার দাঁড়াবে এবং এর মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরৎ পাব।”

মামলা বৃত্তান্ত

২০০০ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি দিয়ে এই গ্রুপের যাত্রা শুরু। পরের বছরে বিমান পরিবহন, আবাসন, মিডিয়া, পাটকল, কোল্ড স্টোরেজ, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানিতে ডেসটিনির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়।

পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে।

দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।

এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনে রায় দিল আদালত। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

কিন্তু জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠলে ২০১২ সালে হারুন ও রফিকুল আমীনকে কারাগারে যেতে হয়।

পরে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থা’ বিবেচনায় হারুন জামিন পেলেও রফিকুল আমীন কারাগারেই ছিলেন।

কারাদণ্ডের রায়ের পর ডেসটিনির হারুন হাসপাতালে

বাংলাদেশে ৭৫ ও ৮১ সালের মতো অভ্যুত্থানের ঝুঁকি কমেছে: সাবেক সেনাপ্রধান  জেনারেল হারুন - BBC News বাংলা

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় হয়। তাতে ৪৬ আসামিরই সাজা হয়।

হারুনকে দেওয়া হয় চার বছরের কারাদণ্ড। সেইসঙ্গে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় তাকে। এই অর্থ দিতে না পারলে তাকে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।

জামিনে মুক্ত থাকা হারুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর অন্য আসামিদের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ হয়।

তবে বিকালেই কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইই) হাসপাতালে ভর্তি করাতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু আর বলতে চাননি কারা কর্তকর্তাদের কেউ।

বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বিকেলের দিকে কার্ডিয়াক প্রবলেম নিয়ে হাসপাতালে এলে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।”

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন (৭৪)একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠনের সময় সদস্য সচিব ছিলেন। ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পর তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ২০১২ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনকে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

জাতীয়

কুমিল্লায় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মীকে গুলিতে আহত করার ঘটনায় আটক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

সোমবার রাতে কুমিল্লার বিচারিক হাকিম আবু বকর সিদ্দিক এ আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান।

একই স্থানে ছাত্রলীগ ও এলডিপির অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে সোমবার দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ফটকে রেদোয়ানের বন্দুকের গুলিতে এক ছাত্রলীগ ও এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আহত হন।

এ ঘটনায় কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সোমবার বিকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কারাগারে পাঠানো চারজন হলেন এলডিপি মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ (৬৯), চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে আলী (৩৭), হারং গ্রামের আব্দুল মবিনের ছেলে বাকি বিল্লাহ (৩৯) এবং রেদোয়ান আহমেদের গাড়িচালক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া খামারখাতা গ্রামের রেজাউল করিম (৫৫)।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে গুলি ছোড়েন। প্রাথমিকভাবে রেদোয়ান আহমেদ গুলি ছোড়ার সত্যতার প্রমাণ মিলেছে।

“কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

সোমবার বিকাল ৪টায় চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনে কলেজ ছাত্রলীগ ও পৌর এলডিপি পাল্টাপাল্টি ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। দুপুর ১টার পর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন।

দুপুর আড়াইটায় রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ প্রধান ফটকের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের সঙ্গে এলডিপি নেতাকর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষ উত্তেজিত হয়ে ওঠার পর রেদোয়ান আহমেদ গাড়ির জানালা খুলে পরপর দুটি গুলি করেন। এতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।

এরপর তিনি জনতার রোষ থেকে বাঁচতে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পুলিশ তাকে আটক করে।

২০০১ সালে রেদোয়ান বিএনপির মনোনয়নে কুমিল্লা-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ওই সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে বিএনপি থেকে বেরিয়ে তিনি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন। এই দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে।

রেদোয়ান আহমেদকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এলডিপি মহাসচিব পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনার শিকার।

সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “চান্দিনায় রেদোয়ান আহমেদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় আবার প্রমাণিত হল, দেশে এখন ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে।”

রেদোয়ান হামলার শিকার হয়েছিলেন দাবি করে তার জন্য দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ চাইলেও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় সরকারের স্ববিরোধিতাই ফুটে ওঠে। এই সরকার যে সন্ত্রাসনির্ভর তা এধরনের হামলায় স্পষ্ট হচ্ছে।”

জাতীয়

ফেইসবুকে পিস্তল হাতে ছবি পোস্ট করে ভাইরাল হওয়া পাবনার সেই ছাত্রলীগ নেতাকে রাজশাহী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, নগরীর সাগরপাড়া গ্র্যান্ড তোফা হল ভবন থেকে রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তার দেওয়া তথ্যে ওই এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে তিন রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান।

গ্রেপ্তার আবু বক্কার সিদ্দিকী রাতুল পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের গাবগাছি গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে।

রাতুল পাবনা জেলা ছাত্রলীগের কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

সদ্য বিলুপ্ত ওই দুটি কমিটির পদে ছিলেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এর আগে নিশ্চিত করেছিলেন।
লেফটেনেন্ট কর্নেল রিয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবার অস্ত্র হাতে রাতুলের কয়েকটি ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ছায়া তদন্ত করে র‌্যার। এরপর র‌্যাবের একটি টিম রাতুলকে আটকে অভিযান চালায়।

রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কথা রাতুল স্বীকার করেছেন বলে জানান রিয়াজ।

রিয়াজ বলেন, “লোকজন যেন তাকে ভয় পায় এবং নিজেকে বড় সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে রাতুল ‍অস্ত্র হাতে ফেইসবুকে ছবি দিয়েছেন।”