জাতীয়

রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার থেকে পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজারহাটে ও দিনাজপুরে ৩৯ মিলিমিটার। এছাড়া বগুড়া, রংপুর ও সৈয়দপুরে ১৪ মিলিমিটার এবং তাড়াশে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বাড়তি অংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

সোমবার সকাল থেকে ঢাকায় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি দেখাতে বলা হয়েছে।

জাতীয়

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রথম রোজার দিনে রান্নার গ্যাস স্বল্পতায় নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীর অনেক পরিবারকেই।

রোববার হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের এ ত্রুটির কারণে শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই গ্যাস সরবরাহ কমে যায় বলে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

দেশের অন্যতম প্রধান এ গ্যাসক্ষেত্রে ক্রুটি দেখা দেওয়ার পর এদিন দুপুরের মধ্যে তা মেরামতের চেষ্টা করা হয়। দিনভর অপেক্ষায় ছিলেন তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারাও। তবে সোমবার সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা এ কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এদিন দুপুরের আগেই ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকার চুলায় গ্যাস একেবারে উধাও হয়ে যাওয়ার খবর আসে। বিকালের দিকে কিছুক্ষণের জন্য অনেক এলাকায় গ্যাস আসলেও চাপ কম থাকায় তাতে রান্না করা যায়নি।

এ বিষয়ে রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরি বার্তা পাঠিয়ে গ্রাহকদের কাছে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে।

বার্তায় বলা হয়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা ত্রুটি মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা যাচ্ছে।

“গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিজনিত কারণে কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।“

সাময়িক এ অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

তিতাসের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মির্জা মাহবুব হোসেন বলেন, এদিন সাধারণ সময়ের তুলনায় সরবরাহ লাইনে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পেয়েছেন তারা। এর মধ্যেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রাখতে গিয়ে আবাসিক এলাকায় রেশনিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস কমিয়ে দিতে হচ্ছে।

“দুপুরের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছিল। পরে বিকালে বলা হয় আজকের (রোববার) মধ্যে আর সম্ভব না। আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে শেভরনের গ্যাসফিল্ডের সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের সংযোগ হয়ে প্রতিদিন ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের চেয়ে বেশি গ্যাস পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা।

আর দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে বেশির ভাগ গ্যাস আসে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে।

পেট্রোবাংলার হিসাবে, শনিবার দেশের মোট গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২৭৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে বিবিয়ানা থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১১৫১ মিলিয়ন ঘনফুট, যা দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৪১ শতাংশ।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাজিয়া আফরিন বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সকাল ১০টার দিকে গ্যাস চলে যায়। সাময়িক সমস্যা মনে করে বিকালে ইফতারি তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো খাবার তৈরি করতে পারিনি।

“বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে কিছু ইফতার কিনে আর ছোলা মুড়ি দিয়ে প্রথম দিনের ইফতার সারতে হয়েছে। রাতে রান্নাও করতে পারিনি। রাত ১১টার দিকে মিন মিন করে স্বল্প চাপে কিছু গ্যাস আসতে শুরু করেছে।“

সাজিয়ার মতই মিরপুর, শ্যামলী, শান্তিবাগসহ আরও কিছু আবাসিক এলাকা থেকে গ্যাস সঙ্কট ও ভোগান্তির কথা জানান অনেক বাসিন্দা।

জাতীয়

পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের প্রায় ১ ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

রোববার (০৩ এপ্রিল) রাত ১১ টা ৩৮ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহজাহান শিকদার জানান, চকবাজার আশিক টাওয়ারের পাশে একটি গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট যোগ দেয়। পরে আরো দুটিসহ মোট ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।

জাতীয়

বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর আ.লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী ও ২০১৬ সালে রিজভি হাসান ওরফে বোচা বাবু – এ দুই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে টিপু হত্যার ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। টিপুর অন্যতম সহযোগী ছিলেন রিজভী হাসান বাবু।

টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ গ্রেফতার ৪জনের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শনিবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ৪জন জানিয়েছে, মিল্কী হত্যা মামলায় রেহাই পায় টিপু। এরপর বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্যে টিপুর প্রভাব বিস্তার করলে তাকে হত্যা করেন তারা।

উল্লেখ্য, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড এর সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। এর ৩ বছরের ভেতর একই এলাকার বাসিন্দা বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

গ্রেফতার ফারুক ও পলাশ প্রায় একই রকম তথ্য দিয়ে জানায়, মিল্কী হত্যাকাণ্ডে টিপুর সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে তারা মানববন্ধন, আলোচনা সভা, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেও লাভ হয়নি। জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা হতে অব্যাহতি পায়।

পরবর্তীতে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে গ্রেফতার ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা।

বর্তমানে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার চলছে।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানায়, তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা।

জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে তারা ব্যর্থ হয় বলে জানায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা।

ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা একপর্যায়ে রিজভীর বাবা কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেফতার মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলে ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা।

মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্ত্বেও জাহিদুল ইসলাম টিপুর চাপে তিনি সাক্ষ্য দেন। এতে আরো ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওমর ফারুক গং।

এদিকে কালামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে গেলে তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা ছিল, বাদী কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন না।

পরবর্তীতে মোরশেদুল আলমকে নিজ দলে ভিড়িয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা।

হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় মোরশেদুল আলম। উল্লেখ্য , মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভূক্ত ৩নং আসামি।

হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই গমন করেন। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়।

টিপু হত্যাকাণ্ডের আসামিরা আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশ হতে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরোও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠায়।

ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরবর্তীতে জাহিদুল ইসলাম টিপু গ্রান্ড সুলতান রেস্তোরাঁ হতে বের হলে কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। বর্ণিত অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় টিপুকে গুলি করে খুন করে তাদের ভাড়াটে খুনিরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম টিপু। ঘটনাস্থলে একজন নিরীহ কলেজ ছাত্রী নিহত হয়।

নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা এবং বিশেষ করে একজন কলেজ ছাত্রীর নিহত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

র‌্যাবের ব্যাপক তদন্ত এবং গোয়েন্দাদের নজরদারিতে গ্রেফতার হন এ হত্যাকাণ্ডের শুটার মাসুম।

এরপর গ্রেফতার হন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক (৫২) এবং আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮), মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ।

জাতীয়

চৈত্রের তাপপ্রবাহের জনজীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। তার ওপর পশ্চিমা লঘুচাপের আনাগোনায় বেড়েছিল গুমোট গরম।

তবে সন্ধ্যার পর থেকে নেমে আসা ঝড়ো হাওয়া আনলো স্বস্তির বৃষ্টি।

রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে মেঘের উপস্থিতি রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরের পর থেকেই ছিল। তবে বৃষ্টি না আসায় গরম অনুভূতি আরও বেড়ে যায়। তবে সন্ধ্যার পর থেকে কাটতে শুরু করে সেই পরিস্থিতি। পৌনে নয়টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বাতাস নেমে এলে ঝরো ঝরো ধারায় পড়তে থাকে বৃষ্টিও।

হঠাৎ ধূলিঝড়ের পর বৃষ্টিতে দিগ্বিদিক ছুটতে দেখা যায় পথচারীদের। সবাই খুঁজতে থাকেন আশ্রয়। ফুটপাতের স্টল, হকারদের ছাউনি, দোকানপাট মিনিট খানেকের মধ্যেই উপচে পড়ে লোকজনে। তবে সবার মুখেই যেন স্বস্তির ছায়া। গরমে হাঁপিয়ে ওঠা জনমনে বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও ভোগান্তিও নামে। রিকশা ভাড়া বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ।

আবহাওয়া অফিস অবশ্য সন্ধ্যাবেলায় পূর্বাভাস দিয়েছিল ঝড়ের। সেটাই সত্যি হলো। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেলেনি।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।

এ অবস্থায় সোমবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।

অন্যদিকে রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৮-১২ কি.মি.। মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। আর বর্ধিত ৫ (পাঁচ) দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হবে।

রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যথাক্রমে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ১১ মিলিমিটার।

জাতীয়

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে হত্যার মূল শুটার মো. মাসুম ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পাঁচদিন আগে মাসুম কাট-আউট পদ্ধতিতে টিপুকে হত্যার চুক্তি করেন।

রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, হত্যার আগের দিন টিপু রেস্টুরেন্ট থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলে রাস্তা অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেন মাসুম। তবে বেশি লোকজন থাকায় সেদিন ব্যর্থ হন। ঘটনার দিন (২৪ মার্চ) এক ব্যক্তি টিপুর রেস্টুরেন্টে অবস্থান করে মাসুমকে আপডেট দিতে থাকেন।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তার সহযোগী যারা ছিল, এ ঘটনার পেছনে কারা ছিল- তাদের গ্রেফতার করবো। এছাড়া মোটরসাইকেল ও অস্ত্র উদ্ধার করবো।

টিপুকে হত্যা করতে কত টাকা কন্ট্রাক্ট হয় জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, কত টাকার বিনিময়ে তা জানা যায়নি। তবে গ্রেফতার মাসুমের নামে এলাকায় বেশকিছু মামলা রয়েছে। সেই মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য টিপুকে হত্যার কন্ট্রাক্ট পান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টায় রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ঐদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।

জাতীয়

পথশিশুদের জন্য কাজ করতেন ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল, স্বেচ্ছাসেবী আরও সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন আক্রান্ত হলেন, জখম হলেন, তখন কাছের হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক হয়েও প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও তিনি পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

৩৮ বছর বয়সী এই দন্ত চিকিৎসক রোববার ভোরে শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়ে রোকেয়া সরণীতে আক্রান্ত হন। তিনি তখন ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছিলেন। হামলাকারীরা তার উরুতে ছুরিকাঘাত করে যায়।

বুলবুলকে তখনই কাছের আল হেলাল হাসপাতালে নিয়েছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বেসরকারি এই হাসপাতালে তাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।

আল হেলাল হাসপাতাল কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, বুলবুলকে তাদের হাসপাতালে নেওয়াই হয়নি।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

দিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাওয়া যায় মো. ইসমাঈল নামে স্থানীয় এক নিরাপত্তাকর্মীকে। তিনি হামলার স্থানটি দেখিয়ে বলছিলেন, এখানেই ঘটেছে ঘটনা।

মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞে চারদিক ধুলোয় ধূসর। এর মধ্যে এক কোণায় রক্তে কালচে হয়ে ছিল অনেকটা মাটি। তার কয়েকশ গজ দূরেই আল হেলাল হাসপাতাল।

ইসমাইল বলেন, আল হেলাল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বুলবুলকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা হয়নি।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল মর্গে বন্ধুর লাশের অপেক্ষায় থাকা মোহাম্মদ সিরাজও বলেন, “প্রথমে সেই (আল হেলাল) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তারা পুলিশ কেস বুঝতে পেরে বুলবুলকে হাসপাতালেই ঢুকতে দেয়নি। তারা চিকিৎসা না দিয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এখানেও কিছু সময়ক্ষেপণ হয়েছে, যার কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতেই তিনি মারা গেছেন।”

পুলিশের ভাষ্য, এই চিকিৎসকের ডান পায়ের উরুতে একটি আঘাতই করা হয়েছিল। উরুর সেই জখম থেকে অনেক রক্ত পড়ছিল।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাহতাব উদ্দীন বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীদের যে বর্ণনা, সেটা হচ্ছে, তিনি চিৎকার করার কারণে ছিনতাইকারীরা চলে যায়। তিনি যখন দেখেন রক্ত পড়ছে, তখন স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে আল হেলাল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

“আল হেলাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করতে না পেরে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাওয়ারও অনেকক্ষণ পরে তিনি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েন।”

তবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বুলবুলকে মৃতই আনা হয়েছিল।

বুলবুলের স্ত্রী যে থানায় মামলা করেছেন, সেই মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুল ইসলাম বলেন, “সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কাগজে লেখা রয়েছে- ‘ব্রট ডেড’।”

সোহরাওয়ার্দীতে ময়নাতদন্তের পর বিকালে বুলবুলের লাশ তার স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

ময়নাতদন্তে কী পেয়েছেন- জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, “অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে।”

বুলবুলের স্বজনদের দাবি, আল হেলাল হাসপাতাল যদি প্রাথমিক চিকিৎসাটা দিত, যদি রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করত, তাহলে হয়ত বুলবুলকে মরতে হত না।

বুলবুলের সঙ্গে ‘পথশিশু সেবা সংগঠনে’ যুক্ত সাখাওয়াত আলী বলেন, “বুলবুলের উরুতে যেই জখমের চিহ্ন আছে, এতটুকু জখমে কেউ মারা যেতে পারে? সেটা খুবই রহস্যজনক।”

বুলবুলের উরুতে ছুরির যে একটাই জখম ছিল, সেটা তেমন গুরুতর মনে হয়নি পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও।

মাহতাব বলেন, “ডান পায়ের উরুতে আঘাতের ফলে একটা লোক মারা গেল, এটা আপনাদের মতো আমার কাছেও রহস্য। এটা রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু, না অন্য কারণে, তা ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই উঠে আসবে।”

দুপুরে তিনি যখন একথা বলছিলেন, তখনও ময়নাতদন্ত হয়নি।

ময়নাতদন্তের পর এনিয়ে প্রশ্ন করলে সোহরাওয়ার্দীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, “মেজর কতগুলো রক্তনালী আছে। এগুলোর কোনটা কাটা গেলে ব্লিডিংয়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।”

পুলিশি ঝামেলা এড়াতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে হামলায় জখম ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো।

দুপুরে আল হেলাল হাসপাতালে গিয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি এই হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক পলাশ কান্তি বলেন, আহত বুলবুলকে তার হাসপাতালে ঢোকানোই হয়নি।

হাসপাতালে কি জরুরি বিভাগ ছিল না, কেন ঢোকানো হল না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা ডিউটি ডাক্তার বলতে পারবেন। আপনি এখন যে ডিউটি ডাক্তার, তার সঙ্গে কথা বলেন। আগের ডিউটি ডাক্তার তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে গেছেন।”

হাসপাতালের দুপুরে কর্মরত চিকিৎসক জিয়া দাবি করেন, বুলবলুকে হাসপাতালে আনাই হয়নি।

বুলবুল ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন বলে পুলিশ ধারণা করলেও তার পরিবারের ধারণা ভিন্ন।

বুলবুলের শ্বশুর ইয়াকুব আলী বলেন, “যদি টাকা আর মোবাইল দুইটাই সাথে থাকে, তাহলে এটা কীভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়?”

বুলবুলের কাছে ১২ হাজার টাকা ছিল এবং তা খোয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

বিএনপি ঘরানার চিকিৎসক বুলবুল মগবাজারে ‘রংপুর ডেন্টাল’ নামের একটি চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। পাশাপাশি গত পাঁচ বছর ধরে ‘মেসার্স রংপুর ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও চালাতেন তিনি৷

ঠিকাদারি কাজে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য ভোরে বুলবুল বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন বলে জানান তার শ্বশুর ইয়াকুব।

তবে পুলিশ কর্মকর্তা মাহতাব বলেন, “আমরা যতদূর জানি, তিনজন ছিনতাইকারী ছিল। এরা এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডস্থলের আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তার ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনজন ছিনতাইকারী ঘটনার পর দুটো দলে ভাগ হয়ে হেঁটে গলির পথ ধরে চলে যায়।

জাতীয়

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক সভায় বসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আগামী ৫ এপ্রিলের এ বৈঠকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ রোববার সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান ইসির প্রথম সভা হবে ৫ এপ্রিল। এ সভায় সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কুমিল্লার ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি। কোনো জটিলতা না থাকলে রমজানে তফসিল দিয়ে দিতে পারে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই আমরা স্থানীয় নির্বাচনগুলো করে থাকি। কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ক্লিয়ারেন্স পেলেই সভায় আলোচনা করে কুমিল্লা ভোটের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি জানান, রমজান মাসে ভোট হবে না। তবে মে মাসে নির্বাচন করতে হলে রমজানের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোটের তারিখ ঈদের পরে নির্ধারণ করা হতে পারে।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ মে প্রথম সভা হয়।

তাই এই করপোরেশনের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে এ বছরের ১৬ মে। মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সব দলের আস্থা অর্জন। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন তাদের নিজেদের প্রমাণ করার ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে বিশ্লেষকরা।

জাতীয়

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় কালরাতের হত্যাযজ্ঞ স্মরণে আজ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত ‘ব্ল্যাক আউট’ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ। এই ১ মিনিট অন্ধকারে ছিল পুরো দেশ।এর মাধ্যমে অর্ধশতক আগে এই রাতে নিরীহ বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নিধনযজ্ঞের বিভীষিকার স্মৃতি স্মরণ করা হলো।

১৯৭১ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়। জাতির জীবনে আসা এই ‘ভয়াল কালরাত’-এ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ এদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এই সময়টায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিল সরকার। তবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত রাখা হয়।

জাতীয়

‘কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/আমি আর লিখব না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা/কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস/ব্যর্থ চল্লি­শে বসে বলবেন, ‘পেয়েছি, পেয়েছি’/কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে/ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।’ কবি হেলাল হাফিজ যে পতাকা ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন সেই স্বাধীন দেশের পতাকা, সেই স্বাধীনতা এসেছে এ বাংলায়। সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আজ আমরা স্বাধীনতার ৫১ বছরে।

১৯৭১ সালের আজকের দিনে হাজার বছরের পরাধীনতার শেকল ভেঙে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। আর সেই ঘোষণার পথ ধরেই ৩০ লাখ শহিদ আর চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ অর্জন কালের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার। এ গর্ব বাঙালির।

বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এক দেশ। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বের বুকে এক স্বনির্ভর রাষ্ট্র। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রতীক। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, মানব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ প্রগতির মডেল। তাই স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাঙালি আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার দেখানো সোনার বাংলার স্বপ্নের পথ ধরেই আজকের বাংলাদেশ। যার নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজকের দিনে জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের। স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। জাতি স্মরণ করে দেশের জন্য, বাংলা ভাষার জন্য, স্বাধিকারের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা প্রতিটি মানুষকে।

বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকরা শোষণ এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তারা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীরশহিদদের। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে- যারা অধিকার আদায়ে ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বরং বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন মহামৃত্যুঞ্জয়ী। তাই নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে- আজ তারা যে পথটি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তার দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক, মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, দেশে উন্নয়নের যে গতি সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাণীতে তিনি সব বাংলাদেশিকে ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠেছিল জেনারেল আইয়ুবের গদি। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা’ পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গ্রাম-শহর, জনপদ। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেওয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’। কিন্তু ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় মুক্তির দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ছবি।

কিন্তু বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাসের নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত্রু সেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।

আজকের দিনে সারা দেশের মানুষ বারবার স্বাধীনতার মর্মবাণীটি অনুধাবণ করবে। আরও একবার শপথ নেবে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে চলার।