স্বাধনীতার পর এই প্রথম কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে পড়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে কেউ নেই।
আগেও এই পদগুলো একবার পুরোপুরি ফাঁকা হয়েছিল। তবে সেটি সেনা সমর্থিত ১/১১ সময়কার জরুরি অবস্থার সময়।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতেও সিইসির পদ ফাঁকা থাকার নজির আছে। এক্ষেত্রে সিইসির পদটি ফাঁকা ছিল মোট চারবার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দিনের জন্য ফাঁকা ছিল ২০০০ সালে ও ২০০৭ সালে। তবে নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) পদ ১/১১ সরকারের সময় ছাড়া কখনো ফাঁকা ছিল না।
দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সিইসি পদে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. ইদ্রিস। তিনি ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর জিয়াউর রহমান নিয়োগ দেন বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলামকে। তিনি ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা বসে নিয়োগ দেন বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মাসুদকে। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। সবচেয়ে কম সময় অর্থাৎ ১০ মাস ৬ দিন দায়িত্ব পালন করে একই বছর ২৪ ডিসেম্বর বিদায় নেন তিনি। ২৫ ডিসেম্বর নিয়োগ পান বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ।
এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সিইসি রউফ ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল বিদায় নেওয়ার পর ৮ দিন ফাঁকা ছিল পদটি। ওই প্রথম সিইসির পদটি ফাঁকা থাকে। সে বছরের ২৭ এপ্রিল এই পদে বিচারপতি একেএম সাদেককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সময় অর্থাৎ ১১ মাস ১০ দিন দায়িত্ব পালনের পর চলে যান ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল। দুই দিন ফাঁকা থাকার পর ৯ এপ্রিল সিইসির পদে আসেন মোহাম্মদ আবু হেনা।
ওই বছর জুনে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তিনি ২০০০ সালের ৮ মে চলে যাওয়ার পর ১৪ দিন ফাঁকা ছিল সিইসির পদটি। একই বছরের ২৩ মে আসেন এমএ সাইদ। ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি চলে গেলে ২৩ মে আসেন বিচারপতি এমএ আজিজ। বিএনপির আমলে নিয়োগ পাওয়া তিনিই শেষ সিইসি।
এরপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি এমএ আজিজ চলে গেলে ১৪ দিন ফাঁকা থাকার পর একই বছর পাঁচ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন ড. এটিএম শামসুল হুদা। ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার দায়িত্ব শেষ হলে তিনদিন ফাঁকা থাকার পর ৯ ফেব্রুয়ারি পদটিতে আসেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার দায়িত্ব শেষ হলে পাঁচদিন ফাঁকা থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন কেএম নূরুল হুদা।
নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুরো কমিশন ফাঁকা ছিল ২০০৭ সালে আজিজ কমিশন চলে যাওয়া পর। তিনি ২১ জানুয়ারি চলে যাওয়ার পর অন্য দুই কমিশনারের অধীনে চলে ৩১ জানুয়ারি। এরপর শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন দায়িত্ব নেন ওই বছর ৫ ফেব্রুয়ারি। সে সময় চারদিনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ফাঁকা ছিল। অন্যান্য সময় সিইসির পদ ফাঁকা থাকলেও কমিশনাররা ছিলেন।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়েছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন পুরোপুরিভাবে ওই বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি চলে যাওয়ার পর। সেই হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুরো কমিশন বিদায় নিয়েছে। বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে সবগুলো পদ।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ নতুন কমিশন নিয়োগের জন্য এরই মধ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে আইনে নির্ধারিত পন্থায় ৩২২ ব্যক্তির নাম জমা পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে যোগ্য ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। যার ভিত্তিতে নতুন কমিটি পাবে নির্বাচন কমিশন। ফলে এই মধ্যবর্তী সময়ে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন ফাঁকা থাকলেও সাংবিধানিক কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হবে না। ইসি চিব তার কাজ পরিচালনা করবেন।
ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ছিল। সংবিধান কার্যকর ছিল না। তাই সে সময় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার আগে কখনও পদগুলো একসঙ্গে ফাঁকা ছিল না।
এদিকে নতুন কমিশনকে বরণের প্রস্তুতিও শুরু করেছে ইসি সচিবালয়। এরই মধ্যে সদ্য বিদায়ী কমিশনারদের দফতরগুলো ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে, সরিয়ে ফেলা হয়েছে নামফলকও।