জাতীয়

বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আলোচিত পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বিএফআইউ এর ওই কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক হিসাব জব্দ সংক্রান্ত চিঠি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে।

এরই মধ্যে এ সব কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার (৭ জুলাই) রাতে বিসিএসের প্রশ্নফাঁস নিয়ে পিএসসির বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সৈয়দ আবেদ আলীর পোস্টগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। এ ঘটনায় সোমবার (৮ জুলাই) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১৭ জনকে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এছাড়া নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং লিটন সরকার আরও একজন গ্রেপ্তার হন।

জাতীয়

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন সেটা রাজপথে নেয়া উচিত নয় বলে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

সুপ্রিমকোর্টে নিজ কার্যালয়ে আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গেছে। তাই এই মুহূর্তে এই ধরনের আন্দোলনটা আমি মনে করি তাদের না করাই উচিত হবে।

আন্দোলনকারীদের বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না আনতে। কারণ, এটা আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের আমি একটু ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করব। আমি জানি না আন্দোলনটা তারা কেন করছেন? আমি মনে করি আন্দোলনটা না করাই ভালো।’ এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। কাল বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলেও আমরা সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। যেখানে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।

এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে উচ্চ আদালত। সে রুল যথাযথ (এ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট বিভাগ। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার কোর্ট। গত ৪ জুলাই বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আসে। তবে ওইদিন রিটের পক্ষের জেষ্ঠ্য আইনজীবী না থাকায় তার পক্ষে সময় চাইলে সর্বোচ্চ আদালত শুনানি ‘নট টুডে’র আদেশ দেন।

জাতীয়

বন্ধ থাকা তিনটি কারখানার জমিতে ইকোনমিক জোন বা হাইটেক পার্ক করার সুপারিশ করেছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিজেএমসির তিনটি কারখানা এখনো ইজারা প্রদান করা হয়নি। এই তিন কারখানা হচ্ছে- ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস লিমিটেড, করিম জুট মিলস লিমিটেড এবং চট্টগ্রামের ষোলশহরে অবস্থিত আমিন জুট মিলস লিমিটেড।

সংসদীয় কমিটি এগুলোকে ইকোনমিক জোন কিংবা হাইটেক পার্কে প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা, তা নির্ণয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য সুপারিশ করে। এছাড়াও বৈঠকে বিজেএমসির মালিকানাধীন যেসব কারখানা ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো লাভজনক কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

এছাড়া সম্পদ সিকিউরিটাইজ করে বন্ড, শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে সরকারের কোনো লাভজনক কাজে ব্যবহার কিংবা বিজেএমসির কোনো শিল্পকারখানা আধুনিকায়ন করার কাজে লাগানো যায় কিনা, সে বিষয়টিও উল্লে­খ করা হয়। এসব একটি বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন- কমিটির সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, নুরুজ্জামান আহমেদ, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, আনোয়ারুল আশরাফ খান এবং নাজমা আক্তার।

জাতীয়

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সোমবার ৮ম দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফলে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।

শিক্ষকদের আন্দোলনকে সরকার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষকরা বলেছেন, তাদের চলমান সর্বাত্মক আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অষ্টম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। সোমবার বেলা ১২টায় ঢাবির কলা ভবনের সম্মুখ গেটে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকাল থেকেই কর্মবিরতির অংশ হিসাবে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন শিক্ষকরা। ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাবি শিক্ষকরা।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৩ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানার কোনো অবস্থা আমরা দেখছি না। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না। বিজয় নিয়েই আমরা ক্লাসরুমে ফেরত যাব।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছিলাম এই স্কিম বাতিল করুন না হলে আমরা কর্মবিরতি শুরু করব। কিন্তু তারা দাবি মানেননি। ফলে আমরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছি, পরে পূর্ণ দিবস করেছি। এরপর আমরা এই সর্বাÍক কর্মবিরতি শুরু করেছি। যেহেতু আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি, সফলতা আসার আগে আমরা ক্লাসে ফিরব না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি। সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ কর্মবিরতি শুরু হয়ে চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। কর্মবিরতির কারণে ববির ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার সবকিছু এখনো বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, এর ফলে তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সরকার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নন বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিন্তিত। এগুলো
শিক্ষকদের জন্য হতাশাজনক। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো আন্দোলন নয়। তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চায়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, আপনি যখন একটা রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর এবং উন্নত করে তুলতে চাচ্ছেন, তখন সেটা শিক্ষকদের খাটো করে কখনো করা সম্ভব নয়। আজকে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রে বা সরকারে যারা আছেন তারা অবশ্যই মেধাবী। এই জায়গায় যে মানুষগুলো যাচ্ছেন তাদের শিক্ষকরাই তৈরি করে পাঠাচ্ছেন। যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে প্রথমে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে হবে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে মানসিক নির্যাতন তারা করে যাচ্ছে, একটার পর একটা যে আঘাত আমাদের দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার অবসান চাই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ বলে যাচ্ছেন শিক্ষকদের গায়ে যখন আঘাত লাগে ঠিক তখনই তারা কথা বলে। হয়তো কিছুটা সত্য থাকতেও পারে। এটা যদি আংশিক সত্য হয় তাহলেও আমাদের
ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো আন্দোলন নয়।

তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চায়। কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা সুলতানা চূড়া। আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এসএম একরাম উল্লাহ, ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবার অষ্টম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দুপুর ১২টায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সহযোগী অধ্যাপক ড. অরুণ চন্দ্র বর্মণ, সহকারী অধ্যাপক আইনুদ্দীন হক, প্রভাষক ডা. জাকিয়া সুলতানা কলি প্রমুখ।

বশেমুরবিপ্রবি: তিন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। এ সময় সব ধরনের পাঠদান ও পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। সোমবার সর্বাÍক বিরতি পালনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সংলগ্ন অবস্থান কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। শতাধিক শিক্ষক এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি চাই না। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারছি না। দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চার দফা থেকে সরে এখন এক দফায় নেমে এসেছেন। তারা বলছেন, সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করতে হবে।

এ দাবিতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা সোমবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে তারা রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে অবস্থান নেন।

আন্দোলনকারীরা রাজধানীর আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও বিক্ষোভ করেন। এতে এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে স্থবির হয়ে পড়ে গোটা নগরীর যান চলাচল ব্যবস্থা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ। কোনো গাড়ি চলাচল করতে না পারায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে নিমতলী, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, ইউবিএল (পল্টন) ক্রসিং, আগারগাঁও ক্রসিং, শাহবাগ, জিরো পয়েন্ট, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, পুলিশ ভবন ক্রসিং (মিন্টো রোড), বাংলামোটর, সোনারগাঁও ক্রসিং এবং ফার্মগেট ক্রসিংয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন। কোনো সংঘাত না হলেও রাস্তায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়েছে।

দুর্ভোগের শিকার এক গাড়িচালক জানান, গুলশান তিনি আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে বের হয়েছেন। গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আগারগাঁও লিংক রোডে এলে পুলিশ জানায়, আগারগাঁওয়ে রাস্তা ব্লক। তবে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র ক্রসিং হয়ে মিরপুর রোডের দিকে যাওয়া যাবে। তবে গাড়ির লম্বা সারি দেখে তিনি বিজয় সরণি, লেক রোড হয়ে মিরপুর রোডে ওঠার জন্য যাত্রা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক ঘণ্টাতেও বিজয় সরণি পৌঁছাতে পারেননি।

বিকাল ৪টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে মিরপুর সড়ক এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ যাওয়ার সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আন্দোলনকারীরা আর কোনো যানবাহনকেই ছাড় দেননি।

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিকাল ৪টার পর সায়েন্স ল্যাব মোড় ছাড়াও তারা রাজধানীর শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়, মিন্টো রোড, মৎস্য ভবন, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবাজার মোড়, চানখাঁরপুল, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করেন।

আন্দোলনকারীরা মোড়গুলোতে অবস্থান নেওয়ায় আশপাশের সড়কগুলোতে থাকা গাড়িগুলোও আটকে যায়। এসব গাড়ির সামনে-পেছনে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও গণমাধ্যমের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন তারা চলতে দেননি।

যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসাবে অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় শাহবাগ ও কাওরানবাজার মেট্রো স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি ভিড় দেখা গেছে। স্টেশনে টিকিটের জন্যও ছিল দীর্ঘ লাইন। টিকিট কাটার পর প্ল্যাটফর্মে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। ট্রেন এলে স্টেশনে থাকা সব যাত্রী উঠতে পারলেও সোমবার বিকালের চিত্র ছিল একেবারেই আলাদা। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে দু-তিনটি ট্রেন যাওয়ার পর ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। ট্রেনের ভেতরেও ছিল ঘরে ফেরা যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

এদিকে আন্দোলনকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকালে গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বরে অবস্থান নেন। সড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে যানবাহন থেকে অনেক যাত্রী নেমে হাঁটা শুরু করেন।

জাতীয়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাঁড়াশি অভিযানে নামে সিআইডি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন-পিএসসি উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর, নোমান সিদ্দিকী, পিএসসির অবসরপ্রাপ্ত ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, আবু সোলায়মান মো. সোহেল, উপপরিচালক মো জাহাঙ্গীর আলম, পিএসসির সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অডিটর প্রিয়নাথ বায়, মো. জাহিদুল ইসলাম, নিরপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন ও মো মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন, লিটন সরকার ও সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

লাখো চাকরিপ্রার্থীর ভরসার প্রতীক বিপিএসসির নিয়োগ পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির খবর শিউরে ওঠার মতোই। তবে চাক্ষুষ সাক্ষীর তথ্যগুলো মিলিয়ে নিতে বেছে নেওয়া হয় ৫ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাটিকে।

প্রস্তুতি শেষে ছদ্মবেশী প্রার্থীকে তুলে দেওয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি হাতে আসে অন্তত ১ ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।

প্রশ্নফাঁসের তথ্যের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বিপিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।

তিনি জানান, উপপরিচালক হক মোহাম্মদ আবু জাফর স্যার ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ট্যাঙ্ক থেকে তাকে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। তিনি অবগত আছেন ৪৫তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

প্রসঙ্গত, বিপিএসসির কতিপয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করেছে চক্রটি। চাকরি পেয়েছে বহু অযোগ্য প্রার্থী। ফলে প্রজাতন্ত্রের কাজে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগের যে উদ্দেশে গঠিত হয়েছিল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান, সেটিই এখন হুমকির মুখে।

জাতীয়

বেগবান হচ্ছে কোটা বিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা ব্লকড’।

রোববার (৭ জুলাই) পুরো দেশজুড়ে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি পালন করবেন কোটা পদ্ধতি বাতিলে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা। এ কর্মসূচির আগে ছাত্র সমাজের নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেব সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আগামীকাল রোববার বিকেল ৩টা থেকে সারাদেশে বাংলা ব্লকড সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেব সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে। বাংলা ব্লক কর্মসূচিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ।

নাহিদ বলেন, তিনি বলেন, এই আন্দোলনে ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, চাংখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন, আপনারা বাংলা ব্লকড কর্মসূচিকে সফল করবেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায়, মহসড়কগুলোয় শিক্ষার্থীরা অবরোধ করবেন। সরকারের কাছে আমরা জানতে চাই, ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে এখনও কোটা বৈষম্য কেন নিরসন করা হচ্ছে না? কেন এখনও ৫৬ শতাংশ কোটা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে থাকবে? তাদের কত বড় সাহস যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তারা এটা নিয়ে এসেছে। এটা নিয়ে আমরা কিন্তু কড়া জবাব দেব।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের যে স্পিরিট তা ধরে রাখতে হবে। আমাদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ইতিমধ্যে কিন্তু অনেক সাড়া দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো সাড়া দিয়েছে। কোটা বহালের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবেই। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স লাইব্রেরি ও সেন্ট্রাল লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার জন্য; কিন্তু খুলে দেওয়া হয়নি। যদি এখনও খুলে দেওয়া না হয়, তবে আমরা শিক্ষার্থীরা কিন্তু নিজ দায়িত্বে এই দুটো লাইব্রেরি খুলে নিতে বাধ্য হবো।

আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আজ আপনারা যেভাবে হলগুলো থেকে কলেজগুলো থেকে দলবদ্ধ হয়ে এসেছেন এটাই আপনারা পাড়ায় পাড়ায় দলবদ্ধ হোন। যারা হলে হলে বাধা দিচ্ছে, তাদের আপনারা প্রশ্ন করুন- কেউ আপনার চাকরি দিতে পারবে কিনা? আপনার হলের ভাই কি আপনার চাকরি দিতে পারবে? তাহলে আপনার পথ আমার পথ কিন্তু আলাদা আলাদা বেছে নিতে হবে। যারা আমাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছেন, এখনও আপনারা আসুন, আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগদান করুন। একসঙ্গে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাই।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বেশ কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে আসছেন। এই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশীবাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশি ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে থামে৷

জাতীয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই নীতিটাই অনুসরণ করে চলেছেন অত্যন্ত সফলভাবে। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক দেখে বিএনপির গাত্রদাহ হচ্ছে। সেজন্য তারা উল্টাপাল্টা বলা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আসার পর বিএনপি বলতে শুরু করেছে, আমরা নাকি দেশটা ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন চীন থেকে আসার পর তারা বলে কি না, চীনের কাছেও দেশটা বিক্রি করে দিয়েছি। যেখানেই যাই তারা বলছে দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিএনপির কাছে আমার প্রশ্ন, দেশটাকে কয়বার বিক্রি করা যায়?

শনিবার রাত আটটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে প্রীতি সাংবাদিক সম্মিলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নবিএফইউজের চট্টগ্রাম বিভাগ এ আয়োজন করে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এবং আমরা অত্যন্ত সফলভাবে সেটি করে চলেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন সেখান থেকে এসে কিছুদিনের বিরতিতে তিনি এখন চীন সফরে যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে ভারতের যেমন অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক, চীনের সঙ্গেও আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার যেমন অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক, একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের অত্যন্ত চমৎকার ও ভালো সম্পর্ক।

তিনি বলেন, আমরা নিকট প্রতিবেশী ভারত যারা আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছে, তাদের সঙ্গে যেমন ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমাদের পাশে ছিল না তারাও আমাদেরকে সহায়তা করছে, আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছে, আমাদের উন্নয়নে অবদান রাখছে। এটি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির এই সফলতা। এটি বিএনপিসহ অনেকেই বুঝেও না বোঝার ভান করে।

হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকার মাথা উঁচু করে চলে। শেখ হাসিনা কারো কাছে মাথা নোয়াবার নয়, এটি মনে রাখতে হবে। ‘খেপাটে মেজাজের’ রিজভী সাহেব কী বললেন, ‘ঢুলঢুলে মেজাজের’ গয়েশ্বর বাবু কী বললেন, শিক্ষিত হয়েও মির্জা ফখরুল সাহেব ‘অশিক্ষিতের মতো’ কথা বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষা করে, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, প্রধানমন্ত্রী সেটিই করে চলেছেন।

গণমাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নতি প্রতিফলিত হওয়া উচিত: গত পাঁচ বছর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং দীর্ঘ ৭ বছর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. হাছান মাহমুদ।

গণমাধ্যম রাষ্ট্র এবং সমাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে, সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের তৃতীয় নয়ন উন্মোচিত করে। দায়িত্বশীলরা যেখানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে না, তাদের দৃষ্টি সেখানে আবদ্ধ করে। সমাজের দর্পণ হিসেবে গণমাধ্যমকে পরিচালনা করেন সাংবাদিকরা। সুতরাং তারা যদি সঠিকভাবে চলতে না পারে তাহলে গণমাধ্যমও সঠিকভাবে চলতে পারে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি, প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নতি, সেটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। সেটি অনেক সময় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। সমাজের অসঙ্গতি কিংবা দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতা যতটুকু প্রতিফলিত হয়, সমাজের উন্নতি, রাষ্ট্রের উন্নতি কিংবা দায়িত্বশীলদের সফলতা সেটি অনেক সময় ততটুকু প্রতিফলিত হয় না, সেটি হওয়া প্রয়োজন রয়েছে।

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ। আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে সকালে হাছান মাহমুদ নিজ নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং উপজেলায় ‘ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলা’ এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

এ সময় তিনি সমবায় অফিসের মাধ্যমে পশ্চিম খুরুশিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প সমবায় সমিতির সদস্যদের লভ্যাংশের অংশসহ তিন লক্ষাধিক টাকা ঋণ প্রদান ও সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ক্যানসার, কিডনিসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের মাঝে ৫০ হাজার টাকা করে ৪৭টি চেকে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার অনুদানের চেক বিতরণ করেন।

এরপরই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলা’ ও বন বিভাগ আয়োজিত সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতীয়

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিংয়ে থাকা ডুপ্লেক্স বাড়িটি দখলে নিল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। দুদকের মামলায় হাইকোর্টের আদেশে শনিবার দুপুরে প্রায় ২৪ কাঠা জায়গার ওপর নির্মিত বাংলো বাড়িটি জব্দ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম, দুদকের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রউশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল, সহকারী কমিশনার-ভ‚মি সিমন সরকারসহ আরও অনেকে। ‘রহস্যে ঘেরা’ বাড়িটি জব্দ করায় জবর-দখলের শিকার হওয়া স্থানীয় জমির মালিক ও বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশের নানা স্থানে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। বাদ যায়নি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ চোরাবো মোড়ের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়িও। আনন্দ হাউজিং নামের পুলিশ কর্মকর্তাদের গড়া আবাসন প্রকল্পে ২৪ কাঠা জমিতে গড়ে তোলেন বাংলো টাইপের আলিশান এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি। যেখানে সাধারণের প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। বাংলোটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বেনজীর যেদিন আসতেন এ বাড়িতে আর যতক্ষণ অবস্থান করতেন বন্ধ রাখা হতো এখানকার রাস্তা। পুলিশের পাহারায় এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন সরকার বলেন, রূপগঞ্জের মুশুরী-ইছাপুরা সড়কের পাশে গুতিয়াবো, মোগলান, দক্ষিণবাগ, জাঙ্গীর মৌজা নিয়ে আনন্দ হাউজিং সোসাইটির অবস্থান। এখানে লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে লাল রঙের ডুপ্লেক্স বাড়িটি নজর কাড়ে সবার। তবে ভেতরে প্রবেশ করে দেখার সুযোগ মেলেনি কারও। স্থানীয় সূত্র জানায়, আট বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন বেনজীর। বছরচারেক আগে এই জমিতে ওই বাড়ি করেন তিনি। তার বাড়িটি ঘিরে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা গল্প, রহস্য। একটি জাতীয় দৈনিকে বেনজীরের আলাদিনের চেরাগ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ ভেতরে থাকা মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

প্রায় সময়ই পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে এ বাড়িতে আসতেন বেনজীর। পুলিশের নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে তখন বাড়ির পাশের সড়ক দিয়ে লোকজনের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হতো। বেনজীরের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আসতেন চেনা-অচেনা সংগীতশিল্পী ও নাটক-সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তখন বাড়িতে গানের আসর বসত। গানের উচ্চশব্দে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটত স্থানীয় মানুষদের কিন্তু কখনোই ভয়ে কিছু বলেননি কেউ।

প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের ছেলে রামধন সরকার বলেন, তারা চার ভাই পৈতৃক সূত্রে ৫৫ শতাংশ জলাশয় পেয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকে না কিনেই আনন্দ হাউজিংয়ের নামে বালু দিয়ে জলাশয়টি ভরাট করা হয়। জমি ভরাটের বছরচারেক পর লোক মারফত এক কোটি টাকা বিঘা দরে জমিটুকু বিক্রি করেন তারা। তবে টাকা পেয়েই বিক্রি করেছেন বলে জানালেন জমি বিক্রেতারা।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বিপুল পরিমাণ ‘অবৈধ সম্পদ’ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারই ধারাবাহিকতায় এবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বেনজীরের দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটিও জব্দ করা হলো। দুদকের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী শনিবার দুপুরে আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ওই বাড়িতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।

মঈনুল হাসান রওশনী বলেন, বাড়িটিতে অত্যাধুনিকভাবে তালাবদ্ধ থাকায় তাৎক্ষণিক ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। তবে একটি কমিটি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলমের হেফাজতে আগামী তিন দিনের জন্য রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এর ভেতরে থাকা মালামালসহ সবকিছুর জব্দ তালিকা করব।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম বলেন, বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদের মেয়ের নামের সম্পত্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ করার অনুমতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সম্পত্তিটি নিয়ন্ত্রণে নিলাম।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজীরের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছেন। সে তালিকায় এ বাংলোটিও রয়েছে। এরপর বাড়িটি দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত।

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ফের আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, যত দিন সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল না হবে, ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এদিকে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানির কথা থাকলেও রিটকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় শুনানি মুলতবি করেন আদালত।

কোটা বাতিলের দাবির পক্ষের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের আন্দোলন যৌক্তিক। কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন সেটি সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকবে কিনা-সেটি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। এটি বিচারাধীন বিষয়।

অন্যদিকে রিটকারী পক্ষ বলেছে, কোটা বহাল রাখাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের ফলে সরকারি প্রজ্ঞাপনটি বাতিল হয়ে গেছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করায় সেটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হবে সর্বোচ্চ আদালতে। এমন পরিস্থিতিতে কোটা বহালের পক্ষ-বিপক্ষ সবার দৃষ্টি সুপ্রিমকোর্টে।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে মনে করেন বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

শনিবার তিনি বলেন, এর আগে ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে। সরকার বাধ্য হয়ে তাদের দাবি মেনে নেয়। পরবর্তী সময়ে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। সেই থেকে ছাত্ররা আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। আপিল বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তারা কি সিদ্ধান্ত নেবেন এটা সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ার। বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়।

তবে আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধারা তো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, এটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটার সুবিধা পাবেন, এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। তবে অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কোটা রেখে সরকার এটাকে পুনঃনির্ধারণ করতে পারে।

জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান শনিবার বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি রয়েছে। রিট আবেদনকারীর পক্ষে সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দিয়েছেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের কপি এখনও প্রকাশিত হয়নি। আশা করছি এ সপ্তাহে প্রকাশিত হলে লিভ টু আপিল দায়ের করা যাবে হবে। আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য তালিকায় আসতে পারে।

৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার ফলে এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।

তিনি শনিবার বলেন, আমি এখন দেশের বাইরে আছি। সোমবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল। বৃহস্পতিবার সেটি আপিল বিভাগের তালিকায় ছিল। ওইদিন আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছেন, লিভ টু আপিল ফাইল করতে।

তিনি আরও বলেন, এখনও হাইকোর্টের রায়ের কপি প্রকাশিত হয়নি, হলে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল ফাইল করবে। এরপর শুনানি।

এর আগে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৮ সালে কোটাব্যবস্থা রেখে শুধু ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রহিত করা হয় অপমানজনকভাবে। এ কোটাপদ্ধতি বাতিল করার কারণে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি বা তার নিচের পদে চাকরি লাভের সুযোগ পেত। এটি জাতির কাছেও লজ্জার।

কারণ, সুপ্রিমকোর্টের সর্বশেষ রায় অনুসারে ৩০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্পষ্টত উল্লেখ আছে। যদি ৩০ শতাংশ কোটার ক্ষেত্রে প্রার্থী না পাওয়া গেলে, সে ক্ষেত্রে শূন্য পদ মেধার ভিত্তিতে জেলা কোটা থেকে নেওয়া যাবে।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, যত দিন সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল না হবে, তত দিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে শুনানিতে আন্দোলনের প্রসঙ্গটি আসে।

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এত আন্দোলন কিসের, রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিমকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে এই আবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের পলিসি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এখানে আইনের প্রশ্ন জড়িত, যে কারণে আবেদন নিয়ে এসেছি।

ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আগে কোটা ছিল। ২০১৮ সালে কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করা হয়। এটা বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করা হয়েছে। শুনানির অপেক্ষায় আছে।