জাতীয়

ষড়যন্ত্র না থাকলে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হল কেন, সেই প্রশ্ন রেখেছে হাই কোর্ট।

এ বিষয়ে এক রুলের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এমন মন্তব্য আসে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এ সময় বলেন, “পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা আমাদের অহংকার।

“এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা থাকেন, তারা জাতির শত্রু, দেশের শত্রু, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশবিরোধী, এদের খুঁজে বের করতে হবে।”

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ‌্যা গল্প’ বানানোর নেপথ‌্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে বিষয়টি মঙ্গলবার আদেশের জন্য রেখেছে আদালত।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

পাঁচ বছর আগে জারি হওয়া ওই রুল সোমবার শুনানিতে আসে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দিন রোববার রুল শুনানির জন্য বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেছিল।

‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে ১৯৫৬ সালের ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট’র তৃতীয় অনুচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন অনুযায়ী কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছিল আদালত।

‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও আইজিপিকে সেখানে বিবাদী করা হয়।

এছাড়া কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

ওই কমিশন গঠন নিয়ে সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি হলেও পরে আর এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে রুল জারি করা হাই কোর্ট বেঞ্চের পরিবর্তন হয়, মামলাটি আর কোনো বেঞ্চেও উঠেনি।

পাঁচ বছর আগে স্বতঃপ্রণোদিত যেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই রুল আদালত দিয়েছিল, তার মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল-‘ইউনূসের বিচার দাবি’।

পদ্মায় বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে সব সময় বলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তবে ইউনূস সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

জাতীয়

আগামী ১৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য সকল শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি জেনারেল, এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচী পরে জানানো হবে।

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

জাতীয়

সড়কে গড় গতির হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৬২টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি দেশের ওপরে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র।

গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর মধ্যে সড়কপথে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় গড় সময় নির্ণয় করেন আইএমএফের কর্মীরা। এক্ষেত্রে যেসব শহরের দূরত্ব ন্যূনতম ৮০ কিলোমিটার কেবল সেগুলোই হিসেবে নেওয়া হয়, তালিকায় বাদ দেওয়া হয় নগররাষ্ট্রগুলোকে।

গত ২০ মে প্রকাশিত আইএমএফের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির সড়ক রয়েছে পাহাড়ি দেশ ভুটানে। তাদের গড় গতি ঘণ্টায় ৩৮ কিলোমিটার।

এরপর নেপাল ও পূর্ব তিমুরের সড়কে গাড়ির গড় গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ ও হাইতির সড়কে গড় গতি একই- মাত্র ৪১ কিলোমিটার।

দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার সড়কে গড় গতি ৫০ কিলোমিটার, আফগানিস্তানে ৫৭ কিলোমিটার, ভারতে ৫৮ কিলোমিটার ও পাকিস্তানে ৮৬ কিলোমিটার। মালদ্বীপের প্রধান শহরগুলো সড়কপথে সংযুক্ত না হওয়ায় তাদের গড় গতি হিসাব করা হয়নি।

এদিকে, সড়কে গড় গতির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে পর্তুগাল, সৌদি আরব, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্সের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো। আর ধীরগতির সড়ক দেখা গেছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। সড়কের এই ধীর গতিই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা বলে মনে করা হয়।

জাতীয়

ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের রেকর্ড বৃষ্টি চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায়; মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ৩৫ লাখ মানুষ।

সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল কাগজীর টিনশেড বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকালে পানি ঢুকতে শুরু করে। পানি বাড়তে বাড়তে রাতে কোমর পর্যন্ত উঠে গেলে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন এক প্রতিবেশীর দোতলায়।

ইকবাল বললেন, “বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলে কল যায় না। বিভীষিকার মধ্যে আছি। মানুষের আশ্রয় দরকার, খাবার দরকার।”

পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাতে পুরো সুনামগঞ্জ জেলাসহ ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎহীন। সেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখনও খোলা থাকলেও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রানওয়ের কাছে পানি চলে আসায় সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের জন্য।

বন্যার কারণে রোববার থেকে নির্ধারিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সারা দেশে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ।

তবে সুনামগঞ্জ শহরের মানুষ বলছে, খাবারের চেয়েও এখন জরুরি হল আশ্রয়, কারণ পুরো শহরে একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই।
বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন শুক্রবার বিকালে বলেন, “নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমত কাজ করছে না মোবাইল। উদ্ধার যানের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”

শুক্রবার বিকাল ৩টায় সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জের তিন পয়েন্টে বইছিল বিপৎসীমার ৭৭ থেকে ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সেই সঙ্গে চলছে বৃষ্টি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

ওপার থেকে আসছে ঢল

বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে গত তিন দিনে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেবল চেরাপুঞ্জিতেই ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিপুল ওই পানি আন্তঃসীমান্ত নদী হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। তাতেই চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বৃহস্পতিবার বিকাল তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহর। সদরের পাশাপাশি দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা ভাসছে বন্যায়।

সুনামগঞ্জ শহরের হাজিপাড়ার বাসিন্দা সেলিম মিয়ার টিনশেড একতলা বাড়ি ডুবে যাওয়া পরিবার নিয়ে উঠেছেন এক আত্মীয়র দোতলা বাসায়।

তিনি বললেন, “আমার ৫০ বছরের জীবনে সুনামগঞ্জ শহরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিনি। শহরের সব এলাকা প্লাবিত। মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না। এখন ত্রাণের চেয়ে আশ্রয় জরুরি।”

সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানম বলেন, “হঠাৎ এই প্রলয়ঙ্করী বন্যা মানুষকে নানা সংকটে ফেলে দিয়েছে। পানিতে সয়লাব পুরো জেলা। শুকনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।“

তিনি বলেন, “মানুষের আশ্রয়ের জন্য সব স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষকে সহায়তায় সেনাদেরও নামানো হয়েছে।”

পানিতে হাবুডুব খাচ্ছে সিলেট নগরীর অনেক এলাকাও। ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে।
নগরীর শেখঘাট এলাকার রশিদ আহমদ বললেন, “এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বাবের মত বাসায় পানি ঢুকেছে। আমরা গরিব মানুষ। বারবার এভাবে ঘরে পানি ঢুকে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করতে হয়।”

তাদের এই দুর্ভোগ আরও কয়েক দিন দীর্ঘায়িত হওয়ার আভাস দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “সিলেট-সুনামগঞ্জে আরও দু’তিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। বর্ষা শুরু হয়েছে, এমন ধরনের মৌসুমী বৃষ্টিপাত হবেই। নদীর পানিও বাড়বে।

“এবার যেহেতু হাওরে আমাদের একটা বন্যা হয়েছে, নদীতে আগে থেকে কিছুটা পানি রয়েছে। এ জন্য পানি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।”

‘পানিবন্দিদের উদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ’

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি পানিবন্দিদের উদ্ধার করে এনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখতে। অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে লোকজন এসেছেন। কিন্তু অনেক লোক এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। তাদের নিরাপদে নিয়ে আসাটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।”

তবে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “শুকনো খাবারের পাশাপাশি যেখানে রান্না করে খাবার দেওয়ার সুযোগ থাকবে, সেখানে সেটাও দেওয়া হবে। আর যারা ত্রাণ নিয়ে এই এলাকায় আসতে চান, তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। জেলা প্রশাসন দেখিয়ে দেবে কোথায় ত্রাণ দিতে হবে।”

ইতোমধ্যে সেনা সদস্যরা মাঠে নেমেছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “তারা মূলত উদ্ধার করবেন ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করবেন।”

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের খাদ্য গোডাউন রক্ষা এবং সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনেও আছেন সেনা সদস্যরা।

পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া ছাড়াও সেনাবাহিনীর আরও চার ধরনের দায়িত্ব পালনের কথা জানানো হয়েছে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে।
এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্বাচন এবং উদ্ধারকৃত ব্যক্তিবর্গের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা; চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা; সীমিত পরিসরে খাদ্য ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা এবং খাদ্য গোডাউন, পাওয়ার স্টেশন এবং অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা।

পানিবন্দিদের উদ্ধারে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের উদ্ধার করা।

“এ জন্যে যত নৌকা ভাড়া করা প্রয়োজন, ততটা নিতে হবে, যাবতীয় ব্যয়ভার আমরা নেব- এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।”

পরিস্থিতির আরও অবনতির আভাস

ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, যমুনা, সুরমা, সারিগোয়াইন, পুরাতন সুরমা, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী ও ভুগাই নদ-নদীর ১৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর ১০৯টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১৫টি পয়েন্টে শুক্রবার রাতে পানি বইছিল বিপৎসীমার উপরে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।
আরও অন্তত ৫-৭ দিন বন্যার এ দুর্ভোগ থাকবে বলে মনে করছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ১০৯ মিলিমিটার।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শনিবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সরকার কী করছে?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রধান আতিকুল হক বলছেন, “২০২০ সালেও এ সময়ে বন্যা এসেছে। তবে এ সময়ে এত পানি সিলেটে নরমালি দেখা যায় না। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির সঙ্গে আপস্ট্রিমের বৃষ্টি বেশি হয়েছে।”

তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আরও লোকবল, ত্রাণ ও উদ্ধার সামগ্রীর প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জের জন্য নয়, বন্যা প্রবণ পুরো অঞ্চলের জন্যই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, এবার দ্রুত মোকাবেলা করতে পারব।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরনের জন্য ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ টাকা ও চাল।

প্রতিটি প্যাকেটে চাল-ডাল-তেল-লবণ চিনিসহ যেসব খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তাতে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক জানান, সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মনিটরিং করছেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে তিনি নিজে ত্রা উপদ্রুত এলাকায় যাচ্ছেন।

এ কর্মকর্তা জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে দুটি উদ্ধারকারী যান পাঠানো হয়েছে সিলেটে। দুই জেলায় ২০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

“কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকের মোবাইলে চার্জ নেই, চার্জার দিয়ে হেল্প করছি, জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে তথ্য পেতে পারি, এজন্য ৩৩৩, ৯৯৯ নম্বরকে অ্যাক্টিভেট করার জন্যও বলেছি।”

বিদ্যুৎ কবে ফিরবে

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মাত্র ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শুক্রবার এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চলও বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ামাত্র পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।

‘লিভিং উইথ ফ্লাড’

বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, মেঘনা অববাহিকায় আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে থাকবে। এতে সিলেট-সুনামগঞ্জের স্বল্পমেয়াদী এ বন্যার দুর্ভোগ সপ্তাহের বেশি ভোগাবে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বৃষ্টি আরও হবে। আসাম হয়ে উজানের পানি আসছে।

“১৯-২০ জুনের এ অববাহিকার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে বাড়বে বেশ। গাণিতিক মডেলে এ ধরনের আভাস থাকে। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

“এখন বৃষ্টি আছে, তাই স্বল্প মেয়াদী বা মাঝারি ধরনের বন্যা হলো। ৫-৭ দিনের বেশি হবে না হয়তো। কিন্তু পরে আরও বাড়লে নদীর যে প্রবাহ তাতে মধ্যাঞ্চলে চলে আসবে।”

এবার বন্যার ‘স্বাভাবিক’ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “এ বছর বৃষ্টির প্রকোপটা বেশি। উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। প্রি-মনসুন থেকে একটু একটিভ।…সার্বিক বিরূপ পরিবেশে এক্সট্রিম ইভেন্টগুলো বাড়ছে। বন্যার প্রাদুর্ভাব একটু বাড়ছে। সে অনুসারে আমাদেরও প্রস্তুতি বাড়াতে হবে।
“বাধ শক্তিশালী করার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো, বন্যার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের প্রবণতাও বাড়ে। এর প্রটেকশনও দিতে হবে। খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণ সরবরাহ, পুনর্বাসনের বিষয় রয়েছে। বিশাল একটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে।”

প্রতি বছরের মত এবারও কয়েকটা বন্যা দেখতে হতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “জুন মাসে বন্যা হচ্ছে। এটা একটু আর্লি মনে হচ্ছে। সিলেটের একদফা বন্যা প্রি-মুনসুনে হয়ে গেছে।

“এবারও কিছুটা ফ্ল্যাশফ্লাড; ওদিকে মেঘলা-ত্রিপুরা-বরাকের ঢাল হওয়ায় তাদের ঢলটি এখানে এলে ঢালু এলাকায় নরমাল ফ্লাডে পরিণত হয়। আরও ৫-৭ দিন থাকবে, পানি নামতে অনেক সময় লাগবে।”

সিলেটের ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা এ বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “মে মাসে এক দফা হল, মধ্য জুনে আরেকটা সিলেটে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় আরেকটা আসবে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তো বন্যা হবে। সুতরাং বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে হবে।

“বন্যা ব্যবস্থাপনা হতে হবে লিভিং উইথ ফ্লাড। স্ট্রাকচারাল মেজার, ননস্ট্রাকচারাল মেজার, আর্লি ওয়ার্নিং জোর দিতে কাজ করতে হবে।

জাতীয়

ডিজিটাল ভূমি (উন্নয়ন) কর ব্যবস্থার জন্য উইসিসি পুরস্কার পেল ভূমি মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদর দপ্তরের পোপভ সভা কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

আইটিইউর মহাসচিব হাউলিন ঝাও ভূমিমন্ত্রীর হাতে উইসিস পুরস্কারের ট্রফি তুলে দেন। ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আইটিইউসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা উইসিস পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এ সময় ভূমিমন্ত্রী বলেন, উইসিস পুরস্কার অর্জন ভূমি মন্ত্রণায়ের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের। এই স্বীকৃতি আরও ভালোভাবে কাজ করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদর দপ্তরের পোপভ সভাকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আজকের অবস্থানে আসার যাত্রা খুব সহজ ছিল না। এক সময় বাংলাদেশের পুরো ভূমি সেবা ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিল। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ভূমি সেবা ডিজিটালাইজেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ আমরা ডিজিটাল ব্যবস্থার অংশ হয়েছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উইসিস ফোরামকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, উইসিস পুরস্কার অর্জনে মানুষ ও দেশের কল্যাণে আরও বেশি করে কাজ করার জন্য আমাদের কাঁধে আরও দায়িত্ব চলে এসেছে।

উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ভূমি (উন্নয়ন) কর ব্যবস্থা আইসিটি খাতে বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত উইসিস তথা ডব্লিউএসআইএস (ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি) পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ‘তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ: জীবনের সকল ক্ষেত্রে কল্যাণে – ই-সরকার’ শীর্ষক ৭ নম্বর শ্রেণিতে সেরা প্রকল্প/উদ্যোগ হিসেবে বিজয়ী হয়েছে। মোট ১৮টি শ্রেণিতে উইসিস পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, বেসরকারি খাত এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং পুরস্কার বিজয়ী বিভিন্ন উদ্যোগের উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

পলাতক থাকাবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান দুর্নীতির মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন না। এ আবেদন নিয়ে হাইকোর্ট ভুল করেছেন। মামলা বাতিল চেয়ে জোবায়দার লিভ টু আপিল খারিজ করে দেওয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ লিপিতে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের লিখিত রায় প্রকাশ হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন- জোবায়দা রহমান আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। হাইকোর্টে তার আবেদনের শুনানি করা ঠিক হয়নি। তিনি পলাতক অবস্থায় মামলা বাতিল চেয়ে শুনানি করেছেন, তার আত্মসমর্পণ করেছেন এমন কোনো আদেশও ছিল না। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকারী। সবাই সুযোগ পাবে, কিন্তু তিনি (জোবায়দা) একটু বেশি সুবিধা পেয়েছেন।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। পরে একই বছরে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেন। রিটে জরুরি আইন ও এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন।

এই মামলার বৈধতা নিয়ে আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন ডা. জোবায়দা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে জোবায়দা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা রহমান। যা গত ১৩ এপ্রিল খারিজ করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জোবায়দার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

জাতীয়

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ৬৪ জেলা থেকে একযোগে ‘সুপার গর্জিয়াসভাবে’ হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানাবেন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।

বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আপনারাই বলেন, যে ম্রিয়মান হওয়া উচিত? নাকি গর্জিয়াস হওয়া উচিত?”

জবাবে সাংবাদিকরা বলেন, ‘গর্জিয়াস।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “তাহলে ইনশাআল্লাহ সুপার গর্জিয়াস। যেটা হবে সেটা তো মাননীয় (প্রধানমন্ত্রী) বলবেন।”

এসময় আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “ওইদিন ৬৪ জেলায় একসঙ্গে রেপ্লিকেশন হবে। এখানে অরিজিনাল উদ্বোধন, সব জায়গায় রেপ্লিকেশন হবে।”

২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর এ সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দক্ষিণ জনপদের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের এই সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ করার দাবি জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাতে সায় দেননি।

পদ্মা নদীর বুকে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান।

মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়।

সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।

জাতীয়

কেবল দশম শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর এসএসসি ও এইচএসসিতে দু’টি বোর্ড পরীক্ষা রেখে শিক্ষাক্রমের রূপরেখার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয়।

সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) প্রায় ৪ ঘন্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ, দশম শ্রেণির আগে কোনো কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষা নেই। তৃতীয় পর্যন্তও কোনো পরীক্ষা থাকবে না। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি নিরূপন করা হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বৈঠকে প্রায় ৮০ সদস্য যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) এবং শিক্ষাক্রম উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।

এর আগে গতবছরের সেপ্টেম্বরে এই রূপরেখার খসড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেদিনই এটা নীতিগত অনুমোদন দেন। এর ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০২৩ সালে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তনের লক্ষ্যে শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করে দেয়। কিন্তু বাগড়া দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেহেতু আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বিশেষ করে এনসিসিসির বৈঠকে এটি অনুমোদন না পেলে আইনগত ভিত্তি পায় না, তাই এই কথাই বিতর্কে বারবার উঠে আসছিল। এই অবস্থায় সোমবারের বৈঠক ডাকা হয়। এরফলে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ আইনগত ভিত্তি পেলো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাক্রম সারাদেশে ৬১টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পাইলটিং চলছে। সেসব বিষয়ে বিদ্যালয়ে পাইলটিং ক্লাস ভালোভাবে চলছে বলে বৈঠকে তুলে ধরা হয়। নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে কোনো পরিমার্জন বা পরিবর্তন প্রয়োজন আছে না তা শিক্ষামন্ত্রী জানতে চান। তবে ঠৈকে কয়েকটি শব্দগত পরিবর্তন ছাড়া আর কোন প্রস্তাব আসেনি।

রূপরেখায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১০টি বিষয় প্রবর্তনের কথা আছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বলতে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ থাকবে না। এটি চালু হবে এইচএসসিতে। কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই বোর্ড পরীক্ষায় এসএসসির ফল হবে। একাদশ শ্রেণিতে এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আলাদা দু’টি বোর্ড পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে হবে এইচএসসির ফল।

প্রাথমিকে পড়তে হবে আটটি বই। তবে সব শ্রেণিতেই শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর মাধ্যমিক স্তরর ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং চললেও প্রাথমিকে বছর শেষের দিকে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাইলটিং করা হবে।

এছাড়া আগামীবছর সারাদেশে পরীক্ষামূলক পাঠ্যবই দেওয়া হবে। বর্তমানে পাঠ্যবই লেখার কাজ চলছে। অর্থাৎ, ২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই যাবে। এছাড়া আগামীবছর সপ্তম শ্রেণির পাইলটিং হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাইলটিং হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন।

জাতীয়

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশে শতকরা ৮৫ ভাগ লোক গ্রামে বাস করেন। কৃষিই তাদের প্রধান উপজীবিকা। ফলে পরিবারের সবাই ক্ষুদ্রায়তন পৈতৃক জমি চাষ করে। আর বাকি ১৫ ভাগ লোক বাস করে শহরে। এ দেশের কৃষকরা সাধারণত সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে থাকে।

বেশিরভাগ কৃষক এখনো ফসল উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে লাঙ্গল, মই এবং গরু ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। সাধারণ অর্থে কৃষি বলতে ভূমি কর্ষণ করে ফসল ফলানো বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে কৃষি কথাটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে পশু পালন থেকে শুরু করে শস্য উৎপাদন, বনায়ন, মৎস্য সম্পদ আহরণসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রক্রিয়াকে কৃষির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কৃষি দেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রাম এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধান, পাট, তুলা, আখ, ফুল ও রেশমগুটির চাষসহ বাগান সম্প্রসারণ, মাছ চাষ, সবজি, পশুসম্পদ উন্নয়ন, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, বীজ উন্নয়ন ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।

কৃষকদের অনেকেই এখন বিভিন্ন আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় ফলন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ধান ও পাট বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলেও গম, চা, আখ, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদিত হয়। সরকারের উচিত গুরুত্বসহকারে সরিষা চাষের ওপর নজর দেওয়া। যাতে করে সাধারণ মানুষ সয়াবিন তেল ছেড়ে সরিষার তেল ব্যবহার করে। কৃষি পুনর্বাসন ও কৃষককে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এতে সুবিধা ভোগ করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কৃষি পণ্য কিনে মজুত করে রাখছে এবং দেশের অবস্থা বুঝে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন। দেশে কৃষি খাতের উন্নয়ন হলেও কৃষকের উন্নয়ন হয়নি। সরকারকে কৃষি খাতে নজর দিতে হবে। তাহলেই ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) সরকারি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কৃষিখাত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- কৃষি, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়কে কৃষির ওপর আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত। কৃষকদের নামমাত্র লভ্যাংশে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা সরকারের উপর মহলের কর্তব্য।

বাংলাদেশের কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল কৃষি খাতে পরিণত করতে হলে কৃষিতে বেশি বেশি প্রণোদনা বাড়ানো দরকার। কৃষকদের বেশি করে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; যাতে কৃষকরা চাষাবাদের উপর বেশি মনোনিবেশ করতে পারে। এতে করে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। কৃষকরা কৃষি কাজে আরও মনযোগী হবেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনোভাবেই কৃষিখাতে উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুই দশক আগেও কৃষকরা সরিষার চাষ করতেন। বাংলাদেশে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হত।

গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো সরিষা ঘানি দিয়ে মাড়াই করে তার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন। কৃষকরা সরিষার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে এর উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা দেশে কিছু কৃষক নামমাত্র সরিষার চাষ করে থাকেন শুধু নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য।

মনস্তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় এনে বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, এ দেশের জলবায়ু ও মাটি কৃষির মাটি। বাংলার সবচেয়ে বড় সম্পদ কৃষি। কৃষি বাংলার প্রাণ, বাঙালির মুখের হাসি। বাঙালি মনোজগতের দার্শনিক বঙ্গবন্ধু। তিনি জানেন, কৃষি মিশে আছে বাঙালির রক্তে। দেশের ৮৫ শতাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভশীল। তাই উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে কৃষি। দৃশ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় এনে ভাবলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম খাদ্য। বিশ্বের বহু দেশে খাদ্য উৎপাদনের উপযোগী জলবায়ু ও মাটি নেই। খাদ্যের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় বহির্বিশ্বের ওপর।

যদি বিশ্বে খাদ্যমন্দা দেখা দেয়, তা হলে অনুন্নত দেশগুলোকে তীব্র খাদ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের মাটি কৃষির মাটি। এ দেশের মাটিতে সোনা ফলে। এ জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনে প্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে, তা হলো খাদ্য নিশ্চয়তা। তাই কৃষিকে বাঁচাতে হবে, কৃষককে বাঁচাতে হবে। অল্পদামে কিংবা বিনামূল্যে সার, কীটনাশক, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ।

‘কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ স্লোগান সামনে রেখে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর ডাক দেন। কৃষকদের বিদ্যমান সুবিধা বৃদ্ধি করে নানা সুযোগ প্রদান করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছিল এর মূল লক্ষ্য। এসবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী কৃষি ভাবনা ও উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে। তাই স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের পাশে খুবই যৌক্তিকভাবে সংযোজিত হয় আরেকটি নাম, আরেকটি বিশেষণ, আরেকটি শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘কৃষিবন্ধু মুজিব’।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় বহুমুখী শস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান। গম, আলু, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মশলা, ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন শস্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে থাকে। দেশে কৃষিখাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষা করাই এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ।

বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব মন্তব্য উঠে আসে বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে তা জানা যায়। ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে মনে করেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, কৃষি খাতে অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় এবং চাষযোগ্য জমি কমে আসায় ধান চাষের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। শাইখ সিরাজ আরও বলেন, সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে যেন ফসলের সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।

মহামারীর ধকল সামলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথে, সেই সময় ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে সংকটে ফেলে দিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় বেড়ে গেছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম, সেই সঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম স্থিতিশীল বা কমছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এর মধ্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, মসলা পণ্য, মাছ-মাংস, ডিম, শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি এমনকি লবণের দামও বেড়েছে।

পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য সব ধরনের পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে এই তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে পণ্য কিনতে ভোক্তার যেন নাভিশ্বাস বাড়ছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে আছেন নিম্নআয় ও খেটে খাওয়া মানুষ। দেশে যা হয়েছে সেটি কিছু ব্যবসায়ীর অপতৎপরতার কারণেই; যার দায় পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ওপর পড়ছে।

সরকার সেদিক থেকে সতর্ক রয়েছে। এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোজ্যতেল উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা, মানসম্মত বীজ সরবরাহ ও উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকির জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকবে; যাতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে খুচরাপর্যায়ে দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখা যায়। পাশাপাশি ভোক্তাদের এসব তেলের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহমূলক প্রচারণারও ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশের মাটিতে বীজ ফেলে রাখলেও ফসল জন্মে থাকে। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে কৃষি নির্ভরতা বাড়ারে, কৃষককে প্রণোদনা দিলে, কৃষি ঋণের জটিলতা কাটালে আমাদের কোন খাদ্যই বাইরের রাষ্ট্র থেকে আনতে হবে না। কিন্তু কৃষি খাতের ওপর অবহেলা আজ এ অবস্থায় এসেছে।

দুই দশক আগেও কৃষকরা সরিষার চাষ করতেন। বাংলাদেশে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হতো। গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো সরিষা ঘানি দিয়ে মাড়াই করে তার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন। কৃষকরা সরিষার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে এর উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা দেশে কিছু কৃষক নামমাত্র সরিষার চাষ করে থাকেন শুধু নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য।

সরিষা চাষের উপর সরকারকে দৃষি রাখতে হবে; যাতে করে গ্রাম-গঞ্জের মানুষ সয়াবিন তেলের পরিবর্তে সরিষার তেলের ওপর নির্ভর করে। কৃষি খাতকে পুনরায় গুরুত্ব দিলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাই কৃষি ও কৃষককে প্রেরণা ও প্রণোদনা দিলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে বসে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে সংকট নিরসন সহজ হবে। দ্রুত এ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আমাদের।

জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও দেড় বছর। এর আগেই হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে দুদিন ধরে দফায় দফায় হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

ছাত্র রাজনীতির এই উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। বিএনপি এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ। খুলনা, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় কয়েকশ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে আগামী দিনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। অপরদিকে যে কোনোভাবে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ ও কাল সারা দেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ রয়েছে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আরও ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। আপাতদৃষ্টিতে এসব ঘটনাকে দুই ছাত্র সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া বলা হচ্ছে। কিন্তু এর নেপথ্যে বিএনপির বড় আন্দোলনের আভাস ও ক্ষমতাসীনদের তা প্রতিহতের বার্তা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। তারা আতঙ্কে আছে কখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠে। তাই ভয় থেকে তারা এ হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে মামলা-হামলা দিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো যাবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, সবকিছুর মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার যে মানসিকতা প্রকারান্তরে এটি বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করে। জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই, জনসমর্থন নেই, সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। নানা কারণে তারা হতাশার সাগরে নিমজ্জিত।

সেজন্যই তারা নানাবিধ কথা বলে। এ কথাগুলো আমরা কখনো বিবেচনায় নেই না, গুরুত্বও দেই না। তিনি বলেন, এরসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন বা রাজনীতির কিছু নেই। এখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততারও কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে হঠাৎ করে রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠায় উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক মহল, সুশীল সমাজসহ বিশিষ্টজনরা। প্রধান দুদলের এমন মুখোমুখি অবস্থানকে অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক বলে মনে করছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। তাই এ মুহূর্তেই দলগুলোকে সহিংস রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে। না হলে টালমাটাল অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। প্রতিটি জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেদিকে হাঁটছে না। উলটো রাজনীতির মাঠ সংঘাতময় হয়ে উঠছে। দেশের অর্থনীতিতে এ ধরনের রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সুযোগ নিতে পারে ‘তৃতীয় পক্ষ’। ফলে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যা কারও কাম্য নয় বলে তারা মনে করেন।

শান্ত ক্যাম্পাস অশান্ত হওয়ার নেপথ্যে মোটা দাগে দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একটি হলো, ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব লাভে ‘ত্যাগী ও সাহসী’ প্রমাণ এবং অন্যটি জাতীয় রাজনীতির প্রভাব। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ফলে ছাত্রলীগের রাজনীতি এখন চাঙ্গা। বর্তমান কমিটির শুরুর সময়ের চেয়ে এখনকার কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। হামলায় সামনে থাকলে গণমাধ্যমে নাম ও ছবি আসবে, যা রাজনীতিতে সহায়ক হবে-এমন চিন্তা থেকে অ্যাকশনে নামার প্রবণতাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।

পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মসূচির পর ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রত্যাশীসহ বড় একটি অংশের দাবি ছিল তাদের ‘সমুচিত’ জবাব দেওয়া। এ বিষয়গুলো ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা শক্তভাবে ছাত্রদলকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।

এদিকে সম্মেলন প্রত্যাশীদের একটি অংশ এখন আবার বলছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্ব করতেই ছাত্রদলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। যদিও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, যে যাই বলুক আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে নিয়ে কোনো কটূক্তি তারা বরদাশত করবেন না। এছাড়া প্রশাসন ছাড়া মাঠে যাওয়ার যে চ্যালেঞ্জ ছাত্রদল একাধিকবার দিয়েছে, তারা সেটারও জবাব দিয়েছে।

ছাত্রদলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান নেতৃত্ব নির্বাচনের পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান তৈরি করা ছিল তাদের অন্যতম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’। এরই অংশ হিসাবে তারা শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউন করেছেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত ছাত্রদলের এই কমিটির কাছে বিএনপির প্রত্যাশাও বেশি। ফলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সামনে থেকে মিছিল ও বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছাত্রদলের আন্দোলন নিবিড়ভাবে ‘মনিটরিং’ করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিএনপিও কর্মসূচি দিচ্ছে। হামলার পর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বিএনপি। হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এছাড়া দেশব্যাপী ছাত্রদলের কর্মসূচিকে সফল করতে তৃণমূলে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠুর পরিবেশ নিশ্চিত ও সহাবস্থানের দাবি জানাচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। ফলে ছাত্রদলের প্রতিটি সংঘর্ষের ঘটনাকেই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা।

এদিকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল এবং তাদের মূল দলের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ক্রমশই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। আগামীতে এ পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আগামী জাতীয় রাজনীতিকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাকা ক্যাম্পাসগুলোতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চায় ছাত্রদল। তারা বার্তা দিতে চায়, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নড়বড়ে হয়ে আছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগও নড়বড়ে অবস্থায় পড়বে। তারা আরও বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে কোনো বড় আন্দোলনেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের চোখ থাকে সেখানে। এর বিশাল মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক যেভাবে অস্ত্র হাতে হামলা করতে এসেছে তা মানা যায় না। আগামীতেও ছাত্রদলকে প্রতিহত করা হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চোখে দেশরত্ন শেখ হাসিনা একজন সফল ও আদর্শ দেশনায়ক। তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য কোনোভাবেই সহ্য করব না। তাতে যে ভাষায় জবাব দেওয়া প্রয়োজন, সেই ভাষাতেই জবাব দেবে ছাত্রলীগ। হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদলকে প্রতিহত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। ছাত্রলীগও তাদের পাশে ছিল, সমর্থন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর আগে পরিচয় ছাত্র, পরে দল। তাই ছাত্রলীগই যে তাদের প্রতিহত করেছে এমন নয়, এটি ছিল শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিরোধ।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ যুগান্তরকে বলেন, আমরা ছাত্রদের অধিকার ও দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই। ক্যাম্পাসে চাই সহাবস্থান। আমাদের নিরস্ত্র কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা দফায় দফায় হামলা করেছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে স্বৈরাচারী স্টাইলে দেশ চালাচ্ছে, ছাত্রলীগও সেভাবে ক্যাম্পাসগুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। আমরা এর অবসান চাই। হামলা করে ছাত্রদলকে দমিয়ে রাখা যাবে না। যতই হামলা হোক আমরা আগামীতেও রাজপথে থাকব।

এদিকে এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো কৌঁসুলি ভূমিকায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার প্রায় ৩০ মিনিট পর পুলিশ সেখানে যায়। মঙ্গলবার শহিদ মিনারে হামলার ঘটনায়ও অনেকটা নীরব ভূমিকায় ছিল পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলেও তাদের গ্রেফতারে এখন তেমন কোনো তৎপরতা নেই পুলিশের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপর থেকে সিগন্যাল পেলেই শুরু হবে অভিযান।

দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় অনেকটা ঘরবন্দি ছিল রাজনীতি। করোনার ভয়াবহ প্রভাব কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে মাঠে গড়াতে থাকে রাজনীতি। কিন্তু শুরুতেই সংঘাতের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে দুদল। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলেও জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে।

দুদলের সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অভিযোগ, পালটা অভিযোগে ব্যস্ত তারা। বিএনপি বলছে, নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ থেকে বিরোধী দলকে সরানোর টার্গেট নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাবিতে লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে আক্রমণের চেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা ব্যর্থ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে যায়, তখন তা প্রতিহত করা তো শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের অধিকারের সঙ্গে থাকে। সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ছাত্রদের সমর্থন দিয়েছে। এতে অন্যায় বা দোষের কিছু হয়নি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে আবার তাদের নামেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরানোই তাদের মূল লক্ষ্য। উলটো সরকারের এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথে নামবে বলে আশা করি।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যার নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু দেশের এ সংকটকালে সহিংস রাজনীতি কারও কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য। প্রধান দুদলকেই অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ চলতে হবে। কিন্তু আমরা চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আবেগ এবং স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি। সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।