জাতীয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের গত ১৬ বছরে জনপ্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা তাদের বকেয়া পাওনার পাশাপাশি পেনশনের আর্থিক সুবিধাও পাবেন।

রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৯ জন। গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপ-সচিব পদে চারজনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন।

পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হাসিমুখে দেখা যায় অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তারা জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগে আসেন। তারা বলছিলেন, দীর্ঘ সময় রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে তাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়।

অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, চাকরির বয়স থাকলে তিনি এতদিনে সচিব হয়ে যেতেন। কিন্তু বঞ্চনার কারণে তিনি তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

যেসব সুবিধা পাচ্ছেন পদোন্নতিপ্রাপ্তরা

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি পাওয়া সচিব, অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১, যুগ্ম সচিব এবং উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তারা বর্তমান অর্থবছরে তাদের বকেয়া পাওনাদির ৫০ শতাংশ পাবেন। বাকি ৫০ শতাংশ পরবর্তী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) পাবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বয়স ৫৭/৫৯ বছর পূর্তি পর্যন্ত সর্বশেষ পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে বহাল ছিলেন বলে গণ্য হবেন।
তারা অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি শেষে অবসরের জন্য নির্ধারিত তারিখে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন মর্মে গণ্য হবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিধি অনুযায়ী এবং তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতাদি পেনশন ইত্যাদি সমন্বয় করে আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।

এই সাবেক কর্মকর্তাদের জন্য জারি করা পিআরএল আদেশ বাতিল করা হয়েছে। বেতন নির্ধারণের সময় তাদের অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি সমন্বয় করতে হবে।

আর অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১, যুগ্ম সচিব এবং উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তারা এক বা একাধিক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির তারিখ থেকে বিধি মোতাবেক প্রাপ্যতা অনুযায়ী সব আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।

সরকার বদলে ভাগ্যেরও বদল

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা তাদের পাওনা মেটানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দেয়। পরে তাদের কাছে আবেদন আহ্বান করে।

২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে বঞ্চনা নিরসন কমিটি গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন দেয়।

রয়েছে অসন্তোষও

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ভূতাপেক্ষভাবে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৯ জন। তাদের মধ্যে ৪৫ জনই ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা।

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন নিজে পদোন্নতি না পেলেও এক ব্যাচ থেকে এত বেশি সংখ্যক কর্মকর্তার সচিব পদে পদোন্নতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, জনপ্রশাসন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বর্তমান সরকারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সবাই ১৯৮২ ব্যাচের।

‘এই ১১৯ জন সচিব পদোন্নতির মধ্যে ৪৫ জন ১৯৮২ ব্যাচের (বিশেষ ব্যাচসহ)। আমিও অতিরিক্ত সচিব ছিলাম এবং বিগত সরকার দুর্নীতি দূর করতে চেয়ে অন্যায়ভাবে চারটি শাস্তি দিয়েছিল। প্রায় দেড় বছর ওএসডি অবস্থায় রেখে চাকরি থেকে বিদায় দিয়েছিল। ’

প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, অতিরিক্ত সচিব যারা পদোন্নতি পেলেন, তারা কীভাবে কোন ক্রাইটেরিয়ায় বঞ্চিত ছিলেন? কীভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত ছিলেন?

তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১১৫ জনের মধ্যে ৪৫ জনই কীভাবে ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা হলেন? এই অতিরিক্ত সচিব, যারা সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন, তাদের বঞ্চিত হওয়ার কাহিনী জানতে চেয়েছেন তিনি।

তা না হলে মাহবুব কবীর মিলনের দাবি, সব অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে ভূতাপেক্ষ সচিব পদোন্নতি দিতে হবে। তিনি লেখেন, আমি মামলা করব হাইকোর্টে, সেখানে অবশ্যই জানতে চাইব এই অতিরিক্ত সচিবদের বঞ্চনার কাহিনী, কীভাবে ১৯৮২ ব্যাচের ৪৫ কর্মকর্তা বঞ্চনার শিকার হলেন।

জাতীয়

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৪ নাগরিককে একুশে পদক- ২০২৫ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

পদকপ্রাপ্তরা হলেন- শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন এবং চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, গবেষণায় মঈদুল হাসান, ভাষা ও সাহিত্যে শহীদুল জহির (মো. শহীদুল হক) (মরণোত্তর) ও হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর), সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহীদুল আলম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লা (মরণোত্তর) এবং সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান।

এছাড়া শিক্ষায় পাচ্ছেন ড. নিয়াজ জামান ও সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর)।

এ বছর ক্রীড়ায় একুশে পদক পাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।

জাতীয়

এ বছরের শেষদিকে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার জাপানের ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (এনএইচকে) দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান।

ড. ইউনূস বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম, ওই সময়ের পরিস্থিতি বললে, আমি মনে করি আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। কারণ এটি (ছিল) একটি বিধ্বস্ত সমাজ, বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিধ্বস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারিক ব্যবস্থা।’

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের সবচেয়ে দ্রুত সময় হতে পারে এ বছরের শেষ দিক। যখন নির্বাচন হবে, যারা নির্বাচিত হবে, তারা কাজ করার জন্য শক্তিশালী একটি ভিত্তি পাবে।’

তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তরুণরা কী করতে চায়, তারা তাদের সৃজনশীলতার শক্তি প্রদর্শন ও পুরো বিশ্বের সঙ্গে এটি ভাগ করতে চায়। আমাদের মাথায় এই লক্ষ্য আছে, দেখা যাক আমরা কীভাবে আগাই।’

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘জাপানের প্রযুক্তি এবং অর্থায়ন তরুণ বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।’

জাতীয়

পতিত আওয়ামী সরকার আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কিশোরগঞ্জ শহরের খরমপট্টি এলাকার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর শেষে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, রাতে এক দল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা খরমপট্টি এলাকায় আবদুল হামিদের বাসভবনে যায়।  সেখানে হামলা, ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেন তারা।

এর আগে স্কাভেটর দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের লণ্ডভণ্ড অফিসটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আর বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে টয়লেট ঘোষণা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

জাতীয়

আওয়ামী লীগের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক ভাষণকে কেন্দ্র করে বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। বিক্ষুব্ধ জনতাকে খুব একটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক ফন্দি আঁটতে পারে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত; এমনটাই মনে করেন কবি, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।

তার মতে, দিল্লি আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে জানমাল রক্ষা করতে উপদেষ্টা সরকার ব্যর্থ। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হবে যে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার নাই। এটাই দিল্লী হাসিনার পক্ষে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবে। এবং দিল্লি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করতে পারে বলেও ফেসবুকে লিখেছেন তিনি।

শেখ হাসিনার ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙাকে ইস্যু করে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখে পড়তে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। যা নিয়ে ফরহাদ মজহার লিখেছেন, ‘নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাষণ বুঝতে হবে। নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে তিনি রাজনীতির যে ছক কষছেন সেদিকে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে হবে।’

বিক্ষুব্ধ জনতাকে বাড়ি ভাঙতে বাধা না দেওয়া ও সেনাবাহিনীর সরে আসার সিদ্ধান্তকে সঠিক জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভের পরিণতি হচ্ছে ৩২ নম্বর ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া। এটা শুরু, শেষ নয়। আমরা দেখলাম একে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করে নাই। সেনাবাহিনী কিছুক্ষণের জন্যে এলেও ফিরে গেছে। জনগণের বিপরীতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় না করাবার নীতি সঠিক।’

এরপর তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দিল্লি প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে জানমাল রক্ষা করতে উপদেষ্টা সরকার ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হবে যে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার নাই। এটাই দিল্লী হাসিনার পক্ষে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবে।

দিল্লী দাবি করবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে দিল্লী আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করতে পারে।’

শেখ হাসিনার বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে তৈরি হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক এই রাজনীতি কীভাবে মোকাবেলা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার সেটাও জানিয়েছেন এই অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বলেন, ‘এই বাস্তবতা এবং সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। যদি আমরা সামনের দিনে আরো গভীর সংকটে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চাই তাহলে অবিলম্বে শেখ হাসিনার সংবিধান বাতিল করে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন, নতুন ভাবে বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা পরিষ্কার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখার শপথ করে আমরা আদতে ফ্যসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রেখেছি। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাড়ি ভাঙলাম অথচ শেখ হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরাপুরি কায়েম রাখলাম এটা কি হয়! অতএব পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা যেন কোন গভীর সংকটে না পড়ি সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের ক্ষোভকে আমলে নিতে শিখুন। ছাই দিয়ে আগুন নিভানো যায় না।’

জাতীয়

দেশের নিবন্ধনভুক্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ) মাসুদুল হক এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

শিক্ষকদের অন্যান্য দাবি এ বছর থেকে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরুর কথাও জানান যুগ্ম সচিব। তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলার অনুমোদনের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

জাতীয়করণসহ অন্যান্য দাবির আশ্বাস পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। তাদের কেউ কেউ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। পরে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ২৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

এরপর তারা জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের মুখে পড়েন। তাদের ওপর জলকামান ব্যবহারও হয়। এর জেরে শাহবাগে অবস্থান নেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ির শিক্ষকেরা।

সবশেষ সোমবার দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণার আলটিমেটাম দেয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আজ দুপুরে সচিবালয় থেকে ডাক পড়ে তাদের।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ির শিক্ষকেরা ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) স্টাডি রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষণা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন স্থগিত আদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা।

আরও রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন পাওয়া কোডবিহীন মাদরাসাগুলোকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা, পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন করা।

এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলার অনুমোদনের ব্যবস্থার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ির শিক্ষকেরা ছয় দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) স্টাডি রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষণা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন স্থগিত আদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা।

আরও রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন পাওয়া কোডবিহীন মাদরাসাগুলোকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা, পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন করা।

এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলার অনুমোদনের ব্যবস্থার দাবিও জানান শিক্ষকেরা।

জাতীয়

স্বরাষ্ট্র ও তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাত কলেজের প্রতিনিধিরা।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব) এবং তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সাত কলেজের পক্ষে তিনজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- মঈনুল ইসলাম ও রহমতুল্লাহ (ঢাকা কলেজ) এবং মৌ ( ইডেন মহিলা কলেজ)। বৈঠকে তারা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।

শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পরশু রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে আমরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করি। আমাদের প্রথম দাবি গতকাল মেনে নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছি। বাকি পাঁচ দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে ডাকা হয়েছে। এখানে আমরা পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। আমাদের দাবিগুলো পজেটিভভাবে নেওয়া হয়েছে। সেটা বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেনে নেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির প্রসঙ্গে মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ছিল- ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। এখন থেকে তিনি ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের সংশ্লিষ্ট কোনো কমিটিতে থাকতে পারবেন না।

এছাড়াও তার পদত্যাগের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আলাপ ও ওই দিন সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আগানো হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় দাবি ছিল- ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশে হামলাসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে তিনদিন সময় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
তৃতীয় দাবি হচ্ছে- যেসব ঢাবি শিক্ষার্থী ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

চতুর্থ দাবি ছিল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। গতকাল এ দাবি অধিভুক্তি বাতিল সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পঞ্চম দাবি ছিল- উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।

মইনুল ইসলাম জানান, আজ তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ মিটিংয়ে বসা হয়েছে।

ছয় দফা দাবি ছিল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আজ আমাদের জানানো হয়েছে ইতোমধ্যে রাস্তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি।

জাতীয়

পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের পর আবারও ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সাড়ে ছয়টায় ঢাকা কলেজে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চূড়ান্ত কোনো সমাধান এখনো হয়নি। আমরা মনে করছি যাদের কারণে আমাদের সহপাঠীরা আহত হয়েছেন, তাদের সুষ্ঠু বিচার না করে কোনো সমাধান সম্ভব নয়। দেশের কথা চিন্তা করে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে যারা আঘাত করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বহাল থাকবে।

কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী বলেন, যারা আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে তাদের সঙ্গে কীসের সমাধান। আমরা এমনি এমনি তাদের রক্ত ডিঙিয়ে সমাধান করতে পারি না। তাছাড়া স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। আগামী ১ তারিখ থেকে সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিশেষ করে ক্লাস এবং পরীক্ষা শুরুর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর এবং থানা ঘেরাও কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করেছি।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সোমবার ঘোষিত এক আল্টিমেটামে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এ জন্য তারা ২৪ ঘণ্টার সময়ও বেঁধে দেন। দাবি পূরণ না হলে নিউমার্কেট থানা ঘেরাও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সাত কলেজের সামনে দিয়ে চলতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তারা।

জাতীয়

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যদের হত্যা করা হয়। ইতিহাসের আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মেজর ডালিমের পর এবার প্রথমবার মুখ খুলেছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী (বীরপ্রতীক)।

শুক্রবার রাতে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভে যুক্ত হন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী জানান, ১৫ আগস্টের অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক, আর রশিদের দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একত্রিত করা। শেখ মুজিবের বাসা, সেরনিয়াবাত, রেডিও স্টেশন ও শেখ মণির বাসাকে টার্গেট করা হয়। মেজর ডালিম রেডিও স্টেশন ও সেরনিয়াবাতের বাসার দায়িত্বে ছিলেন, আর রাশেদ চৌধুরী ছিলেন রেডিও স্টেশনে ডালিমের অধীনে।

তিনি জানান, কিভাবে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত হয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কেন ঘটালেন? জানতে চাইলে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী জানান, যুদ্ধের পর দেশের অবস্থা দেখে তারা হতাশ হন। ১৯৭২-৭৫ সালের দুর্ভিক্ষ ও লুটপাটের পরিস্থিতি তরুণ অফিসারদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। পরিবর্তনের উপায় নিয়ে গোপনে আলাপ চললেও সিনিয়ররা তা প্রকাশ করতেন না। ১৯৭৫ সালের ঘটনাটি আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হলেও বাকশাল গঠনের পর চিন্তাভাবনা আরও গভীর হয়।

তিনি বলেন, তবে আমি মূল পরিকল্পনার অংশ ছিলাম না, শুধু আলাপ-আলোচনা করতাম।

তিনি আরও বলেন, ভোরের দিকে রেডিও স্টেশন টেকেন ওভার করে ভাষণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং পরে ডালিম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘উই হ্যাভ ডান ইট।’

অপারেশনে যাওয়ার আগে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হয়নি জানিয়ে রাশেদ চৌধুরী বলেন, মুজিবের ভাগ্য কী হবে তা আমরা জানতাম না। মুজিবকে বাসায় মারার কোনো প্ল্যান ছিল না; পরিকল্পনা ছিল তাকে অ্যারেস্ট করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে এসে সামারিক কোর্ট মার্শাল করা। রশিদ ও ফারুক ছিলেন অরিজিনাল প্ল্যানার। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রশিদ খন্দকার মোশতাককে নিয়ে রেডিও স্টেশনে আসেন এবং তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়; কারণ তিনি তখন বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর রেডিও স্টেশনটি নতুন সরকারের হেডকোয়ার্টার হয়ে ওঠে।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, মুজিবের বাসভবনে কী ঘটেছিল তা আমি সরাসরি দেখিনি, তবে পরবর্তীতে জানতে পেরেছি। আমার বইয়ে মেজর বজলুল হুদার স্টেটমেন্টে উল্লেখ রয়েছে, তিনি সৈন্য নিয়ে ভোরে মুজিবের বাসভবনে পৌঁছে সুবেদারকে জানান, আর্মি হ্যাজ টেকেন ওভার, মুজিব ইজ নো মোর ইন পাওয়ার। এরপর শেখ কামাল স্টেনগান নিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিচে আসেন এবং তার স্ত্রী সুলতানা অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে দোতলা থেকে নিচে গুলি করতে শুরু করেন। এতে এক সিপাহি নিহত হন, কয়েকজন আহত হন; যা দেখে অন্যান্য সিপাহিরা ক্ষেপে যান।

বজলুল হুদার মতে, শেখ কামাল ও সুলতানা প্রথমে গোলাগুলি শুরু করেন। শেখ কামাল সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসছিলেন, গুলি করতে করতে চিৎকার করছিলেন। দোতলা থেকে গুলি এসে এক সিপাহি মারা গেলে, একজন গালি দিয়ে বলেছিলেন, ‘শালার গোষ্ঠীসুদ্ধ মেরে দে।’ শেখ মুজিবের বাসার চাকরও স্বীকার করেছে যে গোলাগুলি প্রথমে তারা শুরু করেছিলেন। পরে সিপাহিরা গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়, আর হুদা লোকজন নিয়ে প্রবেশ করেন। সে সময় শেখ কামাল মারা যান।

হুদার বরাত দিয়ে রাশেদ চৌধুরী বলেন, তিনি কয়েকজনকে নিয়ে ওপরে গিয়ে শেখ মুজিবকে নামানোর চেষ্টা করেন, মেজর মহিউদ্দীনও সঙ্গে ছিলেন। শেখ মুজিব ঘর থেকে বের হলে, শেখ জামাল ও সুলতানা আবার ওপর থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এক গুলিতে মুজিবের পেছনে থাকা সিপাহি পড়ে যায়। মুজিব দাঁড়িয়ে থাকলেও, হুদা আর মহিউদ্দীন ডাক করে নিজেদের বাঁচান। গুলির শব্দে লাঞ্চারের লোকজনও এসে পালটা গুলি চালায়। একপর্যায়ে মুজিবের গায়ে গুলি লাগলে তিনি পড়ে যান।

শেখ রাসেলকে কেন হত্যা করা হলো জানতে চাইলে রাশেদ চৌধুরী বলেন, সবাই দোতলার একটা রুমে বন্ধ ছিল। শেখ মুজিব পড়ে গেলে ওপর থেকে জানালা দিয়ে গোলাগুলি শুরু হয়। বজলুল হুদার মতে, কয়েকজন সিপাহি জানালা দিয়ে গ্রেনেড ড্রপ করে। ওই গ্রেনেড ব্লাস্ট হয়ে বাকি সবাই একসঙ্গে মারা যান। রাসেল নিচে আসেনি। শুধু শেখ কামাল নিচে মারা যান। মুজিবের মৃত্যুর পর ফরেনসিক করলে হয়তো দেখা যেত তারা কিভাবে মারা গেছে, গুলিতে না গ্রেনেড বিস্ফোরণে।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে ঢাকা ফিরে আসার পর জনগণের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছিলেন; যা অন্য কোনো নেতা পায়নি। শেখ মুজিব একাত্তরের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে তার শাসনভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। তিনি তখন গণতন্ত্রের পক্ষে না হয়ে, স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন; যা ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।

জাতীয়

অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় স্যার এএফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নেন।

এ সময় দুপক্ষ ঢিল মারতে থাকেন।একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়।এ অবস্থায় ঢাবি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে সন্ধ্যায় প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী পাঁচ দফা দাবিতে সায়েন্স ল্যাব মোড় ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব এলাকা, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ।

জানা গেছে, সাত কলেজের ভর্তির আসন কমানোসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে বিকেলে শতাধিক শিক্ষার্থী আলোচনা করতে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের কার্যালয়ের সামনে যান। অধ্যাপক মামুন আহমেদ দুই-তিনজন প্রতিনিধিকে তার কার্যালয়ে এসে কথা বলতে অনুরোধ করেন। তবে সে অনুরোধ উপেক্ষা করে সবাই কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন। এসময় ‘মব’ সৃষ্টি অধ্যাপক মামুন তাদের সঙ্গে আর কথা বলেননি। পরে এর প্রতিক্রিয়ায় সেখান থেকে তারা বেরিয়ে অবরোধ শুরু করেন।

ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, সাত কলেজে ভর্তির আসন কমানোসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিসহ ইউনিটের দায়িত্বরত শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন। শিক্ষকেরা নাকি তাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেননি। এরই প্রতিবাদে তারা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন।

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, আগামী ১ ঘণ্টার মধ্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে রাস্তায় এসে ক্ষমা না চাইলে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবন ঘেরাও করবে।