বিনোদন

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদানের জন্য এই অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার আইনি জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’। দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে অভিনেতার নামে। ছবিতে ভারতীয় সেনাকে অপমান করেছেন আমির— এমন অভিযোগ আইনজীবীর। শুধু তাই নয়, হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের কথাও বলা হয়েছে অভিযোগে।

এ দিকে বক্স অফিসে শুরুটা ভালো হয়নি লাল সিং চাড্ডার। এর মাঝেই নতুন করে বিপদ বাড়ল আমির খানের।

অদ্বৈত চন্দন পরিচালিত এই ছবিতে আমিরের চরিত্র লালকে একটা সময় ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসাবে পাওয়া গেছে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক পেশার সঙ্গে জড়িত থাকে লাল, এমনটাই ওঠে এসেছে ছবিতে। দিল্লির এক আইনজীবী শুক্রবার এই ছবির বিরুদ্ধে দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরার কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

ছবির প্রধান অভিনেতা তথা অন্যতম প্রযোজক আমির ছাড়াও প্যারামাউন্ট পিকচার্স এবং পরিচালক অদ্বৈত চন্দনের নামে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনজীবী বিনীত জৈন জিন্দালের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। ছবিতে আপত্তিকর দৃশ্য দেখানোর জন্য আমির খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের দাবি তুলেছেন আইনজীবী।

অভিযোগে বলা হয়েছে, একজন মানিসকভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তি ভারতীয় সেনায় যোগ দেন এবং কার্গিলের যুদ্ধে শামিল হন। এটা কারোর অজানা নয়, কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনার সেরা কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন, ‘কার্গিল যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনা জওয়ানরা যে ভালো করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল সেটা স্বীকৃত সত্য। কিন্তু, তা দেখানো হয়নি এই ছবিতে। বরং ইচ্ছা করে ভারতীয় সেনার বীরত্ব নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছবির এক দৃশ্যে এক পাকিস্তানি সেনা জওয়ান লালকে বলে আমি নামাজ পড়ি। প্রার্থনা করি। লাল, তুমি কেন সেটা করো না?’ জবাবে লাল সিং বলে, ‘আমার মা বলেছেন- পুজোপাঠ ম্যালেরিয়ার মতো। এ থেকেই হিংসা ছড়ায়।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন আমির, দাবি বিনীত জিন্দালের। দেশের সবার বাক স্বাধীনতা রয়েছে, তবে তার মানে কেউ চাইলেই দেশের সাম্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করবে তা হতে পারে না।

আমির ছাড়াও লাল সিং চাড্ডায় অভিনয় করেছেন কারিনা কাপুর খান, মোনা সিং এবং নাগা চৈতন্য। টম হাঙ্কস অভিনীত ‘ফরেস্ট গাম্প’ ছবির অফিসিয়্যাল রিমেক ‘লাল সিং চাড্ডা’।

বিনোদন

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ যাত্রাপালায় অভিনয় করেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যাত্রাপালা ‘আপন ভাই’।

আব্দুল আওয়াল সরকার রচিত এ যাত্রাপালার নির্দেশনায় ছিলেন ড. সৈয়দ মামুন রেজা।

রোববার সন্ধ্যায় এ যাত্রাপালার দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে অভিনয় করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পালাটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল বলে জানান নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মামুন রেজা।

তিনি গ্লিটজকে বলেন, “এই যাত্রাপালা নিয়ে আমরা কলকাতা যাচ্ছি। ভারত সফরের আগে এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ভালো একটি প্রস্তুতি হয়েছে।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত এ পালা কাহিনি গড়ে উঠেছে দুই ভাই ডা. সদরুল ও নসরুলকে ঘিরে।

সদরুল বিলেত থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে গ্রামে ফিরে আসেন মানুষকে সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে। তিনি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন একজন ব্যক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।

<div class=”paragraphs”><p>যাত্রাপালা ‘আপন ভাই’</p></div>
যাত্রাপালা ‘আপন ভাই’
অন্যদিকে তার ছোট ভাই নসরুল অর্থ-সম্পত্তির অপচয় ও আমোদ-ফূর্তিতে সময় কাটান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিদনি স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন।

নসরুলের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা সদরুলসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অনেককে ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে, মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়।

এমনকি নিজের প্রেমিকাকেও পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেন নসরুল।

সদরুল সুকৌশলে খান সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে তিনি জানতে পারেন, তারই আপন ছোট ভাই নসরুল গোপনে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে কাজ করেছে।

পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের পর জনরোষ থেকে বাঁচতে এবং প্রতিশোধ নিতে নসরুল তার বড় ভাই সদরুলকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যান।

বিনোদন

বলিউডের নতুন প্রজন্ম বদলে দিচ্ছে পুরনো চিত্র। পর্দার দুনিয়ায় তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে বন্ধুত্ব তৈরি হয়, আবার ভেঙেও যায়, যা খুবই স্বাভাবিকভাবে দেখা হয় বলিউডে। কিন্তু হালের দুনিয়ায় বন্ধুত্বের রঙ অনেকটাই স্পষ্ট এবং শক্ত গাঁথুনির।

সুহানা-অনন্যা-শানায়া থেকে সারা-জাহ্নবী এইসব তারকাসন্তানরা সিনেমা জগতে পা রেখে বর্তমানে তুমুল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলেও গত হতে দেননি তাদের বন্ধুত্ব।

রোববার বন্ধু দিবসে বলিউডের কয়েক তারকার সন্তানদের বন্ধুত্বের খবরাখবর তুলে এনেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, যারা একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী।

বলিউড তারকা শাহরুখ খানের মেয়ে সুহানা খান, অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের মেয়ে অনন্যা পান্ডে, সাইফ আলী খানের মেয়ে সারা আলী খান এবং প্রয়াত নায়িকা শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবী কাপুর- এই তরুণ প্রতিভাগুলো কিছুটা বিস্ময় তৈরি করেছে তাদের বন্ধুত্বের মাধ্যমে। কাজ-ব্যস্ততা- প্রতিযোগিতার মধ্যে তারা নিজেদের বন্ধুত্বকে উপভোগও করছে।

সম্প্রতি চাঙ্কির মেয়ে অনন্যা পান্ডে গিয়েছিলেন নির্মাতা করণ জহরের সেলিব্রেটি শো ‘কফি উইথ করণে’। সেখানে সুহানা ও শানায়া কাপুরের (সঞ্জয় কাপুরের মেয়ে) সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বিষয়টি আলোচনায় আসে। করণের প্রশ্ন ছিল তাদের তিনজনের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকবে কি না? ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিতে সময় লাগেনি সুহানার।

অনন্যা কয়েকটি সিনেমায় কাজ করে অভিনেত্রী হিসেবে নামও লিখিয়েছেন। সুহানা জোয়া আখতারের ‘দ্য আর্চিস’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন, আর শানায়াকে দেখা যাবে করণের ‘বেধড়ক’ সিনেমায়। সুহানা-শানায়া-অনন্যার বন্ধুত্ব অবশ্য আজকের নয়। এই ত্রয়ীর লাঞ্চ, ডেট বা পার্টির ছবি প্রায়ই দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

করণের শোতে অনন্যা তার দুই বন্ধু সম্পর্কে সোজাসাপ্টাই বলেছিলেন।

“এটি শুধুমাত্র বন্ধুত্ব নয়, আমি মনে করি এটা একটা পরিবার। আমি মনে করি, কাজ বন্ধুত্বকে প্রভাবিত করবে না। কারণ আমাদের সবার, সবার প্রতি ভালোবাসাটা অকৃত্রিম। একটি সম্মিলিত স্বপ্ন নিয়ে আমরা বেড়ে উঠেছিলাম, সবাই অভিনয় করতে চেয়েছি। অভিনয় জগত নিয়ে অনেক আলোচনাও হত আমাদের। তাই আমার বিশ্বাস সুহানা ও শানায়ার সাফল্যে আমি আমার নিজের মনে করব এবং খুশি হব। সত্যিকার অর্থেই আমি এটাই ভাবি।”

জাহ্নবী কাপুর ও সারা আলী খান তাদের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছেন প্রতিযোগিতার মধ্যেও

অভিনেত্রী সারা আলী খান ও জাহ্নবী কাপুরের বন্ধুত্বও প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ২০১৮ সালে ‘ধড়ক’ সিনেমা দিয়ে শ্রীদেবীকন্যা জাহ্নবীর অভিনয়ে আসা, একই বছরে ‘কেদারনাথ’ দিয়ে পর্দায় চেহারা দেখান সাইফের মেয়ে সারা।

তখন একটা ধারণা হয়েছিল, দুই নবাগতের মধ্যে শত্রুতাই বেঁধে যায় কি না? কিন্তু হয়েছে উল্টোটি। সারা-জাহ্নবীর মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব। একই সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া বা জিমে যাওয়াই শুধু নয়, করণ জোহরের শোতেও দু বন্ধুকে একটি সঙ্গে অতিথি হতেও দেখা গেছে।

নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপের মেয়ে আলিয়া কাশ্যপে এবং পরিচালক ইমতিয়াজ আলীর মেয়ে ইদা আলীও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ছুটিতে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ান, একে অন্যের জন্মদিনে অদ্ভুত সব ছবি পোস্ট করা থেকে শুরু করে মজার সব কাণ্ডকারখানায় বন্ধুত্বকে রাঙিয়ে দিচ্ছেন আলিয়া ও ইদা। যদিও বলিউডের দুই শীর্ষ পরিচালকের দুই কন্যার মধ্যে একজনও এখন পর্যন্ত সিনেমায় অভিনয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। তবে আলিয়া এরইমধ্যে ‘গায়ত্রী’ নামের একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন, যার পরিচালনায় ছিলেন বন্ধু ইদা।

শ্রীদেবী এবং প্রযোজক বনি কাপুরের ছোট মেয়ে খুশি কাপুরও সিনেময়া আসছেন ‘দ্য আর্চিস’ দিয়ে। খুশি আবার আলিয়া কাশ্যপের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আবার এতটাই অটুট যে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুশি ‘বেস্ট ফ্রেন্ড বনাম ভার্সাস বয় ফ্রেন্ড, হু নোজ মি বেটার’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেখানে খুশি, আলিয়া ছাড়াও ছিল আলিয়ার বয়ফ্রেন্ড শেন গেগোয়ারকে।

বিনোদন

১৪ বছরের ক্যারিয়ারে দেড় ডজন ছবিতে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম। এদের মধ্যে কয়েকটি ছবি প্রশংসিত হয়েছে।

কিন্তু গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ছবির অনন্যা চরিত্রকে আলাদা করেই রাখবেন মিম।

মাত্র ১১টি সিনেমাহলে মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি এতোটাই দর্শকপ্রিয়তা পেতে থাকে যে, চতুর্থ সপ্তাহে এসে হলসংখ্যা ৬০-এ দাঁড়ায়। পঞ্চম সপ্তাহে এসেও কোনো কোনো হলে হাউসফুল যাচ্ছে।

অথচ শুরুর দিকে মন খারাপ করে থাকতেন মিম।

মূলত ‘পরাণ’-এ মিমের চরিত্র অনন্যার নেতিবাচক দিকগুলো ক্ষুব্ধ হতেন দর্শকরা। তারা রীতিমতো গালমন্দ করতেন। হলের কোণায় আঁধারে বসে সেসব গালাগাল শুনে কষ্ট পেতেন মিম। পরে বুঝলেন, দর্শকদের এই গালাগাল মূলত তার সার্থকতা। তার অভিনয়ের দক্ষতার সাক্ষর।

এ বিষয়ে মিম বলেন, ‘অন্ধকারে এক কোনো দাঁড়িয়ে শো দেখতাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখতাম। দর্শক গালমন্দ করতেন। খুব খারাপ লাগত। বাসায় ফিরেও মন খারাপ থাকত। টিমের সবাই বোঝাতেন, একজন অভিনেতার এটাই সার্থকতা। পরে বুঝলাম, চরিত্রটিই তো এমন। তার মানে আমি চরিত্রটিতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ নিংড়ে দিতে পেরেছি বলেই দর্শক এমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’

মিম জানালেন, গত ১৪ বছরে দেড় ডজন ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। এরপরও ‘পরাণ’র অনন্যার মতো দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিতে পারেননি সে সব ছবির চরিত্র দিয়ে।

মিম বলেন, ‘এমন একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অনেক ছবিই করেছি। কিন্তু সেভাবে আলোচনা হয়নি। আফসোস ছিল। চলচ্চিত্রে নতুন করে আস্থা পেয়েছি।’

বিনোদন

দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আলোচিত সিনেমা ‘হাওয়া’। পোস্টার, ট্রেলার ও গানে মুগ্ধতা ছড়ানো সিনেমাটির অগ্রিম টিকিট বিক্রির হিড়িকও পড়েছে।

দেখা দিয়েছে টিকিট সংকটও। আর মুক্তির প্রথম দিনেই অর্থাৎ শুক্রবার ঢাকার একাধিক হলে সিনেমাটি হাউসফুল যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে টিকিট সংকটে ‘হাওয়া’র নায়িকা নাফিফা তুষিও হলের সিঁড়িতে বসেই সিনেমাটি উপভোগ করেছেন, এমনটাই বলা হচ্ছে।

সামাজিকমাধ্যমে একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই পাশে সারি সারি সিটে বসে আছেন দর্শক। সবার দৃষ্টি পর্দায়। দু’পাশের সারিবদ্ধ সিটের মাঝ দিয়ে নেমে গেছে সিঁড়ি। লাল রঙের কার্পেটে মোড়ানো সিঁড়িতে বসে আছেন এক নারী ও পুরুষ।

দর্শকদের মতো তাদের দৃষ্টিও রুপালি পর্দায়। কিন্তু মজার বিষয় হলো- সিঁড়িতে বসে থাকা এই নারীটি ‘হাওয়া’ সিনেমার নায়িকা নাজিফা তুষি।

মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার সিনেমাটি মুক্তির পর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সিনেমাটির টিম। আর প্রেক্ষাগৃহ ঘুরতে গিয়ে সিঁড়িতে বসে নিজের অভিনীত সিনেমা দেখেন তুষি। আর ওই মুহূর্তে ফ্রেমবন্দি হওয়া ছবিটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন এই অভিনেত্রী।

সিঁড়িতে বসে নায়িকার সিনেমা দেখা নিয়ে অনেক নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন- ‘টিকিট না পেয়ে সিঁড়িতে বসে সিনেমা দেখছে তুষি?’

‘হাওয়া’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, সুমন আনোয়ার প্রমুখ।

বিনোদন

নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগমের নামে প্রবর্তিত ‘স্মৃতি স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন দেশের বরেণ্য দুই সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের এই পদকে ভূষিত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান তাদের হাতে পদক তুলেন।

ফিরোজা বেগমের জীবন ও কর্মকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরোজা বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড করেছে এসিআই ফাউন্ডেশন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর একজনকে ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক দেওয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দু’বছর এই পুরস্কার দিতে না পারায় এবছর একই সঙ্গে ২০২০ সালের জন্য ফেরদৌসী রহমান ও ২০২১ সালের জন্য সৈয়দ আব্দুল হাদীকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।

স্বর্ণপদক গ্রহণ করে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, “জীবনের এই পর্যায়ে এসে আনন্দের উৎসগুলো খুব সংকুচিত হয়ে আসে। তবে আজকের এই মুহূর্তটির মতো এমন কিছু মুহূর্ত আছে, যা অনেক আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। পদক নিচ্ছি এটা আনন্দের, তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই পদকটির গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফিরোজা বেগমের মতো একজন শিল্পীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছি।”

তিনি বলেন, “ফিরোজা আপার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গান গাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। উপমহাদেশের প্রবাদপ্রতিম সুরকার কমল দাস গুপ্ত নজরুলের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্য আমাকে ও ফিরোজা আপাকে দিয়ে ‘আমার সাম্পান যাত্রী না লয়’ গানটি করিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনও নাড়া দেয়।”

সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সময়ে এই পদক পাওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমরা একসঙ্গে গান করেছি। আজকে একই মঞ্চে দুজন পদক গ্রহণ করছি, এটিও আনন্দের।”

অনুষ্ঠানে ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারণ করে ফেরদৌসী রহমান বলেন, “ফিরোজা আপা আসল সাধিকা ছিলেন। তিনি জন্মেছেন তো অবশ্যই গুণাগুন নিয়ে, কিন্তু সাধনার ফল যে কতটা হতে পারে, তিনি দেখিয়েছেন। মা বলতেন- গান করছো, ফিরোজার মতো সাধনা করো।

“একটা কথা বাবা (শিল্পী আব্বাস উদ্দিন) বলতেন, গানটা তোমার মনের মধ্যে পৌঁছতে দাও। তার মানে যখন তুমি ওটার মধ্যে ডুবে যাবে, তখনই গানের সাধনা হবে। ফিরোজা বেগমের প্রতিটি গান মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে আছে, থাকবে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, একজন কিংবদন্তি শিল্পীর নামে প্রবর্তিত স্বর্ণপদক দেশের দুজন কিংবদন্তি শিল্পী লাভ করলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ট্রাস্ট ফান্ডের দাতা এম আনিস উদ দৌলা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দেবপ্রসাদ দাঁ। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

বিনোদন

হার্ট অ্যাটাকের পর পপ শিল্পী ও নির্মাতা ফেরদৌস ওয়াহিদের ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

সার্জারির পর সুস্থ হয়ে উঠছেন এই কিংবদন্তি।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় বিষয়টি জানিয়েছেন ফেরদৌস ওয়াহিদের পুত্র জনপ্রিয় গায়ক হাবিব ওয়াহিদ। তিনি জানান, হার্ট সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।

হাসপাতাল থেকে তোলা ফেরদৌস ওয়াহিদ ও ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের একটি ছবি সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করেন হাবিব। সেখানে এই গায়ক লেখেন, আপনাদের দোয়ায়, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরদৌস ওয়াহিদ ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারির পর আস্তে আস্তে তার চিরচেনা রূপে ফিরছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দিনগত রাতে হার্ট অ্যাটাক করেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

তার আগে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ফেরদৌস ওয়াহিদ। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছেন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ৭০ বছর বয়সী এ সংগীতশিল্পী কয়েক বছর ধরে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন।

বিনোদন

বলিউডের ঝলমলে দুনিয়াকে হঠাৎ বিদায় দিয়ে ইসলামের পথে চলতে শুরু করেন বলিউপ অভিনেত্রী সানা খান। ২০২০ সালের অক্টোবরে ১৫ বছরের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি।

বিয়েরবন্ধনে আবদ্ধ হন গুজরাটের মুফতি আনাস সায়েদের সঙ্গে। সিনেমা ছাড়লেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় সানা। তবে নিয়মিত হাজির হন হিজাব পরে। ভক্ত-অনুরাগীদের দিতেন নানা ধর্মীয় বার্তা।

সব মিলিয়ে ধর্মেকর্মেই মন দিয়েছেন সাবেক এ অভিনেত্রী।

‘ওয়াজাহ তুম হো’, ‘জয় হো’সহ একাধিক বলিউড সিনেমায় অভিনয় করে সিনেপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন সানা। সালমান খানের বিগ বস ৬-এ জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন।
কিন্তু নাম, খ্যাতি, অর্থ এবং শোবিজ ছেড়ে কেন হঠাৎ করে ধর্মকর্মে আত্মনিয়োগ করেছেন সানা? —এ প্রশ্নের জবাব এবার দিয়েছেন মুম্বাইয়ের এ সাবেক তারকা।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে নতুন সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন সানা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, পার্থিব এসব যশ, খ্যাতি, অর্থ তাকে শান্তি এনে দিতে পারেনি। সেই শান্তি পেতেই শোবিজ ছেড়ে ধর্মে মনোযোগী হয়েছেন।

ওই ভিডিওবার্তায় সানা খান বলেছেন, ‘অতীত জীবনে খ্যাতি, নাম অর্থ সব ছিল আমার। কোনো কিছুর কমতি ছিল না, যা চেয়েছিলাম সব কিছুই করতে পারছিলাম। নিজেকে প্রশ্ন করতাম— সব কিছু পাওয়ার পরও কেন আমি খুশি নই? সময়টা খুব কঠিনভাবে যাচ্ছিল। হতাশায় দিন কাটত। এতসব কিছু থাকার পরও একটি জিনিসের অনুপস্থিত বোধ করছিলাম। সেটি হলো শান্তি। কোনো কিছুতেই সেই সময় হৃদয়ে শান্তি মিলছিল না। (এমন পরিস্থিতিতে) আল্লাহর বার্তা ও তার দিকনির্দেশনার অপেক্ষা করতাম।

এ সাবেক অভিনেত্রী জানান, ২০১৯ সালের রমজান মাসে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অসুস্থতার কারণে তখন মানসিক অবসাদে ভুগতেন।

সানা বলেন, ‘ওই রমজান মাসে আমি স্বপ্নে নিজেকে জ্বলন্ত কবরে জ্বলতে দেখতাম। আমি কবরে বারবার নিজেকে দেখেছি। এই স্বপ্ন আমার কাছে আল্লাহর কোনো বিশেষ বার্তা বলে মনে হয়। আমি অনুভব করি, আল্লাহ আমাকে যে চিহ্ন দিচ্ছেন তাতে যদি আমি নিজেকে পরিবর্তন না করি, তবে আমার পরিণতি এটিই হবে। আর এ বিষয়টিই আমাকে উদ্বিগ্ন করে ও ধর্মের পথে পরিচালিত করে। ’

সানা আরও জানান, এর পর শোবিজ ছেড়ে দেন এবং এক রাতে খুব সুন্দর কিছু পড়ছেন— এমন স্বপ্ন দেখেন।

সানা বলেন, ‘পরের দিন সকালে আমি জেগে উঠলাম এবং সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। বাড়িতে আমার অনেক স্কার্ফ ছিল। আমি স্কার্ফ পরলাম এবং নিজেকে বললাম, এই স্কার্ফ আমি আর কখনো সরাব না।’

বিনোদন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে চায়ের আড্ডা-সবখানে ঝড় তুলেছে ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালো কালো’ গানটি; তুমুল আলোচনার মধ্যে অনেকে গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদকে খুঁজছেন।

শ্রোতাদের কাছে হাশিম মাহমুদ অপরিচিত নাম হলেও নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, টিএসসি, ছবির হাটের পরিচিত মুখ তিনি।

শাহবাগের আড্ডায় গানটি নিয়মিত গাইলেও ‘হাওয়া’ সিনেমার সুবাদে শাহবাগ ছাপিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম। তিনি একাধারে কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও ছড়াকার। পঞ্চাশোর্ধ্ব এ শিল্পী অনেকটা নিভৃতে বাস করেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা সবুজবাগ এলাকায়।

নারায়ণগঞ্জ শহরে বেড়ে উঠলেও যৌবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন ঢাকাতে। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় তার ভরাট কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু গানে নয় কথাতেও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি।

‘শাপলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন হাশিম মাহমুদ। যাতায়াত ছিল স্থানীয় সংগীত বিদ্যালয় জয়জয়ন্তী জলসায়। পরে ঢাকার চারুকলা, মোল্লার দোকান, ছবির হাট, পাবলিক লাইব্রেরি ও শাহবাগ হয়ে ওঠে তার বিচরণক্ষেত্র। এক সময় ‘বৈরাগী’ নামে একটি গানের দলও করেছিলেন তিনি।

আবুল হাশেম ও জমিলা আক্তার দম্পতির সাত সন্তানের তৃতীয় হাশিম মাহমুদ। শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি।

তার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, অসুস্থতার কারণে গানের কথা ও সুর ভুলে যান হাশিম মাহমুদ। গাইতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন তালও। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি। মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে থাকেন তিনি।

বাসায় রোজ খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়েন লিখতে। নিজের ঘরে পাতা মলিন চাঁদরে মোড়ানো খাটের উপর স্তূপাকারে লেখার খাতা। তাতে নিজের মৌলিক লেখার পাশাপাশি রবীন্দ্র, নজরুল ও লালন গীতি লিখে রেখেছেন। সারাক্ষণ এই ঘরেই পড়ে থাকেন। বাইরে বের হন না।

তার শিল্পকর্মের নানান জায়গায় ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে পরিবারের লোকজনের। হাশিম মাহমুদের লেখা অনেক গান বিনা অনুমতিতে অনেকে ব্যবহার করেছে বলে দাবি তাদের। ন্যূনতম সম্মানীও তাকে দেওয়া হয়নি। অনেকেই আবার নামমাত্র সম্মানি দিয়ে লেখা ব্যবহার করেছেন। তবে যশ বা টাকা-পয়সা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাননি হাশিম মাহমুদ।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও অসুস্থ এই শিল্পী। তিন বছর আগে চিকিৎসা করানো হয়েছিল।

তার বোন দিলারা মাসুদ ময়না বলেন, “হঠাৎ ভালো থাকেন আবার হঠাৎ রেগে যান। তখন সবাইরে ঘর থেকে বের করে দেয়। টিভিতে পরিচিত কোন সুর শুনলে ওর গান চুরি করেছে বলে হৈ-চৈ করে। নিজের ভেতরে ভেতরে আলাদা জগৎ তৈরি করেছে। গত ঈদেও সব ভাই-বোন একত্রে বসে গান করেছি। এখন আর ঘর থেকে বের হতে চায় না।”

“ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রামে একবার গান গাইতে গাইতে ওর গলা জ্বলতেছিল। তারপরও গানের অনুরোধ আসতেছিল। এত লোকের মাঝে মুগ্ধ কণ্ঠে টানা ১৪টা গান গাইছে। সেদিন ওরে টাকার মালা পরিয়ে দিয়েছিল।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ছোটবোন ময়না।

‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা কে এই হাশিম মাহমুদ?
তার বৃদ্ধা মা জমিলা বলেন, “এক মেয়ের সাথে লালন ফকিরের আখড়ায় গিয়েছিল। ওই মেয়েরে বিয়ে করার কথা ছিল। সেই মেয়ের সঙ্গে আর বিয়ে হয়নি। এরপরই আরও আউলাইয়া গেছে।”
নীরবে-নিভৃতে কালের অন্ধকারে তিনি হারিয়ে যাচ্ছিলেন ‘হাওয়া’ সিনেমায় চলচ্চিত্র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন তার গানটি নেন; গানটিতে তার কণ্ঠ দেওয়ার কথা থাকলেও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দিতে পারেননি।

হাশিম মাহমুদের সুর ও কথার এ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এরফান মৃধা শিবলু।

এর আগে হাশিম মাহমুদের কণ্ঠে ‘তোমায় আমি পাইতে পারি বাজি’ গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা শিল্পী রফিউর রাব্বি বলেন, “সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলার সাথে ছিল হাশিম মাহমুদ। কোরাসে গান গাইতো। গলা ভালো ছিল। তবে বেশিদিন সে শাপলার সাথে যুক্ত থাকেনি।”

একটা সময় বেশ কিছুদিনের জন্য হাশিম মাহমুদের সাথে কিছু গান করার চেষ্টা করেছিলেন কবি আরিফ বুলবুল।

তিনি বলেন, “আগে থেকেই একরকম আত্মভোলা, অসুস্থ ছিল হাশিম। বর্তমানে হয়তো সেটার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ওর চিকিৎসা করানোর কথা বললে হাশিম আর কাছে আসতে চাইতো না। সবকিছুর পরও কণ্ঠ সৌকর্যে হাশিমের মতো প্রতিভাবান শিল্পী খুব কমই ছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের যে তার এই ক্ষমতা সে প্রকাশ করতে পারে নি। আমি আমার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

“আমার জানামতে, আরও কয়েকজন চেষ্টা করেছিলেন, তারাও পারেননি। অসুস্থতার কারণে তাকে কোনো ডিসিপ্লিনে আনা সম্ভব হতো না। হঠাৎ হঠাৎ কোথায় চলে যেত আর খুঁজে পাওয়া যেত না। হাওয়ায় প্রকাশিত গান অন্তত ওরে পরিচিতিটুকু এনে দিয়েছে। জনপ্রিয়তা দিয়েছে।”

হাশিম মাহমুদের বড় ভাই সরকারি সঙ্গীত কলেজের তালযন্ত্র তবলা বিভাগের প্রভাষক রাশীদুল হাসান জীবন বলেন, “প্রাকৃতিকভাবে গলা পেয়েছে হাশিম। তার পরিচিতি হচ্ছে এতে পরিবারের সবাই খুশি। তবে তার চিকিৎসার খুব দরকার।”

এজন্য তিনি সুধীজনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

হাশিম মাহমুদের চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, “হাশিম ভাইয়ের পরিবারের লোকজনের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসবো। এজন্য একটি ফান্ড তৈরির প্রক্রিয়াও চলছে।”

বিনোদন

ঢালিউডের শীর্ষ নায়কদের মধ্যে আলমগীর, ফারুক, জাফর ইকবাল, উজ্জ্বল ও সোহেল রানার বড়পর্দায় অভিষেক ঘটেছিল ষাটের দশকের ‘হার্টথ্রব’ নায়িকা সারাহ বেগম কবরীর বিপরীতে; ক্যারিয়ারের প্রথম নায়িকাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন সোহেল রানা ও আলমগীর।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা গেছেন কবরী। শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে এ কিংবদন্তী চিত্রনায়িকাকে।

ষাটের দশকে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে বেড়ে উঠা ভীরু ডাগর চোখের কিশোরী মিনা পাল মাত্র ১৪ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় যাত্রা শুরু করেন।

কয়েক বছরের ব্যবধানে নির্মাতা জহির রায়হানের উর্দু ছবি ‘বাহানা’ ও নির্মাতা খান আতাউর রহমানের ‘সোয়ে নদীয়া জাগে পানি’ সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কবরীর ভ্রু’র তালে উত্তাল হয়েছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।

তারকা কবরীর বিপরীতে নায়ক হিসেবে তরুণ সোহেল রানার অভিষেক ঘটে সত্তরের দশকে; ১৯৭৪ সালের ২৪ মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছিলেন সোহেল রানা।

ক্যারিয়ারের প্রথম নায়িকা হিসেবে কবরীকে আজীবন ‘হিরোইন’ বলে সম্বোধন করেছেন সোহেল রানা; আর সোহেল রানাকে ‘পারভেজ ভাই’ বলে ডেকেছেন করেছেন কবরী।

নায়ক হিসেবে ‘মাসুদ রানা’ সোহেল রানার প্রথম চলচ্চিত্র হলেও প্রযোজক হিসেবে এর আগে ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দর্শকদের মাঝে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
শনিবার রাতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন সোহেল রানা।

“তখন স্টার আর্টিস্টরা নতুন পরিচালক কিংবা হিরোদের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে দোটানায় থাকতেন। কিন্তু কবরীকে যখন আমার ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলাম, তিনি জানালেন, কাজটি করবেন। পরে উনি হাসতে হাসতে বললেন, ছবিতে আরেক নায়িকা কে? বললাম, অলিভিয়া। এবার খুনসুটি করে বললেন, ওর দিকে আবার বেশি তাকাবেন না তো!”

“সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তার। সেইদিন থেকে আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। নতুন ডিরেক্টর কিংবা নায়ক হিসেবে আমি যাতে তার সঙ্গে কাজ করতে ইতস্তত বোধ না করি সেকারণেই তিনি মজার ছলে আমার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন।”

পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’সহ দুই শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে আলো ছড়িয়েছেন কবরী।

তার সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্রগুলোর বেশিরভাগের নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। উপমহাদেশে যখন উত্তম-সুচিত্রার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া তখনই বাঙালির চিরায়ত জুটিতে পরিণত হয়েছিলেন রাজ্জাক-কবরী।

‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘রংবাজ’ সহ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তারা।

‘রংবাজ’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কবরীকে লাস্যময়ী হিসেবে দেখা গেলেও ষাট ও সত্তরের দশকের দর্শকের কাছে তার মূল আবেদন ছিল বাড়ির পাশের মিষ্টি মেয়ে রূপে। যে নারী ঘরের, যে নারী অতি আপন, যে নারী বাংলার প্রকৃতির মতোই কোমল ও স্নিগ্ধ, সে রূপেই দর্শক হৃদয়ে চিরস্থায়ী কবরী।

কবরীর মাঝে দর্শকরা আবহমান বাংলার চিরায়ত নারীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন বলে মনে করেন সোহেল রানা।

“বাংলার নারীদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আমরা যেমনটা অনুভব করি কবরীকে তেমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। এখনকার নায়ক-নায়িকারা সবাই একই রকমভাবে কথা বলে। চুলে নানা রঙ করে। কিন্তু বাংলার সাধারণ নারীকে এমনটা কেউ কল্পনা করে না।”

“বাংলার মানুষকে মিষ্টি মেয়ের কথা ভাবতে বললে শুধু কবরীর কথাই ভাবে। সেকারণেই তাকে ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলা হয়। বাংলার মানুষের অন্তর থেকে এ উপাধি এসেছে। এমনকি গ্রামে যারা হালচাষ করেন তারাও বলবেন কবরী মিষ্টি মেয়ে; কবরী বাংলার মেয়ে। কবরী তুলনাহীন।”

সোহেল রানা জানালেন, কবরী ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আমুদে ছিলেন; জমিয়ে আড্ডায় দিয়ে চারপাশ মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। কাছের মানুষদের সঙ্গে খুনসুটি করতে ভালোবাসতেন; অবসরে গল্পের বইয়ে ডুবে থাকতেন। আর নতুন কোনও বিষয়ে তার জানার আগ্রহ ছিল প্রবল।
“আমার সঙ্গে কথা বলে তখন রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে। ছোটভাইয়ের (নায়ক রুবেল) সঙ্গে ফিটনেস নিয়ে কথা বলে। মানুষের সঙ্গে আলাপ করে নতুন কিছু শিখতে চাইত। জানার আগ্রহ কবরীকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

“শেষ দশ-বারো বছরে কবরীর বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা বলতে পারবেন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ নিয়ে কতটা ক্ষুরধার বিশ্লেষণ করতে পারতেন তিনি। শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে কবরী তুলনাহীন। শি ওয়াজ অ্যা ট্রু লিজেন্ড। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় আর্টিস্ট পাওয়া যাবে কিন্তু কবরীকে পাওয়া যাবে না।”

১৯৭৩ সালে পরিচালক আলমগীর কুমকুমের পরিচালনায় ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে প্রথমবার অভিনয় করেছিলেন আলমগীর; নায়িকা ছিলেন কবরী।

আলমগীর জানান, তিনি তখন নবীন শিল্পী ছিলেন; জ্যেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে প্রথম ছবির শুটিংয়ে সবসময় খোঁজখবর রাখতেন কবরী। নিজের টাকায় চকি, চাদর কিনে এনে শুটিংয়ের সেটে আমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করতেন।

আলমগীর বলেন, “কবরী আমাদের শ্রদ্ধেয় আপা। মানুষ হিসেবে দুর্দান্ত ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। আর শিল্পী হিসেবে যাচাই করার ক্ষমতা আমার নাই। যাচাই করতে চাওয়াটাও আমার জন্য ধৃষ্টতা।”

কবরীর তারকা জীবন যেমন ছিল

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলেছিলেন, “মানুষের কাছাকাছি যেতে পারি না। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকতে হয়। মানুষের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্যও অনেকে এটা করে। কারণ বাজারে ২৪ ঘণ্টা ঘুরলে কোনো তারকার আর দর থাকে না।”

তারকারা যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে তা সাধারণ মানুষকেই প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারলে চরিত্রায়নে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে কবরী জানিয়েছিলেন, চট্টাগ্রামের একটি হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পর পুরো জীবনটাই শহরে কেটেছে তার; তবে অনেক চলচ্চিত্রেই গ্রামের নারীর চরিত্রও তুলে এনেছেন পরিচালকের চিত্রনাট্য ধরে।

“পরিচালক যখন কোনো চিত্রনাট্য বুঝিয়ে দেন সেটা ভালোভাবে রপ্ত করি। একেবারে সাধারণের সঙ্গে যে মিশি না তা কিন্তু নয়; আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েকে দেখি। ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে গর্ভবতী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। বাচ্চা হলে পেট ব্যথা করে কি না সেটাও তখন জানতাম না। সেটা মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।”

এর বাইরে চলচ্চিত্র দেখে, বই পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করার চেষ্টা করতেন বলে জানিয়েছিলেন কবরী।

মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি

অভিনেত্রী কবরী একাত্তরের উত্তাল সময়ে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ভারতের বড় বড় শহরে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করেছেন। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। পরে দেশে ফিরে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন সিনেমায়।

সেলুলয়েডের সেই রঙিন জীবন শেষে কবরীর পরের জীবন-চলচ্চিত্রও কম বর্ণময় ছিল না। রাজনীতিতে নেমে জীবনের আরেক চলচ্চিত্রের মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছিল বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে।

এক সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের বধূ কবরীকে ভোটের মাঠে সেই নারায়ণগঞ্জেই নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সব জয় করেই ২০০৮ নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় কবরীর পরিচালার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন তিনি। সে কাজ আর তার শেষ হল না।