রাজনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেবে দলটি। এছাড়া দুবাইয়ে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতেও চিঠি দেবে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব চিঠি দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলনে বিজয়ের আগে সরকার তার সরকারি বাহিনী দিয়ে যে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে সব সময় আমরা কথা বলে এসেছি। এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে চিঠি দেব। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেব। এছাড়া আন্দোলনে সমর্থন জানানোয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্তির জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেব।

শুরুতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এতে পুরো জাতির কাছে আশা সৃষ্টি করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এটা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য সুখবর। যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বিচার বিভাগে সেটা অনেকাংশে মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি যে, দেশে ও বিদেশে গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এসব বিষয়গুলো তুলে ধরছে, যা একেবারেই সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা সম্প্রদায়গতভাবে নয়, রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। এটার সঙ্গে আমাদের (বিএনপি) জড়িয়ে একটা খবর পরিবেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি তো জড়িত নয়ই, বাংলাদেশের সুস্থ স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা একটা চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের অর্জিত নতুন করে যে স্বাধীনতা সেটাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ও সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন।

রাজনীতি

ছাত্রসমাজের আন্দোলনের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান ভারতে।  এরপরই নাজেহাল হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।   বর্তমানে অনেক মন্ত্রী এমপিরা আত্মগোপনে গেছেন আবার অনেকে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।

এদিকে সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী জীবনে আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার বিকালে তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের সঙ্গে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানীর কবরে শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে এ ঘোষণা দেন।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি আজ মাওলানা ভাসানীর মাজারে এসেছি উপলক্ষ হিসেবে। লক্ষ্য হলো, ’৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যে যুদ্ধ এখানে শুরু হয়েছিল এবং আজও এই বাংলার গণমানুষের, নিপীড়িত মানুষের, অধিকারবঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে যিনি পরিচিত, সেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, তাকে আমি সমর্থন করি। তার সঙ্গে আমৃত্যু আমি থাকব। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি আর জীবনে সম্পৃক্ত হব না। মাওলানা ভাসানীর এই মাজারে দাঁড়িয়ে আমি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে টাঙ্গাইলবাসীর সমর্থনে, বাংলার মানুষের সমর্থনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

পরে তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তৃতা শেষ করে বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী আমাদের চিত্তকে শুদ্ধ করুন।’

প্রসঙ্গত, বর্ষীয়ান রাজনীতিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সভায় বক্তৃতাকালে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। সংসদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।

শনিবার লতিফ সিদ্দিকীর বক্তৃতার পর তার ভাই কাদের সিদ্দিকী বক্তৃতাকালে কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। আমি তোমাদের বলছি, আমার শেষ শ্বাস যেন রাজনীতি করতে করতেই বের হয়ে যায়।’

এ সময় তাদের ছোট ভাই কালিহাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ সিদ্দিকীসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই বলে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবেনা। তাদের প্রধান শক্তি জামায়াতে ইসলাম ও শিবিরকে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারায় নিষিদ্ধ করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আবারও জাতিসংঘ (ইউএন) এবং অন্যান্য দেশের কাছে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে দেশব্যাপী তা-ব চলাকালীন প্রতিটি ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

আজ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এ স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ (বিকেএল) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন, জামায়াত ও শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘সবাইকে এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে হবে এবং আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন তার জীবন নাশের প্রচেষ্টা আগের ঘটনার মতো বারবার আসতে পারে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু, আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার আমি সবই করব।’

সাম্প্রতিক সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের আড়ালে জঙ্গিরা তাদের হিংস্র দাঁত দেখিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বস্ব হারিয়ে কাছের এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তিনি জানেন।

তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমি প্রত্যেকটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞের) তদন্ত চাই যে, এর পিছনে কারা রয়েছে এবং কীভাবে এবং কী কী ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

পরে কমিশন গঠনের পর বিপুল সংখ্যক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এর পরিধি সম্প্রসারণ করে তিনজন সদস্য করা হয়।

শেখ হাসিনা প্রতিটি বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দেশ চায়, তারা বিশেষজ্ঞও পাঠাতে পারে। আমি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নির্মিত সম্পত্তি ধ্বংস করে দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তারা আর সহ্য করবেন না।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দেশব্যাপী তা-ব চালানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন ধ্বংসস্তুপে রূপ নেওয়ার আগে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে। তিনি নিজেও আইনশৃংখলা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছেন।

তিনি আমেরিকায় সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলের আগ্রসনের প্রতিবাদরত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর সরকারি সংস্থার হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমেরিকায় যেভাবে মেরে ধরে, শিক্ষকদের রাস্তার ওপর ফেলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হার্ড লাইনে গিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল, তাঁর সরকার সে পথে যায়নি এবং শক্তিও প্রয়োগ করেনি। বরং তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। আসলে তাদের দাবিটা কি? সরকারি চাকরীতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্টে পক্ষভুক্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাতিল হওয়ায় সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। আপিল বিভাগ শুনানির দিন ধার্য করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছে অর্থাৎ কোটা বাতিলই ছিল। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায়ও ছাত্রদের চাহিদার চাইতে বেশিই এসেছে। আর এটাতো তাঁরই দাবি ছিল, সেখানে আন্দোলনের আর কি থাকে! সেখানে আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। আমি তো নিজেই সবকিছু হারিয়েছি এবং গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা ও সরাসরি গুলি করে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তারপরেও আমি সাহস নিয়ে কাজ করে গেছি। ভয়ও পাইনি, পিছুও হটিনি। কারণ আমার লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন- সে কাজটা আমাকে করতে হবে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “আমি বলতাম ‘টাইম ইজ টু শর্ট’। কেননা যে কোন জায়গায়, যে কোন সময়ে ঘাতক আমাকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আঁশ, আমি মানুষের জন্য কাজ করবো।

তিনি বলেন, লক্ষ্য স্থির করেছিলাম যে- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে আসবো, আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের যে মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হয়েছিল, তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছিল। আজকে আমরা কি দেখি, সব জায়গায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আবার একটা নেতিবাচক মনভাব সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশে^ বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেটা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সেই মান সম্মান সব নষ্ট করা হচ্ছে। এটার বিচার আমি জনগণের কাছেই দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এমনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পোড়ানো হল- ঠিক ফিলিস্তীনের গাজায় যেভাবে হাসপাতালে বোমা হামলা করে ধ্বংস করা, শিশু হত্যা ও মানুষ হত্যা সেই একই ঘটনা যেন এখানে ঘটানো হচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের।

তিনি বলেন, একটা কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে এই ভাবে একটা নাশকতা ও জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করা ! যে জন্য তিনি ১৭ তারিখ টেলিভিশন ভাষণে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষক ও অভিাবকদের বলেছিলাম যে, আপনাদের সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, আপনারা সন্তানদেরকে বের হতে দিয়েন না। কারণ আমিতো জানি এদেশে জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসি গোষ্ঠী কতদূর কি করতে পারে। আমি তাদেরকে সতর্ক করেছি যে, আপিল বিভাগের রায়ে শিক্ষার্থীদের হতাশ হতে হবে না। তাদের যেটা দাবি সেটা এসে যাবে। কারণ আদালত ও আইন মেনেই সকলকে চলতে হয়।

তিনি বলেন, তারপরেও আজকে বাংলাদেশে এতগুলো প্রাণ যে ঝড়ে গেল এর দায় দায়িত্ব কার? একটা জিনিষ গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, যারা আপনজন হারিয়েছেন, যে মা তার সন্তান হারিয়েছেন, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছেন তাদের কি কষ্ট সেটা আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি। স্বজন হারাবার বেদনা নিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এদেশে ফিরে এসেছিলাম যেন দেশের মানুষ দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে একটা সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, স্বাধীনতার সুফল পায়- সে আশায়।

তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জসহ প্রতিটি জনপদ ও মানুষের জীবন উন্নত করে দেওয়াটাই কি তাঁর অপরাধ? আজকে নানাভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম। আমি জানি, আমি আত্মবিশ^াস নিয়ে, সততা নিয়ে কাজ করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। আমি এদেশের কৃষক ও শ্রমিকসহ প্রতিটি মেহনতী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি।

যখন থেকে তিনি সরকারে এসেছেন, তখন থেকেই নানারকম ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি -জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, গাছ কাটাসহ রাষ্ট্রীয সম্পদ ধ্বংস, ২০০১ পরবর্তী হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যা ও নির্যাতন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি, একই দিনে ৬৩ জেলার ৫শ’ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, জজের ওপর হামলা ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা আর এবার মানুষকে গুলি, হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা। মানুষ যেখান থেকে সেবা পায় সেগুলো ধ্বংস করা এবং কিছু কিছু হত্যাকান্ড এমনভাবে ঘটানো হয়েছে- যা এক সময় বের হবে।

এ জন্যই তিনি আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন, কারো দাবির অপেক্ষায় রাখেন নি বলে জানান।

যখন ৬ জন মারা গিয়েছিল, তখন তিনি ঘটনার তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে দেন। এখন আরো ঘটনা ঘটার প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের কর্মপরিধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই প্রত্যেকটি জিনিষের তদন্ত হোক। কারণ এর পেছনে কি কি ভাবে কি কি ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসুক। আমি জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, তারা যেন তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠায়, অন্য কোন দেশ যদি চায় তারাও যেন বিশেষজ্ঞ পাঠায়। কারণ আমি চাই এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

তিনি আরো বলেন, “যেই দায়ী থাক, আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ।”

তিনি বলেন, আমরা গড়বো আর তারা সব ধ্বংস করে, লন্ডভন্ড করে দেবে, আমার দেশের মানুষকে কষ্ট দেবে, মানুষ ভুক্তভোগী হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা- এটাই তো আমি দেখি তাদের সব থেকে বড় জিনিষ।

তিনি বলেন, জঙ্গিরা সারা বিশ্বব্যাপী কি ঘটনা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশে হলি আর্টিজেনের পরে আমরা আর একটা ঘটনা ঘটতে দেইনি। আমাদের গোয়েন্দা ও আইনশৃংখলা রক্ষকারী সংস্থাগুলো সজাগ থেকেছে। নিজেদের জীবন দিয়েছেন, কিন্তু এই জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু আজকে কোটা আন্দোলনের ছত্রচ্ছায়ায় এরা জঙ্গিদের সেই ভয়াল দাঁত দেখাল।

রাজনীতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনচালাকালীন মিছিল, বিক্ষোভে ও ঘরে থাকা অবস্থায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে জঙ্গি গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করে খুব কাছে থেকে অনেককে গুলি করায় হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

লন্ডনে বসে আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের এনে ক্ষমতা দখলের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তাদের নেতা লন্ডনে আদেশ দিয়ে সারা দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হচ্ছে, তদন্তে বেরিয়ে আসবে গুলি কীভাবে শিশুর মাথায় বা চোখে লাগল।

দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হয়নি, সেনাবাহিনী কোথাও গুলি ছুড়েছে এমন খবর আমাদের জানা নেই, তারপরও আমরা বলবো তদন্তের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসছে, বলেন কাদের।

এ সময় নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

রাজনীতি

সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অতি দ্রুত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার কাছে ফিরিয়ে দিন। নির্যাতন যত বৃদ্ধি পাবে গণপ্রতিরোধ তত দুর্বার হবে।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা, গুলি, দমন, নিপীড়ন, গ্রেফতার, নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন বিএনপির মহাসচিব।

বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৃতীয় শক্তির হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগকে সরকারের ‘মিথ্যাচার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘তৃতীয় শক্তি’ না খুঁজে নিজেদের অপশক্তিকে চিহ্নিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তারপরেও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এই মিথ্যাচারের কোরাস গেয়েই চলেছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার এবং সরকারি বাহিনী এমনভাবে মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে যে, সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দেখেছে আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই মামলায় আসামি করে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলিফ শাহারিয়ার মাহিমকে। এই বর্বর অবৈধ সরকার সভ্য মানুষের উপদেশ কখনই গ্রহণ করবে না। কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণহত্যা চালিয়ে বর্বর শাসন কায়েম করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র–জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। দেশের, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সকল দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এই গণতন্ত্রবিনাশী, লুটেরা, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী, খুনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে।

বিবৃতিতে এ দেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জন-অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। এই সরকার আজ রাষ্ট্রপতি-প্রাণঘাতী সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিক্কৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে যে তারা নিজেরাই বলছেন, শ্রীলংকার মতো গণভবন দখল করে নেবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি সরকারের আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান ফখরুল।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের দেখতে আজ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৫টার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। তিনি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত চক্রের হামলার শিকার হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থার খোঁজ খবর নেন।

তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

আঘাতের তীব্রতা দেখে ও হামলার নৃশংসতার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি এ সময় তার চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

এরপরে তিনি মহাখালীস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দ্য চেস্ট এন্ড হসপিটালে আহতদের দেখতে যান।

গতকাল বিকেলে সহিংসতায় আহতদের দেখতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

এর আগে, গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী সহিংসতার শিকার অন্যদের দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) পরিদর্শন করেন।

তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দেন এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী মিরপুর ১০-এ ভাংচুর হওয়া মেট্রো রেল স্টেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ভবন এবং মহাখালীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প¬াজা পরিদর্শন করেন।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে যা ইচ্ছা তাই করছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাৎ করতে যেয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে জানতে চায়, কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, নিজেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডার দিয়ে গণহত্যা, নৈরাজ্য চালিয়ে নির্লজ্জ সরকার লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মায়াকান্না করলেও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল যে অভূতপূর্ব লাল ডিজিটাল প্রতিবাদের সৃস্টি করেছে, তাতে আপামর জনসাধারণের ঐক্য জানান দিয়েছে। জনসাধারণ খুনি সরকারের লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যার সরকারকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও ঢাকা, চট্ট্রগাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেপ্তার-নির্যাতন করে বাধা প্রধান করে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনেও সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা প্রদান ও শিক্ষার্থীদের আটক করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোক আহত হন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান উপহাস মাত্র। সরকারের নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি করে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা প্রমাণিত সত্য। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র গণআন্দোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধ, সান্ধ্য আইন জারি ও সেনাবাহিনী নামিয়ে গণগ্রেপ্তার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে, মামলা-হামলা করে এবং রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব মামলার আসামি করা হচ্ছ। এমন মামলায় সাভারের মৃত আজগর আলী, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সংসদে বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি অন্য একটি মামলায় সাত মাস আগে মৃত্যুবরণকারী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মরহুম ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাইর করে। গতকাল পুলিশ মরহুম এই বিশিষ্ট আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় হানা দেয়। আন্দোলনের আগে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত, তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করলেও এবং বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডক্টর মোরশেদ হাসান খান তার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিচ্ছে। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের হয়রানি, নির্যাতনের শত শত ঘটনা আছে, যার বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ঘটনা শুধু নির্দয়, অমানবিকই নয়, সরকারের নির্লজ্জ প্রতিহিংসা ও ফ্যসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাদের তাদের সিংহভাগে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তারের নামে মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর করছে, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, চুরির অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের সাবেক এমপি শহিদুল আলমকে বিনা কারণে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় হানা দিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাবাকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার কখনো বাবা ছেলেকে একসঙ্গে নিয়ে আসছে, এই গ্রেপ্তার তালিকা থেকে বাদ যায় নাই উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়ামুজ্জামান পর্যন্ত। বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের পিএস সুমনের বাসায় রাতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ভুলতা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম জিসানকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী হিরাকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে, একদিকে স্বজনহারা মায়ের কান্না অপরদিকে কোর্টের বারান্দায় গণগ্রেপ্তারকৃত পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে মা-বোনদের আর্তনাদ, পুলিশের ভ্যান বা ডিবি অফিসে খুঁজে তারা দিশেহারা। তারা বুক ফেটে কাঁদতেও পারছে না পুলিশের অত্যাচারে। জাতিসংঘ থেকে সারা বিশ্ব এবং দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষরা যখন সরকারের এই গণহত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে, সেই সময়ও সরকার নির্লজ্জের মতো মিথ্যাচার করছে।

রাজনীতি

দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশে বিরাজমান সংকট : উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, সরকারকে আত্ম-বিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে যে, কী কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারের কোনো কথায় ভুল ছিল কি না। সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। আর কোনো অবস্থায় এই প্রক্রিয়া প্রশাসনের বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে হলে হবে না। কারণ, বলপ্রয়োগের প্রক্রিয়া জাতিকে এক করতে পারে না। এখানে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ আছে, যাদের সংকটের সময় পাওয়া যায় না। যা আমরা এখন দেখছি। ছাত্রসমাজ যৌক্তিক দাবির জন্য যে আন্দোলন করছিল, তা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা থাকবে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের ক্ষয়ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে, তাতে এটি উত্তরণ করতে অনেক সময় লাগবে। দেশে বর্তমানে বহু সংকট চলছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক সংকট আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সংকট আমাদের এখানে আছে। আমাদের এখানে প্রশাসন যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। যখন কাউকে কাস্টডিতে নিয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু তারপরও সেটা করা হয়। এগুলো তামাশা বাদে আর কিছু না।

তিনি বলেন, এরপর আছে দর্শনগত সংকট। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ আমাদের যে চারটি স্তম্ভ আছে- সেগুলো এখন সংকটে আছে। যে ঘটনা বাংলাদেশে হয়েছে, সেটা হচ্ছে আক্রমণ বাংলাদেশ, আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা আছে, আমাদের গণতন্ত্রের চেতনা আছে, সমাজতান্ত্রিক চেতনা আছে। মোটকথা আমরা দর্শনগত সংকটে আছি।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সাধারণের সহযাত্রী হতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে সহযাত্রী হতে হবে। আমাদের সঠিক তথ্য প্রবাহের সংকট আছে। মানুষের কাছে এত বেশি ভুল তথ্য যাচ্ছে, যার কারণে এর মধ্য থেকে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আরেকটি হচ্ছে অস্তিত্বের সংকট। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়েছিলাম, সেটি এখন সংকটে আছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সার্বিকভাবে আস্থা তৈরি করতে হবে। আর এটা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর সেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে শেখ হাসিনাকে। সবাইকে একসঙ্গে নেওয়ার যে ব্যবস্থা, সেটা তাকে করতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোকজন যদি বিচ্ছিন্নভাবে থেকে যায়, তাহলে একা চেষ্টা করে সেটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। কাজেই এই প্রক্রিয়াটি হতে হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। যা হবে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গত জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশের যে অবস্থা দেখছি, তাতে অবস্থা ভালো থাকার কথা না। এখন বাংলাদেশে এক প্রকার দূরবস্থা চলছে। যার ফলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর কারণ দেশ চালানো নীতির সমস্যার কারণে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। যারা সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে ঘুরেন তাদেরও কিন্তু দেখা পাবেন না। তাদের আলোচনা বা টকশোর জন্য ডাকলে এখন তারা আসে না, ফোন করলে বলে ব্যস্ত আছেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে সরকার সিদ্ধান্ত নিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করবে। তাহলে কি জামায়াতের অর্থনীতি নিষিদ্ধ হবে? জামায়াতের ৮১টি প্রতিষ্ঠান যেগুলো দিনের পর দিন ব্যবসা করে আসছে, সেগুলো কি বন্ধ হবে?

বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, আজকে যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট; তারচেয়েও বড় যেটা অস্তিত্বের সংকটের কথা উঠেছে। এ বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে এবং আগামীতে এটা নিয়ে আমাদের কাজও করতে হবে। আমরা নিজেদের আত্মতুষ্টি নিয়ে অনেকদিন কাটিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা-দক্ষতা নিয়ে আমরা যতটা ভেবেছি যে, আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। সেটা যে কতটা মেকি ছিল, ঠুনকো ছিল, সেটা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ পেয়ে গেল। বিটিভিতে কয়েক দফায় হামলা ও লুট হয়েছে। অর্থাৎ একটা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে এবং সেগুলোর চারপাশে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেখানেও পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। এই জায়গাগুলো আমাদের ভাবতে হবে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশিদ ই মাহবুব বলেন, স্বৈরশাসক গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়েছে। যখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের বিপদে ফেলার চেষ্টা হয়। সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারছে না সরকার। সরকারের কোনো নীতি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয় না। সমাজের সব স্তরে এক ধরনের লোভী ভাব দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা চোর, লুটেরা তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে এমন কিছু ঘটতে পারে সেটা সরকার কেন বুঝতে পারল না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে থাকার যৌক্তিকতা নেই। তারপরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ কেউ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-শিবিরকে জঙ্গি উল্লেখ করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করতে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।

তিনি বলেন, “শিবির-ছাত্রদল-বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি এবং তারা দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে আমাদের ওপর তাদের থাবা দিয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে দেশব্যাপী তান্ডব সম্পূর্ণভাবে একটি জঙ্গি কর্মকান্ড।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোন রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গীবাদী কাজ। এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ধ্বংস করা।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালানোয় তিনি বিএনপি-জামায়াত চক্রের কঠোর সমালোচনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে সেবা দেয় ও মানুষের জীবন মান উন্নত করে, তা ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশকেই ধ্বংস করে ফেলা।”

আজ বিকেলে গণভবনে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা বলেন, দিনরাত পরিশ্রমে বাংলাদেশ যে সম্মান অর্জন করেছে, তা তারা ধূলিস্যাৎ করেছে। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একের পর এক সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করেছে যা জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আমার প্রশ্ন হল ধ্বংসের মাধ্যমে তারা কার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।

তথাকথিত আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা কোথা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,“তারা টাকা কোথা থেকে পেল? তাদের প্রতিদিনের আন্দোলন চালাতে কে তাদের টাকা দিল?”

রাজনীতি

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করা হবে। এদিন কালো ব্যাজ ধারণ এবং মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আজকের বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং আগামীকাল দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রোববার এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন ১৫০।

মাহবুব হোসেন বলেন, সভায় ‘ মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আইনটির নামের সঙ্গে কুতুবদিয়া শব্দটি যোগ করা হয়েছে। এতে আইনটি মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪ নামে অভিহিত হবে।