রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে ব্যবসা বাড়াতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

নাঈমুল ইসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে তাঁর দেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশে প্রায় ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “স্প্যানিশ বিনিয়োগকারীরাও সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ আমরা স্পেন থেকে আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছি।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্পেনের সমর্থন চান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে আরও জানানো হয় যে, দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব চুক্তির জন্য আলোচনা হবে- যা আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হবে।

স্পেনে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার (বাংলাদেশি) বসবাস করে।

প্রধানমন্ত্রী স্পেনের প্রতি বিশেষ করে আইটি খাত থেকে আরও বেশি বাংলাদেশি নেওয়ার আহ্বান জানান।

স্পেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে তার দেশ বাংলাদেশ থেকে শুধু তৈরী পোষাক (আরএমজি) আমদানি করে এবং বাংলাদেশের সিমেন্ট খাতে স্প্যানের বিনিয়োগ রয়েছে।

তিনি চলতি অর্থ-বছরের জন্য বাংলাদেশের বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সরকার শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে গুরুত্ব দিয়েছে।

মারিয়া সিস্তিয়াগা আরো বলেন, “এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আপনার বর্ধিত আগ্রহ ও বরাদ্দ আমাদের দেশের সাথেও মিলেছে।”

রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাঁকে স্পেন সফরের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে: প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, তারা উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের পাশাপাশি আপনার (ওমানের) অর্থনীতিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদান রয়েছে। উভয় অর্থনীতিই এই শ্রমশক্তির (কঠোর শ্রম) দ্বারা উপকৃত হচ্ছে।’
ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার বিন আবদুল করিম আল বুলুশি আজ শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
ওমানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি শ্রমশক্তির অবদান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, এটা সত্য যে তারা (বাংলাদেশি শ্রমিক) উভয় অর্থনীতির জন্য কাজ করছে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মোহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেছেন যে, ওমান দীর্ঘকাল ধরে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখছে এবং আশা করা হচ্ছে দুই-অঙ্কের স্তরের প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত উভয়েই এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ওমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সমর্থন করার বিষয়েও আলোচনা করেন।
বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আল-বুলুশি বলেন, আসলে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি জনশক্তি তাদের শ্রমবাজারে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘এটি বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য নয়, আমরা শ্রমের চাহিদা পূরনের জন্য পর্যায়ক্রমে শ্রমবাজার পর্যালোচনা করি। সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতে, কখনও কখনও আমরা এমন দেশগুলোতে স্থগিতাদেশ দিয়ে থাকি যেখানে অতিরিক্ত সংখ্যক জনশক্তি রয়েছে। স্থগিতাদেশ সহজ করার জন্য আপনাকে পরবর্তী পর্যালোচনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বিধিনিষেধের উপায় দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক ভিত্তিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আসলে কিন্তু তেমন নয়। তিনি বলেন, ‘তবে এমন নয় যে, জনশক্তি ভিসা ছাড়া বাকি সব ভিসা যেমন ফ্যামিলি ভিসা এবং ট্যুরিস্ট ভিসা খোলা আছে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য দশটি ক্যাটাগরির ওমানের ভিসা এখন উন্মুক্ত।
এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার সরকারের কাছে একটি অনুরোধ পত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি যাতে শীঘ্রই ওয়ার্কিং ভিসা প্রদান শুরু হতে পারে।
সার আমদানির বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন,তার সরকার ব্যবস্থাটি জি-টু-জি ভিত্তিতে করার প্রস্তাব করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখবে।
ওমানের রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাকে অভিনন্দন জানান।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে, এটা ভালো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অবশ্যই আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন এবং তিনি অবশ্যই আপনাকে নিয়ে গর্বিত হবেন।’
ওমানের রাষ্ট্রদূতও প্রধানমন্ত্রীকে ওমানের একটি ঐতিহ্যবাহী নৌকার রেপ্লিকা উপহার দেন।
সেই উপহারে বলা হয়েছে: ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যিনি ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার বিন আবদুল করিম আল-বুলুশির অভিনন্দনের সাথে সংকল্প ও সাহসিকতার সাথে মহান বঙ্গবন্ধুর মশাল বহন করেছেন।’
এ সময় অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
রাজনীতি

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে বাংলাদেশ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বুধবার সচিবালয়ে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাকে নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় তিনি এ দাবি করেন।

ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্যচিত্র তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, ২ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৫১ জন, মৃত্যু ৪৬ জন। পক্ষান্তরে ভারতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৪৪৭ জন, শ্রীলংকায় তা ২৩ হাজার ৯৩১ জন, মালয়েশিয়ায় তা ৫০ হাজার ৬৫০ জন, ইন্দোনেশিয়ায় তা ৮৮ হাজার ৫৯৩ জন। এছাড়াও সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশেও গত ২৭ জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৬২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। থাইল্যান্ডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ হাজার।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সিটি করপোরেশনসহ সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমেছে। একসময় শান্তিনগর, তেজগাঁও এলাকায় বৃষ্টি হলে সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি আটকে থাকত, এখন সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। অতিবৃষ্টির কারণে ধানমন্ডিসহ যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়, তা বৃষ্টি থামার পর ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ ছাড়া যেসব এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, তা দূরীকরণে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সব প্রতিষ্ঠানকে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।

সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রমুখ।

রাজনীতি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন সরকার ভারতকে ট্রানজিট নয়, করিডোর দিয়েছে। আর তিস্তা প্রকল্পের কাজে ভারতের সঙ্গে রাজি হলে পানি বণ্টন প্রসঙ্গ থেকে সরকার সরে আসবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে, কিন্তু সেটা হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও স্বার্থের ভিত্তিতে। যখনই আমাদের সরকার রাজি হবে, তিস্তা প্রকল্পে আমরা ভারতের সহযোগিতা নিব, তাহলে বুঝতে হবে সরকার তিস্তার পানিবণ্টনের যে প্রসঙ্গ, সেখান থেকে সরে এসেছে।

চরমোনাই পির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংলাপে আরও বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমেদ মাদানী, গণফোরাম (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী।

রাজনীতি

ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটের সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বায়নের যুগে আমরা নিজেদের দরজা বন্ধ করে রাখতে পারি না।

বুধবার (৩ জুলাই) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, দরজা বন্ধ করে থাকা যায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ট্রান্স-এশিয়া হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়া রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। আজ ভারতকে আমরা ট্রানজিট দিলাম কেন, এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া। আমাদের ট্রানজিট তো আছেই। ত্রিপুরা থেকে বাস চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত তো যাচ্ছে। এতে ক্ষতিটা কী হচ্ছে। বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। অনেকে অর্থ উপার্জনও করছে।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে একটা যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা নেপাল-ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট করেছি ভারতে। এটি তো কোনো একটি দেশের জন্য নয়, আঞ্চলিক ট্রানজিট সুবিধা এবং যোগাযোগ সুবিধার জন্য করা হয়েছে।

টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ- এ চার দেশ প্রতিটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ট্রানজিটের ব্যবস্থা করছি। আজ নেপাল থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করতে যাচ্ছি, সেখানে গ্রিড লাইন করা, আমরা সেই চুক্তি করেছি, তা আমরা কার্যকরও করছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে যেসব রেলপথ, নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ ছিল, সেগুলো আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান থেকে একটি রাস্তা যাচ্ছে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত, অথচ সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে যে রোড হচ্ছে, তা থেকে বিচ্ছিন্ন, কেন আমরা বিচ্ছিন্ন থাকব। ভারত চাচ্ছিল ভুটান থেকে রাস্তাটা বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ সব কিছু কত সুবিধা হতো, সেটিও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিলেন। এই হলো অবস্থা। প্রথমবার সরকারে এসে অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমরা যুক্ত হতে পারিনি।

ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা আসামের রুমালিগড় থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে এসেছি। পার্বতীপুর ডিপোতে সেই তেল আসছে। ক্ষতিটা কী হয়েছে? বরং আমরা সস্তায় কিনতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের জন্য। ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি। উত্তরাঞ্চলে কোনো শিল্পায়ন হয়নি, এখন শিল্পায়নে আমরা যেতে পারি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রও আমরা নির্মাণ করেছি। আমরা নিজেদের দরজা তো বন্ধ করে রাখতে পারি না। এটিই তো কথা।

খালেদা জিয়া মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ নষ্ট করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কী সমস্যা দেশের জন্য করেছে দেখেন- মিয়ানমারে সেখানে গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস, ভারত, চীন, জাপান সবাই চাচ্ছে। এ গ্যাসকে বাংলাদেশের ভেতর থেকে ভারতে নিয়ে যাবে, এই নিয়ে যাওয়ার সময় এই গ্যাস থেকে আমরা একটা ভাগ নেব। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামসহ ওই এলাকায় আমাদের গ্যাসের কোনো অভাবই হতো না। খালেদা জিয়া সেটা নিতে দেয়নি। কেন দেয়নি?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সেই গ্যাস নিচ্ছে চীন। আর কোনো দেশ তো নিতে পারছে না। আমরা সরকারে আসার পর কথা বলেছিলাম মিয়ানমারের সঙ্গে, আনতে পারি কি না। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তারা ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে।

রাজনীতি

বিএনপির মনের জোর কমে গলার জোর বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, বিএনপির মনের জোর কমে গেছে গলার জোর বেড়ে গেছে।

একটা কথা আছে, মানুষের শক্তি যত কমে, মুখের বিষ তত উগ্র হয়। বিএনপির নেতাদের মুখের কোনো ট্যাক্স নাই। তাদের মুখে কোনো লাগাম নাই। লাগাম দিয়ে টানবেন? লাগাম দিয়ে টেনে লাভ নাই। বিএনপি বেপরোয়া গাড়ি চালায়। কখন কোথায় দুর্ঘটনা ঘটে কেউ জানে না।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি কি চলে, না চালায়? কে চালায়? খালেদা জিয়া? বিএনপি চালায় লন্ডন থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে। সড়কপথে নয়, নদীপথে নয়, আকাশপথে বিএনপি চলে। আকাশপথে ডাক আসে। বিএনপির নেতাদের দিনের আহার, রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কখন তারেক রহমানের ডাক আসে, কখন কার চাকরি নট হয়ে যায়। মির্জা ফখরুল (বিএনপির মহাসচিব) সাহেবও শান্তিতে নাই। বড় বড় নেতারা আতঙ্কে আছে। কখন কার গদি শেষ হয়ে যায়, এজন্য তারা তারেক আতঙ্কে আছে। এজন্য তাদের রাতের ঘুম হারাম।

বিএনপির নতুন কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন কমিটি কেউ জানে? নতুন কমিটি ভুয়া, বিএনপি ভুয়া। নতুন কমিটির নতুন কর্মসূচি ভুয়া। আন্দোলন কবে হবে? ঈদের পরে, এ বছর না পরের বছর। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, আন্দোলন আর হয় না। মরা গাঙ্গে জোয়ার আর আসে না। বিএনপির হাত, আন্দোলনের হাত ভেঙে গেছে। এখন পরনির্ভর। এখন তারা করছে পরনিন্দা, গীবত।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজই দুপুর বেলা শিক্ষকদের আন্দোলন এবং কোটা আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। কোটা আন্দোলন আগেও ছিল এখনো আছে। তাদের ওপর ভর করে আন্দোলন করছে বিএনপি। পরনির্ভর হলে আন্দলন হয়? তারা ভয় দেখায় ভারত নিয়ে, তারা বলে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া হয়ে গেল। তারা বলে শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া গেলে কিছুই আনতে পারেন না। ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি ছিল বলে ছিটমহল সমস্যা ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। গঙ্গা নদীর পানি আমরা বুঝে পেয়েছি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া (প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে) তিন হাজার জামদানি শাড়ি নিয়ে ইন্ডিয়া গেছেন। চাকর-বাকর থেকে শুরু করে সবাইকে সমানে সমানে বিতরণ করেছে। ফিরে আসার পর তার কাছে গঙ্গার পানি নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গেছি’। গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে যায়! কোন মুখে এখন বিএনপি নেতারা তিস্তার পানির কথা বলেন। তিস্তা নদীর হিস্যা ও অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই আনবেন। কারও কথায় বাংলাদেশ ইন্ডিয়া হবে না। ৫৩ বছরে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া হয়ে যায়নি।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির পর খালেদা জিয়া বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত বাংলাদেশ থাকে কি না। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত ইন্ডিয়া হয়ে যাবে। হয়েছে? বেগম জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে ভোট দিলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, আজান হবে না, হয়েছে? তারা অবান্তর কথা বলে।

রিজার্ভ বেড়ে গেছে, রেমিট্যান্স বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনার মতো এতো সৎ, দক্ষ, পরিশ্রমী, কূটনৈতিক নেতা বাংলাদেশে একজনও আসেনি। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা, শেখ হাসিনা এসেছেন মুক্তি দেওয়ার জন্য। সেই মুক্তির সংগ্রাম বাংলাদেশে আজও চলছে। ২০৪১ সাল, তারপর ২১০০ সাল। শেখ হাসিনার টার্গেট অনেক লম্বা। আমরা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গড়ার লড়াই করে যাচ্ছি।

ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের বলেন, আবারও খেলা হবে, বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আবারও খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে। আগুন নিয়ে আসবা, খেলা হবে। আগুন নিয়ে এলে খবর আছে।

‘বড় বড় পাতিল দিয়ে সাত দিন ধরে রান্না-বান্না, মশার কয়েল নিয়ে শুয়েছিল রাস্তার ওপর। ২৮ অক্টোবর পল্টন থেকে পালাল কারা? এক মিনিটে বিএনপির মঞ্চ খালি। তারা (ক্ষমতায় থাকতে) নিয়ে আসছে জজ মিয়ার নাটক। পরে নিয়ে এলো মিয়া আরেফি নাটক। বাইডেনের উপদেষ্টা বলে বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে ইংরেজিতে। পরে দেখা গেলো ভুয়া। যখন তাকে এয়ারপোর্টে পুলিশ ধরলো, পুলিশের ডান্ডা খেয়ে আর ইংরেজি বলে না। বলে বরিশালের ভাষায় কথা। ’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে কাদের বলেন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই হবে। শেখ হাসিনার যে অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই ছাড়বো। একটা কথা বলি, মন্ত্রী যদি সৎ হয়, সচিব যদি সৎ হয়, ওই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি হবে না। আমরা জনপ্রতিনিধিরা সৎ হলে দুর্নীতি পালিয়ে যাবে।

আলোচনা সভায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব প্রমুখ।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের দুর্নীতি আলি বাবার চল্লিশ চোরের গল্পও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার বিকালে যশোরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জেলা বিএনপির আয়োজনে শহরের টাউন হল ময়দানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির সমাবেশে বৃষ্টিতে ভিজেই নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দীর্ঘদিন পর জেলা বিএনপির এ সমাবেশে ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মাঠে ছিলেন নারী কর্মীরাও। ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টিতে ভিজেই তারা টাউন হল ময়দানে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতা শুনেছেন।

সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অনিয়ম করে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে জনগণ মুক্তি পাবে।

সীমান্ত হত্যার সমালোচনা করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রতিদিনই সীমান্তে হত্যা হচ্ছে। সেই সীমান্ত রক্ষায় বাহিনী ছিল বিডিআর রাইফেল। এখন রাইফেল শেখ হাসিনা ঘরে তুলে দিয়েছেন। এখন নাম দিয়েছেন বর্ডার গার্ড। গার্ডদের কোনো অর্ডার নাই গুলি করার। ওনারা গুলি করবে, আর আমরা খাব। কেন তাহলে সীমান্ত রক্ষী রাখতে হচ্ছে। হাতে হারিকেন দিয়ে চৌকিদার রাখতে পারতেন! কেন আমরা হাজার হাজার টাকার অস্ত্র কিনি। অস্ত্র কিনি আমার দেশ রক্ষা, দেশের মানুষের রক্ষার জন্য। অস্ত্রের ব্যবহার যদি না করতে পারি, তাহলে কিনব কেন। এত স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক তাহলে সীমান্তে এতো হত্যা কেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে পারেনি, বেগম জিয়ার সময়ে তো পারেনি। তাহলে আপনার সময়ে কেন এত হত্যা। আজ ব্যাঙও ঠ্যাং মেলে এ সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ এই সরকার ব্যস্ত লুটপাটে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে বিদেশ যাচ্ছে। সেই লুটপাটের টাকা ঘুস দিলে সব মাফ করে দেওয়ার ব্যবস্থাও রেখেছে এই সরকার।

সরকারের উন্নয়ন আর দুর্নীতির সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, উন্নয়ন তো দয়ার দান নয়। উন্নয়ন কি রিলিফ জনগণের কাছে? উন্নয়ন জনগণের অধিকার। জনগণের টাকায় এই উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের কথা বলে একেটা প্রজেক্টের নামে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে। এই লুটপাট কারা করেছে। শেখ হাসিনার সরকার ও তার মাফিয়ারা। এই মাফিয়ার সর্দার কে? শেখ হাসিনা। এই সরকারের কাছে অর্থনীতি বলে কোন নীতি নাই। এই সরকারের আছে শুধু দুর্নীতি। এই মাফিয়া আর দুর্নীতির সরকার ব্যবস্থা জনগণের মঙ্গল তো দূরের কথা, দেশটাও রক্ষা করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য মিজানুর রহমান খান, আব্দুস সামাদ আজাদ প্রমুখ।

রাজনীতি

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরি লাভে বিশেষ বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনকে ধ্বংস করে। আমি মনে করি যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না।

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, একথা যেন আমরা ভুলে না যাই যে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে এবং যে কোনো পর্যায় যেতে প্রস্তুত থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ-সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের শহিদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তিসংগ্রামের, আত্মত্যাগের প্রতীক। আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারভিত্তিক নিজ দেশ গঠনে অঙ্গীকারের প্রতীক।

কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। (৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য, এক শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত)। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে মেধাবী ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা পদ্ধতির নীতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আগের মতো কোটা পদ্ধতি বহাল থাকে।

জিএম কাদের বলেন, ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। ৫ জুন রায় প্রকাশ করেন আদালত। সেখানে পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পুনরায় মাঠে নেমেছেন।

তিনি বলেন, সংবিধানে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কেউ প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না। সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা, নৃগোষ্ঠীকে দিতে পারি, সংখ্যালঘুকে দিতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজš§ যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি নই। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই তার বিষয়টি ওইভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের প্রথম দরকার মেধা। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনের বিশ্ব আমাদের সেন্টিমেন্টের ওপর থাকবে না। আমাদের কমপিটিশন করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে প্রতিযোগিতা করব কিসের ভিত্তিতে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, যে কোনো কারণেই হোক সেটায় খুব একটা সাড়া আসেনি। এখন নতুন একটা স্কিম চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক।

সরকারের কাছের লোক। তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না। তারপরও মানছেন না।

তিনি বলেন, বললে খারাপ শোনাবে, সেটা হলো মানুষের আস্থাহীনতা আছে যে সরকার যেটা কমিট করছে আলটিমেটলি সেটা দিতে পারবে কিনা, দেবে কিনা, মানুষ পাবে কিনা। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকারদিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক ও সৃজনশীল করেছে। তিনি বলেন, আমরা বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেছি যাতে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের (পিএমইএটি) মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) এবং এর সমমানের অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা অনুধাবন করে তাঁর সরকার কৃষি, পশুচিকিৎসা, প্রাণী বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল ইসলামিক, আরবি, টেক্সটাইল, সমুদ্রিক, বিমান চলাচল, মহাকাশ এবং ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে বহুমাত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া কোনো দেশই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই, আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।

১৯৭৫ সালের পর তাঁর সরকার প্রথম বাজেটে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ করার উল্লেখ করে, তিনি বলেন, তার সরকার গবেষণা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারের জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মেধাবী অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের তাদের মেধাকে দেশ ও মানব কল্যাণের কাজে লাগাতে তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (পিএমইএটি) গঠন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “দারিদ্র্য কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না” উক্তির স্মরণ করেন।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও সমমানের ৬৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে মোট ২,২০৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। অর্থ বিতরণের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি-র টাকা ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে যাবে।

তিনি বলেন, “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি-র অর্থ বিতরণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শেখ হাসিনা ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান পুরস্কার-২০২৪ ( ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ অ্যাওয়ার্ড-২০২৪) এবং ২১ শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ পুরষ্কারপ্রাপ্ত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ২ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ২১ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার ও শিক্ষা সচিব সুলেমান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মালিহা, দিনাজপুরের আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী আতিফা রহমান ও খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পিনাক মুগ্ধ দাস ‘বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ-২০২৪’(বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান-২০২৪)-এর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢা.বি) দুই শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম রাইসা ও আল ফয়সাল বিন কাশেম কানন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩-এর পুরস্কার গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলবো আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাক্রম সব কিছুতে পরিবর্তন এনেছি। আমরা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আপন করে নেওয়া, আনন্দ মুখর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহন- সেই পদ্ধতিটাতে আমরা নিয়ে আসতে চাই।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন যদি সারাক্ষণ কেউ বলে পড়, পড়, পড়-এটা কি ভালো লাগে বলো? মোটেই ভালো লাগে না। এটা কিন্তু বাস্তব কথা, যাও বা একটা পড়ার ইচ্ছে থাকে তাও নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য এমন ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাটা করা, যাতে আগ্রহ নিয়েই ছেলেমেয়েরা পড়বে। পড়, পড়-করতে হবে না বা ধরে পেটাতে হবে না। নিজেরাই পড়বে, নিজেদের মধ্যেই সেই আকাঙ্খাটা থাকবে। আমরা সেই সিস্টেমটাই তৈরি করতে চাই।

তিনি বলেন, জানি, একটা পরিবর্তন এলে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে। তাছাড়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় যার যা মনে আছে-সমালোচনা করতে পারলেই খুশি। আমরা বাঙালিরা আবার পরচর্চায় খুব পছন্দ করি। পরচর্চা ছাড়া তো আসরই জমে না। যে যা মনে করে লিখে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের মনে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। কেউ একটু সমালোচনা করলেই ওমনিই সেটার জন্য ভীত হয়ে যেতে হবে। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাসই মানুষকে শক্তি দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই বলবো, সব সময় এই চিন্তাটাই করতে হবে। কে কি বললো সেটা শুনে ওমনিই চোখের পানি ফেলানো, মুখ লুকানো- তা নয়। নিজের বিশ্বাস থেকে চলা শিখতে হবে। তাহলে এই দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

তিনি বলেন, জনগণের সেবা করা, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের জন্য কল্যাণ করা- এটাই হবে মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। খালি আমি নিজে শিক্ষিত হবো, নিজে অর্থ কামাই করবো, নিজেই ভালো থাকবো, আমি দেশকে কিছু দেবো না। আশে-পাশের মানুষ দরিদ্র থাকবো এটা হয় না। সকলে মিলেই আমাদের চলতে হবে, সকলে মিলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই নির্দেশনাটা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সকল বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা-আমাদের তরুণ সমাজই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ ২৫শে জুন সংবাদ সম্মেলন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, সকাল ১১টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২১ জুন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লি যান।

লোক সভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এছাড়াও, এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর, তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে, ঢাকা ও নয়াদিল্লি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন এবং তিনটি নবায়নসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।

রাজনীতি

দেশের যেকোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি আরও বলেন, আমরা কেবল ত্রাণ বিতরণ করতে চাই না, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার।

শেখ হাসিনা তার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তারই হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে।

সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে  সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের ৪২নং ওয়ার্ডে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানকালে তিনি এসব বলেন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সিলেটে বন্যায় কৃষিখাতে যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ সহায়তা করবে সরকার। পাশাপাশি সুরমা, কুশিয়ারা নদী পানি খননের মাধ্যমে সিলেটবাসীকে বন্যা থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী বছর সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে সিলেট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে লক্ষে কাজ করছে সরকার।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি মসনদে বসে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচার করে আলিশান অট্টালিকা নির্মাণসহ সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছেন। কিন্তু কোনো দুনীর্তিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি খালেদা জিয়ার সরকার।

তিনি বলেন, বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত খাবার, পানি ও ওষুধ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

নানক বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা জানাতে তিনি নিজেও সিলেট সফর করেন। তারই নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ পুলিশ, প্রশাসন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় এবং পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করেন। আগামী বছর বন্যার কবল থেকে সিলেটকে রক্ষা করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।

সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সিলেটে বন্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বন্যার খোঁজখবর রাখেন। শেখ হাসিনা সব সময় সিলেটবাসীর পাশে আছেন। আপনারা তার ওপর আস্থা রাখুন। সব সময় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের পাশে আছেন।

সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ৪২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রব।

এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলামে বন্যার্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এর আগে বেলা ১১টায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের পরিচালনায় নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড তেররতন এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রধান করেন তারা।