রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আশা করি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ অতিদ্রুত শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেবে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সংস্কারে জনগণের চাওয়া ও প্রয়োজনকে মূল্যায়ন করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা সেখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। একইসময়ে পোশাকশিল্প খাতে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

দেশের মানুষকে এই চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফখরুল জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য দুদিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে।

একই দিনে বিভাগীয় শহরগুলোতে গণতন্ত্র র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় অবহেলা করেছে। তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমগ্র বাংলাদেশ একটা পরিবারের মত উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যেখানে সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা দেওয়া।’

অধ্যাপক ইউনূস হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, তিনি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান যেখানে নির্ভয়ে সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে এবং যেখানে কোনো মন্দির পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা দেওয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

হিন্দু নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টাকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে শান্তি-সম্প্রীতি ও এর সমৃদ্ধি এবং আন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য কামনা করে শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন।

হিন্দু নেতারা জানান, দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে দুর্গত এলাকাগুলোতে এবার জন্মাষ্টমী উদযাপন স্থগিত করে সেখানে খাদ্য ও ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, এই বক্তব্য দেশে আসম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে ভূমিকা করবে।

নেতৃবৃন্দ হিন্দু মন্দিরের জমিসহ হিন্দু জমি সম্পত্তি দখল হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

শুভেচ্ছা বিনিময়কালে হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ ও মনীন্দ্র কুমার নাথ, আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনা সংঘ ইসকনের চারু চরণ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বাসুদেব ধর ও সন্তোষ শর্মা এবং ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্নধার প্রীতি চক্রবর্তী।

রাজনীতি

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক।

সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ ও তাবিথ আউয়াল অংশ নেন।

বৈঠকে বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।

ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কত তাড়াতাড়ি আমরা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, সেই আলোচনাও এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এর বাইরেও যে সম্পর্কগুলো আছে, আগামী দিনে সেগুলোকে আরও কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে টাকা পয়সা পাচার হয়েছে, এই টাকাগুলো ফেরত আনার বিষয়ে আমাদের দিক থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কারা কত টাকা পাচার করেছে ইতিমধ্য সেইগুলো বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এসেছে। বাংলাদেশে থেকে ইউকে (যুক্তরাজ্য) একটা বড় অংশের অর্থ পাচার হয়েছে, অনেকের নামও এসেছে এই ব্যাপারে। এই টাকাগুলো ফেরত আনার ব্যাপারে তাদের (যুক্তরাজ্য) ভূমিকা ও সহযোগিতার কথা আলোচনা হয়েছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতায় যাওয়া ও জবাবদিহি সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে নির্বাচন আয়োজন করতে সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সরকার পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতদের সংখ্যা বিগত ১৫ বছরে হত্যা, গুম, নির্যাতন, মামলার বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এই

বিষয়গুলো নিয়ে, বিচার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ থেকে যে ডেলিগেশন দেশে আসছে এই বিষয়টি আমরা কিভাবে দেখছি তা জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি জাতিসংঘের যেই টিম আসছে, এটাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা বলেছি জাতিসংঘ যে তদন্ত করবে সেটা নিরপেক্ষ হবে। তদন্ত কমিটির যে প্রতিবেদন আসবে সেটা আগামীতে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

রাজনীতি

রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিবিকে জানিয়েছেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের সম্পদ না বানিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পদ বানিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা ছিল শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি নিজেকে এবং তার বাবাকে বেশি ফোকাস করতে গিয়ে জনগণের বিরাগভাজন হয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা সাবেক এই আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সারা দেশে গ্রামে-গঞ্জে, জেলা-উপজেলায় শেখ মুজিবের এত ভাস্কর্য না বানিয়ে যদি একটি বা দুটি আন্তর্জাতিক মানের ভাস্কর্য বানাতেন তবে সেটা দেখতে ভিড় করতেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এতে শেখ মুজিবের সম্মান অনেক বাড়ত।’

সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ছিলেন একজন সাইলেন্ট কিলার। অসংখ্য গুম-খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কিত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম। একে একে বেরিয়ে আসছে তার অন্ধকার জীবনের নানা ঘটনা।

অপরদিকে রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিবিকে জানিয়েছেন, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন সময়ে একগুঁয়েমি সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ হাসিনা তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। জিয়াউল আহসান জানান, বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল এনটিএমসি।

গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি জানায়, শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা হয়েছে। তিনি কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা-নেতাদের কথা শুনতে চাইতেন না। যেভাবেই হোক তাকে ক্ষামতায় থাকতে হবে-এই মানসিকতা ছিল শেষ পর্যন্ত।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবিলাকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দেশবাসীকে বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানন।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনজিও প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। উপকূল ও দুর্গত এলাকায় কর্মরত ৪৪টি এনজিওর কর্তাব্যাক্তিরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য জানান।

শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের অব্যশই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সবাই মিলে এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

ড. ইউনূস বন্যা মোকাবিলায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় সরকার, এনজিওসহ যারা যারা কাজ করছেন, তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে জেলা পর্যায়েও বন্যা মোকাবিলার কাজে সমন্বিতভাবে করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোটি কোটি মানুষ বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের মহৎ উৎসাহের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ১১টি জেলা। ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।

বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আরও বেশি কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে বন্যা পরবর্তী খাদ্য ও স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মাধ্যমে দেশে দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, ‘তরুণরা আমাদের জন্য মহৎ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দ্রুত এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।’

সরকার প্রধান আরও বলেন, কেবল বন্যা মোকাবিলায় গুরুত্ব দিলে হবে না, কিভাবে দেশকে বন্যামুক্ত রাখা যায় সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।

রাজনীতি

নগরীর খালিশপুর থানার ৯নং এবং ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার ভাইসহ খুলনার সাবেক এমপি ও মেয়র এবং সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরসহ ২৭১জনকে।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ চাচাতো ভাই। খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবু, সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেসিসির একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

শুক্রবার রাতে খালিশপুর থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন ৯নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো.ইকরাম মিন্টু। দুটি মামলার বেশিরভাগ আসামি একই ব্যক্তি। শেখ দবিরের দায়ের করা মামলায় ১১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিস ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়।

ইকরাম মিন্টুর মামলায় ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ২৫/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। খালিশপুর থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

রাজনীতি

যতদিন দেশ পুনর্গঠন না হবে ততদিন অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে জেলা জামায়াত আয়োজিত দোয়া ও শহীদ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পেত্মারা বসে আছে। তাদের অপসারণ না করা পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষের ওপর গুম-খুন, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে স্বৈরাচারী সরকার।

তিনি আরও বলেন, দেশ ও জনপদকে মুক্ত করতে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন, তারা জাতীয় বীর। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বীর হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। জামায়াতের পক্ষ হয়ে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খুনিদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিচারের কার্যক্রম শুরু করেছে, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। আন্তর্জাতিক আদালতেও এরই মধ্যেই গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ তার সব দোসরদের নামে মামলা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা হিন্দু ভাইদের মন্দির, জমি জায়গা পাহারা দিয়ে শান্তির বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করেছেন। কিন্তু বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকজনই হিন্দু ভাইদের ঘরবাড়ি, জায়গা জমি দখল করে লুটপাট ও মন্দির ভাঙচুর নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি রবিউল বাশারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাদ্দিস আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগরের সাবেক আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, খুলনা অঞ্চলের সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা জেলা আমীর ইমরান হুসাইন, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি শেখ নুরুল হুদা, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইমামুল ইসলাম ও শহর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাতক্ষীরার শহীদ আসিফসহ চারটি পরিবারের মাঝে এক লাখ টাকা করে বিতরণ করা হয়।

রাজনীতি

টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথে কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গ্লোবাল সাউথ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। ’

শনিবার (১৭ আগস্ট) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি সামিটে যুক্ত হন ড. ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এটিই তা প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান।

আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলস্বরূপ গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ বলে তিনি দূঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা, তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়, কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সকল মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে।

কেবলমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

তৃতীয়বারের মতো গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছে ভারত। এবারের সামিটে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের নিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং মূল সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাজনীতি

দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন রিমান্ডে থাকা সদ্য বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের তিন প্রভাবশালী। তারা হলেন-সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৬ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকার পাপশ বিক্রেতা শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় এই তিন আসামি রিমান্ডে থাকলেও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিসংতা সৃষ্টির নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুরুতে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর ওপর দায় চাপালেও এখন দায় চাপাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

তারা প্রায় একই সুরে বলছেন, ‘আমরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তারা যেসব পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের দায় স্বীকার করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি গ্রেফতারকৃতরা।

রিমান্ডে থাকা আসামিরা হত্যা মামলার বাইরে কী কী তথ্য দিচ্ছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো, বিশেষ উদ্দেশ্যে আড়িপাতার যন্ত্র ক্রয়, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর কনসেপ্ট তৈরি এবং বহু মানুষকে গুম-খুন করার বিষয়ে তাদের হাত রয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

সূত্র আরও জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেসব ঘটনায় মামলা হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-শেয়ার কেলেঙ্কারি, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ-নিধন, আড়িপাতার যন্ত্র পেপাসাস সফটওয়্যার ক্রয়, আয়নাঘর কনসেপ্ট এবং অসংখ্য গুম-খুনসহ নানা আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা আসামি সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই গ্রেফতার করা হয়েছে জিয়াউল আহসানকে। তারা তিনজনই এখন নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে আছেন। এদিকে যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সেই মামলার এজাহার সংশোধন করা হচ্ছে। মামলার বাদী শনিবার সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন। পরে সেটি আদালতে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপোশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে সরাসরি তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গ্রেফতারের পর শুক্রবার জিয়াউল আহসানকে একই মামলায় আদালতে হাজির করে তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনজনই এখন ডিবি হেফাজতে পুলিশের রিমান্ডে আছেন।

সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে দুটি টিমের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি টিমে আছেন নিউমার্কেট থানার ওসির নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। তারা মূলত থানা পুলিশের সদস্য। অপর একটি টিমে আছেন ডিএমপি সদর দপ্তর এবং ডিবির কর্মকর্তারা। এই টিমটি করা হয়েছে মূলত উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। জুনিয়র টিম কেবল মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তারা মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগের বাইরে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন না। আর সিনিয়র টিমটি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কেবল মামলার বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে ডিবির বেশির ভাগ পদস্থ কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হওয়া এবং নতুন আদেশপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা এখনো যোগদান না করায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী আসামি হওয়ায় কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা কী ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আনিসুল হক বেশির ভাগ সময় হাসছেন। বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের যে গাইডলাইন দিতেন আমি সেই গাইডলাইন ফলো করেছি মাত্র। হত্যা মামলায় কেন আমাকে রিমান্ডে এনেছেন? যারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল তাদের ধরেন।’ জিয়াউল হক বলেছেন, ‘আমি তো কোনো ইউনিটের ইনচার্জ ছিলাম না। আমি সরকারে টপ অর্ডারের নির্দেশে কাজ করেছি।’ তার কাছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-এর মহাপরিচালক ছিলেন। আড়ি পেতে মানুষের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। আপনার নির্দেশেই বিরোধী মতের অনেককে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেকে।’ তখন বলেন, ‘আমি তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। যে আয়নাঘরের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমাকেও আট দিন রাখা হয়েছে। এরপর আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।’

প্রাপ্ত অভিযোগের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হন। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের মিশন বাস্তবায়ন করতে সারা দেশের র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তাকে ব্যবহার করতেন জিয়াউল আহসান। ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপ রেকর্ডের সারাংশ গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। তাতে আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ নানা কৌশলের তথ্য উঠে আসে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জিয়াউল আহসান অনেকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করতেন। বিশেষ করে বিএনপির নেতাদের কল রেকর্ড করে সেগুলো শুনতেন। কোটা সংস্কারের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ডাটা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কয়েকটি ডাটা সেন্টারে হুমকি দিয়ে বন্ধ করেন জিয়াউল আহসান।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা হবে। তারা কয়েকদিন রিমান্ডে থাকবেন। তাই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। প্রায় একই ধরনের তথ্য জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, এই মুহূর্তে ডিবিতে সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি নেই। আপনার নম্বরটা আমি সেভ করে রাখছি। রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে কোনো কিছু প্রকাশের প্রয়োজন হলে পরবর্তী সময়ে আপনাকে জানানো হবে। যে মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে মামলার বাদী আয়শা বেগম বলেন, যখন মামলাটি হয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। পুলিশ এজাহার লেখার সময় আমার ছেলে হত্যার পেছনে ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞাত কোটাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করে। অথচ আমার ছেলে মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। এজাহার লেখার পর আমাকে পড়ে শোনায়নি। ছেলে হারানোর শোকে আমি কাতর থাকায় আমার হিতাহিত জ্ঞান অনেকটা লোপ পেয়েছিল। সেই সুযোগে পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর নেয়। পরে এজাহারটি পড়ার পর ত্রুটি চোখে পড়ে।

বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হলে তিনি এজাহার সংশোধনের প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী আজ (শনিবার) থানায় গিয়ে সংশোধনী এজাহার জমা দিয়েছি। সংশোধনী এজাহারে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কথাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।

জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবল মামলার অভিযোগের বিষয়েই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার বাদী যে সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন তা ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রাজনীতি

বিশেষ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইভাবে জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ সংশোধন করেছে সরকার। একইভাবে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে।

তারা জানান, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সমস্যা হচ্ছে। কেননা জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপন করে রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে, সময়ের প্রয়োজনে, জনস্বার্থে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে।

তারা আরও জানান, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহে নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-(১) জনস্বার্থে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৩ (ক) ও ধারা ২৫ (ক)। ১৩ (ক) এ বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অথবা অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার, অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।

(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপধারা (১)-এর মাধ্যমে বর্ণিত মেয়র এবং কাউন্সিলরের অপসারণ কার্যকর করতে পারবে। ২৫(ক) এতে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে।

(২) সরকার, প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে। (৩) উপধারা (১) অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসক এবং উপধারা (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ, যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। (২) প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।

তা হলো ধারা-৩২ (ক) ও ধারা-৪২ (ক) এবং ধারা-৩২ (ক)। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৪২ (ক) অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করতে পারবে। (৩) প্রস্তাবিত ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।

তা হলো ধারা-১০ (ক) ও ধারা-৮২ (ক)। ধারা-১০ (ক) এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৮২ (ক) অনুযায়ীÑ বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।

(৪) ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো-ধারা ১৩ (ঘ) ও ধারা-১৩ (ঙ)। ১৩ (ঘ)-তে বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা এবং ১৩ (ঙ)-তে-বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।