রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের দেখতে আজ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৫টার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। তিনি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত চক্রের হামলার শিকার হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থার খোঁজ খবর নেন।

তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

আঘাতের তীব্রতা দেখে ও হামলার নৃশংসতার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি এ সময় তার চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

এরপরে তিনি মহাখালীস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দ্য চেস্ট এন্ড হসপিটালে আহতদের দেখতে যান।

গতকাল বিকেলে সহিংসতায় আহতদের দেখতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

এর আগে, গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী সহিংসতার শিকার অন্যদের দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) পরিদর্শন করেন।

তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দেন এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী মিরপুর ১০-এ ভাংচুর হওয়া মেট্রো রেল স্টেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ভবন এবং মহাখালীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প¬াজা পরিদর্শন করেন।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে যা ইচ্ছা তাই করছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাৎ করতে যেয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে জানতে চায়, কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, নিজেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডার দিয়ে গণহত্যা, নৈরাজ্য চালিয়ে নির্লজ্জ সরকার লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মায়াকান্না করলেও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল যে অভূতপূর্ব লাল ডিজিটাল প্রতিবাদের সৃস্টি করেছে, তাতে আপামর জনসাধারণের ঐক্য জানান দিয়েছে। জনসাধারণ খুনি সরকারের লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যার সরকারকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও ঢাকা, চট্ট্রগাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেপ্তার-নির্যাতন করে বাধা প্রধান করে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনেও সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা প্রদান ও শিক্ষার্থীদের আটক করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোক আহত হন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান উপহাস মাত্র। সরকারের নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি করে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা প্রমাণিত সত্য। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র গণআন্দোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধ, সান্ধ্য আইন জারি ও সেনাবাহিনী নামিয়ে গণগ্রেপ্তার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে, মামলা-হামলা করে এবং রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব মামলার আসামি করা হচ্ছ। এমন মামলায় সাভারের মৃত আজগর আলী, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সংসদে বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি অন্য একটি মামলায় সাত মাস আগে মৃত্যুবরণকারী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মরহুম ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাইর করে। গতকাল পুলিশ মরহুম এই বিশিষ্ট আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় হানা দেয়। আন্দোলনের আগে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত, তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করলেও এবং বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডক্টর মোরশেদ হাসান খান তার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিচ্ছে। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের হয়রানি, নির্যাতনের শত শত ঘটনা আছে, যার বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ঘটনা শুধু নির্দয়, অমানবিকই নয়, সরকারের নির্লজ্জ প্রতিহিংসা ও ফ্যসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাদের তাদের সিংহভাগে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তারের নামে মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর করছে, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, চুরির অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের সাবেক এমপি শহিদুল আলমকে বিনা কারণে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় হানা দিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাবাকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার কখনো বাবা ছেলেকে একসঙ্গে নিয়ে আসছে, এই গ্রেপ্তার তালিকা থেকে বাদ যায় নাই উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়ামুজ্জামান পর্যন্ত। বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের পিএস সুমনের বাসায় রাতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ভুলতা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম জিসানকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী হিরাকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে, একদিকে স্বজনহারা মায়ের কান্না অপরদিকে কোর্টের বারান্দায় গণগ্রেপ্তারকৃত পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে মা-বোনদের আর্তনাদ, পুলিশের ভ্যান বা ডিবি অফিসে খুঁজে তারা দিশেহারা। তারা বুক ফেটে কাঁদতেও পারছে না পুলিশের অত্যাচারে। জাতিসংঘ থেকে সারা বিশ্ব এবং দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষরা যখন সরকারের এই গণহত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে, সেই সময়ও সরকার নির্লজ্জের মতো মিথ্যাচার করছে।

রাজনীতি

দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশে বিরাজমান সংকট : উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, সরকারকে আত্ম-বিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে যে, কী কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারের কোনো কথায় ভুল ছিল কি না। সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। আর কোনো অবস্থায় এই প্রক্রিয়া প্রশাসনের বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে হলে হবে না। কারণ, বলপ্রয়োগের প্রক্রিয়া জাতিকে এক করতে পারে না। এখানে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ আছে, যাদের সংকটের সময় পাওয়া যায় না। যা আমরা এখন দেখছি। ছাত্রসমাজ যৌক্তিক দাবির জন্য যে আন্দোলন করছিল, তা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা থাকবে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের ক্ষয়ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে, তাতে এটি উত্তরণ করতে অনেক সময় লাগবে। দেশে বর্তমানে বহু সংকট চলছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক সংকট আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সংকট আমাদের এখানে আছে। আমাদের এখানে প্রশাসন যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। যখন কাউকে কাস্টডিতে নিয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু তারপরও সেটা করা হয়। এগুলো তামাশা বাদে আর কিছু না।

তিনি বলেন, এরপর আছে দর্শনগত সংকট। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ আমাদের যে চারটি স্তম্ভ আছে- সেগুলো এখন সংকটে আছে। যে ঘটনা বাংলাদেশে হয়েছে, সেটা হচ্ছে আক্রমণ বাংলাদেশ, আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা আছে, আমাদের গণতন্ত্রের চেতনা আছে, সমাজতান্ত্রিক চেতনা আছে। মোটকথা আমরা দর্শনগত সংকটে আছি।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সাধারণের সহযাত্রী হতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে সহযাত্রী হতে হবে। আমাদের সঠিক তথ্য প্রবাহের সংকট আছে। মানুষের কাছে এত বেশি ভুল তথ্য যাচ্ছে, যার কারণে এর মধ্য থেকে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আরেকটি হচ্ছে অস্তিত্বের সংকট। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়েছিলাম, সেটি এখন সংকটে আছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সার্বিকভাবে আস্থা তৈরি করতে হবে। আর এটা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর সেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে শেখ হাসিনাকে। সবাইকে একসঙ্গে নেওয়ার যে ব্যবস্থা, সেটা তাকে করতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোকজন যদি বিচ্ছিন্নভাবে থেকে যায়, তাহলে একা চেষ্টা করে সেটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। কাজেই এই প্রক্রিয়াটি হতে হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। যা হবে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গত জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশের যে অবস্থা দেখছি, তাতে অবস্থা ভালো থাকার কথা না। এখন বাংলাদেশে এক প্রকার দূরবস্থা চলছে। যার ফলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর কারণ দেশ চালানো নীতির সমস্যার কারণে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। যারা সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে ঘুরেন তাদেরও কিন্তু দেখা পাবেন না। তাদের আলোচনা বা টকশোর জন্য ডাকলে এখন তারা আসে না, ফোন করলে বলে ব্যস্ত আছেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে সরকার সিদ্ধান্ত নিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করবে। তাহলে কি জামায়াতের অর্থনীতি নিষিদ্ধ হবে? জামায়াতের ৮১টি প্রতিষ্ঠান যেগুলো দিনের পর দিন ব্যবসা করে আসছে, সেগুলো কি বন্ধ হবে?

বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, আজকে যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট; তারচেয়েও বড় যেটা অস্তিত্বের সংকটের কথা উঠেছে। এ বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে এবং আগামীতে এটা নিয়ে আমাদের কাজও করতে হবে। আমরা নিজেদের আত্মতুষ্টি নিয়ে অনেকদিন কাটিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা-দক্ষতা নিয়ে আমরা যতটা ভেবেছি যে, আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। সেটা যে কতটা মেকি ছিল, ঠুনকো ছিল, সেটা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ পেয়ে গেল। বিটিভিতে কয়েক দফায় হামলা ও লুট হয়েছে। অর্থাৎ একটা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে এবং সেগুলোর চারপাশে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেখানেও পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। এই জায়গাগুলো আমাদের ভাবতে হবে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশিদ ই মাহবুব বলেন, স্বৈরশাসক গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়েছে। যখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের বিপদে ফেলার চেষ্টা হয়। সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারছে না সরকার। সরকারের কোনো নীতি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয় না। সমাজের সব স্তরে এক ধরনের লোভী ভাব দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা চোর, লুটেরা তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে এমন কিছু ঘটতে পারে সেটা সরকার কেন বুঝতে পারল না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে থাকার যৌক্তিকতা নেই। তারপরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ কেউ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-শিবিরকে জঙ্গি উল্লেখ করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করতে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।

তিনি বলেন, “শিবির-ছাত্রদল-বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি এবং তারা দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে আমাদের ওপর তাদের থাবা দিয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে দেশব্যাপী তান্ডব সম্পূর্ণভাবে একটি জঙ্গি কর্মকান্ড।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোন রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গীবাদী কাজ। এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ধ্বংস করা।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালানোয় তিনি বিএনপি-জামায়াত চক্রের কঠোর সমালোচনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে সেবা দেয় ও মানুষের জীবন মান উন্নত করে, তা ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশকেই ধ্বংস করে ফেলা।”

আজ বিকেলে গণভবনে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা বলেন, দিনরাত পরিশ্রমে বাংলাদেশ যে সম্মান অর্জন করেছে, তা তারা ধূলিস্যাৎ করেছে। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একের পর এক সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করেছে যা জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আমার প্রশ্ন হল ধ্বংসের মাধ্যমে তারা কার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।

তথাকথিত আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা কোথা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,“তারা টাকা কোথা থেকে পেল? তাদের প্রতিদিনের আন্দোলন চালাতে কে তাদের টাকা দিল?”

রাজনীতি

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করা হবে। এদিন কালো ব্যাজ ধারণ এবং মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আজকের বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং আগামীকাল দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রোববার এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন ১৫০।

মাহবুব হোসেন বলেন, সভায় ‘ মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আইনটির নামের সঙ্গে কুতুবদিয়া শব্দটি যোগ করা হয়েছে। এতে আইনটি মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪ নামে অভিহিত হবে।

রাজনীতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় সরকারের নির্দেশে নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পত্রিকার তথ্যমতে- রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্রজনতাকে হতাহত করা হয়েছে, তাদের পরিবারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে। অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।

সোমবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা নিয়ে সরকার যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দানি জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন-প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শান্তি নিশ্চিত করা হবে। বাস্তবতা হলো- সরকার প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের এ হত্যাযজ্ঞ থেকে বাসা বাড়ির বেলকনি, পড়ার ঘর বা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট সোনামণিরা পর্যন্ত বাদ যায়নি। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো- দেশ-বিদেশের সব নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলা হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না অবৈধ আওয়ামী সরকার। তাই সব দায় নিয়ে সরকারের উচিত জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।

তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি র্কার্যালয়ে তুলে নিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়; কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্তমাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে। সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। গণগ্রেফতারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

বিবৃতিতে ফখরুল আরও বলেন, এর আগেও এসব অন্যায়-অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করা হয়েছে, কিন্তু কর্তৃত্ববাদী সরকার তা কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সরকার অব্যাহত রেখেছে এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি করছে। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোড়া গুলিতে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নির্যাতনের পর আবার নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে; যা গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াদ ইকবালকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম করে রাখা হচ্ছে। নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনাকে বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এসব দমন-নিপীড়ন বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে যেসব তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একই সঙ্গে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেফতারকৃত অনেককে ৪-৫ দিন বা এরও বেশি সময় পর আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আটক করার পর আদালতে নেওয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটককৃতদের ওপর অমানুষিক ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা-বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের কর্মস্থলে পর্যন্ত হানা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বারবার মিরান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধানবিরোধী। সর্বোচ্চ আদালতের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিম্ন আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। অবিলম্বে নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নেওয়া নেতাকর্মীদের জনসমক্ষে হাজির করার আহবান জানান তিনি।

রাজনীতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রাণঘাতি সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক এ সহিংসতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আহত হন।

আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।

তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষ হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।

জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল তারাই এ সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে সারা দেশব্যাপী এ ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রশ্ন এতে অর্জনটা কী হলো। কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেল। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

সহিংসতা জড়িতদের খুঁজে বের করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আবারও দেশবাসীকে বলব, যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করা। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনও চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষ, মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪ তে সেই একই। ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একি বর্বরতা, একি জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করব এ যে বর্বরতা, এ যে সন্ত্রাস জঙ্গি এবং মানুষকে হত্যা, এটাতো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের ছয়তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা!

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলবো যে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে করে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দিবে, সবই পোড়াবে।

তিনি আরও বলেন, কতবার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সবকিছু ভুলে, সেই শোক, ব্যথা, বেদনা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সবকিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেই খানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন। সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কী জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে বলবো আপনারা দোয়া করেন। যেন এ জঙ্গিবাদ এবং জুলুমের হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে শান্তি আসে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হামলায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার সকালে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন কেন্দ্রটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন বিটিভির মহাপরিচালক।

এছাড়া রাজধানীর রামপুরায় একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিটিভি ভবন ও বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দুর্বৃত্তরা বিটিভির কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি লুটপাটও করেছে। আমাদের ১৭টি গাড়ি পুড়িয়েছে, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে, দুটি সম্প্রচার ভ্যান পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও আগুনে বিল্ডিংয়ের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রাজনীতি

ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে হামলা চালাতে ও চলমান কারফিউ ভাঙতে দলীয় নেতাদের দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

হাছান মাহমুদ বলেন, তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছেন- সে অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে। অডিওতে তারেক রহমান বলছেন, ‘কারফিউ ভাঙ্গ, আর না হয় পদত্যাগ করো’।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত ‘দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের শপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত। এই রাষ্ট্রের ওপরে হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল তারা (বিএনপি নেতারা) স্বীকারোক্তি দিয়েছে, ছাত্রলীগ মারলে পাঁচ হাজার ও পুলিশ মারলে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আমির খসরু (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের তরুণ নেতাকর্মীদেরকে ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ার জন্য। গত বছরে ২৮ অক্টোবর যারা ঢাকা শহরে অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য করেছিল তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিয়েছে। এবারও যারা মানুষ মারবে, পুলিশ মারবে তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিবে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল! এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।

রাজনীতি

বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পর গুম করে রেখে নির্যাতন চালানোর পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেফতার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেফতার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিনদিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতার বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

ফখরুল বলেন, গ্রেফতার নেতাদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদের গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপির এ নেতা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, গত কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত তখন সেই মুহূর্তে সরকারপ্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদের তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দেয় তাদের নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকার কেনা গুলি, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে, যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে। এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সব শ্রেণি- পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু অবৈধ সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সব বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদের সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় তিন হাজার গ্রেফতার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।

ছাত্র জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে।

যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, তাই এই অবৈধ সরকারকে বলবো- অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।

বিএনপি মহাসচিব এই ‘গণহত্যা, নির্যাতন’, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সব দেশপ্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দুর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান।

ফখরুল তার বিবৃতিতে ‘বিনা অপরাধে’ গ্রেফতার বিএনপির নেতাসহ গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জোর আহ্বান জানান ৷

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর-১০ মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তান্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মত আমার আর কোন ভাষা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আবেগাপ্লুত কন্ঠে এ কথা বলেন।

এছাড়াও তিনি দেশবাসীর প্রতি যারা ১৭ জুলাই থেকে একাধিক দিন ধরে তান্ডব চালিয়েছে এবং তাঁর সরকারের জনজীবনকে সহজ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে গত ১৫ বছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনায় কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেল করবার সময়ও অনেক বাধা-বিঘœ আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধা অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ। এই স্টেশন যেভাবে ধ্বংস হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল, ইলেকট্রনিক সিস্টেম ও সম্পূর্ণ মডার্ন।  এটা যে কতদিনে ঠিক হবে আমি জানি না, কষ্ট পাবে সাধারণ মানুষ।

সরকার প্রধান বলেন, এটা তাঁর সরকার করে দিয়েছে সকলে যাতে সময়মত স্কুল কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে পারেন এবং কর্মস্থল থেকে আবার ঘরে ফিরে অন্তত কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেন। এতে আর্থিক দিকটাও সাশ্রয় হয়। সেসব কথা চিন্তা করেই তাঁর সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম নির্মাণ করে দিয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মত পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে, বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলবো যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি সেই দুর্ভোগ আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’

এরআগে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি পুরো স্টেশন ঘুরে দেখেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত শুক্রবার মেট্রোরেল স্টেশনে তান্ডবলীলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্যান্য স্থাপনার মতই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আধুনিক গণপরিবহনের এই মেট্রো স্টেশন।

ভাংচুর করা হয় সিসি ক্যামেরা, এলইডি মনিটর ও টিকেট কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জায়গা। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিষ।

শেখ হাসিনা বলেন, যে সব স্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে সেগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়েছে। যারা উন্নয়নবিরোধী এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়িত তাদের মানসিকতা কোন ধরনের সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজ বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন দৃশ্যমান।

বাংলাদেশ আজ বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা আজ বিদেশে যাচ্ছে, তারা সেই সম্মান পাচ্ছেন। আগে সেটা পেতেন না। ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে আমাদেরকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছিল। আজ সেটা নেই। কিন্তু আমি জানি না এই যে প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করেছি যেগুলো মানুষকে সেবা দেয়, তাদের জীবনযাত্রা সহজ করেছে, মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে ঠিক সেইগুলো ভেঙ্গে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া কোন ধরনের মানসিকতা!

শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘেœ মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রোরেলের ওপর কেন এতো আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর স্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহুদেশের তুলনায় একটি আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর মেট্রোরেল আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এটা বিশ^াস করা যায় না যে, এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু, সেই কাজই তারা করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করলো আমি সাথে সাথে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো  সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার কিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সকলের বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোলনকারি থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ^াস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যে কোন নগারিককেই আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এর সুযোগ নিয়ে ১৭ জুলাই থেকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’

তিনি বলেন, ’৭৫-এর পর ২৯ বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

তিনি প্রশ্ন করেন এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়বো? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এতো ক্ষোভ কেন? আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। আদালতের রায় নিয়েও আমরা বারবার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকান্ড হলো, আর কীভাবে করলো?

শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই।

আবেগপ্রবণ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রুত সময়ে হয়।

তিনি এটাকে আরো বাড়িয়ে একেবারে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত করে দিয়েছেন। যাতে মানুষ আরো সুন্দরভাবে চলতে পারে। যারা এর ওপর আঘাত করলো এই মেট্রোরেল এভাবে ভাংচুর করলো, যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রতিদিন চলাচল করতে পারতো অল্প সময়ের মধ্যে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। এই আনন্দ যারা নষ্ট করলো, জনগণের চলাচলের পথ যারা রুদ্ধ করলো তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি সেই বিচারের দিকে চেয়ে আছি। আমি এর নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছি না।