রাজনীতি

ভূমি ব্যবহারে প্রত্যেক উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে নির্দেশনা এসেছে, ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক উপজেলায় যেন মাস্টারপ্ল্যান থাকে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে থেকে জানানো হয়েছে যে তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং এই লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেন এটি সম্পন্ন হয়। এটি থাকলে যেটি হবে তা হলো, এখন উন্নয়ন হচ্ছে, ভূমির ব্যবহারও খুবই যৌক্তিক হবে। যেখানে-সেখানে যেন ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা কিংবা অন্য কোনভাবে যেন ভূমির ব্যবহার না হয়, সেটির দিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নজর রাখতে বলেছেন। এটি হয়ে গেলে ভূমির ক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা আসবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উপজেলা ভিত্তিক ভূমি ব্যবহারে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এখন থেকে এই বিষয়ে কাজ করবে।

মাহবুব হোসেন বলেন, সভায় ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষায় একটি বোর্ড গঠনের বিধান রেখে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

তিনি বলেন, ‘তথ্য এখন সবচেয়ে বড় রিসোর্স। এই ডিজিটাল যুগে তথ্য ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কৌশলগত রিসোর্স হিসেবে পরিগণিত হয়। তথ্যটাই হলো এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। সেক্ষেত্রে যাতে তথ্য ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা কিংবা একজন ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির গোপনীয়তা, ব্যক্তি স্বতন্ত্র এবং তার যে সম্মতির প্রয়োজন হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। সেই বোর্ড এই ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করবে।’ উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান থাকবে এবং চারজন সদস্য থাকবে। অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতই এই বোর্ড পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, ‘উপাত্ত যারা সংগ্রহ করবেন তাদের জন্য অনুসরণীয় কিছু নীতিমালা থাকবে, কিছু বিধি-বিধান থাকবে। বোর্ড বিধি-বিধান তৈরি করবে এবং সেই বিধি-বিধানের আলোকে সবার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তথ্য বিতরণ করতে হবে। যারা তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করবেন, তাদের বোর্ডের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধনের ভিত্তিতে তারা এ কাজগুলো করতে পারবেন। সেই বিধান রেখে এই আইনটি করা হচ্ছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এছাড়াও সভায় ‘ জয়িতা ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু বিএনপি পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। আর একটা বিশেষ দল অংশ নিলেই কি নির্বাচন বৈধ হয়ে যায়? তারা এলেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়ে যাবে? তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেই ভোট এড়াতে চাচ্ছে। আমরা যতটা জানি ২৫-৩০টি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি দল হিসাবে অংশ না নিলেও দলটির অনেক নেতা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই পরিষ্কার হবে বিএনপি থেকে কারা নির্বাচনে আসবে।

আজ  সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের চিঠি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজ

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর তো রেওয়াজ আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী তো নির্বাচন করতে পারে। সেটা করবে।’

দলীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মীদের বিষয়ে স্পেসিফিক কিছু বলা হয়নি। এখানে আমাদের আরও কিছু বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তার ব্যাপার আছে। যদি শরিকদের নিয়ে নির্বাচন করি অথবা অপজিশন কে হয়, তেমন একটা বিবেচনা মাথায় থাকে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে প্রার্থীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে কোনো কিছু অপরিষ্কার, অস্পষ্ট নেই। সবকিছু খোলামেলা বলে দিয়েছেন। সবকিছু স্পষ্ট করেছেন। তার যে গাইডলাইন সেই তা অনুসরণ করে প্রার্থী হতে বাধা আছে বলে আমার জানা নেই। স্বয়ং সভাপতি গাইডলাইন দিয়েছেন।’

মনোনয়নপ্রাপ্তদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিজয়ী হতে পারবেন, এমন ব্যক্তিদেরই প্রার্থী করা হয়েছে। দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় কৌশলগত কারণেই দু’টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনি জোটের সুবিধা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট-অ্যাকোমডেশনের বিষয় আছে। সেগুলো চূড়ান্ত করবে দল।’

এর আগে সকালে ওবায়দুল কাদের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে শহিদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলের প্রার্থীর বাইরে প্রতিটি আসনে ড্যামি প্রার্থী রাখা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দল দলের কৌশল ঠিক করে। দলের অবস্থান অনুযায়ী দলের ভবিষ্যৎকে মাথায় রেখে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন এবং সিদ্ধান্ত দেন। নতুন সময়ে নতুন কৌশলও দলকে গ্রহণ করতে হবে। এ সময়ে যে কৌশল দরকার আমাদের নেত্রী সে কৌশলই ঠিক করেছেন। গতকাল (রোববার) তার বক্তব্যে প্রকাশ করেছেন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি করে এটা বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ নয়, অপকর্মের জন্য বিএনপিই সঙ্গী খুঁজে বেড়াচ্ছে।’

এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ভোট নয়, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। যেমন খুশি তেমন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) গণভবনে মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমাবেশে দলীয় প্রার্থীদের একজন করে ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মনোয়ন বঞ্চিতদের বলা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। তার মানে নৌকা ভার্সেস আওয়ামী লীগ! নিজেরা নিজেরাই।

রিজভী বলেন, ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে যেন এ রকম- আমি, আমরা আর মামুরা। নির্বাচন হবে আমি আর মামুদের মধ্যে! পাতানো ম্যাচ খেলবো দুজন-তুমি আর আমি। আর সাইড লাইনে থাকবে টাকার বিনিময়ে খরিদ করা ‘কিংস পার্টি’সহ ভূঁইফোড় পার্টির নেতারা। আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার ফর্মূলাকে সরকার পরিবর্তনের ভোট না বলে দলীয় কাউন্সিল বলা যেতে পারে।

সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) সারা পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানাতে চান। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আর আন্তর্জাতিক মহলকে এ হাস্যকর সাজানো নাটক দিয়ে নয়ছয় বোঝানো সম্ভব নয়। নির্বাচনের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে ভরে নির্বাচনী সার্কাস করে লাভ নেই।

তিনি বলেন, বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার ঘুঘু বধ করতে ১৮ কোটি জনগণের সঙ্গে আছেন গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব। আদালত, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা রাখেন নিজের হাতের মুঠোয়। তার অধীনে চোখ ধাঁধানো জালিয়াতির নির্বাচন হবে। যা এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে প্রহসনের নির্বাচনের ইতিহাসে আর একটি অভিনব অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হবে।

আওয়ামী নাৎসিবাদ এখন বাংলাদেশে জার্মানির মতো হুবহু পৈশাচিকতায় প্রয়োগ করা হচ্ছে। হিটলার যেমন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ অর্থাৎ ঘৃণা বক্তব্য রাখতেন ঠিক তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ দিয়ে যাচ্ছেন।

১৫ নভেম্বর তফশিল ঘোষণার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতার ও মামলার তথ্য তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৪ হাজার ৯৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। মামলা ১৬৬টি, যেখানে আসামি ১৯ হাজার ৩১০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন দলটির সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

আগামী রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে গণভবনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সব সদস্য এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সব প্রার্থীকে (জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়নপত্রের রিসিভ কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ) যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানানো হয়।

রাজনীতি

বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, এটা এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিএনপির ভেতরের অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কাদের এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পথ বেছে নিয়েছে। তারা এখন চোরাগোপ্তা হামলা, নাশকতা চালাচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর—এসব অপকর্ম করছে।

জনগণ নির্বাচনমুখী হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়েছে এটা সরকারের সাফল্য। এসব চোরাগোপ্তা হামলা করে নির্বাচন পণ্ড বা ভণ্ডুল করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি যা যা করেছে এর চেয়ে কঠোর কর্মসূচির দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর নেই ৷ আগুন দিয়ে বাস পোড়ানো, পার্কিং করা গাড়িতে ঘুমন্ত চালককে মারা, হরতাল, অবরোধ—২০১৩, ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি। নাশকতার চেয়ে আর কী কঠোর কর্মসূচি আছে?

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিএনপির এখনো সুযোগ আছে। তারা জোটগতভাবে না এলেও দলটির ভেতরের অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ছবিটা কোথায় যায় দেখা যাক।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বহিঃশক্তির মন্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আমাদের মনোযোগ। আমাদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহৎশক্তির দেশগুলোর মন্তব্যে আমরা শরিক হতে চাই না।

রাজনীতি

নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করে ‘দলছুটদের’ দিয়ে সরকার নতুন দল বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল কখনো অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বাগিয়ে নেয় না। এই কাজটা করে গ্রাম্য মোড়ল, গ্রাম টাউট, বাজে লোক তারা এসব কাজ করে…অন্য মানুষের বাড়ি থেকে লোক বাগিয়ে নেয়…। দলের মধ্যে নানাভাবেই সুবিধাবাদীরা ঢুকে পড়ে, উচ্ছিষ্টভোগীরা ঢুকে পড়ে.. লোকগুলোকেই তারা পায়। এরশাদের সময়ে আমরা দেখেছি, এসব লোকগুলোকে নিয়ে এরশাদ দল গঠন করেছে, সরকার গঠন করেছে। শেখ হাসিনাও এখন ওই কায়দা অনুকরণ করছেন অনুসরণ করছেন।

তিনি বলেন, বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর থেকে লোক বাগানোর জন্য তিনি তার এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তারা সেই কাজটি করছে। একজন একজনকে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে, নতুন দলের একেকটা অদ্ভুত অদ্ভুত নাম দিয়ে তাদের নিয়ে যাচ্ছে এবং নমিনেশনে তাদের জেতানো হবে বলে অথবা টাকা পয়সার লোক দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একদিকে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণকে দমন করার জন্য যত ধরনের নিষ্ঠুর পদক্ষেপ আছে সেগুলো, অন্যদিকে চলছে রাষ্ট্রীয় টাকা লোপাট করে দলছুটদের নিয়ে দল বানানোর কারসাজি।

রিজভী বলেন, আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি যে, ৪২৮টি র‌্যাবের জন্য কেন্দ্র বানানো হচ্ছে সারা দেশে। এদের কাজ কী? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এভাবে নিয়োগ করা হয়, তাদের দিয়ে সারাদেশে একেকটি কেন্দ্র বানানো হয়…সেখান থেকে তারা কী করবে? তারা করবে যাতে কোনোভাবে জনগণের বিস্ফোরণ না ঘটে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে, যা খুবই অমানবিক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জনগণকে হত্যা করে লাশের ওপরে পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যাবার চিন্তা করে তাদের মতো অমানবিকতা আমি আর কোথাও দেখি না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, জনগণের জন্য যদি কাজ করতে হয় তাহলে জনগণকে হত্যা করে লাশের ওপরে পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যাবার যারা চিন্তা করে তাদের মতো অমানবিকতা আমি আর কোথাও দেখি না। এটা আমাদেরকে কাছে ভাবতেও অবাক লাগে। কাজেই আমরা শান্তি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, একটু আশার আলো দেখছিল এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ মানুষের জীবনটাকে আবার ব্যাহত করছে। একটা শংকার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবথেকে কষ্টের বিষয়।

যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজ করছে তাদের বোধোদয় হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুক।

তাঁর সরকার একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমরা যেভাবে মোকাবেলা করলাম এরপরে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়-সাধারণ মানুষকে কেন পুড়িয়ে মারা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন?
তিনি বলেন, এই সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা এটা কি কারণে? আমার কাছে এটা এখনো বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশকে শান্তির অন্বেষক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয় আঞ্চলিক এবং সারা বিশ্বব্যাপী আমরা শান্তি চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর এর উল্লেখ করে বলেন, অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি এ পর্যন্ত আমরা আমাদের এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই চলেছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে, আঞ্চলিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের সমুদ্রসীমা, আমাদের স্থল সীমা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে আমাদের

রিফিউজিদের ফিরিয়ে আনার মত ব্যবস্থা আমরা করেছি। সুচারুভাবে আমরা এগুলো করতে পেরেছি। এমনকি ছিটমহলগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করতে পেরেছি। কাজেই বাংলাদেশ শান্তির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকার এসেই আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের দেশের নারী সদস্যরা অনেক সুনাম করেছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং তিনি শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আরো নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাশা করেছেন।

এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর যে কর্ম ক্ষমতা সেটা আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সমাজের কোন স্তরের মানুষই পেছনে পড়ে থাকবে না,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠ রোগীর থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে তাঁর সরকার। তাদের বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে এবং আয় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার।

তাঁর সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, কেবল ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন করা হচ্ছে। যাতে গ্রামে বসে প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ শহরের সব রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান করা হচ্ছে ফলে সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য গর্বে তাঁর বুকটা ভরে ওঠে।

শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এ সময় তিনি তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশটা আমাদের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো রকমের দুর্যোগ দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সীমিত সম্পদের দেশ হলেও যেখানে দুর্যোগ হোক সে জায়গায় বাংলাদেশ ছুটে যায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে ভূমিকা রাখে।

’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের ভাগ্যহত মানুষের মুখে হাসিফোটাবার জন্যই তাঁর পথচলা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বাবা মা ভাই সব হারিয়েছি, আমার আর হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা যেহেতু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তাই বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যেটা ২০০৮ এর নির্বাচন ইশতেহার আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং সেই মোতাবেক কাজ করে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। ২০২৬ সালের এই যাত্রা যেন আমরা ভালোভাবে করতে পারি সেজন্য ইতিমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যেন কেউ বন্ধ করতে না পারে। সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, শান্তিতে সমরে সব জায়গায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদা সচেষ্ট এবং শক্তিশালী। সেই শক্তিশালী হিসেবেই একে আমরা গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। কিন্তু আমার দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যেন যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের থাকে সেটাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।

‘আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে,’ বলেন তিনি।

পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও বাংলাদেশ সশ¯্র বাহিনী যথাযথ অবদান রেখে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছিল।

যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠবে। অর্থাৎ স্মার্ট পপুলেশন, স্মার্ট গভমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা এভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো এবং এগিয়ে নিয়ে যাব।

রাজনীতি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে রংপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।

মঙ্গলবার রংপুর নির্বাচন অফিস থেকে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। এ সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিয়ার রহমান শাফি, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রহমান, আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্য মাসুদার রহমান, জেলা নেতা আতোয়ার রহমান, নুরন্নবী চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতা তার সঙ্গে ছিলেন।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আজমল হোসেন লেবু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে রংপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরমসহ যাবতীয় কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) রাতেই ঢাকায় মনোনয়নপত্রটি পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছানো হবে।

রংপুর-৩ আসনে এখন জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হিসাবে রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ।

আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে জিএম কাদের নির্বাচন করলে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে পার্টির চেয়ারমানের মধ্যে বিরোধ তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসাবে জিএম কাদের দেশের যে কোনো আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। এখন সাদ এরশাদ যদি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন, তখন আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব।

মঙ্গলবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি একথা বলেন। মো. মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, দলের চেয়ারম্যান বা সভাপতির অপশন আছে যে কোনো জায়গা থেকে নির্বাচন করার। আমাদের দলের চেয়ারম্যান যেখানেই নির্বাচন করতে চাইবেন, সেখানেই তিনি ভোট করতে পারবেন। দলের কেউ সাহস রাখে না সেখানে গিয়ে ভোট করার। ওই আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এখন সেখানে যদি চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান, তাহলে কারও কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। যিনি আছেন তিনি তো দলের কাছেই আসেন না। তাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই।

মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রংপুর এমন এক জায়গা যেখানে অন্য দলের মেয়র প্রার্থীর জামানত থাকে না আমাদের দলের প্রার্থীর কাছে। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সেখানে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করতে চাইলে করতে পারেন, আমরা এটাকে স্বাগত জানাব।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দু-এক দিনের মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন বলে জানান দলটির মহাসচিব। রওশন এরশাদ আলাদাভাবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে ফরম বিতরণ করবেন বলে গত ২ দিন ধরে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানান তিনি।

এ সময় তিনি আরও বলেন, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি দিয়েছেন সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি টেলিফোনে আমাকে জানিয়েছেন লোক পাঠিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। একই সঙ্গে তিনি সাদ এরশাদের মনোনয়ন ফরমটিও সংগ্রহ করবেন। হয়তো আজই (মঙ্গলবার) তিনি ফরম সংগ্রহ করবেন।

জাতীয় পার্টির দলীয় প্যাডে লেখা জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের গুজব সম্পর্কে দলটির মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের একটি অংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব গুজব ছড়াচ্ছে। দলে জিএম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে, যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তার নেতৃত্বে দল গত দু-তিন বছরে অনেক সংগঠিত হয়েছে। সুতরাং উনি পদত্যাগ করবেন কেন?

জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা জানাতে আরও সময় লাগবে উলে­খ করে মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মানুষের মনে এখনও প্রশ্ন, এখনও সংশয়, ভোটকেন্দ্রে গেলে ভোট দিতে পারবে কিনা। জনগণের মনে ভোট নিয়ে শতভাগ আস্থা এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তাই ভোটে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা কোনো জোট বা মহাজোটে নির্বাচন করব না। আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব।

নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদল সম্ভব নয় মন্তব্য করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত ৩৩ বছরে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যারা নির্বাচনে জিতেছে তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আর যারা ক্ষমতায় যেতে পারেনি তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আনুপাতিক হারে এরশাদের নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন সামনে এসেছে। আমরা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চেয়েছি। তবে নির্বাচনের জন্য শতভাগ আস্থার পরিবেশ এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি।

দ্বিতীয় দিনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি : এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানীতে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কার্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা উপলক্ষ্যে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও উৎসবের আমেজ এবং নেতাকর্মীদের ভিড় চোখে পড়ে।

বিভিন্ন আসনের বিপরীতে নেতারা মনোনয়ন ফরম কিনছেন এবং জমা দিয়েছেন। বিশেষ করে কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসেন সংসদ-সদস্য পদে বিভিন্ন আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা। সঙ্গে নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল। হাততালি আর স্লোগানের তালে তালে বাজতে থাকে ব্যান্ডপার্টির বাদ্য। এমন আনন্দ আর উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান জানান, প্রতিটি মনোনয়ন ফরম ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিন ৫৫৭টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে, যা প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা মূল্যের। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ নভেম্বর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের বকেয়া মাসিক চাঁদা পরিশোধ করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে বলেও দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে সোমবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে জাতীয় পার্টি। দ্বিতীয় দিনে ৬২২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ২ দিনে ১১৭৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ তারিখ। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়ন ফরম বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণের তারিখ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সন্ত্রাসবাদ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিএনপির চলামান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে সরকার ভীত ও শংকিত হয়ে পড়েছে। এজন্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় চিহ্নিত দলদাস সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্মীদের যৌথ ধ্বংসযজ্ঞ দেশজুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করবার জন্য জনবিচ্ছিন্ন সরকার অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রাখা।

তিনি বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের মানুষ আজ ফ্যাসিবাদের নির্মম নিষ্পেষণে একাধারে আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। ক্ষমতার মোহে আওয়ামী অপশক্তি সুপরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা করছে, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে। তারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সর্বত্র একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন অগ্নিসন্ত্রাসের ন্যক্কারজনক ইতিহাস রয়েছে। ধারাবাহিক অঘটনের মাধ্যমে, হাতেনাতে ধরা পড়ে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মীরা বারবার বিষয়টি দেশবাসীর সামনে নিজেরাই প্রমাণ করেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে, দুঃশাসনের নীলনকশা হিসেবে, পুলিশ হাজার-হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা, বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে। গত ৩ সপ্তাহে আমাদের ১৪ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে হত্যা, বোমা বিস্ফোরণ, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়াসহ নৃশংস অভিযোগের মাধ্যমে বিএনপির অহিংস ও শান্তিপূর্ণ ধারাবাহিক কর্মসূচিসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এসব প্রহসনমূলক মামলা ও রায়ে পুনঃপ্রমাণিত হচ্ছে দেশের বিচার ব্যবস্থার বিচারহীনতা ও নগ্ন দলীয়করণ; যা বছরের পর বছর ধরে চলছে।’

কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতিকারী কর্মীরা। তারা গণপরিবহণে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে, আর নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জ্বালাও-পোড়াও করে অপরাধীরা খুব সহজেই ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ছে। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অধিকাংশ ঘটনা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোষ্টের কাছাকাছি ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, কিভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ী। দেশের সর্বত্র র্যাবের শত-শত পেট্রোল টিম এ অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে পুলিশের পূর্ণাঙ্গ সুসংহত টহল। বাংলাদেশ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও বিরোধী দলের কোনো সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত হবে, এই দাবি সর্বত্রই হাস্যকর। বরং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হয়তো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেন তারা নিশ্চিন্তে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ছাত্রলীগের ৩ জন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ২ জন ছাত্রলীগ সদস্য ককটেল ও পেট্রোলবোমাসহ আটক হয়েছিল। একই সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা পেট্রোল বোমাসহ গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ দুজন যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল। ২০১৪ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহণে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যম মারফত জানা যায়। সেখানে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন এবং বাসে আগুন দিয়ে, পরিবহণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করে, মানুষ হত্যা করেছিল। শেরাটনের সামনে গানপাউডার মেরে বাসে আগুন দেওয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন করছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির ৪৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময়ে ১৫টি মামলায় ১ হাজার ৭২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৫ জন নেতাকর্মী।

রাজনীতি

দেশব্যাপী ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের ৫ হাজার ৩৬০টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৩৯৭টি ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অবকাঠামোগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি ৩ লাখ টাকা।

এ সময় গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ দেশব্যাপী ১০১টি প্রান্তে সুবিধাভোগীরা যুক্ত ছিলেন।

এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২৫৯টি ভবন; প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রভৃতি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়, কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টার এবং চারটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (পিটিআই) নবনির্মিত মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম।

প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলোতে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নতুন ও  আকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের সুবিধা পাবে। এছাড়া, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন নবনির্মিত এ বিদ্যালয়সমূহের সুবিধা পাবেন;  নবনির্মিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেন্ডারের ভিত্তিতে পৃথক ওয়াশ ব্লক নির্মিত হয়েছে এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প

প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে মাঠ পর্যায়ে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। বেইজমেন্ট ও ক্যাম্পাসে ৪৪টি গাড়ি রাখার সুবিধা রয়েছে।

প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টারে প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের সকল স্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের জন্য চাহিদা ভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ভবনে ১৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর (৮০জন পুরুষ ও ৮০ জন মহিলা) আবাসনের সুব্যবস্থাসহ প্রশিক্ষণের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।

সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও যশোরে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি পিটিআই এ মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৫০ আসন বিশিষ্ট প্রতিটি অডিটোরিয়ামে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রত্যেক পিটিআই এ প্রতি বছর ২ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও, সেখানে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়।

নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প 

উদ্বোধনকৃত প্রকল্পগুলো হলো- চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল (মাস্টার প্ল্যান), বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দর (জামালপুর), রামগড় স্থল বন্দর (খাগড়াছড়ি), বিআইডব্লিউটিসির ছয়টি ইমপ্রুভড মিডিয়াম ফেরি, বিআইডব্লিউটিএ’র মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশ বিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদীর অংশ বিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার; পুরাতন ব্রম্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধরলা নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে খনন; ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের লক্ষ্মীপুর প্রান্তে মেঘনা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নৌচলাচল সহজিকরণ; ধাওয়াপাড়া (রাজবাড়ী) ও নাজিরগঞ্জ (পাবনা)  ফেরি সার্ভিসসহ নদীবন্দর কার্যক্রম। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ এর আওতায় পানগাঁও কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ; আশুগঞ্জ কার্গো টার্মিনাল; বরিশাল নদী বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল; চাঁদপুর নদী বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল; নারায়ণগঞ্জ ডেক ও ইঞ্জিন কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; নারায়ণগঞ্জ খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ।