রাজনীতি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার কাউকে আগামী নির্বাচন বানচাল করতে দেবে না।

বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়, আমরা তা করতে দেব না। কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না এবং কেউ সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে অংশ নেব এবং জনগণের রায়ে আমরা বিশ্বাস করি।

সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নিঃশর্ত রাজনৈতিক সংলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশিরা প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথাই বলেন। তবে জনগণ কী বলে সেটাই আসল কথা।

তিনি বলেন,‘তাদের (বিদেশিদের) কথা যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবতার সাথে মিল না থাকলে আমরা শুনবো না। তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণ ভোটের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, বিএনপি সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করেছে এবং ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১৫৪টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা অগ্নি সন্ত্রাস দেখতে চাইনা।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোনো সহিংসতা দেখতে চাই না। জনসাধারণের জান-মাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমরা মানুষ হত্যার সুযোগ দেব না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি একটি বড় দল কিন্তু তাদের কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, যারা বাংলাদেশের মানবাধিকারের সমালোচনা করছেন তারা আসলে ঘুমিয়ে আছেন এবং তারা গাজার বর্বরতার কথা বলেন না।

রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেনে আপনি উঠবেন না, ট্রেন কি থেমে থাকবে? নির্বাচনী ট্রেন মিস করলে কারও জন্য থেমে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, এর বিকল্প নেই।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশে গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৪৩ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আজকের দিন খুব আনন্দের। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনরাকে (সিইসি) স্বাগত জানাই।

তিনি বলেন, আগামী ১৭ তারিখ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক নাজিবুল্লাহ হিরু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি।

রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চলমান অবরোধ শেষে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল পালনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যা আজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এদিকে তফশিল প্রত্যাখ্যান করে আজ দেশব্যাপী অর্ধদিবস (৬টা-২টা) হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলনও সারা দেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ আরও বেশ কয়েকটি দলও তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তফশিল ঘোষণার পরপরই এর প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযেগী সংগঠনের নেতাকর্র্মীরা। বিক্ষোভ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টিও। বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্রমঞ্চের নেতারা জানান, আজ অবরোধের পাশাপাশি দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

তফশিল ঘোষণার পর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তফশিল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফশিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফশিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনামার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফশিল জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফশিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল-বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারও হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই সংকটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। অতি দ্রুতই আওয়ামী নাৎসি সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করবে জনগণ।’ রিজভী আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন-অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। একথা তো ডাহা মিথ্যা, ভন্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ব্যতীত দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল একতরফা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। কার জন্য এই নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে? মানুষ রাজপথে নেমেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি। এই দাবিকে বন্দুকের নলের মুখে উড়িয়ে দিয়ে একতরফা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা। আর এই নির্বাচন কমিশন সব জেনেশুনেই দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে তফশিল ঘোষণা করল। কারণ বর্তমান কমিশন নিশিরাতের ভোটের সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী কমিশন।’

রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিল জনগণ এর পালটা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ নয়। তফশিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করলেন, এত সহজ নয়। এই দিবাস্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এসব তফশিল-টপশিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা। রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে। অবরোধে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ঢাকা। সব পোশাকি-অপোশাকি রক্ষীবাহিনী-লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়েও কিছুই করতে পারছেন না। তারাও জনগণের আন্দোলনে আত্মসমর্পণ করবে।’

সূত্রমতে, বুধবার তফশিল ঘোষণার পর বিভিন্ন জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাদের করণীয় সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দেন। এছাড়াও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও সভা করেন দলটির হাইকমান্ড। সেখানে চলমান অবরোধ শেষে রোববার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর লাগাতার হরতাল বা অবরোধ পালনের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

তফশিল প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টিসহ সমমনা দলগুলো। প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াতে ইসলামীও।

সরকার নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে জনগণকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে।

অলি আহমদ বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই। কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বর্তমান সিলেকশন কমিশন (নির্বাচন কমিশন) বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়ার মতো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আর ন্যূনতম মনুষ্যত্ব থাকল না।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ জানান, এ তফশিল গণতন্ত্রের সঙ্গে তামাশা। জনগণ এ তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, ইসির একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

তফশিল প্রত্যাখ্যান করে রাতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। একই সঙ্গে আজ নির্বাচন কমিশনের প্রতি লাল কার্ড প্রদর্শন করে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

গণদাবি উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। হয়তো দু’এক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ও সময় (তফসিল) ঘোষণা করবে। জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর নামে নামকরণ করা শেখ হাসিনা স্বরনী (পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে) এবং চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনা ও ঘরের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকে নির্বাচনে আসতে চায়না। কারণ, যারা ৩০টি সিট পেয়েছিল (২০০৮ সালে) স্বাভাবিকভাবে তাদের নির্বাচনে আসার কোন আকাঙ্খাই থাকবে না। নির্বাচন বানচাল করে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলাই তাদের চেষ্টা।

তিনি আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৯ হাজার ৯৯৫টি অবকাঠামো নির্মাণ সমাপ্ত কাজের উদ্বোধন এবং ৪৬টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ সময় দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ ১০১টি প্রান্ত ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল।

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সারাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৬৪৪ টি বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো এবং  ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৫৩৯৭টি গৃহ নির্মাণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি এদেশের মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস-জালাও পোড়াও। গাড়িতে আগুন বাসে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত করা হচ্ছে, স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ঠিকভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে।

অথচ বিএনপি’র আমলে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ সেখান থেকে বর্তমানে আমরা সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৬ ভাগে উন্নীত করেছি। আজকে সমস্ত ছেলে-মেয়ে, প্রায় ৯৮ ভাগ ছেলে-মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। সেসব কিছু আজকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের শুভবুদ্ধির উদয় হবার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি এটুকু বলবো যে ওদের সুমতি হোক। এই ধ্বংসযজ্ঞ তারা বন্ধ করুক। অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক।

অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশবাসীকেও বলবো যে এই অগ্নিসন্ত্রাস আপনাদের প্রতিরোধ করতে হবে। সকলেরই জানমাল আছে। ২০১৩,১৪ ও পরবর্তী সময়ে যে অগ্নিসন্ত্রাস, ভূক্তভোগীদের যন্ত্রণা ও কষ্ট আমরা দেখেছি। কাজেই এই ভোগান্তি যেন মানুষের আর না হয়।

অনুষ্ঠানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং খাদ্য মন্ত্রী সাধান চন্দ্র মজুমদার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্য সরকারের ধারাবাহিকতাও প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের ধারবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজন হিসেবে তাঁর ’৯৬ থেকে ২০০১ পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দু:শাসনের চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ’৯৬ সালে তিনি সরকারের এসে দেশকে খাদ্য ঘাটতির একটি দেশ হিসেবে পেয়েছিলেন, ৪০ লাখ মেট্রিক টন ছিল খাদ্য ঘাটতি। উৎপাদন হতো ৬৯ বা ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। সে সময় তাঁর সরকার গবেষণা ও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে আলাদা বরাদ্দ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। সে সময় চালের দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা। মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। যখন তাঁর মেয়াদ শেষে দেশে প্রথমবারের মত শান্তিপূর্ণ ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য দেশে উবৃত্ত রেখে যান। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে।

দেশের গ্যাস বিক্রির দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে রাজি না হওয়ায় ভোট বেশি পেলেও পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এরপর বাংলাদেশে দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-বাংলাভাই-বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, একইসাথে ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা-এগুলো বাংলাদেশের মানুষকে মোকাবেলা করতে হয়। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে ’৭১ এর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতার ন্যয় বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীও এরকম নির্যাতনের শিকার হয়। আইনজীবী হত্যা, জেলা জজকে বোমা মেরে হত্যা এমনকি ছয় বছরের ছোট্ট রজুফাও গ্যাং রেপ থেকে রেহাই পায়নি। অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এদের বিরুদ্ধে মামলা করায় ভিটিমাটি থেকে উৎখাত হতে হয়। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ^ চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এই অবস্থার জন্যই দেশে জরুরি অবস্থা আসে।

২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে যেখানে বিএনপি ৩০ আসন পেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় যখন নির্বাচন বানচালের অনেক চেষ্টা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। এরপর ২০১৮’র নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটায় তারা।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা জনগণের ভোটেই বারবার নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ কোনদিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া সরকার গঠন করে নাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য আইনকরে নির্বাচন কমিশন গঠন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন তথা নির্বাচন ব্যবস্থার যাবতীয় সংস্কার আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই করা হয়েছে। কারণ, রাতের অন্ধকারে অস্ত্র তুলে ক্ষমতা দখল করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

আজ দেশের যে প্রভূত উন্নয়ন তা দীর্ঘসময় একটানা ক্ষমতায় থাকতে পারার জন্যই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা ১৬শ’ মেগাওয়াট ছিল তা বর্তমানে ২৮ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে উন্নীত হয়েছে। প্রতি ঘরে বিদ্যুতের আলো জে¦লেছে সরকার। অথচ তাঁর সরকার ’৯৬ সালে পাওয়া ১৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকে উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে রেখে যায়। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার এক ইউনিটও উৎপাদন না বাড়িয়ে উল্টো বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশ আজকে বিশে^ একটি মর্যাদাশীল দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সেই মর্যাদাটা আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছি যেটা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর আমরা পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ায় কাজ করে যাবার আহবান জানান।

১১টি জেলাকে ও ৬০টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীণ মুক্ত ঘোষণা

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় কেউ ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না,’ তাঁর এই অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১১টি জেলা ও ৬০টি উপজেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, সিলেট ও মৌলভীবাজার।
এনিয়ে দেশের মোট ভূমিহীন ও গৃহহীণ মুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২টি এবং উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯৪টি।

রাজনীতি

গাইবান্ধায় রোববার নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা যুবলীগ নেতার শেষ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় হত্যার রাজনীতির নিন্দা করেছেন। নিহত যুবলীগ নেতা জাহিদ মৃত্যুর আগে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করে বলেছেন যে তারা (হত্যাকারীরা) বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন আওয়ামী যুবলীগের সোনোরা ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম (৩৮)কে উদ্ধৃত করে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তারা আমার পায়ের রগ কেটেছে, নির্বিচারে কুপিয়েছে এবং শুধু আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যের জন্য আমাকে মরতে হয়েছে”।

বিএনপি-জামায়াতের গুন্ডারা এভাবেই আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করছে বলে যোগ করেন সজীব ওয়াজেদ।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাচাইকৃত পাতা থেকে পোস্ট করা একটি ভিডিওর পাশাপাশি একটি পোস্ট পুনঃটুইট করে হত্যার প্রতিবাদ করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রাজনীতি

তফসিল নাটক’ বন্ধ করে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, জনগণের দাবি উপেক্ষা করে এক তরফা নির্বাচন করার জন্য উন্মত্ত-উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে সরকার।

শেখ হাসিনা তাঁর আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবৈধভাবে তফসিল দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, এই তফসিল নাটক বন্ধ করুন। আগে পদত্যাগ করুন। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিন। এই দলদাস আওয়ামী নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। তারপর তফসিল। দাবি না মানলে পরিণতি হবে ভয়ংকর।

রিজভী বলেন, এই তফসিলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ ৫৭ সেকেন্ডে নৌকা মার্কায় ৪৩টি সিল মারার কোনো প্রহসনের পাতানো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেবে না।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এ যোগদান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে আজ সকালে দেশে ফিরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় বিমান প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব এবং পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বিমানটি স্থানীয় সময় রাত ১০.৫৪ মিনিটে জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

প্রধানমন্ত্রী ৫ নভেম্বর মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং মদিনার মসজিদ আল-নববীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত এবং আসরের নামাজের পর সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন।

একই দিনে তিনি মদিনা ছেড়ে মক্কায় পৌঁছান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এশার নামাজের পর আল মসজিদ আল-হারামে (কা’বা শরীফ) পবিত্র ওমরাহ পালন করেন।

গত ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনের ফাঁকে তিনি ওআইসি ও সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ‘উইমেন ইন ইসলাম’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন এবং তাঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর সদর দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে সৌদি আরব ৬-৮ নভেম্বর এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, শুধু মাত্র ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীদের ডাকা মোট ছয় দিনের অবরোধ ও হরতালে দেশের অর্থনীতির আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

তিনি তার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর এবং এসএমই খাত। সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক উভয়কেই

ইতিমধ্যেই সংকটজনক অর্থনৈতিক সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিশু ও যুবকদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
রাজনীতি বিষয়ে বাংলাদেশী ইংরেজি ভাষার ব্লগ ‘bdanalytica’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধের ওয়েব লিঙ্ক শেয়ার করে জয় লিখেছেন, প্রধানত বাস এবং ট্রাকগুলিকে লক্ষ্য করে অন্তত ১১০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

‘বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা তাদের গুন্ডাদের প্রতিটি হামলার জন্য ৩ হাজার টাকা দিচ্ছে। পরিবহন খাতের দুর্দশা জীবনযাত্রার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে, কারণ, বেশি ঝুঁকির কারণে ভাড়া আকাশচুম্বী হয়েছে।’

ফারহান হোসেন লিখিত এই নিবন্ধের লিঙ্ক হলো- https://bdanalytica.com/…/the-costs-of-bnp-jamaats…/

রাজনীতি

গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সক্রিয়তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তিনি নতুন দল গঠন করছেন, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে।

যদিও এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানান দিয়েছেন হাফিজ। আবার অনেকটা ‘বোমা ফাটানো’ মন্তব্যও করেছেন বিএনপিকে নিয়ে।
মেজর হাফিজ বলেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় রাজনীতি থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তার দল। এ মন্তব্য এখন টক অব দ্য টাউন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জ্যেষ্ঠ নেতার এমন মন্তব্য বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

দল নিয়ে মন্তব্যের পাশাপাশি নিজের সক্রিয়তার ব্যাপারেও কথা বলেন হাফিজ। তথ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে নতুন করে কোনো রাজনৈতিক দল খোলা তো দূরের কথা, শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। একইসঙ্গে দলকে গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হতেও পরামর্শ দেন তিনি।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বনানীতে নিজের বাসায় ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে’ সংবাদ সম্মেলন করেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ সময় বলেন, অনেকগুলা ভুল আমরা করেছি, সেই দলীয় ভুল প্রকাশ করার জায়গা এটি না। আর এটা প্রকাশ করাও ঠিক হবে না। কিন্তু আমার তো কোনো ফোরাম নাই এবং দলে কোনো অবস্থান নাই। গত আট বছর দলে কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। কোনো নেতা নির্বাচিত হয়নি। কারণ, নেতা নির্বাচন করার সুযোগ নেই এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির বক্তব্য রাখারও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমার চোখ-কান নষ্ট না। আমি কোনো বধির স্কুলে পড়ি না। তবে জাতির স্বার্থে কিছু কিছু কথা বলতেই হয়। তবে আমার দেশ সবার উপরে। আমার নেতা জিয়াউর রহমান বলেছেন, দেশ সবার আগে। আমিও তাই মনে করি, সে জন্য দু-চারটি কথা বলছি। তবে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে।

বিএনপিতে সত্য কথা বলার মতো কোনো লোক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের সামনে সত্য বলার মতো লোক আমার সামনে পড়েনি। অনেক আগে সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন; তিনি বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। এছাড়া বাকি সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলা আর কিছু জানেন না। এই হলো বাস্তবতা।

২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার দরকার ছিল। তখন আওয়ামী লীগের অবস্থা লেজে-গোবরে ছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় দেওয়ার জন্য। কখন একজন এ আহ্বান জানায়? কারা এ ধরনের আহ্বান জানায়? আমরা সেই অবস্থার ফায়দা নিতে পারিনি। যে পথ অনুসরণ করেছি, সেই যে রাজপথে গেছি এখনো সেই রাজপথেই আছি।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই সে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা করব। তবে বিএনপির আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া উচিত। দলে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন, তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাস্তবতার কারণে এটি সম্ভব হয়নি। সুতরাং কেয়ারটেকার সরকারের ওপর জোর না দিয়ে বিকল্প খোঁজা উচিত। আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের সরকার কিছুই না।

দেশের সহিংসতা তরুণ-কিশোরদের ওপর প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রতিদিন টেলিভিশনে দেখি বাস জ্বলছে। সেটা আওয়ামী লীগের ক্যাডারও জ্বালাতে পারে আবার বিএনপি থেকেও জ্বালাতে পারে। অথবা অন্য কেউ। তবে এর দায় সম্পূর্ণ বিএনপির ওপর এসে পড়ছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেশের অভিভাবক হিসেবে সব সমস্যার সমাধান খোঁজা উচিত।

হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, আমি মনে করি বিএনপি এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই দলই ক্ষমতায় আসবে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে আদায় করতে জানতে হবে। শুধুমাত্র রাজপথে স্লোগান দিলেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে বাড়ি যাবে না। আমাদের আন্তর্জাতিক কানেকশন খুবই দুর্বল। সে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য নেতৃবৃন্দ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। অনেক সময় রাষ্ট্রদূতের কথাবার্তা এক পেশে মনে হয় এবং সেটারও কোনো বেনিফিট বিএনপি নিতে পারেনি। তবুও এখন বিএনপির উচিত কীভাবে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া যায়, সেটা চিন্তা করা। আমি আশা করি আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে মাঠে থাকবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি দলের সংস্কার করুন। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলে না। কাউন্সিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র কমিটি করবে। কেন্দ্রীয় কমিটির জেলা কমিটি করবে এবং জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি করবে এভাবে হবে। সারা পৃথিবীতে এই পদ্ধতি মানা হয়, বাংলাদেশে হয় না। জিয়াউর রহমান এই আদর্শ অনুসরণ করতেন। তবে আমরা কেন এ থেকে সরে এলাম? এখন দেশে কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে। ত্যাগী নেতারা কেন নির্বাসিত হচ্ছেন? তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ করব ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেন। সবাই আপনার অনুসারী, নিজের পকেট ভারী করার কোনো দরকার নেই। জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার ছেলে হিসেবে আপনি সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। এটা আপনারই দল, তবে এটাকে গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনা করেন।

আগামী নির্বাচনের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন মেজর হাফিজ। তিনি বলেন, তবে এটিও দিনের আলোর মতো সত্য যেকোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুষ্ঠু হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেও হবে না এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের অধীনেও হবে না।

রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ অবসরে যাওয়ার বিষয়ে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়। এখন আমার প্রায়োরিটি হলো শারীরিক সুস্থতা লাভ করা এবং চিকিৎসা করা। রাজনীতির প্রতি কোনো আগ্রহ এখন আর আমার অবশিষ্ট নেই।

গতকাল তথ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিএনপির মধ্যে একেবারেই একজন গুরুত্বহীন ব্যক্তি। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গত কয়েকদিন ধরে কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। অতি শীঘ্রই বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয়নি। মোট কথা রাজনীতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। এমন এক সময় তথ্যমন্ত্রী বলেছেন আমি একটি নতুন দল করতে যাচ্ছি। যা একদমই সঠিক নয়। আমি এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমি ৩১ বছর ধরে বিএনপির সদস্য।

তিনি আরও বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র ও ভুল বোঝাবুঝিকে আমার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আর বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছে আমার নেত্রী। তিনি যতদিন সুস্থ ছিলেন আমার কোনো সমস্যা ছিল না। এ ধরনের কোনো সংবাদ সম্মেলন আমার করতে হয়নি। আমি কমফোর্টেবলি জনগণের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেটা ক্ষমতায় থেকে বা বিরোধী দলে থেকেই হোক না কেন। তবে দুঃখের বিষয় বিগত দুবার নিজের ভোটটাও দিতে পারিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাকে আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তারপর যখন আমি পুলিশ প্রোটেকশনে আমার নির্বাচনী এলাকায় গেলাম তখন আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যরা আমার বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখেছিল। যে কারণে সেবার আমি নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। ভোট দেওয়া তো দূরের কথা ওইদিন আমাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি একটা মামলা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। এই হচ্ছে আমার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা। এমন অভিজ্ঞতা আমার মতো আরও অনেক বিরোধী দলের নেতার আছে। এরপর নির্বাচন থেকে সরে আসার পর আমার দলকে নাকি ৮০টি আসন দেবে নির্বাচনের পরে। আমি এই খবরও জানি না, আর এই ৮০ জনের মধ্যে আমি নিজেও ছিলাম না।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ১৪ নভেম্বর ২০২০ সালে আমার দল থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন আমার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ ছিল। আমি দলে সক্রিয় না, দলের কোনো কাজ করি না, সংস্কারপন্থী, আমি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম করি। এ ধরনের আজগুবি ১১টি অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম অভিযোগ ছিল- আমি শওকত মাহমুদের সঙ্গে বিজয় নগরে সরকার বিরোধী মিছিল করেছি। আমরা বিরোধী দল সরকার বিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করতেই পারি। তবে আমি এই মিছিলে কখনোই ছিলাম না। এসবে আমি কখনোই অংশগ্রহণ করিনি। তখন আমি শো-কজের লিখিত জবাবও দিয়েছি। তবে আমার বক্তব্যের জবাব দল থেকে পাইনি। জিয়াউর রহমানের সৈনিক হিসেবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগগণের সেবা করে যাব।’
‘এবার নৌকা জিতবেই’ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন এবং নর্দান রুটে এমআরটি লাইন-৫ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে তিনি তাঁর দলের

নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেওয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকে নমিনেশন দেব ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে, যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।

তিনি বলেন, এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকী। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসি এবং জঙ্গিবাদিরা ক্ষমতায় এলে এদেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বাথের্, জনগণের কল্যাণে সকলকে ঐক্যবব্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে। এই নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য তিনি সকলের প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসী মানুষের প্রতি তাঁর অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোটি পেয়েছিলাম বলেইতো এত উন্নতি হয়েছে সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন।

তিনি তাঁর দল যাকেই মনোনয়ন দেয় তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতিশ্রুতি কামনা করলে সকলে দুইহাত তুলে সমস্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি সকলের দোয়া চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐকবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসি দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।

আগুন সন্ত্রাসিদের শাস্তির আওতায় আনার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যারা এরমধ্যে জড়িত কারা হুকুমদাতা সে দেশে থাকুক আর বিদেশিই থাকুক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে বিদেশে বসে হুকুম জারি করে ঐ বিদেশ থেকে ধরে এনে ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে শান্তি দেব ঐ কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড় পাবে না।

বার বার তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টায় তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেননও বক্তৃতা করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী সভায় সভাপতিত্ব করেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মতিঝিল প্রান্তে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।

তিনি আগাঁরগাও প্রান্তে এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রো রেল যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, ডিসিসির দুই মেয়র, সংসদ সদস্যসহ উর্ধ্বতন বেসমারিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্তব্যপালনরত সাংবাদিকবৃন্দ মেট্রোরেলে তাঁর সহযাত্রী হন।

বিদেশিদের কাছে বিএনপি’র দৌড়-ঝাঁপ ও নালিশের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কথায় কথায় বিদেশের মানুষের কাছে নালিশ করে। কারণ, দেশের মানুষের কাছে ঠাঁই নাই। সেজন্য বিদেশে নালিশ করাটাই তাদের একটা বদ অভ্যেস।
আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা তা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবই, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে, রেল সংযোগসহ নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু করেছে, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ রাস্তা-ঘাট-সেতু নির্মাণ করছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে সমস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। কেননা, আগামীর বাংলাদেশ, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমাদের দেশের মানুষ উন্নত হবে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাভাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি এখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, সারাবিশে^ই এটা বেড়েছে। তার জন্য সরকার পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছে এবং ১ কোটি মানুষ এটা দিয়ে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সুলভে ক্রয় করতে পারছে। পাশাপাশি, কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গাার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বর্তমান সরকারই ’৯৬ সালে ৮শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে তিন দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩শ’ টাকা করে দিয়েছে। কিন্তু আজকে যে শ্রমিক অসন্তষ হয়েছে এতে উস্কানি রয়েছে। কেননা মজুরি বৃদ্ধির জন্য সরকার ইতোমধ্যে মজুরি কমিশন করে দিয়েছে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু, এজন্য তো ধৈর্য্য ধরতে হবে।

তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে কারখানা আপনাদের রুজি-রুটি দেয়, যেখানে শ্রম দিয়ে আপনারা পয়সা কামাই করেন, সেই কারখানা ভাংচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবেন। কেননা, আপনাদের সকল সুবিধা-অসুবিধা আমরা দেখি। সরকারের দেয়া পারিবারিক কার্ড যেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিতে পারেন এবং তা দিয়ে সুলভে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারেন তার ব্যবস্থাও সরকার করেছে।

এ সময় কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন তো কিছু করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারই।

বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার সাবধানবাণী উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটি যদি বন্ধ করতে না পারে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয় তা আমাদের জানা আছে। এটি আমরা ছাড়ব না।

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করাই যেন তাদের একটি উৎসব। এই হলো বিএনপি’র চরিত্র। আমার প্রশ্ন তারা মানুষকে ভাত দিতে পারেনি। মানুষকে ঘর দিতে পারেনি। মানুষকে কাপড় দিতে পারেনি। তাদের আমলে বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরাত। আর সেই মানুষগুলোর ওপর তারা এই অত্যাচার কীভাবে করে?

তিনি ২৮ অক্টোবর পিটিয়ে ও কুপিয়ে পুলিশ হত্যা, পুলিশ হাপসপাতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্সহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুরসহ মহিলা আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে ঢাকাবাসীসহ সমগ্র দেশবাসীর প্রতি এদের আবারো ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, দরকার হলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে।
‘এখনও দেশের মানুষ ধৈর্য্য ধরে আছে। কিন্তু এভাবে কতদিন?’ সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আজকে কোনো জিনিসপত্র-খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না। সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ আর এইদিকে জনগণের ভোট। আমার বাবা-মা ভাই, আমার ছোট রাসেলকেও তো হত্যা করেছিল। ভেবেছিল জাতির পিতার রক্তের আর কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। খালেদা জিয়া তো বলেছিল, একশ’ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ এই চার চার বার ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব।
দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ৮ লাখ ৪১ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর করে দিয়েছি। বস্তিবাসীর জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ৩শ’ পরিবার ফ্লাটে উঠেছে। হরিজনসহ নি¤œ শ্রেনী পেশার মানুষকেও ফ্লাট দেওয়া হয়েছে। বেদে, মান্তা, কুষ্ঠরোগী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগণ কেউ সরকারের এই উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে বাদ যাচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে ১০ কোটি সাধারণ মানুষ আজ উপকারভোগী।

জাতির পিতা যে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই তাঁদের একমাত্র কাজ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।