রাজনীতি

৮ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের ‘৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল সৈনিক’ আখ্যায়িত করে দেশের অব্যাহত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ।

তিনি বলেন, “আপনাদের (নতুন বিসিএস কর্মকর্তাদের) সজাগ থাকতে হবে যাতে দেশের প্রতিটি উন্নয়ন অব্যাহত ও টেকসই হয়, যার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাগণের ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি অনুষ্ঠান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫টি প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন এবং ‘গভর্ণমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস’ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর কোন চাওয়া পাওয়া নেই উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমরা চাওয়া একটাই, একটাই স্বপ্ন, যেটা আমার বাবা এদেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আর তাদের জীবন মান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটা স্থায়ী হয় চলমান থাকে, সেটাই আমার একমাত্র দাবি সবার কাছে।

তিনি বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি তাঁর থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে – আমি বলছি রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষন খাবার আছে ততক্ষণ আমরা চিন্তা করিনা।
দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ফসল ফলাবো

নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করবো। কিন্তু আমার নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।

তিনি বলেন, ৪১ এর বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখনতো আর আমরা থাকবোনা।কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আমি শুধু সেটাই চাই।

প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারি ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন কৃতি শিক্ষার্থীর হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনের মাঝে ‘মর্যাদা পদক’ বিতরণ করেন।

৬ মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫ তম বুনিয়দি প্রশিক্ষন কোর্সে তাহসিন বিনতে আনিস শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টর’স পদক লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন। এছাড়া ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারিদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন ৭৫ তম বুনিয়ানি প্রশিক্ষণ কোর্সের চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

অনুষ্ঠানে ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি পৃথক ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে-সরকারি কর্মচারি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (গভর্ণমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস), ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি কর্মচারি হাসপাতাল, নবনির্মিত টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ, নবনির্মিত কুমিল্লা সার্কিট হাউজ এবং বিপিএটিসির ১৫ তলা আধুনিক ডরমেটরি ভবন।

প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্ভিসের নবীন কর্মকর্তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করার এবং এখানে লব্ধ প্রশিক্ষণকে দেশ ও জনগণের কাজে লাগানোর আহবান জানান।

তিনি বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। কারণ তাদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝড়ানো যে উপার্জন সেই উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের সবার সবকিছু চলে। একথাটা আমাদের ভুললে চলবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা। তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তবলয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করবে তাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজাও করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে এই সব খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। কাজেই তাদেরকে কিভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের দেখতে হবে।

সরকারের বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিলের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেধা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য মেধাবিদের আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাব। কারণ এই মেধাগুলোই আমার দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে।

ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির এই যুগে বিশ্বে বাজার খুঁজে বের করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকান্ডকে টেকসই করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন প্রতিটি এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের দেখতে হবে নদী-নালা-খাল-বিল সহ জলাধারগুলো যেন সেখানে সংরক্ষিত থাকে।

দেশকে উন্নত করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও রাস্তাঘাট করার সময় সেটা যেন ঋতু বৈচিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় যাতে কোনসময় কোনকিছুতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করারও আহবান জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের ছয়টি ঋতু। বিভিন্ন ঋতুতে যে পরিবর্তন হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে কোন সময় যেন কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। আর মানুষগুলোর যেন আর্থিত স্বচ্ছলতাটা বাড়ে। কিভাবে করলে আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়বে সেটাই দেখতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটা উন্নয়ন যাতে টেকসই হয়।

সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াই ইনডেননিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথকে রুদ্ধ করেছিল। আর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল।
তিনি বলেন, সেদিন জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ। সবই হারিয়েছে। তখন ক্ষমতা দখল শুরু হয় হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে, সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে। একের পর এক, সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে এই ধরনের শাসন চলতে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি জিয়া। তাঁরা ১৯৮০ সালে লন্ডনে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন, সেই কমিটি ঢাকা আসতে চেয়েছিল, জিয়াউর রহমান তাদের ভিসা দেননি।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেকোন প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার মানসিকতা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ আমাদের শক্রু বাইরে থেকে আসতে হয়না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি বা ’৭৫ এর খুনী বা তাদের সন্তান-সন্ততিরা যারা রয়েছে এরা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবেনা বা বাধা দেবে। সেই শতবাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবেনা।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধনকালে বলেছেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব হবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের হাব হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেখেছি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন হয় যেমন একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব, এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আর এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি, পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হযরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন হাব। আমরা সেভাবেই এটাকে তৈরি করতে চাচ্ছি।’

তিনি বলেন, রিফুয়েলিংয়ের জন্য এখানে সবাই আসবে। আসলে বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে আর কক্সবাজারে নামলে তো আমাদের দীর্ঘ বালুকাময় সি বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।

প্রযুক্তি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলে মানুষের যোগাযোগ সহজ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবকিছু উন্নত করার ব্যবস্থাই তাঁর সরকার করবে। ঝরঝরে বিমানের যুগ পেরিয়ে এখন বিমানের বহরে ২১টি অত্যাধুনিক বিমান যোগ হয়েছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছে। তাছাড়া এই তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে আমাদের আড়াই হাজার নতুন পথ সৃষ্টি হবে।

দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে তাঁর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি আমাদের আশপাশের দেশ চাঁদে চলে যায়। তাই, আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো, ভবিষ্যতে আমরাও চাঁদে যাব। ভবিষ্যতে সেভাবেই আমরা স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলবো।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মাসাহিরো কোমুরা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী সাইতো তেতসু’ও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে সরকার প্রধান তৃতীয় টার্মিনাল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল-৩ প্রদক্ষিণ এবং এর বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন।

তিনি তাঁর লাগেজ চেকিংয়ের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পাস করার একটি ড্রেস রিহার্সালেও অংশ নেন এবং তাঁকে পরে বোর্ডিং পাসও দেওয়া হয়।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। এভিয়েশন খাতের আরো উন্নতি হোক। অতীতে এই খাতে উন্নয়নের এতো পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যেতে পারেন নি। আওয়ামী লীগই দিয়েছে। মানুষের মধ্যে একটা আত্মমর্যাদাবোধ তৈরি করে দিয়েছি। বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নয়নের জন্য বিমানপথ অপরিহার্য। নৌপথ, রেলপথ ও আকাশ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বিশেষকরে বিদেশের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ তার মূল পথ এবং বাহন হলো বিমান তথা আকাশ পথ। কাজেই আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমরা আরো নতুন কিছু বিমান (উড়োজাহাজ) কিনবো। এয়ারবাসের সঙ্গে এমওইউ সই হয়েছে। তারা আমাদের কিছু ঋণ ও দেবে। আন্তঃজেলায় বিমান যোগাযোগের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আমার আছে।

শাহজালালে ভবিষ্যতে যাত্রী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন রানওয়ে করার পরিকল্পনাও তাঁর সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কক্সবাজারে সমুদ্রের পানি ঘেঁষে বিমান ওঠানামা করবে সেটি তাঁর প্রবল ইচ্ছা ছিল। সেভাবেই কক্সবাজারের রানওয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কভিড-১৯’র মহামারি সত্ত্বেও শাহজালালে নির্মাণকাজ চলেছে। ৪ বছরের মধ্যে টার্মিনাল স্থাপন করেছি। জেড ফুয়েল যাতে সরাসরি শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সারাবিশ্ব চিন্তিত। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ করেছি। ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা শুরু হবে।

২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে, সে লক্ষ্য নিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন বিমানবন্দরে কোনো বোর্ডিং ব্রিজ বা পার্কিং লট কিছুই ছিল না। তাই তখন থেকেই আমরা উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম এই বিমানবন্দরের উন্নয়ন। সেই সাথে চট্টগ্রাম এবং সিলেট দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও আমরা নির্মাণ করি। সাথে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করি। ’৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল, এই সময়েই কিন্তু এই বিমানবন্দর উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি বলেন, আমাদের বিমানবন্দর সমূহকে আরও আধুনিক এবং যাতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়, তার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ, আমাদের দেশের অনেক লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করে। তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করে, আমাদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠায়। তারাও যাতায়াত করে। তাছাড়া বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান একদিকে ভারত মহাসাগর অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। সেই সাথে আমাদের বঙ্গোপসাগর এই তিন রুটের মাঝে। প্রাচীন যুগ থেকেই এই জায়গাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী। তবে এটা প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহন ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে সক্ষম হয়।

নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূ-গর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) এবং একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে।

এছাড়া, আশকোনা হাজী ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।

রাজনীতি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় অপরূপ নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন এ টার্মিনাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার আকাশপথে সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো।

কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং কথা বলেন। পরে টার্মিনালের করিডোর ঘুরে দেখেন। বিমানন্দরের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, তিনি লাগেজ চেকিং করান, বোর্ডিং পাস নেন এবং যথারীতি তিনি বিমান্দরের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে কাউন্টার পার হন। পরে তিনি প্রি বোর্ডিং সিকিউরিটি স্ক্যান করান এবং চলন্ত ওয়াকওয়ে পার হয়ে বোর্ডিং ব্রিজে যান।

বিভিন্ন স্পটে আলোকচিত্রে বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী এগুলো অবলোকন করেন। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে নানা বিষয়ে ব্রিফ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

বিমানবন্দরের এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে থার্ড টার্মিনাল প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানস্থলে পৌছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো অডিয়েন্স দাঁড়িয়ে সংগীতের সঙ্গে ঠোঁট মেলান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমান সচিব মেকাম্মেল হোসেন প্রমুখ।

পরে থার্ড টার্মিনাল, বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়নের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। বেবিচকের কার্যক্রমের ওপরও একটি ডকুমেন্টরি দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, জাপান ও জাইকার প্রতিনিধি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

অতিথিদের বক্তব্যের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে খুলেছে ঢাকার আকাশ পথে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।

জানা গেছে, সফট ওপেনিংয়ের পর বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ বিমান। এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের প্রস্তুতি হিসাবে বিমানবন্দরে চলছে মহড়া। এ টার্মিনালের একাংশে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল-৩ এর পার্কিং বে-তে প্রথমবারের মতো ফ্লাইটে যাত্রী তুলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।

সোমবার বিমানের ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটটি (বিজি-৩৭১) প্রথমবারের মতো তৃতীয় টার্মিনালের হাই-স্পিডি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে পার্কিং বে-তে প্রবেশ করে। পার্কিং বে-তে অবস্থানের পর তৃতীয় টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে ফ্লাইটে ওঠেন কাঠমান্ডুর যাত্রীরা। ফ্লাইটটি বিমানের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ‘ময়ূরপঙ্খি’ নামের একটি এয়ারক্রাফট নিয়ে পরিচালিত হয়।
বৃহস্পতিবার একইভাবে টার্মিনাল-৩ ব্যবহার করেছে বিমানের ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের আরেকটি ফ্লাইট।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর সফট ওপেনিংয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সম্পূর্ণ প্রস্তুত। টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
থার্ড টার্মিনাল প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুফিদুর রহমান বলেন, আমরা বলতে পারি তৃতীয় টার্মিনালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে একটি এভিয়েশন হাব হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম মাইলফলক।’

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আছে, স্যাংশন দিয়ে আমাদেরকে নিবৃত্ত করা যাবে না। তিনি এও বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে এবং তা বিশ্বের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

শনিবার সকালে টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানের দোখলা রেঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন এবং বন উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। টাঙ্গাইল বনবিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ভিসানীতি প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশ। আমেরিকায় কয়জন মানুষ যায়। তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কী করবে। গুলশান-বনানীর বড় লোকের ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় যায়। তারা না যেতে পারলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। দুই-একজন মন্ত্রী না যেতে পারলেও দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, আমরা জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভিসা নিয়ে আমরা আমেরিকা যেতে পারব না- এটি কোনো বিষয় না।

মন্ত্রী বলেন, আমেরিকা অর্থনৈতিক-সামরিকভাবে শক্তিশালী বড় দেশ। তাদের বিভিন্ন হুমকি, নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশকেও মোকাবিলা করতে হয়। অর্থনৈতিকভাবে যদি আমেরিকা স্যাংশন দেয়, আমরাও দেখব কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়। আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই, স্যাংশন দিয়ে আমাদেরকে নিবৃত্ত করা যাবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন রকম আন্দোলন কর্মসূচি করছে, নানা রকম হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো আবারও সহিংসতা, আগুন সন্ত্রাস ও তাণ্ডব সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোরভাবে তাদের এই অপচেষ্টাকে মোকাবিলা করবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য কোনো বিদেশি শক্তি বা দেশ যদি চেষ্টা করে- তা মোকাবিলা করার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতাসহ সব শক্তি বাংলাদেশের রয়েছে। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণকে নিয়েই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবিলা করব।

মধুপুরের বন দেশের জাতীয় সম্পদ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, এটি টাঙ্গাইলের জন্য ঐতিহ্য ও গৌরবের। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বন রক্ষা করা খুবই কঠিন। নানান কারণে বনের অনেকটা ধ্বংস হয়েছে। মধুপুরের বন রক্ষার জন্য আমরা নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যারা বন কাটত, তাদেরকে আমরা বন রক্ষার জন্য ভলান্টিয়ার করেছি। ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক হোসাইন মো. নিশাদের সভাপতিত্বে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের পরিচালক গোবিন্দ রায়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইয়াকুব আলী, পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রাজনীতি

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা দুর্নীতি, অন্যায় করেছে, বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, ব্যবসায়ী যারা চুরি করেছে, তারা এখন আতঙ্কিত। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ প্রধানমন্ত্রীর মুখে। এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন মনে হয় উন্মাদ।

শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এত মাথাব্যথা কেন? কারণ, ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে-‘যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে সেখানে তারা কাজ করতে চায়, সহযোগী হতে চায়।’ প্রধানমন্ত্রী আনন্দের সঙ্গে বলেছেন-বিদেশিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছু বলেনি।

‘বলতে হয় না, এগুলো বোঝা যায়। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তা প্রমাণিত হয়েছে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে। অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে দয়া করে বিদায় হোন। আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, তার জবাবদিহি এক সময় করতে হবে। তাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন। স্পষ্ট করে বলেছি-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। সংসদ এখন তোষামোদ করার কারখানায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের জবাবদিহিতা নেই। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন আর সংসদ সদস্যরা বলেন-আহা বেশ বেশ।

রাজনীতি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন কোন যোগ্যতা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক করা হবে জানতে চাইলে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, যোগ্যতা খুব স্বাভাবিক। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি বা আমরা এত বছর ক্ষমতায় আছি; যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছে এবং কারা আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে, আমরা সেটাই বিবেচনায় নিই। আর নিই বলেই কিন্তু আমরা নির্বাচনে জয়ী হই এবং মানুষের জন্য কাজও করতে পারি। অন্তত এটুকু বলতে পারি।’

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের যে পরিবর্তনটা, আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করতেন এবং যতগুলো দুর্যোগ এসেছে, তা মোকাবিলায়… আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। করোনার সময় তো মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, সেবা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সংসদ সদস্য এবং নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ সকলকে আমরা কাজে লাগাই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে যদি জনগণসম্পৃক্ত না হয়, দল যদি সুসংগঠিত না থাকে; কোনও সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পারি একটাই কারণে, আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ। আমরা যখনই ডাক দিয়েছি, তারা ছুটে এসেছে মানুষের পাশে। কৃষকরা ধান কাটতে পারছিলেন না, বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহযোগী সংগঠন সব নেমে গেলো, ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে তুলে দিয়ে আসলো। করোনার সময় চিকিৎসায় তাদের সহযোগিতা করলো। কাজেই মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনা করবো।’

প্রতি ছয় মাস পরপর সংসদ সদস্যদের বিষয়ে সার্ভে করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দেই, আপনার অবস্থা কিন্তু খারাপ। এই এই জায়গায়, এই এই কাজ করতে হবে। আমরা সচেতন বলেই কিন্তু ইলেকশনে আস্থা পাই, জনগণের ভোট পাই এবং জয়ী হই, সরকার গঠন করে আজ পর পর তিনবার দেশের উন্নতি করতে পেরেছি।’

সাংবাদিকদের জন্য ঘোষিত ‘নবম ওয়েজ বোর্ড’ অনেক গণমাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে দশম ওয়েজ বোর্ড ও টেলিভিশন কর্মীদের জন্য ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মসংস্থান যাতে ব্যাপকভাবে হয়, ১৯৯৬ সালে আমি সরকারে এসে টেলিভিশন-রেডিও বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সে জন্য এখন শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী ও টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এটা আমার মাথায় ছিল। অনেকে (বেসরকারি গণমাধ্যম) এটা করার সাহস পায়নি। তখন একটাই সরকারি টেলিভিশন, একটাই রেডিও ছিল।’

ওয়েজ বোর্ড গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি চ্যানেলের মালিকরা…কিছু মালিক তো এখানেও বসে আছেন। এটা তো তাদের দায়িত্ব। তারা যাদের দিয়ে কাজ করাবেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না। যাদের দিয়ে কাজ করাবেন, তাদের ভালো-মন্দটা তো দেখতে হবে। ওয়েজ বোর্ড আমরা দিয়ে দিয়েছি, সেটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের। মালিকদের আবার কমিটিও আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু বার্তা দেওয়ার দরকার, সেটা দেবো। কিন্তু এখানে যারা মালিক তাদেরই কিছু করা উচিত। সাংবাদিকদের একটা কল্যাণ ফান্ড করে দিয়েছিলাম, সেখানে অনেকেই কিছু কিছু টাকা দিয়েছে, কিন্তু সবাই তো দেয় নাই। মালিকদের বলবো, ওয়েজ বোর্ডটা কার্যকর করে দিয়ে সাংবাদিকরাও যাতে… তারা তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দেয়, কাজ করে, তাদের ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে।’

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের হুমকি জনগণের কাছে উপহাসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একের পর এক ব্যর্থ আলটিমেটামের রেশ না কাটতেই তথাকথিত এক দফার জন্য বিএনপি পুনরায় হাস্যকর আলটিমেটাম দিয়েছে! জনগণ ভুলে যায়নি, তাদের এক দফা- দশ দফা- একত্রিশ দফা চরম ব্যর্থতায় বিলীন হয়ে গেছে। তাদের ঈদের পর, পূজার পর, পরীক্ষার পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি আজ জনগণের কাছে উপহাসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’

ওবায়দুল কাদের শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ তথাকথিত রোডমার্চের নামে জনগণের কাছে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সারা বাংলাদেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের নতুন নতুন ব্রিজ, ফ্লাইওভার এবং গড়ে ওঠা নতুন শিল্পাঞ্চল ও বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে তাদের চোখ, অন্তর, বিবেক ও মস্তিষ্ক দিশেহারা হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, বিএনপির সব তর্জন গর্জন, হুংকার আষাঢ়ে গল্পের মতোই হাস্যকর। বিএনপি যতবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, জনগণ ততবারই তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ জানে বিএনপির এই আন্দোলন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তারেক রহমানকে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মসনদে বসানোর আন্দোলন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, জন্মগতভাবেই বিএনপি একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক দল, সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যাকারী দল, ভোটাধিকার হরণকারী দল। বন্দুকের নলের মুখে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, কারফিউ বহাল রেখে সংবিধান স্থগিত করে হ্যাঁ/না ভোটের প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করা, হওয়া ভবন-খোয়াব ভবন খুলে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, এতিমের টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে অর্থপাচার, বাংলাদেশকে উগ্র-সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার মধ্য দিয়ে গণবিরোধী অবস্থান ছাড়া দেশ ও জনগণের কল্যাণে বিএনপির ন্যূনতম কোনো অবদান নেই।’

তিনি বলেন, ‘কেবল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা সমালোচনা, সরকার ও দেশবিরোধী অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তিকে একত্রিত করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জনকল্যাণে কোনো আদর্শ নেই।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বিষোদগার করছে। উসকানির মাধ্যমে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশের শান্তিকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির যে কোনো ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে সংকল্পবদ্ধ।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনো খালি হাতে ফেরেন না। তিনি বাংলাদেশের জন্য সবসময় মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্বীকৃতি নিয়ে আসেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের অর্জন ছিল দুর্নীতিতে টানা পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্য, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অপর নাম।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে, বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল’ জাতিসংঘ অধিবেশনে রেজুলেশন আকারে গৃহীত হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তার অসাধারণ উদ্ভাবনী ‘কমিউনিটি ক্লিনিক সার্ভিস’ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই জাতিসংঘে দেশরত্ন শেখ হাসিনার ১৯তম গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি বিএনপির গাত্রদাহের কারণ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি বিশ্বসভায় আজ আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অসংখ্য স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য তিনি বারবার গৌরব নিয়ে এসেছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির সেই অন্ধকার যুগে আর কখনো ফিরে যাবে না। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতির এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

রাজনীতি

চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার শেষ হয় সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী রোডমার্চ কর্মসূচি। এখান থেকেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫ দিনের নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। নগরীর নূর আহমদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশে ঘটে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি। এলাকাটি কার্যত পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, রোডমার্চ ও সমাবেশ থেকে দলের প্রাপ্তি অনেক। গত কয়েক মাসের আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা এমনিতেই হয়ে উঠেছিলেন উজ্জীবিত। সর্বশেষ রোডমার্চ ও সমাবেশের পর তাদের আÍবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তারা এখন আরও বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। চট্টগ্রাম নগরীর বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করে মামলা-হামলাকে বিএনপি এখন আর ভয় করে না।

বিএনপি নেতাদের দাবি, চট্টগ্রামে রোডমার্চের শেষ সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। এটি দলের জন্য বড় প্রাপ্তি। এই সমাবেশ জানান দিয়েছে, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তারা বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতেও মুখিয়ে আছে সাধারণ মানুষ। রোডমার্চ ও সমাবেশ থেকে মানুষ সরকারকে বিদায়ের বার্তা দিয়েছে। এই সরকারকে তারা আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেখিয়ে দিয়েছে ‘লালকার্ড’। তাই কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ এবং এই কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রামের শেষ জনসভাটি সফল বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রমতে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রামের সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই তিনি চট্টগ্রামে ‘গণবিস্ফোরণ’ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন। রোডমার্চের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে মহাসচিব চট্টগ্রামের জনসভায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘পথে পথে লাখ লাখ মানুষ কুমিল্লা, ফেনী, মীরসরাই ও চট্টগ্রামের সমাবেশে অংশ নিয়েছে। শুধু একটা কথা শোনার জন্য যে, শেখ হাসিনা কবে ক্ষমতা ছাড়বে। এর বাইরে অন্য কোনো কথা মানুষ শুনতে চায় না। ওই বার্তাই আমরা রোডমার্চে নিয়ে এসেছি।’

চট্টগ্রামের সমাবেশের পর সরকারের ভিত নড়ে উঠেছে দাবি করে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনও চায় না তারা। রোডমার্চ ও চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে তারা সরকারকে তা জানিয়ে দিয়েছে। আশা করছি, সরকার লাখো মানুষের মনের ভাষা বুঝবে।’

সমাবেশে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় সাত ঘণ্টা নূর আহমদ সড়কে কিছু না খেয়ে রোডমার্চের বহরের অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল কর্মীরা। শুধু কর্মী নয়, সাধারণ মানুষও সেখানে দাঁড়িয়েছিল। কারণ সরকারের প্রতি একটা ঘৃণা চলে এসেছে মানুষের মনে। সরকারকে লালকার্ড দেখানোর জন্য তারা সেখানে এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। লালকার্ড দেখিয়েও দিয়েছে। বিএনপি কী কর্মসূচি দেয়, তা জানার অধীর আগ্রহ ছিল মানুষের। তারা বিএনপির কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং ভবিষ্যতেও আন্দোলনে থাকবে। এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন।’

চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা যে কোনো কঠোর আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত উলে­খ করে ডা. শাহাদাত বলেন, ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ হবে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় নতুন কর্মসূচি আসবে। নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা, সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবারের সমাবেশে বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছে, তারা এ ধরনের কঠোর কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুত।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে লন্ডন থেকে আজ ঢাকায় পৌঁছেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮) আজ বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী বিমানের প্রতিটি কোনায় ঘোরাফেরা করেন। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী যাত্রীদের সঙ্গে বেশকিছু সময় কাটান। এই সময় কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং তাঁর সাথে সেলফি তোলেন। কয়েকজন নারী যাত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বিমান বন্দর থেকে গণভবনে এসে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এর আগে বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে (লন্ডন সময়) যাত্রা করে।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান।

লন্ডনে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগদেন এবং বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা বিষয়ে গঠিত এপিপিজি’র সভাপতি এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি’র নেতৃত্বে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) একটি প্রতিনিধিদলসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী ১৭-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশন এবং এর ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে শেখ হাসিনা ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন।

রাজনীতি

দেশের আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে দায়িত্বহীন ও মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে তাকে একহাত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বুধবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত বিষয়ে লজ্জাহীনভাবে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। চিরাচরিত অপরাজনীতির ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও তিনি ক্রমাগত সীমাহীন মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে রাজনীতি করার কারও কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিবৃতিতে ফখরুলের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসী জানে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ মানবিকতা ও উদারতা দেখিয়ে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর জন্য এমন মানবিকতার উদাহরণ বিরল। সেই উদারতাকে মির্জা ফখরুল শুধু অসম্মানই করেননি, গোটা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত উসকানিমূলক মন্তব্যের মধ্যদিয়ে দেশের আইন, বিচার প্রক্রিয়া ও সংবিধান সম্পর্কে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য জল ঘোলা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে মির্জা ফখরুল সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন না এবং তার বিদেশ গমনে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। শেখ হাসিনা সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলার জামিন পাওয়ার পর এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তিনি বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাবলে তার সাজা বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে রাজনীতি করার কারও কোনো সুযোগ নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মতো নিকৃষ্ট মানসিকতা ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির মতাদর্শ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। বরং তিনি বারবার বিএনপির প্রতিহিংসা ও আক্রোশের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। এরপরও সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়িতে অবস্থান ও উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয় আরেকটি নেই।