রাজনীতি

বাংলাদেশে লজিস্টিকস, বন্দর, বিমান চলাচল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে খুবই আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত দেশটি।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউএই রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলি আবদুল্লাহ আল হামুদি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তার দেশের এই আগ্রহের কথা জানান।

সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ইউএই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইউএই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান।

অধ্যাপক ইউনুস বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। পুরো জাতি এতে খুবই খুশি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে ইউএই সরকার। এজন্য সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদ।

রাষ্ট্রদূত আল হামুদি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়’ পার করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ইউএই বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড ও আবুধাবি পোর্টস চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগে অত্যন্ত আগ্রহী, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, ইউএইর আরেকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান মাসদারও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিশেষত ভাসমান সৌর প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানটি ইন্দোনেশিয়ায় এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ইউএইর আরও বেশি বিনিয়োগ এবং আমিরাতের আরও বেশিসংখ্যক ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আগমনের প্রত্যাশায় রয়েছি।

রাজনীতি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবাই আমরা একমত পতিত স্বৈরাচার- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে শুভেচ্ছা মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সনাতন সম্প্রদায়ের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, নিজেদের চরিতার্থ স্বার্থ হাসিল করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। সারা দেশে সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোনো একটি ঘটনার বিচার করেনি তারা।

গত ১৫ বছরে তাঁবেদার সরকারের সময় সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষদের রাখা হয়েছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান, হিন্দুসহ সব ধর্মের মানুষ এখন আয়নাঘরের ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদের ব্যবহার করে বা কোনো ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের ও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ভবিষ্যতে সব ধর্মের মানুষ যেন তার ধর্ম নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারে তেমন একটি দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ায় অধিকার সবার।

তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা না গেলে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এ সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ সবাই আমরা একমত- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পর একটা যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি নাই। এবার ৫ আগস্টের পর আবার একটা নতুন সম্ভাবনা এসেছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আসুন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।

পতিত শক্তি নানা ধরনের উসকানি দিয়ে যাচ্ছে, কোনোভাবে এ উসকানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার দেশটা আমাদের সবার। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেই হিন্দুদের রক্ষার বহমান প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোনো মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোনো মুসলমান হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে না, এটি কে করছে? যত ধরা পড়ছে সব আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ। আমার এলাকায় হিন্দুদের যত জমি দখল করেছে সব আওয়ামী লীগের নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, মা আসেন প্রতি বছর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগস্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তা থেকে এর প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিন্তা প্রতিফলনে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদের নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোনো ভাবনা নেই এ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপিতে গোত্র ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান। এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল।

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুব্রত বড়ুয়া, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ও শ্রেণি এবং পেশাজীবীরা।

রাজনীতি

সিটি করপোরেশন-পৌরসভার মতো অপসারিত হচ্ছেন না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। যমুনা টেলিভিশনকে এ কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সাড়ে চার হাজার ইউপিতে দায়িত্বরতরাই পদে থাকছেন। প্রাথমিকভাবে প্রশাসক নিয়োগের কথা হলেও সাড়ে ৬৯ হাজার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্যের বিকল্প সরকারি কর্মকর্তা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও জানায়, সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চার হাজার ৫৭১ জন। মেম্বার বা সদস্য ৪১ হাজার ১৩৯। আর ১৩ হাজার ৭১৩ জন সংরক্ষিত সদস্য। আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে ইউপিতে অনুপস্থিত ছিল এক হাজার ৪১৬ চেয়ারম্যান। এর মধ্যে অনেকে যোগদান করায় সাড়ে ৩০০ ইউপি এখন পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসক বা কমিটির মাধ্যমে।

তবে সাড়ে ৬৯ হাজার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্যের বিকল্প সরকারি কর্মকর্তা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। সব ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হলে ৫৪ হাজারের মতো সরকারি কর্মকর্তা প্রয়োজন। যা বাস্তবে কঠিন হওয়ায় ইউপির জনপ্রতিনিধিদের বহাল রাখার পথে হাঁটছে সরকার।

বাস্তবতা স্বীকার করে সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সাড়ে ৩০০ মতো ইউপিতে দায়িত্বশীল কেউ ছিল না। সেখানে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বাতিল করলে গ্রাম পর্যায়ে সেবাপ্রাপ্তিতে ধাক্কা লাগবে। কেননা, একটি গ্রাম নিয়েও ওয়ার্ড গঠিত। সেজন্য ইউপি ভেঙে দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ব্যাঘাত হোক সেটি চায় না সরকার।

আপাতত প্রশাসক পরিচালিত সিটি-পৌরসভা-উপজেলা ও জেলা পরিষদে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে নির্বাচন কখন হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে আগে। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসক পরিচালিত হলেও স্থানীয় সরকারের সেবা নিশ্চিতে কোনো ছাড় দেবে না মন্ত্রণালয়।

রাজনীতি

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‌

এসময় তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি হিসেবে গণভবনে জাদুঘর নির্মাণ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেন।

একইসঙ্গে এখানে আয়নাঘরের একটি রেপ্লিকা নির্মাণ করতে বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সোমবার (২৮ অক্টোবর) গণভবন পরিদর্শনে গিয়ে ড. ইউনূস এ নির্দেশনা দেন। পলাতক শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর এই গণভবনে বসবাস করেছিলেন, বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে এটি দমনপীড়ন ও নৃশংস শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাদুঘরে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ইতিহাস এবং জনগণ যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, যখন তারা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল সেই‌‌ স্মৃতি সংরক্ষণ করা উচিত।

৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা গণভবনের দেয়াল ও কক্ষে গ্রাফিতি এঁকে এবং খুনি হাসিনাসহ নানা প্রতিবাদ নোট লিখে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‌‌ প্রধান উপদেষ্টা এসব নোটও সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন‌।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আয়নাঘর, যেখানে হাসিনার কুখ্যাত নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গোপনে শত শত ভিন্ন মতাবলম্বী ও বিরোধী কর্মীকে আটক রেখেছিল, তার একটি রেপ্লিকাও গণভবনের জাদুঘরে নির্মাণ করা উচিত।

তিনি বলেন, আয়নাঘর দর্শনার্থীদের গোপন বন্দিদের নির্যাতনের কথা মনে করিয়ে দেবে।

পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।

ড. ইউনূস উপদেষ্টাদের জাদুঘর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাদুঘরের জন্য প্রস্তাব চূড়ান্ত করতেও নির্দেশনা দেন তিনি।

বিপ্লবের ছাত্রনেতা ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হাসিনা শাসনের অপকর্মগুলো জাদুঘরে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা অন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। কীভাবে তারা বিপ্লব ও বিদ্রোহের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে তা জানার চেষ্টা করছি।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

রাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে ‘সাফাই’ গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তার দাবি, ঢাবির হলগুলোতে ছাত্রলীগের যে কমিটি হতো তাতে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী থাকতেন বিভিন্ন সুবিধার জন্য। আর তারাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের এসব পোস্টেড ও নন পোস্টেড নেতারা ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে না নিলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ আছে৷

সোমবার রাতে ‘একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই’ শীর্ষক শিরোনামে লেখা দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে এমন মতামত প্রকাশ করেন সারজিস।

এই সমন্বয়ক এমন সময় এ মন্তব্য করলেন যার পাঁচদিন আগেই সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা হত্যা ও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করা এবং বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সময় গত ১৫ জুলাই প্রথম শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে অনেক ছাত্রীও ছিলেন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা হাতে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় অনেককেই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। হামলার প্রতিবাদে পরদিন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শুরু হলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এরপর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শহিদ হন।

স্ট্যাটাসে সারজিস আলম বলেন, বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই। তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহবান করছি৷ এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে। যেমন- ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়, যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়, অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয়, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্নমতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে নেতা হওয়ার জন্য প্রার্থী হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলত৷

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ ভাগ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেস ছিল৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই অন্য নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি৷ এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারত না৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি ৷

১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে বলে মনে করেন সারজিস।

স্ট্যাটাসে নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কিনা৷

উত্তরে সারজিস বলেন, ফেলব না৷কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে, তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো৷

যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে৷ কারণ আপনারা চুপ ছিলেন৷ হলে ও ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি৷ ওরা যদি সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন৷ বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে৷ আর তখনো আপনি নিরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন৷

‘এই ৮০ ভাগ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে এটা কখনোই সমর্থন করি না৷ এটা হতে পারে না’৷

সারজিস বলেন, যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সব বাধা উপেক্ষা করে আমার সঙ্গে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই৷ ২৪ এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা৷ আমি তাদের পক্ষে থাকব৷ সত্য সত্যই৷ কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছেন, সেখানে অনেকের বিচার হবে। কিন্তু আমরা যদি কাজের বদলে অ-কাজে বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ি, রাজনৈতিক শূন্যতা সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করি, তাহলে তো জনগণ কথা বলা শুরু করবে।

তিনি বলেন, ‘শুধু জটিলতার পর জটিলতা তৈরি করছেন কেন আপনারা? শেখ হাসিনার দোসর তো আরও অনেকেই আছে আপনাদের মধ্যে কই, তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না। শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা এত ব্যস্ত আছেন কেন।’

সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর এতিমখানা সড়ক, গোর এ শহীদ মাজার এতিমখানার সামনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসাবিষয়ক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আলী ইমাম মজুমদার যিনি ১/১১ এর সময়েও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, শেখ হাসিনার আমলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন— তাকে আপনারা উপদেষ্টা বানিয়েছেন। এরকম তো অনেকেই রয়েছেন, এসব বিষয়ে আপনারা তো কিছু বলেন না। শেখ হাসিনার রক্তাক্ত দুঃশাসনকে যারা প্রলম্বিত করেছে, টু শব্দ যারা করেনি, যারা নিঃস্বার্থভাবে শেখ হাসিনার তাবেদারি করেছে, তারা তো এখনও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রপতি থাকলো কী থাকলো না, এইটা নিয়ে আমরা দেশে কেন জটিলতা তৈরি করছি? কেন আমরা দেশে সংকট ডেকে নিয়ে আসবো। এটা মুখ্য বিষয় নয়। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি, তার দোসরদেরও আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব।’

‘যেসব গণমাধ্যম নির্লজ্জের মতো শেখ হাসিনার পদতলে বসে চামচামি করেছে, শেখ হাসিনার প্রতিটি অপকর্মকে যারা বৈধতা দান করেছে, কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলে না। ৭১ টেলিভিশনসহ আরও বিভিন্ন টেলিভিশনে আমরা যেভাবে শেখ হাসিনার সুনাম করতে দেখেছি, সেখানে বড় বড় সাংবাদিকরা ছিলেন, মিডিয়ার অনেক নামকরা লোক ছিলেন, কই তাদের বিষয়ে তো কিছু বলছেন না? শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন।’

রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের যাত্রাপথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবদান এদেশের মানুষ ইতিহাসে লিখবে। একটা সোনালী অধ্যায় রচিত হবে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাদের এমন কিছু করা যাবে না— যাতে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল সংবিধান বহির্ভূত কোনও কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

লিফলেট বিতরণকালে বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

১৫ বছরে গড়া দেশকে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ পোস্ট করেছে দলটি।

ডিজিটাল পাঠকের জন্য পোস্ট হুবহু তুলে দেওয়া হলো- ‘১৫ বছরে গড়া দেশ খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন
সংস্কার করবেন?
আগে নিজেদের সংস্কার করুন।
এই দেশ #আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এগিয়ে গেছে
#আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আবার এগিয়ে যাবে!’

এদিকে গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ৬টার দিকে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুকে আওয়ামী লীগ একটি জরুরি ঘোষণা দিয়েছিল।

সেটিও ডিজিটাল পাঠকের জন্য ঘোষণাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‌‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলমান। অফিশিয়াল পেজে কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মসূচিরর খবর অবশ্যই গুজব। দলীয়ভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত জানানো হবে আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেউ কোনো প্রকার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। অনলাইনে প্রতিবাদ করুন সকল অন্যায়ের।’

এদিকে গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য এবং নির্বাচনে নিয়োজিত নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুদক ও মানিলন্ডারিং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম (শাহীন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে রাতের অন্ধকারে নির্বাচন আর ২০২৪ সালে নিজেদের ভেতরে পাতানো নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে প্রায় সব সংসদ সদস্য ফ্যাসিস্ট হাসিনার পছন্দের বা তার আজ্ঞাবহ লোক ছিলেন। রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে পতিত সরকারের গত ১৫ বছরে হওয়া নির্বাচনসহ সব অপকর্ম সংঘটনকারী ও তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

রাজনীতি

জামায়াতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তা যেন আওয়ামী লীগের ওপর করা না হয়’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

রোববার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াত ছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও গণঅভু্যত্থানে নিহত-আহতদের স্বজনরা অংশ নেন।

শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টের শহিদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দঁাড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর ৫ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভু্যত্থানের পর ৫০০ কিংবা ৫ জনকে হত্যা করা হয়নি। তারা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সব দেশেই বাংলাদেশিরা আছেন। যেখানেই যান আপনাদের (আ.লীগ নেতা) ধরে ফেরত পাঠাবে তারা। যেখানেই যাবেন সেখানেই ধরা হবে।

জামায়াতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ঐতিহ্যবাহী দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য হলো দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা, হত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ভোট চুরি। তারা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না বরং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনকে অবিলম্বে নিষদ্ধি করতে হবে।

সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের বিপ্লবের শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাদের হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের নির্যাতন চালিয়েছে।

শহীদ ফারহানুল ইসলামের বাবা বলেন, ফারহান ফাইয়াজ আমার একমাত্র ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি∏যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের দ্রুত বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এসএম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় গণতানি্ত্রক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদ একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ।

লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা আজ : এদিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে আজ সকালে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

রাজনীতি

আগামী ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি জানান।

রিজওয়ানা বলেন, শুধুমাত্র পলিথিনের শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হচ্ছে। কোনো সুপারশপ পলিথিন শপিং ব্যাগ সরবরাহ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সচিবালয়ের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সভায় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষ যদি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে, তাহলে উৎপাদনও বন্ধ হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। কেউ ইচ্ছে করে গাফিলতি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব বুঝে মানুষ যেন এটি থেকে সরে আসে, সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

রাজনীতি

আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার লিপ্সায় রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের সৃষ্টি করেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিশোধ নিতেই ৫ আগস্টের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যে গুম খুন লুণ্ঠন অত্যাচার নির্যাতন করেছে তার প্রতিবাদেই ৫ আগস্টের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একাত্তরের স্বাধীনতায় ঠিকই নেতৃত্ব দিয়েছিল কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের খুনের নেশা চেপে বসে। তাদের সেই পৈশাচিক তাণ্ডবের কারণেই তাদের পতন হয়েছে। জনগণের আক্রোশ থেকে বাঁচতে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

রোববার বিকালে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির (মডেল স্কুল) মাঠে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন সাঈদীপুত্র।

২০০৬ সালের রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর স্মরণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নগরকান্দা উপজেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম সাঈদী বলেন, আওয়ামী লীগের খুনিরা বিনা অপরাধে যাদের ফাঁসি দিয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার লিপ্সায় যাদের হত্যা করেছে, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। এই বাংলার মাটিতে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আগামীতে আপনারা তাদেরকেই ভোট দেবেন যারা ন্যায় ও কুরআনের পক্ষে। আপনারা তাদের পক্ষে থাকবেন যারা ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আগামীতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতে ইসলামীর পতাকা তলে আসার আহ্বান জানাই। আমরা আজীবন আপনাদের পাশে থাকতে চাই। একটি সুন্দর দেশ গড়ার জন্য আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নগরকান্দা উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মো. সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির ফরিদপুর জেলা শাখার আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও ইসলামি আলোচক অধ্যাপক মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান এবং মো. আবু হারিচ মোল্যা, দলটির নগরকান্দা উপজেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন প্রমুখ।