রাজনীতি

“সংস্কারের জন্য নির্বাচন পরে, নাকি নতুন দল গঠন করার জন্য নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে? দল তৈরি করার জন্যই নির্বাচনে বিলম্ব করা হচ্ছে।”

গত ৫ অগাস্টের পর ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ শেখ হাসিনার জায়গায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শত্রু শেখ হাসিনা থাকলেও এরপর সে জায়গায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে গেছেন।

“এই কারণেই বলা হচ্ছে ‘৭২ এর সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে দাও, জাতীয় সংগীত বাতিল কর’। বৈষম্য একটা শব্দ ব্যবহার করছে তারা, কিন্তু সেটা দূর করার ধারেকাছেও নেই তারা। সেই লড়াইও হবে। সাধারণ ছাত্ররা আর আসছে না। সেজন্য বহু দলের সঙ্গে মিলে তারা ভিতটা শক্তিশালী করতে চাচ্ছে।”

কমরেড মণি সিংহের ৩৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এই সভা হয়। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই সভা আয়োজন করে কমরেড মণি সিংহ ট্রাস্ট।

সভায় সিপিবি সভাপতি বলেন, “দেশে অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। সংস্কারের জন্য নির্বাচন পরে নাকি নতুন দল গঠন করার জন্য নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে?

“দল তৈরি করার জন্য নির্বাচনে বিলম্ব করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ছাড়া এই ফোর্স সাইজ করা যাবে না।”

শাহ আলম বলেন, “ওবায়দুল কাদেরের টোন, শেখ হাসিনার টোন এই ছেলেগুলোর মধ্যেও দেখছি। সেজন্য ইমিডিয়েট দেশকে নির্বাচনের রোডম্যাপে ঢুকায় দিতে হবে। তাহলে এরা মার্জিনালাইজ হয়ে যাবে।”

গত ১১ নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার প্রসঙ্গ টেনে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “খুবই অন্যায় কাজ। আমরা অন্যদের মতো ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না।

“মুজিবের ছবি থাকবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন মওলানা ভাসানীর ছবি, কমরেড মণি সিংহের ছবি এখানে নাই কেন? শেরে বাংলার ছবি থাকুক, জিয়াউর রহমানের ছবি থাকুক, কর্নেল তাহেরের ছবি থাকুক।”

বিশৃঙ্খল অবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার বিপ্লবী বা স্বাভাবিক সরকার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার- এই কথার মধ্য দিয়ে তাদের কাজকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

“গণতান্ত্রিক পরিবেশ করে দিতে হবে। সেটা না করে এখন আপনারা বলা শুরু করবেন মনে হয়, ‘চিরদিন দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’।

‘আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় পরিণত হয়েছে আর আফগানিস্তানও কাঁধের উপর শ্বাস ফেলছে’ মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কী সেই ফাঁদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে? এখানে জনপ্রতি আয় ১০ হাজার ডলার হয়ে লাভ কী যদি নারী স্কুলে যেতে না পারে, সংস্কৃতি বিকাশ করতে না পারে? সংস্কৃতির ওপর আঘাত কিন্তু অলরেডি তৈরি করে দিয়েছে মৌলবাদী শক্তি।”

আলোচনা সভার শুরুতে কমরেড মণি সিংহের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা।

সভা শেষে তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত ‘কমরেড মণি সিংহ: সোমেশ্বরী পাড়ের কিংবদন্তী বিপ্লবী’ নামের একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়।

১৯০১ সালের ২৮ জুলাই কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন মণি সিংহ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা এবং সিপিবির সভাপতি ছিলেন।

রাজনীতি

ছাত্রশিবিরের সবশেষ প্রকাশ্যে সদস্য সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে।

দেড় দশকের বেশি সময় পর প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

আগামী বছরের জন্য জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন নুরুল ইসলাম।

ছাত্রশিবিরের সবশেষ প্রকাশ্যে সদস্য সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে।

আওয়ামী লীগের পতন হলে সংগঠনটি প্রকাশ্যে কার্যক্রম শুরু করে; তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটি কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে।

ছাত্রশিবিরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন রাত ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।

ছাত্রশিবিরের সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি ২০২৪ সেশনের জন্য কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে নুরুল ইসলামকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনয়ন দেন।

নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এর আগে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, প্রকাশনা সম্পাদক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক, বিতর্ক সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআরএম বিভাগে এমবিএ অধ্যয়ন করছেন।

নতুন সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম এর আগে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, প্লানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট সম্পাদক, শিক্ষা সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআরএম বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন।

সকালে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, “বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। চর দখলের মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিল।

“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার কবর রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ, আধিপত্যবাদ ও দখলবাজের স্থান হবে না ইনশা আল্লাহ।”

জামায়াত আমির বলেন, “বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্র ও যুবসমাজ কোনো দুঃশাসন মেনে নেয় না, সেটা চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে প্রমাণিত হয়েছে।

“স্বাধীনতার সাফল্যকে হাইজ্যাক করে একটা রাজনৈতিক দল দেশে এক দলীয় শাসন কায়েম করে রেখেছিল। কিন্তু ছাত্রসমাজ ১৫ বছরের মাথায় তাদের সেই দুঃশাসনকে পরাজিত করে নতুন বাংলাদেশের শুভ সূচনা করেছে। বাংলাদেশে আর কোনো আধিপত্যবাদ ও দুঃশাসন এদেশের জনগণ মেনে নিবে না।”

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল নিজেদের আর সেনাবাহিনীকেই শুধু দেশপ্রেমিক বলে দাবি করে। সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে।

কিন্তু আপনারা নিজেদের যে দেশপ্রেমিক দাবি করেন, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন-৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল, আপনারা কোন কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? কোন সেক্টর কমান্ডারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন?
বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে সিলেট নগরের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে আমরা বিএনপি পরিবারে উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী তরুণ ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিগত দিনে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল। মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারত না, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারত না। রাজনৈতিক দলগুলো মিটিং মিছিল করতে পারত না। পুলিশ অনুমতি দিলেও যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হতো।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো দেশের স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করেছিল। আমাদের নেতা এম ইলিয়াস আলী দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করার কারণে হাসিনা তাকে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আমরা ভয়ঙ্কর নির্যাতন মেনে নিয়ে বুলেটের সামনে দাড়িয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা রাজপথে লড়াই করেছি। তারপরও আমরা পিছপা হইনি।

তিনি আরও বলেন, সাড়ে ১৫ বছর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলন করার ফলে জুলাই বিপ্লবে হাসিনার পতন হয়েছে। আমাদের নেত্রীকে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলেই জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন শুনছি আগামী এক বছরে মধ্যে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো- ইলিয়াস আলীকে যারা গুম করেছে, তাদের বিচার কি হবে না? যারা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে মানুষকে হত্যা-নির্যাতন করেছে তাদের বিচার কি হবে না?

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজ দেশপ্রেমিক নিয়ে কথা হয়, তাদের কথা শুনে হাসতে ইচ্ছে হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আর দেশপ্রেমিক সমার্থক। বিএনপি জাতির সকল দুর্যোগে নিজেদের চরম দুর্দিনেও মানুষের পাশে থাকে। বিগত করোনা ও বন্যার সময়ে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি মানুষের পাশে ছিল।

আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও কাতার বিএনপির সভাপতি শরিফুল হক সাজুর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছসহ আরও অনেকে।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তরুণরা সংখ্যায় বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ-২০২৪ এর উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এই ভাষণ দেন।

সংস্কারের বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এ জন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেমন ধরুন-কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এরকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে। ধরুন আমি তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে। যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি—এই হলো আমার যুক্তি। তরুণরা তাকে শক্তি যোগায়। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা তাকে এই শক্তি যোগায়। তরুণরা সংখ্যায়ও বেশী। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন কি ধরনের সুপারিশ করবেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে ঐক্যমতে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এই মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল বাংলাদেশকে মুক্ত করেনি, আমাদের স্বপ্নকেও তুমুল সাহসী করে তুলেছে। বাকহীন বাংলাদেশ জোরালো কণ্ঠে আবার কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই দৃঢ় কণ্ঠ ঐক্য গঠনে সোচ্চার হয়েছে। ঐক্য আমাদের মূল শক্তি।

জুলাই অভ্যুত্থান আমাদেরকে ঐতিহাসিক মাত্রায় বলিয়ান করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত পাঁচ মাসে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করার ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। এই ঐক্যের জোরেই এখন আমরা অসাধ্য সাধন করতে পারি। এখনই আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ। এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যেটা সকল নাগরিকের জন্য সম্পদের ও সুযোগের বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

তিনি বলেন, যত নিম্ন আয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন- প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোক, আর পুরুষই হোক তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন বা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তাই বেছে নিতে পারবেন। এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়-আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সকল অধিকার প্রদান করতে বাধ্য।

ড.ইউনূস আরও বলেন, রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার আর কোনো পরিচয় দেবার প্রয়োজন হবে না। যেখানে ব্যক্তি বন্দনার কোনো সুযোগ থাকবে না। দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রভু-ভৃত্যের কোনো সম্পর্কের সুযোগ থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদে হবো বিশ্ব নাগরিক। দেশের মঙ্গল সাধন করা যেমন হবে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব, তেমনি বিশ্বের মঙ্গল সাধন করাও আমাদের কর্তব্য, এ দায়িত্বও আমরা সমানভাবে পালন করব। আমাদের তরুণ-তরুণীরা দ্রুত এই দুই দায়িত্ব সমানভাবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি নেবে।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের যোদ্ধাদের স্মরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের সকল যোদ্ধাদের। বিশেষ করে অভিবাদন জানাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্রজনতাকে। যারা আহত হয়েছেন, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়। নতুন বাংলাদেশ গঠনে তাদের প্রেরণা ও অবদান জাতি কখনো ভুলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের রূপান্তর পর্বে প্রবেশ করার অধিকার অর্জন করেছি। এই রূপান্তর দ্রুত সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমাদেরকে সকল শক্তি নিয়োজিত করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের এই কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের লক্ষ্য হবে সকল ধরনের বৈষম্য অবসানের রাজনৈতিক আয়োজন নিশ্চিত করা, এদেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সমতা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ছাড়া জুলাইয়ের শহীদদের আত্মদান অর্থবহ হতে পারে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে আদর্শভিত্তিক সকল রকমের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে গভীর অন্ধকারের দিকে আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের পথে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ড. ইউনূস বলেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন- এই তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। পাশাপাশি আমরা ভুলতে পারি না যে, আমাদের ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশুহত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সংস্কারের কাজে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন।

তিনি বলেন, সংস্কারের কাজটা নাগরিকদের জন্য সহজ করতে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন আমরা জানুয়ারি মাসে পেয়ে যাব। প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্পকে জাতির জন্য সুপারিশ করা। যার যার ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কিভাবে রচিত হবে তা বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে দেয়া। এতে নাগরিকদের পক্ষে মতামত স্থির করা অনেকটা সহজ হবে। তবে কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই আমাকে-আপনাকে তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সব ক’টা কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে যার যাই মতামত হোক না কেন আমরা দ্রুত একটা ঐক্যমতে পৌঁছে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে চাই। আপনাদের আজকের সংলাপ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একটি প্রক্রিয়া তুলে ধরে আমাদের এই দায়িত্বকে সহজ এবং গতিময় করে দেবে আশা করছি।

উপদেষ্টা সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

রাজনীতি

সংবিধান, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচনসহ বিভিন্ন খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এলক্ষ্যে যদি আমাদের অবস্থানে কিছুটা ছাড়ও দিতে হয়, সেই ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে একমত হলে পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবার কারণ নেই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ শ্লোগানে এবং ‘ঐক্য কোন পথে’ শিরোনামে ‍দুদিনের জাতীয় সংলাপের অধিবেশন-১-এ দেওয়া বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঐক্যের কথা বললে বুঝতে হবে কী কী বিষয়ে ঐক্য চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ঐক্য প্রয়োজন, রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ঐক্য প্রয়োজন, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঐক্য প্রয়োজন। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা সংস্কারের বিষয়ে একমত হলে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নাই। কী কী সংস্কার প্রয়োজন, কে করবে, কত দিনে করবে, কীভাবে তা কার্যকর হবে, আগামী দিনগুলোতে সে সিদ্ধান্তগুলো আমাদের নিতে হবে।
এবার সংস্কারে পিছপা হলে চলবে না। আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, যাতে সংস্কারে জনমতের প্রতিফলন দেখতে পাই। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও কঠিন হবে। কারণ মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের যদি গ্যাপ থেকে যায় তাহলে বারেবারেই আমরা রাজনৈতিক অস্বস্তি ও জটিলতার মধ্যে পড়বো।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, শুধু অন্তর্বর্তী সরকারই না, এ পরিবর্তনের দায় ও দায়িত্ব আমাদের সবাইকেই নিতে হবে। কাগজে-কলমে সংস্কার করে দিয়ে গেলে হবে না, সংস্কারটির চর্চা করতে হবে যাতে মানুষ এর সুফল পায়। কেবল নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব কিছুতে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। সেটা কি সম্ভব, যতক্ষণ পর্যন্ত না মনোজগতে পরিবর্তন আসে। আমাদের এই উপলব্ধির জায়গাটা তৈরি করতে হবে যে, আমরা কেউই আসলে ক্ষমতায় যাই না, দায়িত্বে যাই। দায়িত্ব পালন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তরুণ নেতৃত্বের প্রতি তিনি সব সময়ই আস্থাশীল ও আশাবাদী জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, বড় ধরনের পরিবর্তন সেটা তারুণ্যই আনতে পারবে। কারণ তারাই নতুন করে ভাবতে শিখেছে। তারাই একটা জিনিসকে নতুন চশমা দিয়ে দেখতে শিখেছে। কিন্তু নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে তাও কিন্তু ঠিক না। পরিবর্তনটা একটা প্রক্রিয়া, কেবল আইন করে দিলেই হবে না। এই প্রক্রিয়া যাতে চালু থাকে এজন্য আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এখানে তারুণ্যের যেমন ভূমিকা আছে, অভিজ্ঞতারও একটা ভূমিকা থাকবে।

সংলাপটির আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস)। সকালে শুরু হওয়া জাতীয় সংলাপের উদ্বোধন করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীর ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ড. জাহেদ উর রহমানের সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান বিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর, শহীদ ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।

সংলাপে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা জানান, সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলো দায়ী।

একই সঙ্গে গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তারা।

এর আগে মঞ্চে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য প্রধান ফটক হলো নির্বাচন ।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে বিএনপির ভিশন ২০৩০, ২০২২ সালে প্রথমে ১০ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে আমরা প্রথম থেকেই। বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি কেন? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন হলো প্রধান ফটক, দরজা। আর এটিই ডেমোক্রেসি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো, অবশ্যই বাংলাদেশকে আমরা যেন স্বপ্নের মতো করে গড়তে পারি। ৫৩ বছর পর সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। ভালো হতো আমরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারতাম। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমিসহ আমার দল ২০১২ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। সেই সময়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে গুম করা হয়েছে, কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আমার দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাতশ’র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজারও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আয়নাঘরের কথা আপনারা সবাই জানেন। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের। এরপরও আমরা কিন্তু থেমে থাকিনি। আজ যে সোচ্চার, আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। তখন আমরা অনেককেই আমাদের সঙ্গে পাইনি, এখন তাদের দেখছি, ভালো লাগছে! আমরা আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা- এদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা হয়নি। এখানে সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই কালচার না থাকায় আমাদের বারবার বলতে হচ্ছে, এ করতে হবে, ও করতে হবে। এটা ডেমোক্রেসি, এভাবে যেতে হবে। ডেমোক্রেসি কিন্তু বারবার চর্চা প্র্যাকটিস ছাড়া গড়ে উঠবে না। হুট করে কোনোকিছু করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বা বিশেষজ্ঞ নই। আমি মাঠ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে এখানে এসেছি, তৃণমূল থেকে কাজ করেই এ পর্যায়ে এসেছি। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনোকিছু করা সম্ভব হবে না। এখানে যারা আছেন, তারা জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করার চেষ্টা করবেন।

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। সবাই সাংবিধানিকভাবে সমান। ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে আমরা বসবাস করি। কেউ যদি আপনাদের সংখ্যালঘু বলে, চিৎকার করে বলবেন, আমরা রাষ্টের নাগরিক, সবার অধিকার সমান। তিনি আরও বলেন, এদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলাম। এখনও বলছি তদন্ত করুন। দোষী প্রমাণিত হলে নিজের বিচার দাবি করছি।

শুক্রবার সকালে যশোর ঈদগাহে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, দেশে সুশাসন কায়েম করা আমাদের উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে দুই একটি জিনিস চাই। আমরা যদি দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করি- তাহলে আপনাদের অন্তরের ভালোবাসা চাই। আপনারা যেন আমাদের ভালোবাসা উপহার দেন। ভালোবাসার সঙ্গে যেন সমর্থন ও সহযোগিতা চাই। সমর্থন ও সহযোগিতার পাশাপাশি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেন আপনাদের পাশে পাই। এই জাতিকে বদলে দেওয়ার জন্য যেন আপনাদের অন্তরে একটা জায়গা চাই। এই চারটি জিনিস যদি দেশবাসী আমাদের উপহার দেয়, আমরা দেশবাসীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত ইসলামী দেশবাসীর সেবা করা সুযোগ পেলে এদেশে চাঁদাবাজির অস্তিত্ব থাকবে না। দখলদারের অস্তিত্ব থাকবে না। ঘুস থাকবে না। আমরা ফ্যাসিবাদ, সাম্রজ্যবাদের প্রশ্রয় দেবে না- এমন জাতি গড়তে চাই।

জামায়াত ইসলামীর আমির বলেন, ৫ আগস্টের আগে দেশ দুঃশাসনে পরিপূর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন দুঃশাসন জুলুম করেছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, জুলুমের কষ্ট বেশি ছিল। বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষ কল্পনা করতে পারেনি ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হবে। ফ্যাসিস্ট পতনের এই অর্জনের নেতৃত্ব আমাদের সন্তানদের। তাদের কোটা আন্দোলন কমাতে ফ্যাসিস্ট সরকার হাতুড়ি, হেলমেট বাহিনী গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমাতে চেয়েছিল। আমাদের বীরসন্তানরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের এই গৌরব, অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও।

যশোর জেলা উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন জেলা যশোর। পুরতান জেলা হিসেবে যশোরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যশোরবাসী ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। পার্ক নেই, মাঠ নেই, জলধার নেই। উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পা ছুঁয়ে নেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা ভুলে যায়। ভাবে পাঁচ বছর পর আবার পা ছুঁয়ে নিলে হয়ে যাবে। মাঝখানে তারা মানুষকে মনে রাখে না।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা যাদেরকে চোর, ডাকাত হিসেবে চিনি, তাদের সক্ষমতা কতটুকু? কিন্তু কলমের খোঁচায় যারা যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে, তারা বড় চোর-ডাকাত। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না। অন্তর্বতীকালীন সরকার অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক।

দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা চায় না। দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? হাতবদল হয়েছে। এজন্য তো এতে মানুষ শহিদ হননি। আমরা যেন শহিদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করি। এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহিদদের সঙ্গে বেইমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না। ফুটপাত, হাটঘাট, বালুমহাল, জলমহাল দখল, চাঁদাবাজিতে কোন নেতাকর্মী পা দেবেন না।

মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হত্যা মামলায় ৪০০-৫০০ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। একজন মানুষ হত্যায় এই লোক কীভাবে জড়িত থাকে?। প্রকৃত অপরাধীকে আসামিকে মামলা করুন। মামলা করে অর্থবাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে আসামি করুন, বিচার নিশ্চিত হবে।

নারীর অধিকার নিশ্চিতের কথা তুলে ধরে জামায়াতের আমীর বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে নারীর অধিকার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়। আমরা নাকি নারীদের বন্দি করে রাখব। আমরা বলতে চাই, জামায়াত ইসলাম নারীদের মায়ের জাতি হিসেবেই দেখতে চায়। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হবে। তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমির অধ্যাপক আলী আযম, সাতক্ষীরা জেলা আমির শহিদুল ইসলাম মুকুল, মাগুরা জেলা আমির এম বি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহিদ আবদুল্লাহর পিতা আবদুল জব্বার, যশোর জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল আজিজ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেরা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল কাদের প্রমুখ।

রাজনীতি

নিজেকে রংপুরের সন্তান উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমি নিজেকে রংপুরের সন্তান বলে মনে করি। কারণ জুলাই বিপ্লবের শহিদ আবু সাঈদের সাহস এবং ত্যাগ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাকে রংপুরের উপদেষ্টা হিসেবেও বিবেচনা করুন’।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে তাদেরকে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা শহিদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনের সনদপত্র এই শহিদ পরিবারের হাতে তুলে দেন।

সনদপত্রটি গ্রহণ করেন শহিদ আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহিদ আবু সাঈদের ভাতিজা মো. লিটন মিয়া।

প্রধান উপদেষ্টা শহিদ আবু সাঈদের বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

এই অনুষ্ঠানটি শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের প্রতি বর্তমান সরকারের শ্রদ্ধা এবং দায়বদ্ধতার একটি প্রতীক হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্তানে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা শাখার আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। তাদের ক্ষোভটা ছিল সাড়ে ১৫ বছর। এ সময়টায় তারা জাতির ঘাড়ে বসে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। এরা মাঝে মাঝে বলতো দেশে নাকি অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বলতাম, শান্তি তোমরা কায়েম করেছো কবরের মতো। যেখান থেকে হাসি কিংবা কান্নার শব্দ শোনা যায় না। কবরস্থানে কোনো মানুষ থাকে না। হাসি কান্নার আওয়াজ শোনা যায় না। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। তখনই তারা জানান দিয়েছিল যে ক্ষমতায় এসে খুন-গুমের রাজ্য কায়েম করবে। আমরা সেদিন আমাদের বুকের কান্না বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়তো বা পৌঁছাতে পারিনি। এরপর পেছনে বোঝাপড়া করে, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, একটি জঘন্য সরকারের হাত ধরে করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে খুনের নেশা বাস্তবায়নের কর্মসূচি হাতে নেয় আওয়ামী লীগ।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ যৌথভাবে এ সম্মেলন পরিচালনা করেন।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে গোরস্তানে পরিণত করেছিল। তাদেরকে বিদায় করতে সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি, বিদায় করতে পারিনি। আমি গর্বিত, আমাদের সন্তানেরা সে কাজটি করেছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহতায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি চা বাগান। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে নিয়ত সহি করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। সব শেষ তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান মৌলভীবাজার জেলার বিশিষ্টজন, সুধী ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, হবিগঞ্জ জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মো. আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার বিএনপি জেলা শাখার আহ্বায়ক ফয়জুল কবির ময়ুন, হেফাজতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলার সাবেক আমির মো. কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখার আমির ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমির মো. ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার আমির মো. এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমির আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমির অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমির আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমির মাও. ইসমাঈল হোসেন ও কমলগঞ্জ উপজেলা আমির মো. মাসুক মিয়া।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাধারণ মানুষ সংস্কার কী বোঝে না। তারা বোঝেন যেন তারা ভোটটা দিতে পারেন, দেশে যেন শান্তি থাকে, দাম যেন না বাড়ে, চুরি-ডাকাতি যেন না হয়, ঘুস যেন না দিতে হয়।

রোববার বিকালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছেন। মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে হিন্দু ভাইয়েরা বসে আছেন। এই দেশে নাকি আপনাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে, কারও কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। আপনারা বলেন তো এরকম কোথাও কি হয়েছে? হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই একসঙ্গে বসবাস করি।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমি পালাই না, আমি ভয় পাই না। সেই মহিলা জীবন বাঁচানোর জন্য নেতাকর্মীসহ সবাইকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছেন। এই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পরিণতি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গত ১৫ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমরা দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এটা বললে আবার কিছু কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট হন। বলেন আমরা নাকি ভোটের তাড়া দেই। ভোটের তাড়া এজন্য দেই যে, ভোট দিতে পারলে আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করতে পারব। সেই লোক সংসদে গিয়ে আমাদের জন্য ভালো কাজ করতে পারবেন, দেশকে ভালোভাবে পরিচালনা করবেন। আর এটাই আমরা চাচ্ছি। আমরা বলেছি, আমরা সংস্কার চাই। আমাদের নেত্রী ২০১৬ সালে ভিশন বাংলাদেশ ২০৩০ দিয়েছিলেন। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। ৩১ দফা তো সংস্কার।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সিনিয়র যুগ্ম- আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব আব্দুল বারি, জেলা যুবদলের সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবার রহমান প্রমুখ।

সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে জনসভাস্থল। সনাতন ধর্মালম্বী, উপজাতিসহ সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় যোগ দেন। বোদা-দেবীগঞ্জ উপজেলা ও পঞ্চগড় পৌর শাখা বিএনপি জনসভার আয়োজন করে।