রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নগরীর ধানমন্ডি ৭-এর মসজিদে এশা’র নামাজের পর উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের নামাজে জানাজায় শরিক হয়েছেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস উপদেষ্টা আজ বিকেলে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
পরে তিনি প্রয়াত উপদেষ্টাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাসান আরিফ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে নগরীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স ছিল ৮৫ বছর।

তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।

আল-আজহার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার আহ্বান প্রফেসর ইউনূসের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বপ্ন পূরণ এবং জীবনে সফল হতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ এখানে প্রাপ্ত একটি বার্তায় বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় তিনি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করায় বাংলাদেশের জনগণ আজ ব্যাংক থেকে সুফল ভোগ করছে।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাকে স্বপ্ন দেখতে হবে, যদি আপনার স্বপ্ন না থাকে তবে আপনি জীবনে সফল হবেন না।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, তার স্বপ্ন ছিল বলেই গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।

সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজ পরিবর্তনে লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক ব্যবসার বিকল্প নেই।

তার ‘থ্রি জিরো থিওরি’ সম্পর্কে নোবেল বিজয়ী বলেন, বিশ্বকে এগিয়ে নিতে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য বেকারত্ব- এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

এর আগে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. সালামা দাউদ অধ্যাপক ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড মাহমুদ সিদ্দিক।

রাজনীতি

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা জাতির স্বার্থে সাড়ে ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছি। আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরার জন্য প্রস্তুত আছি। আমাদের মধ্যে অস্থিরতা নাই যে আজকেই নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসতে হবে। যোগ্যতম সময়ে সংস্কার শেষ করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা চাই।

শুক্রবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, আল্লাহ যদি আমাদের জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করিয়ে সরকার গঠনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমরা জনগণের সেবক হব, শাসক নয়। আল্লাহ যদি আমাদের এই গদি দান করেন তাহলে এটা একটি বিরাট বোঝা হয়ে আমাদের পরীক্ষা হিসেবে ঘাড়ে আসবে। সুতরাং গদি কোনো সুখের জিনিস নয়, গদি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আমানত।

‘জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে নারীরা ঘরে বন্দি থাকবে, নারীদের বোরকা পরে চলতে হবে’- এমন একটি রটনা ছড়ানো হচ্ছে- সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যেহেতু নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখেননি, আমরা কেন তাদের বন্দি করে রাখব।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতায় আসেনি। দেশবাসী তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। তারা অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ। সরকারে থাকা কোনো ব্যক্তি নির্বাচন করতে চাইলে তাকে এই সরকার থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কোনো দলকে আমরা ক্ষমতায় বসানোর জন্য আসিনি। কোনো দলের চোখ রাঙানি বা ষড়যন্ত্রকে পাত্তা দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। তবে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট ঠেকাতে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

রাজনীতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ‘অস্পষ্ট ও ‘হতাশাজনক’-এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেবেন। সেটা তিনি দেননি। এটি আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হয়ে গেছে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই। অতি দ্রুত সেটা করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণ এবং তার প্রেস সচিবের বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২৬ সালের প্রথম অংশে নির্বাচন হবে। এরপর তার প্রেস সচিব বলেছেন, ২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার (প্রেস সচিব) এ কথা সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে। তাদের দেওয়া বক্তব্য কোনটা সঠিক, আমরা বুঝতে পারছি না।

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সভায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপদেষ্টার ভাষণের যে ব্যাখ্যা দেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সভা মনে করে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। অথচ তার প্রেস সচিব বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পরবিরোধী। বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, সেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। সভা মনে করে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য-ওই সংশোধনীতে ৫৫টি দফায় সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় এবং তফশিলে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে একদলীয় শাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রধানতম হাতিয়ারে পরিণত করা হয়। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে গণতন্ত্রকে বেহাত করে দেওয়া হয়। আদালত উন্মুক্ত আদালতে রায়ের ঘোষণার সময় কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য, পর্যবেক্ষণসহ ওই সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন। অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু রিট আবেদনকারী, সংযুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজন এবং দেশের আপামরসাধারণ আদালতের কাছে আরও বেশি কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিল। রিট আবেদনকারীরা পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা করেছিলেন। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা রিটের পক্ষে ইন্টেরভিনর হিসাবে যুক্ত হয়েছিলেন। আমরা এ রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম। সভায় অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।

রাজনীতি

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে করা যেতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড একযোগে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

জাতির উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।’

তিনি বলেন, সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।

ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ প্রসঙ্গে বড় খবর হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।

ড. ইউনূস বলেন, প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরো কঠিন হলো এ জন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।

দেশবাসী সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার সাহস করতে পারবে না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটারা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি।

তিনি আরও বলেন, নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল তারা ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভুয়া ভোটারদেরকে তালিকা থেকে বের করে দিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজনীতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে কাজে লাগিয়ে দু’দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।

আজ সোমবার বঙ্গভবনে সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা রাষ্ট্রপতির সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক দক্ষ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞসহ স্নাতক ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি রয়েছেন… এই দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারে পূর্ব তিমুর।’

বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের উন্নয়নের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহকে কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিকেলে বঙ্গভবনে পৌঁছুলে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি। পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানব সম্পদ উন্নযয়নের গুরুত্ব উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে দু’দেশের একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন।

পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তাকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, পূর্ব তিমুরের কোন প্রেসিডেন্টের এটাই বাংলাদেশে প্রথম সফর।

রাষ্ট্রপতি দু’দেশের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র দূরীকরণ, চিকিৎসা, অবকাঠামো ও মানব সম্পদ উন্নয়ন, জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি আশা করেন যে, তাঁর এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি দেশের জনগণের মধ্য যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর পূর্ব তিমুরকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম সারির দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাংলাদেশে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনস্যুলেট চালু করার উদ্যোগকেও স্বাগত জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি আশা করেন এর ফলে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বহুপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বেগবান হবে।

সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। পরে, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারবর্গকে দেওয়া এক সংবর্ধনা ও উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এবার হাসিনা পতনের পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিএনপির যে জনপ্রিয়তা- চাইলে বিএনপি দায়িত্ব নিতে পারত। কিন্তু বিএনপি বলেছে আমরা নেব না, জাতীয় সরকারেও যাব না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট লোকেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। তাদের নেতৃত্বে নির্বাচন হোক, সেই নির্বাচনে যদি জনগণ সমর্থন দেয় তাহলে বিএনপি জনগণের দায়িত্ব নেবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা নেয়নি, আমরাই দিয়েছি। বিএনপি বারবার নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে।

সোমবার বিকালে নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিজয় র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, এ দেশের ছাত্র-জনতা শ্রমজীবী মানুষ, যুবক, সাধারণ মানুষ আমরা সবাই মিলেই তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। দায়িত্ব দিয়েছি একটি নির্দিষ্ট মিশনের জন্য, একটি দায়িত্ব পালনের জন্য। তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দৈনন্দিন যেসব কাজ, জনগণের যেসব সমস্যা সেগুলো সমাধানের কাজ করবেন এবং পাশাপাশি তারা একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা যে এক দফার লড়াই শুরু করেছিলাম এবং জুলাই-আগস্টে এসে যে এক দফার লড়াইটা হলো সেটা শুধু ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য না, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ মানুষ হিসেবে আমরা যে যত যোগ্য হই বা না হই, রাজনীতিতে সবচেয়ে যোগ্য তারা যাদেরকে জনগণ সমর্থন দেয়। যাদেরকে জনগণ ভালোবাসে, যাদেরকে জনগণ দায়িত্ব দেয়। আমরা চাই জনগণ বহু বছর এই সুযোগ পায়নি, তাদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয় নাই, তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যত দ্রুত তাদের এই অধিকার দেওয়া হোক, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং এই প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।

সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিজয় র‌্যালি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সার্কিট হাউজে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রুকন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিদারুল ইসলাম রাজু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহিদুল আলম খসরু, দক্ষিণ জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কিছু সমস্যার কারণে সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন (সার্ক) সক্রিয় করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্টস (এসএফও) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসকদের সংগঠনটির সঙ্গে এ বৈঠকে যুক্ত হন ড. ইউনূস।
এ সময় তিনি সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্টসের (এসএফও) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এবিএমএফ করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।

এ সময় নিজের ছোটভাই বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, সমালোচক ও খ্যাতনামা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। ভাইয়ের ক্যান্সার শনাক্ত ও চিকিৎসার সময় তার পুরো পরিবারকে কী ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। সেসময় ডা. করিম কীভাবে তার চিকিৎসায় সাহায্য করেছিলেন সে কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ক্যানসার চিকিৎসায় যে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন, তা এখনো আমরা পাচ্ছি না। সার্ক যে ক্যান্সার চিকিৎসাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এটা অত্যন্ত জরুরি ও অনুপ্রেরণামূলক।

দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলো সার্ককে সক্রিয় করে তোলার মধ্য দিয়ে লাভবান হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কিছু ইস্যুর জন্য সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যেকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না। প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যায় যে আমরা একসঙ্গে আছি। এটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

অধ্যাপক ইউনূস আজকের কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সার্ক সক্রিয় করতে আবারও আহ্বান জানান।

রাজনীতি

মহান বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি’র এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সভায় মহান বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে যৌথসভায় গৃহীত কর্মসূচি সফল করতে ঢাকাসহ সারাদেশের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আহবান জানানো হয়েছে।

সভায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা এবং ঢাকায় আগামীকাল ১৩ ডিসেম্বর বিএনপি’র উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বেলা ২ টায় এক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯ টায় বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী মাজারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী বিএনপি’র সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে ১৫ ডিসেম্বর বেলা ২ টায় আলোচনা সভা ও ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে (সংসদ ভবন) কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে পোষ্টার প্রকাশ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজস্ব আঙ্গিকে কর্মসূচি প্রণয়ণ করে তা বাস্তবায়ন করবে। অনুরুপভাবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানস্থ কার্যালয় এবং নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

রাজনীতি

জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। বৃহস্পতিবার সকালে পৃথকভাবে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দীন অসীম এবং চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল।

জামায়াতের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।

বৈঠক প্রসঙ্গে মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা, আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা দেশকে কীভাবে দেখতে চায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।

রাজনীতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য জোর দিতে বলেন।

এছাড়া গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আলাদা-আলাদাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজকে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো হলো। তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, কোনো পরামর্শ আছে কি না- এটি জানতে চাওয়া। ’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। এই ভূমিকা ভুলে যেও না। নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। যারা নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এইটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকতত্ব ভুলে যেও না। ’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট নাকি কী এই ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কবজা করে থাকবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। আমরা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে চাই। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়। ’

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে আমরা কাজ করব। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। খুব কম জিনিস উচ্চ পর্যায়ে থাকবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন স্থায়ী হয়। ’

জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। ’

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জন কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমাদের অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বণ্টন হতো সেই দাসপ্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। ’

আজকের মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না কিংবা তাদের মনমতো শেষ পাতায় বা কোণায় ছোট করে দেয়। প্রেস উইং ওদের মতো করে চেষ্টা করছে, কাজ করছে। সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে- এটাই আমাদের নীতি। আমরা এই নীতিতে থাকব। আমি বুঝতে পারছি তোমরা কিছুটা মনক্ষুণ্ন। এটা আসলে কিছুটা মন খারাপ হওয়ার মতো যে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। চারদিকে চুরি-চামারি, ব্যাংক কাজ করে না। কমিটি অর্থনীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। আমি মনে করি এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে যারা উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদেরও ধরতে হবে। ’

‘যে ধ্বংসস্তূপে রেখে গেছে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। যেদিকে হাত দেই সেদিকেই জঞ্জাল। এই জঞ্জাল পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ’

শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কারকাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তারা জানান, দেশের মানুষ সরকারের পাশে আছে। এটি গণমানুষের সরকার। জনগণ চায় অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করে।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এই বিশ্বাস ধরে রেখো। হাতছাড়া করো না। তোমরা কখনোই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছ। দেশ বদলিয়ে ফেলেছ। তোমরাই পারবে। মানুষের আশা তোমাদের পূরণ করতে হবে। অন্তত সে পথে তোমাদের অগ্রসর হতে হবে। এক বিজয় করেছো, আরেক বিজয় আসবে। তোমরা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই। ’