রাজনীতি

টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথে কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গ্লোবাল সাউথ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। ’

শনিবার (১৭ আগস্ট) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি সামিটে যুক্ত হন ড. ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এটিই তা প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান।

আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলস্বরূপ গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ বলে তিনি দূঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা, তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়, কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সকল মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে।

কেবলমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

তৃতীয়বারের মতো গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছে ভারত। এবারের সামিটে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের নিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং মূল সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাজনীতি

দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন রিমান্ডে থাকা সদ্য বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের তিন প্রভাবশালী। তারা হলেন-সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৬ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকার পাপশ বিক্রেতা শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় এই তিন আসামি রিমান্ডে থাকলেও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিসংতা সৃষ্টির নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুরুতে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর ওপর দায় চাপালেও এখন দায় চাপাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

তারা প্রায় একই সুরে বলছেন, ‘আমরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তারা যেসব পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের দায় স্বীকার করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি গ্রেফতারকৃতরা।

রিমান্ডে থাকা আসামিরা হত্যা মামলার বাইরে কী কী তথ্য দিচ্ছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো, বিশেষ উদ্দেশ্যে আড়িপাতার যন্ত্র ক্রয়, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর কনসেপ্ট তৈরি এবং বহু মানুষকে গুম-খুন করার বিষয়ে তাদের হাত রয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

সূত্র আরও জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেসব ঘটনায় মামলা হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-শেয়ার কেলেঙ্কারি, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ-নিধন, আড়িপাতার যন্ত্র পেপাসাস সফটওয়্যার ক্রয়, আয়নাঘর কনসেপ্ট এবং অসংখ্য গুম-খুনসহ নানা আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা আসামি সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই গ্রেফতার করা হয়েছে জিয়াউল আহসানকে। তারা তিনজনই এখন নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে আছেন। এদিকে যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সেই মামলার এজাহার সংশোধন করা হচ্ছে। মামলার বাদী শনিবার সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন। পরে সেটি আদালতে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপোশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে সরাসরি তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গ্রেফতারের পর শুক্রবার জিয়াউল আহসানকে একই মামলায় আদালতে হাজির করে তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনজনই এখন ডিবি হেফাজতে পুলিশের রিমান্ডে আছেন।

সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে দুটি টিমের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি টিমে আছেন নিউমার্কেট থানার ওসির নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। তারা মূলত থানা পুলিশের সদস্য। অপর একটি টিমে আছেন ডিএমপি সদর দপ্তর এবং ডিবির কর্মকর্তারা। এই টিমটি করা হয়েছে মূলত উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। জুনিয়র টিম কেবল মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তারা মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগের বাইরে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন না। আর সিনিয়র টিমটি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কেবল মামলার বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে ডিবির বেশির ভাগ পদস্থ কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হওয়া এবং নতুন আদেশপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা এখনো যোগদান না করায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী আসামি হওয়ায় কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা কী ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আনিসুল হক বেশির ভাগ সময় হাসছেন। বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের যে গাইডলাইন দিতেন আমি সেই গাইডলাইন ফলো করেছি মাত্র। হত্যা মামলায় কেন আমাকে রিমান্ডে এনেছেন? যারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল তাদের ধরেন।’ জিয়াউল হক বলেছেন, ‘আমি তো কোনো ইউনিটের ইনচার্জ ছিলাম না। আমি সরকারে টপ অর্ডারের নির্দেশে কাজ করেছি।’ তার কাছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-এর মহাপরিচালক ছিলেন। আড়ি পেতে মানুষের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। আপনার নির্দেশেই বিরোধী মতের অনেককে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেকে।’ তখন বলেন, ‘আমি তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। যে আয়নাঘরের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমাকেও আট দিন রাখা হয়েছে। এরপর আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।’

প্রাপ্ত অভিযোগের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হন। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের মিশন বাস্তবায়ন করতে সারা দেশের র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তাকে ব্যবহার করতেন জিয়াউল আহসান। ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপ রেকর্ডের সারাংশ গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। তাতে আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ নানা কৌশলের তথ্য উঠে আসে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জিয়াউল আহসান অনেকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করতেন। বিশেষ করে বিএনপির নেতাদের কল রেকর্ড করে সেগুলো শুনতেন। কোটা সংস্কারের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ডাটা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কয়েকটি ডাটা সেন্টারে হুমকি দিয়ে বন্ধ করেন জিয়াউল আহসান।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা হবে। তারা কয়েকদিন রিমান্ডে থাকবেন। তাই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। প্রায় একই ধরনের তথ্য জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, এই মুহূর্তে ডিবিতে সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি নেই। আপনার নম্বরটা আমি সেভ করে রাখছি। রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে কোনো কিছু প্রকাশের প্রয়োজন হলে পরবর্তী সময়ে আপনাকে জানানো হবে। যে মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে মামলার বাদী আয়শা বেগম বলেন, যখন মামলাটি হয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। পুলিশ এজাহার লেখার সময় আমার ছেলে হত্যার পেছনে ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞাত কোটাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করে। অথচ আমার ছেলে মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। এজাহার লেখার পর আমাকে পড়ে শোনায়নি। ছেলে হারানোর শোকে আমি কাতর থাকায় আমার হিতাহিত জ্ঞান অনেকটা লোপ পেয়েছিল। সেই সুযোগে পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর নেয়। পরে এজাহারটি পড়ার পর ত্রুটি চোখে পড়ে।

বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হলে তিনি এজাহার সংশোধনের প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী আজ (শনিবার) থানায় গিয়ে সংশোধনী এজাহার জমা দিয়েছি। সংশোধনী এজাহারে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কথাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।

জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবল মামলার অভিযোগের বিষয়েই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার বাদী যে সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন তা ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রাজনীতি

বিশেষ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইভাবে জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ সংশোধন করেছে সরকার। একইভাবে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে।

তারা জানান, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সমস্যা হচ্ছে। কেননা জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপন করে রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে, সময়ের প্রয়োজনে, জনস্বার্থে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে।

তারা আরও জানান, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহে নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-(১) জনস্বার্থে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৩ (ক) ও ধারা ২৫ (ক)। ১৩ (ক) এ বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অথবা অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার, অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।

(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপধারা (১)-এর মাধ্যমে বর্ণিত মেয়র এবং কাউন্সিলরের অপসারণ কার্যকর করতে পারবে। ২৫(ক) এতে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে।

(২) সরকার, প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে। (৩) উপধারা (১) অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসক এবং উপধারা (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ, যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। (২) প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।

তা হলো ধারা-৩২ (ক) ও ধারা-৪২ (ক) এবং ধারা-৩২ (ক)। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৪২ (ক) অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করতে পারবে। (৩) প্রস্তাবিত ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।

তা হলো ধারা-১০ (ক) ও ধারা-৮২ (ক)। ধারা-১০ (ক) এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৮২ (ক) অনুযায়ীÑ বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।

(৪) ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো-ধারা ১৩ (ঘ) ও ধারা-১৩ (ঙ)। ১৩ (ঘ)-তে বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা এবং ১৩ (ঙ)-তে-বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতি

বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন না দিলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। অন্তর্বর্তী সরকার ‘বিশৃঙ্খল জনতার শাসনকে’ সুযোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সজীব ওয়াজেদ। শেখ হাসিনার ‘জীবন রক্ষা করায়’ ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় এ কথা বলেন। রোববার ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন’ উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল জনতার শাসন (মব রুল) চলছে। বিশৃঙ্খল জনতা যদি কাল বলে, না, আমরা অমুক ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে চাই না, তাহলে তাদের পরিবর্তন করতেই হবে।

সজীব ওয়াজেদ এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশ প্রধানসহ সরকার ও রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

নির্বাচন বিলম্বিত করলে ঝুঁকি তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছেন সজীব ওয়াজেদ। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দেওয়াটা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) জন্য সবচেয়ে বেশি মঙ্গলজনক…জনগণের কাছে বৈধতা আছে, এমন একটি বৈধ সরকার ও সত্যিকারের কর্তৃপক্ষের হাতে (ক্ষমতা) ফেরাটা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য মঙ্গলজনক)।

তিনি বলেন, এটা (দ্রুত নির্বাচন) না হলে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছেন। তারা (দেশ ছেড়ে) কোথাও যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। এটা কখনোই দেশের অন্তত অর্ধেক মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, এটা (নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা) হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংঘাত-সংঘর্ষ উসকে দেওয়ার পেছনে বিদেশি শক্তি কাজ করেছে বলেও মনে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে এমন দাবির সপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। বিদেশি শক্তির হাত প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ বলেন, কেবল কোনো গোয়েন্দা সংস্থাই অস্ত্র চোরাচালান করে এনে তা বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করতে পারে।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, তার (শেখ হাসিনার) জীবন রক্ষা করায় ও তাকে নিরাপত্তা দেওয়ায় আমি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

রাজনীতি

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন

সরকারের ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের আরও দুই উপদেষ্টা আজ শপথ গ্রহণ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ পাঠ করান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেন। আজ শপথ গ্রহণ করা দুই উপদেষ্টা হলেন-সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ১৭ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন শপথ নেন।

আরেক উপদেষ্টা নৌবাহিনীর কমান্ডো এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম (বীরপ্রতীক) এ সময় রাজধানীর বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি।

তবে সদ্য শপথ নেওয়া উপদেষ্টাদের পোর্টফোলিও পরে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন।

শপথ গ্রহণের পর দুই উপদেষ্টা গোপনীয়তার শপথে স্বাক্ষর করেন।

রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগের পর সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ওই দিন সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজ করোনি লকেটের চেম্বারের মালামাল লুট করা হয়।

সাতদিন পর লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরের দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম উদ্ধার করা এসিসহ বেশ কিছু মালামাল লকেটের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।

সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লকেট নিজেই। তিনি বলেন, রোববার দুপুরে সাইদুর রহমান বাচ্চু ভাই ও জাহিদুল ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন লুট হওয়া এসি ও একটি ফুট জার্কিং মেশিন উদ্ধার হয়েছে। পরে আমার পরিবারের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেন তারা।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পারি যে লকেট সাহেবের এসি একটি এলাকায় আছে। আমরা সেখান থেকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। এছাড়া রোববার বিকেলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছি। কানু জুয়েলার্সে গিয়ে তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নিয়েছি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, যে সমস্ত মালামাল লুট হয়েছে, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে অভিযান চালিয়ে সেই সমস্ত মালামাল উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। আজ আমি এবং জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এসিসহ বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার করে মালিকের হাতে হস্তান্তর করেছি।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি স্বার্থান্বেষী মহল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মাধ্যমে দেশে হট্টগোল উসকে দিচ্ছে অভিযোগ করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সংবাদপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবেদন আসছে। তারা কেন হামলার শিকার হবে? তারা কি দেশের নাগরিক নন? তোমরা (শিক্ষার্থীরা) দেশকে বাঁচাতে পেরেছ, সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে কি বাঁচাতে পারবে না?’

ড. ইউনূস আজ রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে তাদের বাড়িতে যান। পরে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আহ্বান জানান।

এ ধরনের হামলাকে ঘৃণ্য কাজ বলে উল্লেখ করে তিনি শিক্ষার্থীদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সংখ্যালঘু পরিবারকে যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘তোমাদের বলতে হবে, কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। তারা আমাদের ভাই, আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি, আমরা একসঙ্গেই থাকব।’

পুরো বাংলাদেশকে একটি পরিবার উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, ‘এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নেই। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে কিন্তু এত সুন্দর পরিবার নেই।’

ছাত্ররা দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন রংপুরের হাতে। তোমরা একে কোথায় নিতে চাও? যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারবে। তোমাদের সেই ক্ষমতা আছে। এটা গবেষণার বিষয় নয়। এটা তোমাদের অন্তর্নিহিত শক্তি।’

শহিদ আবু সাঈদের জীবন উৎসর্গের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবু সাঈদ এক মহাকাব্যিক চরিত্র। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে অনেক কবিতা, অনেক সাহিত্য, অনেক কিছু লেখা হবে।’

বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকরা সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তোমরা এখানে যা করেছ তা আমাদের দ্বিতীয় বিজয়। এই বিজয় উৎসব যেন আমাদের হাত ছাড়া হয়ে না যায়। কেবল তোমরাই এটা করতে পেরেছ। আমরা কেউই (বৃদ্ধরা) পারিনি।’

যৌবনের বয়সসীমা অতিক্রম করেছে এমন লোকেরা বাধা সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে ডক্টর ইউনূস তাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

যে কোনো কাজ করতে স্বপ্নের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন না থাকলে বিশৃঙ্খল কাজ হবে। তোমাদের যদি স্বপ্ন থাকে, তাহলে তোমরা স্বপ্নের পেছনে ছুটবে। দেখতে পাবে যে এটি হয়ে গেছে। প্রথমে এটা অসম্ভব মনে হবে। কাজে নামলেই দেখবে কাজ হয়ে গেছে। তোমাদের যে শক্তি আছে তা হল অসম্ভবকে সম্ভব করার শক্তি। তোমাদের সামনে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।’
তিনি যুবসমাজকে কখনো পিছপা না হওয়ার আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস আরো বলেন, দেশে ছাত্ররা যা করেছে, তা দেশের প্রবীণরা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ‘আমরা করতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তোমাদের যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, আমরা তোমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারিনি।’

তিনি শিক্ষার্থীদের এবার ব্যর্থ না হতে সতর্ক করে দেন, কেননা অনেক লোক তাদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে সচেষ্ট রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা দেশ পরিষ্কার করার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা সবকিছু পরিষ্কার করব, সবকিছু পরিষ্কার না করা পর্যন্ত আমরা স্বস্তি পাব না।’

রংপুর সার্কিট হাউসে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেকটি অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তাদের শৃঙ্খলায় ফেরার তাগিদ দেন।

সরকার দেশের নাগরিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব কিছু করবে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশকে একটি সভ্য দেশে পরিণত করতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

রাজনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে জাতিসংঘ এবং অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেবে বিএনপি।

শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এই আন্দোলনে বিজয়ের পূর্বে সরকার তার সরকারি বাহিনী দিয়ে যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে, সেই গণহত্যার ব্যাপারে আমরা প্রথম থেকে কথা বলে এসেছি এবং জাতিসংঘের উদ্বেগ ছিলো সবচেয়ে বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জাতিসংঘের কাছে এই বিষয়ে একটা নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে চিঠি দেব। আমরা এটাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকেও আমরা চিঠি দেব।

ফখরুল বলেন, আন্দোলনে সমর্থন জানানোর জন্য সংযুক্ত আবর আমিরাতে আমাদের প্রায় ৫০ জন শ্রমিককে বন্দি করে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের মুক্তির জন্যও এই সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেব। এসব চিঠি দুই একদিনের মধ্যেই দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের কাজ শুরু করেছেন। প্রথমে যেটা শুরু করেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে পুরো জাতির কাছে আশা সৃষ্টি করেছে। আপনি জানেন যে, ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য সুখবর। যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো বিচার বিভাগে সেটা থেকে অনেকাংশে মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি যে, দেশে ও বিদেশের গণমাধমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু সস্প্রদায়ের ওপরে হামলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। আমরা মনে করি এগুলো একেবারেই সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা সম্প্রদায়গতভাবে নয়, রাজনৈতিক ঘটনা।

এটার সঙ্গে আমাদেরকে (বিএনপিকে) জড়িয়ে একটা খবর পরিবেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এটার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনার সাথে বিএনপি তো জড়িত নয়ই বাংলাদেশের সুস্থ স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা একটা চক্রান্ত চলছে। অর্জিত নতুন স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নাল আবদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ও সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেবে দলটি। এছাড়া দুবাইয়ে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতেও চিঠি দেবে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব চিঠি দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলনে বিজয়ের আগে সরকার তার সরকারি বাহিনী দিয়ে যে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে সব সময় আমরা কথা বলে এসেছি। এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে চিঠি দেব। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেব। এছাড়া আন্দোলনে সমর্থন জানানোয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্তির জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেব।

শুরুতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এতে পুরো জাতির কাছে আশা সৃষ্টি করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এটা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য সুখবর। যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বিচার বিভাগে সেটা অনেকাংশে মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি যে, দেশে ও বিদেশে গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এসব বিষয়গুলো তুলে ধরছে, যা একেবারেই সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা সম্প্রদায়গতভাবে নয়, রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। এটার সঙ্গে আমাদের (বিএনপি) জড়িয়ে একটা খবর পরিবেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি তো জড়িত নয়ই, বাংলাদেশের সুস্থ স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা একটা চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের অর্জিত নতুন করে যে স্বাধীনতা সেটাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ও সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন।

রাজনীতি

ছাত্রসমাজের আন্দোলনের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান ভারতে।  এরপরই নাজেহাল হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।   বর্তমানে অনেক মন্ত্রী এমপিরা আত্মগোপনে গেছেন আবার অনেকে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।

এদিকে সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী জীবনে আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার বিকালে তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের সঙ্গে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানীর কবরে শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে এ ঘোষণা দেন।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি আজ মাওলানা ভাসানীর মাজারে এসেছি উপলক্ষ হিসেবে। লক্ষ্য হলো, ’৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যে যুদ্ধ এখানে শুরু হয়েছিল এবং আজও এই বাংলার গণমানুষের, নিপীড়িত মানুষের, অধিকারবঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে যিনি পরিচিত, সেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, তাকে আমি সমর্থন করি। তার সঙ্গে আমৃত্যু আমি থাকব। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি আর জীবনে সম্পৃক্ত হব না। মাওলানা ভাসানীর এই মাজারে দাঁড়িয়ে আমি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে টাঙ্গাইলবাসীর সমর্থনে, বাংলার মানুষের সমর্থনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

পরে তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তৃতা শেষ করে বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী আমাদের চিত্তকে শুদ্ধ করুন।’

প্রসঙ্গত, বর্ষীয়ান রাজনীতিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সভায় বক্তৃতাকালে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। সংসদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।

শনিবার লতিফ সিদ্দিকীর বক্তৃতার পর তার ভাই কাদের সিদ্দিকী বক্তৃতাকালে কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। আমি তোমাদের বলছি, আমার শেষ শ্বাস যেন রাজনীতি করতে করতেই বের হয়ে যায়।’

এ সময় তাদের ছোট ভাই কালিহাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ সিদ্দিকীসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।