সিলেট বিভাগের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। থাকলেও অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রয়েছে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে লোকবল সংকট। পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেই। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। কোনো কোনো উপজেলায় হাসপাতালও নেই। এসব কারণে বিভাগের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না। কয়েক বছর ধরে যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, লাইট, অ্যানেস্থেশিয়া মেশিন ও ডায়াটার্মি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এক্স-রে মেশিন ও ইনকিউবেটরসহ আরও অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি কাজে আসছে না।
গাইনি বিভাগে চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে। জেলার ওসমানীনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পরও গড়ে উঠেনি উপজেলা হাসপাতাল।
এ কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে এখানকার মানুষকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী অন্য উপজেলা বালাগঞ্জ হাসপাতাল অথবা সিলেট শহরে যেতে হয়।
হবিগঞ্জ জেলার ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের ২টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিকল পড়ে আছে ২টি অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনও। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও তার ফিল্ম নেই। এ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান সংকট রয়েছে। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি রুম মেরামত করে সেখানে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম।
মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এদিকে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আল্ট্রাসনো ও এক্স-রে মেশিন সচল থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ডেন্টাল মেশিনটি। জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত লোকবল নেই। অপরদিকে জনবল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় ১২ বছরেও চালু করা যায়নি চুনারুঘাট উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি ৩ বছর ধরে নষ্ট। ৪ বছর তালাবদ্ধ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাগার। সাধারণ এক্স-রে, ইউরিন টেস্ট, রক্ত, ব্লাড সুগার, হিমগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপিংসহ সাধারণ পরীক্ষা সেবা দিতে ব্যর্থ এই হাসপাতালটি। এই জেলার কুলাউড়া হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন ১৯৯৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২৬ বছর কেটে গেছে। উদ্বোধনের দিনই শুধু খোলা ছিল রুমটি।
এরপর আর রুমের দরজা খোলা হয়নি। শুধু এক্স-রে নয় ইসিজির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১৫ বছর ধরে অকেজো।
শুধু এক্স-রে মেশিন নয়, ৫ বছর ধরে আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ করার পরও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। এতে আতঙ্কে থাকতে হয় ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের।
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপ?জেলার ৫১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। রোগীদের নিুমানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। জেলার দিরাই উপজেলা হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এটিতে চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ভূতুড়ে পরিবেশ। রক্ত, ইউরিনসহ কোনো ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ঝাড়ুদাররা এ মেশিন রাখার রুমটি দখলে নিয়ে থাকছেন।