অর্থনীতি

অনেক দিন পর নিম্নমুখী পণ্যের বাজার

বহুদিন পর চালের দাম কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিকন চাল ছাড়া প্রায় সব চালের দামই নিম্নমুখী। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। শুধু চালই নয়, আটা-ময়দার দামও কমেছে। কমেছে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম। সুখবর আছে ডাল, পেঁয়াজ, আদা ও দারুচিনির দামেও। শীতের সবজির দাম কমায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

কমেছে চালের দাম

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে স্বর্ণা, চায়না, ইরি চাল (মোটা) বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি দরে, এই সপ্তাহে এই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজিতে। শুধু তাই নয়, লতা ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে। যদিও গত সপ্তাহে এই চাল ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছেন ৫৫ টাকা কেজি দরে।

টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চাল এই সপ্তাহে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পাইজাম চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা, আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, হাসকি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য ভালো মানের চিকন চাল (মিনিকেট ও নাজির) কেজিতে তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই চাল বিক্রি হয় ৭৫ টাকা কেজিতে।

নিম্নমুখী আটা-ময়দার দাম

বিগত কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়েনি। বরং ময়দার দাম কিছুটা কমে এসেছে। গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া প্যাকেট ময়দা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে।

কমেছে সয়াবিন তেলের দাম

রাজধানীর বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা লিটার। আর ১৮০ টাকা দরের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা লিটার।

তবে কোথাও কোথাও ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে আগের নির্ধারিত ১৯২ টাকাই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো এখনও নতুন দরে তেল বাজারে ছাড়েনি। তবে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতোই ১৯০ টাকা। কিছু কিছু দোকানে প্রতি লিটার ১৭৮ টাকাতেও বিক্রি করছে। গত সপ্তাহের এর দাম ছিল ১৮০ টাকা। ব্যবসায়ীরা পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ৯১০ টাকা। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯২৫ টাকা।

কমেছে পাম অয়েলের দাম

বাজারে ১৪০ টাকা লিটার সুপার পাম অয়েল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা লিটার। একইভাবে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পাম অয়েল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৪২ টাকা লিটার। এছাড়া খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকা। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে দেখা গেছে, খোলা পাম তেল নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হওয়ার কথা ১১৭ টাকায়, যা ১২০ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে ডালের দাম

গত সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া তুরস্ক ও কানাডা থেকে আমদানি করা মসুর ডাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গত সপ্তাহে যে ডাল বিক্রি হয় ১৩০ টাকা, এই সপ্তাহে সেই একই মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া মসুর ডাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

কমেছে পেঁয়াজের দাম

দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই কমেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা কেজি। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

কমেছে আদা ও দারুচিনির দাম

গত সপ্তাহের ১৬০ টাকা কেজি দরের আদা এই সপ্তাহে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর ৪৩০ টাকা কেজি দরের দারুচিনি এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের দারুচিনি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এই দারুচিনি বিক্রি হয় ৫২০ টাকা কেজি।

অবশ্য এক মাসের আগে চিনির দাম ১০৮ টাকা (প্যাকেট) নির্ধারণ করার পরও ক্রেতাদেরকে গুনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা।

সুখবর আছে সবজির বাজারেও

এদিকে কিছুটা সুখবর আছে সবজি বাজারে। শীতের প্রচুর সবজি বাজারে, সরবরাহ বাড়ায় কমেছে টমেটো, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, নতুন আলু ও গাজরের দাম।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝারি আকারের প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতিকেজি শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ২০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, গোল বেগুন বা তাল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা, করলার কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা, দেশি গাজর কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা, শালগমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে মানিকনগর এলাকার কামাল হোসেন বলেন, বিগত যেকোনও সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সবজির বাজার কিছুটা স্থির থাকলেও সব জিনিসের দাম এখনও চড়া রয়েছে।

এদিকে দাম কমেছে মাছেরও। চাষের কই, তেলাপিয়া, পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। রুই, কাতলা কার্পজাতীয় চাষের মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুব একটা হেরফের হয়নি দেশি জাতের মাছের দামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *