অর্থনীতি

অর্থ পাচার নিয়ে অনেক ‘তেলেসমাতি’ হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

“বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকাদের চেয়ে তারা বেশি স্মার্ট বলেই এত অর্থপাচার করতে পেরেছেন।”

স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন না করা, নিরীক্ষকদের দায়িত্ব যথাযথ পালন না করা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকারদের চেয়ে অর্থ পাচারকারীরা ‘বেশি স্মার্ট’ হওয়ায় দেশে অনেক ‘তেলেসমাতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়ে সোমবার অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদকর্মীদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনার ও ইআরএফ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধনে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ কার্যালয়ে ‘ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি ইন করপোরেট সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনারে অর্থউপদেষ্টা বলেন, “অর্থপাচার হয় অনেক লেয়ার তৈরি করে। অনেকবার হাতবদল হয়ে শেষ পর্যায়ে নির্দিষ্ট স্থানে যায়। তারা অনেক বেশি স্মার্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকাদের চেয়ে তারা বেশি স্মার্ট বলেই এত অর্থপাচার করতে পেরেছেন।

“তারা স্মার্ট হওয়ায় আর্থিক খাতে অনেক তেলেসমাতি হয়েছে, আমি এখন টের পাই, কী যে হচ্ছে, না হচ্ছে। এজন্য নিরীক্ষকদের আরো বেশি দায়িত্ববান ও স্বচ্ছ হতে হবে। সাংবাদিকদের সোশাল অডিটটা করতে হবে, দেখবেন সবাই ঠিকঠাক কাজটি করছে কি না। আপনারা অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখবেন সব তথ্য দেওয়া হচ্ছে কি না।”

শুধু ঘটনা প্রবাহ নয়, আর্থিক খাত নিয়ে সঠিক ও নির্ভুল বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন সরকার প্রত্যাশা করে মন্তব্য করে অর্থউপদেষ্টা বলেন, “আমাদের হাতে ম্যাজিক নেই। আমরা নেগেটিভ-পজেটিভ মিলিয়ে অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সব যে ভালো করছি তা নয়, কিন্তু অনেক বিষয়ে ভালো হয়েছে।”

সালেহউদ্দিন বলেন, “এক অনুষ্ঠানে একজন অন্তর্বর্তী সরকারকে অথর্ব-টথর্ব বলে অনেক কথা বলেছে। দিস ইজ দ্যা ন্যারেটিভ অব সাম পিপল হু আর হেল্পিং দ্য ফ্যাসিস্টস। এটা ফ্যাসিস্টদের বয়ান। এই ন্যারেটিভগুলো বলে ফ্যাসিস্টকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে।

“পড়ে তিনি আবার বলেছেন, এই সরকার টাকা পয়সা মারেনি, ব্যাংককে আরও স্টেবল করেছে, রিজার্ভ বেড়েছে। কিন্তু এভাবে তো সরকারের বিষয়ে খারাপ বার্ত দিচ্ছে ।”

দেশের বাইরে এখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘অত্যন্ত ভালো’ দাবি করে সালেহউদ্দিন বলেন, “আমি অনেক অনেক দাতাগোষ্ঠী ও বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলি। তারা বাংলাদেশকে ভালো বলছে।

“বাংলাদেশের মানুষ পরিশ্রমী, কর্মঠ। সবাই প্রত্যাশা করে, আগামীর দিনে অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে।”

সাধারণভাবে কেউ চাইলে ১০০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থও বিদেশে পাঠাতে পারেন না। কিন্তু অর্থপাচারকারিরা শত কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে পেরেছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, “আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনার প্রথম দলিল হচ্ছে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। অর্থপাচারকারীরা কি জাদু জানেন? আমি বুঝি না। তারা যে কোনো পরিমাণের অর্থ পাচার করতে পারে।”

কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছ ও সঠিক হলে ‘কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না’ মন্তব্য করে এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “নিরীক্ষা প্রতিবেদন সঠিক হলে শেয়ার বাজারের কোনো শেয়ারের দর আকাশে উঠবে না, আবার পাতালে নামবে না। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ব্যাংক সঠিকভাবে ঋণ দিতে পারবে। ব্যাংক ও এফআরসি সৎভাবে কাজ করলে আর্থিক খাতের উন্নতি হবে, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”

পরে অর্থউপদেষ্টা ইআরএফ এর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *