সরকার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার তার পেটোয়া বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। ভোলায় ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা এবং নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতাকে হত্যা করেছে। আমাদের নারী নেত্রীদেরও রেহাই দেয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে, তখন সন্ত্রাস, হত্যা, সভা পণ্ডের মাধ্যমে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে ক্ষমতায় টিকে থাকা তাদের জন্য সহজ হয়।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসব করবেন না। এভাবে দেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। নিপীড়ন-দমন করে মানুষকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পরাজিত করা হবে। পুলিশের গুলিবর্ষণ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে দলের কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মশিউর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, মিয়ানমার বোমা মেরে শেষ করে দিচ্ছে। তারা সীমান্তে বোমা মারছে। আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তারা গুলি করছে। কিন্তু সরকার নীরব। নীরব কেন? আসলে এদের (সরকার) কোমর সোজা না। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ করতে পারছে না। বিশ্ব জনমতকে একখানে আনতে পারছে না।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনও সময় আছে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বিলুপ্ত করুন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই কথা বললে তাদের গায়ে আগুন লাগে। তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। বলে আমরা তো এসবের মধ্যে নাই। কিছু দিন আগে গুমের কথা বলা হলো; তারা বলল গুম হয় না। যারা গুম হয় তারা নিজেরাই গুম হয়ে যায় অথবা ভূমধ্যসাগরে পানির নিচে গিয়ে ডুবে মরে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ঢাকায় এসে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এখানে গুম হচ্ছে।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ভয়াবহ দানবীয় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। এ সময় দলের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন তিনি।
পরে নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এভারকেয়ার হাসপাতালে দলের আহত ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও তার সহধর্মিণীকে দেখতে যান। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মোমবাতি প্রজ্বালনের নীরব কর্মসূচিও সরকারের সহ্য হলো না। তাহলে কী দাঁড়াল? এ দেশের মানুষ কথা বলতে পারবে না। আপনারা নিপীড়ন-নির্যাতন করে যাবেন আর আমরা সহ্য করতে থাকব। আমি বলতে চাই এটা আর হবে না। যথেষ্ট হয়েছে। সারা দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তারা রাজপথে নেমে এসেছে।