আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ৮ দিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এবারের কমিটিতে বেশ কয়েকটি পদে চমক রাখা হয়েছে। কয়েকজনের পদবিন্যাস করা হয়েছে। পদোন্নতির সংখ্যা কম হলেও পদক্রমে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিছু নতুন মুখও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৭৮টি পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ জনের পদ ঘোষণা করা হয় ২৪ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলনে। রোববার ফাঁকা ৩৩টি পদের মধ্যে ৩০টিতে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনটি পদ এখনো ফাঁকা আছে। এগুলো পরে পূরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় সদস্য পদে চমক রাখা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন মুখ রাখা হয়েছে কমিটিতে।
একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদেও নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে ৫১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ থাকার কথা বলা হয়েছে ৪৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ৫টি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। যেগুলো পরবর্তী সময়ে পূরণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নতুন একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা হক।
সভাপতিমণ্ডলীর নামের ক্রমে শীর্ষ স্থান দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা মোশাররফ হোসেনকে। আগে ১ নম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য শীর্ষে ছিলেন প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর ১৯ সদস্যের এখনও একটি পদ ফাঁকা আছে।
কমিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে যুগ্ম সম্পাদক পদে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগে যারা ছিলেন, তারাই আছেন। তবে পদক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে।
আগে এই পজিশনে ছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফ। তাকে দুইয়ে রাখা হয়েছে। তিনে উঠে এসেছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আর দুই থেকে চারে নেমে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সাংগঠনিক সম্পাদকের সব পদ আগেই পূরণ করা হয়েছে। আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যারা ছিলেন, তারা এবারও আছেন।
তাদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন গত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাকে বাদ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে সুজিত রায় নন্দীকে সাংগঠনিক করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ক্রীড়া সম্পাদক পদে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদে আজও কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। উপপ্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। তিনি এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের নাম জাতীয় সম্মেলনের দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রথমেই রয়েছেন আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদ। রোববার নতুন করে তিন নারীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও মাজেদা রফিকুন্নেছা।
এর মধ্যে সাদেকা হালিম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন। এর আগে তিনি তথ্য কমিশনার ছিলেন। ফারজানা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনা হয়।
মাজেদা রফিকুন্নেছা ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
নির্বাহী সদস্য
সম্মেলনের দিন ২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যের পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। রোববার ২৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে চমক রাখা হয়েছে। নবীনদের রাখা হয়েছে সদস্য পদে। মো. এ আরাফাত, তারানা হালিম ও তারিক সুজাতকে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এ আরাফাত টেলিভিশন টক শোতে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য বেশ পরিচিত। তারানা হালিম ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তারিক সুজাত জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্যরা হয়েছেন-আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বিপুল ঘোষ, দীপংকর তালুকদার, আমিনুল আলম মিলন, আখতার জাহান, ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, মেরিনা জামান, পারভীন জামান কল্পনা, সফুরা বেগম রুমি, অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত, তারানা হালিম, সানজিদা খানম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানি চিনু, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেং, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, সাঈদ খোকন, আজিজুস সামাদ ডন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি ও তারিক সুজাত।
আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ আগের কমিটিতেও এক নম্বর সদস্য পদে ছিলেন।