আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) অনেকেই এবার বাদ পড়তে পারেন।
এবার ৬০ থেকে ৮০টি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি সূত্র।
জনপ্রিয়তার ঘাটতি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্নতা এই পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, অনেকে তিনবারেরও বেশি এমপি পদে আছেন। গত দুটি নির্বাচনে (২০১৪ ও ২০১৮) দলীয় মনোনয়নে তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি। যার ফলে অনেকে প্রায় ১৫ বছর যাবত এমপি হয়ে আছেন। আর এই সময়ে অনেকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব খাটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। অনেকে নির্বাচনী এলাকায় ঠিক মতো যাননি। এলাকার জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেননি, জনস্বার্থের পরিবর্তে নিজের ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন এরকম অভিযোগও আছে অনেক এমপির বিরুদ্ধে। এর ফলে জনসাধারণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে এসব এমপিদের এবং অতীতে যে জনপ্রিয়তা ছিল সেটার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বা হারিয়েছেন কেউ কেউ।
আবার দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং তৈরির অভিযোগও রয়েছে অনেক এমপির বিরুদ্ধে। দলের মধ্যে নিজস্ব ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিষ্ঠায় নিজের পক্ষ ভারী করার চেষ্টা করেছেন তারা। যার ফলে এ গ্রুপিং তৈরি হয়েছে।
নিজের পক্ষ ভারী করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে স্বার্থের লোভে বা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যারা দলে ভিড়েছেন তারাই কোনো কোনো এমপির কাছের লোক হয়ে গেছে।
এর ফলে দলের পুরোনো নেতাকর্মী যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছেন তারা অনেকক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছেন।
গত ৫ বছরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনেও অনেক এমপির বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা, বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থন বা নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রার্থী হতে উৎসাহ জোগানো এ ধরনের অভিযোগও রয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে এদের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীও আছেন। নিজস্ব বলয়ের লোকজনকে প্রাধান্য দেওয়া গ্রুপিং তৈরি ও কোথাও কোথাও প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
এসব কারণে নিজের ব্যক্তি জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তিরও তারা ক্ষতি করেছেন।
গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়ও দলের তৃণমূলের নেতাদের কেউ কেউ এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা দলের সভাপতির কাছে ভালো ও জনপ্রিয় প্রার্থী চান যাকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।
এদিকে ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বাদ দিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা নতুন প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।
অভিযোগগুলো যাচাইবাছাই এবং সম্ভাব্য নতুন প্রার্থী নির্বাচনের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত জরিপ করিয়ে থাকেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এই জরিপ করা হয়ে থাকে। এছাড়া দলীয়ভাবেও তিনি জরিপ করান এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় গণভবনে ডেকে এনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার খোঁজখবর নেন।
যেসব আসনের এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের পরিবর্তে অন্য জনপ্রিয় প্রার্থী কে আছেন তার তথ্যও তিনি নিয়েছেন। এসব রিপোর্ট ও তথ্যগুলো যাচাই করে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
তাই এবারের মনোনয়নের ক্ষেত্রে গত দুইবারের তুলনায় অনেক বেশি পরিবর্তন আসতে পারে। এবার ৬০ থেকে ৮০টি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে।
কারণ, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। সেখানে ন্যূনতম বিতর্কিত ও কম জনপ্রিয় প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের সংসদীয় বোর্ডের (সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন) অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, দলের মনোনয়নে কিছু কিছু আসনে পরিবর্তন প্রতি নির্বাচনেই আসে। গত নির্বাচনেও পরিবর্তন করা হয়েছিলো। এবারের নির্বাচনেও পরিবর্তন আসবে। পরিবর্তন তো আসবেই, কারণ দল প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায়। পর পর তিনবার বিজয়ের পর অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তৈরি হয়েছে। যারা অনেক দিন এমপি আছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা যায়। আমাদের দলের সম্প্রতি যে বর্ধিত সভা হলো সেখানেও এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। দলের সভাপতির কাছে জরিপ রিপোর্ট আছে। এসব যাচাই বাছাই করেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।