একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন আজ রোববার শুরু হচ্ছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৪টায় অধিবেশন বসবে। এর আগে বিকাল ৩টায় কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ অধিবেশনের সময়সীমা নির্ধারণ হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শেষ অধিবেশনটি সংক্ষিপ্ত হবে। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এ অধিবেশন চলার সম্ভাবনা আছে। তবে সংক্ষিপ্ত হলেও নানা কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবারের অধিবেশন। এই অধিবেশনেই চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ-সংসদ উপনেতা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এসব পদে কারা আসছেন, তা নির্ধারণ করে স্পিকারের কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হবে। তারা স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এরপর আনা হবে শোকপ্রস্তাব। গত দুই মাসে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন, তাদের নামে শোকপ্রস্তাব আনার পর এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে প্রয়াতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হবে। তবে চলমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ায় তার জীবনী নিয়ে আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতুবি করা হবে। এ কারণে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা এবং উত্তর টেবিলে উত্থাপন হবে। এদিন জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষাসেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর প্রশ্নোত্তর রয়েছে।
সংসদ উপনেতা হিসাবে আলোচনায় মতিয়া চৌধুরীর নাম : জাতীয় সংসদের উপনেতা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগনেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য এ পদে কে আসছেন-এমন আলোচনা চলছে সর্বত্র। সরকারদলীয় সদস্যদের মধ্যেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই অধিবেশন চলাকালেই নতুন সংসদ উপনেতা নির্বাচন হবেন-এমনটাই জানা গেছে। কে আসছেন এই পদে, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। এখন সবই নির্ভর করছে সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী জানান, সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এখনো সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়নি। কে জাতীয় সংসদের উপনেতা হবেন, তা এখনো স্থির হয়নি। সংসদ চলাকালে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডাকা হলে পরে বলা যাবে।
বিরোধীদলীয় নেতাসহ তিন পদে আসবে নতুন মুখ : সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা ও চিফ হুইপ পদেও আসছে নতুন মুখ। রওশন এরশাদকে সরিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় দলটির পার্লামেন্টারি পার্টি। ওইদিন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাপার পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে দলটির ২৬ জন এমপির মধ্যে ২৩ জন জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন করে গৃহীত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।
জানা যায়, ওই চিঠির বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত জানার জন্য সংসদে কথা বলতে পারেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা। জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে স্পিকারের অনুমোদন দাবি পূরণ না হলে এর প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করতে পারেন দলীয় সংসদ-সদস্যরা। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট)-তে বলা হয়েছে, ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ-সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।’
এদিকে স্পিকারকে দেওয়া জাপার ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাও। কিন্তু আগের অবস্থান থেকে সরে রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়ায় এবং স্পিকারকে দেওয়া চিঠির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে রাঙ্গা সেই চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
জানা যায়, জাতীয় পার্টি বিষয়টি সুরাহা করতে আজ রোববার দুপুর ১টায় সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদের জন্য দলটির দুই সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ফখরুল ইমামের নাম শোনা যাচ্ছে। আজকের বৈঠকে তাদের যে কোনো একজনকে এই পদের জন্য নির্বাচিত করা হবে। আর জিএম কাদেরের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসাবে আসবে নতুন মুখ।
উত্থাপনের অপেক্ষায় ১৭ বিল : সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। এ কারণে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে এ অধিবেশন। এতে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলি) বিল-২০২২ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিল উত্থাপন হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস বিল-২০২২, বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২, বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ করপোরেশন বিল-২০২২, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২২, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বিল-২০২২, সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল- ২০২২, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২২, এভিডেন্স (সংশোধন) বিল-২০২২, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা বিল-২০২২, চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ বিল-২০২২, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিল-২০২২, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০২২, উন্নয়ন বোর্ড আইনসমূহ (রহিতকরণ) বিল-২০২২, বাংলাদেশ শিল্প নকশা বিল-২০২২, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন বিল-২০২২। এবারের অধিবেশনে ১৭টি বিল রয়েছে। এসব বিলের মধ্যে কমিটিতে পরীক্ষাধীন ৮টি, পাশের অপেক্ষায় রয়েছে ২টি এবং উত্থাপনের অপেক্ষায় ৭টি।
১ সেপ্টেম্বর সংসদের ১৯তম অধিবেশন শেষ হয়। ২৮ আগস্ট শুরু হওয়া এই অধিবেশন চলে ৫ কার্যদিবস। শুরুর দিন নতুন ডেপুটি স্পিকার হিসাবে অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে নির্বাচিত করেন সংসদ-সদস্যরা। সংবিধান অনুযায়ী একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আরেকটি অধিবেশন আহ্বানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।