এশিয়ার সঙ্গীত নিয়ে সবচেয়ে বড় আয়োজন ঐক্য-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঐতিহাসিক পদ্মা সেতুর পশ্চিমহান্তের শেখ রাসেল সেনানিবাসে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাঁকাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তারকাবহুল এই অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল আজীবন সম্মাননা। এ বছর এই সম্মাননা পেয়েছেন সঙ্গীতজ্ঞ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বরেণ্য এই শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, সনদপত্র তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, অর্থমূল্য চেক তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহীন আকতার রেনী।
এসময় রেজওনা চৌধুরী বন্যা বলেন, এমন স্বীকৃতি পেয়ে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ৷ এমন স্বীকৃতি ও সম্মান সব সময়ই আনন্দদায়ক। প্রত্যেক শিল্পীই কাজের স্বীকৃতি পেতে চায়। আজকে আমাকে যে সম্মান দেওয়া হলো এতে সৃষ্টিকতা, আমার মা-বাবা, শ্রোতা, আমার ছাত্র-ছাত্রী সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা। স্বীকৃতি ও সম্মাননা কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়। যখন এমন সম্মাননা পাই তখন ভাবি আসলে আমি এর যোগ্য কিনা! সেই যোগ্য যেন হয়ে উঠতে পারি সবসময় সেই প্রার্থনা করি।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ১৯৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বন্যার সঙ্গীত চর্চার শুরু হয় ছায়ানট থেকে। পরে তিনি ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকে সঙ্গীত নিয়েই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ধ্যানজ্ঞান। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপর শিক্ষা লাভ করেছেন। গান দিয়ে তিনি কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
কর্মজীবনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৯৯২ সালে তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’। যা দেশের অন্যম বড় ও সফল সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে এ পর্যন্ত বহু অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ‘স্বপ্নের আবেশে’, ‘সকাল সাঁঝে’, ‘ভোরের আকাশে’, ‘লাগুক হাওয়া’, ‘আপন পানে চাহি’, ‘প্রাণ খোলা গান’, ‘এলাম নতুন দেশে’, ‘মাটির ডাক’, ‘গেঁথেছিনু অঞ্জলি’, ‘মোর দরদিয়া’, ‘শ্রাবণ তুমি’ ও ‘ছিন্নপত্র’ ইত্যাদি।
সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৬ সালে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা লাভ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। এছাড়া ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতেও তিনি বেশ কিছু পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বঙ্গভূষণ। ২০১৭ সালে তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
ব্যক্তিগত জীবনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী জি এইচ চৌধুরী। বন্যার মেয়ে প্রিয়দর্শিনী, ছেলে অর্ক দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি করছেন।