পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাটের নৌকাডুবির ঘটনায় মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে আনন্দযাত্রায় নেমে এলো বিষাদের ছায়া। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে। এ ঘটনায় এই খবর লেখা পর্যন্ত স্থানীয়, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহতদের মধ্যে ১৩ জন শিশু, ৮ জন নারী ও ৪ পুরুষ রয়েছেন। এখনো ২৩ নৌকাযাত্রী নিখোঁজ আছেন বলে জানিয়েছেন মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
এ ঘটনায় নদীর পাড়ে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও বোদার উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল এখনো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মরদেহগুলো এখন নৌকাডুবির ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার ভাটিতে পাওয়া যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর আলোর স্বল্পতার কারণে উদ্ধারকাজ চালানো যাবে না বলে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন।
নৌকাডুবির ঘটনাস্থলের চারপাশে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্থানীয় সাংবাদিক বদরুল হাসান বাবু জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও নৌকা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীর কাছে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে- নৌকার যাত্রীদের দূরদূরান্ত গ্রামসহ স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। শ্যালোচালিত নৌকাটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো। কিন্তু সেখানে অন্তত শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি যাত্রা শুরু করে। নদীতে পানির স্রোত বেশি ছিল তাই নৌকাটিতে মেশিনের ফিতা ছিঁড়ে যাওয়ায় বিকট শব্দ হলে যাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ সময় নৌকাটি ভারসাম্য হারিয়ে নদীর মাঝপথে ডুবে যায়।
ঘটনার সময় একদল পুণ্যার্থী ঘাটের ওপারে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রারম্ভে মহালয়ার অনুষ্ঠানে শ্যালোইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পার হচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকাটি ঘাট ছেড়ে যাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে শ্যালোইঞ্জিনের মোটরের ফিতা ছিঁড়ে গেলে নৌকাটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে চোখের নিমিষেই ডুবে যায়। এলাকাটি অত্যন্ত দূরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে বিলম্ব হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে অনেক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করেন।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকাটি নদীর মাঝে গিয়ে ডুবে যায় এ সময় নৌকার যাত্রীরা চিৎকার দিলে নদীপাড়ের লোকজন তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন।
অপর প্রত্যক্ষদর্শী আ. হান্নান জানান, ডুবে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই সাঁতার দিয়ে তীরে উঠে আসেন। এ সময় অনেকেই নদীতে তলিয়ে যান। তলিয়ে যাওয়া নৌকার যাত্রীদের কয়েকজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা জানান, এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আরও মরদেহ উদ্ধার অভিযান চলছে। এখনো কতজন নিখোঁজ আছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, নিহতদের সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের তহবিল হতে প্রতিটি পরিবারে ২০ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।