আন্তর্জাতিক

আমরা একে অপরকে হত্যা করব ভেবেছিলাম: মেলিন্ডা গেটস

বিল এবং মেলিন্ডা গেটসের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানা যায় যে, তারা বিবাহিত জীবনে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিলেন। গেটস ফাউন্ডেশন পরিচালনার এবং করোনভাইরাস মহামারী জনিত চাপের কারণে তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে ৪৬ বছর বয়সী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস নেপাল, আইসল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের সম্মিলিত জিডিপির সমান সম্পদের মালিক হতে যাচ্ছেন। তবে ২০১৯ সাল থেকেই স্বামী বিল গেটসের (৬৫) সাথে তার দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সে সময় প্রকাশিত ‘দ্য মোমেন্ট অফ লিফট’ বইতে সে কথা জানিয়েছিলেন মেলিন্ডা। বইতে বিশ্ববরেণ্য খ্যাতিমান স্বামীর পাশাপাশি আরও দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, এটি ‘খুবই কঠিন’। তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিলের পাশে কথা বলার সময় আমার গুরুত্ব সন্ধান করার চেষ্টা করেছি। আমি আমার কন্ঠকে জোরালো করতে চেয়েছি তবে এটি শুনতে খুব কঠিন হতে পারে।’

মেলিন্ডা বলেছিলেন, বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে সহ-লেখক হিসাবে তার থাকার কথা থাকলেও সাধারণত পুরোটাই তার স্বামী লিখে দিতেন। যা তাদের ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের ক্ষেত্রে বিশেষ চাপ সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমরা একে অপরকে হত্যা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি উপলব্ধি করেছি, আমাদের বিয়েটা এখানেই শেষ হতে পারে।’

এর আগে একবার তিনি দাবি করেছিলেন যে, তিনি ‘পর্দার আড়ালে’ কাজ করতে চান। মেলিন্ডা বলেছিলেন, গেটস ফাউন্ডেশনে কীভাবে তাকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে তা নিয়ে মাঝে মাঝে স্বামীর সাথে তার ঝগড়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম যে কিছু বিষয় রয়েছে যেখানে আমার কন্ঠস্বর প্রভাব ফেলতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে আমার কথা বলা উচিত – আলাদাভাবে বা তার সাথে।’ এরপরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আমরা দুজনেই রেগে গিয়েছিলাম। এটি আমাদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা – এ জন্য নয় যে আমরা কীভাবে চুক্তিতে আসব। বরং, যখন চুক্তিতে আসতে পারব না, তখন আমরা কী করব? এবং আমরা একমত হতে অনেক সময় নিয়েছিলাম।’

প্রসঙ্গত, বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা মার্কিন সমাজকে মাতিয়ে রেখেছে। বিশ্বের ক্ষমতাশালী এবং বিত্তশালীদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অহরহ হয়ে থাকলেও গেটস দম্পতিকে নিয়ে আলোচনা থামছে না। গত সপ্তাহে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী ও জনহিতকর কাজ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী এ দম্পতির বিচ্ছেদের সংবাদ অসংখ্য মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

বিবাহবিচ্ছেদের সংবাদটি আচমকা পাওয়া গেলেও বিচ্ছেদের জন্য গেটস দম্পতি দীর্ঘদিন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাদের ছোট মেয়ের স্কুল গ্র্যাজুয়েশন না হওয়ার পর্যন্ত বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া থেকেই কেবল বিরত ছিলেন গেটস দম্পতি। মেয়ের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না করার জন্য তাদের এ প্রয়াস ছিল বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।

শনিবার পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করা তথ্য সূত্রের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অনেক কারণ গেটস দম্পতির বিচ্ছেদের পেছনে কাজ করেছে। যদিও এসব কারণের কোনো বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। গত সোমবার সিয়াটলের আদালতে মেলিন্ডা গেটস (৫৬) বিচ্ছেদের জন্য দায়ের করা মামলায় বলেছেন, তাদের বিয়ে অপ্রতিরোধ্যভাবে ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদসংক্রান্ত একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানানো হলেও সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কোন প্রাক্‌-চুক্তি তাদের মধ্যে নেই বলেই সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। গেটস-মেলিন্ডার মধ্যে কোনো প্রাক্‌-বৈবাহিক চুক্তি ছিল না। আমেরিকার আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রাক্‌-চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদপরবর্তী সম্পদের বণ্টন নিয়ে আগাম চুক্তি করা হয়ে থাকে। সম্পদশালী লোকজন এমন প্রাক্‌-চুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য দাম্পত্য ভাঙনের পর নিজদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার আগাম ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। গেটস দম্পতি তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণায় জানিয়েছেন, যৌথভাবেই তারা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *