নরসিংদী: দীর্ঘ ২৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খাঁন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইটাখোলা চত্বরে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
ওই সভায় হারুনুর রশিদ খাঁন বলেন, ‘শিবপুরের সব অপকর্মের হোতা হলো আসাদুজ্জামান আসাদ ও জুনায়েদ হক ভূইয়া জুনো। সব পেশাদার খুনি, সন্ত্রাসী তারা লালন-পালন করেন। তারা সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। ইয়াবা ব্যবসা, জমি দখলসহ সব অপরাধ তারা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমার বিশ্বাস আমাকে হত্যার পরিকল্পনাকারীর ভূমিকায় তারা রয়েছেন। তাদের বিচার যেন আইনগতভাবে হয় আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। ’
জুনায়েদ হক ভূইয়া জুনো স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহনের ছোট ভাই এবং জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। আসাদুজ্জামান আসাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় রাজনীতিতে এমপি মোহনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।
হারুনুর রশিদ খাঁন বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমার এ ঘটনার পর পুটিয়া বাজারের ইজারা কেন্দ্র করে নাকি আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব। বাজারের ইজারা নিয়ে আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার।
তিনি বলেন, শিবপুর থানার পাশে আমার বাসা। সেখানে আমাকে গুলি করে হত্যা করার দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে তারা কার বলে বলিয়ান হয়ে এ কাজ করেছে, তারা কার সঙ্গে চলাফেরা করেছে সবাই জানেন। তারা আমার উপজেলা নির্বাচন করেনি, মোহন সাহেবের এমপি নির্বাচন করেছে। তারা আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য না। তারপরও পুটিয়া ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রদর্শন করেছেন তারা। কি কারণে কার মাধ্যমে করেছে তা সবাই জানেন।
হারুনুর রশিদ খাঁন স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহনের উদ্দেশে বলেন, এ হত্যা চেষ্টা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাকে হত্যার চেষ্টায় যারা জড়িত তাদের নিয়ে সংসদ সদস্য ঘুরাফেরা করেন।
একই সঙ্গে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এমপি মোহনের ব্যক্তিগত কার্যালয় পুড়িয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, মোহনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন হারুনুর রশিদ খাঁন। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেলেন গুলি। আর পেলেন উপজেলা নির্বাচনে বিরোধিতা।
তিনি বলেন, হারুনুর রশিদ খাঁনকে মারার জন্য যারা গুলি করেছে তাদের এমপি মোহনের ভাই জুনু দীর্ঘদিন ধরে লালন পালন করেছে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, প্রতিহিংসা কেন থাকবে?
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ভূইয়া রাখিল বলেন, আমার রাজনীতি জীবনে আমি স্বচ্ছ রাজনীতি করি, অস্বচ্ছ রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি পরিচ্ছন্ন বাবার সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাবা হিসেবে জানি। কোনো অপশক্তির জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না। ওনার হামলায় দলের কেউ যদি জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মুহসীন নাজির বলেন, হামলায় জড়িত ও মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছি। হামলায় দলের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুহসীন নাজিরের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম মাহবুবুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভুইয়া, আমিরুল ইসলাম ভুইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল কবির শাহিদ, কোষাধ্যক্ষ মাহফুজুল হক টিপু, শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন ভুইয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুর রশিদ খাঁন তাপস বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ জন।