কুমিল্লার ঘটনায় ‘ইন্ধনদাতারাই’ ইকবালকে কক্সবাজার ‘পাঠিয়েছে’ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটনা ঘটিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানোর ‘অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার মিন্টো রোডের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কুমিল্লার ঘটনায় সরকারকে দোষারোপ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগের দিন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার ইকবাল ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’।
এর জবাব দিতে গিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রথম থেকেই মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্যের ধরণ হচ্ছে, ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ এবং মনে হচ্ছে তিনিই ভালো বলতে পারবেন ইকবালকে কারা কক্সবাজারে পাঠিয়েছে।
“যারা এ ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে, তারাই ইকবালকে কক্সবাজার পাঠিয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটনা ঘটিয়ে আবার বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে।”
দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি মন্দিরে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
এরপর গত কয়েক দিনে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে।
এর মধ্যে কুমিল্লার পুলিশ বুধবার নানুয়া দীঘির পাড়ের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামে ওই যুবককে শনাক্তের কথা জানায়। এরপর বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।
এ ঘটনায় সরকার ‘কঠোর এবং দ্রুততম সময়ে’ ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘পাশে দাঁড়িয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার রাজনৈতিক, হীন উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং সরকার দ্রুততম সময়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
“একশর বেশি মামলা হয়েছে, কয়েকশ জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে এসেছিল তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে বাকি তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনার জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “মির্জা ফখরুল সাহেবের কথা শুনে মনে হয়, কুমিল্লার ঘটনা কীভাবে ঘটানো হয়েছে, তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেই ভালো জানা যাবে।”
একইসাথে কম সময়ের মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের পুড়িয়ে দেওয়া ঘর মেরামত, নতুন ঘর নির্মাণ এবং সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথাও জানান হাছান মাহমুদ।
“সরকার যখন দ্রুততম সময়ে এসকল ব্যবস্থা নিয়েছে, তখন বিএনপি-জামায়াতসহ ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এবিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও আমাদের চেতনার বেদিমূলে আঘাত।
“আমরাও এর প্রতিবাদ জানাই ও প্রতিকারে সচেষ্ট। কিন্তু প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জনগণ যেন ভোগান্তির শিকার না হয় এবং আবেগতাড়িত হলেও যেন কারো বক্তব্য বাস্তবতা বিবর্জিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”