যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস আইনসভা বা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছে ট্রাম্পপন্থী সমর্থকরা। ভবনের ভিতরে সংঘর্ষে গুলিতে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
সংঘর্ষের কারণে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ জারির নির্দেশ দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন নারী আছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তাকে গুলি করলে তিনি মারা যান। বাকি ৩ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
তিনি জানান, তারা ৫২ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। তাদের মধ্য ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে।
হোয়াইট হাউজ এবং পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে এবং এর আশেপাশের রাজ্যে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই হাজার ৭০০ এর বেশি নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য দেশটির আইন প্রণেতারা যখন অধিবেশনে বসেছিলেন এসময় ট্রাম্পের শত শত সমর্থক ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটল ভবনের দরজা জানালায় ভাংচুর চালায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে একপ্রকার ক্যাপিটল দখল করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ ক্যাপিটল ভবনে জারি করে লকডাউন। তবে শেষমেশ বিক্ষোভকারীদের হটাতে সক্ষম হয় পুলিশ।
আন্দোলনকে উস্কে দেয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ফেসবুক ও টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টের মাধ্যমে সহিংসতা উস্কে দেয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ করছে ব্যবহারকারীরা। এজন্য ট্রাম্পের টুইটার ১২ ঘণ্টা এবং ফেসবুক ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে টুইটার এক্ষেত্রে আরও কঠোর বার্তা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি ট্রাম্প বিতর্কিত টুইটগুলো মুছে না ফেলে তবে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট সবসময়ের জন্য মুছে ফেলা হবে।
অপরদিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের পোস্ট সরানোর বিষয়ে বিবিসিকে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে সহিংস বিক্ষোভ দেশটির জন্য অপমানজনক। আমরা সবসময় উস্কানি নিষিদ্ধ করি এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাই।
এজন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পোস্টটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার অ্যাকাউন্ট ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চলমান সহিংসতার ঝুঁকি হ্রাস করবে।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার নিন্দা জানিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই বিক্ষোভ একটি বিদ্রোহের সমতুল্য। এখনই ট্রাম্পের অবসান হওয়া উচিত। এই সময় আমাদের গণতন্ত্র এক নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে।
ঘটনায় সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইটে বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে লজ্জাজনক দৃশ্য। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের জন্য পুরো বিশ্বের উদাহরণ। তারা গণতন্ত্রের জন্যে পুরো বিশ্ব দৌড়ে বেড়ায়, কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে এরকম একটি পরিস্থিতি সত্যি অগ্রণযোগ্য। নিয়ম অনুযায়ী ও শান্তি অব্যাহত রেখে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজন।