ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই সার্চ কমিটি গঠনের নামে সরকার ‘নাটক’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শুক্রবার এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “এ সরকার থাকলে সার্চ কমিটি তাদেরই হবে। এই সার্চ কমিটিকে শেখ হাসিনা বা সরকারের পক্ষ থেকে যাদের নাম দেবে, তারাই নির্বাচন কমিশনার হবে। এটাতে অংশগ্রহণ করা, এটাতে মাথা ঘামানো- আমরা মনে করি এটা অর্থহীন। তাই আমরা এ ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দিই না।”
“এই (সার্চ কমিটি) যে সরকারের নাটক; এই নাটক হচ্ছে- এই সরকার আবার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আরেকটি সেই পুরনো, সেই ডাকাতি-চুরির নির্বাচন করার জন্য।”
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে গত ২৭ জানুয়ারি পাস হওয়া আইনের আলোকে ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নাম প্রস্তাব করতে বলে সার্চ কমিটি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার দুপুরে সার্চ কমিটির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা বলতে চাই, এদেশের মানুষ দেখেছে, এনাফ ইজ এনাফ। অনেক হয়েছে আর নয়। আজকে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বও কিন্তু বলে দিয়েছে, আমাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে, সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে- আর এটা চলবে না।
“এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আমরা বিএনপি ও ২০ দলের নেতারা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগেই ঘোষণা করেছি যে, শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। শেখ হাসিনার অধীনে বিগত দুটি নির্বাচন প্রমাণিত- এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আমাদের দাবি, অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যত শিগগির সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আর যদি না করে, যে কোনো স্বৈরাচারী সরকার যে পথে বিদায় হয়েছে- তাহলে সেই রাজপথকে আমরা বেছে নিতে বাধ্য হব। আপনারা এখানে অনেকে বলেছেন, ডাক দেন। ইনশাল্লাহ সেই ডাক দেওয়ার সময় সামনে আছে।”
“আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি। যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজনে যুগপৎভাবে একই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করবো যে কোনো সময়ে, সেই স্রোতে একত্রিত হয়ে একসাথে মিলিত হয়ে এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইনশাল্লাহ বিদায় নিতে বাধ্য করব। সেই আন্দোলনের জন্য সকলে প্রস্তুত হোন।”
পুলিশ প্রধানের জার্মানি সফর প্রসঙ্গ
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “পুলিশের বিছানার চাদরের রঙ কী হবে, সেটার জন্য একজন পুলিশ প্রধান জার্মানিতে যাবেন রঙ পরীক্ষা করার জন্য। আমরা যে এতোদিন বলছি, এই সরকার নাকি আইটির জন্য একটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছে। এই আইটির যুগে কাউকে এতদূর গিয়ে কি রঙ পরীক্ষা করতে হয়? সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রঙ সামনে চলে আসে, আমি এই রঙটা পছন্দ করি তা সেকেন্ডের মধ্যে এই মতামতটা দেওয়া যায়। এরজন্য কি জার্মানিতে যেতে হবে? আমরা দেখতে চাই যে আসল উদ্দেশ্য কী?
“আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি, মালদ্বীপে বাংলাদেশের সাথে কোনো রকমের ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো ইন্টারেস্ট নাই, সেখানে প্রধানমন্ত্রী দলবল নিয়ে ছয় দিন ছিলেন। অনেকে অনেক কথা বলেন, আমরা বলতে চাই না। সময় বলে দেবে কেন তিনি গিয়েছিলেন। এখন বিছানার চাদরের রঙ সিলেকশনের জন্য পুলিশ প্রধান কেন জার্মানি যাবেন, এটা ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে বলে দেবে?”
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) উদ্যোগে ‘নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আলোচনা সভা হয়।
অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইসলামী ঐক্যেজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকিব, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এনপিপির নবী চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন বক্তব্য দেন।